অমর মিত্র এর গল্প হারানো নদীর স্রোত

অনাথ বিশ্বাস বাই-লেন থেকে বেড়িয়ে বড় রাস্তায় পড়ে হাঁটাপথে গঙ্গা একটুখানি। আমাদের দু’কামরার ফ্ল্যাট থেকেই ছেলেবেলায় লঞ্চের ভোঁ শুনেছি মনে পড়ে। মনে পড়ে মা তখন নিজের বাপের বাড়ির কথা বলত, কপোতাক্ষতীরে কাটিপাড়া ছিল সেই গ্রাম। সেখানেও নাকি ঘরে শুয়ে শোনা যেত শেষ রাতে ডাকা প্রথম লঞ্চের ভোঁ। কী আশ্চর্য এক নদীর কুল থেকে আর এক নদীর কুলে এসে জীবন আছড়ে পড়ল।



আগে বাগবাজারের এইসব এলাকা ছিল খুব শান্ত। আনাজপাতির বাজার তখন ঢুকে পড়েনি অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনের ভিতরে। ফলে দূরের ডাক বিছানায় শুয়ে কী চমৎকার শোনা যেত। মা বলত, চোখ বুজলেই মনে হত যেন কপোতাক্ষতীরে বাপের বাড়িতেই রয়েছি। এখন মা বুড়ি হয়ে গেছে। মা এখন ভুলেও উচ্চারণ করে না কপোতাক্ষ নদীকে। এখন তো গঙ্গার লঞ্চের ডাকও আর শোনা যায় না ঘর থেকে, অথচ ফেরি সার্ভিসে লঞ্চ চলাচল বেড়েছে কত। মাঝরাত্তিরে আচমকা জলপুলিশের মোটরবোটের হুইসল শুনলে বুক কেঁপে যায়। অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনটা কেমন যেন হয়ে গেছে।

সত্যিই অনাথ বিশ্বাস বাই-লেন আর আগের মতো নেই। এক সময় ঘুম ভাঙানিয়ার দল ভোরবেলায় শোরগোল তুলত এ পাড়ায়, দূর থেকে নামকীর্তনের দল যেমন আসত খোলে চাঁটি মারতে মারতে, গলা তুলতে তুলতে, তেমনি দত্তদের ঠাকুরবাড়ির ছোট মতো বাগানের গাছ থেকে ডাকতে ডাকতে বেরিয়ে পড়ত কাক, টিয়ার দল। এমন চৈত্র দিনে কোকিল একটা ডেকেই যেত। আর ছিল কুবো পাখি, সমস্ত দিন কোন অদৃশ্য জায়গা থেকে গম্ভীর গলায় কুব-কুব ডাক দিয়ে অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনের বাতাসকে ভারী করে তুলত।

এখন সেই তেরচা মতো একফালি বাগানটা আর নেই। বিষমবাহু চতুর্ভুজের সামনের দিকটা ছিল চওড়ায় খুব ছোট, ফলে বাগানের জমিতে সেই সাজানো বাগান ফ্ল্যাট বাড়িটাও উঠেছে জমির মতো বেঢপ আকারের। ক’বছর আগে আমার সাধ হয়েছিল অনাথ বিশ্বাস বাই-লেন ছেড়ে কোথাও যাব না, ভাড়াটে ফ্ল্যাটের ভবিষ্যৎ অজানা, নতুন টেনান্সি বিল কাকে সাহায্য করবে ধরা যাচ্ছে না, বরং নিজের একটা আশ্রয় যদি করা যায়। সেই ইচ্ছেয় খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম আমাদেরই বাই-লেনে গড়ে ওঠা ফ্ল্যাটগুলো কেমন, কত তার দাম। খোঁজ নিতে নিতে উঠে গিয়েছিলাম চারতলা বাড়ির ছাতে। ঠিক যেমনটি ছিল বাগান, তেমনি হয়েছে ছাত, যেন বাগানটিকেই কেউ ভাসিয়ে দিয়েছে আকাশে। বৈশাখের আগুনে পুড়ে গেছে সব গাছ, মাটি হয়ে গেছে কংক্রিট কঠিন। রোদে পুড়ে গিয়েছিল চোখমুখ, ঠাকুরবাড়ির বাগানের ছায়ার একবিন্দুও নেই কংক্রিট মাটির উপরে।

ফ্ল্যাটের দামও ছিল কম নয়। অত টাকা আমায় কে দেবে? লোন পেলেও শোধ করব কীভাবে? পাঁচরকম ভেবে এগনো হয়নি। আশায় আছি যে আধো অন্ধকার ফ্ল্যাটে সপরিবারে আমার বাবা মুকুন্দ পাল এসে উঠেছিলেন দেশভাগের পর, সেই ফ্ল্যাটই হয়ত একদিন কিনে নিতে পারব। না হলে কলকাতা ছেড়ে চলে যেতে হবে দূরে কোথাও।

আমার বাবা মুকুন্দ পালের বয়স এখন নব্বই-এর কাছাকাছি বোধহয়। আজ থেকে পঞ্চাশ বছরেরও আগে স্বাধীনতা-দেশভাগের ক’বছর বাদে এই পালমশাই তাঁর স্ত্রী কন্যা ও বাবা মাকে নিয়ে এই বাসাবাড়িতে মাথা গুঁজেছিলেন। আমি তখন মায়ের কোলে। আমার এখন মনে হয় আমি যেন অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনেই জন্মেছি। অনাথ বিশ্বাস বাই-লেন ছাড়া আমার আর তো কোন স্মৃতি নেই। আমার ছোটবেলা বলতে এই আধো অন্ধকার দু’কামরার ফ্ল্যাট বাড়ি, কুড়ি বাইশজন মানুষ তার ভিতরে ঠেসে গেছে। কত মানুষ এসে থেকে গেছে এখানে। এখন আর কেউ তেমন আসে না।

অনেক মানুষের আশ্রয় হয়ে উঠেছিল বাগবাজারের এই বাসাবাড়ি। মুকুন্দদা, মুকুন্দকা, মুকুন্দ জেঠা, মুকুন্দ মেসো, মুকুন্দ পিসে, শুধু মুকুন্দ পাল –একজনেরই ছিল কত নাম। এই বয়সেও বেশ হাঁটাচলার দড়। কখনও এই মাস ছয় আগেও, একা একা মেয়ের বাড়ি আগরপাড়া চলে গিয়েছিলেন শ্যামবাজার অবধি হেঁটে উসুমপুরের মিনিবাস ধরে। তারপর থেকে আমার বউ রীনা চোখে চোখে রাখে তাঁকে। বাবা বেরনোর সময় পকেট দেখে নেয়, টাকাপয়সা কতটা নিয়েছেন তিনি, জামাকাপড় লক্ষ করে। রীনা জানে মুকুন্দ পাল মশাই খুব সৌখিন মানুষ ছিলেন, ময়লা ধুতি, ময়লা পাঞ্জাবি পরে তিনি অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনের বাইরে যাবেন না কোথাও। এত বয়সেও ধবধবে ধুতি, ধবধবে পাঞ্জাবি পরতে পারলেই তাঁর মুখে হাসি। তখন মেয়ের বাড়ি কিংবা সুহৃদবরেষু বড়শালা গোবিন্দ রায়ের বাড়ি যাওয়া যেতে পারে। দুই ভাই-এর কেউ বেঁচে নেই। কথায়, আলাপে আমার দুই কাকা তাঁর ভিতরে ছায়া ফেলে। পালমশাই চা খেতে খেতে বলেন, শোন বউমা, মুরারি, মুরলী, কী করত ছোটবেলায়।

রাত্রে রীনা আমায় বলে, বাবা খুব অদ্ভুত।

কেন কী হল?

