হামীম কামরুল হকের গল্প : ঘা


বাবা সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেনএই বছরের ভেতরে যদি মাথা থেকে ভূত নামে তো ভালো, নইলে নিজের পথ দেখোভূত তো দুটিএকটা লেখালেখির, আরেকটা নিধিপ্রথম ভূতটা উঠেই আছে, নামার কোনো লক্ষণ নেই, বিষয়টা সবাই কমবেশি জানেদ্বিতীয়টা একেবারে গোপনে, উঠছে-নামছে, কেউ জানে না।( বলে রাখার ভালো নিধি যাকে বলা হচ্ছে সেসময়ের মেয়েদের নাম, মানে এদেশের বাঙালি মুসলমান মেয়েদের নাম সাধারণত কেউ নিধি রাখত না, তখন নাম হত শায়লা, শেলী, শান্তা, নয়তো শিউলি, রিমা, সীমা বেশি হলে মহুয়া, বা নানান ধরনের ফুলের নামে নামটামতাই ধরে নিতে হবে নিধিনামটা ছদ্মনামনিধির নিরাপত্তার জন্যই ওকে এখানে নিধি বলতে হচ্ছে।) নিধি যখন মোবাইল ফোনে ফিসফিস করে বলে, ‘অ্যাই কী করো?’ তুমি বলো, ‘তোমার কথা ভাবি
কেন ভাবো?’
তুমি কাছে নাই তো তাই
ওওওওও! তার মানে, যখন কাছে থাকি তখন আমি আর তোমার মাথায় থাকি না, নাএই নাশব্দটা নিধি এমন টেনে টেনে বলে, এমন আদর লাগে তখন
নিধি তোমাকে আদরও করে খুবএত সুন্দর করে চুমু খেতে পারে নিধিতুলনাটা তুমি দিতে পারোÑ মেডিক্যাল কলেজে পড়তে, যে দুটো মেয়ের সঙ্গে তোমার খুচরাখাচরা একটু চলেছিল, চলেছিল মানে ওই ছোঁয়াছুঁয়ি, চুমুটুমু পর্যন্ত, দুজনেই ছিল দুর্দান্ত সুন্দরী, তারা কেউ নিধির মতো পারে নাওরা দুজনেই ছিল ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টতোমার আবার ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের প্রতি আলাদা একটু দুর্বলতা ছিল, কিন্তু কেউ তো আর নিধির মতো এত কিছু জানত না, অবশ্য জানার কথাও না, কেউ তো আর নিধির মতো বিবাহিত নয়, তারওপর নিধি এক ছেলের মাবিয়ে হয়েছে প্রায় দশ বছরস্বামীটি  নাকি একটা দানবযেমন লম্বা, তেমন চওড়ালোমহীন বলে নিধি যখনই স্বামীর কথা বলে, বলে সিমারটা করল কী, সিমারটা বলল কীএমন করে বলেমাঝে মাঝে নিজের কপালের দোষের কথা বলেকপালের দোষ না হলে তার মতো মেয়েকে কোনো স্বামী  প্রায় প্রতিদিন কারণে অকারণে পেটায়? এক দফা পিটিয়ে তার পর পরই সেক্স করেছিঁড়েখুঁড়ে খায়নিধির সারা শরীরেই এখানে ওখানে অসংখ্য কামড় আর নখের দাগ থাকে, এমন হিংস্র, অথচ লোকটাকে দেখলে কেউ চিন্তাও করতে পারবে নানিজের ছেলেকে যখন আদর করে, বা সবাই মিলে বাইরে কোথাও যায়, মনে হবে তাদের চেয়ে সুখী পরিবার খুব কম আছেআর সেই লোক কী ভয়ংকর হয়ে ওঠে রাতের বেলাসিমারটা নিজেই একদিন নিধিকে মুখ ফসকে বলে ফেলেছিল তার বাপও বলে মাকে প্রায় দিন পেটাতো
