গল্পকারের সাক্ষাৎকার: হান্নান কল্লোল

গল্পগ্রন্থ: দর্পিত দংশন

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: অলাত এহসান

হান্নান কল্লোল ভাটির দেশের মানুষ। এখনো সরলতম জীবন, নিদারুন কায়িক শ্রমের মানুষ বাস করে সেখানে। এই সবমানুষের প্রতি দরদ তার প্রতিটি লেখায়। এই সব সরল-শ্রমজীবী মানুষের মুক্তি সন্ধান করেন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদে। দায়বদ্ধ লেখক হিসেবে গল্পে এই সব মানুষ ও চিন্তা ছাপ পাওয়া যায়।
কিন্তু কথাশিল্পী হিসেবে তিনি রপ্ত করেছেন সকল কৌশল। গল্প-কবিতা-অনুবাদের পাশাপাশি এখন উপন্যাসে হাত দিয়েছেন। লিখছেন প্রায় দুই দশক ধরে। ইতোমধ্য প্রকাশ হয়েছে দুইটি গল্পগ্রন্থ। এবার বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে তার তৃতীয় গল্পগ্রন্থ, ‘দর্পিত দংশন’। অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এ বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু। গল্পপাঠ-এর পক্ষ থেকে তার সঙ্গে কথা বলেছেন গল্পকার অলাত এহ্সান। আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার বোধ-বোধীর কথকথা, চিন্তার নানা দিক।




অলাত এহ্সান: ‘নীল দহনএবং ‘প্রণয় ও পরিত্রাণের গল্প’-এর পর ‘দর্পিত দংশনআপনার তৃতীয় গল্পগ্রন্থ, গল্প লেখা শুরু করেছেন আরো অনেক আগে-নব্বইয়ের দশকে, তা কতদিন ধরে লেখা গল্পগুলো এবার বই আকারে প্রকাশ করলেন?

হান্নান কল্লোল:ব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে গল্প লিখা শুরু করলেও প্রায় পনেরো বছর বিরতি ছিলজীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত এজন্য দায়ি২০১০ সাল থেকে লেখালেখিতে পুনর্বাসিত হইতখন থেকে লিখা অগ্রন্থিত কিছু গল্প নিয়ে এই ‘দর্পিত দংশন'


এহ্সান: লেখালেখিতে ফিরে আসায় আপনাকে স্বাগতমআচ্ছা, এই সময়ের গল্পগুলোর সঙ্গে আপনার গল্পে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন কি?

হান্নান কল্লোল: সাম্প্রতিক কালে যারা গল্প লিখছেন তাদের সকলের গল্প আমার পড়া হয়ে ওঠে নাতবে ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত ‘গল্পপঞ্চাশৎও গতিধারা প্রকাশিত ‘এই সময়ের নির্বাচিত গল্পসংকলনে আমার গল্প থাকায় সৌজন্য সংখ্যা হিসেবে পাওয়া দু’টি বই পড়ে অনেকের গল্প সম্বন্ধে কমবেশি ধারণা লাভ করেছিতাদের লেখায় ব্যক্তিসাতন্ত্র্যবোধ, পরাবাস্তবতা, উত্তরাধুনিকতার প্রভাব বেশ তীব্রযাক, তাদের কথায় পরে আসিআমার গল্পে পরিবর্তনের যে ব্যাপারটা রয়েছে তা লক্ষ্য করবে তো পাঠক-সমালোচকগণতবু আমি কিছু যোগ করছিবিবেকের দায়বোধ থেকে ছোটগল্প লিখিতবে কোনো সংজ্ঞার ছকে ফেলে নয়ছোটগল্পকে খন্ডিত বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রকাশ বলে বিবেচনা করি বিধায় আমার লেখায় উঠে আসে জীবনের ছিন্নাংশ, জীবনের অন্তর্গত কোনো উপাখ্যানওতাতে ঘটনার ঘনঘটা তেমন থাকে না; ঘটনার অন্তরালে নিহিত থাকে গল্পটিবিষয়বস্তুর প্রয়োজনে সামান্য ব্যতিক্রম অবশ্যই আছেকিন্তু গল্পের ভেতরের কাহিনীটি লাপাত্তা হয়ে যায় না কখনো

এহ্সান: এই বইয়ে একটু ব্যতিক্রমি নামকরণে বারোটি গল্প আছেকোন গল্প কী বিষয় নিয়ে লেখা?

