নীহারুল ইসলাম
বাড়ি
আসতে না আসতে আরমান সালিশ ডেকে বসে। তাও আবার বিবি সাকিরার ওপর। সাকিরাকে সে তালাক
দেবে। সাকিরার সঙ্গে আর সংসার করবে না। খবরটা চাউর হতেই গ্রামের সবাই তাজ্জ্বব বনে
যায়!
আরমান
বিদ্যাসে রাজমিস্ত্রীর কাম করে। ‘বিদ্যাস’ মানে চেন্নাই। তিন মাস, ছ’মাস অন্তর বাড়ি আসে। এক সপ্তাহ দু’সপ্তাহ থেকে যায়। যদিও মাস মাস টাকা পাঠায় সাকিরার নামে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আসে সেই টাকা। সাকিরা মাসে মাসে গিয়ে সেই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে
তুলে আনে। টিপসই দিয়ে নয়, রীতিমতো
নামসহি করে। তাও আবার ইংরেজীতে। এক বেটা আর এক বিটি আছে। তারা পড়ে শহরের
মাড়োয়াড়িদের ইংরেজী ইস্কুলে। রোজ ভোর
ভোর একটা হলুদ রঙের মারুতি ভ্যান আসে বাড়ির দূয়ারে। বেটা-বিটিকে নিয়ে যায়। আবার এগারোটার সময় ওই মারুতি ভ্যান বেটা-বিটিকে রেখে যায়।
সবাই দেখে সেই দৃশ্য। তাহলে কী এমন হল যে, আরমান
সাকিরাকে ভাত দেবে না? তালাক দেবে!
ব্যাপারটা
কারো মাথায় ঢুকছে না। চারদিকে খালি গুজগুজ... ! ফিসফিস... ! তবু সবাই অপেক্ষা করছে
সেই সালিশের। কখন সন্ধ্যা নামবে আর সালিশ বসবে পন্ডিতের ছোটবেটা বারিয়ুল প্রধানের
বৈঠকবাড়িতে!
যদিও
সন্ধ্যা নামার বহু আগে থেকেই সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে। বিশেষ করে গ্রামের চ্যাংড়াদের ভিড়। আসরের নামাজের পর মসজিদের মাইকে এই সালিশের কথা ঘোষণা হয়েছিল। সবাই শুনেছিল।
তারপর গাঁ-ঘর ছেড়ে কেউ আর মাঠঘাটে যায়নি। কাজকাম ভুলে কৌতুহল নিয়ে সবাই বাড়িতেই
বসে আছে। যে ফাজু মাঠঘাটকেই তার ঘরবাড়ি মনে
করে। সেও পর্যন্ত নামাজ পড়ে এসে বাড়িতেই থেকে যায়। বিবি রোশনারা তা দেখে বলে বসল,
কী ব্যাপার জী- এবেলায় যে মাঠে গেলা না? বিবি পাহারা দিছো নাকি? রোশনারার ঠোঁটের
কোনে মিচকি হাসি।
ফাজু
বিবি রোশনারার কথার মানে বুঝতে পারে না। বোঝার চেষ্টাও করে না। আজকাল বিবি রোশনারা
তাকে যখন তখন যাই তাই বলে। ঠেস্ মেরে কথা বলে। আজকেও হয়ত সেরকম কিছু বলল। কিন্তু
অমন মিচকি হাসল কেন? আজ তাহলে কোন ব্যাপারে ঠেস্ মারল?
সেটা
বুঝতেই কিনা ফাজু ফ্যাল ফ্যাল করে বিবির মুখের দিকে চেয়ে রইল। তা দেখে বিবি আবার বলে উঠল, দাঁড়িয়েই থাইকব্যা না নমাজ পড়হিতে যাইব্যা? মহজিদে
মাগরীবের নমাজের আজান পড়ি গেল জী!
আজকাল
মসজিদে মসজিদে মাইক। বহুদূর থেকে আজান শোনা
যায়। শুধু কি আজান? গ্রামে কে মরল! কে বাঁচল! কার কী হল? ফাজু মাঠ থেকেই সব শুনতে
পায়। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত আজান শুনতে পায়। আজান শুনে নামাজ পড়তে চলে আসে। দূরের মাঠে
থাকলে অবশ্য আসতে পারে না। সেখানে আজ তো সে বাড়িতেই আছে। আজান সেও শুনেছে। আজান
শুনে যে দুয়া পড়তে হয়, সেই দুয়াও পড়েছে। তারপরই বিবির ঠেস্ মারা কথা! কিন্তু না,
বিবির কথার ব্যাখা সে অন্যসময় করবে। এখন সত্যিই নামাজের সময় বয়ে যাচ্ছে। তারপর
আবার সালিশ আছে!
