অমর মিত্র
------------------------------------------------------------------------------------------------------------সেই এক প্রাতঃকালে সে জন্মাল। কোথায় জন্মাল না এই আকাশতলে। আকাশ সেদিন ছিল ঝলমলে। আগে কদিন ধরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, মেঘে মেঘে সব অন্ধকার হয়ে ছিল। বৃষ্টিতে খাল বিল মাঠঘাট সব একাকার হয়ে গিয়েছিল। মা ভাবছিল, এ কেমন হল, এত জলঝড়ের ভিতর সে আসবে ? কদিন না হয় আরো যাক, কিন্তু কতদিন ধরে সে অপেক্ষা করছিল আর নয়, অন্ধকারে জলের ভিতরে আর নয়। ভিতরে সে ঘুমিয়ে জেগে, নানা রকম সুরে সুরের ভিতরে ডুবে কাটিয়েছে এতদিন। যে তাকে বয়ে নিয়ে বেড়িয়েছে, যত্ন করেছে, তাকে সে দেখবে। যে তাকে সেতার শুনিয়েছে, সরোদ শুনিয়েছে, স্তব শুনিয়েছে, মন্ত্র শুনিয়েছে তাকেও সে দেখবে। কতদিন আর অন্ধকারে সমুদ্র-জলের ভিতরে ভাসবে। একরাতে সে তার মাকে জিজ্ঞেস করল, আর কতদিন মা ?
আর একটু বড় হও সোনা তুমি।
আর কত বড় হব মা ?
বাইরে আসার মতো হয়ে ওঠো।
সে চুপ করে গিয়েছিল অভিমানে। আর কতদিন সে
একা থাকবে। তার সঙ্গী, ওই ওপারে ছিল একজন। তখন তারা খেলত। দেওয়ালে হাত দিলেই টের
পেত আর একজন আছে ওধারে। এই তুই কে রে ?
তুইই বা কে ?
আমি তো আমি।
আমিও আমি। সে বলত। তারপর বলত, ‘আমার নাম আমি, তোরে দিলাম হামি।‘
তাদের এমনি কথা হত। দুজনে খিলখিল করে মা যখন হাসত বাইরে। মাকে তখন আর একজন
বলছে, সেই একটা নদীর কথা। নদী নদী নদী। সে জিজ্ঞেস করল অন্যজনকে, এই নদী নদী বলছে
বাইরে, নদী ঝিলমিল।
ও বলেছিল, হ্যাঁ, ঝিলমিল।
এই ঘর থেকে এ বলেছিল, ঝিলমিল মানে ?
নদী।
এ জিজ্ঞেস করেছিল, নদী মানে।
নদী তো নদী। ও বলেছিল।
আহা নদী কেমন ? এ জিজ্ঞেস করেছিল।
‘নদী আর কেমন, নদী নদীর মতো,’ ও বলেছিল, ‘নদীর
নাম ঝিলমিল।‘
কথাটা তাদের মা বলেছিল। মা তাদের নিয়ে
নদী পার হচ্ছিল। তখন বিকেল। মায়ের সঙ্গে যে কথা বলছিল সে তাদের বাবা। বাবা বলছিল,
এই নদীর নাম ঝিলমিল।
ওমা কী সুন্দর নাম। মা তার গর্ভের উপর
হাত বুলোতে বুলোতে বলেছিল। আর মা যখন নিজ গর্ভের উপর হাত বুলোয় তাদের যে কী সুখ হয়
তখন। একজন আর একজনকে বলে, এই এই চুপ চুপ, মা তাহলে হাত সরিয়ে নেবে।
আহা কী সুখ ! ঘুম পাড়িয়ে দেয় মা। কিন্তু
যেই না হাত সরিয়ে দিল ঝিলমিল নদীর ঘাটে নৌকো এসে পৌঁছলে, তার খিলখিল করে হাসতে
হাসতে নাচতে আরম্ভ করত। ঝিলমিল ঝিলমিল নদীর জলে ঢেউ খেলিয়া যায় রে। মা এই গান
শোনাত প্রায়ই। এখন বোঝা গেল মা ওই নদী চেনাত তাদের।
তারপর সবদিন বিকেলে, কখনো সকালে মা তাদের নিয়ে