হান্নান কল্লোল: ‘অলীক অবলম্বনগল্পটি আর্থসামাজিক বাস্তবতায় নিঃসম্বল মানুষের অমোঘ অসহায়ত্ব, ‘আলোকিত আঁধারচরম বিনাশের মাঝেও স্বপ্নিল আগামীর আলোড়ন, ‘একটা শূন্য বোতল ও দু-ফোঁটা চোখের জলঅসম সম্পর্কের করুণ পরিণাম, ‘বিজয়-বিশোধনমুক্তির চেতনাঋদ্ধ তরুণের হাতে সমাজে প্রতিষ্ঠিতি পাওয়া স্বাধীনতাবিরোধীর সমুচিত শিক্ষা, ‘কদাকার কেরানি ও বিলবোর্ডের সুন্দরীজাদুবাস্তবতায় অবদমিত কামনার বহিঃপ্রকাশ, ‘একটি উত্তরাধুনিক অগ্ন্যুৎসবসাহিত্যের জঞ্জাল ধ্বংসকরণ, ‘দুষ্টু দেবদূতসুদ-ব্যবসার প্রতারণা ও প্রতিকার, ‘কাব্যচাষির কষ্টবীজপ্রগতি ও মৌলবাদের জয়-পরাজয়, ‘সমান্তর সংযোগঅনৈতিক বিত্তশালীর মর্মযাতনা, ‘ললিত লাথিশিল্পকলার পুঁজিবাদী প্রকরণ, ‘বিগলিত লৌহপরানঅনিষ্টাচরণের অবরোহী অবসান, ‘আরোহী আর্তনাদশ্রেণিসংঘাত নিয়ে লিখা


এহ্সান: আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে লিখতে পছন্দ করেন?
হান্নান কল্লোল: নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবতে পারি নাসুযোগ পেলেই  হুড়মুড়িয়ে অন্য কিছু ঢুকে পড়ে চিন্তার জগতেতবে গল্পে বিষয়বস্তুর প্রাধান্য অবশ্যই থাকেবিষয়বস্তু নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত আমার নিকট গল্পের চরিত্রচিত্রণ, কাহিনী বিন্যাসকরণ অকল্পনীয় ব্যাপারআর কাঙ্ক্ষিত বিষয়বস্তুর জন্য আমাকে অনির্দিষ্ট অপেক্ষায় থাকতে হয়


এহ্সান: গল্পগুলোর উপস্থাপনেও বৈচিত্র আছে কি?
হান্নান কল্লোল: তা কিঞ্চিত আছে বৈকি! বাস্তব ও কল্পনার ভারসাম্য রক্ষা করে গল্পের পরতে পরতে সাহিত্যবাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টমান হই সাধ্যমতোপরিমিত পরাবাস্তবতা ও জীবন্ত জাদুবাস্তবতাকে তুলে আনতেও প্রয়াসী হই সম্যকভাবেঅত্যাবশ্যক দর্শন ও মনস্তত্ত্বরে সন্নিবেশ ঘটাইভাষার চিত্রময়তা ও কাব্যময়তায় গড়ে তুলতে চাই নিজস্বতাগল্পের বিষয়ভাবনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতিটি গল্পের আঙ্গিকেও আনতে চাই ভিন্নতা


এহ্সান: কোনো বিশেষ স্টাইলের প্রতি আপনার দুর্বলতা আছে কি, মানে আপনি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

হান্নান কল্লোল: প্রকৃত সৃজনশীল লেখকের বিশেষ কোনো স্টাইলের প্রতি দুর্বলতা থাকার কথা নয়এবং এই দুর্বলতা বা আকর্ষণ তার লেখার স্বচ্ছন্দবোধকে ব্যাহত করেতাছাড়া তার নিরীক্ষাপ্রবণতাকেও পল্লবিত হতে দেয় না।  আমি  বিস্মিত হই যখন দেখি প্রতিটি গল্পে নির্মাণকৌশলের সমান্তরালে একেকটি বিশেষ ভঙ্গি বা প্যাটার্ন দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যেনএজন্য আমার শব্দচয়ন ও বাক্যপ্রকরণ কখনো স্বতঃস্ফূর্ত, কখনো স্বপ্রণোদিত

এহ্সান: আপনার গল্পগুলো কি আন্তঃসম্পর্কিত?

হান্নান কল্লোল: আগের গল্পের সঙ্গে পরেরটার সম্পর্ক রেখে লেখা সম্ভব নয়আমার গল্পগুলো আন্তঃসম্পর্কিত হয় গ্রন্থিত হওয়ার সময়। ‘দর্পিত দংশন'-ও এর ব্যতিক্রম নয়


এহ্সান: গল্পগুলোতে আপনি কী বলতে চেয়েছেন, কোনো বিশেষ বিষয়কে উপস্থান বা ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন কি?

