গল্পপাঠ ১. আপনার লেখা কোন গল্পটি সেরা বলে মনে হয়?
রূপঙ্কর সরকার : আমি এখন পর্যন্ত যে কটি গল্প লিখেছি, তাতে আমার বিচারে, ‘তারা দুজন’ নামে গল্পটিকে শ্রেষ্ঠ মনে করি।
গল্পপাঠ ২. গল্পটির বীজ কিভাবে পেয়েছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমি যে গল্পগুলি লিখি, তাদের বীজ কোথা থেকে আসে, সে সম্পর্কে আমার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রথমেই মাথায় কয়েকটি নাম চলে আসে। কোনও কোনও সময়ে সেই নামের মালিক যারা, তাদের আমি যেন দিবাস্বপ্নে দেখতেও পাই। তারা আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করে, কথা বলে, নিজেদের অন্তরের কথা আমাকে জানায়, যাতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতে পারি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনি হয়। বেশ কিছু সময়ে, রাত্রে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও তাদের দেখি। আমার বিছানার পাশে কাগজ কলম রাখাই থাকে। তড়িঘড়ি উঠে যতদূর স্মরনে আছে, তা লিখে নিই। বাকিটা পরে দেখা যাবে, এই ভেবে। শুনলে আষাঢ়ে গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তাই হয়।
গল্পপাঠ ৩. গল্পের বীজটির বিস্তার কভাবে ঘটল? শুরুতে কি থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে ভেবেছেন? না, কাহিনীকাঠামো বা প্লট নিয়ে ভেবেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : গল্পের শুরুতে যে বীজ প্রোথিত হয়, সে আপনিই চারা থেকে মহীরুহে পরিবর্তিত হয়। আমি প্লট সাধারণতঃ ভেবে তৈরী করিনা। যদিওবা কখনও কিছু নিজে থেকে ভেবে গল্প এগোতে চেষ্টা করি, অধিকাংশ সময়েই কাহিনী নিজেই নিজের পথ করে নেয় এবং আমি যেভাবে ভেবেছিলাম, তার থেকে বিপরীত বা ভিন্ন পথে চলতে থাকে। আবার বহু গল্প মাঝখানে দিকভ্রষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুদূর গিয়ে আর এগোয়না। কোনও গল্প একটি অনুচ্ছেদ, কোনওটি বা দুই পৃষ্ঠা লিখে বসে থাকি দিনের পর দিন। তারপর হঠাৎ দীর্ঘ কালের ব্যবধানে সেই গল্প নতুন করে চলতে শুরু করে। যেভাবে হয়তো ভেবেছিলাম, তার ধারেকাছে না গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য পথে ভ্রমণ করে অন্য ঠিকানায় গিয়ে হাজির হয়। অনেক সময়ে এমনও হয়, একসঙ্গে তিন চারটি গল্পের বীজ বা বলা উচিত চারা, এসে হাজির হয়। আমি কাকে জল দেব, পরিচর্যা করব, ভেবে কূল পাইনা। সবদিকে মাথা দিতে গেলে কোনওটিই হবেনা জেনে, কোনও একটিকে বেছে নিই। অন্যেরা পরিচর্যার অভাবে শুকিয়ে মৃত্যুবরণ করে। একবার একটিমাত্র ঘটনায়, এমনি এক শুকনো চারা বহুদিন পর লালন পালনের যত্ন পেয়ে আবার বেড়ে উঠেছিল। তবে তা ব্যতিক্রম বলেই ধরব।