ছেলেবেলার কথা বলতে আরম্ভ করলে, আর থামেন না।

কেউই থামে না, ওরকম হয় এই বয়সে।

এত বছর বয়স হল, সব মনে আছে?

থাকতেই পারে।

আমার বাবা আটাত্তরে চলে গেলেন, তিনি তো শেষ ক’বছর কিছুই মনে রাখতে পারতেন না, খাওয়ার পরও ভুলে যেতেন।

বাবার শরীরের গঠন খুব ভাল।

ইস আমাদের যখন এমন বয়স হবে, মাকে দেখছ কেমন জবুথবু হয়ে যাচ্ছেন।

দেখেছি। মার সাধ ছিল বাংলাদেশ হয়ে যাওয়ার পর একবার তাঁর বাপের বাড়ি দেখে আসবে। যাওয়া হয়নি। মা কপোতাক্ষর কথা বলতে বলতে এখন প্রায় ফুরিয়ে গেছে। একই কথা কত বলা যায়। কে শুনবে? রীনাও যে কতবার শুনেছে কপোতাক্ষ নদীর জলে দূরগামী লঞ্চের ভোঁ। রীনা বলে, মা এমনভাবে বলতে পারেন, যেন সত্যিই দেখা যায়, শোনা যায় সব।

আমি বললাম, আমরা যদি কোথাও যেতে পারি এই বাই-লেন ছেড়ে, তবে আমরা এই বাই-লেনের কথা বলব ওইরকম বুড়ো হয়ে গেলে।

রীনা বলল, ওই বয়স পর্যন্ত পৌঁছতেই পারব না কেউ!

আমি অনাথ বিশ্বাস বাই-লেন ছেড়ে কোথাও একটা যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। মনে হচ্ছিল, নিজের কিছু একটা থাকা দরকার। আমার ছেলে এবার ক্লাশ টেন, পরের বার মাধ্যমিক, তারপর ধাঁই ধাঁই করে করে বড় হয়ে যাবে। ওর পায়ের তলায় কোন মাটি থাকবে না যদি এই ফ্ল্যাটে রেখে যাই ওকে। বাড়িওয়ালার বহুদিনের সাধ আমরা ছেড়ে যাই এই গৃহ। এখন শহরে বহুতলের রমরমা, ভেঙ্গেচুরে আকাশ পর্যন্ত উঠে যাবে ফ্ল্যাট বাড়ি। টেনান্সি বিল চালু হয়ে গেলে বাড়িওয়ালা তার অধিকার বুঝে নেবে। এক এক সময় মনে হয় চৌধুরীবাবুরই বা কী দোষ? বাড়িটা তো তাঁদের, আমাদের নয়। আমরা কেন এত বছরেও অন্য কোথাও চলে যেতে পারিনি।

বাবা বললেন, তুই দ্যাখ ফ্ল্যাট, আমি এখানেই থেকে যাই।

তুমি থেকে যাবে, আমি চলে যাব?

না, না তা কেন, যে বিলই আসুক, আমি তো থাকতে পারবই যতদিন বেঁচে থাকব।

একদিন রীনা বলল, বাবা কেন অন্য জায়গায় বাড়িঘরদোর করেননি?

কথাটা মা’র কানে গেল। মা বলল, উপায় ছিল না।

সবাই তো করেছে মা, ওদিকে গড়িয়া, বাঘা যতীন, নাকতলা বাঁশদ্রোণী সব ভরে গেল বাড়িতে, এদিকে দমদম, বিরাটি, সোদপুর, আগরপাড়া-কত কত জায়গা ছিল, এখন আর কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।

মা চুপ করে থাকল কিছু সময়, তারপর বলল, কত লোক ছিল এই বাসায়।

কত লোক? এক একদিন তিরিশজনের ভাত রেঁধেছি পর্যন্ত।

কেন রেঁধেছিলেন, তারা কেউ খোঁজ নেয়?

মা বলল, না রেঁধে উপায় ছিল না, এই একটাই বাসাবাড়ি, তারা ওপার থেকে এসেছে, থাকার জায়গা ছিল না।

তা তো হল, একটা বাড়ি করা যেত মা।

চন্দননগরে পাওয়া গেছিল।

চন্দননগর! অত দূরে?

গঙ্গার ধারে খুঁজছিল তোমার বাবা।

গঙ্গার ধারে কেন?

নদী না থাকলে মানুষের জীবন শুকিয়ে যায় মা।

রীনা অবাক। তার মানে? আমি যে বাঁকুড়ার মেয়ে, মানে আমার বাবা যে চাকরি করতেন বাঁকুড়ায়, সেখানে নদী কই?

ছিল না?

রীনা চুপ করে থাকল কিছু সময়, তারপর বলল, ছিল, খুব ছোট নদী।

তবু নদী তো।

হ্যাঁ, সারা বছর জল থাকত না গন্ধেশ্বরীতে, শুধু বর্ষায় বান ডাকত।

মা বলল, আমরা খোঁজ নিয়েছিলাম।

কী খোঁজ?

মা হাসল, তোমাদের মায়ের বাপের বাড়ির পাশে মধুমতী নদী ছিল, তোমার বাবারা ছিলেন বালুরঘাটের মানুষ, ওখানে আত্রেয়ী নদী।

হ্যাঁ মা, তাতে কী হল? নদীর ধারেই তো মানুষ বাস করত।

নদীর ধারের মানুষ ভাল হয়, তাদের মন নরম হয়।

কে বলল?

তোমার শ্বশুরমশাই।

না মানে, বাবা কি করে জানলেন?

উনি জানেন।

রীনা বলল, আমাদের বাড়ি হল না কেন?

