নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে আলাপ : টোপ

জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা 

সকাল প্রায় শেষ, দুপুর ছুঁই ছুঁই। দিনের এই বেলাটি কেমন অন্যরকম। আলস্যের চাদরে জড়িয়ে আসা এ সময়টুকুন কোন কোন দিন যেন একটু বেশিই অদ্ভুত। তখন ইচ্ছে করে জগতের সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে; প্রিয়-অপ্রিয় সব কাজ বাদ দিয়ে, চুপচাপ বসে থাকতে। তেমনই এক ‘না-সকাল’‘না-দুপুরে’ পছন্দের লেখকের নতুন বই পাশে নিয়ে বসে আছি। আছি তো আছিই। কিছুই করছি না। এমন সময় ভীষণ প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ হঠাত একটি লিঙ্ক দিয়ে বললেন, “গল্প টি পড়”।

তিনি এমন একজন মানুষ, যাঁর কথা আদেশের মত; মানতেই হয়। ভালও লাগে মানতে। সুতরাং চরম নিরুতসাহী মন নিয়েও লিঙ্কটি ওপেন করছি আর মনের অবস্থার সাথে মিলিয়ে ভাবছি, নিশ্চয়ই খুব বিরক্ত লাগবে পড়তে। নিশ্চয়ই পুরোটা শেষ করতে পারবো না এখন। আচ্ছা শুরু তো করি। প্রথমেই দেখলাম লেখকের নাম। খ্যাতিমান সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। তবুও ব্যস্ত আমি বিভিন্ন নেতিবাচক ভাবনায়। কি হয় নামী লেখক হলে? খ্যাতিমান লেখকের সব লেখাই কি ভাল লাগে? ভাবতে ভাবতেই পড়তে আরম্ভ করলাম। কিন্তু কি আশ্চর্য! একটু শুরু করতেই এক ভীষণ অনিচ্ছুক, চরম অনাগ্রহী পাঠক ‘আগ্রাসী পাঠকে’ রূপান্তরিত হল। কিভাবে? সে কথাই ভাবছি, সেই তখন থেকে। আগ্রহী পাঠক, চাইলে থাকতে পারেন সাথে।

