জাদুবাস্তববাদ : প্রয়োগ ও পরম্পরা

হামীম কামরুল হক

সাহিত্যে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগ কী করে হচ্ছে-- এই নিয়ে একটু সতর্ক থাকার দরকার আছে। কারণ এটা কোনো মোটাদাগের ফ্যান্টাসি নয়, রূপকও নয়, বা নয় পরাবাস্তববাদলগ্ন কোনো ঘটনা। এতে জাদু তৈরি হয় অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে, কিন্তু তার সঙ্গে জাদুকরের জাদুর দেখানো এতটুকুই মিল যে, তা চোখের নিমিষে ঘটতে পারে।
জাদু যেমন নিমিষে একটি অবস্থা থেকে আরেকটি অবস্থায় রূপ নেওয়ার মতো ঘটনা, যা চমকে দেয়, অবাক করে। জাদুবাস্তববাদী (ম্যাজিক রিয়ালিস্ট) লেখকের লেখায় উপস্থাপিত ঘটনাটা ঘটবে জাদুর মতো, ঘটবে মুহূর্তের ভেতরে, কিন্তু সেটি যারা দেখবেন বা অনুভব করবেন, তারা সেখানে থেকে এমন কিছু পেয়ে যাবেন, যাতে বোঝা যাবে ঘটনা যে-কারণে ঘটছে-- তার মূলে আছে কোনো একটা গভীর সত্য, যা সম্পর্কে আর প্রশ্ন করা চলে না, বরং সেটি চরম একটি বাস্তবতা। ফলে জাদুবাস্তববাদের কথা বললেই এই সহজ ব্যাপারটির দিকে খেয়াল রাখা দরকার। এ প্রসঙ্গে গার্সিয়া মার্কেসের সাক্ষাৎকারের একটি অংশ এখানে উদ্ধৃত করা যেতে পারে। কলম্বিয়ার তরুণ ঔপন্যাসিক প্লিনিও আপুলেইয়া মেনদোসার সঙ্গে সেই আলাপে মার্কেস বলেন:


‘‘একশো বছরের নিঃসঙ্গতা-ই হোক কিংবা আমার অন্য-যে-কোনো বই-ই হোক, আমরা লেখার প্রতিটি পঙক্তির যাত্রাভূমি নিখাদ বাস্তব থেকে। আমি শুধু একটি আতস কাচ দিই, যাতে পাঠক বাস্তবকে ভালোভাবে বুঝে নিতে পারে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই আপনাকে। সরলা এরেন্দিরা গল্পে আমি দেখাই যে উলিসেস কোনো কাচ ছুঁলেই তা অনবরত রং পাল্টাতে থাকে। এখন, এটা তো আর সত্যি-সত্যি হয় না। কিন্তু প্রেম সম্বন্ধে এত কথা আগেই বলা হয়ে গেছে যে এই ছেলেটি যে প্রেমে পড়েছে এটা বলবার জন্য আমাকে নূতন একটি প্রকাশভঙ্গি উদ্ভাবন করে নিতে হয়েছিল। কাজেই আমি দেখাতে থাকি কাচের রং পাল্টে যাচ্ছে আর তার মাকে দিয়ে বলাই,‘ও-সব জিনিস হয় শুধু প্রেমে পড়লেই... মেয়েটি কে শুনি।’ যে-কথা অজস্রবার বলা হয়ে গেছে, প্রেম কেমন করে জীবনকে ওলটপালট করে দেয় এটাই তো কথা, সে-কথাই আমি বলতে চাইছি। শুধু আমার বলবার ধরনটা অন্যরকম।’’ (মানবেন্দ্র, ২০০৩: ৩৩)

তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, জাদুবাস্তববাদ একদিক থেকে মূলত এমন একটি রচনারীতি ও প্রকাশভঙ্গি যাতে অনেক বিষয়কে নতুন করে বর্ণনা করা হচ্ছে। এই রীতিটিকে প্রায়শই মিশিয়ে ফেলা হয় অতিপ্রাকৃত, উদ্ভট, আজগুবি ঘটনার সঙ্গে। বিশেষ করে বর্তমানে ফ্যান্টাসিমূলক, রূপকধর্মী এবং পরাবাস্তববাদী কোনো রচনা মানেই তাতে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগ হয়েছে বলে মনে করা হয়। এর ফলে অবাস্তব ও রহস্যময় আবহ নির্মাণকেও জাদুবাস্তববাদী বলে ধরে নেওয়া হয়-- যেমনটা আমরা সুব্রত কুমার দাশের ‘‘যাদুবাস্তবতা ও বাংলাদেশের উপন্যাস’’ আলোচনায় দেখতে পেয়েছি। তিনি এতে শহীদুল জহির, নাসরীন জাহান এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচনাকে জাদুবাস্ততাবাদের দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং তিনি তাঁদের রচনা থেকে এমন সব দৃষ্টান্ত হাজির করেছেন যা বড়জোর রহস্যময় আবহের বর্ণনা, সেটি কখনোই জাদুবাস্তববাদী নয়, কারণ জাদুবাস্তববাদের সূক্ষ্ম প্রয়োগ এবং উদ্ভাবনকৌশল এঁদের রচনার ওই অংশে আসেনি। এমনকি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর একটি রচনার যে-অংশটি তিনি উদ্ধৃত করেছেন, সেটি চেতনাপ্রবাহমূলক রীতিরই প্রকাশ (সুব্রত, ২০০২: ১৩৬)। চেতনাপ্রবাহের এই রীতি প্রয়োগ করেছেন শহীদুল জহিরও। তবে জাদুবাস্তববাদী আবহ তিনি যতটা ব্যবহার করেছেন বাস্তবের অন্তর্নিহিত বাস্তবতা পরিস্ফুটনে ততটা সফল হননি।

জাদুবাস্তববাদের অনেকগুলি লক্ষণের ভেতরে একটি হল ধ্বংসাত্মক যৌনতার উপস্থাপন (Bowers, 2007: 70)| এই যৌনতা মৃত্যু, হত্যা ঘটাতে পারে, এমনকি মহামারী পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। অ্যাঞ্জেলা কার্টার ‘ওয়াইজ চিলড্রেন’ (১৯৯১) উপন্যাসে যৌনতার একটি বিধ্বংসী রূপ হাজির করেছেন। তিনি সেটি করেছেন মিখাইল বাখতিনের কার্নিভাল তত্ত্বকে মনে রেখে, সেই সঙ্গে জাদুবাস্তবতার মিশেল ঘটিয়েছেন বাখতিনের পলিফনি বা বহুস্বরান্বিত তত্ত্ব প্রয়োগ করে (Bowers, 2007: 48)|   শহীদুল জহিরের উপন্যাসেও পলিফনি দেখা যায়। জাদুবাস্তবতায় যে প্রাণসংহারী যৌনতার কথা বলা হল, তেমন বর্ণনা আছে জহিরের ‘সে রাতে পূর্ণিমা ছিল’ উপন্যাসের একটি জায়গায় (শহীদুল, ১৯৯৫:৭৬-৭৯)। আমরা দেখি সেখানে গণিকাটি দুদিনে চল্লিশ বারের মতো যৌনসঙ্গম করে দুজন খুনিকে ক্লান্ত করার পর তাদের হত্যা ক’রে তাদের হাতে বন্দি একজন লোককে বাঁচায়। দ্বিতীয় জনকে হত্যা করার সময় ওই লোকটি গণিকার কণ্ঠনালি কামড়ে ধরে তাকেও হত্যা করে।--

‘‘হালাকু টের পায় নাই, কিন্তু জোবেদ হয়তো টের পেয়েছিল যে, তার জীবনের সেই সময়টি এসে গেছে, হয়তো তার অতি ক্লান্ত শরীর তাকে এই সঙ্কেত দিয়েছিল, এবং তখন, ভয় ও এক ধরনের ঘুম ঘুম ঘোরের ভেতর যখন নগ্ন নারী মূর্তি তার ওপর চেপে বসে তার মুখের দিকে নত হয়ে আসতে দেখে, সে অপেক্ষা করে এবং নারী মুখটি তার মুখের কাছ দিয়ে কাঁধের ওপর স্থাপিত হলে সে নিজের মুখটা অল্প ঘুরিয়ে, মেয়েটির লম্বা করে রাখা কণ্ঠনালীর ওপর তার দাঁতের পাটি একটি সাঁড়াশির হা-এর মত স্থাপন করে, মেয়েটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই, কামড় দিয়ে ধরে। জোবেদের মস্তিস্কে হয়তো তখনই একটি শিরা ছিঁড়ে গিয়ে লাল জবার মত একটি ফুল বিকশিত হয়, কারণ, মফিজুদ্দিন দেখে যে, জোবেদের কানের পাশ দিয়েও চিকন সুতোর মত রক্তের শুকনো ধারা নিচের দিকে নেমে গেছে; তবে গণিকা মেয়েটির মৃত্যু সম্পর্কে মফিজুদ্দিনের বিভ্রান্তি চিরদিনের জন্য থেকে যায়, সে বুঝে উঠতে পারে না যে, মেয়েটি দাঁতের সাঁড়াশিতে কণ্ঠ নালি আটকে দম বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল, নাকি মারা গিয়েছিল গলা থেকে রক্ত ক্ষরণের কারণে।’’ (শহীদুল, ১৯৯৫:৮০-৮১)