মাত্র কয়েকটি গল্প আমি লিখেছি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার ওপর নির্ভর করে। বড়জোর ২/৩ টি। ওগুলোই সম্পূর্ণভাবে আমার নিজের লেখা বলা যায়। কিন্তু তাই বা বলি কী করে। মূল ঘটনাটিতো সংবাদপত্রে প্রকাশিত। অবশ্য আমি তা উল্লেখও করি গল্পের শুরুতে বা শেষে।
গল্পপাঠ ৪. গল্পটির চরিত্রগুলো কিভাবে এসেছে? শুরুতে কতগুলি চরিত্র এসেছিল? তারা কি শেষ পর্যন্ত থেকেছে? আপনি কি বিশেষ কোনো চরিত্রকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে লিখেছেন? তাদের মধ্যে কি আপনার নিজের চেনা জানা কোনো চরিত্র এসেছে? অথবা নিজে কি কোনো চরিত্রের মধ্যে চলে এসেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : এই গল্পের প্রধান চরিত্ররা নিজে থেকেই এসেছে এবং প্রথম থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত আছে। আগেই বলেছি, এই দুই নারী আমার আসেপাশে ঘোরাফেরা করতে লাগলেন, যেন তাঁদের নিয়ে কিছু লিখি। অবশ্য এই ক্ষেত্রে নামটি(দুজনের একই নাম) আমি সেভাবে পাইনি। এই নামটি আমার স্বকপোলকল্পিত। এই চরিত্ররা আমার চেনাজানা কেউ নন। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাও এই কাহিনীতে কিছুই নেই।
গল্পপাঠ ৫. এই গল্পটির দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিভাবে নির্মাণ করেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমি মূলত নাট্যকার। এবং নাটক দ্বন্দ-সংঘাতের ওপরই মূলত দাঁড়ায়। অবশ্য আজকাল ‘লিনিয়ার’ নাটকও লেখা হচ্ছে, সাহিত্যে ঠিক এই মুহূর্তে নিয়ম বা ব্যাকরণ বলে কিছু নেই। তবু নাটক প্রধানতঃ এগোয় দ্বন্দের ওপরই। আমাদের ভারতীয় প্রথায় – মুখ-প্রতিমুখ-গর্ভ-বিমর্ষ-উপসংহৃতি এবং পাশ্চাত্য মতে, ইন্ট্রোডাকশন-রাইজিং অ্যাকশন-ক্লাইম্যাক্স-ফলিং অ্যাকশন-ক্যাটাস্ট্রফি, এই পাঁচটি করে ভাগ। এবার এই মুখ-প্রতিমুখে, ‘মুখ’ মানেই কোনও একটি মত, ইচ্ছা বা বক্তব্য এবং ‘প্রতিমুখ’ মানেই তার বিপরীত ইচ্ছা, মত বা বক্তব্য। এর ওপরেই নাটক তৈরী হয়। পাশ্চাত্য মতেও ‘রাইজিং অ্যাকশন’ মানেই সংঘাতের উত্থান, সে চূড়ান্ত রূপ নেয় ক্লাইম্যাক্স্বে তারপর অভিঘাত নিম্নমুখি হয় ফলিং অ্যাকশনে। এবার ছোটগল্পেও এই সংঘাতটাই থাকার কথা, কেবল সে সংলাপ প্রধান না হয়ে, বিবৃতি প্রধান হয়, কখনও বা এই দুইয়ের মিশ্রন। অবশ্য আজকাল ‘লিনিয়ার’ নাটকের মত সরলরেখা ভিত্তিক ছোটগল্পও লেখা হচ্ছেনা তা নয়। অবচেতনে আমিও দু একটা লিখে ফেলেছি হয়ত। কিন্তু সংঘাতটি দৃশ্যমান হলে পাঠকের উৎসাহ থাকে পড়বার।
এই গল্পের সংঘাত অবশ্য আমি নির্মাণ করিনি। আগেই বলেছি গল্পের ওপর আমার নিজস্ব দখল খুব বেশি থাকেনা, সে নিজেই এগোয় নিজের মত করে।