“সকালে একটা পার্সেল এসে পৌঁছেছে। খুলে দেখি একজোড়া জুতো”। আপাত রসিক এ বাক্যদ্বয়ে শুরু হয়েছে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এর গল্প “টোপ”। সূচনা ছাড়াও গল্পের ভেতরে যাবার পথ-পরিক্রমায় ‘সেন্স অফ হিউমার’ এর দারুণ ব্যবহারে রম্যসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী কে চকিত মনে পড়ে। গল্পের জটিলতায় প্রবেশের আগ পর্যন্ত পাঠকের মনে হলেও হতে পারে, তিরতিরকরে এগিয়ে চলা এ গল্পটি রসময় কোন কাহিনীর।আবার একই সাথে ‘রহস্যময় কোন গল্পে জড়িয়ে যাচ্ছি’ সে ভাবনাও অমূলক মনে হবে না পাঠকের। যেমন, পার্সেলের এ জুতোজোড়া কে পাঠিয়েছেন–লেখককে অনুসরণ করে সে ভাবনায় পাঠকযখন মজার জল্পনা-কল্পনায় দিশেহারা; তখনই লেখক আকস্মিক এক আলো ফেলেন প্রকৃত প্রেরকের দিকে। গল্পে হঠাত আগমনকারী এই প্রেরক যে-সে লোক নন, লেখক তা বুঝিয়ে দিতে দারুন আগ্রহী। ধন-মান-গৌরবে অসামান্য মানুষটিকে আরো একটু মহিমান্বিত করতেই যেন চিরকুটের ভাষার প্রতি আকৃষ্ট করেন পাঠককে। পার্সেলে খুঁজে পাওয়া সবুজ এই চিরকুটের ভাষা আধুনিক কেতায় লেখা ইংরেজিতে, ‘সাধারণের ভাষা বাংলা’য় নয়– তা স্মরণ করিয়ে।আচ্ছা, চিরকুটের ভাষার আভিজাত্যে গর্বিত প্রাপক, আমাদের লেখক ‘সবুজ’ রঙ উল্লেখ করেও কি কিছু বুঝে নেবার ইঙ্গিত দিলেন পাঠককে? হতে পারে; এক সবুজ বনানীতেই যে গল্পের বিস্তার! মজার বিষয় হচ্ছে, লেখক পুরো গল্পের কোথাও সরাসরি কোন দিক নির্দেশ করেননি কি ঘটতে যাচ্ছে একটু পরে; সব সময়ই পাঠককে ছেড়ে দিয়েছেন অসংখ্য ভাবনার মাঝে। সে যাই হোক,অবিলম্বে পাঠক জেনে যান প্রেরকের বিবরণ, ‘রাজাবাহাদুর এন আর চৌধুরী, রামগঙ্গা ষ্টেট’; আর এখান থেকেই শুরু হয় লেখকেরঅদ্ভুত এক স্মৃতিচারণ। সাথে সাথে পাঠকও হয়ে যান লেখকের সে স্মৃতি-যাত্রারঅবশ্যম্ভাবী এক সঙ্গী। আরণ্যক সে ইতিহাস, এক বিচিত্র শিকার কাহিনীই সেই স্মৃতিগল্প – যার বাঁকে বাঁকে রয়েছে পাঠকের জন্য অলঙ্ঘনীয় ঐ ডাকাতিয়া আহবান।লেখক ডাক দেন হ্যামিলনের সেই বাঁশীওয়ালার মত; আর পাঠক করতে থাকেন অনুসরণ, মন্ত্রমুগ্ধ যেন!