সালিশের
কথা মনে পড়তেই ফাজু আর দাঁড়ায় না। বারান্দার দড়িতে ঝোলানো তার পিরহানটা টেনে নিয়ে
বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
শুধু
নামাজের সময় পিরহানটা তার শরীরে চড়ে। বাকি সময়- হয় তার ঘাড়ে থাকে! না হয় বাবলাগাছের
ডালে, কিংবা বারান্দার দড়িতে ঝোলে।
দুই
মসজিদের
সামনেই একটা পুকুর। লোকে বলে কালীপুকুর। এপাড়ে মসজিদটা থাকলেও পুকুরটার ওপাড়ে বহু
পুরনো একটা কালীমন্দির আছে। সেই মন্দির ঘিরে ক’ঘর
হিন্দুর বাস। বলতে গেলে তারাই মন্দিরটা আবাদ করে। রোজ সন্ধ্যায় আরতি হয়। ঘণ্টা
বাজে। মসজিদে মাগরীবের নামাজ পড়তে এসে এই ঘাটে যারা অজু করে তারা সেই আরতি দেখতে
পায়। ঘণ্টা ধ্বনি শোনে। যেমন ফাজু এখন দেখছে, শুনছে। কিন্তু অন্যদিনের মতো আজ তার
মনে কিছু হচ্ছে না। অন্যদিন ওই ঘণ্টাধ্বনি শুনে, আরতি দেখে মনে মনে সে বিরক্ত হয়।
কিন্তু আজ বিরক্ত হচ্ছে না। আজ আরমানের কথা ভাবছে। আরমানের বিবি সাকিরার কথা
ভাবছে। সাকিরা তার বিটির মতো।
ফাজুর মনে পড়ে, বলতে গেলে আরমানের বিয়ে দিয়েছিল সে নিজেই। আরমান
তখন দ্যাশ-ঘরে কামকাজ করত। এক মা ছাড়া সংসারে আর কেউ ছিল না। তাও অসুস্থ মা। সেই মা
তার ওপর আরমানের বিয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল, ফাজুভাই হামি আর বাঁচবো না বোধায়! তার আগে
হামি একটো কাম করি যেতি চাই। তুমি যদি একটু হামাদের মাথার ছাতা হও!
-
কী কাম?
সে জিজ্ঞেস করেছিল।
-
বেটাটোর
বিহা দিন যেতি চাই ভাই। তা তুমি যদি একটো মেয়া দেখি দ্যাও হামার আরমানের
লেগি!
আরমানের বাপ জাকের সেখ ছিল তার জিগরী দোস্ত। যাকে বলে গলায়
গলায় দোস্তি। রাখালি থেকে মুনিষ খাটা। হকারি থেকে রাজমিস্ত্রীগিরি, সব কাম তারা একসঙ্গে
করেছে। জাকের বেঁচে থাকলে আজকের দিনে হয়ত তারা দুই দোস্তে মিলে মস্ত কিছু কিছু
একটা করতে পারত। দ্যাশঘর থেকে বিশ-পঞ্চাশ জনকে বিদ্যাশ নিয়ে গিয়ে বিশাল
কারবার ফেঁদে ফেলতে পারত! আইনুদ্দি খাঁ’র বেটা আজাদের মতো। আজাদ এখন আরামবাগে থাকে। ঘরসংসার
সেখানেই। খালি ইদ-বকরীদে গ্রামে আসে। ট্রেণ-বাসে চড়ে আসে না, নিজের গাড়ি চড়ে আসে। যে সে
গাড়ি নয়, একেবারে ‘আই-টুয়েন্টি’! ‘আই-টুয়েন্টি’ কথার মানে আবার বিশটা চোখ! আজাদ যেবার গাড়ি চড়ে
প্রথম গ্রামে আসে ইদের নামাজ পড়তে, গাড়ি দেখতে গ্রামের মানুষের সে কী ভিড়! যেন
আজাদের গাড়িটাই গ্রামের মানুষের কাছে সেবারের ইদ! সেই ভিড়কে নিজের গাড়ির নামের
মানে বলে আজাদ আবার জিজ্ঞেস করেছিল, বিশটা চোখ কার আছে? উত্তরটাও আজাদ নিজেই
দিয়েছিল, রাবণ রাজার! হামার গাড়িরও বিশটা চোখ আছে। ওই রাবণ রাজার মতোন! হামার
