একদিন ভোরে একটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ছুটে গেলাম বাবার কাছে। মা-র চেয়ে বাবার সাথে সখ্য আমার বরাবরই বেশি। কাজেই আমার কোথাও কিছু ঘটলে বাবার কানেই সবার আগে পৌঁছায়। সেদিনের ঐ স্বপ্নটার কথা বাবাকে না বললেই না। স্বপ্নের হয়েছে এই এক জ্বালা-- চোখ জোড়া মেলতে না মেলতেই অর্ধেকটা গায়েব। মনে হয় কি যেন ঘটেও ঘটেনি। বাবা তখন কেবলই কাগজে মনটা চুবিয়েছেন। এতো ভোরে কাগজ আসে না। আসলেও বাবা তোয়াক্কা করেন না, তাঁর অভ্যাস খবর বাসি করে তারপর পড়তে বসা। আমার দাদা বাড়ি ছিল গ্রামে, তখন একদিন পর গ্রামে খবরের কাগজ পৌঁছাত। ফলে বাবা এভাবেই পেপার পড়ে অভ্যস্ত। আমি যে তাঁর শরীর ঘেঁসে দাঁড়িয়েছি, সেটা তিনি দেখেও না দেখার ভান করলেন। এত সকালে যে নিজ থেকে উঠি না, সেটা তিনি ভাল করেই জানেন। কাজেই ভেবেছেন, আমি দৃষ্টিভ্রম, এমনিতেই চলে যাব।
‘বাবা, একটু শুনবে? শুনতে তোমাকে হবেই।’ আমি এমন করে বললাম যেন যে মানুষটি আমার সামনে বসে আছেন তিনি আমার বাবা নন, আমিই তার বাবা।
‘না শুনে যখন উপায় নেই, তখন বলে যা।’ বাবা আমার দিকে না তাকিয়েই বললেন।
‘আমি খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখেছি।’
‘হুম।’ বাবা কাগজের ভেতর থেকে বললেন। বুঝলাম, আমার স্বপ্ন শুনবার অত তাড়া নেই তার। তখন আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসতে পারলেই ভাল লাগতো, কিন্তু ঐ ভালোলাগা বেশিক্ষণ টেকসই হবে না ভেবে আমাকেই আগ বাড়িয়ে বলতে হলো।
‘শোনো, স্বপ্নে দেখলাম দাদী উঠোনের মাঝে কুয়ো খুঁড়ছে। আমরা সবাই কতো বারণ করছি, কিন্তু কে শোনে কার কথা! তুমি তো রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়েই গেলে। মাও খুব রাগ করলো। দাদির কা- দেখে আমিই কেবল মজা পাচ্ছিলাম। তারপর দেখি কি-- আমি কুয়ো থেকে পানি তুলছি, দাদী গোসল করবে বলে। বালতি সেকি ভারী! উঠতেই চায় না, আমারও জেদ চড়ে গেল-- তুলে দেখি, বালতির ভিতরে যড়সড়ো হয়ে দাদী বসা। মৃত। আমি চেঁচিয়ে উঠেছি আর অমনি ঘুম ভেঙ্গে গেল।’
‘হুম। যা, আর ঘুমানোর দরকার নেই। হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বস গে। মা-কে বল আমাকে এককাপ চা দিতে।’ বাবা শেয়ারের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে বললেন। শেয়ার বাজারে বাবার কোনো লেনদেন নেই। বাবার ঢাকায় এক বন্ধু আছে, আজিজ-অ্যাঙ্কেল, উনি শেয়ারের কারবার করে নাকি রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেছেন। রীতিমতো আঙুল ফুলে কলাগাছ! একবার আমাদের এখানে বেড়াতে এসেছিলেন, বাবাকে হাতে-কলমে শেয়ার ব্যবসা বুঝিয়েছেন, তারপর থেকেই এই পাতাটা বাবা বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। একবার কিছু টাকা গুছিয়েওছিলেন, মা ছাগল কিনে ফেলেছে, একজোড়া, আমার আকিকার জন্যে। কতদিন থেকে আকিকা আকিকা শুনছি, এবার ফাইনালি হচ্ছে।
‘এটা খুব বাজে স্বপ্ন না, বলো? দাদী মা’র সঙ্গে রান্নাঘরে, তাকে কি একটু সাবধানে থাকতে বলবা? তুমি বললে শুনবে।’
‘স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি হয় না। দাদীকে কিছু বলবার দরকার নেই। কুয়ো খোঁড়ার আইডিয়াটা তার মনে ধরে যেতে পারে।’
স্বপ্ন যে সত্যি হয় না, সে তো আমিও জানি। হলে কবেই আমি কলেজ পাশ করে এতদিনে চাকরিতে লেগে যেতাম! ডাক্তার হতাম, ইঞ্জিনিয়ারও হতাম-- কারণ বাবার স্বপ্ন আমি ইঞ্জিনিয়ার হই, মায়ের ডাক্তার। তাদের এই চাওয়ার পেছনে অবশ্য সামান্য হেতু আছে। বাবার বাবা চেয়েছিলেন তার বড় ছেলে, মানে আমার বাবা, বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে, সেই আমলে তার মাথায় ইঞ্জিনিয়ারের আইডিয়াটা কিভাবে আসল, সেটি অবশ্য ভাববার বিষয়। বাবা শেষপর্যন্ত হলেন মানুষ গড়ার ইঞ্জিনিয়ার-- স্কুলমাস্টার। আর মায়ের কেসটা বেশ মর্মস্পর্শী। ভুল চিকিৎসার কারণে আমার নানীর কঠিন একটা ব্যধী হয়েছিল। স্পেসিফিক কি রোগ জানি না, মায়ের মুখে সবসময় ‘আকড়’ ‘আকড়’ শুনে এসেছি, ব্যবকরণ ঘেটে তার অর্থ জেনেছি ‘কঠিন’। নানী মরার আগে সবসময় বলত, ভালো ডাক্তার পেলে আমি মরতাম না, যদিও তখনো তিনি মরেননি। মা তখনই পণ করেন, ছেলে হলে ডাক্তার, মে হলে জামায় ডাক্তার।
আমি আর বাবার সাথে কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম। স্কুলে যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছি এমন সময় বাবার সাথে দাদীর তুমুল আকারে বেধে গেল। দাদার মৃত্যুবার্ষিকী দাদী চান গ্রামের বাড়িতে করতে, বাবার ইচ্ছে তার উল্টোটা। আমি তাদের ছোটো মানুষের মতো ঝগড়া করা দেখে বেশ মজা পাচ্ছিলাম। হাসতে হাসতে স্কুলে চলে গেলাম। ততক্ষণে স্বপ্নের কথা মন থেকে ক্লিন বোল্ড, মনে করতে চাইলেও আর ঠিক ঠিক মনে করতে পারবো না।