গল্পের শুরুতেই জানা যায় প্রশস্তিমূলক এক রচনার মাধ্যমে লেখক দ্রুত হয়ে গিয়েছিলেন রাজাবাহাদুরের নিকটজন। অন্যেরা ‘মোসাহেবী’ ভাবলেও লেখকের অবশ্য তা কখনো মনে হয়নি। বরং তিনি আনন্দিত কেননা রাজাবাহাদুর তাঁকে যারপরনাই করেছেন পুরস্কৃত। তেমনই একবার এক শিকার পরিকল্পনায় লেখককে করেন রাজাবাহাদুরের সঙ্গী।আর সেখানেইআরম্ভ মুহুর্মুহু সিকোয়েন্স বদলে যাওয়া অভিনব এই গল্প ‘টোপ’ এর। শিকারের উদ্দেশ্যে প্রথমেই শুরু হয় এক জঙ্গল-যাত্রা। গহীন জঙ্গলে যাওয়ারসে বর্ণনাটি এমনই যে, যেকোন পাঠকের মনে হবে তিনিও চলেছেন। চলেছেন ‘রোলস রয়েসে’, রাজহংসীর মত; চলেছেন গা-ছমছমে শ্বাপদসংকুল এক রহস্যময় বনপথে।অদ্ভুত হলেও সত্যি, অনুভূতিগুলো হতে থাকে ঠিক গল্পেরঅক্ষরগুলো কে অক্ষরে অক্ষরে অনুসরণ করেই। যাত্রার শুরুতেই দারুণ এক সজীব-সবুজ বন পাঠক যেমন নিজ-চোখে দেখবেন প্রাণভরে, তেমনি বনের গভীরতায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই আতঙ্কে হয়ে উঠবেন অস্থির। নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দটিও যেন তখন মনে হবে ভয়ঙ্কর হিংস্র কোন বাঘ, সিংহ, কিংবা নিদেনপক্ষে বুনো শিয়ালের হামলে পড়ার ভয়াবহ আলামত!লেখকের বলে যাওয়ার ধরণটি আসলেই এমন যে, পাঠকও লেখকের মত আরামদায়ক এক স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবেন মনোরম সেই কাঠের বাংলোয় পৌঁছে। ভাববেন, যাক খারাপ কিছু ঘটেনি তাহলে! বাংলোয় পৌঁছে কিছুটা নিশ্চিন্ততা আসলেও গা-ছমছমে ভাবটি পাঠকের যায় না; ঠিক লেখকের মতই অবাক বিস্ময়ে দেখতে থাকেন চারিদিকে পরিখা কাটা নিবিড় জঙ্গলে দাঁড়িয়ে যাওয়া আকস্মিক এক কাঠের দোতলা বাংলো।তবে বাংলোর ভেতরে পৌঁছে, তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে রাজা বাহাদুরের বিনয়ী দাঁড়িয়ে থাকা সহ রাজসহবতের আরও অনেক নমুনা লেখককে এতোখানিই মুগ্ধ করে যে, পাঠকও বেশ কিছুক্ষণ মুক্ত থাকতে পারেন গল্পের আদিতেই শুরু হয়ে যাওয়াভয়াবহ সব সাসপেন্স থেকে। রাজকীয় আতিথ্যের প্রতিটি স্বাদ এইবেলা পাঠকও যে লেখকের মত চেখেচেখে দেখতে থাকেন তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নারায়ণগঙ্গোপাধ্যায় এর পাঠক মাত্রই জানেন তাঁর উপস্থাপনা কতখানি বাস্তব আর সরস!

