স্বকৃত নোমান

গ্রামের দক্ষিণে
হাট,
হাটের
পশ্চিমে
বহু
পুরনো
জামেয়া
মাদ্রাসা।
দশ
গ্রামে
সুনাম
আছে।
মাদ্রাসার
দপ্তরির
চাকরি
আবুল
কাশেমের।
ঘন্টা
বাজানো
তার
কাজ
হলেও
ছাত্র-শিক্ষক
সবাই
তাকে
বড়হুজুরের
খাসখাদেম
হিসেবেই
জানে।
আড়াই
শ
টাকা
বেতনে
চাকরিতে
ঢুকেছিল,
বাড়তে
বাড়তে
দশ
বছরের
মাথায়
এক
হাজারে
এসে
ঠেকেছে।
কিন্তু
যে
হারে
টাকার
দাম
কমছে,
হাজার
টাকায়
কি
আর
সংসার
চলে?
অনিবার্য
কারণেই
তাকে
বিকল্প
ধান্দা
করতে
হয়।
কিন্তু তার
পক্ষে
কী
এমন
ধান্দা
সম্ভব!
বড়হুজুরের
খাসখাদেম
বলে
লোকে
অল্পবিস্তর
ভক্তিশ্রদ্ধা
করে
বৈকি।
গায়ে
হুজুরিয়ানা
লম্বা
জোব্বা,
মাথায়
পাঁচকলিদা
টুপি
আর
মুখে
নূরানি
চাপদাড়ি
নিয়ে
তো
চিটারি-বাটপারি
করা
যায়
না।
লেখাপড়াও
তেমন
নেই,
জামেয়া
মাদ্রাসা
থেকে
হাপ্তম
পাস।
এই
পাস
দিয়ে
মসজিদের
ইমামতি
পাওয়াও
মুশকিল।
গ্রামবাসীর
অবস্থা
এতই
নাজুক,
পাঁচ
শ
টাকা
বেতন
দিয়ে
মুয়াজ্জিন
রাখবে
সেই
উপায়ও
নেই।
ইমামকেই
মুয়াজ্জিনের
কাজ
করতে
হয়।
নইলে
আবুল
কাশেমের
পক্ষে
মুয়াজ্জিনের
কাজ
জুটিয়ে
নেয়াটা
কঠিন
হতো
না।
সতের বছর
বয়সে
চরদরবেশ
গ্রামের
নারিকেল
বেপারি
এনায়েতালির
তের
বছর
বয়সী
মেয়ে
সফুরাকে
বিয়ে
করে
কাশেম।
যৌতুকও
কম
নেয়নি।
নগদ
দশ
হাজার
টাকা,
একটা
সোনালি
চেইনের
হাতঘড়ি
আর
একটা
সাইকেল।
সফুরার
বয়স
আঠারো
হওয়ার
আগেই
সে
চার
সন্তানের
মা।
কাপাল
ভালো,
বিয়ের
পরপরই
দপ্তরির
চাকরিটা
পেয়েছিল
কাশেম।
নইলে
তার
ছিদ্দত
দেখার
মতোও
লোক
থাকত
না।
কিন্তু এখন
কোনোভাবেই
এক
হাজার
টাকায়
সংসার
চলে
না।
মাদ্রাসার
লিল্লাহ
বোডিংয়ে
তার
দু-বেলা
খানা
ফ্রি,
তবু
কুলাতে
পারে
না,
অভাব
লেগেই
থাকে।
বিকেলে
মাদ্রাসা
ছুটি
হলেও
তার
ছুটি
হয়
না,
বড়হুজুরের
খেদমতে
মাগরিবের
অক্ত
পর্যন্ত
থাকতে
হয়।
নইলে
অন্য
কিছু
করে
রুজি
বাড়াতে
পারত।
হাটে
একটা
পান-সিগারেটের
দোকান
দেয়ার
কথা
ভেবেছিল
একবার।
পুঁজি
হিসেবে
শ্বশুরের
কাছে
হাজার
পাঁচেক
টাকা
ধার
চেয়েছিল।
টাকা
দিতে
আপত্তি
ছিল
না
শ্বশুরের,
কিন্তু
বাধা
হয়ে
দাঁড়াল
তার
হুজুরিয়ানা।
চাকরি
করে
মাদ্রাসায়,
চেহারা-সুরত,
পোষাক-আষাকে
হুজুরিয়ানা
ভাব;
বিড়ি-সিগারেট
বেচা
কি
তাকে
মানায়?
