অলাত এহ্সান
জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ;
দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো?
পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে,
এই ইঁট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও, তবে
হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা!
একজন বৃদ্ধের নিকট গিয়ে বলি, নতজানু,
হে প্রাচীন দয়া ক’রে দেবেন কি একটি কবিতা ?
স্তব্ধতার পর্দা ছিঁড়ে বেজে ওঠে প্রাজ্ঞ কণ্ঠে—যদি
আমার মুখের রেখাবলী
তুলে নিতে পারো
নিজের মুখাবয়বে, তবে
হয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা।
(একটি কবিতার জন্য/শামসুর রাহমান)
কবিতা পাওয়া বা আবিষ্কারের এই আকুতি কবির চিরন্তন। বিষয়টা এটা গল্পকারের ক্ষেত্রেও সত্য। আমাকে মনে রাখতে হচ্ছে, আমি যে মুহূর্তে শামিম আহমেদের গল্প নিয়ে কথা বলছি, তার প্রায় দুই দশক আগে বাংলাসাহিত্যের শাক্তিশালী গল্পকার-উপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইসিলায় ‘বাংলা ছোটগল্প কি মনে যাচ্ছে’ শীর্ষক এক প্রবন্ধের লিখেছিলেন। আসলে সেই লেখায় যতটা না গল্পের মৃত্যুর ঘণ্টা ধ্বনি দ্বারা তাড়িত, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল গল্প কিভাবে বেঁচে থাকবে আর সাম্প্রতিকতম ‘মৃত্যু’র কারণ বিশ্লেষণ করেছিলেন। বোধ করি, ইলিয়াসে সেই শঙ্কা-উৎকণ্ঠা দিন এখনো যায়নি। আকাঙ্ক্ষার জায়গা তো থাকেই।
ইলিয়াসের সময় থেকে আজ, বই ও লেখকের সংখ্যা দুই-ই বেড়েছে। বইয়ের পাঠক নেই নেই বলেও প্রতিবছর কালকাতা ও ঢাকার একুশে বই মেলায় দশ হাজারের মতো বই প্রকাশের রেকর্ড শোনা যায়। কিন্তু এদের মধ্যে প্রকৃতই লেখকের সংখ্যা কত, তা বোধ করি বলতে পারবেন না। বই প্রকাশের সংখ্যাটা বলা যায়, ব্যবস্থাপনাতাত্ত্বিক গ্রেগর মাসলো’র দেয়া চাহিদা তত্ত্বের শেষ ধাপের মতো। যখন মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে, ভবিষ্যৎ নিশ্চিতির পরও হাতে বেশ অর্থ খচ খচ করে, তখন সামাজিক সামাজিক স্বীকৃতির জন্য বই প্রকাশ করে। নিজেকে লেখক হিসেবে সমাজে পরিচিত করতে চায়। লেখকের এই দীর্ঘ সরণীতে গল্পকার খুঁজে পাওয়া আরো কঠিন। কবিতার সেই বিখ্যাত লাইনটির মতো, ‘মহিম হালদার স্ট্রীটে গিয়ে ‘মহিম’ ‘মহিম’ বলে কত ডাকলাম, উত্তর দিল না কেউ।’
আমার জানার সীমাবদ্ধতা তো অবশ্যই, বিশেষত অবস্থান গত কারণে শামিম আহমেদের গল্পের সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক পরে। ততদিনে তার দশটি গ্রন্থ বেরিয়েগেছে। গল্পের বইও একাধিক। তার গল্পের সঙ্গে পরিচয় এই গল্পপাঠের মাধ্যমে। এখানে ৪-৫টি গল্প, কিছু আলোচনা, ধারাবাহিক উপন্যাসের বাইরে তার মাত্র একটি গল্পবই ‘ফেয়ারলনে মধুবালা’ পড়া হয়েছে। এদিয়ে একজন লেখকের সামগ্রিকতা ধারণা করা খুবই অপরিণাম দর্শি কাজ। এই বইছাড়াও তার ‘বিলকিস বেগমের পতনজনিত আখ্যান ও অন্যান্য গল্প’ এবং ‘আঠারো পর্ব’ গল্পগ্রন্থের কথা আমি জানি। এর বাইরেও থেকে থাকবে বৈকি। তাই এই আলোচনা আমার পাঠের মধ্যদিয়ে যাবে। অস্বীকার করা সুযোগ নেই, এটা তার গল্পে একটা অংশ নিয়েই। সে অর্থে এটা খণ্ডিতও বলা যাবে। এটাও সত্য, একজন লেখকের লেখনিশক্তি বোঝার জন্য তা যৎমান্য নয়।
