১. আবার দেখা
আবার দেখা অঞ্জলিদি টেলিফোন অপারেটার। ওর চোখে কালো চশমা। উনি অন্ধ। ওঁর সঙ্গে আমি মাঝে মাঝে গল্প করি।
আমার একটা কবিতা বের হল কবিতা সভা পত্রিকায়। অঞ্জলিদিকে বললাম। উনি বললেন কই, দেখি-দেখি। কবিতার গায়ে হাত বুলোলেন অঞ্জলিদি।
পিকনিক ঠিক করলাম গড়চুমুকে। অঞ্জলিদিও গেলেন। হাতে লাঠি।
অন্ধদের যেমন থাকে। বেশ বড়ো একটা বটগাছ। অনেক পাখি আর কাঠবেড়ালি। একটা হনুমান দেখে আমি বললাম, আইব্বাস, হনুমান…।
অঞ্জলিদি বললেন, আমাকেও দ্যাখা…।
বাংলোর যিনি কেয়ারটেকার, তাঁর নাম মিলন বেরা। তিনিও অন্ধ। মাঝবয়সি। বাংলোটা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখেছেন উনি। ফুলের বাগান করেছেন। উনি আমাদের ফুল দেখালেন। অঞ্জলিদি বললেন, দারুণ জিনিস দেখালেন।
এবার আমরা ফিরব। কেয়ারটেকার বললেন আবার দেখা হবে, কেমন…।
অঞ্জলিদি বললেন কলকাতায় এলে দেখা করবেন।
মিলন বেরা কলকাতায় এসেছেন এখন অঞ্জলিদির ঘরে। ওদের দেখা হল। কথা হল।
মিলন বললেন – আবার কবে দেখা হবে?
২. কথা
আমি বনগাঁ লাইনের গোবরডাঙা শ্যামসুন্দর বিদ্যামন্দিরের মাস্টার। চারটে ছ’য়ের ডাউন বনগাঁ লোকালে উঠে বাড়ি ফিরি। একটা নির্দিষ্ট কামরা আছে আমাদের। মছলন্দপুর থেকে দুজন মাস্টারমশাই ওঠেন। ওই দুজনের জন্য জায়গা রাখি।
যে কামরায় উঠি, সেই কামরার জানালার ধারে মুখোমুখি সিটে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা বসেন। ভদ্রলোক বই পড়েন, ভদ্রমহিলাও বই পড়েন। ভদ্রলোকটি কী বই পড়েন আড়চোখে দেখেছি। রামকৃষ্ণ কথামৃত, ভারতের সাধক, চৈতন্যচরিতামৃত এইসব। ভদ্রলোকটির বয়েস ষাটের মতো, ভদ্রমহিলারও প্রায় ওরকম। ভদ্রলোকের মাথায় টাক, ভদ্রমহিলার মুখে শ্বেতির চিহ্ন। ওরা দুজনে একই কামরায়, একই ট্রেনে বহুদিন। ভদ্রমহিলাও পড়েন। নবকল্লোল, বুদ্ধদেব গুহ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা…। কোনোদিনই কথা বলতে দেখিনি ওদের। ভদ্রমহিলা হৃদয়পুর স্টেশনে নেমে যান। স্টেশনে ট্রেনটা ঢুকবার একটু আগে ভদ্রমহিলা সিট ছেড়ে উঠে রোজই বলেন – এসে গেলাম, আসি। আবার কাল কথা হবে কেমন?
ভদ্রলোক বই থেকে চোখ তুলে বলেন হ্যাঁ, আবার কাল কথা হবে।
3 মন্তব্যসমূহ
দেখা হলো তো,
উত্তরমুছুনকতো কথা তবু বাকি।
আবার দেখা এবং কথা। দুটি গল্পই ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন'অণুগল্প'। দুটোই অসামান্য। এর আগে গল্পকারের একটি অণুগল্পগ্রন্থ পড়েছিলাম, অভিযান পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত। বইটা অসামান্য।
উত্তরমুছুন