বলছি তো নদীর কাছে জায়গা মেলেনি তাই।

মা আর রীনায় যে কথা হয় তার কিছু কিছু আমি শুনতে পাই। রীনা সমস্ত দিন বাড়ি থাকে, বুড়ো শ্বশুর, শাশুড়ি আর ছেলেই তার জগৎ। ছেলে এখন বড় হয়ে গেছে, তাকে এখন ছোঁয়াও কঠিন, সব সময় সাইকেল নিয়ে ছুটছে এ কোচিং সে কোচিং, ক্রিকেট ম্যাচ, কম্পিউটার সেন্টার। গঙ্গায় সাঁতারটা শুধু আটকেছে রীনা। গঙ্গার জল তার কাছে খুব ভয়ের, মাঝে মধ্যে তো খবর হয় অমুক ঘাট থেকে তলিয়ে গেছে মানুষ, অমুক ঘাটে এসে ঠেকেছে জলে ডোবা মাছে খাওয়া লাশ। বলতে গেলে রীনার চাপেই আমি বাড়ি খুঁজছি। এ পাড়ায় ফ্ল্যাট যে কিনতে পারব না আমি তাতে রীনা খুব খুশি। রীনা চায় এই গঙ্গার কূল ছেড়ে আমরা অন্য কোথাও চলে যাই যেখানে নদী থাকবে না। তার কিশোর পুত্রটিকে নিয়ে তার কোন উদ্বেগ থাকবে না।

আমি অন্য বাসস্থান খুঁজছিলাম। একটু আলো, একটু হাওয়া, দেয়ালের মসৃণতায় রঙের গভীর আবরণ, নতুন জানালা, নতুন দরজা, মোজাইক মেঝে থেকে শীতে হিম, বর্ষায় স্যাঁতসেতে জলীয় ভাব উঠে আসবে না পায়ের পাতায়-এমন কোন বাড়ি, ফ্ল্যাট, না-হলে জমি। এই পুরনো বাড়ি বলি, ফ্ল্যাট বলি, বাসা বলি-এখানে আর থাকতে ভাল লাগে না। দক্ষিণের হাওয়া আসত আগে, ওদিকে একটা বহুতল উঠে তা বন্ধ করে দিয়েছে। দেওয়াল, মেঝে সব জল টেনে নিচ্ছে মাটি থেকে, তাই স্যাঁতসেতে ভাব সবসময়। প্লাস্টার খসে যাচ্ছে হোয়াইটওয়াশ করা দেওয়ালের, মেঝের খাবলা উঠে যাচ্ছে। কবে যে এ বাড়ি ছেড়ে পারব রীনা বলে।


রীনার সঙ্গে আমার কথা হয় রাতে। রীনা সব বলে। বাবা কী বলেন, মা কী বলেন, আমাদের ছেলে শুভম কী বলে, প্রতিবেশীরা কী বলে, এমন কী থালাবাসন প্লাস্টিকের বালতি মগ ফেরি করা লোকটাই বা কী বলে।

বাবা একদিন বলেন, খুঁজছিস বাসা?

বাসা না নিজের বাড়ি।

বাগবাজার ছেড়ে চলে যাবি?

আমাদের নিজেদের বাড়ি হবে না?

বাবা বললেন, তুই যাবি, আমি তোর মাকে নিয়ে থেকে যাব এখানে, এই শেষ বয়সে আমি গঙ্গা ছেড়ে যাব না।

ওসবের কোন মানে আছে?

বাবা হাসলেন, আছে, মরি তো গঙ্গাতীরেই মরি, নিমতলা, কাশীমিত্তির ঘাট কত কাছে, নদীর ধারে থাকলে মনে বৈরাগ্য আসে।

আমি চুপ করে থাকলাম। সেই সময় একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার সময় দেখি পায়জামা পরা, গালে মুসলমানি দাড়ি এক প্রৌঢ় অনাথ বিশ্বাস বাই-লেনে কেমন দিশাহীন হয়ে ঘুরছেন, তেতাল্লিশ এর ডি বাই ফাইভ নম্বর বাড়িটা কোথায় হতি পারে বলতি পারেন, এহেনে নম্বর ঠিক পরপর নেই।

কথার টানে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। এত চেনা উচ্চারণ, ভঙ্গি। কই এখন তো আর এমন টানা শোনা যায় না বাবার মুখে, মায়ের মুখে। হারিয়েই গেছে এই ভাষা।


দুই

বাবা বললেন, তুমি মোজাহারের ছেলে না এজাহারের ছেলে কও দেখি, তোমারে তো দুজনের মতো লাগে, আহা ঠিক যেন এজাহারের মতো হাসি, মোজাহারের মতো তাকানো।

বাবার দুচোখ এতক্ষনে জলে ভরে উঠেছে। মায়ের চোখের পলকই যেন পড়ছে না, দেখছেন সিকান্দার আলিকে। সিকান্দার আলি এসেছেন বড়দল থেকে। বড়দল ছিল আমাদের পিতৃভূমি। সিকান্দারের গায়ে নীল আশমানি পাঞ্জাবি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, গালে মাথায় কাঁচাপাকা দাড়ি চুল। সিকান্দার বলল, এই ঠিকানাটা আমার আব্বার ডায়েরিতে ছেল, চাচা আমার আব্বা-চাচা দুই যমজ , মনে আছে তো?

বাবা বললেন, তা আর মনে থাকবে না!

ওই জন্যি আমারে দু’জনের মতো লাগে।

তুমার বাবারা আছে?

সিকান্দার আলি মাথা নাড়ে, না অনেকদিন হল, চাচা তো খান সেনাদের হাতে মরলেন, আর আব্বা সেই শোকে পাথর হয়ে গিসলেন, শেষদানিতে কথাই বলতেন না, তারপর ফুস করে চলি গেলেন, ছিয়াত্তর সালে।

এতদিন! মা যেন কেঁদে উঠেছে।

আপনার বয়স কত হল চাচা?

একানব্বুই, তুমারে দেখব বলে বেঁচে আছি খোকা। বাবা কেঁদে উঠলেন বন্ধুর শোকে।

সিকান্দারের চোখ দুটিও ছলছল করছিল। রীনা দাঁড়িয়ে দরজায়, আমি দেওয়ালে পিঠ রেখে। সিকান্দার বলছে, এপারে তো আসা হয়, তিনি বড়দল প্রাইমারি হেডমাষ্টার, ওই স্কুল পত্তন করেছিলেন মুকুন্দ পাল মশাই, কিন্তু ঠিকানা ছিল না কোনও, তাই দেখা করা হত না, আচমকা ঠিকানা পেয়ে গেছেন তাঁর আব্বার ডায়েরিতে।

তুমি তাহলি কার বেটা হলে? মা জিজ্ঞেস করল, রোশোনারা না আঞ্জুমান, কোনডা তুমার আম্মা?

আপনের মনে আছে চাচী?

আছে, তুমার মা কোনডা? মায়ের মুখে দেশের ভাষা ফিরে এল অবলীলায়।

বলেন দেখি কোনডা?

মা বিড়বিড় করছে, আঞ্জুমান আমার সই ছেল।

সিকান্দার বলল, আর রোশোনারা?

তার খুব রূপ, একটু দেমাক ছেল।

হি হি করে হাসে সিকান্দার, তিনি আগে গেছেন, পেটে ঘা হয়েছিল, পীরতলায় পানি খেয়ে খেয়ে তাঁর ইন্তেকাল হল।

কত বয়স তখন তার?

তিপ্পান্ন-চুয়ান্ন।

তা’লি তো তখন বুড়ি হয়নি।

না, কী রূপ ছেল রোশোনারার, মোজাহারের বিবি। বাবা হাসলেন, বাপের বাড়ি পলাশপোল না?