আমরা শহীদুল জহিরের রচনায় জাদুবাস্তবতা সম্পর্কিত যে-দুটো রচনা পেয়েছি-- একটি কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের ‘জাদু, বাস্তব, কিংবা জহিরের উপন্যাসগাথা’ (রশীদ, ২০১০:১২৫-১৩৪) এবং অন্যটি মামুন মুস্তাফার ‘ডুমুরখোকো মানুষ ও অন্যান্য গল্প: জাদুবাস্তবতার নিরিখে তীব্র পরাবাস্তবতার সম্মোহ চিত্র’ (রশীদ, ২০১০:৩৬৬-৩৬৮)। দুজন লেখকের কেউ-ই তেমন একটি দৃষ্টান্ত হাজির করেননি যার বদৌলতে বোঝা যেতো যে তিনি কী ধরনের বাস্তববাদকে জাদুবাস্তববাদ বোঝাচ্ছেন।

বাংলাসাহিত্যে কোন কোন উপন্যাসে জাদুবাস্তবতা আছে তার যে-উল্লেখ বিপ্লব মাজী করেছেন (বিপ্লব, ২০০৮: ৩৮৫-৩৮৬), সেখানে সামান্য কটিতে জাদুবাস্তববাদের আভাস আছে মাত্র, বাদবাকিগুলির মধ্যে কেবল রহস্যময় আবহ অতিপ্রাকৃত বা অলৌকিক কিংবা চেতনাপ্রবাহমূলক বর্ণনা পাওয়া যায়। জাদুবাস্তববাদ সম্পর্কে বিপ্লব মাজীর ধারণা এবং যে যে বাংলা উপন্যাসে এটি আছে বলে তিনি মনে করেছেন, তার ইশারা পাওয়া যাবে নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিতে--

‘‘লাতিন আমেরিকার যাদু-বাস্তবতায় উপন্যাসের চরিত্রগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-- সেগুলি সমসাময়িক চরিত্র বা ঐতিহাসিক চরিত্রের কোলাজ। যার ফলে উপন্যাস অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। কৌশলে লেখকেরা তা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতার মিলনে উপন্যাসগুলি লেখা। ভারতীয় যাদু-বাস্তবতায় কোলাজের কোন ব্যাপার নেই। প্রায় চরিত্র একরৈখিক। সেগুলি ছোটবড় সবার পড়তে ভাল লাগে। কোন জটিলতা নেই। ইতিহাস বা সমসাময়িক ঘটনার কোন প্রতিফলন নেই। ব্যতিক্রম ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কঙ্কবতী উপন্যাস এবং আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের খোয়াবনামা উপন্যাস। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের অলীক মানুষ, অমিয়ভূষণ মজুমদারের ফ্রাইডে আইল্যান্ড, লোকনাথ ভট্টাচার্য-র বাবুঘাটের কুমারী মাছ, অভিজিৎ সেনের রহুচণ্ডালের হাড়, নবারুণ ভট্টাচার্যের হারবার্ট, নাসরীন জাহানের ক্রুশকাঠে কন্যা, আফসার আমেদ-এর মেটিয়াবুরুজে কিসসা, সুবিমল মিশ্রের হাড়মড়মাড়ি, মহাশ্বেতা দেবীর কবি বন্দ্যোঘটী গাঞির জীবন ও মৃত্যু, অমিতাভ সমাজপতির ফিরোজা উপন্যাসে ম্যাজিক রিয়ালিজমের আখ্যানধর্মী বর্ণনা আছে।’’ (বিপ্লব, ২০০৮: ৩৮৫-৩৮৬)