টিফিন শেষ করে সবে ক্লাসে ঢুকেছি, এমন সময় খবরটা গেল-- দাদী বাথরুমে পড়ে বড়রকম আঘাত পেয়েছে। আমি হেড স্যারকে বলে বাড়ি চলে আসলাম। বাড়ি এসে দেখি-- কান্নাকাটির তুমুল হিড়িক পড়ে গেছে। দাদী আর নেই। এরপর আর বহুদিন স্বপ্ন দেখিনি। দেখলেও ঘুমের ঘোর কাটতে না কাটতেই তার রেশ কেটে গেছে। সেদিন একটু দেরিতেই ঘুমিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙ্গলও দেরিতে। শুক্রবার, কাজেই আমাকে কেউ ডাকবার প্রয়োজন বোধ করেনি। হয়ত আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতাম যদি ঐ আজব স্বপ্নটা না দেখতাম। যথারীতি ছুটে আসলাম বাবার কাছে। বাবাও যথারীতি বাসি খবর গোগ্রাসে গিলছেন।
‘বাবা?’ একবার ডেকে কোনো সাড়া পেলাম না।
‘বাবা?’ আবার ডাকলাম।
‘শুনছি তো! বল।’
‘খুব আজব একটা স্বপ্ন দেখলাম।’
‘বলে যা। শুনছি।’ বাবা জানেন আমি না বলে যাবো না।
‘দেখলাম, বিকেলে আমি আর তুমি বাজার করতে বেরিয়েছি। চারিদিক কেমন ঘোলা ঘোলা। বাড়ি ঘরগুলো খুব ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। গাছপালা সব কেমন বিবর্ণ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব রঙ কে বা কারা যেন ধুয়ে দিয়েছে। একবার দেখি রিকশা চালাচ্ছে একটা কঙ্কাল, আবার দেখি একটা রোবট। তুমি কোনো কথা বলছ না। আমি তোমাকে কত চিৎকার দিয়ে ডাকছি, তুমি গাই করছ না! একবার দেখি সমস্ত মানুষ কেমন শকুন হয়ে গেছে। আবার দেখি, চারিদিকে কুকুর আর কুকুর, মানুষ কোথায়! কুকুরগুলো কেমন জ্বীব বের করে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে, যেন মেলা দিন কিছু খায়নি। এখনই আমাদের গিলে খাবে। তুমি যে কি করে কিছু হয়নি এমন একটা ভাব নিয়ে বসে ছিলে, আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তোমার নীরবতা আমাকে ভয়ংকর একটা শব্দের মতো বিরতিহীন আঘাত করে চলেছিল। আমি ভীষণ ভয় পেয়ে তোমার হাতটা যেই ধরেছি আর অমনি তোমার শরীর আস্তে আস্তে গলে যেতে লাগলো। আর তখনই তো আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেল।’
বাবা কোনো কথা বললেন না।
‘বাবা? কিছু বলছ না যে!’
‘কাল খেলায় পাকিস্তান কেমন হারলো দেখলি। তুই বললি বাংলাদেশ পারবে না। দেখলি তো?’
‘বাবা, আমি তোমাকে একটা স্বপ্নের কথা বলছিলাম! আর বাংলাদেশ পারবে না, সে কথা তো আমি বলিনি; বলেছি, খেলাটা খুব জমবে।’
‘হুম’।
‘আমার স্বপ্নটা?’
‘স্বপ্ন কোনোদিন সত্যি হয় না। যাহ। এখন থেকে চিৎ হয়ে সুবি না। দেখবি, স্বপ্ন দেখা কমে গেছে। আর দাঁত মেজে শুবি, তাহলে এমন পাগলাটে স্বপ্ন দেখবি না।’
আমি হতাশ হয়ে চলে আসলাম। স্বপ্নের কথা যাতে বেমালুম ভুলে না যায়, এজন্যে ডায়রিতে দু’তিন লাইন লিখে রাখলাম। আমি দেখতে চাচ্ছিলাম-- দিনটাতে আদৌ কোনো পরিবর্তন আসে কিনা।