মা বলল, তোমার তো দেখি সব মনে আছে।

আছে, থাকবে না?

মা বলল, আঞ্জুমানের খবর?

তিনি আছেন।

বেঁচি আছে আঞ্জু? মা উল্লসিত হয়ে উঠেছে।

আছেন, তবে পড়ুটে হয়ে।

উঠতি পারে না?

কোমর পড়ে গেছে চাচি তাঁর।

মার চোখে জল ভরে এল, যদি দেখতি পারতাম তারে।

দেখলি কষ্ট পাতেন চাচি। সিকান্দার বলল, আপনারা যে দু’জনেই আছেন তা আমার ধারণায় ছেল না, ভেবেছিলাম আপনার ফেমিলির সঙ্গে দেখা করে যাব, আমার আব্বা-চাচার বন্ধু ছেলেন আপনি।


বন্ধু মানে, এক থালায় ভাত খাওয়া হত। বাবা বললেন।

মা বলল, আমি আর আঞ্জু, দুটো গাছ পুতিলাম, আমাদের বাগানে আঞ্জু, তুমাদের বাগানে আমি, চুষি’র আম, আছে?

সিকান্দার বলল, আপনের নাম ললিতা, ওই গাছডার নামও তাই, ললিতা আম, খুব মিঠে, ললিতা আম বড়দলে আর কারো ঘরে নেই।

বাবা বললেন, থাকবে কি করে, ও গাছের কলম কলকাতার গ্লোব নার্সারি থেকে নিয়ে গেসল এজাহার, সে কিনা এনারে খুব পছন্দ করত, এনার হাতের পান তাঁর মিঠে লাগত।

সই এর বসানো গাছডা কি হল? মা জিজ্ঞেস করল।

সে গাছ নাই, আপনাদের বাগান তো সাফ হয়ে গেছে।

সে গাছ নাই, বাগান কাটল কেন?

ওখেনে বড় মসজিদ হয়েচে, অনেক চেষ্টা করেও বাগানডা রাখতি পারলাম না আমরা কেউ।

মা বলল, তুমাদের বাগানডা রেখি দিয়ো বাপ।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিকান্দার আলি। আমি বুঝতে পারছিলাম না সিকান্দার আলি সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েও একটা কথার জবাব দিল না কেন? কার ছেলে, আঞ্জুমানের না রোশোনারার? এজাহারের না মোজাহারের?

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, রোশোনারা খুব কষ্ট পেয়েছিল?

পেয়েছিল চাচা। ক্যানসার হয়ে গিসিল, ঢাকায় নিয়ে গিছি, সেখেন থেকে কলকাতায়, তারপর মুম্বাই, শেষে বড়দলে ফেরত নিয়ে গেছি, ওখেনে তাঁর ইন্তেকাল হল।

তখন কেন যোগাযোগ করনি?

জানতাম না তো অ্যাড্রেস।

বাবা জিজ্ঞেস করলেন, ইস্কুলডা পাকা হয়েছে?

হয়েচে, আপনার সই করা খাতা পত্তর এখনো আছে।

আছে, সত্যি?

হ্যাঁ, সত্যি।

তাহলে বলতেছ আঞ্জুমান একা বেঁচে?

হ্যাঁ চাচা।

সে আমাদের কথা বলে না?

আগে খুব শুনতাম, এখন আর না, আর শোনবোই না নতুন কথা কী, সব তো জানা আমার, এত শুনেছি।

মা কী যেন জিজ্ঞেস করতে চাইছিল, বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছিল নিজে নিজে, শেষে না পেরে জিজ্ঞেসই করল, তুমার মামাঘর তো মাগরোয়?

জে চাচি।

স্টিমারে করে যেতে তো?

জে, এখন পাকা রাস্তা হয়ে গেছে, নদীর ওপরে পুলও হয়েছে অনেক জাগায়।

স্টিমার তো চলে, বড়দলে আমাদের স্টিমারঘাটা। মা বলল।

ছেল এক সময়।

এখন নেই?

না। দীর্ঘশ্বাস ফেলল সিকান্দার আলি, গাঙ সব শুকোয় যাচ্ছে চাচি।

গাঙ শুকোয় যায়, বেতনা, কপোতাক্ষ? মা যেন আর্তনাদ করে ওঠে।

বেতনা তাই গেছে, কপোতাক্ষয় তবু পানি আছে, তবে কিনা ভাটার সময় শুখার কালে হাড়পাঁজরা দেখা যায় কপোতাক্ষরও, শুধু চর পড়তেছে।

বাবা শুনছিলেন, বিস্ময় প্রকাশ করলেন, এমন হতে পারে, নদী শুকোয়?

হ্যাঁ, পানির অভাব খুব, নদী ধুধু বালি।

কী সব্বোনাশ, মরে গেল অতবড় নদী?

‘জে’, বলে মাথা নামায় সিকান্দার আলি।

কেন এমন হল?

বিড়বিড় করে সিকান্দার, হিন্দুরা শুধু দেশ ছাড়তেছে, ভিটেমাটি বাগান পড়ে থাকতেছে, লোভী মানষে দখল করে নেচ্ছে, লোভে হিন্দুদের তাড়াচ্ছে, কিন্তু এডা যেমন সত্যি, তেমন সত্যি তারা দেশ ছেড়েই বা আসতেছে কেন কও দেখি চাচি, ওডা তাদেরও দেশ, যদি হিন্দু মোছলমান দুজনেই না থাকল একটা দেশে, গাঙে পানি থাকে? খেরেস্তান মধুকবির কপোতাক্ষ কবিতাটা মনে মনে শুধু আওড়াতি হয় চাচি, গাঙের পানি তো সবাইরে লিয়ে হয়, দেশডার পরাণ শুকোয় যাচ্ছে।

মা কেঁদে উঠল, একী কথা শুনাতে এলে!

কত শুনবা চাচি, সুনাই নদী জানতে তো, সে গাঙ ধূ ধূ করে, পানির বংশ নাই, একটার পর একটা নদীর পতন হচ্ছে মিলিটারি পতনের মতন, দেশশূন্য হয়ে যাচ্ছে, হিন্দুরা সবাই চলি এলি বড়দল, কপোতাক্ষ, ঢাকা, বরিশাল মরুভূমি হয়ে পড়বে।

বাবার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে বুকের উপর এসে শুকিয়ে যাচ্ছিল। বাবা কীরকম অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছেন সিকান্দারের দিকে। একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। অনেকটা সময় কাটিয়ে সিকান্দার উঠল। তখনও মা বাবা নিশ্চুপ।

বাইরে বেরিয়ে আমি সিকান্দারের কাঁধে হাত দিলাম, আপনি কার ছেলে?

সিকান্দার হাসল, ধীরে ধীরে বলল, রোশোনারা বিবি আমার ধর্ম মা।

নিজের মা নয়?

না, আঞ্জুমান বিবির ছেলে তিনডে, দু’জন ঢাকায় থাকে, একজন কানাডা, রোশোনারার ছেলে মেয়ে নাই, আমি তারে আম্মা ডেকিছিলাম।

তাহলে আপনি এজাহার, মোজাহারের কেউ নন?

