এক.
আমার দাদা কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ তাঁর তিনটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলাম। তা দেখে শ্রদ্ধেয় দিলীপদা আমাকে বললেন দাদার সম্পর্কে কিছু স্মৃতিচারণা করতে। মনে হল, এখানে বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা ভাগ করে নেওয়া তো যেতেই পারে। তাই এই ছোট্ট লেখাটুকু।
দুই.
মুর্শিদাবাদ জেলার রাঢ় অঞ্চলের একটি গ্রাম খোশবাসপুর। সেখানে 1930 সালে দাদার জন্ম। আমাদের আট ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড়, আমি সবচেয়ে ছোট। আমাদের বয়সের ব্যবধান প্রায় ছাব্বিশ বছরের। স্বাভাবিকভাবেই ছেলেবেলা থেকে তাঁকে দেখেছি অত্যন্ত সম্ভ্রমের চোখে। আর বড়বৌদি হাসনে আরা বিয়ের পর যখন আমাদের বাড়িতে আসেন, তখন আমি কয়েক মাসের শিশু। বড়দার সঙ্গে যে সম্ভ্রমের দূরত্ব ছিল, বৌদির ক্ষেত্রে তার ঠিক বিপরীত। তাঁর সন্তানপ্রতিম স্নেহের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল খুব সহজ মধুর সম্পর্ক। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ছিল অনেকটা এরকমই। আসলে, আমাদের ছেলেবেলায়, বিগত পঞ্চাশ দশকের শেষভাগে বা ষাট দশকের প্রথম দিকে শিক্ষিত বাঙালি যৌথ পরিবারে সম্পর্ক-বিন্যাস ছিল এরকমই।
তিন.
শুনেছি এবং দেখেছি, কয়েক পুরুষ ধরে আমাদের পারিবারিক বৈভব বলতে শুধু বই। বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ।তিনি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ লিখতেন সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত পত্র-পত্রিকায়। বেদ- উপনিষদ- রামায়ণ-মহাভারত থেকে ইসলামী সংস্কৃতি, সুফিবাদ--- এ সবকিছুই সেসময় আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতিকে গড়ে তুলেছিল। এসবের মধ্যেই বেড়ে ওঠা সিরাজদার। পরবর্তী সময়ে আমাদেরও।
বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি, স্কুলের ছাত্র বড়দা স্কুলের ফি জমা না দিয়ে সেই টাকায় গল্পের বই কিনতেন। স্কুল পালিয়ে কোনো মাঠে বা গাছের উপর বসে সেইসব গল্পের বই পড়তেন। আর ছেলে স্কুলে যায়নি খবর পেয়ে বাবা তাঁকে খুঁজতে বেরতেন। প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন বড়দা। গ্রামের পাশেই দ্বারকা নদী আর বিল অঞ্চলে রাখালদের সঙ্গে মিশে যেতেন।খুব ভালো বাঁশি বাজাতে পারতেন আর পারতেন চমৎকার গান গাইতে। কলেজে পড়ার সময়ই যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে। সেখানে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল সলিল চৌধুরী, দেবব্রত বিশ্বাস, শম্ভু মিত্র, বিজন ভট্টাচার্য প্রমুখের সঙ্গে।
গণনাট্য সঙ্ঘের নির্দেশে তিনি যোগ দেন লোকনাট্যের দল 'আলকাপ'-এ। নিরক্ষর বা অল্প-শিক্ষিত আলকাপ শিল্পীদের নিয়ে আলকাপ-এর 'সিরাজ মাস্টার' ছ'বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন পশ্চিম বাংলার গ্রামে-গঞ্জে। সেই 'সিরাজ মাস্টার'-এর বিপুল জনপ্রিয়তা আজ কিংবদন্তী। এসব কথা বাবা-মা এবং সিরাজদা ও অন্যান্যদের কাছে বহুবার শুনেছি, কিছুটা দেখেছিও। আমার যখন সাত-আট বছর বয়স, তখন বড়দা চলে যান কলকাতায়, শুধুমাত্র সাহিত্যকর্মের উদ্দেশ্যেই। তখন তাঁর জীবনের ধ্যানজ্ঞান বলতে একমাত্র সাহিত্যই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাহিত্য- জগতে খ্যাতি পান তিনি। গ্রামবাংলার জীবনকে এক আশ্চর্য শিল্পনৈপুণ্যে তিনি তুলে ধরেছিলেন পাঠকদের সামনে।
চার.