গল্পপাঠ ৬. গল্পের পরিণতিটা নিয়ে কি আগেই ভেবে রেখেছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : বিশ্বাসযোগ্য হবে কিনা জানিনা, গল্পের শেষ প্যারাগ্রাফটি লেখার আগে পর্যন্ত আমি জানতামনা এর পর কী হতে চলেছে।
গল্পপাঠ ৭. গল্পটি ক’দিন ধরে লিখেছেন? এর ভাষা ভঙ্গিতে কি ধরনের শৈলী ব্যবহার করেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমার সব গল্পই চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে লেখা হয়। শুধু আগের দিন অধিক রাত্রে শুরু করলে পরের দিন সকালে শেষ হয়। তবে সেই ক্ষেত্রে গল্প বা গল্পের অভিমুখ আমূল বদলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
গল্পপাঠ ৮. গল্পটিতে কি কিছু বলতে চেয়েছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : না আমি কোথাও কোনও মেসেজ দিইনা। তবে কথা হচ্ছে, পৃথিবীর অত্যন্ত মামুলি ঘটনাও কিছু না কিছু বার্তা তো বহন করেই। তবে সে তার নিজের, আমার কোনও ভূমিকা থাকেনা তাতে।
গল্পপাঠ ৯. গল্পটি লেখার পরে কি আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন? আপনি কি মনে করেন--আপনি যা লিখতে চেয়েছিলেন, তা লিখতে পেরেছেন এই গল্পটিতে?
রূপঙ্কর সরকার : হ্যাঁ গল্পটি লেখার পর আমার পড়তে তো খুবই ভাল লেগেছে। আমি আমার গল্পগুলিকে অপরের লেখা গল্প হিসেবেই পড়ি, কেননা আগে অনেকবারই বলেছি, পরিণতি বা অন্তর্নিহিত সংঘাত আমার হাতে কখনই থাকেনা, এখানেও ছিলনা।
গল্পপাঠ ১০. এই গল্পটি পাঠক কেনো পছন্দ করে বলে আপনার মনে হয়?
রূপঙ্কর সরকার : পাঠকের ভাল লাগবে কিনা, এ ব্যাপারে আমার কোনই ধারণা ছিলনা। তবে মনে হচ্ছিল, আমার নিজের যখন ভাল লেগেছে। অন্যদেরও লাগবে হয়ত। এরপরে অন্তর্জালে বিভিন্ন জায়গায় লেখাটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভূতপূর্ব সাড়া পাই। কান রাঙানো প্রশংসাও করে ফেলেন অনেকে। নিকট ভবিষ্যতে প্রকাশিতব্য আমার ‘সাপলুডো’ নামক বইতে গল্পটি থাকছে।
লেখক পরিচিতি
রূপঙ্কর সরকার
জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ই অগস্ট ( রবিবার, ৩০শে শ্রাবণ)। লেখালিখি শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। প্রথমে কয়েকটি ছোটগল্পেই কলমচারিতার শুরু। এরপর কিছু ছন্দোবদ্ধ এবং ছড়াধর্মী কবিতা লেখা শুরু হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি। সে সময়ের বেশ কিছু লিট্ল ম্যাগাজিন বা অনুপত্রিকায় ছাপাও হত সে সব। এর পর নাট্যদলে অভিনয় করতে করতে মাথায় আসে নাটক লেখার কথা। প্রথম কয়েকটি নাটকও অন্তমিল বা ছন্দোবদ্ধ সংলাপে লেখা। এরপর দলের সদস্যদের অনুরোধে প্রচলিত ভাষ্যে গদ্য সংলাপে নাটকও লেখা হয় বেশ কিছু। শারীরিক কারনে নাটকের মঞ্চ থেকে সরে আসার পরই প্রধাণতঃ কিছু অন্তর্জাল পত্রিকার আবদারে গল্প লেখা আবার শুরু। পাঠগণের উৎসাহ পেয়ে চলছে সেই থেকে।