নিধিকে কি ভূত না বলে পেত্নী বলব? কিন্তু পেত্নী তো খটখটে হাড্ডিসার ঢ্যাংগা, হয় কালো কুচকুচে, নয়তো সাদা ধপধপে কিছু একটা, বড় বড় নখ, রাক্ষুসে দাঁত নিধিকে দেখলে তো কল্পনাও করা যাবে না।  তার আসল যে নামটা আর এখানে তাকে যে নামে ডাকা হচ্ছে, দুটো নামই তার জন্য বলতে গেলে খাপেখাপে মিলেছেনামের সঙ্গে মানুষের অনেক সময়ই তার চেহারা সুরত আকার প্রকারের মিলে যায়এমন কি কাজের সঙ্গেওরবি ঠাকুরের কথা ভাবা যাকরবীন্দ্রনাথের চেয়ে দ্বিজেন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ কোনো অংশে কম ছিলেন না; আর জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তো বলতে গেলে তারচেয়েও বেশি প্রতিভাবান ছিলেন, কিন্তু রবিই রইল সবকিছুর কেন্দ্রেসূর্যকে ঘিরে যেমন পৃথিবী, রবীন্দ্রনাথকে ঘিরেই বাংলাসাহিত্যর সব কিছুতোমার নামও তো রবিউস সানিলোকজন তোমাকে সানি বলেনিধিই তোমাকে ডাকে রবিবলেঅদ্ভুত! তোমার নামের ভেতরে রবিকথাটা আছে, কিন্তু কেউ তোমাকে রবি বলে ডাকে না, কি ঘরে কি বাইরে সবখানে তুমি সানি
নিধি নাদুসনুদুস, ফোলাফোলা গালওয়ালী একটা মেয়ে, মেয়ে তো না নারী, তবে মহিলা মহিলা তাকে এখন দেখায় নানিধিকে মেয়েই বলতে, খুকি খুকি, নাদুসনুদুস ছিরিটা তো তার অটুট, এক বাচ্চার মা হওয়ার পরওবয়স প্রায় পঁয়ত্রিশ হয়ে যাওয়ার পরওমুখের ভেতরে একটা মিষ্টতা আছেসারামুখ হালকা রোমে ভরা, বিশেষ করে ঠোঁটের দুপ্রান্তের রোমগুলো বেশ চোখে পড়ে, কিন্তু ওই রোমের জন্যই মুখে যেন অদ্ভুত একটা স্নিগ্ধতা ছড়ানো
নিধিরা এই মহাল্লায় আছে প্রায় দশ বছরমানে বিয়ের পর থেকেই এখানেতুমি তো বয়সে নিধির প্রায় পাঁচ বছরে ছোটআগে পাড়ার মোড়ে মফিজ্জ্যার চায়ের দোকানে আড্ডার সময়, রাস্তা দিয়ে যাওয়া কোনো মানুষ, তার ভেতরে এতটুকু উদ্ভটত্ব পেলেই আড্ডাবাজেরা একটা মানুষকেও মন্তব্যহীন ছেড়ে দিত নানিধিকে দেখে বলেছিল, এই যে মহিলা আসতেসে, দেখ দেখ শালা কী ফিগার, সারাশরীরেই দুদ আর দুদশুনে তুমি এত লজ্জা পেয়েছিলেমুখে বলতে পারো নি, যাহ, আস্তে বল, আমাকে চেনে
নিধি তোমার বড় আপার সঙ্গে এক ক্লাসে পড়তবড় আপার সঙ্গে একসঙ্গে তোমাদের বাসায় এসেছিলদুজনের ছেলেমেয়ে চট্টগ্রামের সবচেয়ে ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েনিধির সঙ্গে তোমার পরিচয়টাও খুব অদ্ভুত সময়েতোমরা নিজেদের যে চারতলা বাড়িটাতে থাকো, তার একতালায় থাকো তুমি ও তোমার বাবাদোতলায় তোমার বড় ভাইবাকি তিন ও চার তলা ভাড়ানিধি আর তোমার বড় আপা যখন দোতলা থেকে নামছিল, ঠিক তখন তোমাকে তোমার বাপ দরজা খুলেই বলে, কী রে, কেমন কাব্যি হল আজকে সারাদিনভূত যে কবে যাবে?
