কামাল রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইংল্যান্ড প্রবাসী। আট দশকের গোড়া থেকেই সাহিত্যচর্চা করছেন। তার ক্ষেত্র মূলত কথাশিল্প। কবিতা অনুবাদও করছেন। ছোটকাগজ সম্পাদনার সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বাস্তবকে একেবারে কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চান। তার লেখায় রাজ্যনীতি, রাজনীতি, সমকালীন বাস্তবতা উঠে আসে। তার দুটি গল্পগ্রন্থ আর তিনটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে।
উপন্যাস :
১. তাজতন্দুরি, বইমেলা ২০১১, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা;
২. ঝুমপাহাড়, বইমেলা ২০১২, রোদেলা প্রকাশনী, ঢাকা
৩. অন্য আলো, বইমেলা ২০১৩, প্রকৃতি প্রকাশনী, ঢাকা
গল্পগ্রন্থ : ১. শীতের আপেল ও কমলা, বইমেলা ২০১২ ধ্রুপদ প্রকাশনী, ঢাকা। ২. স্টোনহেঞ্জ, বইমেলা ২০১৩,ধ্রুপদ প্রকাশনী, ঢাকা।
সম্পাদক : ১৪০০
সম্পাদক (২টি সংখ্যার) : কালধারা
বাংলাদেশের পুরোনো গল্পকারদের নতুন গল্প কেন যেন আর আকর্ষণ করে না আমাকে। এঁদের গল্পের ক্রমোত্তরণ বা ধারাবাহিকতা কীভাবে ও কেন ক্ষুণ্ন হয় বুঝতে চেয়ে প্রতিতুলনায় হেরম্যান হেসের ‘স্টোরিজ অব ফাইভ ডিকেডস’এর গল্প সঙ্কলনটি নতুন করে পড়েছি। একজন গল্পকারের উত্তরণের বিষয়টি কীভাবে গড়ে ওঠে ওটাও বোঝার জন্য। অবাক হয়েছি। আমাদের প্রবীণদের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়ার অনুষঙ্গটি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি।
হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হক, সেলিনা হোসেনদের শুরুর লেখা ও বর্তমান সময়ের লেখার মধ্যে ক্রমোত্তরণের বিষয়টা পাই না। কোনো দিকেই না। এমনকি শুরুর দিকের উজ্জ্বলতা বা চাকচিক্যও না। আমার অক্ষমতা হয়তো। ব্যতিক্রম ছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, কায়েস আহমদ ও আরো একদু’জন। এদের গল্পের প্রকৃত মান ধরে রাখতে পেরেছিলেন এরা। নিজের নামের উপর দিয়ে কোনো কিছু চালিয়ে দেননি। আমাদের স্তাবকেরাও আগে উল্লেখিত লেখকদের নামের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়ার বিষয়টা ঘেঁটে দেখেননি। মাহমুদুল হক ও কায়েস আহমদের নির্মাণকে সম্ভবত এখনই প্রত্মসাহিত্য বানিয়ে ফেলেছি আমরা। শুরুতে যে সম্ভাবনা নিয়ে আসি আমরা স্তাবক ও তথাকথিত পৃষ্ঠপোষক ও পৃষ্ঠতোষকদের কল্যাণে সেসবকে সম্ভাবনা পর্যায়েই রেখে দেই। নাসরীন জাহান যে সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলেন তা কি এখন আছে? সুশান্ত মজুমদার বা মঞ্জু সরকাররাও জীবন্ত জীবাশ্মে পরিণত করেছেন নিজেদের। কাজল শাহনেওয়াজ এক ‘কাছিমগালা’ শেয়ালের কুমীরছানা দেখানোর মতো বেশ অনেকদিন দেখিয়েছেন। এরকম আরো আছেন বেশ ক’জন। আরো পরের গল্পকারেরা এত বেশি পুরস্কারপ্রত্যাশী যে লেখালেখির চেয়ে ওদিকটায় ওদের পারঙ্গমতা বেশি।