রূপঙ্কর সরকার : আমি এখন পর্যন্ত যে কটি গল্প লিখেছি, তাতে আমার বিচারে, ‘তারা দুজন’ নামে গল্পটিকে শ্রেষ্ঠ মনে করি।
গল্পপাঠ ২. গল্পটির বীজ কিভাবে পেয়েছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমি যে গল্পগুলি লিখি, তাদের বীজ কোথা থেকে আসে, সে সম্পর্কে আমার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। প্রথমেই মাথায় কয়েকটি নাম চলে আসে। কোনও কোনও সময়ে সেই নামের মালিক যারা, তাদের আমি যেন দিবাস্বপ্নে দেখতেও পাই। তারা আমার চারপাশে ঘোরাফেরা করে, কথা বলে, নিজেদের অন্তরের কথা আমাকে জানায়, যাতে আমি তা লিপিবদ্ধ করতে পারি। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এমনি হয়। বেশ কিছু সময়ে, রাত্রে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নেও তাদের দেখি। আমার বিছানার পাশে কাগজ কলম রাখাই থাকে। তড়িঘড়ি উঠে যতদূর স্মরনে আছে, তা লিখে নিই। বাকিটা পরে দেখা যাবে, এই ভেবে। শুনলে আষাঢ়ে গল্প মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে তাই হয়।
গল্পপাঠ ৩. গল্পের বীজটির বিস্তার কভাবে ঘটল? শুরুতে কি থিম বা বিষয়বস্তু নিয়ে ভেবেছেন? না, কাহিনীকাঠামো বা প্লট নিয়ে ভেবেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : গল্পের শুরুতে যে বীজ প্রোথিত হয়, সে আপনিই চারা থেকে মহীরুহে পরিবর্তিত হয়। আমি প্লট সাধারণতঃ ভেবে তৈরী করিনা। যদিওবা কখনও কিছু নিজে থেকে ভেবে গল্প এগোতে চেষ্টা করি, অধিকাংশ সময়েই কাহিনী নিজেই নিজের পথ করে নেয় এবং আমি যেভাবে ভেবেছিলাম, তার থেকে বিপরীত বা ভিন্ন পথে চলতে থাকে। আবার বহু গল্প মাঝখানে দিকভ্রষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুদূর গিয়ে আর এগোয়না। কোনও গল্প একটি অনুচ্ছেদ, কোনওটি বা দুই পৃষ্ঠা লিখে বসে থাকি দিনের পর দিন। তারপর হঠাৎ দীর্ঘ কালের ব্যবধানে সেই গল্প নতুন করে চলতে শুরু করে। যেভাবে হয়তো ভেবেছিলাম, তার ধারেকাছে না গিয়ে সম্পূর্ণ অন্য পথে ভ্রমণ করে অন্য ঠিকানায় গিয়ে হাজির হয়। অনেক সময়ে এমনও হয়, একসঙ্গে তিন চারটি গল্পের বীজ বা বলা উচিত চারা, এসে হাজির হয়। আমি কাকে জল দেব, পরিচর্যা করব, ভেবে কূল পাইনা। সবদিকে মাথা দিতে গেলে কোনওটিই হবেনা জেনে, কোনও একটিকে বেছে নিই। অন্যেরা পরিচর্যার অভাবে শুকিয়ে মৃত্যুবরণ করে। একবার একটিমাত্র ঘটনায়, এমনি এক শুকনো চারা বহুদিন পর লালন পালনের যত্ন পেয়ে আবার বেড়ে উঠেছিল। তবে তা ব্যতিক্রম বলেই ধরব।
মাত্র কয়েকটি গল্প আমি লিখেছি সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনার ওপর নির্ভর করে। বড়জোর ২/৩ টি। ওগুলোই সম্পূর্ণভাবে আমার নিজের লেখা বলা যায়। কিন্তু তাই বা বলি কী করে। মূল ঘটনাটিতো সংবাদপত্রে প্রকাশিত। অবশ্য আমি তা উল্লেখও করি গল্পের শুরুতে বা শেষে।
