হই হই অল্প-দ্দা মে-এ-এ-এর...। অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ... লক্ষৌ টাকার মাআআ-নু-উউস কিনেছি। হই হই...
কাড়া নাকাড়া ড্রাম কঙ্গো করতাল সানাই একসাথে বেজে উঠে গান ছাপিয়ে। এখানে তালযন্ত্র গানের জন্য নয় বরং নাচকে জঙ্গি করে তোলার জন্য আর গানটা শুধু তাল আর নাচ শুরু করার জন্য
ছোটখাটো প্রিন্সেসদের একক আর দলীয় নাচের শেষে অনেকক্ষণ ধরে যন্ত্রগুলো হাইপিকে বাজতে থাকে। যন্ত্রের তালে তালে দর্শকরা যখন একেবারেই টলমল তখন ঝুপ করে সবগুলো যন্ত্র থেমে যায় আর মৃত্যুর শোকবার্তার মতো বশির ভাইয়ের গম্ভীর ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসে মাইকে-- সুপ্রিয় দর্শক ম-লী... সুপ্রিয় দর্শক ম-লী বলে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন বশির ভাই। তারপর আবার সরব হয় তার কণ্ঠ- সু-প্রিয় দর্শক ম-লী। সু-জলা সু-ফলা শস্য শ্যা-মলা এই দেশের প্রতিটি যাত্রামোদী দর্শক যার মোহনিয়-অতুলনীয় স্বর্গীয় সুধাময় নৃত্যে বিমোহিত উদ্বেলিত হয়ে উঠেন... যার নৃত্যগীতের ছন্দে যুবক-বৃদ্ধ সকলের দেহমন নেচে উঠে ছন্দের তালে... যার নৃত্যের তালে মাটির গভীরে কবরের অন্ধকারে নেচে উঠে মৃত মানুষের কঙ্কাল... যার নাচের প্রতীক্ষায় যাত্রার প্যান্ডেলে নাবালক শিশুটিও কান্না ভুলে তাকিয়ে থাকে আলো ঝলমল মঞ্চের দিকে... যার দেহ বল্লরি প্রতিটা পুরুষের মনে জাগায় অব্যক্ত কামনা আর প্রতিটা রমণীর বুকে দুঃখময় দীর্ঘশ্বাস... এবার আসছেন... এবার আসছেন সেই বহু প্রতীক্ষিত কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস... মিস লক্ষ্মী...
দুদ্দাড় করে আবার বেজে উঠে বাদ্য। অনেকক্ষণ চলতে থাকে সেই বাজনা। তারপর আবার হঠাৎ থেমে যায়। আবার শোনা যায় উচ্চগ্রামে বশির ভাইয়ের কণ্ঠস্বর-- প্রিয় দর্শক। আসছেন... আসছেন মিস লক্ষ্মী... লক্ষ্মী- লক্ষ্মী- লক্ষ্মী। কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস মিস লক্ষ্মী...
এবার বাদ্যের তালে তালে মঞ্চের লাইটগুলো জ্বলে নিভে তৈরি করে এক আলো আঁধারি। অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে এই খেলা। তারপর মঞ্চের দূরতম কোণে হঠাৎ আলো আঁধারির মধ্যে ঝড়ের বেগে দৌড়ে এসে কত্থকের ভঙ্গিতে দর্শকদের নমস্কার করে মঞ্চের মাঝখানে ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক অপূর্ব নর্তকী। চারপাশে তুমুল হয়ে উঠে দর্শকদের উল্লাস উচ্ছ্বাস তালি শিষ আর উদ্দাম বাজনা। কিন্তু নর্তকী দাঁড়িয়েই থাকে। এক সময় দর্শকদের উল্লাস থেমে যায়। থেমে যায় বাজনাও। এবার নর্তকী ফ্রিজ ভেঙে মাথা নিচু করে প্রণাম জানায় দর্শকদের। প্রথমে সামনে তারপর ডানে বামে পেছনে। তারপর এক ছোকরা এসে মাইক তুলে দেয় নর্তকীর হাতে। মাইক হাতে নিয়ে নর্তকী বাজনদারদের সাথে কিছু ইশারা বিনিময় করে এসে আবার দাঁড়ায় মঞ্চের ঠিক মাঝখানে। আবারও প্রায় ফ্রিজ। মাইকটা মুখের কাছে তুলে নিয়ে একটু হাসে। তারপর আস্তে করে গলা ছাড়ে- -হই হই অল্প দ্দামেএএএএর... অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ... লক্ষৌ টাকার মাআআ-নু-উউস কিনেছি...
