অমর মিত্র
তখন যে আমার মাথা খারাপ
হয়ে যায়, কিছুই করতে পারি না গো।
সোনাই বিনবিন করে বলল, তার নরম গলায়।
কী বলবে অলীক? জানালার ওপারে মেঘের নিচে বহুদিন বাদে এসে দাঁড়িয়ে আছে
সোনাই। ‘আমি সোনাই’। তার প্রোফাইলে কার মুখ? কতকালের পুরনো কথা তা। মহুয়া রায়চৌধুরী। ফুটফুটে এক
মেয়ে। তখন অলীক ২৪-২৫। তখন অলীক এম.এ. পাশ করে পরীক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছে। তখনই
একটা সিনেমা এল, কী সিনেমা কী সিনেমা? অলীক মনে করতে লাগল, দাদার কীর্তি, না না শ্রীমান পৃথ্বীরাজ।
সেই মেয়েটির জন্য ঘুম গিয়েছিল ক’দিন। তখন রাতের বেলা তো অলীক ভুবনে বেড়িয়ে বেড়াত সে। তার আগে অমন হয়েছিল ‘ছুটি’ সিনেমাটি এলে। ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা আমি যে পথ চিনি না’... সেই যে সাঁওতাল পরগনা, দীপাবলীর রাতে দু’জনে বসে আছে মুখোমুখি ... ‘এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দরও হে সুন্দরও...’ নন্দিনী মালিয়ার পর এল মহুয়া। শ্রীমান পৃথ্বীরাজ – ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’... সেই মেয়ে আগুনে পুড়ে মরেছিল। অমন স্নিগ্ধ সুন্দর রূপখানি ঝলসে গিয়েছিল। তখন অলীক বিয়ে করেছে। চাকরি পরিবার নিয়ে কিছুদিন বিলাসপুর রেল জংশন। তাকে চিঠি লিখেছিল তার বন্ধু অনাথ, খবর দিয়েছিল, মহুয়া পুড়ে মরেছে রে, আহা অমন ভাল অভিনয়, অমন পাশের বাড়ির মেয়েটির মতো চঞ্চল কিন্তু গভীর, অমন কাঁদতে পারে, কাঁদাতে পারে কে... সে মরেই গেল, তোর ঘুম কেড়েছিল না শ্রীমান পৃথ্বীরাজের পর।
সেই মেয়েটির জন্য ঘুম গিয়েছিল ক’দিন। তখন রাতের বেলা তো অলীক ভুবনে বেড়িয়ে বেড়াত সে। তার আগে অমন হয়েছিল ‘ছুটি’ সিনেমাটি এলে। ‘আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা আমি যে পথ চিনি না’... সেই যে সাঁওতাল পরগনা, দীপাবলীর রাতে দু’জনে বসে আছে মুখোমুখি ... ‘এই লভিনু সঙ্গ তব, সুন্দরও হে সুন্দরও...’ নন্দিনী মালিয়ার পর এল মহুয়া। শ্রীমান পৃথ্বীরাজ – ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’... সেই মেয়ে আগুনে পুড়ে মরেছিল। অমন স্নিগ্ধ সুন্দর রূপখানি ঝলসে গিয়েছিল। তখন অলীক বিয়ে করেছে। চাকরি পরিবার নিয়ে কিছুদিন বিলাসপুর রেল জংশন। তাকে চিঠি লিখেছিল তার বন্ধু অনাথ, খবর দিয়েছিল, মহুয়া পুড়ে মরেছে রে, আহা অমন ভাল অভিনয়, অমন পাশের বাড়ির মেয়েটির মতো চঞ্চল কিন্তু গভীর, অমন কাঁদতে পারে, কাঁদাতে পারে কে... সে মরেই গেল, তোর ঘুম কেড়েছিল না শ্রীমান পৃথ্বীরাজের পর।
সেই মহুয়া, যেন জীবন নদীর ওপার থেকে এল অলীকের বন্ধু হয়ে... ‘এসে দাঁড়ায়ো দাঁড়ায়ো
বধূ হে...’। মহুয়া আবার ফিরে এসেছে ‘আমি সোনাই’ হয়ে। সাদা-কালো মুখখানি কী প্রসন্ন। চোখদু’টিতে কত আলো। মুখখানিতে কত
প্রশান্তি। সেই মেয়ে তাকে আবার তার পূর্বকালে ফিরিয়ে দিল। বহু যুগের ওপার হতে
ফিরে এল। বছরখানেক আগে এক নিস্তব্ধ ভোরে ইন্টারনেট খুলে ফেসবুক লগ অন করে ষাট
বছরের সদ্য পেনশনভোগী বেকার সুদখোর অলীক ব্রহ্ম দেখল রাত পৌনে বারোটায় তিনজন তাকে
পছন্দ করে বন্ধুতা চেয়েছে, তার ভিতরে এই সোনাই – আমি সোনাই। কে বলল তুমি
সোনাই, তুমি যে সেই মেয়ে।
সে তার জানালার ধারে এসে বলল, তোমার যেমন মনে হবে বন্ধু, তেমন ভেবো, আমি সোনাই।
অলীক বলল, সোনাই তোর নাম, ওই নামে একটা নদী ছিল।
কোথায় অলীক কোথায়?