যেত সেই নদীর ধারে। তারা ঠিক টের পেয়ে যেত। একজন গাইত ঝিলমিল ঝিলমিল নদীর জলে...,
অন্যজন গাইত, ঢেউ খেলিয়া যায় রে ঢেউ খেলিয়া যায়...।
মা গলা মেলাত, টলমল টলমল ধানের খেতে ঢেউ
খেলিয়া যায়রে, শনশন হাওয়ায় রে।
বাবা গলা মেলাত, ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের
জলে...।
মা বলত, না নদীর জলে, ঝিলমিল নদীর জলে।
সে বলত, শনশন শনশন হাওয়ায় রে, শনশন শনশন।
ও বলত, ঝিরঝির ঝিরঝির ঝির হাওয়ায় রে।
সে কতদিন আগের কথা, বাবা বলল, হাত ধর।
হাত ধরে ধরে মা বাড়ি ফিরত। মা বলত, ওদের
আরো গান শোনাও।
তখন বাবা বাজাল, আমি আলপনা এঁকে যাই আলোয় ছায়ায়।
তারা দুজনেই গলা মেলাল।
মা বলল, সুরের ভিতরে ঘুমিয়ে গেছে ওরা।
তখন বাবা বলল, দাঁড়াও জাগিয়ে দি, বাবা
বলল, ধিতাং ধিতাং বোলে......
ধিতাং ধিতাং বোলে এই মাদলে তাল
তুলে......গান কানে যেতেই তারা হাততালি দিতে লাগল। ভাসতে ভাসতে নাচতে লাগল। তখন মা
বলল, উফ বাবা আর পারিনে দুটোয় কী আরম্ভ করেছে, নাচছে গো নাচছে।
বাবা বলল, নাচুক নাচুক, ধিতাং ধিতাং
বোলে...।
বাবা সেই গানের সঙ্গে নিজেও নাচতে লাগল।
সলিল চৌধুরী, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, বাবা আর তারা দুজন গলা মেলাল একসঙ্গে। আয়রে আয়
লগন বয়ে যায়, মেঘ গুড়গুড় করে চাঁদের সীমানায়, পারুল বোন ডাকে চম্পা ছুটে আয়,
বর্গীরা সব হাঁকে কোমর বেঁধে আয়। মা বলে দুষ্টু দুষ্টু, ঘুমো ঘুমো, আর নাচিসনে।
শুনে তারা খলখল করে হাসতে লাগল, এই ধিতাং ধিতাং......তুই ধিতাং।
আর একজন বলল, তুই ঝিলমিল।
তারা একজন বলল, আমি ধিতাং আর একজন
বলল, আমি ঝিলমিল।
তারপর থেমে ঝিলমিল জিজ্ঞেস করল, মাদল কী?
বাজায়
বুঝি। ধিতাং বলল।
মা বাইরে থেকে বলল, খুব মেঘ করেছে গো।
বাবা বলল, হ্যাঁ কালকের মতো আবার ঝড়
উঠবে মনে হয়।
কাল বিকেলে কাল বৈশাখী এসেছিল।
মধ্যদিনের রক্ত নয়ন অন্ধ করিল কে? ঘন মেঘে ছেয়ে গেল সব। তারপর ঠান্ডা বাতাস বইল।
তারপর হুড়মুড়িয়ে এল ঝড়। লন্ডভন্ড করে দিল সব। বাড়ির পেছনের আম গাছটির সব আম কাল
পড়ে গেছে। পেটে হাত দিয়ে সে ঠাকুর ঠাকুর করছিল। অবশ্য তখন আর একজন বাড়িতে ছিল।
মা বলল, কাল অত ঝড় জল গেল, যা গরম আজ,
কী রোদ কী রোদ।
বাবা বলল, হ্যাঁ, এই রোদে কী হয়েছে
জানো ?
কী গো ? ধিতাং জিজ্ঞেস করল পেটের
ভিতর থেকে।
বাবা বলল, না থাক।
ধিতাং বলল, থাকবে কেন কী হয়েছে ?
বাবা বলল, না শুনতে হবে না।
কেন কী হয়েছে গো, তুমি খুব রোদে
পুড়ে এলে ? মা জিজ্ঞেস করল।
ওরা কী করছে ?
আমি আমজাদ আলি খাঁর সরোদ
চালিয়েছিলাম, রাগেশ্রী, শুনতে শুনতে একজন ঘুমিয়েছে।
আর একজন ?
