নীহারুল ইসলাম
দুলহা বুড়ি মারা গেছে। লাশ পড়ে আছে তার কুঁড়েঘরে। ভর সন্ধ্যাকাল! খবর পেয়ে লোকজন তার সেই কুঁড়েঘরের সামনে এসে ভিড় করছে। অন্যদিন এমন ভর সন্ধ্যাতেই সেখানে লোকজনের ভিড় জমত যেভাবে, তার চেয়ে দ্রুত ভিড় জমছে আজ। অন্যদিন এই সময় তার ওপর ভর নামত। এই সময় তার কাছে যে যা চাইত- মানত করত, সব পূর্ণ হতো নাকি!
দুলহা বুড়ির সাত কূলে কেউ ছিল না। অন্তত কেউ দেখেনি। তবে তার বশে থাকা অনেক জ্বিন- ভালো জ্বিন! মন্দ জ্বিন! তাদের কেউ কখনো না দেখলেও অনুভব করেছে কেউ কেউ। কেউ ভালো ভাবে করেছে। কেউ মন্দ ভাবে। যারা ভালোভাবে করেছে তাদের দুলহা বুড়ির ওপর ভক্তি আছে। আর যারা মন্দ ভাবে করেছে, তাদের দুলহা বুড়িকে নিয়ে ভয় আছে। তবে দু’পক্ষই দুলহা বুড়ির মৃত্যুর খবর পেয়ে তার কুঁড়েঘরের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।
এদের কেউ কেউ এর আগেও এসেছে। দুলহা বুড়িকে ভোগ দিয়েছে। সাত রকমের মিষ্টি আর সাত রকমের ফলমূল! কেউ কেউ টাকাপয়সাও দিয়েছে। যদিও টাকাপয়সা দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না কোনোদিনই।
দুলহাবুড়ির কুঁড়েঘরটা সরকারি জায়গায়। বলতে গেলে রাস্তার ওপর। পলাশবাটির তেমাথার মোড়ে একেবারে পলাশ গাছটির নীচে। পলাশবাটির অমর ঠাকুর যখন এই অঞ্চলের প্রধান। একবার রাস্তা সংস্কার করতে এসে সে গাছটিকে কেটে ফেলতে চেয়েছিল। একে তেমাথার মোড়। সেখানে অকাজের একটা পলাশগাছ। আগুন ফুল ফোটানো ছাড়া যার কোনো কাজ নেই। অথচ মোড়ের অনেকটা জায়গা ঘিরে রেখেছে। লোকজনের অসুবিধা করছে। অমর প্রধান ঠিকাদারকে ওই গাছ কেটে ফেলার হুকুম দিয়ে চলে গেছিল পর্যন্ত! কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার ফিরে এসেছিল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কিছুক্ষণ আগে দেওয়া হুকুম ফিরিয়ে নিয়েছিল। দুলহা বুড়ির পায়ে পড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিল। যারা সেদিন ওই দৃশ্য দেখেছিল তারা বলে, অমর প্রধান দুলহা বুড়ির মন্দ জ্বিনের পাল্লায় পড়েছিল নিশ্চয়। এব্যাপারে অমর প্রধান অবশ্য নিজে কখনো কিছু বলেনি। তবে তারপর থেকে প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যায় সে নিজে হোক কিংবা লোক পাঠিয়ে, দুলহা বুড়ির ভরের আসনে ভোগ পৌঁছে দিয়েছে। এ পর্যন্ত দুলহাবুড়ির ভরের আসনে সবচেয়ে দামী ভোগ ওই অমর ঠাকুরের। সেই ভোগ লোকে দেখেছে। তারা সেই ভোগের অনেক মিষ্টির নামই জানে না! অনেক ফল এর আগে কখনো চোখেই দেখেনি!
শুধু কি সেটাই? যে ঠিকাদার ওই রাস্তা সংস্কার করেছিল, সেও পর্যন্ত ফলমূল, মিষ্টি পাঠিয়েছে। লোকের কথাঃ রাস্তা সংস্কার করতে এসে রাস্তা সংস্কারের সময় কী মনে করে সেই ঠিকাদার দুলহা বুড়ির কুঁড়েঘরের সামনেটাই ক’টা ইট বিছিয়ে দিয়েছিল! একটু রোলার চালিয়ে দিয়েছিল! যাতে বর্ষাকালে বুড়ির পা পিছলে পড়ে কোমর না ভাঙে! শুধু ওটুকুর জন্যই নাকি সেই ঠিকাদারের আজ বিশাল অবস্থা! ঠিকাদার নিজেও এসেছে বহুবার। কোয়ালিশ গাড়ি চড়ে এসেছে। লোকে দেখেছে। আর অবাক হয়েছে।
অথচ এই দুলহা বুড়ি কী ছিল? কে ছিল? কোথা থেকে এসেছিল?
গ্রামের যে লোকটি সবচেয়ে পুরনো, নাম হাজারী সেখ। যার বয়স নাকি এখন একশোর ওপর! সেই হাজারী সেখ বলে, দুলহা বুড়িকে হামি আজ থেকি দেখছি না! হামার জন্মের বহু আগে থেকিই উ আছে এই পলাশগাছের তলায়। ওই একই রকম। দুনিয়ার কত বদল হল। কিন্তু দুলহা বুড়ি যেমনকার তেমনিই আছে। অর কুনু বদল নাই!
হাজারী সেখ জন্মের বহু আগে থেকে কীভাবে দুলহা বুড়িকে দেখছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু যারা একথা শোনে তারা সত্যিই নিজের জন্মের অন্তত কিছু আগে থেকে দুলহা বুড়িকে দেখছে। এই গ্রামে এমন কোনো মা নেই যার পেটে বাচ্চা এলে সে দুলহা বুড়ির কাছে যায়নি! তাই এই গ্রামে এমন কোনো বাচ্চা নেই যে দুলহা বুড়ির আশীর্বাদ পায়নি। দুলহা বুড়ির আশীর্বাদ বলতে সর্ষের তেল পড়া। তেল পড়ে দুলহা বুড়ি নিজে হাতে ওই তেল গর্ভবতী মায়ের গর্ভে একবার মাখিয়ে দিয়েছে। ব্যস। কারো মনে আর কোনো ভয় থাকেনি। সংশয় থাকেনি। ঠিক ন’মাসের মাথায় সুন্দর সবল সন্তান প্রসব করেছে মা। এটাই এতদিন নিয়ম ছিল এই গ্রামে। শুধু এই গ্রাম কেন? গোটা দেওয়ানসরাই অঞ্চলেই ছিল। এমন কী আশপাশের অঞ্চল থেকেও গাড়ি-ঘোড়া চড়ে লোকজন এসেছে তার কাছে।
কিন্তু আজকের পর আর কেউ আসবে না। সেই নিয়মও আর থাকবে না!