দুই.
সমুদ্রপারের এই
জনপদে
স্বতন্ত্র
নামের
কোনো
গ্রাম
নেই,
সব
গ্রামের
আগেই
‘চর’
শব্দটা
জুড়ে
আছে।
জনবসতিপূর্ণ
শত
শত
চরের
এক
চর
চরগণেশ।
কবে
কোন
কালে
দেবতা
গণেশ সমুদ্র
থেকে
উঠে
এসেছিলেন,
নাকি
ইঁদুরের
পিঠে
চড়ে
পুবের
পাহাড়
থেকে
নেমে
এসেছিলেন,
নাকি
আকাশ
থেকে
লাফ
দিয়ে
এই
গ্রামে
পড়েছিলেন
কে
জানে।
নইলে
তার
নামে
গ্রামের
নাম
হবে
কেন!
হতে
পারে
তার
ভক্তরা
তার
নামে
গ্রামের
নাম
রেখেছিল।
কিন্তু
শেষ
পর্যন্ত
নিজেদের
পত্তন
করা
গ্রামে
বসত
করতে
পারেনি
তারা।
দ্বীন-এসলামের
খেদমতগার
বড়হুজুর,
তার
শাসিত
গ্রামে
গণেশভক্তরা
থাকে
কী
করে!
গণেশভক্তদের
খেদাতে
পারলেও
বড়
হুজুর
মেলা
কোশেশ
করেও
গ্রামের
নামটা
পাল্টাতে
পারেননি।
তা চরগণেশ
গ্রামের
এদিকে
চরচান্দিায়া,
ওদিকে
চরখোয়াজ,
তার
পরের
গ্রাম
চরদরবেশ,
তারও
পরের
গ্রাম
চরমিতালি।
এরকম
আরো
কত
শত
চর
যে
আছে
ঠিকঠিকানা
নেই।
বছর
বছর
জননীর
মতো
সমুদ্র
জলের
আঁচল
সরিয়ে
বুক
উদোম
করে
একেকটা
চর
জাগিয়ে
দেয়,
আর
সন্তানরা
মায়ের
স্তন
চুষতে
বিরান
চরে
ডেরা
গাড়ে।
সেদিন খাঁখাঁ
দুপুরে
আবুল
কাশেমের
খোঁজে
চরমিতালি
থেকে
লোকটা
এলো
চরগণেশ
গ্রামে।
কাশেম
তখন
মাদ্রাসায়
বড়হুজুরের
খেদমতে
কি
ঘণ্টা
পেটানোর
কাজে
ব্যস্ত।
পাঁচ
বছর
বয়সী
ন্যাংটা
ছেলে
লাতু
এক
দৌড়ে
বাপের
কাছে
গিয়ে
হাজির।
: আব্বা,
আমনেরে
একটা
মানু
খোঁজে?
: কোন
মানু,
বাজান?
: চিনি
না।
আবুল কাশেম
আধা
ঘণ্টার
ছুটি
নিয়ে
বাড়ি
এসে
দেখে,
ঘাটার
আমগাছটার
তলায়
মাথায়
হাত
দিয়ে
বসে
আছে
লোকটা।
: সালামালাইকুম।
: অলাইকুম...।
আমনে
আবুল
কাশেম?
: জে।
আমনে?