হান্নান কল্লোল: চটুল কিংবা নিটোল যাই হোক, শুধুমাত্র কাহিনী শোনানোর জন্য কোনো কমিটেড লেখক গল্প লিখেন নাপাঠক-পাঠিকাকে আকৃষ্ট করে রাখা বা বাহবা কুড়ানোর বিষয়টিকেও মাথায় ঢোকান নাকথনকুশলতায় জনপ্রিয়ও হতে চান নাবরং মানবকল্যাণে, সমাজ-সভ্যতার অগ্রগমনে সহায়ক এক বা একাধিক ম্যাসেজকে ছড়িয়ে দিতে চান গল্পের শরীর জুড়েআসলে আমিও তাদের দলে যাদের গল্পভাবনার প্রধান আকর হলো বহুপ্রজ বাস্তবতার নানামাত্রিক সংবেদন আর সংশ্লেষণ, যাদের গল্পের বিষয়বস্তুর কেন্দ্রে থাকে মানবিক সম্পর্ককের আবর্তন, যাদের লেখায় ঝলকে উঠে সামাজিক চৈতন্যের রূপায়ণ, আভাসিত হয় মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ ও গভীরতর জীবনদর্শনএই পরিপ্রেক্ষিত থেকে  আমিও আমার প্রতিটি গল্পে জগজ্জীবনের কোনো না কোনো জরুরি কথা, আমার একান্ত উপলব্ধির সর্বজনীন বার্তা অর্থাৎ বিশেষ কিছু বলতে চেয়েছি, কোনো না কোনো ম্যাসেজ পৌঁছে দিতে চেয়েছি যা ‘কোন গল্প কী বিষয় নিয়ে লেখাসেই প্রশ্নের জবাবে সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি
 

এহ্সান: গল্পের বিষয়বস্তু আপনি কিভাবে নির্ধারণ করেন?

হান্নান কল্লোল: গল্পের বিষয়বস্তু আমি নির্ধারণ করি নানির্ধারণের কথা ভাবিও নাছিন্নভিন্ন ভাবনা থেকে ধীরে ধীরে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়


এহ্সান: একটি ঘটনা বা অভিজ্ঞতাকে কি করে আপনি গল্পে রূপান্তর করেন?

হান্নান কল্লোল: একজন লেখকের জন্য ঘটনা বা অভিজ্ঞতা অতিমূল্যবানএগুলো গল্পের বিশেষ উপাদানআমি অবশ্য এগুলোকে সরাসরি দূরে রাখি। আংশিকভাবেও গল্পে রূপান্তর করি নাছায়া-প্রচ্ছায়াটা ব্যবহার করি মাত্রতাও আবার ঘটনা বা অভিজ্ঞতার অন্তরালে লুকায়িত অজানা-অচেনা সত্যকে আবিষ্কারের পর

এহ্সান: আপনার গল্পে ব্যক্তিগত ছাপ আছে কি?

হান্নান কল্লোল: একজন লেখক প্রথমত ব্যক্তিকোনো ব্যক্তি নৈর্ব্যক্তিক নয়ব্যক্তিগত ব্যাপারটি থাকে সবকিছুতেইতাই স্রষ্টার ছাপ তো তার সৃষ্টিতে থাকতেই পারে্সেই হিসেবে আমার গল্পে আমার অজান্তে আমার কন্ঠস্বর ধ্বনিত হয়ে ওঠে


এহ্সান:  গল্প উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আপনি মেটাফোর, নিজস্ব শব্দ তৈরি করেন কি না?

হান্নান কল্লোল: করিপ্রয়োজন হলেভাষার শব্দভাণ্ডার বাড়াতে প্রতিশ্রুতিশীল প্রত্যেক লেখকের এটা করা উচিতমেটাফোর বা রূপকে কোনো কিছুর অন্তর্গত অর্থের অধিক দ্যোতনা প্রকাশ পায়তবে রূপকাশ্রিত ব্যাকুলতা যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না পড়ে

এহ্সান: প্রত্যেক লেখকই চায় তার একটা নিজস্বতা তৈরি করতে, তো বর্তমান গল্পকারদের সঙ্গে আপনার গল্পের পার্থক্য করেন কীভাবে?

