অভিলাষ ও মায়াবৃত্ত
চায়ে চিনি মেশাতে গিয়ে কিছুটা চিনি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল। খেয়াল করিনি। হঠাৎ চোখে পড়লো চারদিকে গোল হয়ে, গোল গোল কয়েকটি বৃত্তের আকারে পিঁপড়া জমেছে। ভাবলাম ওদের বিরক্ত করবো না। অন্ন মানুষের মৌলিক অধিকার হলে পিঁপড়ার কেন নয়! এক অদ্ভুত খেলার খেঁয়াল চাপলো মনে। ওদের নিয়ন্ত্রণ করবো। মৌলিক চাহিদা কেড়ে নিয়ে নয়, দিয়েই বরং নিয়ন্ত্রণ করবো। চিনির বয়াম থেকে আরো কিছু দানা ইতস্তত ছড়িয়ে দিলাম। পিঁপড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকলো, বাড়লো পিঁপড়ার লাইন। মিলিটারী কায়দায় শ্রমজীবী পিপড়ার দল মার্চ করে চলেছে। নাকি শরনার্থী কায়দায়!
যাহোক, অগণিত পিঁপড়ার দল দলবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করলো অসংখ্য জমায়েত। সবার চাহিদা এক, এক সকলের উদ্দেশ্য ও গন্তব্যে যাত্রার ধরণ যদিও বৃত্তগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এবার আমি বৃত্ত ভাঙবো, এক কেন্দ্রে নিয়ে আসবো সকলকে। সন্তর্পনে সকলের কেন্দ্রে রাখা লক্ষ্যগুলোকে একসাথে এনে একটি মাত্র কেন্দ্র তৈরি করলাম। বিভ্রান্ত, দিশেহারা প্রাণীগুলো ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে আবার জমায়েত হল এক কেন্দ্রে, একটি মাত্র বৃত্তে, একটি মাত্র লক্ষ্যে। তারপর ওদের ঘিরে ওদের কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে তৈরি করি একটি চিনির প্রাচীর। তারও বাইরে বৃত্তাকারে জলবিন্দু দিয়ে তৈরি করি জলবৃত্ত। এবার কেন্দ্রীভূত জমায়েত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যার যার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। বৃত্তের পরিধি বরাবর ওরা লক্ষ্য খুঁজতে থাকে এবং পেয়েও যায়। কিন্তু গন্তব্যে ফেরার কোন পথ খুঁজে পায়না ওরা। একই বৃত্তের পরিধি বরাবর গন্তব্যের পথ খুঁজতে থাকে, খুঁজতেই থাকে।
ফন্দি
কাঠবিড়ালী এবং ভাঙ্গা আখরোটের কথা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় ছিল। প্রথমবার যখন বইটা পড়ি তেমন কোন দ্যোতনা ছিল না আমার কাছে। এখন বুঝি কাঠবিড়ালী- মাহাত্য।সারাদিনের অর্থ উপার্জন সংক্রান্ত বিবিধ কাজ, বৈষয়িক বিষয় আশয়, মানুষের জটিল কুটিল সম্পর্ক হ্যান্ডেল করা ইত্যাদি ইত্যাদি কাজের মধ্যে সকাল বেলাকার চা-পানের এই বৃক্ষতলার কাঠবিড়ালী আমার অক্সিজেন। অন্য কোন প্রাণীকে আমি দেখিনি, চারপায়ে দৌড়ে ঠিক খাবার সময় সামনের পা দুটোকে হাত বানিয়ে দুহাতে খেতে। তার মুক্ত বিচরণ আমার ভাল লাগে। কিন্তু ও বড় চঞ্চল। ওকে ধরতে পারি না। ঠিক করলাম, এভাবে না। আগে ওর বিশ্বাস অর্জন করবো। তারপর ওকে ধরবো। প্রতিদিন চায়ের সঙ্গে একটা কেক এর টুকরো নেই। ভেঙ্গে ভেঙ্গে ওকে দেই। এভাবে প্রতিদিনি কেক খেতে খেতে ও আমার নিকটাত্মীয় হয়ে উঠেছে। আমি না ডাকলেও ও আসে। কেক না দেয়া পর্যন্ত আশে পাশে ঘুরঘুর করে। মনে হয় আমি পেরেছি, পেরেছি ওর বিশ্বস্থতার কাছাকাছি যেতে।
একদিনের কথা। ওকে কেক এর টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছি। ও খাচ্ছে আপন মনে, মনোযোগ দিয়ে। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। ও কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তারপর ওর অন্যমনস্কতার এক মুহূর্তে সামনে থেকেই ওকে ধরে ফেলি। তখনো ওর খুব বেশী অস্তি ছিল না। একটু ছটফটানি ছিল। কিন্তু যখন সাথে নিয়ে আসা খাঁচায় ওকে বন্দী করলাম, ও রীতিমত বিদ্রোহ শুরু করলো। খাঁচার ভেতর দাপাদাপি দেখতে দেখতে আমি ভাবলাম, বাছাধন এবার যাবে কোথায়! চলো আমার সঙ্গে, আমার পোষা কাঠবিড়ালী হয়ে। ভাবছি আর খাঁচাটাকে দেখছি। আমি জানি না, খাঁচার দরোজাই কি ভাল করে লাগানো হয়নি, না কাঠবিড়ালী তার সামনের পা বনাম হাতদুটোকে ব্যবহার করেছে। দাপাদাপির এক পর্যায়ে হঠাৎ দরোজা খুলে দিল এক ছুট। ছুটতে ছুটতে একদম কড়ই গাছের কোটরে। যাঃ, এইভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল!