: আমারে
চিনবেন
না
ভাই।
আমি
লায়েকুদ্দিন,
সাকিন
চরমিতালি।
জরুরি
কিছু
কথা
আছে
আমনের
সাথে।
কথা জরুরি
বটে।
বিয়ে
করেছে
দু-বছর
হয়নি,
অথচ
রাগের
মাথায়
সুন্দরী
বৌটাকে
তিন
তালাক
দিয়ে
বসল
লায়েক।
দু’বছরেও
বাপ
হতে
পারেনি,
এই
কারণে
বৌয়ের
উপর
মনে
মনে
কিছুটা
নাখোশ
ছিল।
তাই
বলে
ভালোবাসার
কমতি
ছিল
না।
কোন
কুফায়
যে
পেয়েছিল
সেদিন,
কথায়
কথায়
বৌকে
বাঁজা
বলে
বসল।
বৌ
গেল
চটে,
স্বামীকে
বলে
বসল
আঁটকুড়া।
কে
আর
ঠেকায়
লায়েককে,
বৌয়ের
চেয়ে
দ্বিগুণ
চটে
গেল
সে।
চটাচটির
একপর্যায়ে
সর্বশেষ
শক্তিটা
প্রয়োগ
করে
বসল
বৌয়ের
উপর―তালাক।
হায় হায়
তালাক!
মাটিতে
গড়াগড়ি
খেয়ে
বিলাপ
শুরু
করল
বৌ।
কেঁদেকেটে
হয়রান
হয়ে
পোটলা-পুটলি
নিয়ে
যখন
বাপের
বাড়ি
রওনা
হলো,
অমনি
লায়েকের
দিলদরিয়ায়
তুফান
উঠল।
ঘটনার
জন্য
বৌয়ের
কাছে
দুঃখপ্রকাশ
করল।
উঁহু,
পাষাণীর
মন
গলল
না।
হাত
ধরে
মাফ
চাইল,
তবু
টলানো
গেল
না।
শেষমেষ
পুরষত্বের
মাথা
খেয়ে
পা
পর্যন্ত
ধরল,
তবু
মাফ
পেল
না।
বৌ মাফ
করবেই-বা
কেমন
করে?
সে
গেরস্ত
বাড়ির
বেটি,
এই
বুঝটুকু
তো
তার
আছে
যে,
থুতু
একবার
মুখ
থেকে
ফেলা
হলো
আর
মুখে
তোলা
যায়
না।
মাফ
না
হয়
সে
করল,
ফেলা
থুতু
আবার
না
হয়
মুখে
তুলল
লায়েক,
তাতে
কি
সব
চুকেবুকে
যাবে?
শরা-শরিয়তের
ব্যাপারটা
তো
রয়েই
যাচ্ছে।
আর
যাই
হোক,
শরিয়তের
বাইরে
তো
সে
যেতে
পারে
না।
তার
স্বামীও
কি
পারে?
তবে হ্যাঁ,
দুপুরবেলায়
খাওয়ার
সময়
লায়েক
যখন
বৌকে
জড়িয়ে
ধরে
কপালে
চুমু
খেল,
ঘটে
যাওয়া
ঘটনার
জন্য
আবারও
মাফ
চাইল,
তখন
বৌয়ের
দিলেও
দয়া
হলো।
স্বামীর
মুখের
দিকে
তাকিয়ে
আরো
চাগা
দিয়ে
উঠল
দয়াটা।
স্বামীর
বুকে
মুখ
লুকিয়ে
বুকভাঙা
কান্নায়
ভেঙে
পড়ল।
ওই কান্নাতেই
হয়ত
সব
ঝামেলা
চুকেবুকে
যেত,
যদি
না
হঠাৎ
সামনে
এসে
দাঁড়াত
শরিয়ত।
বৌয়ের
কানে
কানে
কে
যেন
বলে
গেল―যে
স্বামী
তোমাকে
এক-দুই-তিন
তালাক
দিল,
তার
সঙ্গে
তুমি
ঘর
করবে
কেমন
করে?
সে
তো
এখন
তোমার
স্বামী
নয়,
বেগানা
পুরুষ।
এই
যে
বেগানা
পুরুষটা
তোমার
হাত
ধরল,
পা
ধরল;
সবশেষে
জড়িয়ে
ধরে
চুমু
খেল,
তুমি
তার
বুকে
মাথা
রেখে
রোনাজারি
করলে―কালহাশরের
মাঠে
এর
কী
শাস্তি
হতে
পারে
জানো?