ভিড়ে দুলহা বুড়ির জন্য দুঃখ বাড়ছে। কষ্ট বাড়ছে। সেই সঙ্গে দুলহা বুড়িকে নিয়ে যার যত গল্প আছে, সব বেরিয়ে পড়ছে। অথচ বেঁচে থাকতে দুলহা বুড়ির সেরকম কোনো গল্প ছিল না। সে যখন সামাদ মোড়লের বাগানে কাঠ কুড়োতে যেত, তাকে দেখে গোলাপনগরের কোনো কাঠকুড়োনি বলে মনে হয়েছে। সে যখন বিলডোমকুল মাঠে শুষণীর শাক তুলত, কিংবা ছাগল চরাত, তাকে শিকারপুরের শাকতোলানি কিংবা কড়িপাড়ার ছাগলচরানী বলে মনে হয়েছে। কিংবা নহরে যখন সে মশারি ছেঁড়া দিয়ে চিংড়ি ধরত, তাকে মনে হয়েছে সাঁওতাল পাড়ার কোনো সাঁওতাল রমণী। দুলহা বুড়িকে দুলহা বুড়ি বলে কেউ কোনোদিন চিনতে পারে নি।
এমনিতে সারাদিন দুলহা বুড়ির কুঁড়েঘরের ঝাঁপ বন্ধই থাকত। দুলহা বুড়ি কোথায় যেত? কী করত? ইচ্ছে থাকলেও কেউ তার খোঁজ রাখত না। কারণ, একবার তার খোঁজ রাখতে গিয়ে আপাকে জান হারাতে বসেছিল খান্দুয়াপাড়ার সাজা। ভালো নাম সাজাহান। কিন্তু তার মা তাকে সাজা বলে ডাকত। লোকের কাছে তাই সে সাজা নামেই পরিচিত। দুলহা বুড়ির ব্যাপার স্যাপার সে বিশ্বাস করত না। বরং সে বলত, দুলহা বুড়ি একটা ঠগ! মানুষ ঠগাচ্ছে! সে এও মনে করত বুড়ি হয়ত ভিনদেশী গুপ্তচর! বেশভূষা বদলে দ্যাশ-ঘরের তথ্য সংগ্রহ করে নিজের দেশে পাচার করছে!
এমন ভাবনা থেকে সাজা দিনের পর দিন দুলহা বুড়ির পিছু নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোদিন তার নাগাল পায়নি।
সেই সময় একদিন হঠাৎ নহরের পাড়ে সাজাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন ভোরবেলা। সূর্য উঠতে দেরী আছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। নহরের পানি বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতে। অমন পরিবেশে সাজার যদি একটু কাত মেরে শোওয়ার সাধ জাগত, সাজা নাকি ভেসে যেত নহরের ওই খরস্রোতেই! তার কোনো হদিস পাওয়া যেত না!
সাজাকে যে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেছিল, এই সব কথা সেই আইনালখ্যাপার। আইনালখ্যাপার কাজই হল নহরে মাছ ধরা। সে খুব ভোর ভোর নহরের পাড়ে পৌঁছে যায়। সেদিনও পৌঁছনোর চেষ্টা করছিল। বকের মতো লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটছিল। কুমিরখোলা মাঠ ছাড়িয়ে যেই সে বিলডোমকুল মাঠে পা ফেলেছে অমনি তার চোখ পড়েছিল সাজার ওপর।
দুলহা বুড়ির মৃত্যুতে আইনালখ্যাপার বলা গল্পের বাকি অংশ আজ সাজার মুখেই শোনা যাক, ... হামি দুলহা বুড়ির পিছু পিছু হাঁটছিলাম। হঠৎ দেখি হামার সামনে দুলহা বুড়ি নাই। তার জায়গায় হাঁটছে এক সাঁতাল মেয়্যা। কুনুদিকে তার খেয়াল নাই। সে হাঁটছে তো হাঁটছেই! তার কাঁধে ছেঁড়া মশারীর জাল।
এত ভোর ভোর সে কুন্ঠে হেঁটি যেছে? মাছ ধরতে নাকি অন্য কুনু ব্যাপার আছে? হামার খুব কৌতুহল হয়। হামি খুব সাবধানে তার পিছু লিই। এমনিতে সাঁতাল মেয়্যার ওপর হামার চোখ বহুদিন থেক্যা। কুনুদিন সুযোগ পাই না। আজ পেইয়্যাছি। শ্যাষপর্যন্ত কী হয়, আজ দেখবো বুলি হামি সেই মেয়্যার পিছু পিছু হাঁটতে থাকি ...
সাজা যখন তার অভিজ্ঞতার কথা বলছে, লোকজনের কৌতুহল বাড়ছে। লোকজনের মধ্যে থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে, তারপর কী হইল?
... কী হইবে আবার? হাঁটতে হাঁটতে বিলডোমকুল মাঠ পার হুই একেবারে নহর! সেই নহরে পানিতে ছুঁড়িকে হামি নামতে দেখি। ছুঁড়ি নামছে তো নামছেই। হাঁটু পানি। কোমর পানি। বুক পানি। তারপর ছুঁড়ির চাঁদি বরাবর পানি। তারপর দেখি যেনি উ লয়, অর চুল হেলছে নহরের পানিতে। তাহলে কি ছুঁড়ি ডুবি মরছে? ডুবি মরার লেগি কি অমুন হনহন করি উ হামার আগে আগে ছুটি এল? কী জানি কেনি হামার খুব ভয় হয়। আর হামি নহরের পানিতে মারি লাফ। তারপরেই আসল খেল্।
কী খেল্ ভাই সাজা? কেউ জিজ্ঞেস করে।
সাজা বলতে জোস পায়, খেল্ বুলতে খেল্! লাফ মেরি হামি নহরের পানি থেকি আর ওপরে উঠি না। পানির ভিতর থেকি ভিতরে ঢুকি যাই। তারপর একসুমায় হামি দেখি বিশাল রাজপ্রাসাদের মুতুন একটো বাড়ি। সেই বাড়ির একটো ঘরে সোনার পালঙ্কে হামি শুয়ে আছি। মেলা দাসদাসী, চাকরনোকর হামার চারপাশে কিলবিল করছে। আর হামার মাথার কাছে বসি আছে এক রাজকন্যা।
ভিড়ের কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চায়, মাথার কাছে রাজকন্যা বসি আছে! সাঁতাল ছুঁড়ি কতি গেল তা হইলে?