গাড়িটাও বিশচোখা! মানে আই-টুয়েন্টি।
গ্রামের কেউ না জানুক, জাকের জানত। আর সে উত্তরটা জানে। সে এও
জানে রাবণরাজা ভিলেন। তাই রাবণরাজাকে ফি-বছর পোড়ানো হয় দুর্গা মায়ের বিসর্জনের
দিন। খড়্গপুরের গিরি ময়দানে। খড়্গপুরে সেবছর তারা ইসমাইল মিস্ত্রীর আন্ডারে ছিল।
রেল-এর আর্জেন্ট কাজ। কিন্তু সেদিন ছুটি ছিল। দেখেছিল রাবণ পোড়া উৎসব। আজাদও
তখন তাদের সঙ্গী। তখন তারা কেউই মিস্ত্রী হয়নি। সবাই ইসমাইল মিস্ত্রীর জোগাড়ী। যেমন,
তখন এই গ্রামের রাস্তা পাকা হয়নি। কাঁচা ছিল। বর্ষাকালে রাস্তায় গাড়িঘোড়া তো দূর,
মানুষ হাঁটতে পারত না। কোমর পর্যন্ত গেঁথে যেত কাদায়। যদিও গ্রামের রাস্তা এখন
ভালো। খুব ভালো। একেবারে পীচের। পন্ডিতের ছোটবেটা বারিয়ুল প্রধান হয়ে অনেক কাজের
মধ্যে এই একটা কাজ খুব ভালো করেছে। যাইহোক, ফাজুর আশা ছিল সে ওই আজাদের মতোই দেখবে
আরমানকে। আরমান বারিয়ুল প্রধানের তৈরি রাস্তায় নিজের গাড়ি চড়ে গ্রামে আসবে! খুব বড়
হবে তার দোস্তবেটা! বড় তো হচ্ছিলই! কিন্তু কোথা থেকে বউ তালাকের খবরটা তার সেই
আশায় পানি ঢেলে দিল যেন! কেন বউ ছাড়বে আরমান? দেখে শুনেই তো সে আরমানের বিয়ে দিয়ে
সাকিরাকে বউ করে এনেছিল।
তিন
পদ্মাপাড়ের দৌলতপুরের মেয়ে সাকিরা। তা বলে
দৌলতপুর থেকে কোনো দৌলত নিয়ে আসেনি সে। বাপ সিরাজ বিশ্বাস পদ্মার ভাঙনে তখন
ভিটেহারা মানুষ। আগে অবশ্য বিশাল অবস্থা ছিল। তার দাদোর আমলে। তার দাদো সাদেমান
বিশ্বাসের তিন’তিনখ্যান জাহাজের মতো নৌকা ছিল। বর্ষাকালে পদ্মায় ভেসে
বেড়াত সেইসব নৌকা। ফাজু দেখতে পাচ্ছে যেন! মায়ের শাড়ির আঁচলের মতো পতপত করে
পাল উড়ছে সেই সব নৌকায়। লাল পাড়! নীল পাড়! সাদা পাড়! সবুজ পাড়! বউ উড়ছে! বোন উড়ছে!
মা উড়ছে! প্রেমিকা উড়ছে! আর নৌকার মাঝিরা সব মাছ ধরছে। মাছের ডিম ধরছে।
বর্ষাকালের পদ্মা তো পদ্মানদী হয়ে থাকত না, দরিয়া হয়ে যেত!
এদিকে দৌলতপুর তো ওদিকে একটু উত্তর ঘেঁষে নবাবগঞ্জ। একটু দক্ষিণ ঘেঁষে রাজশাহী। আর
একেবারে সামনাসামনি গোদাগাড়ি। মধ্যেখানে খালি পানি আর পানি! উথালপাথাল ঢেউ! পদ্মার
সে কী রূপ!
ফাজু দেখেছিল। তখন সে কিছুদিনের জন্য ওই বিশ্বাসবাড়ির রাখাল। ওই সময়
একটা ঘটনা ঘটেছিল। কলকাতা থেকে সিনেমার স্যুটিং করতে এসেছিল এক দল লোক। সেই দলের
যে হেড, তার নাম কী ঘটক যেন! এই জেলারই মানুষ ছিলেন নাকি! নিজের জেলার মানুষ শুনে
সাদেমান বিশ্বাস গোটা দলকেই তার মাছ ধরা নৌকায় চড়িয়ে পদ্মা ঘুরিয়ে ছিল। ওই দলে
একটা মেয়েও ছিল। সিনেমার নায়িকা। সুপ্রিয়া দেবী। কী রূপ! কী চেহারা!