গল্পপাঠ ৪. গল্পটির চরিত্রগুলো কিভাবে এসেছে? শুরুতে কতগুলি চরিত্র এসেছিল? তারা কি শেষ পর্যন্ত থেকেছে? আপনি কি বিশেষ কোনো চরিত্রকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে লিখেছেন? তাদের মধ্যে কি আপনার নিজের চেনা জানা কোনো চরিত্র এসেছে? অথবা নিজে কি কোনো চরিত্রের মধ্যে চলে এসেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : এই গল্পের প্রধান চরিত্ররা নিজে থেকেই এসেছে এবং প্রথম থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত আছে। আগেই বলেছি, এই দুই নারী আমার আসেপাশে ঘোরাফেরা করতে লাগলেন, যেন তাঁদের নিয়ে কিছু লিখি। অবশ্য এই ক্ষেত্রে নামটি(দুজনের একই নাম) আমি সেভাবে পাইনি। এই নামটি আমার স্বকপোলকল্পিত। এই চরিত্ররা আমার চেনাজানা কেউ নন। আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতাও এই কাহিনীতে কিছুই নেই।
গল্পপাঠ ৫. এই গল্পটির দ্বন্দ্ব-সংঘাত কিভাবে নির্মাণ করেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমি মূলত নাট্যকার। এবং নাটক দ্বন্দ-সংঘাতের ওপরই মূলত দাঁড়ায়। অবশ্য আজকাল ‘লিনিয়ার’ নাটকও লেখা হচ্ছে, সাহিত্যে ঠিক এই মুহূর্তে নিয়ম বা ব্যাকরণ বলে কিছু নেই। তবু নাটক প্রধানতঃ এগোয় দ্বন্দের ওপরই। আমাদের ভারতীয় প্রথায় – মুখ-প্রতিমুখ-গর্ভ-বিমর্ষ-উপসংহৃতি এবং পাশ্চাত্য মতে, ইন্ট্রোডাকশন-রাইজিং অ্যাকশন-ক্লাইম্যাক্স-ফলিং অ্যাকশন-ক্যাটাস্ট্রফি, এই পাঁচটি করে ভাগ। এবার এই মুখ-প্রতিমুখে, ‘মুখ’ মানেই কোনও একটি মত, ইচ্ছা বা বক্তব্য এবং ‘প্রতিমুখ’ মানেই তার বিপরীত ইচ্ছা, মত বা বক্তব্য। এর ওপরেই নাটক তৈরী হয়। পাশ্চাত্য মতেও ‘রাইজিং অ্যাকশন’ মানেই সংঘাতের উত্থান, সে চূড়ান্ত রূপ নেয় ক্লাইম্যাক্স্বে তারপর অভিঘাত নিম্নমুখি হয় ফলিং অ্যাকশনে। এবার ছোটগল্পেও এই সংঘাতটাই থাকার কথা, কেবল সে সংলাপ প্রধান না হয়ে, বিবৃতি প্রধান হয়, কখনও বা এই দুইয়ের মিশ্রন। অবশ্য আজকাল ‘লিনিয়ার’ নাটকের মত সরলরেখা ভিত্তিক ছোটগল্পও লেখা হচ্ছেনা তা নয়। অবচেতনে আমিও দু একটা লিখে ফেলেছি হয়ত। কিন্তু সংঘাতটি দৃশ্যমান হলে পাঠকের উৎসাহ থাকে পড়বার।
এই গল্পের সংঘাত অবশ্য আমি নির্মাণ করিনি। আগেই বলেছি গল্পের ওপর আমার নিজস্ব দখল খুব বেশি থাকেনা, সে নিজেই এগোয় নিজের মত করে।
গল্পপাঠ ৬. গল্পের পরিণতিটা নিয়ে কি আগেই ভেবে রেখেছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : বিশ্বাসযোগ্য হবে কিনা জানিনা, গল্পের শেষ প্যারাগ্রাফটি লেখার আগে পর্যন্ত আমি জানতামনা এর পর কী হতে চলেছে।
গল্পপাঠ ৭. গল্পটি ক’দিন ধরে লিখেছেন? এর ভাষা ভঙ্গিতে কি ধরনের শৈলী ব্যবহার করেছেন?