দিনের বেলাটা রোজকার মতোই গেল। পড়ন্ত দুপুরে হাফিজুল চাচার সাথে ঘুরতে বের হলাম। আমি তাকে হাফি চাচা বলে ডাকি। হাফি চাচা আমাদের বাড়ির মালিক। দোতলায় থাকেন। একাই থাকেন। একটা মেয়ে এসে রান্না করে রেখে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করেননি। কোনো ছেলে-মেয়ে নেই। লোকে বলে, হাফি চাচার নাকি শারীরিক সমস্যা ছিল তাই আর বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। মা-র মুখেও একই কথা শুনেছি। লোকটা যে ভাল এ-নিয়ে এলাকায় কেউ দ্বিমত পোষণ করবে না। বাবা ঘুরতে কম বেরোন, তাই হাফি চাচা মাঝে মধ্যে আমাকে বেড়াতে নিয়ে যান। উনি বাইরে থেকে গম্ভীর মনে হলেও আড়ালে বেশ রসিক মানুষ, এজন্যে আমাদের ঘোরাঘুরিটা জমে বেশ।
সেদিন আমরা বাড়ির কাছেই এক পার্কে গিয়ে বসলাম। হাফি চাচা মন দিয়ে তার ছেলেবেলার গল্প করছিলেন, আমিও মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম। এরই এক ফাকে আমাদের স্যান্ডেল জোড়া উধাও। হাফি চাচা হাসতে হাসতে বললেন, ‘অতি মনোযোগী হলে হিতে বিপরীতও হতে পারে।’ দুরত্ব পায়ে হাঁটার হলেও, স্যান্ডেল না থাকায় আমরা রিকশাই চড়ে বাড়ি ফিরলাম। ভাড়া নিয়ে রিকশাচালকের সাথে চাচার বাধলো এক ক্যাচাল। হাফি চাচা দশ টাকার এক টাকাও বেশি দেবেন না। আর রিকশাচালক গো ধরে আছে, বিশ টাকা নিয়েই শুনবে। তার মেয়ের নাকি বিয়ে, জামাই বিশ হাজার টাকা নেবে, তাই সে ক’টাকা ধরে চাচ্ছে।
‘এত্তগুলান ট্যায়া জোগাড় করতি হবি। তাই স্যার এ কয় মাস রেকশা থেকি নামিনি।’ রিকশা চালক অতি বিনয়েস সাথে বলে।
আমার আবার সব কিছুতে আগ্রহ বেশি, শেষ পর্যন্ত কে যেতে না দেখে সরছি না।
‘তুই যেটা দিবি, সেটা যৌতুক, বুঝলি? এটা অন্যায় কাজ, আর আমি জেনেশুনে দিল দরিয়া সেজে তোর সেই অন্যায়ে শায় দিতে পারব না। অন্য কারণ নিয়ে আসিস।’ এই বলে চাচা রিকশার ছিটের উপর দশ টাকার নোটখানা রেখে হাঁটা জুড়লেন। আমিও হাঁটা দিলাম পিছু পিছু।
সন্ধ্যায় আমি আর বাবা বসেছিলাম। বাবা চা পান করছিলেন আর চিবোচ্ছিলাম মুড়ি।
‘এই শুনেছ?’--এমন সময় মা’র জোরকার প্রশ্ন।
‘শুনেছি তো অনেক কিছু, আবার অনেক কিছুই শুনিনি! তুমি কোনটার কথা বলছ?’ বাবার রোজকার উত্তর।
‘গত বছর পাগলি মেয়ের বিয়ে দিলো না ছয়মন, আমি তখনই বললাম-- পাগলী মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে, দেখো কোনো কাহিনী আছে। জানা গেল, ছয়মন গেছে হাসপাতালে, পেট ফেলতে! ফললো তো আমার কথা?’