ঠিক ওই নায়িকার রূপ-চেহারা পেয়েছিল সাকিরা। তার ওই
রূপে এই মজ্জাতপুরের আঁধার দূর হয়ে গেছিল। তাকে দেখে গ্রামের লোক দিবানা হয়ে গেছিল বলতে গেলে। সবাই তখন
চাইছে সাকিরার মতো একটি মেয়ে। এরকম মেয়ে পেলে কেউ করবে ছেলের বউ। কেউ
করবে নিজের বউ। কারো আবার ইচ্ছা, মেলাদিন হয়ে গেল একটাকে নিয়ে ঘর করা! সেকেন্ড
হ্যান্ড যৌবন আর ভাল্লাগছে না! আর একটা আনলে কেমন হয়? যদি এরকম পাওয়া যায় একটা!
সবাই এসে ধর্না দিতে শুরু করে ফাজুর কাছে। ফাজু বিরক্ত হয়। ওদের কাছ থেকে বাঁচতে
মাঠঘাটে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
শেষপর্যন্ত ওই মাঠঘাটই তার তকদীর বনে যায়। আজকাল
মাঠেঘাটেই পড়ে থাকে সে। খাবার সময় বাড়ি আসতে ভুল হলেও নামাজের ওয়াক্তে ঠিক মসজিদে
এসে হাজির হয়। লোকে, এমন কী বউ-বাচ্চারা তাকে পাগল বলে। বলুক! তার কিছু
আসে যায় না।
দোস্ত জাকেরের মওতের পর মাঠঘাটকেই সে পুরোপুরি নিজের তকদীর
বলে মেনে নিয়েছে। কাজকাম থাক না থাকলেও মাঠঘাটই তার সব। আসলে জাকেরের মওত সে মেনে
নিতে পারেনি। তারও মরে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু নিজের তিন-তিনটে নাবালক বেটা!
সেও যদি জাকেরের মতো লাঠির একটা ঘা-য়ে মরে যাবে, তাহলে তাদের দেখবে কে? জাকের শালা
আঁধলাই ছিল। একটা ভুলের জন্য কেউ ওভাবে মরে নাকি!
দোস্ত জাকেরের জন্য আজও আফশোষ হয় ফাজুর। সেই
সঙ্গে নিজের জন্যেও দুঃখ হয়। মাথার ওপর বাপ না থেকেও জাকেরের বেটা আরমান আজ কত বড়
হয়েছে! কিন্তু মাথার ওপর সে থাকা সত্ত্বেও তার তিন-তিনটে বেটা একেবারে নাবালকই
থেকে গেল। তার বেটারা যাকে বলে কামচোর! কোনো কাম করে না। তাস খেলে বেড়ায়। তাড়ি
খেয়ে মাতলামি করে। বড় বেটা তো আবার বউ পেটায়। মেজোটার
বিটিছেল্যার রোগ। ঘরে বউ থাকতেও অন্য বিটিছেল্যার কাছে যায়। আর ছোটটা গ্রেট
জুয়াড়ি। তাসের আড্ডা, তাস ছাড়া কিছুই বোঝে না। জানেও না! এসব দেখতে দেখতে একেবারে
তিতিবিরক্ত অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার!
একসময় গ্রামবাসীদের কাছ থেকে নিজেকে লুকনোর জন্য সে
মাঠ-ঘাটে পড়ে থাকত। তারপর ভাতভিক্ষার জন্য। আর এখন সে পড়ে থাকে বেটাদের
কীর্তিকলাপের লজ্জ্বা থেকে মুখ ঢাকার জন্য।
এতে অবশ্য তার দু’টো লাভ হয়। একটা লাভ-
তার সংসারের বাড়তি চাহিদা মেটে। আর একটা লাভ- বাড়ির যে পরিবেশ, তা থেকে সে দূরে
থাকতে পারে।
ফাজু যদিও কাউকে বলে না এসব কথা। বললে কে শুনবে? কার এত
সময়? আর শুনলেও ঠিকঠাক বুঝবে কি? যেমন বোঝে না বিবি রোশনারা। কিছু বললেই বলবে,
হামি কি কিছু জানি না ভাবছো? হামি সব জানি। হামার বেটাদের তুমি সহ্য করতে পারো না। তাই খালি
অধের দোষ ধুঁড়ি বেড়াও। হামি, হামার বেটারা সব তুমার কাছে দুষমন। তুমার আসল বেটা তো
আরমান! অর মার সুথে তুমার কিছু ছিল নাকি?