খুব দুষ্টু, বাবা মায়ের কথা শোনে
শুধু।
আহা ওরা কি জানে আমরা বাবা মা ?
মা বলল, খুব জানে খুব জানে, জানো
আমার একটু ঘুমঘুম এসেছিল, তন্দ্রার মতো, দেখি কি দুটোয় কী হুটোপুটি এই বিছানায়,
গাইছে শনশন শনশন হাওয়ায় রে, শনশন শনশন......, গান সব মুখস্ত।
বাবা জিজ্ঞেস করল, তারপর কী হল ?
কী হবে গো, যেই আমি চোখ খুলে
বলেছি আয়রে সোনা চাঁদের কণা, অমনি তারা বাতাস।
বাতাস মানে ?
নেই আর নেই।
নেই তো গেল কোথায় ?
কেন আমার গা দিয়ে ঢুকে গেল,
ভিতরে গিয়ে একটু সময় চুপ, তারপর নড়ল, এমন আমি দেখি গো।
এই সময় এমন হয়। বাবা বলল।
মা বলল, কী হয়েছে বললে না।
বাবা বলল, না শুনতে হবে না, আজ
চল্লিশ ডিগ্রির উপরে, রাস্তাঘাট শুনশান, রোদে গায়ের চামড়া যেন পুড়ে যাচ্ছে।
মা বলল, আচ্ছা তুমি স্নান করে এস, নদীর ওখানটা
কেমন গো, ঠান্ডা ?
বাবা বলল, নদীর ধারে যে বট তার তলাটা খুব
ঠান্ডা।
কতটা ছায়া বল।
তাই শুনে ধিতাং জিজ্ঞেস করে,
ছায়া কী গো ?
ছায়া, আমাদের ছায়ায় তুই আছিস
যে সোনা।
এমনি সুখ ?
হ্যাঁ, এমনি সুখ।
বাবা বলল, হ্যাঁ, ঐ ছায়ায় তো
গরমের সময় কতজন বিশ্রাম নেয়।
তুমি ছায়ার তলে থাকতে পারতে,
রোদ পড়লে না হয় আসতে।
আমি তো সেই কথা বললাম বুড়োকে।
বাবা বলল।
বুড়ো, সে কে ?
বাবা হেসে বলল, ও কথা তুমি শুনো না ইশিতা।
কেন শুনলে কী হবে অভি ?
অভি বলল, সবকথা শুনো না,
এখন তোমার ভিতরে দুজন আছে।
ইশিতা বলল, আচ্ছা থাক, রাতে
যখন ওরা ঘুমোয়, তখন বলো, তুমি স্নান করে এস।
অভি বলল, আমি রবিশঙ্কর আর মেয়ে অনুষ্কাশঙ্করের যুগলবন্দী
চালিয়ে দি, তুমি শোনো।
তাই হল। বাপ-মেয়ে একসঙ্গে
বাজাতে আরম্ভ করলেই ধিতাঙেরও নড়া চড়া স্থির হল। সেও শুনতে লাগল। ইশিতা বিছানায়
গড়াল। এই সময় শরীর শুধু গড়াতে চায়। ঘুম আসতে লাগল। ঘুম আসে আবার জাগরণও চলে যেন
একসঙ্গে। সেতার মৃদু লয়ে বাজছে। ঝিলের জলে
ঝিলমিল করে যেমন রোদ, সেই ঝিলমিলের ভিতর যেমন ঢেউ খেলে যায় বাতাস, তেমনি
যেন বাবা মেয়ে হাসতে হাসতে বাজাচ্ছে। ঝিলমিল ধিতাং আর তাদের মা ইশিতা শুনছে।
ঝিলমিল হাত রেখেছে দেওয়ালে। পুতুল পুতুল আঙুলগুলি সরতে লাগল নরম দেওয়ালে। দুই
ফুলের ভিতরে দুই কুঁড়ি। ঝিলমিল টের পায় ওই ওপারে ধিতাংও ছুঁয়েছে দেওয়াল।
সব মনে আছে ঝিলমিলের। রাত্তিরে সে একসময় কান
বন্ধ করেছিল দুই আঙুলে। তাকে বারবার জাগিয়ে দিচ্ছিল ধিতাং। আজ বাবা একটা কথা বলবে
মাকে, শুনব।
কী
কথা ?