বিকাল চলে যাচ্ছিল সন্ধ্যার দিকে, ঠিক কনে দেখা আলোতে তুমি নিধিকে দেখেছিলেতোমার বাবার কথার ভেতরে এমন একটা তাচ্ছিল্য আর খোঁচা ছিল, নিধির নাকি সেটা শুনেই তোমার জন্য হু হু করে একটা মায়া জন্মে যায়তুমি বাপকে ঠেলেই বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়েছিলযা লজ্জা লেগেছিল
বাপ হলো চট্টগ্রামের সফল উকিলদের একজনবড় ভাই, মানে বড়দাও তাইমাঝখানে প্রায় ছয়টা বোনতারপর তুমিসবার ছোটবড় ভাইয়ের পরে, আর বোনগুলো জন্মানোর ফাঁকে ফাঁকে আরো অনেকগুলো ভাইবোন হয়েছিল, সবগুলো বেঁচে থাকলে তোমরাও ভাইবোন হতে চৌদ্দ জনপ্রায় বালক বয়েসে তোমার মা মারা যায়বাপকে তো এখনো দেখে বোঝার উপায় নেই, যে তার এত বয়স, চুলে কপল মাখলে তাকে রীতিমতো তাগড়াজোয়ানই মনে হবেবড় ভাই-ই তোমার প্রায় পঁচিশ বছরের বড়তুমি বাপ আর বড়ভাই দুজনের কড়া শাসনে মানুষদুজনে মিলে তাদের জীবনের বলতে গেলে সেরা শ্রম দিয়েছেন তোমাকে মানুষ করতেবোনগুলো দেখতে একজনের চেয়ে আরেকজন পাল্লা দিয়ে সুন্দরী, তারপর মোসাদ্দেকুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে, পাত্র পেতে, বিয়ে হতে, কারোরই এতটুকু দেরি হয়নিএর ভেতর বড় আপার চ.বি-তে ইংরেজিতে অনার্স পড়তে পড়তে বিয়ে হয়ে যায়তার বইয়ের দুটো র‌্যাক তোমার নিয়তি হয়ে ওঠেতোমার বাপের দুঃখ সময় থাকতে কেন ওই আউট-বইয়ের র‌্যাকদুটো তিনি সরাতে পারেননি
তোমাকে তারা ডাক্তার বানিয়ে তবে ছেড়ে দেবেন মনে করেছিলেন, কিন্তু ছাড়াছাড়ির নাম তো নেই, তোমার ঘাড় থেকে, মাথা থেকে লেখালেখির ভূত নামিয়েই তবে তারা ছাড়বেন বলেও পণ করেছেনমাঝে মাঝেই ভাবো এখন ডাক্তারির সার্টিফিকেট আছে, বাড়ি ছেড়ে কোথাও চলে গিয়ে, স্রেফ ডাক্তারি করে পেট চালানো আর লেখালেখি, ব্যস, তাহলে আর কী চাইঅঁরি ত্রোইয়ার লেখা চেখভের জীবনী পড়ে তুমিই ঠিক করেছিলে ডাক্তারি আর লেখালেখি একটা স্ত্রী আর একটা প্রেমিকা এই দুই নিয়ে তুমি জীবন পার করবেচেখভের বাপের সঙ্গে তুমি তোমার বাপকেও মিলিয়ে নিয়েছিলেঅবশ্য তোমার বাপের চেখভের বাপের মতো ছেলেমেয়েদের পেটানোর স্বভাব ছিল না, কিন্তু কথার চাবুকে তিনি যেভাবে তোমাদের ভাইবোনদের চাবকাতেন সেটাও কম পেটানো নয়তিনি মনে করতেন মানুষকে সৎ ভাবে বড় করার জন্য এমন করার দরকার আছে
লেখালেখির ভূত তো আছেই, তারপর তুমি তার মতো কেন সময়মতো ধর্মকর্ম পালন করো না, এটা নিয়েও তিনি তোমাকে কম কথা শোনাননিবলতেন, তোমার সাহিত্য সম্রাট, মানে বঙ্কিমবাবুও কিন্তু তারও ভগবান মানে তার নিজের খোদার ভয় ছিলসে কি আর ছোট লেখক? তুমি আমার কী এমন লেখক হতে চাও তাও দেখতে ইচ্ছা করেতোমার বাপ রেগে গেলে সবছেলেমেয়েকেই তুমিকরে বলেনকেবল বড় ভাই, সেজ আর ছোট আপাই বলতে গেলে বাপকা বেটা ও বেটিহতে পেরেছে, বাদবাকিরা কেউ বাপের মতো হয়নি, সবাই পেয়েছে মায়ের স্বভাব
তুমি এসব বলছিলে নিধিকেনরম তুলতুলে নিধিকেনিধি নিজেই বলত, ‘আমি হলাম পারফেক্ট নারী, রুটির মতোতুমি বলতে, ‘মানে কী?’  ‘কেন জানো না নারীরা হবে রুটির মতো নরম কিন্তু গরমসাধারণত নিধি তোমার ওপরে থাকার সময় তুমি নিধিকে এসব কথা বলনিধিও বলে তুমি যখন নিধির ওপরে থাকোনিজেদের জীবনের কত কথাইনা জানা হয়েছিল এই সময়গুলোতেমানুষ মাতাল হয়ে গেলে যেমন নাকি হড়বড় করে অনেক বেফাঁস কথা বলে দেয়, তোমার প্রেম করতে করতে মনে হয়  মাতাল হয়ে যেতেপ্রেমমদে মাতালকত কিছুর যে পর্দা উঠিয়ে দিয়েছো একে অন্যের জীবন থেকে তার কোনো ইয়ত্তা নেইনিধি বলে ফেলেছিল তার বাপের খুব মেয়েমানুষের নেশা ছিলভীষণ রোমান্টিক বাপ ছিল তার