না, জানে
না
লায়েকুদ্দিনের
বৌ।
লায়েকুদ্দিনও
জানে
না।
জানে
কেবল
চরমিতালি
জামে
মসজিদের
ইমাম।
অজানা
কালহাশরের
সবকিছু
তার
জানা।
লায়েকুদ্দিন
ফুলহাতা
গেঞ্জিটা
গায়ে
দিয়ে
মসজিদের
দিকে
রওনা
হয়।
তখন
আসরের
জামাত
শেষ,
মুসল্লিরা
যার
যার
বাড়ি
ফিরছে।
ইমামসাবের
পেটের
ব্যারাম,
লোটা
হাতে
তিনি
জরুরতখানার
দিকে
যাচ্ছিলেন।
: কী
লায়েক
মিয়া?
খবর
কী?
: জে
হুজুর।
: কিছু
কইবা?
: জে
হুজুর।
: অজু
আছে?
: জে
না
হুজুর।
: অজু
করে
মসজিদের
বারান্দায়
গিয়া
বসো,
আমি
জরুরতটা
সেরে
আইতেছি।
ঘটনার আদ্যপ্রান্ত
খুলে
বলে
লায়েক।
শুনে
ইমাম
সাহেব
তওবা-এস্তেগফার
পড়েন―ছে!
ছে!
ছে!
তালাক
দেয়া
স্ত্রীলোকের
যে
হাত
তুমি
ধরছ,
যে
পা
তুমি
ধরছ,
যে
গালে
চুমু
খাইছ,
শরীরের
যে
জায়গা
জড়িয়ে
ধরছ―সব
জাহান্নামের
আগুনে
জ্বলবে।
আস্তাগফিরুল্লাহ...।
: তার
তো
কোনো
দোষ
নাই
হুজুর।
ধরছি
তো
আমি।
জাহান্নামের
আগুনে
জ্বইললে
তো
আমার
অঙ্গ
জ্বইলবে।
: চুপ
করো
নালায়েক।
তুমি
শরিয়তের
কী
বোঝ?
না, কিছুই
বোঝে
না
লায়েকুদ্দিন।
বুঝলে
কি
ইমামসাবের
কাছে
ছুটে
আসে?
বোঝেন
কেবল
ইমামসাব।
শরিয়তের
মালিক
তিনি,
কালহাশরের
কা-ারি―বোঝার
অধিকার
কেবল
তারই।
লায়েকুদ্দিনের
মুশকিল
আসান
করার
দায়ও
তার।
মুশকিল
আসানের
ফতোয়া
দিলেন
তিনি―একমাত্র
ফায়সালা
হিল্লা
বিয়া।
এছাড়া
তালাক
দেয়া
স্ত্রীলোকের
সঙ্গে
ঘর
করা
বিলকুল
হারাম।
মাথা চক্কর
দেয়
লায়েকুদ্দিনের,
চোখেমুখে
অন্ধকার
দেখে,
বুকের
ভেতরে
বঙ্গোপ
সাগরের
ঢেউ
আছড়ে
পড়ে।
তার
কবুল
করা
বৌকে
আরেকজন
কবুল
করবে!
হাতে
হাত,
চোখে
চোখ,
ঠোঁঠে
ঠোঁট
রাখবে!
একই
বিছানায়
রাত
কাটাবে!