পুজোর ছুটিতে কলকাতা থেকে দাদা যখন বৌদি-ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে বাড়িতে আসতেন, যে ক'দিন থাকতেন, সে কয়েকটা দিন আমাদের বাড়ি প্রকৃতই হয়ে উঠত উৎসবময়। একদিকে আমাদের স্কুল ছুটি, অন্যদিকে আশ্বিন-কার্তিকের মায়াময় পরিবেশ। বড়দার উৎসাহে সেসময় দ্বারকা নদীর ধারে একটা দিন পিকনিক হতো, আম-জামসহ গাছপালাঘেরা জঙ্গলের মধ্যে। ছোট-বড় মিলে আমরা প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জন সারাটা দিন প্রবল আনন্দের মধ্যে কাটাতাম, গানে-গল্পে, মজার মজার খেলায়। বড়দা নিজে বসে যেতেন রান্না করতে। আমাদের এই প্রবল আনন্দের পেছনে থাকত সুস্মিত গম্ভীর ওই মানুষটির উৎসাহ।
সেসময়টা সন্ধ্যাবেলা খোলা উঠোনে চেয়ার পেতে বসতেন বাবা, বড়দা ও অন্য দাদারা। গম্ভীর প্রকৃতির বাবাকেও দেখতাম দাদার সঙ্গে অনর্গল আলোচনায় মগ্ন হয়ে যেতে। মূলত সাহিত্য-সংস্কৃতি, কখনো-বা রাজনীতির প্রসঙ্গ এসে যেত সেসব আলোচনায়। অন্য দাদারাও অংশ নিতেন তাতে। আর আমরা ছোটরা কেউ-কেউ একটু দূরে বসে গোগ্রাসে গিলতাম ওইসব আলোচনা। বিভিন্ন লেখক, বইপত্র কিংবা তার বিষয়বস্তু সম্পর্কেও জেনে যেতাম সেইসব আলোচনা থেকে। কলকাতা শহরেরে সামগ্রিক ছবিটি যেন স্পষ্ট হয়ে উঠত আমাদের কাছে। মনে আছে, একবার বাবার কথায় বড়দা হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে গেয়েছিলেন, 'শোনো, কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো...।'
পাঁচ.
সিরাজদা বলতেন, তাঁর সাহিত্যের মানুষেরা হিন্দু মানুষ নয়, মুসলমান মানুষ নয়, তারা এই দেশের মানুষ। তাঁর ভাষায়, 'লক্ষ লক্ষ বছরের ইতিহাসের পদযাত্রী মানুষ।' ইতিহাস, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব-- সব বিষয়েই তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ ও বৈদগ্ধ। তাঁর গল্প-উপন্যাস পড়লে বোঝা যায়, কথাসাহিত্যিক সিরাজের মস্তিষ্কে এবং হৃদয়েও অবিরাম কাজ করে গিয়েছে একজন ইতিহাস-গবেষক কিংবা এক নৃতাত্ত্বিক, যে আবহমান মানবসভ্যতা এবং অনন্ত ও রহস্যময় প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে আবিষ্কার করেছে এক-একটি চরিত্রকে; দ্বন্দ্বে ও সংগ্রামে উদ্দীপ্ত, কখনো-বা বিষণ্ণ এইসব প্রকৃতির সন্তানকে। মানুষ ছিল তাঁর কাছে প্রকৃতির সন্তান।
ছয়.
এই প্রকৃতির কাছে বারবার ফিরে যেতে চাইতেন তিনি। কিন্তু নগরসভ্যতার জালে আটকে পড়েছিল তাঁর জীবন। 2012-র চার সেপ্টেম্বর কলকাতায় তাঁর প্রয়াণের পরদিন, পাঁচ সেপ্টেম্বর, মেঘবৃষ্টিময় বিষাদঘন দুপুরে আমরা তাঁর নিষ্পন্দ দেহটি নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁর প্রিয় জন্মমাটিতে। সেদিন তাঁকে শেষবার দেখতে এসেছিলেন যেমন বহু বিশিষ্ট মানুষ, তেমনি চারপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে অগণিত সাধারণ মানুষ এসে যোগ দিয়েছিলেন গ্রামবাংলার ওই কিংবদন্তীর নায়কের শেষ যাত্রায়। আমিও ছিলাম সেই যাত্রীদেরই একজন।
আমার দাদা কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ তাঁর তিনটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলাম। তা দেখে শ্রদ্ধেয় দিলীপদা আমাকে বললেন দাদার সম্পর্কে কিছু স্মৃতিচারণা করতে। মনে হল, এখানে বন্ধুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা ভাগ করে নেওয়া তো যেতেই পারে। তাই এই ছোট্ট লেখাটুকু।
দুই.
