বীরেন মুখার্জী
ছোটগল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাতচল্লিশে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির পর নানা কারণে এ উপমহাদেশ অস্থির হয়ে ওঠে। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রতত্ত্বের মোহ কেটে গিয়ে সামনে চলে আসে বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটি। ফলে এ সময় একদিকে যেমন সঙ্কটময় অন্যদিকে নির্মাণের জন্যও হয়ে ওঠে উপযুক্ত। সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে সব সময়ই ক্রিয়াশীল থাকে। এ সময়পর্বেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তাল পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট হতাশাবোধ, ব্যর্থতাবোধ ও অসন্তোষের নানামুখী টানাপড়েন গ্রাস করে মানব অস্তিত্ব¡কে। শিল্পায়নের ফলে পুঁজির বিকাশ ঘটতে থাকে দ্রুত। শিল্পী চিত্তেও পুঞ্জিত হতে থাকে নানামাত্রিক অসন্তোষ, নৈঃসঙ্গ্য ও হতাশা। এ পর্বেরই শক্তিমান ছোটগল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
শিল্প নির্মাণে অনুশীলনই হচ্ছে মূলকর্ম। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত যে শিল্প নির্মাণ করেছেন তার মূলে নিহিত রয়েছে গতানুগতিকতার বিপরীতে তার স্বতন্ত্র অনুশীলন। গল্পের প্রচল স্রোতে গা না ভাসিয়ে তিনি ব্যতিক্রমী ধারায় গল্প লিখতে শুরু করেন ষাটের সময়পর্ব থেকে। গল্পের ভাষায় টেনে আনেন কাব্যময়তা। যে কারণে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্প হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র। তার গল্প কবিতার মতোই সুরেলা, ইঙ্গিতময় ও রহস্যপূর্ণ। গল্পের পটভূমে তিনি মানবমনস্তত্ত্ব ও মানব সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়াদি বিশ্লেষণ করেছেন। কথাসাহিত্যেকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাঠকের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ স্থাপন এবং ভাবনা বিনিময়-- জ্যোতিপ্রকাশের গল্প পাঠে এ সত্যটিই যেন স্পষ্ট হয়। তিনি ‘সেই বর্গের লেখক যাকে চিনে নিতে হয়; খেয়াঘাটের মাঝির মতো সহজ পরিচয় মেলে না।’
গল্পভাষা আবিস্কারের পর থেকে গল্প নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে আসছে। ছোটগল্পের বিবর্তনের ধারায় যুক্ত হয়েছে কাব্যবোধ। মানবজীবনের জটিল সঙ্কেতময়তা ছাড়া গড়পরতা যাপন জ্যোতিপ্রকাশের গল্পের বিষয়বস্তু নয়। ‘জীবনকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে, ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের যে প্রযুক্তিগত কৌশল তা বাংলাদেশের ছোটগল্পে তিনিই প্রথম প্রয়োগ করেন। প্রকৃতির বর্ণনা আর যাপিত জীবনের বর্ণনা কি করে সাগরের নোনা জলে নদীর অনোনা জল মিশে যাবার মতো একেবারে অভিনতুন জলধারায় পরিণত হয়, তার গল্পের শরীর আর আত্মা তো তাই-ই।’ এ ধারায় তার ‘পরমাত্মীয়’ গল্পের পাঠ নেয়া যেতে পারে। গল্পটি শ্রীমন্ত ও তার বন্ধু সাঈদের ব্যক্তিগত অনুভূতিঋদ্ধ কথামালায় রচনা করেছেন তিনি। অনুপ্রবেশকালে গল্পটিকে দীর্ঘায়তনের কবিতা মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। দুই বন্ধুর নস্টালজিক হওয়ার কাহিনী বিবৃতির পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অঙ্কিত হয়েছে এ গল্পে। দুই বন্ধু তাদের বিগত দিনের স্মৃতি আওড়িয়ে চলে কাব্যিক ভঙ্গিমায়। মানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কথায় পরিপূর্ণ। অথচ মানুষ যা ভাবে তা সবসময় বলে না। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত গল্পের জমিনে অতি সরলভাবেই মানুষের এই ব্যক্তিক সত্তার অনুসন্ধান করেছেন। এতে তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন-- ‘মুহূর্ত আমাদের জীবন-কথা, আমার, আমাদের ভাবনা। তাই সব বলে না কেউ। বলা যায় না।’ জীবন যে কত আশ্চর্য তা তিনি এ গল্পের পটভূমে ধারণের চেষ্টা করেছেন। শ্রীমন্ত সাঈদকে বলে-- ‘তোমার সেই আশ্চর্যকে এবং আমাদের কথার একসঙ্গে মেশাকে। দু’চোখ ভরে দেখলাম। পেছনে কৃষ্ণ মেঘের স্তূপ এবং সামনে পড়ন্ত বেলার রোদকে রেখে, সমস্তটা আকাশ আর সব দেওদার শিরিষের শীর্ষগুলো কী অদ্ভুত এবং আশ্চর্য সোনা রঙে মাখামাখি হয়ে গেছে।’ এভাবে জীবনের সঙ্গে প্রকৃতি-যাপনের অপূর্ব মেলবন্ধন তিনি দক্ষ শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন প্রায় প্রতিটি গল্পে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানসিক দ্বন্দ্ব-সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে তার ‘পিতৃঘ্ন’ গল্পে। আপন মাতার স্নেহবঞ্চিত, পিতার অবহেলা ও বিমাতার বিমুখতায় বেড়ে ওঠা এক যুবকের যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের বাস্তবতা এ গল্পের পটভূমে অঙ্কিত হয়েছে। যার কাছে মাতার মৃত্যুর অব্যবহিত পরের আর্তচিৎকার এবং সান্ত¡নাদানরতা অগ্রজার শরীর স্পর্শ, মৃতার পদযুগল ও তার বর্ণ ছাড়া আর কোনও সম্বল নেই। যুবকটি এক সময় পিতার ওপর নিজের বঞ্চিত জীবনের প্রতিশোধ নিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। যুবকের পিতাও যে বিষয়টি বোঝেন না তেমনটিও নয়। কিন্তু কিছুই করার থাকে না তার। মনে হয় সময়ের দাস তিনি। এ গল্পটিকে কোনও অবস্থায়ই প্রচল অবয়বের গল্প বলা চলে না। ‘ষাটের সময়পর্বের কথাকর্মীরা প্রচল প্রথা ভাঙার তীব্র নেশা নিয়ে অতিক্রম করেন সঙ্কট ও দ্বন্দ্বমুখর সময়’ কথাটি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বলা যায়, বাংলাদেশের কথা সাহিত্যের আজকের যে শক্ত অবস্থান কিংবা গল্পের বহুমাত্রিক গতিমুখ নির্ণয়ের যে সার্থক ধারাÑ এর রূপকারদের মধ্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের নাম প্রথম সারিতে। রচনার শুরু থেকেই তিনি মানবমনস্তত্ত্ব অন্বেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। গল্পের জমিনে মানবজীবনের পাশাপাশি গৃহস্থালীর খুঁটিনাটি তুলে আনেন। সাংসারিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনপ্রণালীর মধ্যে দাম্পত্য জীবন একটি ঘনিষ্ট অনুষঙ্গ। এই দাম্পত্য জীবনের ভেতরের টানাপড়েন তিনি তুলে ধরেন ‘সরল সংসার’ গল্পে। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর বংশ মর্যাদা উঁচু-নিচু হলে যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ উবে যায় সেটা তিনি এঁকেছেন এ গল্পে। ‘দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা সব মানুষেরই আলাদা আলাদা, একের স্বাদ অন্যে বোঝে না। তাই এই স্ব কিছুর সমন্বয়ে স্বতন্ত্র মানুষ গড়ে ওঠে।’ এ কথাটিই তিনি গল্পের সেনমশায় চরিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটির প্রধান চরিত্র সেনমশায় হলেও তার স্ত্রী নন্দরানীও একই কাতারে। সেনমশায় মূলত নন্দরানীদের আশ্রিত এবং নিজে নিম্নবর্গের। গল্পের ভেতর নন্দরানী ও সেনমশায়ের সংসার ধর্মের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক, আচরণ ও কর্মপরিধির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ধনীর মেয়ে হিশেবে নন্দরানী নিজেকে প্রভু ভাবতে পছন্দ করে। সমাজের নিম্নবর্গের মানুষকে সে মনে করে কাকের মতো। তার বিশ্বাস নিম্নবর্গের কাজই হলো উচ্চবর্গের ডাকে সাড়া দেওয়া। গল্পে সংসারের অস্তিত্ববাদী চেতনার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
সমাজ-সংসারের মানুষ কখনও সুখী আবার কখনও অসুখী। কিন্তু কেন এই বৈপরীত্য? নাকি এটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তার ‘রেহাননামা’ গল্পে। কায়িক পরিশ্রমী একজন কৃষক গৃহস্ত কোন সুখের আশায় সাদা কাগজে সই করেছিলেন। ‘কী দেওয়ার ছিল তার? কিংবা কিছু পাওয়ার জন্যই কি?’ ‘রেহাননামা’ গল্পে সাদা কাগজে সই করা নিয়ে জাদুবাস্তবতার আশ্রয় নিয়েছেন লেখক। যে গৃহস্ত ঋণ নেওয়ার আগে উন্নয়ন সমিতিতে যোগ দিয়ে কিছু লেখা, কিছু পড়া এবং নিজের নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছিল সেই গৃহস্ত কী নিজের গর্ব প্রকাশের জন্যই সাদা কাগজে সই করেছিল? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি, এমনকি ওই কৃষক আততায়ীর হাতে খুন হলেও। গল্পটি পাঠে পাঠক কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলেও বেদনাজর্জর মানসিক সঙ্কটে পড়েন। আর এটাই জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। তার ‘গদ্যরীতি গল্পের চরিত্রের চেয়েও অগ্রগামী’। তার গল্পের কাহিনী কাব্যময় গদ্যশৈলীতে এগিয়ে যাওয়ার কারণেও সুখপাঠ্য। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পের ভেতর আছে কবিতার বাস, আছে চিত্রকল্প এবং নিজস্ব ভাষার অমিয় সৌন্দর্য। রয়েছে মানুষের আবেগকে সংহত করে শিল্প নির্মাণের প্রয়াস। মানব জীবন, জীবনযাপনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতার কারণেই তার গল্প হয়ে উঠেছে পৃথক। বলা যায়, শুধুমাত্র গল্প বলার জন্যে তিনি গল্প লেখেননি। শিল্প নির্মাণ যেমন তার কাছে মুখ্য তেমনি মানুষের জটিল মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উন্মোচনেও তিনি থেকেছেন তৎপর। আবার আটপৌরে দৃশ্যাবলিও তার চোখ এড়ায়নি। ‘তখন গ্রামের বাইরের সড়কে থালা হাতে খবিরুদ্দি, হলধর তাদের সৃষ্টিসমূহ কোলে-পিঠে-কাঁধে নিয়ে, এবং আমেনা, মেনকা ঐ জাতীয় আরেকটি বুকে ধরে শুকনো মাই টানাতে টানাতে দেশের সকলের সঙ্গে গঞ্জের দিকে যেত।’ ‘মন্বন্তর’ গল্পটি তার সরল উপস্থাপনার গুণে নিম্নগোত্রীয়দের সংগ্রামের জীবন্ত দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে সত্য যে, তার গল্প কোনও মামুলি গল্প নয়; তার গল্পের পাঠ নিতে হয় অতি সতর্কতা এবং দীপ্তিময় অভিনিবেশের মাধ্যমে।