সাজা বলে, কী বুলবো ভাই তুমাদের! সাঁওতাল ছুঁড়ি কতি গেল কে জানে! তার কথা ভুলি গেছি। হামি তখন সেই রাজকন্যাকে দেখছি। হামি তখন রাজকন্যার রূপে বিভোর! হামি খালি তাকে দেখছি। কিছু বুলতে পারছি না। হামার মুখে রা সরছে না।
তোর মুখে রা সরছে না তো উ কিছু বুলছে না তোকে?
বুলবে না কেনি? বুলছে।
কী বুলছে?
বুলছে তুমি থাকো হামার কাছে। হামার কেহু নাই। হামি একলা। আর এই দ্যাখো হামার সব ধনসম্পদ! এই ধনসম্পদ সব তোমার। তুমি যদি হামার কাছে থাকো, এগলা হামি সব তোমাকে দিবো। বুলতে বুলতে সে হামাকে তার মাহালের এক-একটো ঘর ঘুরিন দেখ্যাছে। হামি দেখছি। কুন ঘরে খালি সোনা। কুন ঘরে খালি চাঁদি। কুন ঘরে আবার মোহর। সোনার মোহর সব!
তখুন তু কী করলি?
কী করবো আবার! তখুন কিছু করা তো দূরের কথা, কিছু ভাবার মুতুন অবস্থায় হামি নাই। খালি হামার মুনে পড়ছে হামার বাড়ির কথা। হামার ঘর-সংসারের কথা। হামার বিবির কথা। হামার বালবাচ্চার কথা। হামি হামার বালবাচ্চার কাছে যাবো। হামার বিবির কাছে যাবো। হামার ঘরসংসার ছাড়া হামি বাঁচবো না। বুলতে বুলতে হামি কাঁদতে শুরু করি।
সবাই শুনছে সাজা ওরফে সাজাহানের কথা। সংসারীদের তো বটেই, যাদের ঘরসংসার নেই তাদেরও মনে পড়ছে ঘরসংসারের কথা। বিবির কথা। বালবাচ্চার কথা। সাজাকে তাই কেউ আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। সাজা কিন্তু বলেই যাচ্ছে তার উপলব্ধির কথা। অনুভবের কথা। সবার চোখের পানি ঝরছে। সবাই হিঁপিয়ে হিঁপিয়ে কাঁদছে।
ভিড়ের একজনের এরকম কান্না সহ্য হয় না। সে বলে ওঠে, কাঁদার কী আছে? মানুষকে তো একদিন মরতেই হয়। এটাই নিয়ম। সেই নিয়মেই দুলহা বুড়ি মর্যাছে!
আর একজন- নাম শুকুরুদ্দি। প্রতিবাদ করে উঠল, দুলহা বুড়ি সব নিয়মের বাহিরে ছিল। সে কবে জন্ম্যাছে কেহু জানে না। তা হইলে সে মরবে তা হামরা জানবো কী কর্যা? তুমরা ভালো করি দ্যাখো সে মরে নি!
মরে নি তো সে এই ভর সন্ধ্যাবেলাতে ঘরে শুতি আছে কেনি? কেহু কি এই সুমায় তাকে শুতি থাকতে দেখ্যাছে কুনুদিন?
হ। হামি শুতি থাকতে দেখ্যাছি। দুলহা বুড়ি ডোমকুল মাঠে ঘাসের ভুঁইয়ে শুতি ছিল একদিন।
উপস্থিত সবাই আর একটা গল্পের গন্ধ পায়। সবাই সমস্বরে জানতে চায়, কী রকম? কী রকম? বুলো তো শুনি!
আজ হামি মিছা কথা কহিবো না খো ভাই। জীবনে মেলা মিছা কথা কহ্যাছি। ঝাটুর বিটি মিনারাকে হামি খুব ভালবাসতুম। উ যেত বিলডোমকুল মাঠে ছাগল চরাতে। হামিও যেতুম। দেখতুম উ মাঠে ছাগল ছেড়ি দিন শাক তুলছে। শুষণীর শাক। ওই শাক খেলে খুব নিঁদ পায়। হামি তাই ওই শাক খাই না। সেকথা অকে কহিতে কহিতে হামি যে অকে ভালোবাসি সেই কথাটো কহিতে যাবো, তার আগেই দেখি অর নিঁদ পেছে। অর হাই উঠছে। উ শুতি পড়ছে ঘাসের ওপর। আরো দেখি অর শরীলে কুনু কাপড় নাই। উ একেবারে ন্যাংটো। অর চোখ বুঁজা। হামি দেখি অর বুক খুব জোরে জোরে উঠছে নামছে। সেই বুকের ওপর হামি মুখ রেখি অকে আদর করতি যাবো, হঠাৎ দেখি বুক তো দূর, হামার সামনে উ নিজেই নাই।
অর বদলে ঘাসের বিছানায় শুতি আছে দুলহা বুড়ি। যার বুক নাই। শরীল নাই। কিন্তু মুখ আছে। সেই মুখ কথা বুলছে, কী ধুঁড়ছিস শুকরুদ্দি? ভালবাসা না বুক? কার বুক ধুঁড়ছিস? তোর নিজের বুক না মিনারার? তার কথা শুনি হামি চমকি উঠি । সত্যিই তো হামি কী ধুঁড়ছি? ভালোবাসা না বুক? বুক ধুঁড়লে কার বুক ধুঁড়ছি? হামার নিজের বুক না মিনারার বুক? ভালোবাসা তো হামার নিজের বুকেই আছে। তা হইলে মিনারার বুকে হামি কী ধুঁড়ছিলাম?
এই গল্প শুনে শুধু মিনারা নয়, গ্রামের আরো অনেক যুবতী হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। রেজওয়ান বলে একটি ছেলে। যার প্রেমিকা ক’দিন আগে আত্মহত্যা করেছে। সে এদের কান্না সহ্য করতে পারে না। চিৎকার করে বলে ওঠে, চুপ করো! তোমরা সব চুপ করো! তোমাদের কান্নায় দুলহা বুড়ির পবিত্র আত্মা কষ্ট পাবে।
এই আদেশ শুনে এবারে এক থুরথুরে বুড়ি উঠে দাঁড়ায়। তেমাথার মোড়ের কারেন্টের জোড়া খাম্বায় ঝোলানো বাল্বের আলোয় সবাই দেখে বুড়িকে। উঠে দাঁড়িয়ে সেই বুড়ি বলছে, কেউ কারো লেগি কাঁদলে তার পবিত্র আত্মা কষ্ট পায় না। শান্তি পায় ...