লায়েকুদ্দিন
মানতে
পারে
না।
কিন্তু
না
চাইলেও
মানতে
তাকে
হবেই।
সমাজে
থাকতে
হলে
শরাশরিয়ত
মেনেই
থাকতে
হবে।
হারাম বৌকে
হালাল
করতে
গ্রামে
গ্রামে
ঘুরে
বেড়ায়
লায়েক,
তালাক
দেয়া
বৌয়ের
জন্য
একজন
অস্থায়ী
স্বামী
খোঁজে।
এমন
স্বামী,
যে
তার
প্রিয়তমার
দিকে
ভুলেও
তাকাবে
না,
একটিবার
ছুঁয়ে
দেখবে
না।
খুঁজে
খুঁজে
হয়রান
হয়
লায়েক,
কিন্তু
কাউকে
পায়
না।
ওদিকে তার
বৌ
চলে
গেছে
বাপের
বাড়ি।
লোকলজ্জায়
বাড়ি
ফিরতে
পারে
না
লায়েক।
এ
গ্রাম
ও
গ্রাম
ঘুরতে
ঘুরতে
ধর্ণা
দেয়
আবুল
কাশেমের।
: ভাই,
আপনে
আমার
ধর্মের
ভাই।
আমার
এই
মুশকিলটা
আসান
করেন।
কেউ
জাইনবে
না
আমরা
তিনজন
ছাড়া।
তিনজনের
বাইরে
জাইনলে
শুধু
ইমামসাব
জাইনবে।
বিয়া
করে
সাথে
সাথে
তালাক
দিবেন।
এই
নেন
দুই
হাজার,
বাকি
দুই
হাজার
তালাক
দেয়ার
পরে
পাইবেন।
পাঁচ শ
টাকার
চকচকে
চারখানা
নোটের
দিকে
তাকিয়ে
চোখ
চকচক
করে
আবুল
কাশেমের।
নগদে
দুই,
বাকিতে
দুই―পাক্কা
চার
মাসের
মাসের
বেতন।
এক
সঙ্গে
চার
হাজার
টাকা
সে
কতদিন
আগে
দেখেছে
মনে
করতে
পারে
না।
তিন.
কথা ছিল
চারজনের
বাইরে
কেউ
জানবেন,
কিন্তু
ঢোলের
বাড়ি
কি
কাপড়ের
তলায়
থাকে!
লায়েকুদ্দিনের
তালাক
দেয়া
স্ত্রীকে
বিয়ে
করেছে
আবুল
কাশেম―গ্রামে
গ্রামে
ছড়িয়ে
পড়ল
এই
খবর।
শুনে
সফুরা
একবার
বেহুঁশ
হয়,
আবার
হুঁশে
আসে।
বাড়িতে
কান্নাকাটির
রোল
পড়ল,
ছেলেমেয়েরা
সারা
বাড়ি
মাথায়
তুলল।
পাড়াপড়শিরা
এসে
সান্ত¦না
দিয়ে
কূল
পেল
না।
দুদিন পর
বাড়ি
ফিরল
আবুল
কাশেম।
রাস্তাঘাটে
তাকে
দেখে
লোকে
ঠাট্টা-তামাশা
করল।
সে
হে
হে
করে
হাসল।
স্বামীকে
দেখে
সফুরা
বিলাপ
শুরু
করে
দিল।
চরমিতালির
ঘটনা
দুদিনেই
যে
চরগণেশ
পর্যন্ত
পৌঁছে
গেছে,
বুঝতে
বাকি
থাকল
না
কাশেমের।
আসল
ঘটনা
খুলে
বলে
সফুরাকে―পাগল!
তোমারে
ছাড়ি
আমি
আরেকখান
শাদি
করমু!
তুমি
আস্তা
একটা
পাগল!
: আমি
পাগল?
লোকে
কি
মিছা
কইছে?
: শোনো,
লোকে
মিছা
কয়
নাই।
বিয়া
আমি
করছি
সত্য,
তবে
হিল্লা
বিয়া।
এই
নাও
দুই
হাজার।
: এত
টেকা!
সফুরার
চোখ
কপালে
ওঠে।
: হ্যাঁ।
কাল
তাকে
তালাক
দিলে
আরো
দুই
হাজার
পামু।
আচমকা জ্বলে
উঠল
সফুরা―খ্যাতা
পুড়ি
আমনের
টেকার।
আমার
টেকার
দরকার
নাই।
আমনে
এত
বড়
কামটা
ক্যামনে
করলেন?
ছে!
ছে!
ছে!
আমনে
না
মুলবি।
চুপ কর
মাগী!