নতুনদের গল্প অনেক পড়ি। অনেককেই বেশ উজ্জ্বল মনে হয়। আমাদের মানসিক অবস্থানের জন্য কারো নাম উল্লেখ না করাই ভালো।
উপন্যাস :
১. তাজতন্দুরি, বইমেলা ২০১১, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা;
২. ঝুমপাহাড়, বইমেলা ২০১২, রোদেলা প্রকাশনী, ঢাকা
৩. অন্য আলো, বইমেলা ২০১৩, প্রকৃতি প্রকাশনী, ঢাকা
গল্পগ্রন্থ : ১. শীতের আপেল ও কমলা, বইমেলা ২০১২ ধ্রুপদ প্রকাশনী, ঢাকা। ২. স্টোনহেঞ্জ, বইমেলা ২০১৩,ধ্রুপদ প্রকাশনী, ঢাকা।
সম্পাদক : ১৪০০
সম্পাদক (২টি সংখ্যার) : কালধারা
এ বছরের গোড়ার দিকে কথাসাহিত্যিক কামাল রহমানকে গল্পের সালতামামি করার জন্য প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছিল। ব্যাস্ত থাকার কারণে সে সময়ে উত্তরগুলো পাঠাতে পারেননি। শুধু সালতামামি নয়--সঙ্গে তিনি তার নিজের লেখালেখি ও বাংলাদেশের কথাসাহিত্য নিয়েও কিছু গুরুত্বপুর্ণ কথা বলেছেন।

গল্পপাঠ
২০১৫ সালে কত সংখ্যক গল্প পড়েছেন?
কামাল রাহমান
শ’খানেক তো হবেই।
গল্পপাঠ
কোন কোন মাধ্যম থেকে গল্পগুলো পড়েছেন?
কামাল রাহমান
গল্পপাঠ
কোন কোন গল্পকারের গল্প পড়েছেন?
কামাল রাহমান
সমসাময়িক কিছু প্রায়-তরুণের ইংরেজি গল্প পড়েছি। এদের মধ্যে রাজীব বালাসুব্রমানিয়াম ও ডেজ ওয়াইঅ্যাটের বিষয় উল্লেখ করতে পারি। রাজীবের একটা সাক্ষাতকার নিয়েছি। ‘ঢাকা রিভিউ’ ওয়েবজিনে ছেপেছে ওটা। ডেজের কিছু গল্প নিয়েও কাজ করছি। আধুনিক চেক গল্প সঙ্কলন ‘দিস সাইড অব রিয়্যালিটি’র গল্পগুলো পড়েছি। ওগুলোর একটার অনুবাদ ‘কালি ও কলমে’ ছাপা হয়েছিল। চমকে দেয়ার মতো গল্পগুলো। কানাডার ম্যাভিস গ্যালান্টের কিছু গল্প পড়েছি। অসাধারণ মনে হয় ওর গল্প। বাংলাদেশের পুরোনো গল্পকারদের নতুন গল্প কেন যেন আর আকর্ষণ করে না আমাকে। এঁদের গল্পের ক্রমোত্তরণ বা ধারাবাহিকতা কীভাবে ও কেন ক্ষুণ্ন হয় বুঝতে চেয়ে প্রতিতুলনায় হেরম্যান হেসের ‘স্টোরিজ অব ফাইভ ডিকেডস’এর গল্প সঙ্কলনটি নতুন করে পড়েছি। একজন গল্পকারের উত্তরণের বিষয়টি কীভাবে গড়ে ওঠে ওটাও বোঝার জন্য। অবাক হয়েছি। আমাদের প্রবীণদের সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়ার অনুষঙ্গটি কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছি।
হাসান আজিজুল হক, সৈয়দ হক, সেলিনা হোসেনদের শুরুর লেখা ও বর্তমান সময়ের লেখার মধ্যে ক্রমোত্তরণের বিষয়টা পাই না। কোনো দিকেই না। এমনকি শুরুর দিকের উজ্জ্বলতা বা চাকচিক্যও না। আমার অক্ষমতা হয়তো। ব্যতিক্রম ছিলেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, কায়েস আহমদ ও আরো একদু’জন। এদের গল্পের প্রকৃত মান ধরে রাখতে পেরেছিলেন এরা। নিজের নামের উপর দিয়ে