সামাদ মোড়লের পোতা আসাদ কিন্তু বুড়ির কথা শোনে না। তার মনে পড়ে গেল এক দিনের কথা। তখন শুক্রবার শুক্রবার দুপুরবেলা সে বাগানে একা থাকত! আমের সময় শুক্রবার শুক্রবার দুপুরে তাকে বাগান জোগাতে হত। বড়রা সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে যেত মসজিদে! শুক্রবার শুক্রবার সে এখন নিজেও মসজিদে যায় জুম্মার নামাজ পড়তে। কিন্তু তখন তাকে নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা কেউ বলত না। তখন সে ছোট ছিল। তবু সেদিনের কথা তার স্পষ্ট মনে পড়ে। কোথাকার এক বুড়ি তাদের বাগানে। তখন ভর দুপুর। তার চোখ পড়ে বুড়ির ওপর। প্রথমে সে ভাবে বুড়ি বোধহয় আম চুরি করছে! তাই সে তেড়ে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখে বুড়ি লকড়ি কুড়োচ্ছে। খুব লজ্জ্বা পায় সে। আর সেই লজ্জ্বা থেকে বাঁচতেই বোধহয় জিজ্ঞেস করে, এই বয়সে লকড়ি কুড়িয়ে বেড়াচ্ছো যে? কী করবা লকড়ি?
প্যাটের দায়ে ভাই। এই লকড়ি বিক্রি করে হামার প্যাট চলে।
তোমাকে তোমার বেটা খেতে দেয় না?
বেটা খেতে দিলে কুনু মা কি এই সব করি বেড়ায় ভাই? চোখে কিছু সুঁঝে না। ছতর চলে না! তাও প্যাটের দায়ে এইসব করি বেড়াতে হয়।
বুড়ির সব কথা শোনে না সে। ধৈর্য ধরে শোনার মতো বয়সও নয় তখন তার। সে বুড়িকে বলে, তাহলে ভিক্ষা করি খাও।
ভিক্ষা করি খাবো! তা কী করি সম্ভব ভাই? হামার পোতা-পুতিনের অপমান হবে জী!
তোমার পোতা-পুতিন আছে নাকি?
কেনি থাকবে না? হামি বাঁঝা নাকি? বুড়ির কন্ঠে অহংকার ঝরে পড়ে।
কে তোমার পোতা-পুতিন?
বুড়ির সেই সব কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না সে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
এদিকে বেলা বয়ে যাচ্ছে। বুড়ি বিরক্ত হচ্ছে। তার লকড়ি কুড়নোতে বাধা পড়ছে। সেখান থেকে পালাতে পারলে সে যেন বাঁচে! তাই বলে উঠল, তুমার অত ওদখোঁজ কেনি ভাই? আছে কেহু। তুমাকে বুলবো না খো যাও! বলে বুড়ি চলে যাচ্ছিল। সে যেতে দিল না। একেবারে বুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল, আচ্ছা বুড়ি আচ্ছা! বুলিও না। হামিও আর কিছু জানতে চাহিবো না। খালি একটো কথার জবাব দাও।
কী কথা?
তুমি ভিক্ষা করলে তোমার পোতাপুতিনের অপমান হবে কেনি?
অরা জী ইংরেজী ইস্কুলে পড়হে ভাই!
কাঠকুড়োনি বুড়িকে এবারে চিনতে পারে আসাদ। প্রথমে দুলহা বুড়ি মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখেছিল কাঠকুড়োনি বুড়ি। আর এখন সেই কাঠকুড়োনি বুড়িকে দেখে তার মনে পড়ছে ধূমপাড়ার গিয়াস মাস্টারকে। যে এখন বউবাচ্চা নিয়ে টাউনে থাকে। যার এক বেটা এক বিটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আর, বুড়ি মা গ্রামেই পড়ে আছে। বুড়ি মা খেতে পায় না। তবু বুড়ি মাকে খেতে দেয় না। বুড়ি মায়ের কোনো খোঁজ রাখে না গিয়াস মাস্টার।
অথচ সেই বুড়ি মা ওই ছেলে আর পোতাপুতিনের মানসম্মানের ভয়ে ভিক্ষা করতে পারে না। সামাদ মোড়লের বাগানে মরা শুকনো ডাল কুড়িয়ে বেড়ায়। সেই ডাল সুন্দর করে কেটে আঁটি বেঁধে শহরে বিক্রি করে তেল-নুন, চাল-ডাল কিনে নিয়ে আসে। ভিক্ষা করে না। ভিক্ষা করলে নাকি তার পোতা-পুতিনের অপমান হবে! বুড়ি মায়ের পরিচয় হয় কাঠকুড়োনি বুড়ি।
আসাদ এই বুড়িকে দেখে ধূমপাড়ার কাঠকুড়োনি বুড়ির গল্প বলে। সবাই শোনে তার গল্প। আর তাদের মনে পড়ে দুলহা বুড়িকে। দুলহা বুড়িও কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত। সেই কাঠ সে কিন্তু বিক্রি করত না। পুড়িয়ে রান্নাবান্নাও করত না। তার কুঁড়েঘরের একপাশে পালা করে সাজিয়ে রাখত। এত কাঠ কী করবা বুড়ি? কেউ জিজ্ঞেস করলে বলত, হামি মরলে তোমরা হামাকে পুড়াবা! তাই জমিয়ে রাখছি। কাঠ ব্যাগোর তুমরা হামাকে না পুড়িয়ে নহরের পানিতে যাতে ভাসিয়ে না দ্যাও! সবাই দেখতে পায় দুলহা বুড়ির সাজিয়ে রাখা কাঠের চিতা। তবে কুঁড়েঘরের পাশে কিছু দেখতে পায় না, দেখতে পায় নিজ নিজ অন্তরে। প্রত্যেকের অন্তরেই যেন একটা করে ওরকম কাঠের চিতা সাজানো আছে! যেন এখনি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে!
প্রত্যেকে ভয় পায়। আর প্রত্যেকেই জোরে চিৎকার করে ‘মা’ ‘মা’ বলে কেঁদে ওঠে।
কে জানে এতে দুলহা বুড়ির আত্মা শান্তি পায় কি না! তবে তারা শান্তি পায়। #
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
দুলহা বুড়ি মারা গেছে। লাশ পড়ে আছে তার কুঁড়েঘরে। ভর সন্ধ্যাকাল! খবর পেয়ে লোকজন তার সেই কুঁড়েঘরের সামনে এসে ভিড় করছে। অন্যদিন এমন ভর সন্ধ্যাতেই সেখানে লোকজনের ভিড় জমত যেভাবে, তার চেয়ে দ্রুত ভিড় জমছে আজ। অন্যদিন এই সময় তার ওপর ভর নামত। এই সময় তার কাছে যে যা চাইত- মানত করত, সব পূর্ণ হতো নাকি!