এসব কথা শুনে ফাজু মনে মনে তৌবা বলে। মুখে
উচ্চারণ করে, নাউজুবিল্লাহ!
চার
ঘাটে অজু করতে বসে অজু করার কথাই ভুলে আছে ফাজু। তাকিয়ে
দেখছে কালীপুকুরের ওপাড়ের কালী মন্দিরটাকে। সেখানে আরতি হচ্ছে। এপাড়েই বসে দেখছে
সে। মন্দিরের ঘণ্টা ধ্বনি শুনছে। আর আসমান জমিন কী সব ভাবছে! হঠাৎ
কেউ পাশ থেকে অজু করে উঠে যেতে যেতে বলল, ঘাটেই বসি থাকবা নাকি ফাজুভাই! নামাজ
পড়হিতে যাবা না মহজিদে? নামাজ জী শুরু হুন গেল!
সম্বিত ফিরে পায় ফাজু। তিনবার ‘তৌবা’ উচ্চারণ করে। তারপর
তাড়াতাড়ি অজু শেষ করে সে মসজিদে ছোটে।
সত্যিই নামাজ শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। ইমামসাহেবের
‘সুরা ফাতেহা’ পড়া শেষ। নামাজীরা
সবাই ‘আমিন’ উচ্চারণ করে উঠল। ‘সুরা ফাতেহা’ পাঠের পর ‘আমিন’ উচ্চারণ করা প্রত্যেক নামাজীর কর্তব্য। ফাজু নিজেও ‘আমিন’ উচ্চারণ করে বুকে
হাত বেঁধে নামাজের শেষ কাতারে দাঁড়িয়ে পড়ে।
ইমামসাহেব দ্বিতীয় সুরা পড়তে শুরু করেছেন। ফাজু শুনতে
চেষ্টা করে। ইমামসাহেব যখন সুরা পড়েন সবাই মন দিয়ে শোনে। আল্লার প্রতি
সমর্পিত হয়। এটাই নিয়ম। ফাজু এতদিন সেটাই করেছে। কিন্তু আজ পারছে না। তার মন কেমন
পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেন! ছোটবেলায় সে আর জাকের যেমন পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত,
সেরকম। ইস্কুল হোক কিংবা মাদ্রাসা, কোথাও ধৈর্য ধরে বসে থাকতে পারত না। মৌলবী
ওসমান গণি সাহেব হয়ত পড়াচ্ছেন, আলিফ যাবার আ, বে যাবার বা, ..., হঠাৎ জাকের তার
শরীরে কনুইয়ের খোঁচা মেরে জানালার বাইরে কী দেখার জন্য ঈশারা করছে। সে দেখছে,
বাইরের আসমানে তখন একটা ভোকাট্টা ঘুড়ি লতপত করছে! তারপর শুধু ওসমান গণি সাহেবের
নস্যি নেওয়ার ইন্তেজার! ওসমান গণি সাহেবের ঘন ঘন
নস্যি নেওয়ার বাতিক ছিল। যেই ওসমান গণি সাহেব নস্যি নিতে একটু মুখ ঘুরিয়েছে
অমনি কায়দা বই বুকে করে ভাঙা জানালা টপকে দুই দোস্তে মাদ্রাসা থেকে পগারপার!
ফাজুর মনে পড়ে একবার তারা দুই দোস্তে খুব মার খেয়েছিল মৌলবী
ওসমান গণি সাহেবের হাতে। মাদ্রাসা পালিয়ে ঘুড়ি ধরতে তারা এমনই মেতেছিল যে ভুলে
গেছিল মাদ্রাসা পালিয়ে আসার কথা! পাশেই ডাবাং ভুলুর ডাঙা। তার
আসমানে তখন ঘুড়িটা। বলতে গেলে একেবারে নাগালেই। আর একটু হলেই তাদের হাতে চলে আসবে!
আচমকা পিঠে শপাশপ কাঁচা কঞ্চির বাড়ি। বাপ রে! মা রে! মরে গেলাম রে!