হান্নান কল্লোল: লেখক চান বা না চান নিজস্বতা তৈরি হয়েই যায় তার প্রকাশভঙ্গিতেকেননা প্রত্যেক সৃজনশীল লেখক সাহিত্য লিখেন নিজের মতো করে, স্বাধীনভাবেপ্রতিষ্ঠিত, প্রতিশ্রুতিশীল কিংবা সম্ভাবনাময় বর্তমান গল্পকারদের মধ্যে নিজস্বতা গড়ে তোলার প্রবণতা ও প্রয়াস লক্ষণীয়সেদিক থেকে তাদের গল্পের সঙ্গে আমার গল্পের পার্থক্য নিরূপণ করা সহজ ও কঠিন- দু’টোইসহজ এই অর্থে যে, তারা সবাই যেহেতু স্বকীয়তায় ভাস্বর হতে চায়, আমিও চাইকেননা তাদের দলে তো আমাকেও থাকতে হচ্ছেতাই আমি ও তারা, মানে আমরা সবাই গল্প লেখার প্যাটার্নে, স্টাইলে আলাদাআবার এই পার্থক্য নির্ধারণ কঠিন এজন্য যে, আমার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো অনেকে বলে বসবে, আমি তো গল্প লিখি না, বুনন করি পাখির নীড়ের মতো; অথবা আমি যে গল্প নির্মাণ করি ভাস্কর্যের মতোঅথবা এমনও হতে পারে যে একসাথে বেশ কিছু গল্পকার দাবি তুলতে পারি, আমরা গতানুগতিকতাকে অস্বীকার করি গল্পের থীমে, প্লটে, নির্মাণশৈলীতেতাহলে তাদের আলাদা রেখে আমার গল্পে যে কোনোরকমের পার্থক্য আছে তা আমিই বুঝবো কীভাবে? আসলে সেই পার্থক্যটা, যদি কিছু থেকে থাকে, কালের কষ্টিপাথরে যাচাইয়ের পর নিরূপিত হবে


এহ্সান: শুধু উস্থাপনের স্টাইল দ্বারা তো আর একজন গল্পকার মহৎ হয়ে ওঠেন নাচিন্তার ও দেখার বৈচিত্র্য ও গভীরতা দরকার হয়আপনার গল্পগুলোতে জীবনের তেমন কোনো সত্য আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন কি?

হান্নান কল্লোল: সাহিত্য তো জীবনের জন্যইজীবনবাস্তবতা আর সাহিত্যবাস্তবতার মধ্যে একটা সমপার্শ্বিক বা সমান্তরাল সম্পর্ক রয়েছেআবার সাহিত্যসত্যের সঙ্গে জীবনসত্যের বিরোধটাও বেশ বিপ্রতীপসুতরাং সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কাজ হলো জীবনের অন্তর্গত সত্যকে অন্বেষণ করাএক্ষেত্রে ছোটগল্পের ভূমিকা সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চাইতে কখনো কম নয়জীবনের গভীরে ডুবুরীর মতো ডুব দিয়ে সত্য আবিষ্কারের প্রচেষ্টা আমার লেখায়ও বিদ্যমানকিন্তু নির্দিষ্টভাবে বলা মুশকিল কোন গল্পে জীবনের কোন সত্য কতটুকু আবিষ্কৃত হয়েছেএই দুরূহ দায়িত্বটি অর্পণ করলাম আমার সুহৃদ পাঠক-পাঠিকার ওপর


এহ্সান: প্রায় সব গল্পেই তো কোনো না কোনো অনুসন্ধান থাকেযেমন- আত্ম, নৃ-তাত্ত্বিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, মেট্রপলিটন ইত্যাদিআপনি কোন ধরনের অনুসন্ধানে গল্প রচনা করেন?

হান্নান কল্লোল: শিল্পোত্তীর্ণ সকল গল্পেই অনুসন্ধান খাকতে হবেএখন পর্যন্ত লেখা আমার গল্পগুলোতে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক অনুসন্ধান রয়েছে


এহ্সান:  গল্পের বিষয়বস্তু নির্বাচনের সঙ্গে দর্শনের একটা যোগাযোগ আছেআপনি গল্পে তেমন কি কোনো দর্শনের প্রতিফল বা প্রভাব দেখাতে চেষ্টা করেছেন?

হান্নান কল্লোল: জগতের সবকিছুকে আমি দ্বান্দ্বিকভাবে দেখিঅনিবার্যতায় সেই দ্বান্দ্বিকতার প্রভাব গল্পের বিষয়বস্ত নির্বাচনের ওপর পড়েপ্লট নির্মাণ, চরিত্রচিত্রন ও কাহিনিকথনে থাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি


এহ্সান: আপনার গল্পগুলোকে কি কোনো বিশেষ ধারা বা ঘরাণার-যেমন মার্কসবাদী, জীবনবাদী, নরীবাদী, ফ্রয়েডিয় ইত্যাদি বলে মনে করেন?