নিধির আবার একটা বিয়ারের ক্যান আর একটা সিগারেট শেষ করত বিছানায় যাওয়ার আগেবলত, ‘তোমাকে পেয়ে সত্যি অনেকদিন পর আমার সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছাটা চাগিয়ে উঠলবিয়ার নকি তার স্বামী সব সময়ই খায়আগে খেতে চাইতাম না বলে সিমারটা মেরেওছিল কয়েকদিনএখন তুমি আমার টেডি বিয়ার, আমি তোমার ডিয়ারবলে খিলখিলিয়ে কী হাসিবিয়ার খেয়ে তোমার মতো টেডি বিয়ারকে কচলাতে খুব মজা জানো?’ আরো বলতো,‘যে বিয়ার খাইতেই চাইতো না তারই এখন বিয়ার না হলে চলে নানিধি  নাকি নিজেই  সিমারকে মনে করায় ফ্রিজে রাখা বিয়ার কখন শেষ হতে চলেছে
নিধির স্বামী একটা জাহাজ কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ারইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে পরে আবার এমবিএ করেছেকোম্পানি কেন জানি লোকটাকে ছাড়তেই চায় নালোকটা সকালে দশটায় বাসা থেকে বেরিয়ে যায়রাতে আসার কোনো ঠিক ঠিকানা নেইতারওপর কদিন পর পর মালয়েশিয়া-সিঙ্গপুর-হংকং তো আছেইতাই নিধির সুযোগও অনেকছেলেটাকে স্কুলে পাঠিয়ে, কাজের মেয়েটাকে ছেলে আনতে পাঠানোর সময় তো আছেই, কোনো কোনোদিন তাদের উপস্থিতিতেই বসার ঘরের দরজা বন্ধ করে প্রেম করার সাহসও তোমরা কম দেখাওনি
নিধি তোমাকে বেশ ভালো মতো খেয়াল করততোমার এতটুকু অন্যমনস্কতাও টের পেয়ে যেতএমনকি ফোনে কথা বলার সময় তোমার গলার স্বর শুনে তোমার মনমেজাজ ধরে ফেলতে পারত সেকখ্খনো মন খারাপ করবে না, আমি আছি না? মন খারাপ হলেই আমাকে ফোন করবে, নয় সোজা চলে আসবেতুমি বলতে, ‘তারপর তোমার বরের হাতে দুজনেই খুন হই একদিননিধি বলেছিল সিমারের নাকি লাইসেন্স করা পিস্তলও আছেসব সময় সঙ্গে সঙ্গে রাখেছয়তলা ফ্ল্যাটের নিচে কখন গাড়ি ঢোকে সেজন্য মাঝে মাঝে কাজের মেয়েটাকেও বারান্দায় দাঁড় করিয়ে রাখতোআর নিধির ছেলেটা অদ্ভুত সারা দিন নিজেকে নিয়ে আছেদিনরাত গাদাগাদা ছবির বইপত্র নয়তো খেলনা নয়তো পড়া এমন নিজেকে নিয়ে বিভোর’, আত্মমগ্ন ছেলে নাকি নিধি আর দেখেনিতুমি বলতে, ‘নিধিও কি যা পায় মগ্ন হয়ে যায়?’
পেলাম আর কোথায়? কতদিন পর তোমাকে পেলামতাও তুমি একটা পুঁচকে পোলাতাও ভাগ্যিস তোমাকে দিয়ে আমার পোষাচ্ছে নাইলে আমার জীবনে যে কী হত!
তুমি অনেক কথা বললেও নিজের কোনো সমস্যার কথা নিধিকে পারতপক্ষে বলতে চাইতে নাকারো কোনো রকম সাহায্যটাহায্য চাওয়ার দিকে তোমার অ্যালার্জি আছেতোমার বাপ তোমাকে বলতেন, ‘মোসাদ্দেক চৌধুরীর এক টাকা কারো কাছে দেনা নাই।  পাওনাও নাইআমার সব কিছুই নগদানগদিনিধি বলে, ‘তুমি আমাকে আসলে সত্যিকারের আপন ভাবো নাকী হয়েছে বলো তো?’ সেদিন তোমার কিছুই করতে ইচ্ছা করছিল নানিধি নিজের থেকে বেশ চেষ্টাটেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে পরে বলে, ‘কদিন ধরে এত চুপচাপ যে? প্লিজ বলো না কী হয়েছে? নইলে আমি আজকে বাবুর আব্বার হাতে খুন হবো, তোমাকেও খুন করাবো
 ‘আব্বা ডেটলাইন দিয়ে দিয়েছেএই বছরের ভেতরে যদি আমি নিজের খেয়াল খুশি মতো ঘোরা-ফেরা না করে বারিক কাকার ক্লিনিকে জয়েন না করি, তাহলে যেন নিজের পথ দেখি
তাতে কী? তুমি তো পুরোদস্তুর ডাক্তারি পাস করা ছেলে, এত চিন্তার কী আছে?’