মূলত ঐ বাংলোয় পৌঁছে লেখকের গল্প মোড় নিতে থাকে সম্পূর্ণ অজানা এক রহস্যময়তার দিকে। শিকারের নেশায় উন্মত্ত এই রাজাবাহাদুরেরসাথে নৈকট্যপূর্ণ কথোপকথনে লেখক দেখতে শুরু করেন ভেতরের ক্রুর এক ক্ষমতাশালীকে। যদিও তাঁকে নিয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব হয় না লেখক কিংবা পাঠক কারোরই। ‘মানুষ খুন করতে পারেন?’ - এমন খামখেয়ালি প্রশ্নে রাজা লেখকের মেরুদণ্ডে যেমন শীতল স্রোত বইয়ে দিয়ে যান, তেমনই আবার চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে লেখককে কিভাবে যেন মুহূর্তেই জড়িয়ে ফেলেন লেখকসুলভ পেলব স্বাভাবিকতায়। তাঁদের শিকারের প্রথম রাত্রির অভিজ্ঞতাটিও যেন কেমন! পুরো রাতের বিবরণটি এমন উত্তেজনাপূর্ণ যে সেখানেও গল্পের পরিসমাপ্তিহতে পারে এমন মানসিক প্রস্তুতি তৈরি হয় পাঠকের। ব্যর্থ ঐ শিকার-রাত্রে অবশ্য সে সম্ভাবনা মাঠে মারা পড়ে। তেমন উল্লেখযোগ্য শিকার না পাওয়ায় রাজাবাহাদুর অসন্তোষ এবং অস্বস্তি নিয়ে কি এক অন্য ভাবনায় মগ্ন হয়ে যান, লেখক তা খেয়াল করলেও খুব চিন্তিত হন না। বরং খাওয়া-দাওয়া সহ দিনযাপনের অন্যান্য রাজকীয় সুখী উপকরনেই ডুবে যান তিনি। যদিও তাও পারেন না পুরোপুরি।এ সময় বাংলোর পরিবেশ ঘন ঘন বদলে যেতে থাকে। এই দেখা যায় রাজা বাহাদুর কতগুলো মাতৃহীন শিশুকে বিস্কুট, রুটি, পয়সা ছুঁড়ে দিচ্ছেন। যেই দৃশ্যের মাঝে লেখক-পাঠক দুজনই রাজাবাহাদুরের দয়ালু হৃদয়ের আভাস পেতে চান একটু। আবার শিকারের ব্যর্থতায় হীনমন্য রাজা মদের নেশায় যখন চুর এবং সফল এক শিকারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তখন বাংলো কেও মনে হতে থাকে বাইরের নিরেট অরণ্যসম হিংস্র, জান্তব। সে কারণেই‘কি যেন হচ্ছে’ কিংবা ‘হতে যাচ্ছে’– এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি যখন প্রকাশ্য, লেখক এবং তার পাঠক দুজনই পেতে চান মুক্তি। নাছোড় রাজা বাহাদুর তখন জানান অন্যরকম এক শিকার ব্যবস্থার কথা। হ্যা, গল্পের নাম ‘টোপ’ হওয়ায় কিছু ভয়াবহতার শঙ্কা আগে থেকেই থাকে পাঠকের মনে। তারপরও, ... তারপরও লেখকের মতই স্বাভাবিক থাকতে চান পাঠকও। তাই রাজাবাহাদুর যখন বলে চলেন ৪০০ ফুট নিচের খাদ থেকে মাছ ধরবেন ‘টোপ’ ব্যাবহার করে (কপিকলের মাধ্যমে), তখন লেখক-পাঠক মিলেমিশে আতঙ্কিত হয়ে উঠলেও সর্বোচ্চ ভয়ঙ্কর কোন ভাবনায় ভীত হতে চাননি। এবং ভীত হননি। কিন্তু অতি শীঘ্রই কথিত‘মাছ ধরবার’ রাতে মুখোমুখি হতেই হয় সেই তীব্র অনাকাঙ্ক্ষিত এক তিক্ততার।অজানা, অভাবিত, তীক্ষ্ণ সে মুহূর্তটির জন্য প্রস্তুতি থাকলেও লেখকের নাটকীয় ভাবে এগিয়ে নেয়া ঘটনার আচমকা উপস্থাপনায় পাঠক ভেঙ্গে-চুরে হন একাকার। হ্যাঁআগে থেকে সংগ্রহ করে রাখা অনাথ মানবশিশুর ‘টোপ’ হওয়া এবং এর মাধ্যমে রাজাবাহাদুরের রয়েল বেঙ্গল টাইগার শিকারের রোমহর্ষক এক উত্তেজনা আনয়নকারী ‘আনন্দ-প্রক্রিয়া’ সবাই (লেখক-পাঠক) কে স্তব্ধ করে দেয়। স্তব্ধ করে দেয় আসলে ঘটনার আকস্মিক নৃশংসতা,স্তব্ধ করে দেয় কাহিনীর পরিণতি বুঝে উঠতে না পেরে চিন্তার এ গলি - ও গলি ঘুরে ফেরা পাঠকের অদ্ভুত এক মনস্তাত্তিক জটিলতা (পাঠকের ভেতর থাকা এ জটিলতা লেখকেরই দান, তিনিই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তা আলোয় আনেন)। পুরো গল্প জুড়ে ‘নিজেকে নিয়ে থাকা’, ‘নিজের জন্য বাঁচা’ - খুব গড়পড়তা ধরণের এক সাধারন মানুষ মনে হয় ‘লেখক চরিত্র’টিকে কে। এই পর্যায়ে এসে নিষ্ঠুরতার শোক সামলে বোধ হয় তাই পাঠকের একটু ‘ভাল লাগা’ তৈরি হয় এই ভেবে, ‘যাক! ভয়াবহ এক আঘাতে সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন লেখক। এখন উপলব্ধি টুকুন হবে নিশ্চয়ই অন্যরকম’। এরকম প্রশান্তিময় এক ভাবনা সহকারে পাঠক যখন এগিয়ে যান গল্পের শেষ প্রান্তে তখনই আসে আসল ধাক্কা। এ ধাক্কায় ভেঙ্গে যায় ‘লেখক চরিত্র’ টির গায়ে সেঁটে থাকা আশ্চর্য এক ‘বাস্তবতার আয়না’। যেই আয়নার ভাঙ্গা কাঁচে জর্জরিত পাঠক চকিত নিজেকে দেখে ফেলেন। কি অবাক কাণ্ড! সেই কবেকার ‘পুরনো গল্পে’র ‘আধুনিক নতুন পাঠক’ও কিভাবে যেন দেখে ফেলেন নিজেকে! সেই সেখানেই!!