আমি রীতিমত বোকা বনে গেলাম। কিছুক্ষণ শূন্য খাঁচা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। তারপর চায়ের দোকানটা থেকে চা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকলাম, ঠিক আছে, দেখা যাবে, কাল অথবা পরশু অথবা তারও পরদিন...।
চায়ে চিনি মেশাতে গিয়ে কিছুটা চিনি মেঝেতে পড়ে গিয়েছিল। খেয়াল করিনি। হঠাৎ চোখে পড়লো চারদিকে গোল হয়ে, গোল গোল কয়েকটি বৃত্তের আকারে পিঁপড়া জমেছে। ভাবলাম ওদের বিরক্ত করবো না। অন্ন মানুষের মৌলিক অধিকার হলে পিঁপড়ার কেন নয়! এক অদ্ভুত খেলার খেঁয়াল চাপলো মনে। ওদের নিয়ন্ত্রণ করবো। মৌলিক চাহিদা কেড়ে নিয়ে নয়, দিয়েই বরং নিয়ন্ত্রণ করবো। চিনির বয়াম থেকে আরো কিছু দানা ইতস্তত ছড়িয়ে দিলাম। পিঁপড়ার সংখ্যা বাড়তে থাকলো, বাড়লো পিঁপড়ার লাইন। মিলিটারী কায়দায় শ্রমজীবী পিপড়ার দল মার্চ করে চলেছে। নাকি শরনার্থী কায়দায়!
যাহোক, অগণিত পিঁপড়ার দল দলবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করলো অসংখ্য জমায়েত। সবার চাহিদা এক, এক সকলের উদ্দেশ্য ও গন্তব্যে যাত্রার ধরণ যদিও বৃত্তগুলো ভিন্ন ভিন্ন। এবার আমি বৃত্ত ভাঙবো, এক কেন্দ্রে নিয়ে আসবো সকলকে। সন্তর্পনে সকলের কেন্দ্রে রাখা লক্ষ্যগুলোকে একসাথে এনে একটি মাত্র কেন্দ্র তৈরি করলাম। বিভ্রান্ত, দিশেহারা প্রাণীগুলো ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে আবার জমায়েত হল এক কেন্দ্রে, একটি মাত্র বৃত্তে, একটি মাত্র লক্ষ্যে। তারপর ওদের ঘিরে ওদের কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে তৈরি করি একটি চিনির প্রাচীর। তারও বাইরে বৃত্তাকারে জলবিন্দু দিয়ে তৈরি করি জলবৃত্ত। এবার কেন্দ্রীভূত জমায়েত ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যার যার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। বৃত্তের পরিধি বরাবর ওরা লক্ষ্য খুঁজতে থাকে এবং পেয়েও যায়। কিন্তু গন্তব্যে ফেরার কোন পথ খুঁজে পায়না ওরা। একই বৃত্তের পরিধি বরাবর গন্তব্যের পথ খুঁজতে থাকে, খুঁজতেই থাকে।
ফন্দি
কাঠবিড়ালী এবং ভাঙ্গা আখরোটের কথা রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় ছিল। প্রথমবার যখন বইটা পড়ি তেমন কোন দ্যোতনা ছিল না আমার কাছে। এখন বুঝি কাঠবিড়ালী- মাহাত্য।