আসলে আব্বার সঙ্গে, বড়দার সঙ্গে আমি কোনোমাত্র কনফ্লিক্টে যেতে চাই না
সম্পত্তির জন্য?’
আরে নাযাই বলি আর নাই বলি, আব্বা ও দাদা যা কিছু করছেন আমার ভালো জন্য করেছেনআব্বাকে কোনোভাবেই বোঝানো যাচ্ছে না, যে ডাক্তারি আর লেখালেখি দুটোই আমি চালাতে পারবআব্বা বলেন, তাহলে নাকি কোনোটাই চলার মতো চলবে নাআমি কী করে বোঝাই বলো? আব্বা বলেন, সমারসেট মম হবে! তোমাকে দিয়ে লেখালেখি, আর ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো একই কথাআমি বলি, মম নাচেখভের মতো হব ডাক্তার লেখক দুটোই হব
নিধিকে বলো, ‘মম তো ডাক্তারি করেননি, চেখভ ডাক্তারি লেখালেখি দুটাই করেছেনতবে ডাক্তার চেখভের চেয়ে লেখক চেখভকেই তো পৃথিবীর লোকে বেশি চেনেসত্যিকারের লেখা এমনই এক জিনিসআর্থার কোনান ডয়েলও তো ডাক্তার ছিলেনকজন তাকে ডাক্তার হিসেবে চেনে? এমনকি তার লেখা শার্লক হোমসকে যতটা চেনে তার স্রষ্টাকেও তো ততটা লোকে চেনে নালেখা দিয়ে এমন কত কাজ হয়, কী করে বোঝাইকথাটা কী করে বোঝাই? কী করব কী বলব বুঝতে পারছি নাএজন্য চুপ করে আছি
নিধি গেয়ে ওঠে, ‘‘যদি এমন হতো একটি কথা/আমায় বলে কেউ/ভেঙে দিতো/সব নীরবতা/এ জীবন তবু কিছু না কিছু পেতো’’।                            কথা বলে যাচ্ছিলে, হঠাৎ করে ওর গান গেয়ে ওঠাতে তুমি রাগ করতে পারতে, তার বদলে তুমি রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যাওকারণ সেদিনই নিধি প্রথম এমন করে গান গাইলআগে প্রায়ই গুনগুন করতো কিন্তু এমন করে গান গেয়ে ওঠেনি
তুমি অস্ফুটে বলে ওঠ, ‘তারপর যেন কি একবার যদি কেউ ভালোবাসতো?’
হ্যাঁরে বুদ্ধু!নিধি তোমার গালে আঙুলের গাঁট দিয়ে হালকা একটা গুতা দেয়
ভীষণ ভালো গাও তো দেখিগান শিখেছিলে নাকি?’
নিধি মজা করে ঢাকাইয়া টোনে বলে,‘আবার জিগায়?’
তোমার এমন গান এই সময় মনে পড়ল কেন?’
কোনো মানুষ ঠিক যা হতে চায় তাকে ঠিক সেই মতো বোঝা, আর তার ওই হয়ে ওঠার পথটা তৈরিতে সাহায্য করাটাই হল ভালোবাসা, বুঝলেকেন গাইলাম? কারণ আমি তো শিল্পী হতে চেয়েছিলাম, পারিনিআসলে সত্যিই কি আমি চেয়েছিলাম? চাইলে তো আমি যা হতে চাই তা হয়েই ছাড়তাম, তাই নাযেকোনো মূল্যেই হোকতুমি যা হতে চাও সেটা হতে গিয়ে যদি তোমাকে ফকির, নিঃস্ব, হতদরিদ্রও হয়ে যেতে হয়, চরম কষ্টে, মানবেতর জীবন কাটাতে হয়, তারপরও তোমাকে সেটা হতে হবে এই রকম না হলে কেউ কোনো কিছু হতে পারে, বলো রবি? মনে মনে এই পণ না করে কারো কোনো কিছু হয়ে ওঠা সম্ভব নয়ছলে বলে কৌশলে যেমন করে হোক তার হতে চাওয়ার দিকেই তাকে যেতে হয়, নাকি বলো?’