মুর্শিদাবাদ জেলার রাঢ় অঞ্চলের একটি গ্রাম খোশবাসপুর। সেখানে 1930 সালে দাদার জন্ম। আমাদের আট ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বড়, আমি সবচেয়ে ছোট। আমাদের বয়সের ব্যবধান প্রায় ছাব্বিশ বছরের। স্বাভাবিকভাবেই ছেলেবেলা থেকে তাঁকে দেখেছি অত্যন্ত সম্ভ্রমের চোখে। আর বড়বৌদি হাসনে আরা বিয়ের পর যখন আমাদের বাড়িতে আসেন, তখন আমি কয়েক মাসের শিশু। বড়দার সঙ্গে যে সম্ভ্রমের দূরত্ব ছিল, বৌদির ক্ষেত্রে তার ঠিক বিপরীত। তাঁর সন্তানপ্রতিম স্নেহের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল খুব সহজ মধুর সম্পর্ক। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক ছিল অনেকটা এরকমই। আসলে, আমাদের ছেলেবেলায়, বিগত পঞ্চাশ দশকের শেষভাগে বা ষাট দশকের প্রথম দিকে শিক্ষিত বাঙালি যৌথ পরিবারে সম্পর্ক-বিন্যাস ছিল এরকমই।
তিন.
শুনেছি এবং দেখেছি, কয়েক পুরুষ ধরে আমাদের পারিবারিক বৈভব বলতে শুধু বই। বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর প্রবল অনুরাগ।তিনি গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ লিখতেন সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত পত্র-পত্রিকায়। বেদ- উপনিষদ- রামায়ণ-মহাভারত থেকে ইসলামী সংস্কৃতি, সুফিবাদ--- এ সবকিছুই সেসময় আমাদের পারিবারিক সংস্কৃতিকে গড়ে তুলেছিল। এসবের মধ্যেই বেড়ে ওঠা সিরাজদার। পরবর্তী সময়ে আমাদেরও।
বাবা-মায়ের কাছে শুনেছি, স্কুলের ছাত্র বড়দা স্কুলের ফি জমা না দিয়ে সেই টাকায় গল্পের বই কিনতেন। স্কুল পালিয়ে কোনো মাঠে বা গাছের উপর বসে সেইসব গল্পের বই পড়তেন। আর ছেলে স্কুলে যায়নি খবর পেয়ে বাবা তাঁকে খুঁজতে বেরতেন। প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন বড়দা। গ্রামের পাশেই দ্বারকা নদী আর বিল অঞ্চলে রাখালদের সঙ্গে মিশে যেতেন।খুব ভালো বাঁশি বাজাতে পারতেন আর পারতেন চমৎকার গান গাইতে। কলেজে পড়ার সময়ই যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে। সেখানে যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল সলিল চৌধুরী, দেবব্রত বিশ্বাস, শম্ভু মিত্র, বিজন ভট্টাচার্য প্রমুখের সঙ্গে।
গণনাট্য সঙ্ঘের নির্দেশে তিনি যোগ দেন লোকনাট্যের দল 'আলকাপ'-এ। নিরক্ষর বা অল্প-শিক্ষিত আলকাপ শিল্পীদের নিয়ে আলকাপ-এর 'সিরাজ মাস্টার' ছ'বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন পশ্চিম বাংলার গ্রামে-গঞ্জে। সেই 'সিরাজ মাস্টার'-এর বিপুল জনপ্রিয়তা আজ কিংবদন্তী। এসব কথা বাবা-মা এবং সিরাজদা ও অন্যান্যদের কাছে বহুবার শুনেছি, কিছুটা দেখেছিও। আমার যখন সাত-আট বছর বয়স, তখন বড়দা চলে যান কলকাতায়, শুধুমাত্র সাহিত্যকর্মের উদ্দেশ্যেই। তখন তাঁর জীবনের ধ্যানজ্ঞান বলতে একমাত্র সাহিত্যই। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাহিত্য- জগতে খ্যাতি পান তিনি। গ্রামবাংলার জীবনকে এক আশ্চর্য শিল্পনৈপুণ্যে তিনি তুলে ধরেছিলেন পাঠকদের সামনে।
চার.