কলিটা গাওয়ার সাথে সাথে দেরেরাং দেরেরাং দেরেরাং ধা বলে ঝাঁঝরের চারটা বাড়ি শোনা যায় শুধু। তারপর আবার নর্তকী ধরে- হই হই অল্প-দ্দা মে-এ-এ-এর....। অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ...
এবার পায়ের নূপুর দিয়ে মঞ্চের মধ্যে কয়েকটা বাড়ি দেয় আর সাথে সাথে বাজনদাররা শুরু করে তাদের ঝুমতানা বাজনা...
মাইক্রোফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে এইবার শুধু ঠোঁট নেড়ে গানটা গেয়ে যায় লক্ষ্মী। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নাচে তার। গানটা কবে কোন কালে শেষ হয়ে যায় কিংবা গানটা আদৌ আর শেষ করে না সে। একটা পর্যায়ে থেমে গিয়ে শুরু করে চোখ হাসি আর বুকের নৃত্য। মঞ্চের একেক পাশে গিয়ে চোখের একেকটা ইশারা করে আর হইহই করে উঠে সেই পাশের দর্শক। উড়ে উড়ে আসতে থাকে টাকার বান্ডিল। চোখের ইশারার সাথে মিস লক্ষ্মী যোগ করে ঠোঁটের মুদ্রা। সচ্ছল দর্শকরা হাতের মধ্যে নাচায় নোট। সেই সাথে লক্ষ্মী নাচায় তার বুক। দর্শক চুমু খায় টাকায়। লক্ষ্মী চুমু খায় হাতের তালুতে। লক্ষ্মী চোখ নাচিয়ে হাতের ইশারা করে আর তার শরীরে উড়ে এসে পড়ে সেই টাকা। লক্ষ্মী নাচে। চোখে ঠোঁটে বুকে নেচে ঘোরে চারপাশ। তারপর এসে ঠিক মাঝখানে দাঁড়ায়। বাজনার আওয়াজ কমে আসে। লক্ষ্মী তার শরীরটা বাঁকিয়ে মাথা আর বুক পুরোটা নিয়ে যায় পেছনে। এইবার একটু একটু করে নেচে উঠে তার হাঁটুর উপর থেকে রান দুটো। বাজনার আওয়াজ বাড়ে। লক্ষ্মী এবার নাচায় তার মাজা আর পেট। তাল বাড়ে। আবার নেচে উঠে দর্শক। পুরো শরীরটা পেছনে দুলিয়ে লক্ষ্মী আবারও ঘুরতে থাকে চারপাশের দর্শকদের দিকে। চারপাশ থেকে আবারও নেচে উঠে দর্শক। আবারও হই হুল্লুড় আবারও টাকার বান্ডিল। লক্ষ্মীর কোমর নাচে। নাচে নাভি। নাচে পেট। নাচে তার ফর্সা দুই রান। অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ পরে লক্ষ্মী সোজা হয়ে দাঁড়ায়। হালকা হয়ে আসে নাচ। নাচতে নাচতে মঞ্চ থেকে টাকগুলো কুড়ায়। তারপর একেবারে সোজা হয়ে মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে একটা প্রণাম করে দৌড় দেয় গ্রিনরুমের দিকে। থেমে যায় বাদ্য। শুরু হয় যাত্রার ঘোষণা। বেজে উঠে তে-নেনে-নেনে-নেনে তেনে-নেনে-না... যাত্রার মিউজিক। শুরু হয় পালা...