হান্নান কল্লোল: নাআমার গল্পে বিশেষ কোনো ধারা বা ঘরাণা নেইকারো লেখায় তা থাকাটা সীমাবদ্ধতার কোনো কিছু নাযেমন রোকেয়া-সুফিয়া নারীবাদী, সোমেন-সুকান্ত মার্কসবাদী লেখক অভিধা পেয়ে তারা বরং মহিমান্বিত হয়েছেনজীবনবাদী গল্প বলে আলাদা কোনো ধারা-ঘরাণা হবে কেন? কমিটেড সকল লেখককে তো জীবনবাদী হতেই হবেফ্রয়েডিয় ধারা, ঠিকই আছেদেশ-বিদেশের বেশ কিছু লেখন আছেন যারা ফ্রয়েডিয়ানউদাহরণ নিষ্প্রয়োজনআফসোস, তাদের কেউ কেউ প্যাভলভের নামটাও শোনেনিযাক, নিজের কথায় আসিআমি দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী হওয়ায় এই দর্শনের প্রভাব-প্রতিফলন আমার গল্পে থাকতেই পারে


এহ্সান: দর্শনগত দিক থেকে আপনার ‘দর্পিত দংশন'-ও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়আগে প্রকাশিত গ্ল্পগুলোর সঙ্গে এই বইয়ের গল্পগুলোর বিশেষ পার্থক্য আছে কি?

হান্নান কল্লোল: আপনার এই প্রশ্নের জবাব ত্রিমুখী হতে পারেজানি নানেইআছেজানি না কারণ এভাবে ভাবিনিনেই এজন্য বলছি যে লেখার শ্রমঘন্টা, সময়নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, সংশোধন-সংযোজন ইত্যাদি আগের দু’টি বইয়ের সমতুলপ্রায়আবার আছে বললে পার্থক্য শত শত হয়ে যাবেদু-একটি বলিগল্পগুলোর সঙ্গে এই বইয়ের নামকরণ ও প্রচ্ছদপট নিয়ে অতৃপ্তি তুলনামূলকভাবে অনেক কমজগতের সবকিছুই যেহেতু ক্রমাগ্রগতিসম্পন্ন, সেই অগ্রসরণ হয়তো এই বইয়ে অব্যাহত


এহ্সান: সাধারণত আমরা দেখি নামগল্প, গল্পগুলোর অভ্যন্তরিন মিল বা বিষয়বস্তু থেকে লেখকগণ বইয়ের নাম দিয়ে থাকেনকোনো গল্পের নাম ব্যবহার না করে আপনি নামকরণ করেছেন। ‘দর্পিত দংশনদ্বারা কী বুঝাতে চেয়েছেন?

হান্নান কল্লোল: আমার বইয়ে কোনো নামগল্প থাকে নানির্বাচিত গল্পগুলোর বিষয়বস্তুর সমন্বয়ে নামকরণ করে থাকিসামগ্রিকভাবে, এই বইয়ে কোন বিশেষ বিষয় উপস্থাপিত বা কী ম্যাসেজ উত্থাপিত হয়েছে- জানতে চাওয়া হলে বলব, গ্রন্থের নামকরণেই তার কিছুটা আভাস মিলেবাকিটা বুঝে নিতে হবে অধ্যয়নে, অনুধাবনেঅনুমানেওআপাতত দৃপ্ত দন্তাঘাত বসিয়ে রেখেছি গল্পের বিষয়বস্তুতে


এহ্সান: আপনার লেখালেখি নিয়ে কিছু বলবেন কি?

হান্নান কল্লোল: নব্বইয়ের দশকের মধ্যভাগে অনুবাদের মাধ্যমে সাহিত্যসাধনার আনুষ্ঠানিক সূত্রপাতপাশাপাশি প্রবন্ধ-নিবন্ধকিছু দিন পর শুরু করি গল্প-কবিতা-উপন্যাসঅল্পসংখ্যক গল্প-কবিতা পত্রপত্রিকায় এলেও আলোর মুখ দেখেনি উপন্যাসহারিয়ে গেল পাণ্ডুলিপিএরপর একগুচ্ছ দুর্ঘটনাসৃষ্টশীলতায় নেমে এলো বিরতিপ্রায় পনেরো বছর বিরতির পর লেখালেখিতে ফিরে আসি২০১২ সালের বইমেলায় গল্পগ্রন্থ ‘নীল দহনপ্রকাশ পায়বছর দু-এক আগে একটা উপন্যাস শুরু করেছিশেষ হতে দেরি আছেকবিতার বই দু-এক বছর পর প্রকাশ করতে পারি। আপাতত গল্প নিয়েই আছি