পুজোর ছুটিতে কলকাতা থেকে দাদা যখন বৌদি-ভাইপো-ভাইঝিদের নিয়ে বাড়িতে আসতেন, যে ক'দিন থাকতেন, সে কয়েকটা দিন আমাদের বাড়ি প্রকৃতই হয়ে উঠত উৎসবময়। একদিকে আমাদের স্কুল ছুটি, অন্যদিকে আশ্বিন-কার্তিকের মায়াময় পরিবেশ। বড়দার উৎসাহে সেসময় দ্বারকা নদীর ধারে একটা দিন পিকনিক হতো, আম-জামসহ গাছপালাঘেরা জঙ্গলের মধ্যে। ছোট-বড় মিলে আমরা প্রায় কুড়ি-পঁচিশ জন সারাটা দিন প্রবল আনন্দের মধ্যে কাটাতাম, গানে-গল্পে, মজার মজার খেলায়। বড়দা নিজে বসে যেতেন রান্না করতে। আমাদের এই প্রবল আনন্দের পেছনে থাকত সুস্মিত গম্ভীর ওই মানুষটির উৎসাহ।
সেসময়টা সন্ধ্যাবেলা খোলা উঠোনে চেয়ার পেতে বসতেন বাবা, বড়দা ও অন্য দাদারা। গম্ভীর প্রকৃতির বাবাকেও দেখতাম দাদার সঙ্গে অনর্গল আলোচনায় মগ্ন হয়ে যেতে। মূলত সাহিত্য-সংস্কৃতি, কখনো-বা রাজনীতির প্রসঙ্গ এসে যেত সেসব আলোচনায়। অন্য দাদারাও অংশ নিতেন তাতে। আর আমরা ছোটরা কেউ-কেউ একটু দূরে বসে গোগ্রাসে গিলতাম ওইসব আলোচনা। বিভিন্ন লেখক, বইপত্র কিংবা তার বিষয়বস্তু সম্পর্কেও জেনে যেতাম সেইসব আলোচনা থেকে। কলকাতা শহরেরে সামগ্রিক ছবিটি যেন স্পষ্ট হয়ে উঠত আমাদের কাছে। মনে আছে, একবার বাবার কথায় বড়দা হারমোনিয়াম টেনে নিয়ে গেয়েছিলেন, 'শোনো, কোনো এক গাঁয়ের বধূর কথা তোমায় শোনাই শোনো...।'
পাঁচ.
সিরাজদা বলতেন, তাঁর সাহিত্যের মানুষেরা হিন্দু মানুষ নয়, মুসলমান মানুষ নয়, তারা এই দেশের মানুষ। তাঁর ভাষায়, 'লক্ষ লক্ষ বছরের ইতিহাসের পদযাত্রী মানুষ।' ইতিহাস, দর্শন, ভাষাতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব-- সব বিষয়েই তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ ও বৈদগ্ধ। তাঁর গল্প-উপন্যাস পড়লে বোঝা যায়, কথাসাহিত্যিক সিরাজের মস্তিষ্কে এবং হৃদয়েও অবিরাম কাজ করে গিয়েছে একজন ইতিহাস-গবেষক কিংবা এক নৃতাত্ত্বিক, যে আবহমান মানবসভ্যতা এবং অনন্ত ও রহস্যময় প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে আবিষ্কার করেছে এক-একটি চরিত্রকে; দ্বন্দ্বে ও সংগ্রামে উদ্দীপ্ত, কখনো-বা বিষণ্ণ এইসব প্রকৃতির সন্তানকে। মানুষ ছিল তাঁর কাছে প্রকৃতির সন্তান।
ছয়.
এই প্রকৃতির কাছে বারবার ফিরে যেতে চাইতেন তিনি। কিন্তু নগরসভ্যতার জালে আটকে পড়েছিল তাঁর জীবন। 2012-র চার সেপ্টেম্বর কলকাতায় তাঁর প্রয়াণের পরদিন, পাঁচ সেপ্টেম্বর, মেঘবৃষ্টিময় বিষাদঘন দুপুরে আমরা তাঁর নিষ্পন্দ দেহটি নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁর প্রিয় জন্মমাটিতে। সেদিন তাঁকে শেষবার দেখতে এসেছিলেন যেমন বহু বিশিষ্ট মানুষ, তেমনি চারপাশের গ্রামাঞ্চল থেকে অগণিত সাধারণ মানুষ এসে যোগ দিয়েছিলেন গ্রামবাংলার ওই কিংবদন্তীর নায়কের শেষ যাত্রায়। আমিও ছিলাম সেই যাত্রীদেরই একজন।
0 মন্তব্যসমূহ