ইমামের পেছনে মাগরিবের নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে ক’রাকাত নামাজ পড়া হল
তা খেয়াল করতে পারছে না ফাজু। অথচ সেদিনের সেই ওসমান গণি সাহেবের কঞ্চির মার তার
ঠিক খেয়ালে পড়ছে। খেয়ালে পড়ছে কী, সেদিনের সেই মারের ব্যথা শরীরে সাংঘাতিক ভাবে
অনুভব করছে পর্যন্ত।
এমনিতে মাগরিবের নামাজ পাঁচ রাকাতের। তিন রাকাত ফরজ নামাজ।
আল্লার উদ্দ্যেশে পড়তে হয় ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে। আর, দু’রাকাত সুন্নত নামাজ। রসুলের
উদ্দ্যেশে। এই নামাজ নিজে নিজে পড়তে হয়। নিয়ত বাঁধা, সুরা পড়া- সব নিজেকেই করতে
হয়। এই নামাজে ইমামের দরকার হয় না। কিন্তু ফরজ নামাজই তো এখনো শেষ হয় না! তাহলে
সুন্নত নামাজ পড়বে কখন আর সালিশেই বা যাবে কখন? তালাকের সালিস বলে কথা! তার
দোস্তবেটা আরমান বিবি সাকিরাকে তালাক দেবে।
পাঁচ
এই প্রথম নামাজে দাঁড়িয়ে অধৈর্য হয় ফাজু। বারিয়ুল প্রধানের
বৈঠকবাড়িটা তার চোখে ভেসে ওঠে। বিশাল বড় টিনের গেট। ওই গেট দিয়ে গাড়ি, ঘোড়া সবই
ঢোকে বৈঠকবাড়িতে। যদিও ভেতরে একটাই মাত্র ঘর। খুব ছোট। কিন্তু বারান্দাটা বেশ বড়। সেখানে
চেয়ার-টেবিল সাজানো আছে সেই পণ্ডিতের আমল থেকে। যেমন ওই বারান্দা
লাগোয়া বিশাল আঙিনাতে আছে নানা কিসিমের গাছগাছালি! ফুলের গাছ! ফলের গাছ! গন্ধরাজ
ফুলের গাছ আছে যেমন তেমনি শিউলি ফুলের গাছও আছে। আবার সফেদার গাছ আছে, বেদানার
গাছও আছে। আর কত রকমের যে লেবুর গাছ আছে তার হিসাব নেই। বৈঠকবাড়ির আঙিনাটাই যেন
পন্ডিতের আর একটা বাগান!
ফাজুর মনে পড়ে। যদিও সে তখন খুব ছোট ছিল তবু
দেখেছিল। সেই আমলে কত বড় বড় মানুষ আসত পণ্ডিতের কাছে। নেতা থেকে মন্ত্রী। এসডিও,
বিডিও, থানার দারোগা, আরো কত ধরণের মানুষ সব! পণ্ডিত তাই বোধহয় খুব সখ করে বানাতে
চেয়েছিলেন এই বৈঠকবাড়িটাকে! যে-কারণে নিজের রমণার ঘাস পরিষ্কার করিয়ে রাজারামপুর
থেকে পাথরা আনিয়ে ইট কাটিয়েছিলেন। তারপর সেই কাঁচা ইট সাজিয়ে ভাটা করিয়েছিলেন
চামারবেড়ার ডিহিতে। সেই সময় একটা অঘটন ঘটেছিল। জ্বলন্ত ভাটা ধ্বসে পুড়ে মারা গেছিল
এক আগুনমিস্ত্রী। ব্যাপারটা বরদাস্ত করতে পারেননি পণ্ডিতসাহেব। বৈঠকবাড়ি
বানানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার কিছু কাল পর পন্ডিতসাহেব নিজেই ইন্তেকাল করেন।
সেই থেকে এই বৈঠকবাড়ির টিনের গেট বন্ধই থাকত। দেখাশোনা করার কেউ
ছিল না। পণ্ডিতের বড়বেটা মেজবেটা চাকুরি সূত্রে বাইরে থাকে। সেজটা থেকেও নেই। তার
মাথার দোষ! গোবরা পাগলা হাসপাতালে ভর্তি। ছোটটা বারিয়ুল তখন কলকাতায়।
রবীন্দ্রভারতীতে পড়াশোনা করছে। বাড়িতে পণ্ডিতনী একা হাতে সবকিছু সামলাচ্ছেন। মাঠঘাট!