কোনো কিছু চালিয়ে দেননি। আমাদের স্তাবকেরাও আগে উল্লেখিত লেখকদের নামের উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়ার বিষয়টা ঘেঁটে দেখেননি। মাহমুদুল হক ও কায়েস আহমদের নির্মাণকে সম্ভবত এখনই প্রত্মসাহিত্য বানিয়ে ফেলেছি আমরা। শুরুতে যে সম্ভাবনা নিয়ে আসি আমরা স্তাবক ও তথাকথিত পৃষ্ঠপোষক ও পৃষ্ঠতোষকদের কল্যাণে সেসবকে সম্ভাবনা পর্যায়েই রেখে দেই। নাসরীন জাহান যে সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেছিলেন তা কি এখন আছে? সুশান্ত মজুমদার বা মঞ্জু সরকাররাও জীবন্ত জীবাশ্মে পরিণত করেছেন নিজেদের। কাজল শাহনেওয়াজ এক ‘কাছিমগালা’ শেয়ালের কুমীরছানা দেখানোর মতো বেশ অনেকদিন দেখিয়েছেন। এরকম আরো আছেন বেশ ক’জন। আরো পরের গল্পকারেরা এত বেশি পুরস্কারপ্রত্যাশী যে লেখালেখির চেয়ে ওদিকটায় ওদের পারঙ্গমতা বেশি।
নতুনদের গল্প অনেক পড়ি। অনেককেই বেশ উজ্জ্বল মনে হয়। আমাদের মানসিক অবস্থানের জন্য কারো নাম উল্লেখ না করাই ভালো।
গল্পপাঠ
এর মধ্যে ভালো লাগা গল্পগুলোর কয়েকটির নাম করুন। গল্পগুলো ভালো হয়ে উঠেছে কি কি কারণে সেগুলো উল্লেখ করুন।
মূলত উপন্যাস লিখি। গল্প আমার হয় না। তারপরও লিখতে হয় নিজের উপস্থিতিটা ধরে রাখার জন্য। এত কম পাঠক আমার যে দু’তিন বছর পর একটা উপন্যাস দেখলে পাঠক হয়তো নামটাও আর মনে করতে পারবে না। দু’ধাপে প্রায় পঁচিশ বছর লেখালেখির বাইরে থেকে নামটি নিজেই ভুলে গেছি প্রায়। তৃতীয় ধাপে এসে এখন আর বেশি সময় বাইরে থাকার ইচ্ছে হয় না। ফলে গল্প লেখার চেষ্টাটা অব্যাহত রাখতে হয়। যদিও এখনো সেই সব পুরোনো গল্পগুলোই ঘষেমেজে চালিয়ে নিচ্ছি।
কামাল রাহমান
ম্যাভিস গ্যালান্টের ‘স্প্যাক্স আইডিয়া’ , সুজানা ব্রাভকোভার ‘দ্য স্লটারিং’, ডেজ ওয়াইঅ্যাটের ‘লার্নিং টু ফ্লাই’, রাজীব বালাসুব্রামাণিয়ামের ‘দ্য ড্রিমার’, মনিরা কায়েসের ‘১০০ বছরের নিঃসঙ্গতা অথবা রাণুর তৃতীয় ভাগ’, মাজুল হাসানের ‘টিয়ামন্ত্র’, নাসরীন জাহানের ‘টবের অশত্থ’, সঞ্জীব চৌধুরীর ‘ল্যাম্পপোস্ট’, কুলদা রায়ের ‘দি জায়ান্ট গ্রেপ’, স্বকৃত নোমানের, ‘বালিহাঁসের ডাক’, মালেকা পারভীনের ‘ছবি...’, মৌসুমী কাদেরের ‘তেলাপোকা’, সুমন রহমানের ‘নিরপরাধ ঘুম’ . . . এরকম অনেক গল্পের নাম করা যায়। এমুহূর্তে এ’কয়টা নাম মনে এল। একটু পরেই হয়তো অন্য অনেক নাম এসে যাবে। এবং এখান থেকে কিছু নাম বাদ যাবে। তাৎক্ষণিক স্মৃতি থেকে লেখা এরকম নাম নিয়ে অন্য ভাষার সাহিত্যিকেরা কিছু মনে করে না। কিন্তু বাংলাদেশের অনেকে নিজের নাম না দেখে লেখককে শত্রু ভাবা শুরু করে। এসব অর্থহীনতার জন্য এরকম প্রশ্ন ও উত্তর এড়িয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। যাহোক, এরকম অসংখ্য নাম প্রায় প্রতিদিন আমার পাঠতালিকায় যুক্ত