অলীক ষাট, ওই সোনাই বারো ক্লাস পার করে ফার্স্ট ইয়ার, জিওলজি অনার্স, সাকিন তিনপাহাড়। সে কেমন
অবলীলায় তাকে নাম ধরে ডাকল, এই অলীক, বন্ধু, কথা বলছ না যে, স্যরি, আমি তোমার নাম ধরে ডেকেছি, ভুল করে বন্ধু।
অলীক ব্রহ্ম সাড়া দিল, এই তো আমি, বন্ধুকে তো নাম ধরেই ডাকব।
থ্যাঙ্কিউ, বললে না কোথায় সেই নদী?
এখন তো নেই।
নেই কী গো, কোথায় গেল নদী বইতে বইতে, সে কি ফেসবুকের নদী, থাকে না আবার থাকেও?
কথা বলছে সে। সেই মেয়ে। পাশের বাড়ির মেয়ে। সাদা-কালো
ছবিতে তার রূপের মাধুরী যেন অধরা। ওই যে সে চটি ফটফটিয়ে চলেছে কলকাতার রাজপথ
দিয়ে। সাধারণ শাড়ি, সাধারণ মেয়ে। ৩৫-৪০ বছর
আগের শহরটাকে দেখতে পায় অলীক। লাল ডবল ডেকার বাস, আকাশজুড়ে মেঘ। কিন্তু তার ভিতরেও কেমন আলোয়
ভরা মুখখানি। ওই মুখ কোথায় পেল তিনপাহাড়ের মেয়ে সোনাই। অলীক বলল, সেই নদী চুরি হয়ে গেছে।
ধ্যাত, নদী আবার চুরি হয় নাকি?
হ্যাঁরে হ্যাঁ।
এই ভাবে তাদের আলাপ শুরু। তখন এই সোনাই-এর আর বন্ধু কই? সে আন্দাজ করে অচেনা এই
অলীক বন্ধুতার অনুরোধ জানিয়েছিল। কথা শুরু হল। তার বন্ধু বাড়তে লাগল, অলীকের সঙ্গে তার আর কথা
হয় না তেমন। এক একদিন আবার হয়ও। গান শেয়ার করল অলীক, ‘কা করুঁ সজনী আয়ো না বালম, বড়ে গুলাম আলি খান সুমধুর
গলায় তার ঘরে বেজে উঠলে, সে ফরমাশ করল, বড়ে গুলাম দাও আরও, ও অলীক।
অলীক সেই কোন ভোরে শেয়ার করল, ‘পানিয়া ভরন, পানিয়া ভরন, পানিয়া ভরন ক্যায়সে যাঁউ, যাঁউ রে...’।
থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ অলীক।
এক সঙ্গে অন লাইন হলে দেখা হয় কখনও-সখনও। দেখা না হলে, সোনাই তার জানালায় না এলেও, অলীক তাকে লিখে পাঠায় এই
নাও সোনাই নদী, ‘উড় জায়েগা উড় জায়েগা, হংস আকেলা...’ কুমার গন্ধর্ব, ‘গগনভূষণ তুমি
জনগণমনোহারী... গগনভূষণো... হেসে হেসে ভেসে ভেসে চলে যাও কোন দেশে’... ডি. এল রায়।
সে পরদিন লিখে জানাল, কী অপূর্ব গান দিয়েছ আমার অলীক বন্ধু।
তোমার ভাল লেগেছে সোনাই?