না, আম্মা মরণের সময় কলকাতায় এসে আপনের বাবারে দেখি যেতি বলেছিলেন, তাঁর খবরডা নিতি বলেছিলেন, খুব কষ্ট পেয়ে মরেছেন তিনি, তার রূপের কিছুই আর ছেল না, যেন পোকায় কেটে দিয়েছিল তাঁরে।

এতদিনে সময় হল আপনার?

বিষণ্ণ সিকান্দার হাসল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে বলতে লাগল আগামীকাল ভোরে সে যাবে গোবরডাঙ্গা। একটা বিয়েবাড়ি আছে। বড়দলের বিনোদ বিশ্বাস থাকে গোবরডাঙ্গা, এই তো গেল সালে চলে এসেছে। তার মেয়ের বিয়ের বরপণ আটকে গেছে নাকি। ওপার থেকে টাকা এনেছে সিকান্দার বিনোদের জমি বেঁচে দিয়ে। এক কাপড়ে চলে এসেছিল তো। বিয়েটা হয়ে গেলে সে বিনোদদের নিয়েই ও দেশে ফিরবে। ভয়ে, অভিমানে দেশ ছেড়ে এসেছে বিনোদ বিশ্বাস, অজিত কুণ্ডু, প্রণবানন্দ মল্লিকরা। সবাই আছে গোবরডাঙ্গায়। এত বছর ওপারে থেকে শেষ বয়সে চলে আসবে কেন? তাদের বুঝিয়ে ফেরত নিয়ে যাবে সিকান্দার।

প্রাণের ভয় তো আছে। আমি বললাম, দাঙ্গায় মরতে চায় কে?

দাঙ্গা না, ওপারে একতরফা, এপারেও তাই, এই যে আপনাদের পশ্চিম দেশে, গুজরাতে এত মোছলমানের ঘরবাড়ি পোড়তেছে, তারা কি দেশ ছাড়তেছে?

না, যাবে কোথায়?

তবে হিন্দুরাই বা ওপার থেকে আসবে কেন? ওপারে হিন্দু, এপারে মোছলমান যদি না থাকে, কারে নে কে বাস করবে? গাঙ্গের পানি কি এমনি শুকায় দাদা, পানি থাকবে না কুথাও।

বাড়ি ফিরে দেখলাম রীনা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। উদ্বিগ্ন চোখ মুখ, বলল, বাবা যেন কেমন করছেন, কী শুনিয়ে গেল সিকান্দার আলি নামে লোকটা!

বাবার গলা শুনতে পাই আমি, মাকে ডাকছেন, কী হল, ওঠো, যাবে না বড়দল?

রীনা গিয়ে বাবাকে ধরেছে, কোথায় যাবেন বাবা, কী বলছেন আপনি?

মোজাহার এজাহার লোক পাঠিয়েছিল, না গেলে কপোতাক্ষ মরে যাবে বউমা।

আপনি ব্যস্ত হবেন না, চুপ করে বসুন বাবা।

না,না, খবর দিতে হবে, ঠাকুরদাস মিত্তির, শৈলেন রায়, গোবিন্দ কুণ্ডু, বলরাম মল্লিক, সবাই রে জানানো দরকার, ওরা সব থাকে কোথায়? ডেকে নিতে এসেছিল মোজাহার এজাহারের বেটা, আমরা চলে এয়েছি বলে নদীতে জল নাই, সব্বাইরে খবর দে খোকা, ঠাকুরদাস, বারাসাত থাকে বোধহয়, হ্যাঁ রমেন থাকে বিরাটির দিকে। না, না ঠাকুরদাস মছলন্দপুর, গোবিন্দ গোবরডাঙ্গায়...। বাবা গড়গড় করে বলে যাচ্ছিলেন নানা জায়গায় থাকা নানা মানুষের নাম। এইসব মানুষ সবাই-এর আদি নিবাস বড়দল, জেলা খুলনা। এখনও বিয়ের চিঠিতে লেখা হয় পিতৃপুরুষের ঠিকানা, আদি নিবাস বড়দল, বর্তমান ...। নামগুলো আমার খুব চেনা। এই সমস্ত মানুষ একদিন এই বাসাবাড়িতে কাটিয়ে গেছে। ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায়। আলো আঁধারে ছাওয়া এই দুটি ঘর, সরু প্যাসেজ, এমন কি রান্নাঘরও রাতের বেলা ভর্তি হয়ে যেত। বিছানা পড়ত সব জায়গায়। দেশহারা হয়ে গ্রামহারা হয়ে বড়দলের কত লোক কাটিয়ে গেছে এখানে। তারপর ধীরে ধীরে এক এক করে চলে গেল নিজেদের বাসা খুঁজে নিয়ে। মনে পড়তে লাগল। কেউ আর আসে না, খোঁজ নেয় না আমার মা বাবার যারা কিনা একদিন সবাইকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। মাকে তো শোনাই কখনও সখনও, এই যে তোমরা বুড়ো হয়েছ, কেউ কি দেখতে আসে? গোবিন্দকাকা, শৈলেনকাকা, বলরাম পিসে –খোঁজ নেয় কেউ? গোবিন্দকাকা নাকি বিদেশ ঘুরেও এসেছে, সেই খবর লোকমুখে শুনেছি, তোমাদের জানিয়ে গেছে কখনও? কেউ মনে রাখে না। কেউ মনে রাখেনি।

বাবার কথা থামছে না, বাবা বলছেন, কী সব্বোনাশ। কপোতাক্ষ শুকোয় যাচ্ছে, বেতনা শুকোয় গেছে, সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে...কে লিখেছিল, মাইকেল, মানুষ দেশ ছাড়ছে, মানুষের ঘর পুড়ছে, নদী শুকোচ্ছে খোকা, এরপর আর কোথাও নদী থাকবে না, চিতা জ্বালালে আর নেভানো যাবে না, শুনছো। বাবা ডাকছেন মাকে।


তিন

নার্সিং হোমে বাবাকে ভর্তি করে আমি সমস্ত রাত্রি একা একা বসে থাকলাম নীচে রিসেপশনে। ভগ্নিপতি অফিসের কাজে বাইরে, টেলিফোনে বোন ঝুমা কাঁদতে লাগল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে। রাত যত বাড়তে লাগল, নার্সিং হোম চুপচাপ হয়ে গেল। ব্যস্ত পায়ে সিস্টারদের চলাফেরা দেখতে দেখতে ঝিমিয়ে পড়তে লাগলাম আমি একা। এখন এই এত রাত্তিরে যদি বাবার কিছু ঘটে যায়, আমি একা কি করব? ভয় করতে লাগল। আমাদের বাসা বাড়িতে একসময় কত মানুষ থেকে গেছে। তারা সবাই ভুলে গেছে আমাদের।

পরদিন রবিবার। বাড়ি ফিরলাম সকাল আটটা নাগাদ। মা, রীনা উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছিল। সব খবর নিয়ে রীনা বলল, ওই লোকটা না এলে এসব হত না।

আহা ওর কী দোষ?