আগানবাগান! ঘর-গেরস্থালি! এসবের মাঝে শুধু এই বৈঠকবাড়িরটার কথা তাঁর মনে ছিল
না।
কিন্তু বারিয়ুল কলকাতা থেকে ফিরে এই বৈঠকবাড়িটাকেই নিয়ে
পড়ল। ফাজুর মনে পড়ে যেদিন বারিয়ুল প্রথম এই বৈঠকবাড়ির টিনের গেট খোলে, সেদিন সে
মুনিষ ছিল বারিয়ুলের। ঘাসের জঙ্গলে জঙ্গলে এমন অবস্থা হয়েছিল বাড়িটার যে টিনের গেট
খোলা যাচ্ছিল না। জং ধরে তালার এমন অবস্থা যে চাবি দিয়ে সে তালাও খোলেনি, ভাঙতে
হয়েছিল। শুধু কি তালা, টিনের গেটও ভেঙে পড়েছিল। ঘাসের জঙ্গলে বেঁধে গিয়ে। ঘাস বলতে
ঘাস! একেবারে জাঁকড়ে ধরেছিল গোটা বৈঠকবাড়িটাকেই। পাক্কা
সাত দিন লেগেছিল সব পরিষ্কার করে ঝকঝকে তকতকে করতে।
বারিয়ুল প্রধানের বৈঠকবাড়িতে ঢুকে ফাজু প্রথমেই একবার
চারদিক চোখ ঘুরিয়ে দেখে নেয়। আগে যেখানে কার্বাইড গ্যাসের বাতি জ্বলত এখন সেখানে
কারেন্টের আলো জ্বলে। বারিয়ুল প্রধান হওয়ায় এই আর একটা কাজ হয়েছে। গ্রামে
কারেন্ট এসেছে। বাড়ি বাড়ি কারেন্টের আলো জ্বলে। ঘরে ঘরে ফ্যান ঘোরে। কারেন্ট অবশ্য
আগেও ছিল। মাঠে। পণ্ডিতের আমলে পণ্ডিতের দোস্ত সাত্তারসাহেব যখন কৃষি মন্ত্রী
ছিলেন, সারা মাঠে গুচ্ছ নলকূপ বসেছিল। সারা মাঠের আসমান ছেয়ে গেছিল কারেন্টের তারে
তারে। অ্যালুমিনিয়ামের তার! সেই তারের টুকরো টাকরা পড়ে থাকত
জমিতেও। গরুছাগল চরাতে কিংবা ঘাস কাটতে গিয়ে সেগুলি কুড়িয়ে আনত
রাখাল-মাহিন্দারেরা। এমন কী গেরস্থের পুতেরাও ওইসব কুড়োতে মাঠে যেত। সেগুলির
বদলে ঢাকিবালার কাছ থেকে ঝুরি, ফুলোরি, বিস্কুটের গুড়ি- আইসক্রিমবালার কাছ থেকে
আইসক্রিম খেত! ফাজুর মনে পড়ে, সে নিজেও ওই সব তার মাঠ থেকে কুড়িয়ে এনে কত কী
খেয়েছে! তখন সে পন্ডিতের বাড়ির রাখাল। পন্ডিতসাহেব ব্যাপারটা জানতে পেরে একবার
তাকে বলেছিলেন, “পড়ে আছে বাড়ার বাল/ ধরতে পারলে গরমেন্টের মাল! বুঝলি বে
কিছু?” পণ্ডিতসাহেবের কথা বুঝতে অসুবিধা হয়নি তার। সে গিয়ে আবার
শুনিয়েছিল দোস্ত জাকেরকে। জাকের তখন রহমানহাজীর বাড়ির রাখাল। কিন্তু জাকের সেই
কথার গুরুত্ব দেয়নি। যদিও সে ভুলেও আর কোনোদিন সেই সব জিনিস মাঠ থেকে কুড়িয়ে আনে
নি। দু’দফায় মধ্যে কিছুদিন বাদ দিলে সে পণ্ডিতের বাড়ির রাখাল থেকে
মাহিন্দার হয়েছে। মাহিন্দার থেকে মুনিষ। কিন্তু জাকের রহমান হাজীর বাড়ির মাহিন্দার
থাকতে থাকতে মাহিন্দারি ছেড়ে দিল। নিমের ডাল কাটা ধরল। ফাজুর আজো মনে আছে সেই সব
দিনের কথা । জাকের সবকিছু ছেড়ে ছুঁড়ে মাঠঘাটে নিমের ডাল কেটে বেড়াচ্ছে। নিমের ডাল
কলকাতায় সাপ্লাই করছে। কিন্তু ওই নিমের ডালের আঁটির ভেতর চুরি করে কাটা
কারেন্টের তারও যে সে কলকাতায় পাচার করত ধরা পড়ার আগে কেউ জানত না। তাই জাকের যেদিন
ধরা পড়ল, সবাই আশ্চর্য হয়ে গেল।
ফাজু নিজেও কম আশ্চর্য হয়নি। জাকের যে ছিল তার
জিগরী দোস্ত! সেই মাদ্রাসায় ‘কায়দা’ পড়া থেকে শুরু করে রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ি! রাখালি থেকে
মাহিন্দারি! তারপর জাকের হঠাৎ নিমের ডাল কাটা ধরে। তাকেও সঙ্গী হতে বলে। কলকাতার
বিহারী কুলিরা নাকি ওই নিমের ডালে দাঁত মাজে। আর কলকাতায় নাকি মেলা বিহারীর বাস!