খুউউউব ভাল লেগেছে অলীক।
কী আশ্চর্য! এমন কল্পনায় কত দিবানিশি কাটিয়েছে সে।
সাঁওতাল পরগনার কোনও ছোট জনপদে দেখা হয়ে গেল তাদের। সেই পাশের বাড়ির মেয়েটি... ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’... গেয়ে গেয়ে ঘুরছে সে।
শ্রীময়ী মুখের সেই হাসি। অলীক অলীক তুমি আমার চেয়ে কত বড়, আমি তোমার ছোট্ট বন্ধু, তুমি আমার খুব বন্ধু তো।
খুব, আমি তোমার সমান বন্ধু
সোনাই।
আচ্ছা আচ্ছা আচ্ছা তাই হল, ও গো বন্ধু আমার খবরটা তোমাকে জানাতে ইচ্ছে
করছে খুব।
কোন খবর সোনাই, কোন খবর?
ওহ মাই মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, আয়াম ইন লাভ... আমাকে একজন ভালবাসে।
অলীক চুপ করে থাকল। ষাট পার করা বেকার পেনশন আর সুদভোগী
অলীক ব্রহ্ম অবাক হয়ে তাকিয়েছিল সাদা-কালো ছবিটির দিকে। ছবি বদলে সেই মেয়েই
আবার এসেছে সোনাই হয়ে। গয়না পরা বেনারসি পরা কী ঝলমল করছে সে। কোথায় কার প্রেমে
পড়ল সে? অন্তর্জালের অলীক বন্ধুদের
কেউ? সুন্দর ২৪-২৫-এর যুবক। কে
জানে কে সে। কে হরণ করল তার মন। কোন গগনভূষণ তুমি...?
অলীক ব্রহ্ম দুপুরটায় বই পড়ে। তার এক বন্ধু থাকে
চট্টগ্রামে, সে তাকে মুজিবর রহমানের
আত্মকথা পাঠাল, পাঠাল মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস। ওই দেশটা যখন স্বাধীন হয় তখন অলীক উনিশ। বাংলাদেশের এই মাসুদ করিম তার
অন্তর্জালের বন্ধু। তার কাছে জানতে চায় অলীক, সাতক্ষীরা জান তুমি করিম ভাই?
চট্টগ্রামের মাসুদ করিম তাকে বলল, জানি, আমার পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট, আমার বউ তহমিনা সাতক্ষীরার
মেয়ে, মানে সাতক্ষীরায় ওদের
বাড়ি ছিল, কিন্তু ওরা বহুদিন
ঢাকানিবাসী, ও যায়নি কোনওদিন।
সাতক্ষীরে থেকে খুলনার পথে একটা নদী আছে, সোনাই তার নাম।
সোনাই নদী, ঠাকুর হরিদাসের জন্মস্থান ওর কূলে, হিন্দু ঘরে জন্মে মুসলমান
ঘরে প্রতিপালিত।
মাসুদ করিম জানে সব। বলল, নেটে পড়েছি, ওই নামে আপনাদের ওদিকেও ছিল এক নদী।
নেই, বুঁজিয়ে দিয়েছে।
একটা মামলা হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে, জানেন?