যাইহোক, গল্পের শেষাংশে ‘লেখক চরিত্রে’র চূড়ান্ত মনোভাবটি প্রকাশিত হয় নিজের সাথে নিজের এ আলোচনায় – “কিপারের একটি বেওয়ারিশ ছেলে যদি জঙ্গলে হারিয়ে গিয়ে থাকে তা অস্বাভাবিক নয়, তাতে কারো ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রকাণ্ড রয়েল বেঙ্গল মেরে ছিলেন রাজাবাহাদুর লোককে ডেকে দেখানোর মত। তার আটমাস পরে এই চমৎকার চটিজোড়া উপহার এসেছে। আটমাস আগেকার সে রাত্রি এখন স্বপ্ন হয়ে যাওয়াই ভাল, কিন্তু এই চটিজোড়া অতি মনোহর বাস্তব। পায়ে দিয়ে একবার হেঁটে দেখলাম, যেমন নরম তেমনি আরাম”। গুণী গল্পকার নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর শাণিত কলমের নির্মম খোঁচায়দেখালেন বাঘের চামড়ার চমৎকার এক উপহার প্রাপ্তি কেমন ভুলিয়ে দেয় মনুষ্য চামড়ার নিষ্ঠুর নিঃশেষ হওয়া!


গদ্যসাহিত্যের এই অসাধারণ যাদুকর তাঁরসম্মোহনী লেখনী দিয়ে শুরু থেকেই পাঠককে বেঁধে রাখেন আষ্টেপৃষ্ঠে। পরিবেশ এবং বিবিধ মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃশ্যায়নে পাঠককে দিয়েছেন পুরো গল্পটাই নিজের চোখে দেখার অসাধারণ এক ক্ষমতাও। কিন্তু গল্পের আসল সার্থকতা এগুলো ছাপিয়ে অন্যকিছু। বহুযুগ আগে লেখা গল্প ‘টোপ’ এখনও এতটুকু পুরনো হয়নি। আধুনিকতার চরমে পৌঁছেও আমরা ‘টোপ’ হই, ‘টোপ’ হতে দেখিঅন্য কাউকে। কখনো কখনো কষ্টে জর্জরিত হই; এবং জর্জরিত হলেও বিশেষ লাভের আশায় মেনে নেই কিংবা ভুলে যাই। ‘টোপ’ তাই নিঃসন্দেহে কালোত্তীর্ণ এক গল্প, যার পরতে পরতে আবার ছড়িয়ে আছে অভাবনীয় সবমোচড়। যেখানে পাঠকের আছে নিজের মত কল্পনা করার সীমাহীন স্বাধীনতা; যেখানে আছে - নিজে থেকে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারার আনন্দময় এক অক্ষমতাও। বলা যায়, লেখক পাঠককে নিয়ে খেলেছেন; রীতিমত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত! তবুপাঠক প্রতারিত বোধ করেন না, কারণ একই সে সমতার চাদরে নিজেকেও রেখে লেখক ধোঁকা গুলো নেন ভাগাভাগি করে। মিলেমিশে একাকার হওয়া এই ‘লেখক-পাঠক’ সম্পর্কটি আলগা হয় শুধুমাত্র গল্পের চূড়ায় ঘটা শেষ বিমুঢ়তায়। পাঠকের জন্য রয়ে যাওয়া চিন্তা-জগত এলোমেলো করা এই এককিত্বটুকু যখন পাঠকের একান্তই প্রয়োজন!