হচ্ছে। এভাবে নাম উল্লেখ করার কোনো অর্থ আছে বলে আমার মনে হয় না। মূলত উপন্যাস লিখি। গল্প আমার হয় না। তারপরও লিখতে হয় নিজের উপস্থিতিটা ধরে রাখার জন্য। এত কম পাঠক আমার যে দু’তিন বছর পর একটা উপন্যাস দেখলে পাঠক হয়তো নামটাও আর মনে করতে পারবে না। দু’ধাপে প্রায় পঁচিশ বছর লেখালেখির বাইরে থেকে নামটি নিজেই ভুলে গেছি প্রায়। তৃতীয় ধাপে এসে এখন আর বেশি সময় বাইরে থাকার ইচ্ছে হয় না। ফলে গল্প লেখার চেষ্টাটা অব্যাহত রাখতে হয়। যদিও এখনো সেই সব পুরোনো গল্পগুলোই ঘষেমেজে চালিয়ে নিচ্ছি।
গল্প লেখাটা সত্যি কঠিন মনে হয় আমার কাছে। ফলে গল্প নিয়ে কিছু বলা এক ধরনের ধৃষ্ঠতা আমার জন্য। এটা হয়তো বলা যায় যে গল্পহীন গল্প, এন্টিগল্প, নিবন্ধগল্প, , , এসব একজন গল্পকারের শুরুর দিকের নিরীক্ষার জন্য কোনো কাজে আসলে আসতেও পারে। অন্তিমে গল্পের ভেতর গল্পটা থাকতে হয়। সবচেয়ে জরুরী গল্পের ভাষা, তারপর বয়ন, উপস্থাপন..এসব। একটা গল্পের ভালো হয়ে ওঠার জন্য এগুলো তো অবশ্যই জরুরী। কৌশল, আঙ্গিক, শৈলী এগুলো নিরেট কিছু না। গল্পের শুরু, শেষ, ক্লাইমেক্স, মোচড়, লেজমোচড়, ভরবিন্দু--এসব পুরোনো বিষয়-আশয় তো আছেই। সাহিত্যের শিক্ষকদের করে খাওয়ার জন্য এসবের উপযোগিতা নিশ্চয় রয়েছে। ভালো গল্পগুলোর খসড়াটা হয়ে যাওয়ার পর নির্মাণ পর্যায়ে এগুলোর প্রতিটি গুরুত্ব দিয়ে দেখে থাকেন গল্পকারেরা। এগুলোকে গুরুত্ব না দেয়ার কোনো কারণও নেই। আমার মনে হয় উপরের গল্পগুলোয় এসব উপাদান আছে।
গল্পপাঠ
সেরা গল্পটি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ বলুন।
কামাল রাহমান
কোনটিকে সেরা গল্প বলব বলুন? একটা বাগানের কোনো একটা ফুলকে যেমন ‘সবচেয়ে সুন্দর’ বলা কঠিন তেমনই হয়ে যায় বিষয়টা। এমন বলা যেতে পারে যে একটা থেকে আরেকটা ভালো, তারপর আরেকটা থেকে আরেকটা, এবং এগিয়ে যাবে এভাবে, , , হয়তো খুব সাময়িকভাবে কোনো একটা গল্পকে ভালো লেগে যায়। ওটা তো চিরন্তন না। যাহোক, ম্যাভিস গ্যালান্টের ‘স্প্যাকস আইডিয়া’ গল্পটি নিয়ে খুব সংক্ষেপে যদি বলি: ফ্রান্সের একনায়কতন্ত্র বিষয়ে লেখা অসাধারণ একটা গল্প। অবক্ষয়ী অভিজাততন্ত্রের বিষয়গুলো দক্ষতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্যের জন্য একনায়কতন্ত্রের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া কীভাবে পরিবর্তন ঘটায় তা দেখানো হয়েছে। একনায়কতন্ত্রকেও কোনঠাসা জনগণকে কেন মেনে নিতে হয় এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবিদের ভূমিকা শ্লেষাত্মকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে
গল্পপাঠ
আপনি কি মনে করেন এই গল্পগুলো বাংলাদেশের চিরায়ত গল্পগুলোর সমতুল্য বা তাদেরকে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে?