সারাদিনের অর্থ উপার্জন সংক্রান্ত বিবিধ কাজ, বৈষয়িক বিষয় আশয়, মানুষের জটিল কুটিল সম্পর্ক হ্যান্ডেল করা ইত্যাদি ইত্যাদি কাজের মধ্যে সকাল বেলাকার চা-পানের এই বৃক্ষতলার কাঠবিড়ালী আমার অক্সিজেন। অন্য কোন প্রাণীকে আমি দেখিনি, চারপায়ে দৌড়ে ঠিক খাবার সময় সামনের পা দুটোকে হাত বানিয়ে দুহাতে খেতে। তার মুক্ত বিচরণ আমার ভাল লাগে। কিন্তু ও বড় চঞ্চল। ওকে ধরতে পারি না। ঠিক করলাম, এভাবে না। আগে ওর বিশ্বাস অর্জন করবো। তারপর ওকে ধরবো। প্রতিদিন চায়ের সঙ্গে একটা কেক এর টুকরো নেই। ভেঙ্গে ভেঙ্গে ওকে দেই। এভাবে প্রতিদিনি কেক খেতে খেতে ও আমার নিকটাত্মীয় হয়ে উঠেছে। আমি না ডাকলেও ও আসে। কেক না দেয়া পর্যন্ত আশে পাশে ঘুরঘুর করে। মনে হয় আমি পেরেছি, পেরেছি ওর বিশ্বস্থতার কাছাকাছি যেতে।
একদিনের কথা। ওকে কেক এর টুকরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছি। ও খাচ্ছে আপন মনে, মনোযোগ দিয়ে। আমি আস্তে আস্তে ওর কাছে গেলাম। ও কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালো না। তারপর ওর অন্যমনস্কতার এক মুহূর্তে সামনে থেকেই ওকে ধরে ফেলি। তখনো ওর খুব বেশী অস্তি ছিল না। একটু ছটফটানি ছিল। কিন্তু যখন সাথে নিয়ে আসা খাঁচায় ওকে বন্দী করলাম, ও রীতিমত বিদ্রোহ শুরু করলো। খাঁচার ভেতর দাপাদাপি দেখতে দেখতে আমি ভাবলাম, বাছাধন এবার যাবে কোথায়! চলো আমার সঙ্গে, আমার পোষা কাঠবিড়ালী হয়ে। ভাবছি আর খাঁচাটাকে দেখছি। আমি জানি না, খাঁচার দরোজাই কি ভাল করে লাগানো হয়নি, না কাঠবিড়ালী তার সামনের পা বনাম হাতদুটোকে ব্যবহার করেছে। দাপাদাপির এক পর্যায়ে হঠাৎ দরোজা খুলে দিল এক ছুট। ছুটতে ছুটতে একদম কড়ই গাছের কোটরে। যাঃ, এইভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল!
আমি রীতিমত বোকা বনে গেলাম। কিছুক্ষণ শূন্য খাঁচা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। তারপর চায়ের দোকানটা থেকে চা হাতে নিয়ে ভাবতে থাকলাম, ঠিক আছে, দেখা যাবে, কাল অথবা পরশু অথবা তারও পরদিন...।
গল্প লেখেন। পৈত্রিকনিবাস চাঁদপুর। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। বাবার চাকুরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় ঘুড়েছেন। পড়ালেখা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করেছেন। এখন একটি কলেজে কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের সহকারী শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন। ‘উত্তরণ’ নামে একটি সংগঠন করেছিলেন তখন। ‘বয়ান’ নামক গল্পের ছোটকাগজ সম্পাদন করেন। ‘টংকার’ নামক লিটলম্যাগের সঙ্গে যুক্ত। গল্পগ্রন্থ প্রকাশের কাজ চলছে।
ঈশপীয় ধারায় প্রতীক আশ্রয়ী গল্প লিখেন তিনি। গল্পের বিষয় মানুষের সাধারণ প্রবণতা- ভয়(ফোবিয়া)।
amitabangla@yahoo.com
ঈশপীয় ধারায় প্রতীক আশ্রয়ী গল্প লিখেন তিনি। গল্পের বিষয় মানুষের সাধারণ প্রবণতা- ভয়(ফোবিয়া)।
amitabangla@yahoo.com
1 মন্তব্যসমূহ
লেখিকা তাঁর সংবেদনশীলতা দিয়ে পারিপার্শ্বিক ছোটখাট ঘটনাকে মুস্নিয়ানার সাথে এঁকেছেন।গল্পগুলো কথাচিত্র হয়ে উঠেছে।
উত্তরমুছুন