রূপঙ্কর সরকার : আমার সব গল্পই চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে লেখা হয়। শুধু আগের দিন অধিক রাত্রে শুরু করলে পরের দিন সকালে শেষ হয়। তবে সেই ক্ষেত্রে গল্প বা গল্পের অভিমুখ আমূল বদলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
গল্পপাঠ ৮. গল্পটিতে কি কিছু বলতে চেয়েছিলেন?
রূপঙ্কর সরকার : না আমি কোথাও কোনও মেসেজ দিইনা। তবে কথা হচ্ছে, পৃথিবীর অত্যন্ত মামুলি ঘটনাও কিছু না কিছু বার্তা তো বহন করেই। তবে সে তার নিজের, আমার কোনও ভূমিকা থাকেনা তাতে।
গল্পপাঠ ৯. গল্পটি লেখার পরে কি আপনি সন্তুষ্ট হয়েছেন? আপনি কি মনে করেন--আপনি যা লিখতে চেয়েছিলেন, তা লিখতে পেরেছেন এই গল্পটিতে?
রূপঙ্কর সরকার : হ্যাঁ গল্পটি লেখার পর আমার পড়তে তো খুবই ভাল লেগেছে। আমি আমার গল্পগুলিকে অপরের লেখা গল্প হিসেবেই পড়ি, কেননা আগে অনেকবারই বলেছি, পরিণতি বা অন্তর্নিহিত সংঘাত আমার হাতে কখনই থাকেনা, এখানেও ছিলনা।
গল্পপাঠ ১০. এই গল্পটি পাঠক কেনো পছন্দ করে বলে আপনার মনে হয়?
রূপঙ্কর সরকার : পাঠকের ভাল লাগবে কিনা, এ ব্যাপারে আমার কোনই ধারণা ছিলনা। তবে মনে হচ্ছিল, আমার নিজের যখন ভাল লেগেছে। অন্যদেরও লাগবে হয়ত। এরপরে অন্তর্জালে বিভিন্ন জায়গায় লেখাটি প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভূতপূর্ব সাড়া পাই। কান রাঙানো প্রশংসাও করে ফেলেন অনেকে। নিকট ভবিষ্যতে প্রকাশিতব্য আমার ‘সাপলুডো’ নামক বইতে গল্পটি থাকছে।
লেখক পরিচিতি
রূপঙ্কর সরকার
জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৬ই অগস্ট ( রবিবার, ৩০শে শ্রাবণ)। লেখালিখি শুরু ছাত্রাবস্থাতেই। প্রথমে কয়েকটি ছোটগল্পেই কলমচারিতার শুরু। এরপর কিছু ছন্দোবদ্ধ এবং ছড়াধর্মী কবিতা লেখা শুরু হয় ষাটের দশকের মাঝামাঝি। সে সময়ের বেশ কিছু লিট্ল ম্যাগাজিন বা অনুপত্রিকায় ছাপাও হত সে সব। এর পর নাট্যদলে অভিনয় করতে করতে মাথায় আসে নাটক লেখার কথা। প্রথম কয়েকটি নাটকও অন্তমিল বা ছন্দোবদ্ধ সংলাপে লেখা। এরপর দলের সদস্যদের অনুরোধে প্রচলিত ভাষ্যে গদ্য সংলাপে নাটকও লেখা হয় বেশ কিছু। শারীরিক কারনে নাটকের মঞ্চ থেকে সরে আসার পরই প্রধাণতঃ কিছু অন্তর্জাল পত্রিকার আবদারে গল্প লেখা আবার শুরু। পাঠগণের উৎসাহ পেয়ে চলছে সেই থেকে।
0 মন্তব্যসমূহ