অদ্ভুত মানুষ! কী করতে এসেছিল ওই সিকান্দার আলি, কেন এসেছিল?

আমি বললাম, সে তো তুমিও শুনেছ, নদীর মৃত্যু সংবাদ দিতে।

উঁহু! মাথা নাড়ল রীনা, ও এসেছিল রোশোনারা বিবির মৃত্যুসংবাদ দিতে, আর তা শুনেই বাবার উপর অ্যাটাকটা হয়ে গেছে, এখন যদি বাবার কিছু হয়ে যায়।

আমি চুপ করে থাকলাম। রীনা চাপা গলায় বলতে লাগল, কাল সমস্ত রাত মাও ঘুমোয়নি। মা কেঁদেছে, বলছে, ওই রোশোনারা টেনেছে বাবাকে। দেশ আলাদা, কত বছর কেটে গেছে, বুড়ো হয়ে গেল সবাই, মরণের বয়স এসে গেল, তবু কিনা সে ঢুকে পড়ল এই সংসারে। আঞ্জুমান কম কেঁদেছে ওই রোশোনারার জন্য! কী দেমাক তার!

আমি বললাম, না নদী শুকিয়ে গেছে, এটা সহ্য করতে পারেনি বাবা।

কী জানি। মা তো কাঁদতে কাঁদতে বলেছে, মরে কবরে গিয়েও রূপে ভোলাচ্ছে রোশোনারা, এত রূপ ছিল কেন তার? এত রূপ যে ভোলা যায় না মরণের পরেও, পরের জন্মেও মনে থাকে, কত চুল ছিল রোশোনারার, কেমন টানা টানা চোখ ছিল, দুধে-আলতায় রং ছিল, পায়ে ঘুঙুর ছিল, সেই টেনেছে বাবাকে।

না, না, বাবা নদীর শোক পেয়েছেন।

মাথা নাড়ল রীনা, রোশোনারা বিবির দিকে তাকালে নাকি চোখ জুড়িয়ে যেত, মা নিজেও নাকি চোখ ফেরাতে পারত না, মৃত্যুর সময় রোশোনারা বলে গিয়েছিল এখানে খবর দিতে, কেন বলে গিয়েছিল বলো দেখি?

মাকে দেখলাম মুখ থমথম করছে। ন্যুজ হয়ে গেছে মা এক রাত্তিরেই। আরও বুড়ি হয়ে গেছে আমার মা। পরাজিতের মতো ঘাড় হেঁট করে বসে আছে বিষাদ প্রতিমা। আমি মায়ের গায়ে হাত রাখলাম, ভাবছ কেন, বাবা ঠিক ফিরে আসবে এখানে।

নব্বই বছরের বুড়ো মানুষকে ওইসব খবর দিতে এল কেন এত বছর বাদে? ও কার ছেলে, আঞ্জুর না রোশোনারার? মার গলা ভার।

বাবা সহ্য করতে পারেনি নদীর শুকিয়ে যাওয়ার কথা। আমি বোঝালাম মাকে।

মা চুপ করে থাকল। রোশোনারার কথাটা বলতে গিয়েও বলতে পারে না মা। চোখ মেলে আছে জানালা দিয়ে খোলা আকাশে। স্পষ্ট যেন দেখতে পাচ্ছে কাউকে।

সেদিন বিকেলে আমি আর রীনা নার্সিং হোমে গিয়ে দেখলাম বাবা ঘুমিয়ে। চোখমুখে কী প্রশান্তি। ঠোঁটের কোণে আবছা হাসি। স্বপ্ন দেখছেন হয়তো। বোন এসেছিল। শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে থাকল সমস্ত সময়। সে বিনবিন করে বলল, বাবা নার্সিং হোমে, আমাদের কি আর কেউ নেই দাদা, সব তোকে করতে হবে, কত লোক থেকেছে আমাদের বাসায়...।

পরদিন আমাকে যেতে হল আপিসে। ছুটির ব্যবস্থা করে নার্সিং হোমে পৌঁছতে বিকেল সাড়ে চারটে। নীচে দাঁড়িয়ে আছে রীনা। ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়ে গেছে, এখনও নীচে কেন?

রীনা বলল, ওপরে ঝুমা আছে, আরও চারজন এসেছে গোবরডাঙা থেকে।

গোবরডাঙা? কারা?

আমি তো চিনি না, ঝুমা জানে হয়তো।

বাবার অসুখের খবর কে দিল?

আজ দুপুরে বুড়োবুড়ি আমাদের বাড়ি গিয়েছিল, মা চেনে, মা দেখে কাঁদতে লাগল, ওখান থেকেই খবর নিয়ে এসেছে।

আশ্চর্য! খারাপ খবর কি আপনা আপনি চলে যায়। বাতাসে বাতাসে?

গোবরডাঙা থেকে ঠাকুরদাস মিত্তির সপরিবারে এসেছে। ঠাকুর কাকা? তিনি তাঁর স্ত্রী, মেয়ে জামাই নিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি দেখলাম লোকটা বুড়ো হয়ে গেছে। মাথার সব চুল সাদা। লোকটা গ্রাম সম্পর্কে কাকা। ভাল গান গাইত। অর গানের রেকর্ডও বেরিয়েছিল এক সময়। রেডিওতে হয়েছিল। তারপর তো আর যোগাযোগ নেই কোনও। কতদিন হয়ে গেল। কত বছর! হিসেব নেই।

বাবা বেডে বসে আছেন। হাসছেন, বলছেন, আপনারা যে এসেছেন তাতে খুব ভাল লাগছে, আপনি যে কষ্ট করে এত দূরে-!

বাবার কথাগুলো খুব স্বাভাবিক নয়। স্পষ্ট চিনতে পারছেন না ঠাকুরদাস মিত্তিরকে। আমাদেরও না। বাবা বলছেন, আপনি তাহলে বড়দলের লোক, খুব ভাল কথা, বড়দলে দুই নদী কপোতাক্ষ, বেতনা, এতদিনে নদী মরে গেছে না বেঁচে আছে কে জানে, আপনি বড়দলের খোঁজটা এনে দিন।

ঠাকুরদাস মিত্তির বলল, মুকুন্দদার মাথায় গোলমাল হয়ে গেছে, আমাকে আপনি বলবে কেন, ইংরিজি পড়তে বসে মুকুন্দদার হাতে চড়চাপড়ও খেয়েছি কম না, আমার বাহাত্তর হল।

খবর দিল কে? আমি জিজ্ঞেস করেছি।

দিল কে? একজন, তার সঙ্গে গোবরডাঙা ষ্টেশনে আলাপ, বিকেলবেলা, সে বাংলাদেশ থেকে আসছে।

সিকান্দার আলি?

হবে হয়তো, মনে পড়ছে না, খুব লম্বা, যাবে মসলন্দপুর, ওপার থেকে ভোটের পর যারা পালিয়ে এসেছে, তাদের নিয়ে যেতে এসেছে।

নীল পাঞ্জাবি?