শামিম আহমেদের গল্পগুলো বুদ্ধিদিপ্ত। রাজ কন্যাদের মতো, একে তো রাজকুমারী, আবার সুন্দরী তো বটেই, মেধাবীও। রূপে ভোলায়, মেধায় জয় করে। মননের সংযোগ ঘটে এই বুদ্ধি সহযোগে। যে কারণে তার গল্পের ভাষা শুষ্ক, ছাড়া ছাড়া, বিন্যাস্ত। এর মাধ্যমে তিনি গল্প থেকে নিজের দূরত্ব তৈরি করেন। এই দূরত্বের একটা সুবিধা আছে। দূরবর্তী স্থানে বসে তিনি গ্রীক দেব-দেবীদের মতো গল্পের শরীরে নানা কৌশল, গল্প-ঘাত ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক সময় পাকা ম্যাজিসিয়ানের হাত সাফাই দেখার মতো, খেলা শেষে আবিষ্কার করেন, আমরা আসলে একটা খেলা দেখছিলাম। তবে কখনো মনে হয়, তার ওই বুদ্ধি ও মননের সঙ্গে হৃদয়ের যোগটা কমই। সেই গ্রিক দেবীদের মতো খেলায় পটিয়সী, কিন্তু নির্দয়। এই হৃদয়ের যোগ হলেই, তিনি ভালবাসার দেবি হয়ে ওঠতেন।
পৌরাণিক জীবনে নারীকে যেভাবে রাজ-রাজারা ইচ্ছা সাদৃশ রেখে দিয়েছিল, আজকের তা নেই। সেই পৌরাণিক আদিষ্ট জীবনে পুরুষেরা বদলায় নি। কিন্তু সেই পৌরাণিক জীবন তো নেই। এখন আধুনিক যুগ। আধুনিক যুগেও পৌরাণিকতার প্রভাব আছে। জোসেব ক্যাম্পেবেলের ভাষায়,‘আমাদের পৌরণিক জীবন জানছি না বলেই তো আর পৌরাণিকতা নেই।’ মাঝখানে সমাজে কিছু শ্রেণি তৈরি হয়েছে—অর্থনৈতিক তো বটেই, মনস্তাত্ত্বিকও। এই মনস্তাত্ত্বিকতার পথে ফিরে আসে পৌরাণিকতা। সে পৌরাণিকতা চরিত্রের ঐতিহাসিকতাকে নির্দেশ করে। তার মানে সমাজে নারীর যে অবস্থান তা ঐতিহাসিক ভাবেই এক অন্ধকার জগতে। শামিম আহমেদ যে কোনো বিশিষ্ট্য গল্পকারের মতো সমাজের এই অন্ধকারকে চিহ্নিত করেন, অসঙ্গতি দেখান। তা নিশ্চয়ই সাংবাদিকের ভাষায় নয়, অবশ্যই গল্পের সুষমায়। তাছাড়া পৌরাণিক উপাখ্যান ব্যবহারের ফলে গল্পের চরিত্রের এক ধরনের দায় মুক্তিও ঘটে। তখন সেটা একটা মৌলিক চেহারায় দাঁড়িয়ে যায়। ধর্মের প্রসঙ্গও আসে অবসম্ভাবি ভাবে। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে বিশ্বাস তথা ধর্ম বিশ্বসের গুরুত্ব অনেক। শামিম আহমেদের গল্পে ধর্মের উপস্থিতি ঘটে। তা ধর্মজীব্য নয়, সমাজ মুখি। সমাজে এই ধর্মের অতি-যাত্রা তৈরি হওয়া সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃত সংকট তার গল্পের বিশেষ ভাবে আসে।
শামিম আহমেদের পৌরাণিক জীবনকে উপস্থিত করেন বাস্তবে, বাস্তবকে করে তোলেন পৌরাণিক। ফলে গল্পে শরীরে ছড়িয়ে থাকে অজস্র মিথ। এই পৌরাণিতা-নারী-প্রেম-সামাজিক দ্বন্দ্ব তার গল্পের কেন্দ্রিয় বিষয়। কেন্দ্রিয় যে বিষয় তা দিয়ে বা সাধারণ কোনো কিছুর মধ্যদিয়ে গল্প শুরু হয়। কেন্দ্রিয় বিষয়ের নিগূঢ় সন্ধানেরই মধ্যদিয়েই তার গল্প জমে ওঠে।