চুলের
মুঠো
ধরে
বৌয়ের
গালে
কষে
চড়
মারে
কাশেম।
আমার
চাইতে
তুই
শরা-শরিয়ত
বেশি
বুঝস!
শরিয়তের
কোথায়
লেখা
আছে
হিল্লা
বিয়া
হারাম?
নাফারমান
আওরত!
চুপ করে
যায়
সফুরা।
চুপ
তাকে
করে
যেতে
হয়
চার
সন্তানের
মুখ
চেয়ে।
ছেলেমেয়ে
রেখে
সে
বাপের
বাড়ি
চলে
যেতে
পারে
বটে,
কিন্তু
তাতেই
কি
সমাধান?
কী
করবে
গিয়ে?
ভাঙা
গাল,
খাদেপড়া
চোখ,
কালিময়লা
ভাঙাচোরা
গতর―দ্বিতীয়বার
কে
তাকে
কবুল
করবে।
দূরদূরান্তের গ্রাম
থেকে
আবুল
কাশেমের
কাছে
প্রস্তাব
আসে।
এক
রাতের
বিয়ে।
হিল্লাবৌয়ের
সঙ্গে
কখনো
একই
বিছানায়,
কখনো
পর্দার
আড়ালে
থেকে
রাত
কাটিয়ে
দেয়।
একই
বিছানায়
রাত
থাকলে
চার
হাজার,
পর্দার
আড়ালে
থাকলে
ছয়
হাজার।
কখনো
কখনো
সাত-আট
হাজারও
মেলে।
তবে
একই
বিছানায়
না
থাকার
কথা
কেউ
জানে
না।
কাউকে
জানানো
হয়
না।
জানলে
বিয়ে
শুদ্ধ
হবে
না,
টাকাও
জায়েয
হবে
না।
দফায় দফায়
হিল্লা
বিয়ে
করে
টাকা
রোজগার
করে
কাশেম।
আগের
মতোই
চুপ
করে
থাকে
সফুরা,
স্বামীর
কাজে
নাক
গলায়
না।
পুরুষের
কাজে
নারীর
নাক
গলানো
হারাম।
স্বামী
তো
শরিয়তের
বরখেলাফ
কিছু
করছে
না।
তাই
সে
শুনেও
শোনে
না,
বুঝেও
বোঝে
না।
মাঝে
মধ্যে
গোপনে
চোখের
পানি
ঝরলেও
কাউকে
দেখায়
না।
চার.
আবুল কাশেমের
হিল্লা
বিয়ের
সংখ্যা
যখন
বিয়াল্লিশ
পূর্ণ
হলো,
তখন
তার
বড়
বেটা
লাতুর
বয়স
তেইশ।
বেটার
ঘরে
নাতির
বয়স
পাঁচ।
বেটাকেও
মাদ্রাসায়
হাশতম
পর্যন্ত
পড়িয়েছে।
বেটাও
তার
মতো
হুজুরিয়ানা
জোব্বা
পরে।
মুখে
লালচে
লম্বা
দাড়ি।
বেটার
বেটাকেও
একই
মাদ্রাসার
নূরানি
বিভাগে
ভর্তি
করিয়েছে
কদিন
আগে।
ছেলের
কাঁধে
সংসারের
খানিকটা
ভার
তুলে
দিতে
পেরে
সুবিধা
হয়েছে
কাশেমের।
এক
রাতের
জায়গায়
হিল্লাবৌয়ের
সঙ্গে
তিন-চার
রাত
কাটালেও
বাড়ির
কথা
ভাবতে
হয়
না।
টাকা
তাতে
কিছু
কম
পায়
বটে,
কিন্তু
খায়েশ
তো
মেটে।
আবুল কাশেম
একদিন
দেখল
তার
বেটা
লাতু
বাড়িতে
নেই।
বেটাবৌয়ের
কাছে
খোঁজ
নিয়ে
জানল,
বেটা
তার
চরদৌলতে
গেছে।
তিন
রাত
থাকবে
সেখানে।
চমকে উঠল
কাশেম।
বলা
নেই
কওয়া
নেই
লাতু
হঠাৎ
চরদৌলত
কেন
যাবে?