না, প্যান্ট শার্ট, হ্যাঁ নামটা মনে পড়ছে-জাফর মণ্ডল, সেই কিনা একটা কাগজ বাড়িয়ে দিল, তাতে তোমার মা বাবার নাম লেখা, কোথায় থাকেন খোঁজ নিল।

সেই জাফর কোথাকার লোক?

কাটিপাড়া, তোমার মামার বাড়ির দেশ।

কত বয়স?

বেশি না বছর পঞ্চাশ।

কিন্তু বাবার অসুখের খবর দিল কে?

কেউ দেয়নি রে, ওই কাগজটায় মুকুন্দদা আর বউদির নাম দেখে আমার বুক হু হু করে উঠল, মন টানল, তোর কাকিমাকে বললাম, চলো মুকুন্দদাকে দেখে আসি, তিনি আমাদের বড়ভাই-এর মতোন। তিনি না থাকলে আমরা ভেসে যেতাম, যদি তিনি বেঁচে না থাকেন মহাপাতক হব, দাদাকে আমার গান শুনিয়ে আসব, মেয়েজামাই থাকে কসবা, তাদেরও খবর দিলাম ফোনে, ও মুকুন্দদা, বড়দা চিনতে পারছ না তুমি?

বাবা হাসলেন, চেনা যাচ্ছে আবার যাচ্ছেও না, তবে আমি খুব আনন্দ পেয়েছি আপনি যে বড়দলের লোক তা শুনে, আমার বাসা বড়দলের লোকের জন্য, বড়দলের মানুষ তো পথে ঘুরতে পারে না, স্টেশনে থাকতে পারে না, তাদের আশ্রয় দিতেই হবে, আপনার নাম?

মন খারাপ হয়ে গেল। কী হল? শেষের ক’দিন স্মৃতিভ্রংশ হয়ে বেঁচে থাকবেন বাবা? ঠাকুরদাস মিত্তির যে লোকটার কথা শুনিয়ে গেল, সেই জাফর মণ্ডল আর সিকান্দার যে এক নয় তা তার বর্ণনায় বোঝা গেছে। সে হল কাটিপাড়ার লোক। কাটিপাড়ায় মায়ের বাপের বাড়ি। সেই গাঁয়ের লোক এপারে এসে আমার মা বাবাকে খুঁজছে। আশ্চর্য! বাবার আর কী পরিচয় ওই কাটিপাড়ায়? জামাই। মার জন্ম ওই গাঁয়ে। সিকান্দার আলি এনেছে রোশোনারার মৃত্যুসংবাদ, ওই জাফরই আবার কার খবর বয়ে এনেছে এদেশে তাই বা কে জানে?

মা শুনতে শুনতে বলল, ইকবালভাইদের কেউ হবে।

কে ইকবালভাই? রীনা মুখ টিপে হাসে।

স্বদেশী করত, জেল খেটেছিল তার তিনভাই-ই, এখন কি কেউ বেঁচে আছে?

তাদের নাম মনে পড়ল কেন?

মা বলল, ওরা তোর বাবাকে খুব করে বলেছিল দেশ না ছাড়তে, কিন্তু ওদের সাধ্য ছিল না দাঙ্গা থামানোর।

আমরা স্বামী স্ত্রী ভাবতে লাগলাম লোকটা যদি সত্যি সত্যি আস্তে চায় আমার মা বাবার কাছে, ঠিক চলে আসবে। অনেকদিন বাদে গঙ্গায় স্টিমারের ভোঁ শোনা গেল। আমরা অপেক্ষা করছিলাম কারোর জন্য, সে ওপার থেকে মায়ের কাছে এতবছর বাদে ইকবালভাইদের খবর আনবে।

কেমন ছিল ইকবালভাইরা? রীনা জিজ্ঞেস করেছে মাকে।

খুব সুপুরুষ, লম্বা, বাংলার মাটি বাংলার জল গাইত যখন...। মা কথা থামিয়ে বাংলার মাটি বাংলার জলের কথা ভাবছিলেন।

তারা এপারে আসেনি মা, আপনারা যে চলে এলেন? রীনা জিজ্ঞেস করে।

না আসেনি, বলেছিল, কোনওদিন আসবে না।

কেন?

মার মুখ থমথম করছিল, মাথা নাড়ছিলেন মা। রীনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল। মা বলতে চাইছিলেন না আর কিছু। শুধু আর একবার বললেন, তাঁদের দালানে এক সন্ধেয় তিন ভাই মিলে বাংলার মাটি বাংলার জল গেয়েছিল, মনে আছে, খুব মনে আছে, এখনও কানে লেগে আছে। তিনভাই পিঠোপিঠি। এক দেড় বছর অন্তর অন্তর জন্মেছিল তারা। তিনজনই সুন্দর। তিনজনের গানের গলাই সুন্দর। তিনজনের ডাকই সুন্দর।

রীনা আমাকে অনেক রাত্তিরে বলল, তোমার ঠাকুরদাসকাকা কিছু মনে রাখতে পারেন না, কী বলতে কী বলছেন খেয়ালও করতে পারেন না, হয়তো সিকান্দার আলির সঙ্গেই দেখা হয়েছিল তাঁর, তুমি না বলেছিলে লোকটা গোবরডাঙ্গা গেছে।

আমারও যে তেমন মনে হচ্ছে না তা নয়। মনে হচ্ছে আরও অনেক কথা। রীনারও মনে হচ্ছিল অনেক কথা। আমার গলা জড়িয়ে রীনা সেইসব কথা বলে যাচ্ছিল। বলতে বলতে রীনা আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, আমার মনের ভিতরে কোন রোশোনারা আলো জ্বালিয়ে বসে আছে কিনা। আমি যে ইকবালভাইদের কথা জিজ্ঞেস করব সেই সুযোগ দিচ্ছিল না রীনা। শেষের দিকে রীনার কথা আর শুনতে পাচ্ছিলাম না। আমার সামনে সিকান্দার আলি ভেসে উঠছিল। আশমানি পাঞ্জাবী, স্বাস্থ্যবান পুরুষ, চওড়া বুক, সে এখন গোবরডাঙা, মসলন্দপুরের দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা এই এতবছর বাদে জন্মভূমি ছেড়ে চলে এসেছে ভয়ে তাদের বুঝিয়ে নিজের দেশে ফেরত নিয়ে যেতে।

রীনা আচমকা বলে, দেশ ছেড়ে এলেও মনে রাখতে তো অসুবিধে হয়নি।

হয়নি তো।

রোশোনারা খুব রূপবতী ছিল?

জানি না।

রোশোনারা খুব সুন্দর ছিল?