জানি। অলীক মুগ্ধ হয় মাসুদ করিমের কথায়। সে কত কথা না
জানে। বাড়ি বাগেরহাট মানে বিনিময়ে বাগেরহাটে জমিজমা ভিটে পেয়েছিল ওর ঠাকুর্দা।
আসলে ওরা বীরভূমের লোক। রামপুরহাট। সে ওপারটা জানে, এপারের কত কথাই না জানে। সোনাই নদী নিয়ে কথা হয়
মাসুদ করিমের সঙ্গে। আর অলীকের অলীক বন্ধু সোনাই নামের মেয়েটির কোনও খোঁজ নেই।
যখন আলাপ, তখন সে এই ভুবনে নতুন। এখন
তার কত বন্ধু। এখন সে প্রথম ভালবাসায় মগ্ন। সাঁওতাল পরগনার পাহাড়তলিতে দাঁড়িয়ে
দু’হাত তুলে বলছে, ও পাহাড় ও নদী, রোরো, তমালি, ডুলুং, গঙ্গা মেঘনা যমুনা সুন্দরী
নদীরা শোন, আমি ভালবাসিয়াছি, আমাকে সে ভালবাসিয়াছে।
কে সেই ভাগ্যবান, আমাকে জানাবি সোনাই, কী করে সে? মেসেজ পাঠাল অলীক।
বলব, বলব। থেমে গেল সে। আর তার
দু’দিন বাদেই সে মেয়ে তার
সাইটে লিখে দিল, ওহ্ গড, আমি একজনকে ভালবেসেছি, সেও আমাকে ভালবাসে, ভালবাসে ...।
এবার সে একা একা দু’হাত তুলে বিশ্বভুবনে জানিয়ে দিল তার ভালবাসার কথা। বন্ধুরা
সবাই জেনে রাখ আমি ভালবেসেছি ভালবেসেছি। সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে...
সেই কন্যে তাদের সাতমহলা বাড়ির এ-ঘর ও-ঘর করে বেড়াতে লাগল। গুনগুন করতে লাগল, চরণো ধরিতে দিয়োগো আমারে
...। সেই কতকাল আগের বাতাস ধেয়ে এল অলীক ব্রহ্মের কাছে। অলীক ব্রহ্মেরও প্রেম
হয়েছিল মনে মনে। বলতেই পারেনি। বেবি অস্টিন গাড়িতে চেপে সে কলেজে আসত। অলীক
ব্রহ্ম তখন, ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে, সখী যাতনা কাহারে বলে’... বন্ধুর বাড়ি গিয়ে ইপি
রেকর্ড শোনে সুমিত্রা সেনের, ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও যাও যাও গো এবার’...।
ষাট পার করা অলীক সেই সব গান শেয়ার করে সোনাইকে। ভুলে গেলি
বন্ধুকে, বন্ধু তোকে ভোলেনি। বললি না
সেই ভালবাসার পাত্রটি কে? সে কি তিন পাহাড় পেরিয়ে
ঘোড়া ছুটিয়ে এল সোনাই নদীর কূলে?
জবাব নেই। সে তেমন হয় না অন-লাইন।
হলেও তার মনে আর জায়গা নেই অলীক এই বন্ধুটির। সে উনিশ আর ঊনষাট-ষাট-একষট্টির এই
অলীক পুরুষের ডাকে সাড়া দেবে কী করে। তবু একদিন দেখল, তার মেসেজ বক্সে একটি
বার্তা, ‘হাই, কেমন আছ বন্ধু তুমি?’
অলীক লিখল, তুমি তো ভুলেই গেলে এই বন্ধুকে।
আবার তার সাড়া নেই। এক বৈশাখে পরিচয়, আর এক বৈশাখ গিয়ে বর্ষা
এল। জানালার ওপারে ঘন মেঘ এসেছে বহুদিন পরে। এবার শ্রাবণের মেঘ তো উধাও। সেই দিন।
দুপুরে অন লাইন হয়ে গান শুনছিল অলীক। তার কাছে এসে পৌঁছেছে মেঘ মল্লার রাগ, পাঠিয়েছে মাসুদ করিম, আমীর খান। বাইরে মেঘের
গর্জন শোনা গেল। উচ্চতল বাড়িগুলির মাথা ছুঁয়ে ছুঁয়ে মেঘের বিস্তার শুরু হল।
তখনই এল সে, বন্ধু।
এতদিন কোথায় ছিলে?
বন্ধু আমার সুন্দর চলে গেছে!
কে সুন্দর?
যে আমাকে ভালবেসেছিল বন্ধু, আমি তাকে সুন্দর বলে ডাকতাম।
তারপর?