গান ছেড়ে দিলে কেন?’
সংসার
নিধি বিশাল দুটো স্তন গভীর শ্বাস নিতে আরো বিশাল হয়ে ফুলে ওঠেএকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে বলে, ‘শিল্পের মৃত্যু হয় সংসারেবুঝলেসবাই তো আর তলস্তয়-রবীন্দ্র্নাথ নয়, নজরুলও নয়লেখক-শিল্পীর আবার সংসার কী? তার লেখা, তার শিল্পই তো তার সংসার, তা-ই না? কিন্তু কী হতে লোকে কী হয় বিয়ে করে, তারওপর বাচ্চাকাচ্চা এসব করতে করতে পালতে-পুষতে গিয়ে সংসারের সং হয়ে যায়বিবেকানন্দর একটা কথা নিজেরমতো করে আমার ওস্তাদজি বলেছিলেন, ‘‘সংসার সমুদ্রে নৌকায় ঘুরে বেড়াবে, যে সারা সমুদ্র ঘুরবে কিন্তু সংসারের কোনো জল গায়ে লাগতে দেবে না তাহলেই শিল্পী হতে পারবে’’ আমি নিজে তো শিল্পী হতে পারিনি, তুমি যদি হতে পারো, তাহলে জেনো আমারও একটা কিছু হওয়া হবে
সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আমার কী করা উচিত সেটা বলো তো?’
স্বাধীন হওয়া উচিত
মানে কী?’
সারা জীবন বাপ আর ভাইয়ের ছায়ায় থেকে থেকে নিজের মতো চলতে তোমার ভয় করছে, তার জন্যই তুমি আসলে তাদের ছাড়তে চাইছো নাকী ঠিক বলিনি?’
নিধির কথায় তুমি সত্যিই একটু চমকে ওঠোএকেবারে মোক্ষম জায়গায় ঘা দিয়েছে মেয়েটা
নিধি তোমার চমকে ওঠাটাও স্পষ্ট করে দেখেমুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে
আমি তোমারে বলি, শোনো।  তুমি তো ডাক্তার হয়ে গেছএখন লেখকটাও হওআর সেজন্য আমি তোমার সাধনসঙ্গিনী হববলেই নিধি তোমার কোলে ওঠেওর ভারী পাছাটা তোমার ওপর ঊরুর ওপর রাখেতোমার মাথার পেছনের চুল মুঠি করে ধরে মুখটা একেবারে টেনে তোমার ঠোঁট তার ঠোঁটের ভেতরে ঠেসে চুবিয়ে দেয়কতভাবে যে চুমু খেতে থাকে সেচুমু খাওয়া শেষ হলে তুমি বলো, ‘তোমার স্বামী সংসার?’
থাকবে না
মানে কী?’
মানে তুমি আর আমি একসঙ্গে থাকবো
বিয়ে?’
ধুর কীসের বিয়ে যাস্ট একসঙ্গে থাকবো
নিধি গেয়ে ওঠে, ‘তুমি আর আমি শুধু জীবনের খেলাঘর...
তুমি বলো,‘লিভ টুগেদার? সর্বনাশ!
সেদিন না তুমি একটা লিভ টুগেদারের গল্প লিখে পড়ালে...তারপর গ্রুপম্যারাজের পক্ষে  কথা বলো... এই জন্যই...’,  বলেই নিধি তোমার কোল থেকে নেমে যায়ঝাঁঝালো সুরে বলে, ‘এদেশের লেখক-কবিদের দিয়ে কিচ্ছু হবে নাবলে একটা, বিশ্বাস করে একটা, কাজ করে আরেকটাপলিটিশিয়ানের চেয়েও খারাপ এগুলি
তুমি নিধির হাত ধরে টান মারোএক টানে সে তোমার গায়ের ওপর পড়েতুমি নিধিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরোনিধিও তোমার পিঠের জামা নখ দিয়ে প্রায় ফেঁড়ে ফেলে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছেএসময় কলিংবেল বেজে ওঠে
দাঁড়াও, রোহান ফিরেছে
তুমি বসার ঘরে অপেক্ষা করোকাজের মেয়েটাকে নিধি কী সব আনতে আবার বাইরে পাঠায়আর ছেলেকে নাকি গোসল করতে বলে এসেছেনিধি এভাবে অসময়ের সুযোগগুলি তৈরি করেবলে, ‘অসুবিধাগুলিকে সুবিধা করে তুলতে না পারলে সংসারও করা যায় না
নিধিকে আরো ভালো করে পাওয়া দরকারদিনের পর দিন এভাবে চোরের মতো এসব আর কতদিন চালানো যায়নিধিও বলে, ‘চলো ঢাকা চলে যাইবিশাল শহরে আমাদের কে খুঁজে পাবে?’ কিন্তু তুমি ভালো করেই জানো নিধি এসব বলার জন্য বলেনিধির তার স্বামীকে বাঘের মতো, নাকি সাপের মতো কীসের মতো ভয় পায় সে-ই জানেকেবল বলে, ‘ইদানীং সিমারটা মাঝে মাঝে এমন আনপ্রেডিক্টেবল আচরণ করছেকী হয়েছে তাও বলে নাআমাকে বলে, ওয়েট অ্যান্ড সীতারপর নিজের মতো বিড়বিড় করে স্গতোক্তির মতো বলে, আমার সঙ্গে মামদোবাজিভূত ছাড়াচ্ছিকী জন্য বলে কে জানে কিন্তু শুনে আমার বুক কেঁপে ওঠে।... তুমি কদিন এসো না, ঠিক আছেকখন কী হয়ে যায়, কে বলতে পারেআমি ফোন করে তোমাকে জানাবো কেমন?’