দুলহা বুড়ির সাত কূলে কেউ ছিল না। অন্তত কেউ দেখেনি। তবে তার বশে থাকা অনেক জ্বিন- ভালো জ্বিন! মন্দ জ্বিন! তাদের কেউ কখনো না দেখলেও অনুভব করেছে কেউ কেউ। কেউ ভালো ভাবে করেছে। কেউ মন্দ ভাবে। যারা ভালোভাবে করেছে তাদের দুলহা বুড়ির ওপর ভক্তি আছে। আর যারা মন্দ ভাবে করেছে, তাদের দুলহা বুড়িকে নিয়ে ভয় আছে। তবে দু’পক্ষই দুলহা বুড়ির মৃত্যুর খবর পেয়ে তার কুঁড়েঘরের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।
এদের কেউ কেউ এর আগেও এসেছে। দুলহা বুড়িকে ভোগ দিয়েছে। সাত রকমের মিষ্টি আর সাত রকমের ফলমূল! কেউ কেউ টাকাপয়সাও দিয়েছে। যদিও টাকাপয়সা দেওয়া না দেওয়ার ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না কোনোদিনই।
দুলহাবুড়ির কুঁড়েঘরটা সরকারি জায়গায়। বলতে গেলে রাস্তার ওপর। পলাশবাটির তেমাথার মোড়ে একেবারে পলাশ গাছটির নীচে। পলাশবাটির অমর ঠাকুর যখন এই অঞ্চলের প্রধান। একবার রাস্তা সংস্কার করতে এসে সে গাছটিকে কেটে ফেলতে চেয়েছিল। একে তেমাথার মোড়। সেখানে অকাজের একটা পলাশগাছ। আগুন ফুল ফোটানো ছাড়া যার কোনো কাজ নেই। অথচ মোড়ের অনেকটা জায়গা ঘিরে রেখেছে। লোকজনের অসুবিধা করছে। অমর প্রধান ঠিকাদারকে ওই গাছ কেটে ফেলার হুকুম দিয়ে চলে গেছিল পর্যন্ত! কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার ফিরে এসেছিল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কিছুক্ষণ আগে দেওয়া হুকুম ফিরিয়ে নিয়েছিল। দুলহা বুড়ির পায়ে পড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিল। যারা সেদিন ওই দৃশ্য দেখেছিল তারা বলে, অমর প্রধান দুলহা বুড়ির মন্দ জ্বিনের পাল্লায় পড়েছিল নিশ্চয়। এব্যাপারে অমর প্রধান অবশ্য নিজে কখনো কিছু বলেনি। তবে তারপর থেকে প্রত্যেক বুধবার সন্ধ্যায় সে নিজে হোক কিংবা লোক পাঠিয়ে, দুলহা বুড়ির ভরের আসনে ভোগ পৌঁছে দিয়েছে। এ পর্যন্ত দুলহাবুড়ির ভরের আসনে সবচেয়ে দামী ভোগ ওই অমর ঠাকুরের। সেই ভোগ লোকে দেখেছে। তারা সেই ভোগের অনেক মিষ্টির নামই জানে না! অনেক ফল এর আগে কখনো চোখেই দেখেনি!
শুধু কি সেটাই? যে ঠিকাদার ওই রাস্তা সংস্কার করেছিল, সেও পর্যন্ত ফলমূল, মিষ্টি পাঠিয়েছে। লোকের কথাঃ রাস্তা সংস্কার করতে এসে রাস্তা সংস্কারের সময় কী মনে করে সেই ঠিকাদার দুলহা বুড়ির কুঁড়েঘরের সামনেটাই ক’টা ইট বিছিয়ে দিয়েছিল! একটু রোলার চালিয়ে দিয়েছিল! যাতে বর্ষাকালে বুড়ির পা পিছলে পড়ে কোমর না ভাঙে! শুধু ওটুকুর জন্যই নাকি সেই ঠিকাদারের আজ বিশাল অবস্থা! ঠিকাদার নিজেও এসেছে বহুবার। কোয়ালিশ গাড়ি চড়ে এসেছে। লোকে দেখেছে। আর অবাক হয়েছে।
অথচ এই দুলহা বুড়ি কী ছিল? কে ছিল? কোথা থেকে এসেছিল?
গ্রামের যে লোকটি সবচেয়ে পুরনো, নাম হাজারী সেখ। যার বয়স নাকি এখন একশোর ওপর! সেই হাজারী সেখ বলে, দুলহা বুড়িকে হামি আজ থেকি দেখছি না! হামার জন্মের বহু আগে থেকিই উ আছে এই পলাশগাছের তলায়। ওই একই রকম। দুনিয়ার কত বদল হল। কিন্তু দুলহা বুড়ি যেমনকার তেমনিই আছে। অর কুনু বদল নাই!
হাজারী সেখ জন্মের বহু আগে থেকে কীভাবে দুলহা বুড়িকে দেখছে তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু যারা একথা শোনে তারা সত্যিই নিজের জন্মের অন্তত কিছু আগে থেকে দুলহা বুড়িকে দেখছে। এই গ্রামে এমন কোনো মা নেই যার পেটে বাচ্চা এলে সে দুলহা বুড়ির কাছে যায়নি! তাই এই গ্রামে এমন কোনো বাচ্চা নেই যে দুলহা বুড়ির আশীর্বাদ পায়নি। দুলহা বুড়ির আশীর্বাদ বলতে সর্ষের তেল পড়া। তেল পড়ে দুলহা বুড়ি নিজে হাতে ওই তেল গর্ভবতী মায়ের গর্ভে একবার মাখিয়ে দিয়েছে। ব্যস। কারো মনে আর কোনো ভয় থাকেনি। সংশয় থাকেনি। ঠিক ন’মাসের মাথায় সুন্দর সবল সন্তান প্রসব করেছে মা। এটাই এতদিন নিয়ম ছিল এই গ্রামে। শুধু এই গ্রাম কেন? গোটা দেওয়ানসরাই অঞ্চলেই ছিল। এমন কী আশপাশের অঞ্চল থেকেও গাড়ি-ঘোড়া চড়ে লোকজন এসেছে তার কাছে।
কিন্তু আজকের পর আর কেউ আসবে না। সেই নিয়মও আর থাকবে না!
