কন্যার সঙ্গে যখন ছাদে হাঁটছিলাম

সরকার আমিন 

বিষাদের মতো বিষ আর হয় না। বিষাদ-বিষ নীল না ধূসর আমি জানি না, তবে গ্রাস করে ফেলে মন দেহ অন্তর। কিচ্ছু ভাল লাগে না। না মদ নামধু। না বন্ধু না শত্রু। না জল না স্থল। না বৃক্ষ না মেঘ।

আমার বন্ধু গল্পকার কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রেনটা কুমিল্লা যেতে না যেতেই মৃত্যু এসে পথ আগলাল। তিনি ঢলেপড়লেন ট্রেনের কামরায়। তিনি ছিলেন রেলওয়ের ডাক্তার। হাসতে হাসতে বলতে ভাল বাসতেন ‘ ট্রেনের লাইন দেখলে মন ভাল হয়ে যায়আমার।’
তিনি উচ্চ হাস্যের জন্য আমার কাছে বিখ্যাত ও গ্রহণযোগ্য ছিলেন। আধাটা কথা বলেই রিদমময় হাস্য উপহার দিতেন। তার চট্টগ্রামেরছবির মতো সুন্দর বাংলো বাড়িটাতে আমি কয়েকবার একদল বন্ধুসমেত অতিথি হয়েছিলাম। আমাদের উপস্থিতিতে তিনি উজ্জ্বল ছিলেন। তারপ্রেমিকা-স্ত্রীও আমাদের পরম যত্নের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। খাবার টেবিলে কথার চেয়ে হাসি বিনিময় হয়েছিল মনে হয় বেশি।
.
সেই বন্ধুটির মৃত্যু আমাকে বহুকাল পর বিষাদে রিক্ত করে দিল। মুন্নী ও আমার বাচ্চারা বলেছে আমাকে নাকি তারা এতটা বিষাদে ভরপুর হতেদেখেনি বহুকাল। আমি যখন ক্রমবর্ধমান বিষাদ কিছুতেই তাড়াতে পারছিলাম না তখন আমার বড় কন্যাকে বললাম, যৌথ, আমার সঙ্গে ছাদেযাবি? একটু হাঁটবি? তোর কাউন্সিলিং আমার দরকার।
.
কন্যার সঙ্গে ছাদে হাঁটছি। রাত বারোটা টারোটা হবে। যৌথকে বললাম, মা, মৃত্যুটাকে , মেনে নিতে পারছি না বোধ হয়, তাই বিষাদ থেকেও মুক্তহতে পারছি না রে।
যৌথ হাটতে হাটতে বলল, ‘বাবা, আমি কিন্ত মৃত্যুকে ভিন্নভাবে দেখি।’
‘সেটা কেমন?’
যৌথ বলল, “মৃত্যু মানে অনেকে মনে করে মরে যাওয়া। কবরে চলে যাওয়া। আসলে মৃত্যু তা না। কারো মন থেকে যখন কেউ সরে যায়, মৃত্যুআসলে তা। এই যে জাহাঙ্গীর আংকেলকে তুমি ভুলতে পারছো না, বার বার মনে করছো, মনে করতে পারছো, তার মানে তিনি তোমার কাছে মৃতনন।”
.
আমি হতভম্ব আমার কন্যার সহজ ব্যাখ্যায়। তাই তো। মৃত্যু মানে তো কাউকে ভুলে যাওয়া।
কন্যার কাউন্সিলিং সফল হলো। জাহাঙ্গীর ভাই, আপনি তো আমার কাছে মৃত নন। মনে হলো, আমাদের দেহ গত হয়ে গেলেও আমরা নিশ্চয়ইকারো না কারো মনে বেঁচে থাকব। মৃত্যূ এই অর্থে ফর্মের বদল।
আমার মন ভাল হয়ে যেতে লাগল। যৌথ, তোকে ধন্যবাদ কন্যা আমার।!
.
10/3/2015

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