এর ভেতরে তুমি একটা স্বপ্ন দেখনিধি একপাশে দেয়ালের সঙ্গে মিশে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়েগায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেইদুহাত দুপাশে রেখে ইংরেজির টি অক্ষরের মতোমাথাটা কোনো কিছুর হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটা কাঁধের উপর গুঁজে দিয়েছেআর পাশে নিধির স্বামীহাতে পিস্তলমেঝেতে পড়ে থাকা তুমিঅশ্রাব্য কটা গালি দিয়ে পিস্তলের ট্রিগারে চাপ দিতেই তোমার ঘুম ভেঙে যায়
কদিন ধরে কীসব মনের ভেতরে মাথার ভেতরে আসা-যাওয়া করতে থাকেনিধি তোমাকেও ফোনটোন করতে নিষেধ করে দিয়েছেসে ফোন না করলে কোনো ফোন, কোনো এসএমএসও করা যাবে নানিধি তোমাকে এও বলেছিল, ‘ঢাকা শহরেই যেতে হবে তোমাকেকবি আর রাজা এই দুজনকে রাজধানীতে থাকতে হয়
তুমি নিধিকে নিয়ে যদি পালাও, এলাকায় ঢি ঢি পড়বেসবচেয়ে বড় কথা বাপের মাথা হেঁট হবেতুমি একদিন বলেছিলে, ‘আমার বাপ কিন্তু সবই টের পায়উকিল মানুষশেয়ালের চেয়ে ধূর্তজানো তো ডাক্তার আর উকিলদের ভেতরে থেকে বড় বড় লেখকরা বেরিয়ে এসেছেকেন জানো? একজন দেখে জীবন-মৃত্যু, অসুস্থতা-সুস্থতার লড়াই, অন্যজন দেখে সত্য-মিথ্যা-হিংসা-ঈর্ষা-ক্ষমতা-দুর্বলতার লড়াইজীবন কত নোরাং হতে পারে, ঠুনকো হতে পারে এই দুই পেশার লোক সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেডাক্তার আর লেখক প্রায় একই জিনিসদুজনেরই অসুখ নিয়ে কারবার একজন শরীরের, অন্যজন সমাজের
নিধিকে বলে এসেছিলে, সমস্ত কাগজপত্র, মানে তোমার সব সার্টিফিকেটগুলো, আরো যা যা সব একসাথ করে গুছিয়ে রাখবেআর কিছু কাপড়চোপড়সার্টিফিকেটগুলোর প্রত্যেকটা তিনটা করে ফটোকপি করে একটা ফাইলনিজের কাপড়চোপড় বলতে ভাইবোনেরা দুই ঈদে যা দেয়নিধি তোমাকে বলেছিল, সপ্তাহখানিকের ভেতরে সে নিজের সব কিছু গুছিয়ে আনতে পারবে
কিন্তু অপেক্ষা এক সপ্তাহ পার হয়ে পনোরো দিনে ঠেকে, নিধির কোনো সাড়াশব্দ নেইতুমি একবার মনে করো বড়ো আপাকে ফোন করে জেনে নিবে কিনাএর ভেতরে বড় আপাই মেয়ে নিয়ে একদিন নিজে বাসায় আসেতুমি ভাগ্নিকে আড়ালে নিয়ে জিজ্ঞাসা করো, ‘রোহানের সঙ্গে দেখা হয়, মামা?’