বিচিত্রমুখী চরিত্র চিত্রণেও জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত সাবলীল। ‘জাদুকর যাদু জানে না’ গল্পে দর্শকদের ইন্দ্রজালে বশীভূত করে পয়সা কামিয়ে সংসার নির্বাহ করা মানুষের পরিণতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একজন মাদানী একটি অপুষ্ট কিশোর সহকারিকে নিয়ে আসরে ঢোল বাজিয়ে, নানা রকম শারিরীক কসরৎ দেখিয়ে লোক জড়ো করে ইন্দ্রজাল প্রদর্শন করেন। কখনো শূন্যে পা তুলে, কখনো ডিগবাজি খায় কিশোরটি। কিন্তু মাদানী যে খেলা দেখায় সেটি জিভকাটার খেলা। ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে কাপড়ে ঢাকা সহকারির জিভ কেটে ফেলে সে। কিশোরটি যন্ত্রণায় ছটফট করে আর রক্ত ছোটে ফোয়ারার মতো। এসব দেখে দর্শক মুদ্রা ফেলে, কেউ বা কাগজের নোট। গল্পটি পরিণতি পায় বিয়োগান্তক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। জীবন যাপনের স্বেদ ও ক্লান্তি তুলে ধরা হয়েছে গল্পটিতে।
জ্যোতিপ্রকাশের গল্পপাঠে এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, ছোটগল্পের মেরুকরণ ঘটেছে তার হাতে। গল্পের বিষয়, আঙ্গিক এবং গদ্যরীতির ব্যাপক পরিবর্তনে গল্প এসে দাঁড়িয়েছে নতুন একটি ফর্মে। লক্ষণীয় বিষয় যে, ছোটগল্পের প্রধান গুণ এর একরৈখিকতা। অথচ এ শর্ত মেনে অনেকের পক্ষেই গল্প লেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। গল্পে সৃষ্ট চরিত্রকে লেখক স্বাধীনতা দেন ঠিকই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চরিত্রকে কেন্দ্রাভিমুখী করতে ব্যর্থ হন। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এ ক্ষেত্রে সফল।
মানুষের মুখের ভাষা লেখকের নিজস্ব ভাষাশৈলীতে স্বতন্ত্র গল্পভাষায় রূপ নেয়। যে গল্পকারের ভাষাশৈলীর চমৎকারিত্ব ও ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ রয়েছে তার গল্প সমসাময়িকদের চেয়ে পৃথক হবে এ কথা নির্দ্ধিধায় বলা যায়। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ভাষারূপ ও প্রবণতা একেবারেই নিজস্ব। তার গল্প বাস্তব-বিবর্জিত নয়, বলা যায় সমাজ পরিস্থিতির ভেতরই তার গল্পের সারাৎসার নিহিত। সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য, আর্থিক অসাম্য, বিত্তভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, বেকারত্ব, মানব সভ্যতার অন্তর্গত লোভ-হিংসা-হিংস্রতা-প্রতারণা-পীড়ন থেকেই তিনি গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেছেন। কারণ ছোটগল্প হতে হয় বাস্তবের আখ্যান। আপাতভাবে অলৌকিক উপাদানের সাঙ্গীকরণ যেখানে থাকে সেখানেও বাস্তবকে তুলে ধরা লেখকের অভিপ্রায়। ছোটগল্পের রাজ্যে যে জীবন-বাস্তবের সংঘাত ও সমন্বয় তার সফল উপস্থিতি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পকে অসামান্য করেছে। একজন ছোটগল্পকারকে হতে হয় নিখাদ সমাজচিন্তক। জ্যোতিপ্রকাশের গল্প পাঠে তাকে একজন সুদক্ষ সমাজচিন্তকের অভিধাটি দেয়া যায়। কারণ তিনি গল্পের ভেতর মানবজীবনের গূঢ়ত্ব ও সমাজের ভাল-মন্দের বিভিন্ন দিক গভীর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছেন গল্পের বাতাবরণে। ফলে তার গল্পের ভেতর সমাজের একটি বাস্তবসম্মত ধারণা ও প্রতিচ্ছবি যেমন ফুটে ওঠে তেমনি উদ্ভাসিত হয় মানব-মানবীর গভীর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