সোনাই বলল, তিন পাহাড়ের দিক থেকে মেঘ ধেয়ে আসছে এদিকে, বন্ধু বৃষ্টি নামল, সুন্দর নেই আর আমার কাছে।
কী হল, কেন গেল?
আরও চায় আরও চায় সে, বন্ধু আমি আর কত দেব।
স্তম্ভিত হয়ে বসে থাকল অলীক। উনিশ বছর তার কাছে এসেছে
কাঁদতে কাঁদতে, ও অলীক, আমি তুমি অলীক, তোমায় সব বলা যায়, তুমি তেমনই অলীক, কিছু বলবে না?
কী বলব, কতদূর এগিয়েছিলে সোনাই?
অনেক দূর অলীক, যত দূর যাওয়া যায় ভালবাসলে।
অলীক জিজ্ঞেস করে, নারী আর পুরুষের মতো?
নারী পুরুষে তাই তো হবে অলীক।
তোর ভয় করেনি মেয়ে?
ভয় করবে কেন, আমি যে তাকে ভালবাসি, এখনও বাসি, এখনও এখনও।
সে কোথায়?
সে বলছে সম্পর্ক থাকবে, কিন্তু সে সামনের অঘ্রাণে বিয়ে করছে, রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে।
তোর সঙ্গে হয়নি?
না বন্ধু, না।
কে সেই মেয়ে?
তা আমি জানব কী করে?
সরে আয় তুই, আর কী বলব আমি।
ওগো আমার অলীক বন্ধু, ও এলে যে আমি পাগল হয়ে যাই, আমাকে রিফিউজ করেছে, কিন্তু ডাকলেই আমি যাই।
কোথায় যাস?
ওর কোয়ার্টারে।
অলীক ব্রহ্ম বিস্ফোরিত হয়ে গেলেন, কেন যাস, ও তো প্রতারক।
জানি না কেন যাই, আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় তখন, কিছুই ভাবতে পারি না, আমি যে ওকে ভালবাসি অলীক, আমি মরে যাব অলীক, মরে যাব সুন্দরকে ভালবেসে।
কী বলছিস তুই মেয়ে? আর্তনাদ করে উঠল অলীক ব্রহ্ম। টের পাচ্ছে দূর
উত্তর-পশ্চিমের সেই শহরে ধেয়ে আসা মেঘ ভেঙে পড়ল। মেয়ে পারে না। কিছুতেই পারে
না। সুন্দর এসে যখন থাবা মারে, বাঘের সৌন্দর্যে বিভোর হরিণী তখন তার দিকে এগিয়ে যায়।
তাকে লুট করে সুন্দর শান্ত হয়। সে তখন বলে, কাঁদতে কাঁদতে বলে, সুন্দর তুমি আমাকে ভালবেসো সুন্দর, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না
সুন্দর।
তারপর?
সে ডাক দিলেই পাগল হয়ে ছুটে যাই।
তারপর?
যার সঙ্গে তার রেজিস্ট্রি হয়েছে, তার রূপ আমার চেয়ে বেশি, ফটো দেখাল সেদিন।
তারপর কী হল, কী বললি তুই? গর্জন করে ওঠে অলীক ব্রহ্ম।
তবুও আমি ভালবাসি, আমায় তুমি ভালবাস সুন্দর। বলতে বলতে কাঁদতে লাগল সোনাই।
কান্না বয়ে যেতে লাগল।
তারপর? ভেঙে পড়তে পড়তে জিজ্ঞেস করল অলীক ব্রহ্ম।
বলছি তো, সে আমায় টাচ করলে আমি পাগল হয়ে যাই ...
বলতে বলতে অফ লাইন হল সোনাই নদী। হারিয়েই গেল। অলীক ব্রহ্ম
গোপন ভয়ে কাঁপে। আগুনে পুড়ে মরেছিল কে? সাদায়-কালোয় মুখখানি দেখতে লাগল অলীক। নদীর জন্য বসে থাকা
ছাড়া অলীকের এখন আর কাজ কী? কাঁদতে কাঁদতে সোনাই নদী যদি ফেরে আবার।
0 মন্তব্যসমূহ