কামাল রাহমান
প্রশ্নটি সম্ভবত বাংলাদেশের গল্প নিরিখে করা হয়েছে। যদি সমসাময়িক গল্পের বিষয় হয়ে থাকে তাহলে বলা যায় অতীত ও নিকট অতীতে অসংখ্য কালোত্তীর্ণ গল্প বাংলায় লেখা হয়েছে। সেতুলনায় এখন ‘খুব ভালো’ গল্প কম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি ক্ষেত্রে যেমন অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তার বাইরে থাকা শিল্পসাহিত্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্যও কঠিন হয়ে পড়েছে। বেনিয়াযুগ সব কালেই ছিল। কিন্তু এতটা ন্যাংটো হয়তো ছিল না।
পুরোনো একটা প্রবাদ আছে, ‘পাত্তি দেখে কাঠের ঘোড়াও হা করে’। সাহিত্যিকেরা তো কাঠের ঘোড়াও না। প্রলোভনগুলো এড়ানো দায়। উচ্চমানের শিল্প যদি আশা করেন তাহলে তো প্রলোভনের উর্ধে উঠতে হবে। ওটা তো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রোপাগান্ডার শিল্পটাই আমাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। এক দেড় যুগ আগে দেখা গেছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, সচিব প্রভৃতি আমলারা একেকটা বলয় গড়ে তুলতো তথাকথিত সাহিত্য নির্মাণের আশায়। ওগুলো তো কালোত্তীর্ণ হয়নি। এখন আবার সাহিত্য সম্পাদকদের যুগ। এসবের বাইরে যে দু’দশজন নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে তাদের ভেতর কালোত্তীর্ণ হওয়ার মতো কিছু যদি থেকে থাকে তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভবিকালই ওসব খুঁজে নেবে।
গল্পপাঠ
বিদেশী গল্পের সঙ্গে এ গল্পগুলোর মানকে কিভাবে তুলনা করবেন?
কামাল রাহমান
বাংলাদেশের গল্পের বিষয়-আশয় এত বেশি আঞ্চলিক যে বিদেশী গল্পের সঙ্গে ওসবের তুলনা কঠিন। এমনকি গল্পের মর্যালও যদি ধরেন তাহলে বলুন তো বাংলা ভাষার কোন গল্পগুলো বৈশ্বিক মননশীলতার চাহিদা মেটাতে পারে? ঈশপের গল্পের যেমন সর্বজনীন আবেদন রয়েছে, জাতকের গল্পগুলোর কি তা আছে? অথচ ওগুলোর মান কি কোনো অংশে কম! সমসাময়িক গল্পের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। ফলে ‘খুব ভালো’ একটা বাংলা গল্প অন্য ভাষায় অনুবাদ করলেও ঐ ভাষার পাঠকের কাছে তা গৃহীত হয় না। কারণ অনেক। এসবের বিষয়, ভাব, শিল্প, দর্শন, কৌতুক, আমোদ, দুঃখ, ভাবাবেগ প্রভৃতির কোনোটাই অন্য ভাষার পাঠকের কাছে আগ্রহ তৈরি করে না।
0 মন্তব্যসমূহ