এহ্সান: আপনার গল্পের উপাদান সম্পর্কে বলুন

হান্নান কল্লোল: অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি, আবেগ, স্মৃতি, কল্পনা, স্বপ্ন- সবকিছু থেকেই গল্পের উপাদান গ্রহণ করিলেখার রসদ আহরণের জন্য ছুটে যাই যত্রতত্রমিশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেপ্রত্যক্ষ করি জীবন-জীবিকা ও আচার-অনুষ্ঠানগণমানুষের প্রেম-বিরহ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বিষাদ, প্রাপ্তি-ব্যর্থতা, আশা-নিরাশার দোলাচল উপলব্ধি করিবাঙালি জাতিসত্তা, ইতিহাস-ইতিহ্য, কৃষ্ট-সংস্কৃতি, প্রথা-প্রবণতাও আমার গল্প নির্মাণের উপকরণ

এহ্সান: আপনার গল্প নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

হান্নান কল্লোল: সুস্থ-সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে আমার গল্পেরও ভূমিকা থাকুকশ্রমশোষণ ও শ্রেণিসংঘাতের কথা গল্পে উঠে আসুকমাটি-মানুষ, ঐতিহ্য-সংস্কৃতি, আন্দোলন-জাগরণ আমার গল্পের প্রাণরস জুগিয়ে যাকনতুন প্রজন্মের চিন্তাচেতনা, মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রাধান্য পাকআমার গল্প কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোকঝংকৃত হয়ে উঠুক মানবিকতা ও পাশবিকতার সংঘাত, মানবসভ্যতা ও পারমানবিক সভ্যতার সংকট


এহ্সান: আমরা দেখি বাংলা সাহিত্যে উত্তারাধিকারের ধারা বহন করেছেন অনেক অনেক লেখকআপনি কি নিজেকে কোনো সাহিত্যধারার উত্তরাধিকারী মনে করেন?

হান্নান কল্লোল: সাহিত্যের উত্তরাধিকার বিষয়ে আমার একটু ভিন্ন মত আছেউত্তরাধিকারিত্বের ধারাকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার দরকার নেইসে তো নিজে নিজেই প্রবহমানআর ভিন্ন ধারা তৈরি হলেও সাহিত্যের কোনো ক্ষতি নেইবিষয়টি বুঝিয়ে বলতে আমি একটি উদাহরণ টানছিযখন রবীন্দ্র-নজরুলের প্রভাববলয় থেকে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা গেল, মনে হলো তাদের ধারাকে বহন করার মতো কেউ যেন নেইবাংলা কাব্যে তখন এক ধরনের শূন্যতাবুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাস, সুধীন দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী প্রমুখের আধুনিক কবিতা ছিল একান্তই ইনটেলেকচুয়ালতাদের কাব্য সমঝদার পাঠকের গণ্ডি পেরুতে পারেনিদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারত ছাড় আন্দোলন, দাঙ্গা, মহামারী, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেজনসাধারণের চিন্তা-চেতনায় তখন পরিবর্তনের জোয়ারকিন্তু কারো কবিতায় এসব প্রতিফলিত হচ্ছিল নাবরং বুদ্ধদেব দেহকেন্দ্রিক প্রেমের আচ্ছন্নতায় আড়ষ্ট, জীবনানন্দ ঐতিহ্য আর সুররিয়ালিজমে আশ্রয়সন্ধানী, সুধীন দত্ত নৈরাশ্যের সুরে নিমগ্নসমাজের অগ্রসর চেতনাকে ধারণ করার কেউ নেইএমনি এক সংকটময় সময়ে সুকান্তের আবির্ভাবএরপর কী হলো! সুকান্ত উত্তরাধিকারের ধারাকে বয়ে নিল না নতুন ধারা তৈরি করল- এই প্রশ্নেই আমার জবাব লুকিয়ে আছে

এহ্সান: অনেক সাহিত্যিক অগ্রজ সাহিত্যিকের কাছে ঋণ স্বীকার করেনআপনি তেমন কোনো সাহিত্যিকের নাম বলবেন কি যার প্রভার আপনি অনুভব করেন?

হান্নান কল্লোল: তরুণ বয়সে যাদের লেখা পড়ে আলোড়িত-আন্দোলিত হয়েছি তাদের মধ্যে ফকনার, হোমিংওয়ে, পাস্তারনক, শলোখফ, টলস্টয়, কোনরাড, জয়েস প্রমুখের নাম উচ্চারিত হলেই শিহরিত হইআমাদের সাহিত্যের মানিক-জহির-ইলিয়াস কিংবা সুকান্ত-সোমেনসহ আরো অনেক লেখকের ছায়া দেখতে পাই আমার লেখকসত্তার ভেতর

এহ্সান: আপনার সমসাময়িক সাহিত্যিকদের মধ্যে কার সাহিত্য আপনার ভাল লাগে?