সেখানে
তো
তার
কোনো
কটুম্ব
নেই।
তাহলে?
ধপাস
করে
ঘরের
দাওয়ায়
বসে
পড়ল
সে।
গতকাল
কে
যেন
তাকে
বলেছিল,
চরদৌলতের
জনৈক
আবছার
মিয়া
তার
বৌকে
তালাক
দিয়েছে।
: লাতু
তোমারে
টেকাপয়সা
কিছু
দিয়া
গেছে?
বেটাবৌয়ের
কাছে
জানতে
চাইল
কাশেম।
: জে
আব্বাজান।
জবাব
দেয়
বৌ।
: কত?
: জে,
দুই
হাজার
টেকা।
দুই হাজার
টেকা!
আবুল
কাশেমের
ভ্রু
কুঁচকে
যায়।
দূরে
দাঁড়িয়ে
সফুরা
স্বামীর
মুখের
দিকে
তাকিয়ে
থাকে।
মুখে
ম্লান
হাসি,
ঠোঁটের
কোণে
তীক্ষè
বিদ্রুপ।
সূর্যের
ঝলকে
সফুরার
মুখ
পষ্ট
দেখতে
পায়
না
কাশেম।
বিস্ফারিত
চোখে
সফুরার
মুখের
দিকে
তাকিয়ে
থাকে।
সফুরা
তার
ক্ষীণকণ্ঠে
বলে―আর
কতদিন
লাতুর
বাপ?
১২.০৮.২০১৩
লেখক পরিচিতি
স্বকৃত নোমান
প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ঔপন্যাসিক। ১৯৮০’র ৮ নভেম্বর ফনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দৈনিক আজকের কাগজের মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু। ‘কয়েকটি জোব্বার মহাপ্রয়াণ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধের মাধ্যমে প্রয়াত নাট্যকার ড. সেলিম আল দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কাছেই বিশ্বসাহিত্যের পাঠ নেন নোমান। সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর আবার সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি নিউজপোর্টাল ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কম ও সাপ্তাহিক ধাবমান-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর।
২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস নাভি। এরপর প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ‘ধুপকুশী’ (পরিবর্তিত নাম ‘বংশীয়াল’), ‘জলেস্বর’, ‘রাজনটী’ ও ‘হীরকডানা’। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত গল্প লিখছেন। ইতিহাস, ইতিহাসের মানুষ, বিশাল বাংলার মিথ, লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, বঞ্চিত মানুষদের সুখ-দুঃখের পাঁচালি তাঁর গল্প-উপন্যাসে ভিন্ন রকমের মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়। তাঁর উপন্যাসের ভাষা ও আঙ্গিক একেবারেই আলাদা, নিজস্ব। কথাসাহিত্যে তিনি এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।”
স্বকৃত নোমান
প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ঔপন্যাসিক। ১৯৮০’র ৮ নভেম্বর ফনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দৈনিক আজকের কাগজের মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু। ‘কয়েকটি জোব্বার মহাপ্রয়াণ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধের মাধ্যমে প্রয়াত নাট্যকার ড. সেলিম আল দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কাছেই বিশ্বসাহিত্যের পাঠ নেন নোমান। সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর আবার সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি নিউজপোর্টাল ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কম ও সাপ্তাহিক ধাবমান-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর।
২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস নাভি। এরপর প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ‘ধুপকুশী’ (পরিবর্তিত নাম ‘বংশীয়াল’), ‘জলেস্বর’, ‘রাজনটী’ ও ‘হীরকডানা’। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত গল্প লিখছেন। ইতিহাস, ইতিহাসের মানুষ, বিশাল বাংলার মিথ, লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, বঞ্চিত মানুষদের সুখ-দুঃখের পাঁচালি তাঁর গল্প-উপন্যাসে ভিন্ন রকমের মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়। তাঁর উপন্যাসের ভাষা ও আঙ্গিক একেবারেই আলাদা, নিজস্ব। কথাসাহিত্যে তিনি এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।”
0 মন্তব্যসমূহ