আজকে নাচতে চায়নি লক্ষ্মী। দল থেকে এক বছরের ছুটিও চেয়েছিল সে। কিন্তু অধিকারী বশির ভাই বায়না নিয়ে ফেলেছেন। আজকে যদি সে না নাচে তবে বকেয়া একটা টাকাও সে পাবে না পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বায়নাটা তিনি নিয়েছেন তারই নামে। তার নাচ আর সে নিজে গত দুই বছরে বশির ভাইয়ের ব্যবসার সবচে বড়ো সম্পদ। বায়না ধরা। বায়না ঠেকানো আর বায়নার টাকা তোলা। তিনটা কাজেই বশির ভাই তাকে সামনে ঠেলে দেন। দলের সাথে সে না আসলে বায়নার টাকা পাওয়া তো দূরের কথা জান নিয়ে ফিরতে পারবে না বশির ভাই। কারণ পালার সাথে লক্ষ্মীকে নিয়েও চুক্তি হয় বশির ভাইয়ের। ডিসি অফিস থেকে পালার পারমিশনও পাওয়া গেছে লক্ষ্মীর নামে...
মাঝরাতে পালার বিরতিতে ছোট ছোট প্রিন্সেসদের নাচের পরে বশির ভাইর ভরাট কণ্ঠ আবারও অনেক অনেক ভূমিকার পরে ঘোষণা করে লক্ষ্মীর নাম। এটা মাঝরাতের নাচ। এই নাচে পোশাক আরো ছোট হয়ে আসবে লক্ষ্মীর। এই নাচে মুদ্রাগুলো বদলে যাবে আদিমতার দিকে। এই নাচ মাতিয়ে রাখার। এই নাচ মাতিয়ে দেবার। এই নাচ সবকিছু ভুলিয়ে দেবার। এই নাচ যুবকদেরকে রাতে জাগিয়ে রেখে দিনে ঘুম পাড়িয়ে রাখার...
বশির ভাইর ঘোষণার পরে ঝুমতালে বেজে উঠে বাদ্যবাজনা। বাজতে থাকে। বাজতেই থাকে। কিন্তু মঞ্চ ফাঁকা। দর্শকরা হই হই করে উঠে। বশির ভাই আবাও দীর্ঘ লয়ে ভূমিকা দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। সে জানে লক্ষ্মী মাঝে মাঝে দর্শকদের আরো উত্তেজিত করার জন্য দেরিতে ঢোকে মঞ্চে। বশির ভাই অপেক্ষা করেন। আরো বিশেষণ জুড়ে দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। কিন্তু লক্ষ্মী নেই। একজনকে খোঁজ করতে পাঠান। কিন্তু সেও ফিরে আসে না। বশির ভাই আবাও ঘোষণা করে নিজেই এগিয়ে যান গ্রিনরুমের দিকে। গ্রিনরুমের এক কোনায় নাচের পোশাক পরে দুই পায়ের ফাঁকে গামছা চেপে বসে আছে লক্ষ্মী। বশির ভাই লক্ষ্মীকে তাড়া দেন মঞ্চে যাবার জন্য। সাজপোশাক আর মেকাপ পরা লক্ষ্মী তার ফ্যাকাশে মুখ তুলে তাকায় বশির ভাইর দিকে-- বশির ভাই। বাচ্চা গলে গেছে আমার...
তারপর ঠোঁট কামড়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে আরো শক্ত করে চেপে ধরে মেকাপ মোছার গামছা। যেন রক্ত গড়ালেও কোনোমতেই বাচ্চাটা না গলে আসতে পারে...