কিন্তু ততদিনে সে মাঠঘাটকে ভালোবেসে ফেলেছে। দোস্ত জাকেরের সঙ্গী হওয়া হয়নি তার।
তবে দেখা হলে বিড়ি দেওয়া নেওয়া করেছে। সময় থাকলে একটু সুখদুঃখের কথা! সেই জাকেরকে
যখন সবাই ধরে আনে আর পন্ডিতসাহেব তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোর নিমের ডালের আঁটিতে কী
ভরা আছে বল জাকের? ভালোই ভালো বল! জাকের কোনো উত্তর করে না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। যেমন
বারিয়ুল প্রধান সাকিরাকে কী জিজ্ঞেস করছে এখন! সাকিরা কোনো উত্তর করছে না। ঠাঁই
দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সেরকম।
তার মানে সালিশ শুরু হয়ে গেছে। ফাজু বুঝতে পারে। সে অতীত
ছেড়ে বর্তমানে মনযোগী হয়।
বারিয়ুল প্রধান আবার সাকিরাকে জিজ্ঞেস করে, বলো- আরমান যা
বলছে তা কি সত্যি? তোমাকে কী আরমান অন্য কারো সঙ্গে ...
বারিয়ুল প্রধানের মুখের কথা শেষ হয় না, সাকিরা বলে ওঠে, হ’ সত্যি।
-
কার
সঙ্গে তোমার সম্পর্ক? আরমান কার সঙ্গে দেখেছিল তোমাকে?
সাকিরা আবার চুপ। কিছু বলছে না। খালি এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
হয়ত লজ্জা পাচ্ছে! হয়ত যার নাম বলবে তাকে খুঁজছে!
সালিশে উপস্থিত ভিড় কিন্তু উশখুশ করছে। ভিড়ে গুজগুজ...,
ফিসফিস বাড়ছে...। সাকিরা কার নাম বলবে? কে
এমন ভাগ্যবান? যার সঙ্গে সাকিরার সম্পর্ক! কার সঙ্গে সাকিরার সম্পর্ক হতে পারে? যে
সাকিরার বাজারহাট করে দেয়! নাকি যার সঙ্গে সাকিরা ব্যাঙ্কে টাকা তুলতে শহরে যায়!
নাকি তার বাড়ির দূয়ারে রোজ সকালে যে হলুদ রঙের মারুতি ভানটা আসে তার ড্রাইভারটা!
চোখে কালো চশমা!
যদিও ফাজু এসব কিছু ভাবছে না। ভিড় থেকে সে ক্রমশ একা হয়ে
পড়ছে। সে ভয় পাচ্ছে। সাংঘাতিক ভয়! তার মনে হচ্ছে এই হয়ত কেউ
অধৈর্য হয়ে ভিড় থেকে উঠে গিয়ে সাকিরার মাথায় মারবে লাঠির এক বাড়ি! আর সাকিরার
মাথার ঘিলু চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। যেমন বহুদিন আগে তার দোস্ত জাকেরের মাথায় মেরেছিল!
আর জাকেরের মাথার ঘিলু ছড়িয়ে পড়েছিল চারদিকে!
ফাজু এখন আবার নাচার হয়ে সেই দৃশ্যই দেখছে। চারদিকে
ঘিলু ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু সেই ঘিলু তার দোস্ত জাকেরের কিংবা সাকিরার মাথার নয়। সেই ঘিলু
তার নিজের মাথার।
মাথায় হাত না দিয়েও ফাজু বেশ ভালোই মালুম পাচ্ছে। #
লেখক পরিচিতি
নীহারুল ইসলাম
‘সাগরভিলা’ লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১৪৮ পঃ বঃ, ভারতবর্ষ।
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
লেখক পরিচিতি
নীহারুল ইসলাম
‘সাগরভিলা’ লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১৪৮ পঃ বঃ, ভারতবর্ষ।
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
0 মন্তব্যসমূহ