‘ও, এটা আমি জানতাম না। দুপুরে যে মফা-মাস্টারের মেয়েকে ছোড়ারা এসিড মেরেছে, সেটা শুনলাম। এই রাতে তোমার স্পেশাল খিচুড়ি আর ভুনা গরুর মাংস করো না, আয়েশ করে খাই।’ বাবা খুব সুন্দর করে একটা কথার মধ্য আরেকটা কথা ঢুকিয়ে দেন। মূল প্রসঙ্গটা খুব সহজেই ছিটকে যায়। এটা তিনি ইচ্ছে করে করেন, না স্বভাবদোষে--ধরা যায় না। রাতে আমরা বেশ আয়েশ করে ভুনা মাংস আর খিচুড়ি খেলাম। দিনটা আর পাঁচটা দিনের মতো খুব সাধারণ গেল। গতরাতের স্বপ্নের সাথে কোনোভাবেই মিলল না। স্বপ্ন যে সত্যি হয় না, সে তো আগে থেকেই জানতাম।
বছরখানেক পরের কথা। সেদিন কি জন্যে যেন স্কুল বন্ধ ছিল। আমি দুপুরে খেয়ে-দেয়ে কেবল ঘুমিয়েছি, চোখের পাতা সেটে আসতেই দেখলাম-- আমি একটা কালো অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতর তলিয়ে যাচ্ছি, এমন সময় একটা অচেনা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো-- ফিরে আয়। তোর বাবা চাপা পড়ে মারা গেছে। তারপর গুহার ভেতরে ঘুরে-ফিরে কে যেন বলতেই থাকলো-- চাপা পড়ে মারা গেছে! আমি ধড়ফর করে উঠে পড়লাম। বাবা স্কুলের খাতা দেখায় ব্যস্ত ছিলেন। আমি কাছে যেতেই বললেন-- ‘বিরক্ত করিস না। মাথার ওপর অনেক চাপ।’
‘এই তো, এই কথায় তো বলতে এসেছি। খুব বাজে স্বপ্ন বাবা। তোমাকে বলা ঠিক হবে কিনা, কিন্তু না বলে থাকতেও পারবো না যে!’
‘অত ঢঙ না করে বলে ফেল। হাতে অনেক কাজ। বহুবার বলেছি, স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। তাও বল শুনি, না শুনিয়ে ছাড়বি না যখন।’ বাবা আমাকে একবার দেখে নিয়ে বললেন। আমি বাবাকে স্বপ্নের কথা জানালাম। শোনামাত্রই তার মুখটা শুকিয়ে খটখটে এঁটেল মাটির মতো হয়ে গেল। হাতের কলম আর নড়ছে না।
‘বেশ। ভাগ এখন।’ তিনি যে স্বপ্নটিকে আমলে নেননি সেটা বোঝানোর বেশ চেষ্টা করলেন।
‘বাবা, স্বপ্ন কখনই সত্যি হয় না। তোমার কোনো স্বপ্ন আজ অবধি সত্যি হয়েছে ফলেছে, বলো?’ আমিও বাবাকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। বাবা হাতের কাজ বন্ধ করে উপরের দিকে একবার তাকালেন। আমাদের বাসাটা ছিল অনেক দিনের পুরানো, হাফি চাচার দাদার হাতে তোলা। একদিকটা চুন-সুড়কির গাঁথুনি, অন্যদিকটা মাটির। ছাদে স্থানে স্থানে ফাটল ধরে গেছে। আমরা উঠে থেকেই দেখছি। কার্নিসের উত্তর কোণার কয়েকটি ইট খসে গেছে। প্রতিটা রুমেরই কিছু অংশ লোনা ধরা। বাবা কি যেন ভেবে কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। বললেন-- ‘মাকে বলিস, ফিরতে রাত হবে’। সমস্ত বিকেল মাথায় এই পড়ে সেই পড়ে করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে বেশ রাত করে বাসায় ফিরলেন।
রাত দু’টার দিকে ঘটলো দুর্ঘটনাটা। একটা চক্কর, এরপর সহসা পিলে চমকানো শব্দ। ভূমিকম্প ভূমিকম্প বলে চিৎকার দিয়ে আমরা সবাই বাইরে বের হয়ে আসলাম। সবার আগে আগে আসলেন বাবা। হাঁপাতে হাঁপাতে বুক ধরে বসে পড়লেন।
ঐরাতেই ছাদচাপা পড়ে মারা পড়লেন হাফি চাচা।
লেখক পরিচিতি
মোজাফ্ফর হোসেন
গল্পকার। অনুবাদক। প্রবন্ধকার।
0 মন্তব্যসমূহ