না তো
তুমি জানতে পারো বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে রোহান আর স্কুলে আসছে নাশুনে তোমার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠেএকটা অপ্রতিরোধ্য টানে তুমি নিধির ফ্ল্যাটে যাওয়ার কথাই ঠিক করোগিয়ে দেখ বিশাল একটা তালা ঝুলছেবাংলা সংখ্যা চারের মতো আদ্যিকালের বড় আকারের তালা
নিজের চোখকেই তুমি বিশ্বাস করতে পারছিলে নাএকবার তালাটা হাতে নিয়েই দেখোসত্যিই তালা কিনাতখন একজনের গলা খাকারি শুনতে পাওতোমার তালায় হাত দেওয়া দেখে, যারপরনাই বিরক্ত হয়ে চাটগেঁয়ে ভাষায় বলে, আপনি কে? এখানে কী চান? কারে চান আপনি? লোকটা গলার স্বরে এমন একটা অপমান মিশে আছেতুমি মরিয়া হয়ে জানতে চাও, ‘এই বাসায় ছিলেন যারা, রোহানদের বাসা না এটা?’
ইতারা চলি গিয়ে
কোথায়?’
কানাডা
লোকটা তোমাকে পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকেলোকটাকে আগেও একদুবার তুমি দেখেছিলে কি? আসলে ঘোরকেটে গেলে তুমি মনে করতে পারো, লোকটা কি এই বাড়ির কেয়ারটেকার? কই আগে তো কখনো দেখিনিলোকটা কি চিলেকোঠায় থাকে?
লোকটা চলে যাওয়ার পরও তুমি তালাটার দিকে আরো অনেকক্ষণ  তাকিয়ে থাকোতোমার বুক ব্যথা করতে থাকেতারপর বেশ কয়েকদিন অসুস্থ হয়ে বিছনা নেওঅসুখটা কী নিজে ডাক্তার হয়েও বুঝতে পারো নাশরীরে কিছু একটা হয়েছেশরীরে না মনে? তারপর এক ডাক্তার বন্ধুকে এক দফা চেক আপ করো।   ইকোকার্ডিওগ্রাম টেস্টে তোমার হৃদপিণ্ডকে কেমন তালা তালা মনে হতে থাকেএমনিতে তো হৃদপিণ্ড ওই বাংলা সংখ্যা চারের আকারের আদ্যিকালের তালার মতোই দেখতেনিজের হৃদপিণ্ডটাকেই শরীরের ভেতরের অস্বাভাবিক একটা ঘা বলে মনে হতে থাকেএকজন ডাক্তার হয়ে এই অদ্ভুত কথা তুমি মন থেকে মুছে ফেলতে পারো নাআসলে মনেরও একটা দেহ আছেঘা লেগেছে সেখানেঘা হয়েছে সেখানে
আশ্চর্য, এটা মনে হওয়ার পর আবার তুমি সুস্থ বোধ করতে শুর করোবাবা-বড়দার কথা মতো বারিক কাকার ক্লিনিকেই তোমাকে কাজ শুরু করতে হয়টের পাও বুকের ভেতর মম, চেখভের ছবি ভাসে, আর সঙ্গে এও মনে হয় হৃদপিণ্ডটা নিজেই এক ঘা হয়ে তোমার শরীরের রক্ত সঞ্চালন করে যাচ্ছেআজকাল প্রায়ই আরো একটা কথা মনে হয় ঘাওয়ালা হৃদয়-হৃদপিণ্ড নিয়ে আর যাই হোক লেখালেখি করা যায় না, আর লেখালেখি করার ক্ষমতাটা হারিয়ে ফেলেছিলে কিনা জানো না, কিন্তু কবে আবার নতুন করে শুরু করবে তা আর ঠিক করা হয়ে উঠছে না। ০

লেখক পরিচিতি

হামীম কামরুল হক
জন্ম: ২২ জানুয়ারি ১৯৭৩। চট্টগ্রামের বাংলাদেশে নৌবাহিনী উচ্চবিদ্যালয়ে লেখাপড়ার শুরু, সেখানে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সিলেট ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হওয়া, ১৯৮৫ সালে। সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শেষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্নাতক (অনার্স) ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা সম্পন্ন। পেশা: একটি সরকারি প্র্রতিষ্ঠানের সহকারী সম্পাদক।
প্রকাশিত গ্রন্থ- উপন্যাস: রাত্রি এখনো যৌবনে (২০০৮), গোপনীয়তার মালিকানা (২০১০)। গল্পগ্রন্থ: শূন্যপরান ও অন্যান্য গল্প (২০১৩)। নভেলা সংকলন: গোলাপের সিঁড়ি (২০১২)।
মুঠোফোন: ০১৭১৮০৮৩২২২, ই- মেইল: hamimkamrul@yahoo.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