গল্পকে প্রায়সই একটা ভ্রমণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। শামিম আহমেদের গল্পও একটা জার্নি। গল্পের ভেতরে তেমন সাধারণত অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে না। কিন্তু উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে চরম মুহূর্তের দিকে এগিয়ে যাই। আগের দিন কাঠের গয়নার নৌকায় মালপত্র বোঝাই করে দূর পথে যাত্রার মতো। মালামালে সমৃদ্ধ, দীর্ঘ যাত্রার জন্য ভেতরে বিনোদনের ব্যবস্থাও থাকে। কখনো কখনো গয়নার নৌকায় বাইজী ও গানের দল থাকতো। শামিম আহমেদের গল্প বাণিজ্যও সেই সমৃদ্ধি ও বিনোদন সহযোগ ঘটে। কিন্তু নৌকা কোথায় যাবে, দেখে বোঝা যায় না। দেখতে হয় নৌকার প্রকৃতি। গয়না (এখানে গল্প) যেহেতু বড় বাণিজ্য বন্দরেই যাবে।
সেখানে নৌকা এগিয়ে নেয়ার দাঁড় টানার মাঝি, সওদার সবই আছে।
অর্থা গল্পের চরিত্রগুলোও স্বক্রীয়। তারা বুদ্ধিদিপ্ত ও যৌবনা। হয়তো পারিপার্শিক কারণে চরিত্রের রং জ্বলে গেছে। তারা নিজ নিজ অস্থান থেকেই সমসাময়িক বিষয়ে সাড়া দেয়। দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। শামিম আহমেদ সাচ্ছা নাবিকের মতো স্টেয়ারিং ধরে বসে আছেন।
কখনো মনে হয়, তিনি ঐতিহাসিক কোনো উপাখ্যান ব্যবহার করছেন ঠিকই, কিন্তু সমাজের যে প্রচলিত গল্প-ফান্টাসি তার ভেতর একাকার হয়ে গল্প উঠে আসছে। তবে তা আজকের দিনেরই গল্প। এটা অস্বীকার করা সুযোগ নেই, সব যুগেই সব স্থানেই মানুষের মৌলিক অনুভূতি প্রায় একই। তার গল্পে এর ব্যবহার দেখা যায়।
তার গল্পের বিশেষ একটি দিক হলো, উপাখ্যান অনুযায়ি বর্ণ ও ভাষা তৈরি। তিনি যখন শকুন্তলা-যাত্রা-নাটক বা কোনো পৌরাণিক উপাখ্যান ব্যবহার করছেন সেই উপাখ্যানের আদলেই গল্পের আবহ, ভাষা ও চরিত্রিক ক্রিয়া তৈরি করেন। গল্পের ভেতরেও গল্প তৈরি ও তার স্বগত স্বর গল্পের ছোটা-খাট স্পেসগুলো ভরিয়ে তুলে।
গল্পের শরীরকে যতগুলো দৃশ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তার মধ্যে কুমির আর ডাইয়ের(পিপিলিকা) শরীরের সঙ্গে বেশি তুলনা যায় অবলীলায়। যেখানে গল্পের প্রথমেই দাঁতের ঝলক থাকে। সরু মুখ বেয়ে তা পৌঁছে যায় মোটা শরীরে। সেখানে মুখের দাঁতের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়। তারপর একট লেজ সরু হতে হতে প্রান্তে ঠেকে। অনেক সময় সেই ঈশ্বপের গল্পের মতো, মরে গিয়েও লেজ নাড়ায়। গল্পের শরীর আরেকটা উদাহরণ হতে পারে ডাই বা পিপিলিকার আদল। একটা মধ্যম বা স্থুল মাথা—মাঝে মোদহীন গাঁথুনি ও শেষে স্তুপাকৃত তন্ত্রী। ডাই নয়, শামিম আহমেদের গল্প কুমিরের শরীর পায়।
তার গল্পে শুরুটা খুবই সাধারণ জায়গা থেকে। এরপর বয়ানের মাধ্যমে উপর দিকে উঠতে থাকে। ধীরে ধীরে যুক্ত হয় ফ্যান্টাসি, ফিকশন। তবে তা মার্গীয় পর্যায় বটে। শেষে গল্পের অনুভূতি অতুচ্চে তুলে, তুঙ্গে তুলে, শূন্যে ঝুলিয়ে রেখে শেষ হয় তা গল্প। এই গল্পের ভিত্তি ভূমি থেকে উর্ধ্বে ঝুলে থাকায় তৈরি হওয়া ফাঁকা জায়গা ভরে তুলতে হয় পাঠকের ভাবনায়। এটা পাঠকে গল্পের সঙ্গে একাত্ম করে।