ভিড়ে দুলহা বুড়ির জন্য দুঃখ বাড়ছে। কষ্ট বাড়ছে। সেই সঙ্গে দুলহা বুড়িকে নিয়ে যার যত গল্প আছে, সব বেরিয়ে পড়ছে। অথচ বেঁচে থাকতে দুলহা বুড়ির সেরকম কোনো গল্প ছিল না। সে যখন সামাদ মোড়লের বাগানে কাঠ কুড়োতে যেত, তাকে দেখে গোলাপনগরের কোনো কাঠকুড়োনি বলে মনে হয়েছে। সে যখন বিলডোমকুল মাঠে শুষণীর শাক তুলত, কিংবা ছাগল চরাত, তাকে শিকারপুরের শাকতোলানি কিংবা কড়িপাড়ার ছাগলচরানী বলে মনে হয়েছে। কিংবা নহরে যখন সে মশারি ছেঁড়া দিয়ে চিংড়ি ধরত, তাকে মনে হয়েছে সাঁওতাল পাড়ার কোনো সাঁওতাল রমণী। দুলহা বুড়িকে দুলহা বুড়ি বলে কেউ কোনোদিন চিনতে পারে নি।
এমনিতে সারাদিন দুলহা বুড়ির কুঁড়েঘরের ঝাঁপ বন্ধই থাকত। দুলহা বুড়ি কোথায় যেত? কী করত? ইচ্ছে থাকলেও কেউ তার খোঁজ রাখত না। কারণ, একবার তার খোঁজ রাখতে গিয়ে আপাকে জান হারাতে বসেছিল খান্দুয়াপাড়ার সাজা। ভালো নাম সাজাহান। কিন্তু তার মা তাকে সাজা বলে ডাকত। লোকের কাছে তাই সে সাজা নামেই পরিচিত। দুলহা বুড়ির ব্যাপার স্যাপার সে বিশ্বাস করত না। বরং সে বলত, দুলহা বুড়ি একটা ঠগ! মানুষ ঠগাচ্ছে! সে এও মনে করত বুড়ি হয়ত ভিনদেশী গুপ্তচর! বেশভূষা বদলে দ্যাশ-ঘরের তথ্য সংগ্রহ করে নিজের দেশে পাচার করছে!
এমন ভাবনা থেকে সাজা দিনের পর দিন দুলহা বুড়ির পিছু নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনোদিন তার নাগাল পায়নি।
সেই সময় একদিন হঠাৎ নহরের পাড়ে সাজাকে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন ভোরবেলা। সূর্য উঠতে দেরী আছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। নহরের পানি বয়ে যাচ্ছে খরস্রোতে। অমন পরিবেশে সাজার যদি একটু কাত মেরে শোওয়ার সাধ জাগত, সাজা নাকি ভেসে যেত নহরের ওই খরস্রোতেই! তার কোনো হদিস পাওয়া যেত না!
সাজাকে যে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করেছিল, এই সব কথা সেই আইনালখ্যাপার। আইনালখ্যাপার কাজই হল নহরে মাছ ধরা। সে খুব ভোর ভোর নহরের পাড়ে পৌঁছে যায়। সেদিনও পৌঁছনোর চেষ্টা করছিল। বকের মতো লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটছিল। কুমিরখোলা মাঠ ছাড়িয়ে যেই সে বিলডোমকুল মাঠে পা ফেলেছে অমনি তার চোখ পড়েছিল সাজার ওপর।
দুলহা বুড়ির মৃত্যুতে আইনালখ্যাপার বলা গল্পের বাকি অংশ আজ সাজার মুখেই শোনা যাক, ... হামি দুলহা বুড়ির পিছু পিছু হাঁটছিলাম। হঠৎ দেখি হামার সামনে দুলহা বুড়ি নাই। তার জায়গায় হাঁটছে এক সাঁতাল মেয়্যা। কুনুদিকে তার খেয়াল নাই। সে হাঁটছে তো হাঁটছেই! তার কাঁধে ছেঁড়া মশারীর জাল।
এত ভোর ভোর সে কুন্ঠে হেঁটি যেছে? মাছ ধরতে নাকি অন্য কুনু ব্যাপার আছে? হামার খুব কৌতুহল হয়। হামি খুব সাবধানে তার পিছু লিই। এমনিতে সাঁতাল মেয়্যার ওপর হামার চোখ বহুদিন থেক্যা। কুনুদিন সুযোগ পাই না। আজ পেইয়্যাছি। শ্যাষপর্যন্ত কী হয়, আজ দেখবো বুলি হামি সেই মেয়্যার পিছু পিছু হাঁটতে থাকি ...
সাজা যখন তার অভিজ্ঞতার কথা বলছে, লোকজনের কৌতুহল বাড়ছে। লোকজনের মধ্যে থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে, তারপর কী হইল?
... কী হইবে আবার? হাঁটতে হাঁটতে বিলডোমকুল মাঠ পার হুই একেবারে নহর! সেই নহরে পানিতে ছুঁড়িকে হামি নামতে দেখি। ছুঁড়ি নামছে তো নামছেই। হাঁটু পানি। কোমর পানি। বুক পানি। তারপর ছুঁড়ির চাঁদি বরাবর পানি। তারপর দেখি যেনি উ লয়, অর চুল হেলছে নহরের পানিতে। তাহলে কি ছুঁড়ি ডুবি মরছে? ডুবি মরার লেগি কি অমুন হনহন করি উ হামার আগে আগে ছুটি এল? কী জানি কেনি হামার খুব ভয় হয়। আর হামি নহরের পানিতে মারি লাফ। তারপরেই আসল খেল্।
কী খেল্ ভাই সাজা? কেউ জিজ্ঞেস করে।
সাজা বলতে জোস পায়, খেল্ বুলতে খেল্! লাফ মেরি হামি নহরের পানি থেকি আর ওপরে উঠি না। পানির ভিতর থেকি ভিতরে ঢুকি যাই। তারপর একসুমায় হামি দেখি বিশাল রাজপ্রাসাদের মুতুন একটো বাড়ি। সেই বাড়ির একটো ঘরে সোনার পালঙ্কে হামি শুয়ে আছি। মেলা দাসদাসী, চাকরনোকর হামার চারপাশে কিলবিল করছে। আর হামার মাথার কাছে বসি আছে এক রাজকন্যা।
ভিড়ের কেউ বিস্ময় প্রকাশ করে জানতে চায়, মাথার কাছে রাজকন্যা বসি আছে! সাঁতাল ছুঁড়ি কতি গেল তা হইলে?
সাজা বলে, কী বুলবো ভাই তুমাদের! সাঁওতাল ছুঁড়ি কতি গেল কে জানে! তার কথা ভুলি গেছি। হামি তখন সেই রাজকন্যাকে দেখছি। হামি তখন রাজকন্যার রূপে বিভোর! হামি খালি তাকে দেখছি। কিছু বুলতে পারছি না। হামার মুখে রা সরছে না।
তোর মুখে রা সরছে না তো উ কিছু বুলছে না তোকে?
বুলবে না কেনি? বুলছে।
কী বুলছে?
বুলছে তুমি থাকো হামার কাছে। হামার কেহু নাই। হামি একলা। আর এই দ্যাখো হামার সব ধনসম্পদ! এই ধনসম্পদ সব তোমার। তুমি যদি হামার কাছে থাকো, এগলা হামি সব তোমাকে দিবো। বুলতে বুলতে সে হামাকে তার মাহালের এক-একটো ঘর ঘুরিন দেখ্যাছে। হামি দেখছি। কুন ঘরে খালি সোনা। কুন ঘরে খালি চাঁদি। কুন ঘরে আবার মোহর। সোনার মোহর সব!