হান্নান কল্লোল: বেশ কয়েকজনের লেখা ভালো লাগেতবে আমার দুর্ভাগ্য যে সমসাময়িক এমন কাউকে এখনো নির্বাচিত করতে পারিনি যার নাম হুট করে বলে দিতে পারি

এহ্সান:  বাংলা সাহিত্যে এখন উত্তরাধুনিক সাহিত্যের নামে একধরনের সাহিত্য চর্চা হচ্ছে, এতে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছেতাই প্রত্যেক গল্পকার তার স্বাতন্ত্র নিয়ে ভাবেন, এটা অবাঞ্চিত কিছু নয়এই ব্যক্তিসাতন্ত্র আমাদের সাহিত্যের কি রূপ দিচ্ছে?

হান্নান কল্লোল: ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে স্বাতন্ত্র তো থাকবেইসেই স্বাতন্ত্র জগজ্জীবন প্রত্যক্ষণে, উপলব্ধিতে, সংবেদনশীলতায়, উপস্থাপনায়তাই ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের জন্য শুধু উত্তরাধুনিকতা দায়ি নয়বরং ঘটেছে উল্টোটাপুঁজিবাদসৃষ্ট অত্যাধুনিকতাই মূলত উত্তরাধুনিকতাবিপত্তিটা ঘটে যখন কেউ আধুনিকতাকে আয়ত্ত না করেই উত্তরাধুনিক হয়ে ওঠেনতখন ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের মাত্রা বাড়েপরিণামে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র সাহিত্যে ব্যক্তিবিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করছে


এহ্সান: সাহিত্যের দশক বিচার প্রচলিত আছেআপনি আপনার দশককে কিভাবে উপস্থান বা চিহ্নিত করছেন?

হান্নান কল্লোল: আগেই বলেছি, নব্বইয়ের মধ্যভাগে লেখালেখির সূত্রপাতপনেরো বছরের বিরতিদশ সাল থেকে পুনরায় শুরুদশকের বিভাজনে আমার জায়গা কোথায় হবে কে জানেআমি অবশ্যি সাহিত্যের দশক বিচারবিরোধীতাই আর কিছু বলছি না


এহ্সান: একটা বই প্রকাশ করা আর একটা ভাল গল্প লেখা, কোনটা আপনাকে বেশি তৃপ্তি দিবে?

হান্নান কল্লোল: সম্ভবত প্রথমটাই


এহ্সান: পরবর্তী বই নিয়ে আপনার কি কোনো চিন্তা আছে?

হান্নান কল্লোল: আছেসকল কেন্দ্রিয় চরিত্রে থাকবেন প্রান্তিকজন


এহ্সান: আপনার না লেখা কোনো গল্প আছে, যা আপনি লিখতে চান?

হান্নান কল্লোল: বিশ্বসাহিত্যের সেরা গল্পগুলো পঠনকালে প্রবলভাবে আলোড়িত হই; আহতও হই সমানভাবেআমার গল্পকার সত্তার আত্মস্বর আমাকে আর্ত করেভাষার নিটোল গতিময়তায় ও কথনকুশলতায় আজো লিখতে পারিনি এমন একটি নান্দনিক গল্প যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠককে মোহাবিষ্ট করে রাখে; যা পাঠকমানসে ইতিবাচক অভিঘাত সৃষ্টি করতে পারে ত্বরিতগতিতে


এহ্সান: এক বসায় গল্প লেখেন না ধীরে ধীরে, কেটে-ছিঁড়ে লিখে থাকেন?

হান্নান কল্লোল: অতি ধীরে, অনির্দিষ্ট সময় ধরে, মনিটরে বারবার শব্দ-বাক্য বদলিয়ে


এহ্সান: গল্প লেখার কোনো অতৃপ্ততা আছে কি?

হান্নান কল্লোল: গল্প লেখায় আমি তৃপ্ত, এটা ভাবতেই চোখের সামনে এই দৃশ্যটা ভেসে উঠলো: দেহের বিষ উগলিয়ে একটা সাপ নিথর পড়ে আছে কাঁকড়ার গর্তের মুখে

এহ্সান: আজকের দিনে মুটোমুটি সবাই যখন উপন্যাসের দিকে ঝুঁকছে, আপনি সেখানে ছোটগল্পকে কিভাবে দেখছেন?