ছোটগল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাতচল্লিশে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির পর নানা কারণে এ উপমহাদেশ অস্থির হয়ে ওঠে। ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রতত্ত্বের মোহ কেটে গিয়ে সামনে চলে আসে বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রশ্নটি। ফলে এ সময় একদিকে যেমন সঙ্কটময় অন্যদিকে নির্মাণের জন্যও হয়ে ওঠে উপযুক্ত। সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সাহিত্যে সব সময়ই ক্রিয়াশীল থাকে। এ সময়পর্বেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তাল পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট হতাশাবোধ, ব্যর্থতাবোধ ও অসন্তোষের নানামুখী টানাপড়েন গ্রাস করে মানব অস্তিত্ব¡কে। শিল্পায়নের ফলে পুঁজির বিকাশ ঘটতে থাকে দ্রুত। শিল্পী চিত্তেও পুঞ্জিত হতে থাকে নানামাত্রিক অসন্তোষ, নৈঃসঙ্গ্য ও হতাশা। এ পর্বেরই শক্তিমান ছোটগল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
শিল্প নির্মাণে অনুশীলনই হচ্ছে মূলকর্ম। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত যে শিল্প নির্মাণ করেছেন তার মূলে নিহিত রয়েছে গতানুগতিকতার বিপরীতে তার স্বতন্ত্র অনুশীলন। গল্পের প্রচল স্রোতে গা না ভাসিয়ে তিনি ব্যতিক্রমী ধারায় গল্প লিখতে শুরু করেন ষাটের সময়পর্ব থেকে। গল্পের ভাষায় টেনে আনেন কাব্যময়তা। যে কারণে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্প হয়ে ওঠে স্বতন্ত্র। তার গল্প কবিতার মতোই সুরেলা, ইঙ্গিতময় ও রহস্যপূর্ণ। গল্পের পটভূমে তিনি মানবমনস্তত্ত্ব ও মানব সংসারের খুঁটিনাটি বিষয়াদি বিশ্লেষণ করেছেন। কথাসাহিত্যেকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে পাঠকের সঙ্গে মানসিক যোগাযোগ স্থাপন এবং ভাবনা বিনিময়-- জ্যোতিপ্রকাশের গল্প পাঠে এ সত্যটিই যেন স্পষ্ট হয়। তিনি ‘সেই বর্গের লেখক যাকে চিনে নিতে হয়; খেয়াঘাটের মাঝির মতো সহজ পরিচয় মেলে না।’
গল্পভাষা আবিস্কারের পর থেকে গল্প নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে আসছে। ছোটগল্পের বিবর্তনের ধারায় যুক্ত হয়েছে কাব্যবোধ। মানবজীবনের জটিল সঙ্কেতময়তা ছাড়া গড়পরতা যাপন জ্যোতিপ্রকাশের গল্পের বিষয়বস্তু নয়। ‘জীবনকে, সমাজকে, রাষ্ট্রকে, ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের যে প্রযুক্তিগত কৌশল তা বাংলাদেশের ছোটগল্পে তিনিই প্রথম প্রয়োগ করেন। প্রকৃতির বর্ণনা আর যাপিত জীবনের বর্ণনা কি করে সাগরের নোনা জলে নদীর অনোনা জল মিশে যাবার মতো একেবারে অভিনতুন জলধারায় পরিণত হয়, তার গল্পের শরীর আর আত্মা তো তাই-ই।’ এ ধারায় তার ‘পরমাত্মীয়’ গল্পের পাঠ নেয়া যেতে পারে। গল্পটি শ্রীমন্ত ও তার বন্ধু সাঈদের ব্যক্তিগত অনুভূতিঋদ্ধ কথামালায় রচনা করেছেন তিনি। অনুপ্রবেশকালে গল্পটিকে দীর্ঘায়তনের কবিতা মনে হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। দুই বন্ধুর নস্টালজিক হওয়ার কাহিনী বিবৃতির পাশাপাশি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অঙ্কিত হয়েছে এ গল্পে। দুই বন্ধু তাদের বিগত দিনের স্মৃতি আওড়িয়ে চলে কাব্যিক ভঙ্গিমায়। মানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কথায় পরিপূর্ণ। অথচ মানুষ যা ভাবে তা সবসময় বলে না। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত গল্পের জমিনে অতি সরলভাবেই মানুষের এই ব্যক্তিক সত্তার অনুসন্ধান করেছেন। এতে তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন-- ‘মুহূর্ত আমাদের জীবন-কথা, আমার, আমাদের ভাবনা। তাই সব বলে না কেউ। বলা যায় না।’ জীবন যে কত আশ্চর্য তা তিনি এ গল্পের পটভূমে ধারণের চেষ্টা করেছেন। শ্রীমন্ত সাঈদকে বলে-- ‘তোমার সেই আশ্চর্যকে এবং আমাদের কথার একসঙ্গে মেশাকে। দু’চোখ ভরে দেখলাম। পেছনে কৃষ্ণ মেঘের স্তূপ এবং সামনে পড়ন্ত বেলার রোদকে রেখে, সমস্তটা আকাশ আর সব দেওদার শিরিষের শীর্ষগুলো কী অদ্ভুত এবং আশ্চর্য সোনা রঙে মাখামাখি হয়ে গেছে।’ এভাবে জীবনের সঙ্গে প্রকৃতি-যাপনের অপূর্ব মেলবন্ধন তিনি দক্ষ শিল্পীর তুলিতে এঁকেছেন প্রায় প্রতিটি গল্পে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানসিক দ্বন্দ্ব-সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে তার ‘পিতৃঘ্ন’ গল্পে। আপন মাতার স্নেহবঞ্চিত, পিতার অবহেলা ও বিমাতার বিমুখতায় বেড়ে ওঠা এক যুবকের যন্ত্রণাক্লিষ্ট জীবনের বাস্তবতা এ গল্পের পটভূমে অঙ্কিত হয়েছে। যার কাছে মাতার মৃত্যুর অব্যবহিত পরের আর্তচিৎকার এবং সান্ত¡নাদানরতা অগ্রজার শরীর স্পর্শ, মৃতার পদযুগল ও তার বর্ণ ছাড়া আর কোনও সম্বল নেই। যুবকটি এক সময় পিতার ওপর নিজের বঞ্চিত জীবনের প্রতিশোধ নিতে গিয়েও ব্যর্থ হয়। যুবকের পিতাও যে বিষয়টি বোঝেন না তেমনটিও নয়। কিন্তু কিছুই করার থাকে না তার। মনে হয় সময়ের দাস তিনি। এ গল্পটিকে কোনও অবস্থায়ই প্রচল অবয়বের গল্প বলা চলে না। ‘ষাটের সময়পর্বের কথাকর্মীরা প্রচল প্রথা ভাঙার তীব্র নেশা নিয়ে অতিক্রম করেন সঙ্কট ও দ্বন্দ্বমুখর সময়’ কথাটি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বলা যায়, বাংলাদেশের কথা সাহিত্যের আজকের যে শক্ত অবস্থান কিংবা গল্পের বহুমাত্রিক গতিমুখ নির্ণয়ের যে সার্থক ধারাÑ এর রূপকারদের মধ্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের নাম প্রথম সারিতে। রচনার শুরু থেকেই তিনি মানবমনস্তত্ত্ব অন্বেষণায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। গল্পের জমিনে মানবজীবনের পাশাপাশি গৃহস্থালীর খুঁটিনাটি তুলে আনেন। সাংসারিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনপ্রণালীর মধ্যে দাম্পত্য জীবন একটি ঘনিষ্ট অনুষঙ্গ। এই দাম্পত্য জীবনের ভেতরের টানাপড়েন তিনি তুলে ধরেন ‘সরল সংসার’ গল্পে। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর বংশ মর্যাদা উঁচু-নিচু হলে যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ উবে যায় সেটা তিনি এঁকেছেন এ গল্পে। ‘দুঃখ, আশা-আকাক্সক্ষা সব মানুষেরই আলাদা আলাদা, একের স্বাদ অন্যে বোঝে না। তাই এই স্ব কিছুর সমন্বয়ে স্বতন্ত্র মানুষ গড়ে ওঠে।’ এ কথাটিই তিনি গল্পের সেনমশায় চরিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পটির প্রধান চরিত্র সেনমশায় হলেও তার স্ত্রী নন্দরানীও একই কাতারে। সেনমশায় মূলত নন্দরানীদের আশ্রিত এবং নিজে নিম্নবর্গের। গল্পের ভেতর নন্দরানী ও সেনমশায়ের সংসার ধর্মের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সম্পর্ক, আচরণ ও কর্মপরিধির চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। ধনীর মেয়ে হিশেবে নন্দরানী নিজেকে প্রভু ভাবতে পছন্দ করে। সমাজের নিম্নবর্গের মানুষকে সে মনে করে কাকের মতো। তার বিশ্বাস নিম্নবর্গের কাজই হলো উচ্চবর্গের ডাকে সাড়া দেওয়া। গল্পে সংসারের অস্তিত্ববাদী চেতনার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক।
সমাজ-সংসারের মানুষ কখনও সুখী আবার কখনও অসুখী। কিন্তু কেন এই বৈপরীত্য? নাকি এটি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সঙ্কট? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তার ‘রেহাননামা’ গল্পে। কায়িক পরিশ্রমী একজন কৃষক গৃহস্ত কোন সুখের আশায় সাদা কাগজে সই করেছিলেন। ‘কী দেওয়ার ছিল তার? কিংবা কিছু পাওয়ার জন্যই কি?’ ‘রেহাননামা’ গল্পে সাদা কাগজে সই করা নিয়ে জাদুবাস্তবতার আশ্রয় নিয়েছেন লেখক। যে গৃহস্ত ঋণ নেওয়ার আগে উন্নয়ন সমিতিতে যোগ দিয়ে কিছু লেখা, কিছু পড়া এবং নিজের নাম স্বাক্ষর করতে শিখেছিল সেই গৃহস্ত কী নিজের গর্ব প্রকাশের জন্যই সাদা কাগজে সই করেছিল? এ প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি, এমনকি ওই কৃষক আততায়ীর হাতে খুন হলেও। গল্পটি পাঠে পাঠক কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারলেও বেদনাজর্জর মানসিক সঙ্কটে পড়েন। আর এটাই জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বলা যায়। তার ‘গদ্যরীতি গল্পের চরিত্রের চেয়েও অগ্রগামী’। তার গল্পের কাহিনী কাব্যময় গদ্যশৈলীতে এগিয়ে যাওয়ার কারণেও সুখপাঠ্য। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পের ভেতর আছে কবিতার বাস, আছে চিত্রকল্প এবং নিজস্ব ভাষার অমিয় সৌন্দর্য। রয়েছে মানুষের আবেগকে সংহত করে শিল্প নির্মাণের প্রয়াস। মানব জীবন, জীবনযাপনকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার প্রবণতার কারণেই তার গল্প হয়ে উঠেছে পৃথক। বলা যায়, শুধুমাত্র গল্প বলার জন্যে তিনি গল্প লেখেননি। শিল্প নির্মাণ যেমন তার কাছে মুখ্য তেমনি মানুষের জটিল মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উন্মোচনেও তিনি থেকেছেন তৎপর। আবার আটপৌরে দৃশ্যাবলিও তার চোখ এড়ায়নি। ‘তখন গ্রামের বাইরের সড়কে থালা হাতে খবিরুদ্দি, হলধর তাদের সৃষ্টিসমূহ কোলে-পিঠে-কাঁধে নিয়ে, এবং আমেনা, মেনকা ঐ জাতীয় আরেকটি বুকে ধরে শুকনো মাই টানাতে টানাতে দেশের সকলের সঙ্গে গঞ্জের দিকে যেত।’ ‘মন্বন্তর’ গল্পটি তার সরল উপস্থাপনার গুণে নিম্নগোত্রীয়দের সংগ্রামের জীবন্ত দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তবে সত্য যে, তার গল্প কোনও মামুলি গল্প নয়; তার গল্পের পাঠ নিতে হয় অতি সতর্কতা এবং দীপ্তিময় অভিনিবেশের মাধ্যমে।