কাড়া নাকাড়া ড্রাম কঙ্গো করতাল সানাই একসাথে বেজে উঠে গান ছাপিয়ে। এখানে তালযন্ত্র গানের জন্য নয় বরং নাচকে জঙ্গি করে তোলার জন্য আর গানটা শুধু তাল আর নাচ শুরু করার জন্য
ছোটখাটো প্রিন্সেসদের একক আর দলীয় নাচের শেষে অনেকক্ষণ ধরে যন্ত্রগুলো হাইপিকে বাজতে থাকে। যন্ত্রের তালে তালে দর্শকরা যখন একেবারেই টলমল তখন ঝুপ করে সবগুলো যন্ত্র থেমে যায় আর মৃত্যুর শোকবার্তার মতো বশির ভাইয়ের গম্ভীর ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসে মাইকে-- সুপ্রিয় দর্শক ম-লী... সুপ্রিয় দর্শক ম-লী বলে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন বশির ভাই। তারপর আবার সরব হয় তার কণ্ঠ- সু-প্রিয় দর্শক ম-লী। সু-জলা সু-ফলা শস্য শ্যা-মলা এই দেশের প্রতিটি যাত্রামোদী দর্শক যার মোহনিয়-অতুলনীয় স্বর্গীয় সুধাময় নৃত্যে বিমোহিত উদ্বেলিত হয়ে উঠেন... যার নৃত্যগীতের ছন্দে যুবক-বৃদ্ধ সকলের দেহমন নেচে উঠে ছন্দের তালে... যার নৃত্যের তালে মাটির গভীরে কবরের অন্ধকারে নেচে উঠে মৃত মানুষের কঙ্কাল... যার নাচের প্রতীক্ষায় যাত্রার প্যান্ডেলে নাবালক শিশুটিও কান্না ভুলে তাকিয়ে থাকে আলো ঝলমল মঞ্চের দিকে... যার দেহ বল্লরি প্রতিটা পুরুষের মনে জাগায় অব্যক্ত কামনা আর প্রতিটা রমণীর বুকে দুঃখময় দীর্ঘশ্বাস... এবার আসছেন... এবার আসছেন সেই বহু প্রতীক্ষিত কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস... মিস লক্ষ্মী...
দুদ্দাড় করে আবার বেজে উঠে বাদ্য। অনেকক্ষণ চলতে থাকে সেই বাজনা। তারপর আবার হঠাৎ থেমে যায়। আবার শোনা যায় উচ্চগ্রামে বশির ভাইয়ের কণ্ঠস্বর-- প্রিয় দর্শক। আসছেন... আসছেন মিস লক্ষ্মী... লক্ষ্মী- লক্ষ্মী- লক্ষ্মী। কুইন অব দ্যা প্রিন্সেস মিস লক্ষ্মী...
এবার বাদ্যের তালে তালে মঞ্চের লাইটগুলো জ্বলে নিভে তৈরি করে এক আলো আঁধারি। অনেকক্ষণ ধরে চলতে থাকে এই খেলা। তারপর মঞ্চের দূরতম কোণে হঠাৎ আলো আঁধারির মধ্যে ঝড়ের বেগে দৌড়ে এসে কত্থকের ভঙ্গিতে দর্শকদের নমস্কার করে মঞ্চের মাঝখানে ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে এক অপূর্ব নর্তকী। চারপাশে তুমুল হয়ে উঠে দর্শকদের উল্লাস উচ্ছ্বাস তালি শিষ আর উদ্দাম বাজনা। কিন্তু নর্তকী দাঁড়িয়েই থাকে। এক সময় দর্শকদের উল্লাস থেমে যায়। থেমে যায় বাজনাও। এবার নর্তকী ফ্রিজ ভেঙে মাথা নিচু করে প্রণাম জানায় দর্শকদের। প্রথমে সামনে তারপর ডানে বামে পেছনে। তারপর এক ছোকরা এসে মাইক তুলে দেয় নর্তকীর হাতে। মাইক হাতে নিয়ে নর্তকী বাজনদারদের সাথে কিছু ইশারা বিনিময় করে এসে আবার দাঁড়ায় মঞ্চের ঠিক মাঝখানে। আবারও প্রায় ফ্রিজ। মাইকটা মুখের কাছে তুলে নিয়ে একটু হাসে। তারপর আস্তে করে গলা ছাড়ে- -হই হই অল্প দ্দামেএএএএর... অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ... লক্ষৌ টাকার মাআআ-নু-উউস কিনেছি...