ত্রিশের দশকের কবিদের ভেতরে একটা প্রবণা দেয়া যায়, ‘নাই-ছাই’ বিষয় নিয়ে কবিতা লেখা। তবে প্রতিভা ও মননের কারণে তা হয়ে ওঠে প্রসাদগুণ সম্পন্ন ও অর্থবহ। আধুনিক সময়ে কাব্যের পরিধির এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, ‘নাই-ছাই’ কথা অমূলক। বিষয়টা গল্পের ক্ষেত্রেও সত্য। শামিম আহমেদের গল্প পড়লে সেই কথাই মনে পড়ে। কোন বিষয় গল্প হয়ে ওঠবে না, তা বলা যায় না। ফলে সমাজ দেহে তৈরি হওয়া গল্পের আধুনিকতম ঘাত তিনি ধরতে পারেন সহজে।
তার কোনো কোনো গল্প বলার ধরন প্রভাত চৌধুরির কবিতার সঙ্গে তুলনা করা যায়। প্রভাত চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ‘নোটবই’-এ এক-একটি বিষয়কে তিনি নির্বাচন করছেন। তারপর সে সংশ্লিষ্ট তথ্য-ইতিহাস ও দার্শনের মধ্য দিয়ে কবিতা তৈরি হচ্ছে। গল্প বলার ক্ষেত্রে শামিম আহমেদ একটা বিষয় বা চরিত্রকে কেন্দ্রিয় করে তুলেন। বৃত্তের বিন্দুর মতো। তারপর সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে, বৃত্ত তৈরি করতে থাকেন। তা যেমন মননে সমৃদ্ধ তেমন চিন্তায় ঋদ্ধ।
আপন মনে কথা বলেন গল্পকার, কবিতার মতো। প্রশ্ন করে, প্রশ্নের উত্তর দেয় নিজে। হেঁয়ালি যেন বা। একটা উদাহরণে শামিম আহমেদের গল্পর সেই প্রসাদগুণ ও বুদ্ধিদিপ্ততার পরিচয় পাওয়া যাবে।
“কাবিননামার মুখোমুখি করছে কি বর্ষার কুনো ব্যাঙের ডাক? বাদলায় কোনো ব্যাঙ ডাকে রইসুদ্দি জানে না। কুনো আর সোনা ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক তাদের প্রজনন ঋতুকে বুঝিয়ে দেয়। রইসুদ্দি কি সেই জাতে উঠে পড়ল! তার গায়ের চামড়া ঘষে দেখছে সে, এ তো ব্যাঙের মতোই। না, তাকে একটা ভালো চর্ম-বিশেষঙ্গ দেখাতে হবে এবার। মানুষের তো ব্যাঙের মতো প্রজনন কাল নেই। কোনো ছেলেবেলায় সে পড়েছিল ব্যাঙের যৌনতার কথা। মানুষেরও নাকি বর্ষা-বাদলায় যৌনতা বাড়ে। শারীরী চাহিদা দ্বিগুণ হয়! সে সব কারণেই কি রইসুদ্দির মাথায় বিয়ের কল্পনা উঁকি দিয়েছে! তাহলে গত চার-চারটে বর্ষা সে কী করে কাটাল! কীভাবেই বা কেটে গেল এতগুলো শীত-বসন্ত!
রইসুদ্দির মনে হয়, শীতকালটা পুষিয়ে দেয় চাদর! খালেকার পরিবর্ত হিসাবে চাড়র বা সোয়েটারকে গণ্য করলে প্রক্তন বিবি হিসাবে তাকে বেশ অসম্মান করা হয়। বরং আবহওয়া কথা বলা ভালো। আবহাওয়া, না জলবায়ু? আবার গণ্ডগোল। তাপমাত্রার অবনমন তাকে শীতকালে খালেকার অভাব ভুলিয়েছে। কী সব আবোল-তাবোল ভাবছে রইসুদ্দি? বসন্ত বা গ্রীষ্মের দিনগুলোতে তো তাহলে খালেকার বুকে চেপে বসার কথা! না, খালেকা পরস্ত্রী। তার কথা ভাবা হারাম। মনে-মনে তওয়া পড়ে রইসুদ্দি।
খামোখা খালেকার কথা ভাবাবর মানে হয় না। কোথায় খালেকা, আর সেই বা কোথা? তার বাড়িতে কেউ নেই।.....