হান্নান কল্লোল: শিল্পোত্তীর্ণ হোক বা না হোক এদেশে প্রতিনিয়ত লেখা হচ্ছে হরেক কিসিমের গল্পছোটগল্প, বড়গল্প, অণুগল্প, রম্যগল্প, রহস্যগল্প, কর্পোরেটগল্পপ্রকাশ-প্রচারের জন্য আছে অজস্র প্রিন্টেড ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াজাতীয় ও স্থানীয়দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, সর্বক্ষণিকসাময়িকী, বিশেষ সংখ্যা, লিটলম্যাগআরো কতো কিএছাড়াও রয়েছে প্রতিবছরের বইমেলাটাকা থাকলে প্রকাশক জুটবেইযাচাই করলে দেখা যাবে, সব মিলিয়ে, মানে যাই হোক, সংখ্যায় ছোটগল্পই বেশি ছাপা হয়তবে ছোটগল্পের দিনকাল যে ভালো যাচ্ছে না এটা সত্যিতাই বলে ছোটগল্পের গতি স্তিমিত হয়ে পড়বে নাসাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী শাখাটি আরো শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে যাবেই কোনো একদিন


এহ্সান: গল্প উপস্থাপনে আপনি ন্যারেটিইভ টাইপ লিখেন, নাকি মূল গল্পটিকে আপনার গল্পের সারা শরীরে ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করেন?
হান্নান কল্লোল: ন্যারেটিভ টাইপ আমার অপছন্দেরমূল গল্পটাকে কাহিনি জুড়ে ছড়িয়ে দিই


এহ্সান: ভাল গল্প বলতে আপনি কোনগুলোকে বোঝেন, মানে আপনার চোখে কোন গল্পগুলো ভাল?

হান্নান কল্লোল: ভালো গল্পে থাকবে প্রাঞ্জল ভাষা, হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা, যা পাঠককে সম্বোহিত করে রাখবেঅহেতুক দর্শন আর অবান্তর তত্ত্বের সমাবেশ থাকবে নাথাকবে না পরাবাস্তবতা ও যাদুবাস্তবতার কুহকসুপ্ত বাণীময় নিটোল একটি কাহিনী থাকবেকাহিনীর আকর্ষণে যারা গল্প পড়েন তারাও যেন গল্পপাঠের পর একাত্ব হয়ে যান লেখকের বক্তব্য আর উপলব্ধির সঙ্গেস্বল্প পরিসরে সমকালকে ধারণ করে কালোত্তীর্ণ হয়ে উঠার যোগ্যতা অর্জন করবে


এহ্সান: আপনি কি বাংলাদেশের বর্তমানে রচিত গল্পগুলো নিয়ে সন্তুষ্ট, একটু বিস্তারিত বলেন যদি?

হান্নান কল্লোল: বর্তমানের গল্পগুলোর কিছু উল্লেখযোগ্য দিক আমার নজরে এসেছেঅনেক লেখায় ছোটগল্পের প্রচলিত ব্যাপারগুলো প্রায় অনুপস্থিততবে কোনো গল্পে রীতিসিদ্ধ প্লটের ঘাটতি থাকলেও প্রকাশের সরলতা, নিরলঙ্কার অথচ মর্মভেদী রূপকল্প ও সূক্ষ্ণ বর্ণনায় অনন্য হয়ে ওঠেমানবমনের আলো-আঁধারিতে ঘুরপাক খাওয়া মনস্তাত্ত্বিক আবরণ উন্মোচিত হয় কোনো কোনো গল্পেদলিত-মথিত মানবতার আর্তনাদ ফুটে ওঠে এমন গল্পও পড়েছিপ্রান্তিকজনদের দৈনন্দিন জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতের মর্মমূলে পৌঁছুয় কিছু গল্পমেহনতি মানুষের প্রতি দরদ, শোষিত-বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতিঅলা গল্পও রয়েছে বর্তমান সময়েকোনো কোনো গল্প তো যুগ ও যুগধর্মকে পরিচয় করিয়ে দেয়তারুণ্যের বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কিছু গল্পেদুয়েকটি গল্প পড়েছি যেগুলোকে বেশ রক্ষণশীল মনে হয়েছেভাসাভাসা জানাশোনা বিষয় নিয়েও গল্প লিখা হয়েছে এই সময়েযাই হোক, আশার কথা এই যে এই সময়ে এ দেশে প্রতিশ্রুতিশীল কিছু গল্পকার আছেন যাদের হাত ধরে ছোটগল্প খুঁজে পাবে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য


এহসান : আপনাকে ধন্যবাদ।

হান্নান কল্লোল : আপনাকেও ধন্যবাদ।



লেখক পরিচিতি
হান্নান কল্লোল
জন্ম ২২ এপ্রিল ১৯৬৮ খ্রি., গৌরীপুর, ময়মনসিংহলেখক, অনুবাদক, সংগঠকপ্রকাশিত গল্পগ্রন্থ- নীল দহন (২০১২), প্রণয় ও পরিত্রাণের গল্প (২০১৩), দর্পিত দংশন (২০১৫)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