তখুন তু কী করলি?
কী করবো আবার! তখুন কিছু করা তো দূরের কথা, কিছু ভাবার মুতুন অবস্থায় হামি নাই। খালি হামার মুনে পড়ছে হামার বাড়ির কথা। হামার ঘর-সংসারের কথা। হামার বিবির কথা। হামার বালবাচ্চার কথা। হামি হামার বালবাচ্চার কাছে যাবো। হামার বিবির কাছে যাবো। হামার ঘরসংসার ছাড়া হামি বাঁচবো না। বুলতে বুলতে হামি কাঁদতে শুরু করি।
সবাই শুনছে সাজা ওরফে সাজাহানের কথা। সংসারীদের তো বটেই, যাদের ঘরসংসার নেই তাদেরও মনে পড়ছে ঘরসংসারের কথা। বিবির কথা। বালবাচ্চার কথা। সাজাকে তাই কেউ আর কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না। সাজা কিন্তু বলেই যাচ্ছে তার উপলব্ধির কথা। অনুভবের কথা। সবার চোখের পানি ঝরছে। সবাই হিঁপিয়ে হিঁপিয়ে কাঁদছে।
ভিড়ের একজনের এরকম কান্না সহ্য হয় না। সে বলে ওঠে, কাঁদার কী আছে? মানুষকে তো একদিন মরতেই হয়। এটাই নিয়ম। সেই নিয়মেই দুলহা বুড়ি মর্যাছে!
আর একজন- নাম শুকুরুদ্দি। প্রতিবাদ করে উঠল, দুলহা বুড়ি সব নিয়মের বাহিরে ছিল। সে কবে জন্ম্যাছে কেহু জানে না। তা হইলে সে মরবে তা হামরা জানবো কী কর্যা? তুমরা ভালো করি দ্যাখো সে মরে নি!
মরে নি তো সে এই ভর সন্ধ্যাবেলাতে ঘরে শুতি আছে কেনি? কেহু কি এই সুমায় তাকে শুতি থাকতে দেখ্যাছে কুনুদিন?
হ। হামি শুতি থাকতে দেখ্যাছি। দুলহা বুড়ি ডোমকুল মাঠে ঘাসের ভুঁইয়ে শুতি ছিল একদিন।
উপস্থিত সবাই আর একটা গল্পের গন্ধ পায়। সবাই সমস্বরে জানতে চায়, কী রকম? কী রকম? বুলো তো শুনি!
আজ হামি মিছা কথা কহিবো না খো ভাই। জীবনে মেলা মিছা কথা কহ্যাছি। ঝাটুর বিটি মিনারাকে হামি খুব ভালবাসতুম। উ যেত বিলডোমকুল মাঠে ছাগল চরাতে। হামিও যেতুম। দেখতুম উ মাঠে ছাগল ছেড়ি দিন শাক তুলছে। শুষণীর শাক। ওই শাক খেলে খুব নিঁদ পায়। হামি তাই ওই শাক খাই না। সেকথা অকে কহিতে কহিতে হামি যে অকে ভালোবাসি সেই কথাটো কহিতে যাবো, তার আগেই দেখি অর নিঁদ পেছে। অর হাই উঠছে। উ শুতি পড়ছে ঘাসের ওপর। আরো দেখি অর শরীলে কুনু কাপড় নাই। উ একেবারে ন্যাংটো। অর চোখ বুঁজা। হামি দেখি অর বুক খুব জোরে জোরে উঠছে নামছে। সেই বুকের ওপর হামি মুখ রেখি অকে আদর করতি যাবো, হঠাৎ দেখি বুক তো দূর, হামার সামনে উ নিজেই নাই।
অর বদলে ঘাসের বিছানায় শুতি আছে দুলহা বুড়ি। যার বুক নাই। শরীল নাই। কিন্তু মুখ আছে। সেই মুখ কথা বুলছে, কী ধুঁড়ছিস শুকরুদ্দি? ভালবাসা না বুক? কার বুক ধুঁড়ছিস? তোর নিজের বুক না মিনারার? তার কথা শুনি হামি চমকি উঠি । সত্যিই তো হামি কী ধুঁড়ছি? ভালোবাসা না বুক? বুক ধুঁড়লে কার বুক ধুঁড়ছি? হামার নিজের বুক না মিনারার বুক? ভালোবাসা তো হামার নিজের বুকেই আছে। তা হইলে মিনারার বুকে হামি কী ধুঁড়ছিলাম?
এই গল্প শুনে শুধু মিনারা নয়, গ্রামের আরো অনেক যুবতী হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। রেজওয়ান বলে একটি ছেলে। যার প্রেমিকা ক’দিন আগে আত্মহত্যা করেছে। সে এদের কান্না সহ্য করতে পারে না। চিৎকার করে বলে ওঠে, চুপ করো! তোমরা সব চুপ করো! তোমাদের কান্নায় দুলহা বুড়ির পবিত্র আত্মা কষ্ট পাবে।
এই আদেশ শুনে এবারে এক থুরথুরে বুড়ি উঠে দাঁড়ায়। তেমাথার মোড়ের কারেন্টের জোড়া খাম্বায় ঝোলানো বাল্বের আলোয় সবাই দেখে বুড়িকে। উঠে দাঁড়িয়ে সেই বুড়ি বলছে, কেউ কারো লেগি কাঁদলে তার পবিত্র আত্মা কষ্ট পায় না। শান্তি পায় ...
সামাদ মোড়লের পোতা আসাদ কিন্তু বুড়ির কথা শোনে না। তার মনে পড়ে গেল এক দিনের কথা। তখন শুক্রবার শুক্রবার দুপুরবেলা সে বাগানে একা থাকত! আমের সময় শুক্রবার শুক্রবার দুপুরে তাকে বাগান জোগাতে হত। বড়রা সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে যেত মসজিদে! শুক্রবার শুক্রবার সে এখন নিজেও মসজিদে যায় জুম্মার নামাজ পড়তে। কিন্তু তখন তাকে নামাজ পড়তে যাওয়ার কথা কেউ বলত না। তখন সে ছোট ছিল। তবু সেদিনের কথা তার স্পষ্ট মনে পড়ে। কোথাকার এক বুড়ি তাদের বাগানে। তখন ভর দুপুর। তার চোখ পড়ে বুড়ির ওপর। প্রথমে সে ভাবে বুড়ি বোধহয় আম চুরি করছে! তাই সে তেড়ে যায়। কিন্তু গিয়ে দেখে বুড়ি লকড়ি কুড়োচ্ছে। খুব লজ্জ্বা পায় সে। আর সেই লজ্জ্বা থেকে বাঁচতেই বোধহয় জিজ্ঞেস করে, এই বয়সে লকড়ি কুড়িয়ে বেড়াচ্ছো যে? কী করবা লকড়ি?