কলিটা গাওয়ার সাথে সাথে দেরেরাং দেরেরাং দেরেরাং ধা বলে ঝাঁঝরের চারটা বাড়ি শোনা যায় শুধু। তারপর আবার নর্তকী ধরে- হই হই অল্প-দ্দা মে-এ-এ-এর....। অল্পদ্দামের নু-উপুর দিয়ে-এ-এ-এ...
এবার পায়ের নূপুর দিয়ে মঞ্চের মধ্যে কয়েকটা বাড়ি দেয় আর সাথে সাথে বাজনদাররা শুরু করে তাদের ঝুমতানা বাজনা...
মাইক্রোফোনটা ফিরিয়ে দিয়ে এইবার শুধু ঠোঁট নেড়ে গানটা গেয়ে যায় লক্ষ্মী। পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত নাচে তার। গানটা কবে কোন কালে শেষ হয়ে যায় কিংবা গানটা আদৌ আর শেষ করে না সে। একটা পর্যায়ে থেমে গিয়ে শুরু করে চোখ হাসি আর বুকের নৃত্য। মঞ্চের একেক পাশে গিয়ে চোখের একেকটা ইশারা করে আর হইহই করে উঠে সেই পাশের দর্শক। উড়ে উড়ে আসতে থাকে টাকার বান্ডিল। চোখের ইশারার সাথে মিস লক্ষ্মী যোগ করে ঠোঁটের মুদ্রা। সচ্ছল দর্শকরা হাতের মধ্যে নাচায় নোট। সেই সাথে লক্ষ্মী নাচায় তার বুক। দর্শক চুমু খায় টাকায়। লক্ষ্মী চুমু খায় হাতের তালুতে। লক্ষ্মী চোখ নাচিয়ে হাতের ইশারা করে আর তার শরীরে উড়ে এসে পড়ে সেই টাকা। লক্ষ্মী নাচে। চোখে ঠোঁটে বুকে নেচে ঘোরে চারপাশ। তারপর এসে ঠিক মাঝখানে দাঁড়ায়। বাজনার আওয়াজ কমে আসে। লক্ষ্মী তার শরীরটা বাঁকিয়ে মাথা আর বুক পুরোটা নিয়ে যায় পেছনে। এইবার একটু একটু করে নেচে উঠে তার হাঁটুর উপর থেকে রান দুটো। বাজনার আওয়াজ বাড়ে। লক্ষ্মী এবার নাচায় তার মাজা আর পেট। তাল বাড়ে। আবার নেচে উঠে দর্শক। পুরো শরীরটা পেছনে দুলিয়ে লক্ষ্মী আবারও ঘুরতে থাকে চারপাশের দর্শকদের দিকে। চারপাশ থেকে আবারও নেচে উঠে দর্শক। আবারও হই হুল্লুড় আবারও টাকার বান্ডিল। লক্ষ্মীর কোমর নাচে। নাচে নাভি। নাচে পেট। নাচে তার ফর্সা দুই রান। অনেকক্ষণ। অনেকক্ষণ পরে লক্ষ্মী সোজা হয়ে দাঁড়ায়। হালকা হয়ে আসে নাচ। নাচতে নাচতে মঞ্চ থেকে টাকগুলো কুড়ায়। তারপর একেবারে সোজা হয়ে মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে একটা প্রণাম করে দৌড় দেয় গ্রিনরুমের দিকে। থেমে যায় বাদ্য। শুরু হয় যাত্রার ঘোষণা। বেজে উঠে তে-নেনে-নেনে-নেনে তেনে-নেনে-না... যাত্রার মিউজিক। শুরু হয় পালা...