বিচিত্রমুখী চরিত্র চিত্রণেও জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত সাবলীল। ‘জাদুকর যাদু জানে না’ গল্পে দর্শকদের ইন্দ্রজালে বশীভূত করে পয়সা কামিয়ে সংসার নির্বাহ করা মানুষের পরিণতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একজন মাদানী একটি অপুষ্ট কিশোর সহকারিকে নিয়ে আসরে ঢোল বাজিয়ে, নানা রকম শারিরীক কসরৎ দেখিয়ে লোক জড়ো করে ইন্দ্রজাল প্রদর্শন করেন। কখনো শূন্যে পা তুলে, কখনো ডিগবাজি খায় কিশোরটি। কিন্তু মাদানী যে খেলা দেখায় সেটি জিভকাটার খেলা। ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে কাপড়ে ঢাকা সহকারির জিভ কেটে ফেলে সে। কিশোরটি যন্ত্রণায় ছটফট করে আর রক্ত ছোটে ফোয়ারার মতো। এসব দেখে দর্শক মুদ্রা ফেলে, কেউ বা কাগজের নোট। গল্পটি পরিণতি পায় বিয়োগান্তক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। জীবন যাপনের স্বেদ ও ক্লান্তি তুলে ধরা হয়েছে গল্পটিতে।
জ্যোতিপ্রকাশের গল্পপাঠে এটা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, ছোটগল্পের মেরুকরণ ঘটেছে তার হাতে। গল্পের বিষয়, আঙ্গিক এবং গদ্যরীতির ব্যাপক পরিবর্তনে গল্প এসে দাঁড়িয়েছে নতুন একটি ফর্মে। লক্ষণীয় বিষয় যে, ছোটগল্পের প্রধান গুণ এর একরৈখিকতা। অথচ এ শর্ত মেনে অনেকের পক্ষেই গল্প লেখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। গল্পে সৃষ্ট চরিত্রকে লেখক স্বাধীনতা দেন ঠিকই কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই চরিত্রকে কেন্দ্রাভিমুখী করতে ব্যর্থ হন। জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এ ক্ষেত্রে সফল।
মানুষের মুখের ভাষা লেখকের নিজস্ব ভাষাশৈলীতে স্বতন্ত্র গল্পভাষায় রূপ নেয়। যে গল্পকারের ভাষাশৈলীর চমৎকারিত্ব ও ভিন্নতর দৃষ্টিকোণ রয়েছে তার গল্প সমসাময়িকদের চেয়ে পৃথক হবে এ কথা নির্দ্ধিধায় বলা যায়। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের ভাষারূপ ও প্রবণতা একেবারেই নিজস্ব। তার গল্প বাস্তব-বিবর্জিত নয়, বলা যায় সমাজ পরিস্থিতির ভেতরই তার গল্পের সারাৎসার নিহিত। সামাজিক শ্রেণীবৈষম্য, আর্থিক অসাম্য, বিত্তভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, বেকারত্ব, মানব সভ্যতার অন্তর্গত লোভ-হিংসা-হিংস্রতা-প্রতারণা-পীড়ন থেকেই তিনি গল্পের উপাদান সংগ্রহ করেছেন। কারণ ছোটগল্প হতে হয় বাস্তবের আখ্যান। আপাতভাবে অলৌকিক উপাদানের সাঙ্গীকরণ যেখানে থাকে সেখানেও বাস্তবকে তুলে ধরা লেখকের অভিপ্রায়। ছোটগল্পের রাজ্যে যে জীবন-বাস্তবের সংঘাত ও সমন্বয় তার সফল উপস্থিতি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পকে অসামান্য করেছে। একজন ছোটগল্পকারকে হতে হয় নিখাদ সমাজচিন্তক। জ্যোতিপ্রকাশের গল্প পাঠে তাকে একজন সুদক্ষ সমাজচিন্তকের অভিধাটি দেয়া যায়। কারণ তিনি গল্পের ভেতর মানবজীবনের গূঢ়ত্ব ও সমাজের ভাল-মন্দের বিভিন্ন দিক গভীর পর্যবেক্ষণে তুলে ধরেছেন গল্পের বাতাবরণে। ফলে তার গল্পের ভেতর সমাজের একটি বাস্তবসম্মত ধারণা ও প্রতিচ্ছবি যেমন ফুটে ওঠে তেমনি উদ্ভাসিত হয় মানব-মানবীর গভীর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
0 মন্তব্যসমূহ