...রইসুদ্দির সঙ্গে খালেকার তেমন কী ঘটল যে সে চলে গেল? ন্যাকা সেজে লাভ নেই, খালেকার অনেক অনুযোগ ছিল। এক নম্বর হল, রইসুদ্দি মিথ্যা কথা বলে।
অনুযোগটি সর্বাংশে মিথ্যা নয়। তবে এমন অভ্যাসও তার ছিল না যে সে সব সময় সত্য বলবে।”(রাইসুদ্দির রাত্রিবাস)
শামিম আহমেদ দর্শনের শিক্ষক। পড়ার গভীরতা তল পর্যন্ত বিস্তৃত। তা কোনো দার্শনিক সিদ্ধান্তে পৌছানোর জন্য নয়, একটা গল্প তৈরিতে সচেষ্ট। যে কারণে তার গল্পের দর্শনের একটা লুকায়িত বিষয়ের চালান থাকে। তবে তিনি যতটা দর্শনের গভীরে গিয়েছেন, গল্পের জন্য ভারতীয় প্রচীন ও পৌরণিক পথে ততোধিক দূর পর্যন্ত হেঁটেছে। আখ্যান তৈরি, কাহিনি বিন্যাস, সাসপেনশন, ক্লাইমেক্স বই সেই পথ ধরে আসে। এখানেই তিনি বিশিষ্ট। গল্প এগিয়ে যায় পৌরাণিক বা যাত্রা-নাটকের কাহিনি ধরে। একই সঙ্গে দুই গল্পের আমেজ। শেষ অবধি আখ্যানের পথ ধরে গল্পের নায়িকা বা নায়ক হাঁটতে থাক। দৌড়াতে থাকে। পৌরাণিক পথের এই দীর্ঘ হাঁটা যেখানে শেষ হয়, সেখানেই পূর্ণ হয় শামিম আহমেদের গল্প।
শামিম আহমেদের গল্প পড়লে বোঝা যায়, গল্পের লেখার আগেই গল্পকার জানেন কোথায় তিনি পৌঁছাতে চান। ওই গয়লার নৌকার নাবিকের মতো, ভেতরে সবাই নিজ নিজ চরিত্রে বিনোদনের লিপ্ত হলেও নাবিক জানেন তাকে মাতোয়ারা হলে চলবে না। তাকে ঠিকই বন্দরে পৌছাতে হবে। গভীর সমুদ্রে চলা জাহাজের বিমূর্ত ম্যাপ ও ম্লাল আলোর নক্ষত্রগুলোই তার পথের দিশা দেয়। তাই তার গল্প কখনো গল্পবাণিজ্যের নতুন বন্দর আবিষ্কারের অভিজ্ঞতাও আমাদে দেয়। গল্পের কাহিনি ও কাঠামোর ভাঙা-চোড়ার মধ্যদিয়ে তিনি আমাদের নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেন। বোঝা যায় তিনি আমাদের আরো অনেক দিন এভাবে আন্দোলিত করবেন। এমন গল্পকারের কাছে গল্পের জন্য অপেক্ষা করা যায়।০

লেখক পরিচিতি
অলাত এহ্সান
মূলত গল্পকার। জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণীর মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ(ইন্টারমিডিয়েট) ও ঢাকা কলেজে(অনার্স-মাস্টর্স)। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু ও তা অব্যহত থাকলেও গল্পেই তিনি সিদ্ধ। প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।০
অলাত এহ্সান
মূলত গল্পকার। জন্ম ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার আরো ভেতরে, বারুয়াখালী গ্রামে। কঠিন-কঠোর জীবন বাস্তবতা দেখতে দেখতে বড় হয়ে ওঠা। পারিবারিক দরিদ্রতা ও নিম্নবিত্ত অচ্ছ্যুত শ্রেণীর মধ্যে বসত, জীবনকে দেখিয়েছে কাছ থেকে। পড়াশুনা করেছেন মানিকগঞ্জের সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ(ইন্টারমিডিয়েট) ও ঢাকা কলেজে(অনার্স-মাস্টর্স)। ছাত্র জীবন থেকেই বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া। কবিতা লেখা দিয়ে সাহিত্য চর্চা শুরু ও তা অব্যহত থাকলেও গল্পেই তিনি সিদ্ধ। প্রবন্ধ ও ফিচার লিখেন। প্রকাশিতব্য গল্পগ্রন্থ ‘পুরো ব্যাপারটাই প্রায়শ্চিত্ব ছিল’। প্রবন্ধের বই প্রকাশের কাজ চলছে।০
0 মন্তব্যসমূহ