লেখক পরিচিতি
জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা 


জন্মস্থান: যশোর, বাংলাদেশ 
হোম ডিস্ট্রিক্ট: সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ 
বর্তমান আবাসস্থল: মেলবোর্ণ, অস্ট্রেলিয়া 
পেশা: অধ্যয়নরত| ব্যাচেলর অফ এন্ভায়রন্মেন্টস (মেজর- আরবান ডিজাইনিং এন্ড প্ল্যানিং), 
ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ণ|
খন্ডকালীন কাজ: রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট, আর.এম.এই.টি. ইউনিভার্সিটি|

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. গল্প টা এই ক সপ্তাহ আগেই - কলকাতার মীর এর সানডে সাসপেন্স এ, বেশ রাতে গল্পটা শুনতে শুনতে মন খারাপ নিয়ে ঘুমাতে যাই মনে আছে, তাই অফিসের পয়লা প্রহরে দ্রুত কিঞ্চিত কাজ সেরে আপনার নিরীক্ষণে 'টোপ' এর উদ্দেশ্যে ঝাপ !
    প্রথমত, শেষ করে মনেই থাকলো না আগে পড়েছি বা শুনেছি, আড়ম্বরবিহীন ঝরঝরে ভূমিকা কি করে এত সাবলীলভবে ভাসিয়ে রাখতে জানে ! অপর্ণা সেনের বাবা ঘুঘু সমালোচক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা চিদানন্দ দাসগুপ্ত সম্পর্কে অকাল প্রয়াত সুপ্রিয় পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ একবার বলেছিলেন যে, সদ্যমুক্তিপ্রাপ্ত চলচিত্র সম্পর্কে চলচিত্র সমালোচকরা সবাই রিপোর্ট লেখেন যা বেশিরভাগ খুব ই একঘেয়ে, সেখানে ইতিবাচক দ্বান্দিকতা নেই বললেই চলে ! চলচিত্র সম্পর্কে নিরন্তর পড়াশুনা, পর্যবেক্ষণ - ভাবনা চিদানন্দকে আলাদা করতে পেরেছিল, 'গল্পের আলোচনা'তে জান্নাতুল ফেরদৌস নৌজুলা সেই দিকের পথিক নিঃসন্দেহে, ''সে কারণেই‘কি যেন হচ্ছে’ কিংবা ‘হতে যাচ্ছে’– এমন অস্বস্তিকর অনুভূতি''.......''বলা যায়, লেখক পাঠককে নিয়ে খেলেছেন; রীতিমত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত! তবুপাঠক প্রতারিত বোধ করেন না, কারণ একই সে সমতার চাদরে নিজেকেও রেখে লেখক ধোঁকা গুলো নেন ভাগাভাগি করে''। ইয়েস, গল্পের দুই তৃতীয়াংশ একদম এরকম এভাবেই তারপরে গিয়ে কারো কারো ফেলুদা মন - তাহলে কি তাহলে কি ? শুভেচ্ছা সহ সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী বাংলাদেশ

    উত্তরমুছুন
  2. দারুণ হয়েছে। আগামীতে আরও লেখা দেখবো আশা করি।

    উত্তরমুছুন
  3. গল্পের আলোচনা টি তে বেশ মুগ্ধ হলাম!এত ছন্দ যে বার বার পড়তে ইচ্ছে করে। আনেক বার পড়লাম ও। সুন্দর বিশ্লেষণ এবং 'দেখার চোখ' লেখাটি তে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  4. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  5. লেখিকা খুব চমত্কার ভাবে বিশ্লেষণ করেছেন, মনে হলো 'টোপের উপর টোপ 'ফেলা হলো /অর্থাৎ গল্পটি পড়ার একটি তাগিদ অনুভব করছি/ অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি লেখা উপহার দেবার জন্যে আশাকরি আগামীতেও এর চর্চা থাকবে / শুভ কামনা থাকলো লেখিকার জন্যে/

    উত্তরমুছুন