থাক এসব কথা।

হ্যাঁ থাক। বলে রীনা আমার বুকে মুখ গুঁজল।


পরদিন নার্সিংহোমে গিয়ে আমি অবাক। নীচেই সব দলবেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। যারা বহুদিন আগে, সেই আমার ছেলেবেলায় আমাদের বাসাবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল, সেই তারা, শৈলেনকাকা, গোবিন্দকাকা, বলরামকাকা, দুর্গাকাকা, রমেনদা, নগেনদা-খবর পেয়ে গেছে সবাই? কেউ কেউ উপরে গেছেন, বাকিরা নীচে দাঁড়িয়ে আছেন উপর থেকে কার্ড নেমে এলেই উপরে যাবেন বলে। সকলের ভিতরে বার্ধক্য এসেছে, চেহারা বদলে গেছে, কারোর মাথা সাদা, কারোর মাথায় চুল নেই, কারোর দাঁত নেই, কারোর চোখে ভীষণ পাওয়ারের মোটা কাঁচের চশমা। সবার সঙ্গে তাদের স্ত্রীরা আছে। পুত্রকন্যাও আছে। নার্সিংহোমে একজন পেশেন্টকে দেখতে পঞ্চাশজনের উপর লোক এসে গেছে। সবাই বলছে মুকুন্দদার অসুখ, না এসে পারি! কে খবর দিয়েছে? নগেনদা বলেন, কেন বলরামকাকা ফোনে জানালো। বলরামকাকা বলল, কেন দুর্গা যে তার ছেলেকে দিয়ে খবর পাঠাল। দুর্গাকাকা বললেন, আমাকে তো রমেন জানালো কাল রাত্তিরে। সবাই সবাইকে জানিয়েছে। কে আগে খবর পেয়েছে, জানা গেল না কেন না রমেন দত্ত একটু আগে তার বাড়ি বিরাটির দিকে চলে গেছে। সে নাকি রাতকানা হয়ে গেছে। ভাল চোখে দ্যাখে না।

আমি অভিভূত হয়ে যাচ্ছিলাম। চারপাশে অনেকজন কলরব শুরু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে নার্সিংহোমে যত মানুষ এসেছে এই অপরাহ্ণবেলায়, সবাই দেখতে এসেছে খুলনা জেলার বেত্রবতী-কপোতাক্ষ তীরের বড়দল গ্রামের মুকুন্দ পালমশায়কে। মুকুন্দ পালমশায়ের খবর চলে গেছে সবার কাছে। আমরা তা হলে সত্যি সত্যি একা হয়ে যাইনি। রীনার মুখ আলো হয়ে গেছে। আমি উঠতে লাগলাম উপরে। আমার পিছনে পিছনে সিঁড়ি ভেঙে উঠে আসছে আরও অনেকজন। সবাই আমার বাবাকে দেখতে এসেছে। মুকুন্দ পাল অসুস্থ এই কথা জেনে ছুটে এসেছে নবীন বার্ধক্য সঙ্গে করে। ঝুঁকে ঝুঁকে উঠছে সবাই। হাঁপাচ্ছে। শ্বাস নিচ্ছে দাঁড়িয়ে, তবু উঠে যাচ্ছে উপরে। আমার আগে আগে, আমার পিছনে পিছনে।

বাবা মুকুন্দ পাল বসে আছেন নার্সিং হোমের বেডে। সাদা ধবধবে চাদরের উপরে সাদা, ধুতি, পাঞ্জাবী পরা বাবা বসে আছেন জোড়হাতে, আমাকে দেখে ডাক দিলেন, আসুন, আসুন, আপনি বড়দলের মানুষ, আপনারা সবাই এসেছেন, আমার কী আনন্দ হচ্ছে, আপনাদের সঙ্গে আমার দেখা হল, এ আমার পরম সৌভাগ্য, এখনও সবাই আসেনি, এজাহার, মোজাহার...।

বাবা বলে যাচ্ছিলেন। নগেনদা, শৈলেনকাকু, বলরামকাকারা ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছেন বাবার সামনে। বাবা বলে যাচ্ছেন, আপনারা আসবেন তাই বাসা বাড়িটা নেওয়া, সবাই থাকুন, সবাই আবার ফিরে যেতে পারি কিনা ভাবতে হবে, ওটা তো আমাদের জন্মভূমি, কী বলেন আপনারা?

শৈলেনকাকা এগিয়ে এলেন, ও মুকুন্দদা, মুকুন্দদা?

বাবা সাড়া দিলেন না। নিজের নামটাও বোধ হয় ভুলে গেছেন। শুধু মনে আছে বড়দল গ্রামটির কথা। জল থই থই নদীর কথা। নদীতে ভাসা স্টিমার, নৌকোর কথা। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম আরও অনেকজন উঠে আসছে, ওপার থেকে নদীর স্রোতের মতো মানুষ আসছে মুকুন্দ পাল্কে দেখতে। বেত্রবতী, কপোতাক্ষ ঢুকে পড়েছে নার্সিংহোমের ভিতরে।

তখন ঘণ্টা বাজছিল। চোয়াড়ে একটা লোক ঢুকে পড়েছিল কেবিনের ভিতরে। সে ফ্যাসফেসে গলায় হুকুম করছিল, সময় হয়ে গেছে সময় হয়ে গেছে, আর না, এবার সবাই নেমে যান, চলে যান, আর দাঁড়ানোর হুকুম নেই।

বাবা একা বসে আছেন। জোড় হাত, চোখে জল। এখন সন্ধ্যা নেমেছে। বেত্রবতী কপোতাক্ষর দুই তীরে অন্ধকার। কেউ কোথাও নেই। শুধু নদী বয়ে যাচ্ছে আরও অন্ধকারে, দূর সমুদ্রের দিকে। আলোর শেষ বিন্দুটুকুও মুছে যাচ্ছে চোখের সামনে থেকে। শেষ কণ্ঠস্বরটিও হারিয়ে গেছে নদীর অনন্ত স্রোতে। বাবা বসে আছেন স্তব্ধ প্রকৃতির ভিতরে একা। বাবার চারিদিকে কেউ নেই। একজনও না। অন্ধকারে বাবার চোখের জল পড়ল অন্ধকারে।



লেখক পরিচিতি
অমর মিত্র
জন্ম :৩০ আগস্ট, ১৯৫১।

বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কাছে ধুলিহর গ্রামে | বিজ্ঞানের ছাত্র | কর্ম পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক দপ্তরে | তিনি ২০০৬ সালে ধ্রুবপুত্রউপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রকাশিত বই : পাহাড়ের মত মানুষ, অমর মিত্রের শ্রেষ্ঠ গল্প, অর্ধেক রাত্রি, ডানা নেই উড়ে যায়, ধুলোগ্রাম, অশ্বচরিত, আগুনের গাড়ী,ধ্রুবপুত্র, নদীবসত, কৃষ্ণগহ্বর, আসনবনি, নিস্তব্দ নগর, প্রান্তরের অন্ধকার, ভি আই পি রোড, শ্যাম মিস্ত্রী কেমন ছিলেন, গজেন ভূঁইয়ার ফেরা, জনসমুদ্র, সবুজ রঙের শহর, সমাবেশ, সারিঘর, সুবর্ণরেখা, সোনাই ছিলো নদীর নাম, হাঁসপাহাড়ি।

পুরস্কার : সাহিত্য একাডেমী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