আজকে নাচতে চায়নি লক্ষ্মী। দল থেকে এক বছরের ছুটিও চেয়েছিল সে। কিন্তু অধিকারী বশির ভাই বায়না নিয়ে ফেলেছেন। আজকে যদি সে না নাচে তবে বকেয়া একটা টাকাও সে পাবে না পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। বায়নাটা তিনি নিয়েছেন তারই নামে। তার নাচ আর সে নিজে গত দুই বছরে বশির ভাইয়ের ব্যবসার সবচে বড়ো সম্পদ। বায়না ধরা। বায়না ঠেকানো আর বায়নার টাকা তোলা। তিনটা কাজেই বশির ভাই তাকে সামনে ঠেলে দেন। দলের সাথে সে না আসলে বায়নার টাকা পাওয়া তো দূরের কথা জান নিয়ে ফিরতে পারবে না বশির ভাই। কারণ পালার সাথে লক্ষ্মীকে নিয়েও চুক্তি হয় বশির ভাইয়ের। ডিসি অফিস থেকে পালার পারমিশনও পাওয়া গেছে লক্ষ্মীর নামে...
মাঝরাতে পালার বিরতিতে ছোট ছোট প্রিন্সেসদের নাচের পরে বশির ভাইর ভরাট কণ্ঠ আবারও অনেক অনেক ভূমিকার পরে ঘোষণা করে লক্ষ্মীর নাম। এটা মাঝরাতের নাচ। এই নাচে পোশাক আরো ছোট হয়ে আসবে লক্ষ্মীর। এই নাচে মুদ্রাগুলো বদলে যাবে আদিমতার দিকে। এই নাচ মাতিয়ে রাখার। এই নাচ মাতিয়ে দেবার। এই নাচ সবকিছু ভুলিয়ে দেবার। এই নাচ যুবকদেরকে রাতে জাগিয়ে রেখে দিনে ঘুম পাড়িয়ে রাখার...
বশির ভাইর ঘোষণার পরে ঝুমতালে বেজে উঠে বাদ্যবাজনা। বাজতে থাকে। বাজতেই থাকে। কিন্তু মঞ্চ ফাঁকা। দর্শকরা হই হই করে উঠে। বশির ভাই আবাও দীর্ঘ লয়ে ভূমিকা দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। সে জানে লক্ষ্মী মাঝে মাঝে দর্শকদের আরো উত্তেজিত করার জন্য দেরিতে ঢোকে মঞ্চে। বশির ভাই অপেক্ষা করেন। আরো বিশেষণ জুড়ে দিয়ে আবারও ঘোষণা করেন। কিন্তু লক্ষ্মী নেই। একজনকে খোঁজ করতে পাঠান। কিন্তু সেও ফিরে আসে না। বশির ভাই আবাও ঘোষণা করে নিজেই এগিয়ে যান গ্রিনরুমের দিকে। গ্রিনরুমের এক কোনায় নাচের পোশাক পরে দুই পায়ের ফাঁকে গামছা চেপে বসে আছে লক্ষ্মী। বশির ভাই লক্ষ্মীকে তাড়া দেন মঞ্চে যাবার জন্য। সাজপোশাক আর মেকাপ পরা লক্ষ্মী তার ফ্যাকাশে মুখ তুলে তাকায় বশির ভাইর দিকে-- বশির ভাই। বাচ্চা গলে গেছে আমার...
তারপর ঠোঁট কামড়ে গড়িয়ে পড়া রক্তে আরো শক্ত করে চেপে ধরে মেকাপ মোছার গামছা। যেন রক্ত গড়ালেও কোনোমতেই বাচ্চাটা না গলে আসতে পারে...
2 মন্তব্যসমূহ
কি বীভৎস পরিসমাপ্তি!!!!!! মাস্টার স্ট্রোক, লীলেন দা!!
উত্তরমুছুনমানুষ..!
উত্তরমুছুন