প্যাটের দায়ে ভাই। এই লকড়ি বিক্রি করে হামার প্যাট চলে।
তোমাকে তোমার বেটা খেতে দেয় না?
বেটা খেতে দিলে কুনু মা কি এই সব করি বেড়ায় ভাই? চোখে কিছু সুঁঝে না। ছতর চলে না! তাও প্যাটের দায়ে এইসব করি বেড়াতে হয়।
বুড়ির সব কথা শোনে না সে। ধৈর্য ধরে শোনার মতো বয়সও নয় তখন তার। সে বুড়িকে বলে, তাহলে ভিক্ষা করি খাও।
ভিক্ষা করি খাবো! তা কী করি সম্ভব ভাই? হামার পোতা-পুতিনের অপমান হবে জী!
তোমার পোতা-পুতিন আছে নাকি?
কেনি থাকবে না? হামি বাঁঝা নাকি? বুড়ির কন্ঠে অহংকার ঝরে পড়ে।
কে তোমার পোতা-পুতিন?
বুড়ির সেই সব কথার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছে না সে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে।
এদিকে বেলা বয়ে যাচ্ছে। বুড়ি বিরক্ত হচ্ছে। তার লকড়ি কুড়নোতে বাধা পড়ছে। সেখান থেকে পালাতে পারলে সে যেন বাঁচে! তাই বলে উঠল, তুমার অত ওদখোঁজ কেনি ভাই? আছে কেহু। তুমাকে বুলবো না খো যাও! বলে বুড়ি চলে যাচ্ছিল। সে যেতে দিল না। একেবারে বুড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল, আচ্ছা বুড়ি আচ্ছা! বুলিও না। হামিও আর কিছু জানতে চাহিবো না। খালি একটো কথার জবাব দাও।
কী কথা?
তুমি ভিক্ষা করলে তোমার পোতাপুতিনের অপমান হবে কেনি?
অরা জী ইংরেজী ইস্কুলে পড়হে ভাই!
কাঠকুড়োনি বুড়িকে এবারে চিনতে পারে আসাদ। প্রথমে দুলহা বুড়ি মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখেছিল কাঠকুড়োনি বুড়ি। আর এখন সেই কাঠকুড়োনি বুড়িকে দেখে তার মনে পড়ছে ধূমপাড়ার গিয়াস মাস্টারকে। যে এখন বউবাচ্চা নিয়ে টাউনে থাকে। যার এক বেটা এক বিটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। আর, বুড়ি মা গ্রামেই পড়ে আছে। বুড়ি মা খেতে পায় না। তবু বুড়ি মাকে খেতে দেয় না। বুড়ি মায়ের কোনো খোঁজ রাখে না গিয়াস মাস্টার।
অথচ সেই বুড়ি মা ওই ছেলে আর পোতাপুতিনের মানসম্মানের ভয়ে ভিক্ষা করতে পারে না। সামাদ মোড়লের বাগানে মরা শুকনো ডাল কুড়িয়ে বেড়ায়। সেই ডাল সুন্দর করে কেটে আঁটি বেঁধে শহরে বিক্রি করে তেল-নুন, চাল-ডাল কিনে নিয়ে আসে। ভিক্ষা করে না। ভিক্ষা করলে নাকি তার পোতা-পুতিনের অপমান হবে! বুড়ি মায়ের পরিচয় হয় কাঠকুড়োনি বুড়ি।
আসাদ এই বুড়িকে দেখে ধূমপাড়ার কাঠকুড়োনি বুড়ির গল্প বলে। সবাই শোনে তার গল্প। আর তাদের মনে পড়ে দুলহা বুড়িকে। দুলহা বুড়িও কাঠ কুড়িয়ে বেড়াত। সেই কাঠ সে কিন্তু বিক্রি করত না। পুড়িয়ে রান্নাবান্নাও করত না। তার কুঁড়েঘরের একপাশে পালা করে সাজিয়ে রাখত। এত কাঠ কী করবা বুড়ি? কেউ জিজ্ঞেস করলে বলত, হামি মরলে তোমরা হামাকে পুড়াবা! তাই জমিয়ে রাখছি। কাঠ ব্যাগোর তুমরা হামাকে না পুড়িয়ে নহরের পানিতে যাতে ভাসিয়ে না দ্যাও! সবাই দেখতে পায় দুলহা বুড়ির সাজিয়ে রাখা কাঠের চিতা। তবে কুঁড়েঘরের পাশে কিছু দেখতে পায় না, দেখতে পায় নিজ নিজ অন্তরে। প্রত্যেকের অন্তরেই যেন একটা করে ওরকম কাঠের চিতা সাজানো আছে! যেন এখনি দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে!
প্রত্যেকে ভয় পায়। আর প্রত্যেকেই জোরে চিৎকার করে ‘মা’ ‘মা’ বলে কেঁদে ওঠে।
কে জানে এতে দুলহা বুড়ির আত্মা শান্তি পায় কি না! তবে তারা শান্তি পায়। #
লেখক পরিচিত
নীহারুল ইসলাম
‘সাগরভিলা’ লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১৪৮ পঃ বঃ, ভারতবর্ষ।
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে (মাতুলালয়)।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে (মাতুলালয়)।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
পুরস্কার :
লালগোলা ‘সংস্কৃতি সংঘ’ (১৯৯৫)এবং শিলিগুড়ি ‘উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ’ কর্তৃক ছোটগল্পকার হিসাবে সংবর্ধিত
(২০০৩)। সাহিত্য আকাদেমি’র ট্রাভেল গ্রান্ট পেয়ে জুনিয়র লেখক হিসাবে কেরালা ভ্রমণ (২০০৪)। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক “ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান “উত্তর বাংলা পদক” প্রাপ্তি (২০১১)। রুদ্রকাল সম্মান (২০১৩) প্রাপ্তি।
লালগোলা ‘সংস্কৃতি সংঘ’ (১৯৯৫)এবং শিলিগুড়ি ‘উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ’ কর্তৃক ছোটগল্পকার হিসাবে সংবর্ধিত
(২০০৩)। সাহিত্য আকাদেমি’র ট্রাভেল গ্রান্ট পেয়ে জুনিয়র লেখক হিসাবে কেরালা ভ্রমণ (২০০৪)। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক “ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান “উত্তর বাংলা পদক” প্রাপ্তি (২০১১)। রুদ্রকাল সম্মান (২০১৩) প্রাপ্তি।
niharulislam@yahoo.com
0 মন্তব্যসমূহ