জানিনে, বাবা কিছুতে বলবে না, মা শুনবে,
শেষে বলল, রাত্তিরে আমরা যখন ঘুমোব, তখন।
ঝিলমিল বলল, তাহলে আমি ঘুমোব।
শুনবিনে?
না, এ তো আর গান না।
গান ছাড়া কি শুনবিনে ?
মা যা শোনাবে তাই শুনব।
ধিতাং চুপ করে গেল। তাই ! মা যা শোনাতে
চায় না, তা শুনবে না সে? কিন্তু রাতে ঘুমিয়েও তার ঘুম ভেঙে গেল। সে জাগিয়ে দিল
ঝিলমিলকে। ঝিলমিল বলল, দুষ্টু জাগালি কেন, আমি জাগবো না।
জেগে তো গেছিস।
ঝিলমিল কানে আঙুল দিল। আর ধিতাং রইলো
জেগে কান পেতে। শুনল অভি জিজ্ঞেস করছে, ওরা দুজন ঘুমিয়েছে ?
হ্যাঁ গো খুব বাধ্য ওরা, বলেছি সোনারা
ঘুমিয়ে পড়ো, কেমন ঘুমিয়েছে ওরা।
অভি বলল, এবার তুমি ঘুমোও।
ঘুমোব কেন, তুমি দুপুরের কথা বললে না
?
বলব, শোনো সেই অশ্বত্থ, যার ছিল অনেক
ছায়া, তা পড়ে গেছে কাল বিকেলের ঝড়ে, কত পাখি কাঠবিড়ালি মরেছে পড়ে, সবুজ টিয়ারা মরে
পড়ে আছে।
সে কী গো, অমন অশ্বত্থ, পড়ে গেছে।
কাল যেন পাহাড় ভেঙে পড়েছিল, একবুড়ো
ঝড়ের সময় গাছের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল, তার সঙ্গে তার নাতি থেঁতলে মরেছে, একটা
কাঠকুড়ুনি মেয়ে ছিল, সেও চাপা পড়ে মরেছে, কত মরণ যে, পাখি আর পখির ছানা আর পাখির
ডিম......
আর বল না আর বল না। ইশিতা কেঁদে
উঠেছে।
আরো আছে, আর এক বুড়ো নদী পার হয়ে এল
আজ, ভেবেছিল অশ্বত্থঘাটে রেস্ট নেবে, কিন্তু দেখল সেই ছায়াঘাট নেই, সে রোদে হাঁটতে
লাগল, হাঁটতে হাঁটতে সে রোডের ভিতর
মাথাঘুরে পড়ে গেল।
কী হল গো তার ?
পড়েই মরে গেল।
মা গো। ইশিতা কেঁদে ওঠে।
ঝিলমিল কিছুই শোনেনি, কিন্তু ধিতাং
শুনল সব। শুনে তার ভয় করতে লাগল। সে কাঁপতে লাগল। মরে গেল। তারা তো জন্মাবে। মরণ
কাকে বলে। ইশিতা মা যে কেঁদে উঠল, মরণ কারে বলে। মা মা মা। গলা দিয়ে তার আওয়াজ
বেরল না। সে যত ভাবে ছোট হয়ে যেতে থাকে। ওমা মা, মা গো মা, কী বললে, কেন শুনলে? মা
ইশিতা তখন গভীর ঘুমে। সারাদিন দুই সোনাতে খুব দাপিয়েছে। তাদের জন্য দুপুরের ঘুম
হয়নি তেমন। যখন ঘুমোতে যায়, দুই সোনাতে তার গায়ের উপর বসে খিলখিল করে হাসে। গান
গায়, হাট্টিমা টিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম।
ইশিতা ঘুমোছিল। ধিতাং ডেকে ডেকে না পেয়ে
ঝিলমিলকে ডাকছিল। ঝিলমিল তো কানে আঙুল দিয়ে ঘুমিয়েছে। সে জানতে পারল না ধিতাং
ডাকছে। ধিতাং টের পায় কেউ সাড়া দিচ্ছে না। তার মানে? মাগো একবার হাত বুলিয়ে দাও।
খুব ভয় করছে মা।
ধিতাঙের আর সাড়া নেই। একটি হাত পা নাড়ছে
খেলছে আর একটি চুপ। চুপ কেন গো চুপ কেন? সাড়া দে রে সাড়া দে। ধিতাং ধিতাং
বলে......।
নেই ! নেই, কোথায় গেল সে ? উপরেরটা
ঝিলমিল নিচেরটা ধিতাং। ধিতাঙের খোঁজ নেই। ইশিতাকে নিয়ে নদী পেরিয়ে হাসপাতালের দিকে গেল অভি। ইশিতা দেখল, অশ্বত্থ
নেই, হা হা করছে রোদ। মরণ যেন গিলে খেতে
আসছে সব। হাসপাতাল ডাক্তার ওষুধ, ইঞ্জেকশন, ডাক্তারের বিষণ্ন মুখ, নেই নেই। সে
নেই। আর একজন আছে। একে রাখতে হবে মা ইশিতা। ইশিতা কাঁদল। তারপর গ্রীষ্ম গিয়ে
বর্ষা, গাঙে ঢোকে জল, মেঘের দু চোখ সজল। আর কতদিন মা কতদিন ? ঝিলমিল ঝিলমিল ঝিলের জলে ...না না নদীর
জলে...ঢেউ খেলিয়া যায়রে। ছলছল ছলছল আখির জলে ঢেউ খেলিয়া যায়রে, হায় রে। একা ঘুমোয়
সে একা জাগে। একা খেলে সে একা কাঁদে। মা সেই ধিতাংকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। তারপর গেল
বরষা। যাওয়ার আগে ভাসিয়ে দিয়ে ঝিলমিল নদী ছাপিয়ে দিয়ে মেঘ বিদায় নিতে সে বলল, মা
এবার জাগাও তাকে।
জাগাব সোনা জাগাব। আয় তুই আমার কোলে ঘুমবি।
সে কোলে এল শরতের প্রাতে। সে কোলে এসেই ডাকল, ধিতাং......।
মা বলল, ভুলে যা সোনা ভুলে যা।
সে আবার ডাকল, ধিতাং।
মা বলল, ঘুমো ঝিলমিল ঘুমো।
বাবা বাজিয়ে দিল সেই গান। কোন গান ? মায়ের
কোলে শুয়ে সে মায়ের পেটে হাত বুলোতে লাগল, ধিতাঙের গায়ে ছোঁয়া লাগল যেন। ঝিলমিল
শিহরিত হয়ে উঠতে লাগল বারে বারে। ও ঘুমিয়ে আছে অনেকদিন ধরে। ওকে ফেলে সে চলে এল?
সে ধিতাং ধিতাং বলে ডেকে ডেকে কাঁদতে লাগল।
মৃত ভ্রূণটিকে সাফ করে দিয়েছে হাসপাতালে।
এতদিন তাকে বহন করেছিল মা ইশিতা। ঝিলমিলের
সঙ্গে। ঝিলমিল আলোর সঙ্গে ছিল নিকষ অন্ধকার। না থাকার ভার এখন থাকার চেয়ে বেশি হয়ে
উঠছে যে।
লেখক পরিচিতি
অমর মিত্র
বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কাছে ধুলিহর গ্রামে | বিজ্ঞানের ছাত্র | কর্ম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক দপ্তরে | তিনি ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্র উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রকাশিত বই
পাহাড়ের মত মানুষ, অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প, অর্ধেক রাত্রি, ডানা নেই উড়ে যায়, ধুলোগ্রাম, অশ্বচরিত, আগুনের গাড়ী, ধ্রুবপুত্র, নদীবসত, কৃষ্ণগহ্বর, আসনবনি, নিস্তব্দ নগর, প্রান্তরের অন্ধকার, ভি আই পি রোড, শ্যাম মিস্ত্রী কেমন ছিলেন, গজেন ভূঁইয়ার ফেরা, জনসমুদ্র, সবুজ রঙের শহর, সমাবেশ, সারিঘর, সুবর্ণরেখা, সোনাই ছিলো নদীর নাম, হাঁসপাহাড়ি।
পুরস্কার :
সাহিত্য একাডেমী।
বঙ্কিম পুরস্কার--২০০১ ও গল্পের জন্য সর্ব ভারতীয় কথা পুরস্কার ১৯৯৮।
0 মন্তব্যসমূহ