দেখা যাচ্ছে বাংলা উপন্যাসে জাদুবাস্তববাদের ব্যাপারটি নিয়ে স্পষ্ট করে তেমন কোনো ধারণা গড়ে ওঠেনি। এতে করে জাদুবাস্তববাদ বলতে যা বোঝায় এর বেশিরভাগ রচনায় তেমন কিছু না থাকার পরও এগুলিকে জাদুবাস্তববাদী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অমিয়ভূষণ মজুমদার অবশ্য জাদুবাস্তবাদের উদ্দেশ্যটি স্পষ্ট করে বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু এসময়ে জাদুবাস্তববাদ বলতে যা বোঝায় সেটিকে তিনিও অবিশ্বাস্য বা অতিপ্রাকৃতের সঙ্গে একাকার করে দিয়েছেন। অমিয়ভূষণ এক সাক্ষাৎকারে (অমিত, ১৯৯৪:১৬-১৭) জানাচ্ছেন তাঁর ‘তাঁতী বউ’ গল্পে ম্যাজিক রিয়ালিজম আছে। মার্কেস, কার্পেন্তিয়ের জাদুবাস্তববাদী ধারাকে তিনি বলেছেন,‘সেই ট্রেন্ডটা তো কমিউনিস্টদের।’ ম্যাজিক রিয়ালিজম মানে ‘পলিটিক্যাল আউটলুক’। তাঁর মতে, মহাভারতে অর্থাৎ কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের রচনায় ম্যাজিক রিয়ালিজম আছে এবং সেখানে রিয়ালিজম ও ম্যাজিক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিজের লেখা ‘চাঁদবেনে’ উপন্যাসকেও তিনি এর আওতায় আনছেন। তিনি মনে করেন, কমিউনিস্ট আইডিয়া নিয়েই এ হলো সাহিত্যের ভেতর দিয়ে ইতিহাসচর্চা,(লক্ষণীয় বিপ্লব মাজীও এইভাবে ইতিহাসচর্চার ব্যাপারটি উল্লেখ করেছেন) সঙ্গে আধিভৌতিক-আধিদৈবিক ব্যাপার আসছে। কিন্তু এতে তলে তলে কাজ করেছে সেই সময়কার সমাজ ও রাজনীতি। প্রাচীন গ্রীসের গল্প বলে চলছে, একটা গল্প ধরছে যে অগম্যাগমন হলে পরে কী হয়, মূলে আছে মানব-মানবীর মন, যে মন দেখা যায় না। তাকে দেখাতেই realism -এর Magic plated  করতে হয়। এটা রোমান্টিসিজমের মতো পাঠকের বিশ্বাস উৎপাদন করে বোঝাতে চায় যে এটা ফ্যাক্ট। আর এটাই হলো ম্যাজিক রিয়ালিজম। এভাবে অমিয়ভূষণ জাদুবাস্তবতাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন; এবং নিজের লেখায় সেইমতো ম্যাজিক রিয়ালিজম কতটা এসেছে তা নিয়ে তিনি সাক্ষাৎকারগ্রহণকারীকে বলেছেন:

‘‘সেটা কি আমার ক্ষেত্রে পাওনি? ম্যাজিক রিয়ালিজম বলতে যদি বলো, ওর মতো লিখি কিন? কেন লিখব? আমি তো ওর মতো দুঃখে পড়িনি। আমারও দুঃখ আছে, আমি অনেক পরাধীন ব্যক্তি। কিন্তু ওদের তো জাতটাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে, ছিলাম রেড ইন্ডিয়ান, হয়ে গেছি স্প্যানিশ। তেমন বেদনার মিশ্রণ আমার রক্তেই নেই। এরকম তো আমি হইনি, আমি আমার সাত পুরুষের নাম বলতে পারি। বলতে পারি আমি কোত্থেকে এসেছি। কাজেই, ওদের মতো লিখব কেন? নকল করব কেন? আমি বলতে চাই... আগেকার রাশান রিয়ালিজম বলে একটা জিনিস ছিল। তুমি ইডিয়ট, ব্রাদার্স কারামাজভ-কে কি ম্যাজিক বলবে না? এটা মানুষের জীবনে হয় নাকি। অথচ পড়ে মনে হয় যে এগুলো ঘটেছে। ‘চাঁদবেনে’-তেও ম্যাজিক, অনৈসর্গিক মনে হচ্ছে অথচ একেবারে রিয়্যাল, উপন্যাসে যতটা সম্ভব। তোমার কি ‘নয়নতারা’ পড়তে-পড়তে মনে হয় না যে নয়নতারা রিয়্যাল! কিন্তু ও কি সত্যিই রিয়্যাল? কেমন ম্যাজিকের মতো মনে হয় না? ঐ সোনার মল।’’(অমিত, ১৯৯৪: ১৬-১৭)

তিনি তাঁর নিজের এবং যে যে রুশ উপন্যাসে জাদুবাস্তববাদের থাকার কথা বলেছেন এবং যে-অর্থে বলেছেন, সেটি কোনোভাবেই প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে জাদুবাস্তববাদের আওতায় পড়ে না। ‘বাস্তব জীবনে এমনটি ঘটে না, কিন্তু সাহিত্যে ঘটে’-- এই বিবেচনায় সাহিত্যে উদ্ভট, রহস্যময়, অলৌকিক ঘটনার বর্ণণা মানেই তা জাদুবাস্তববাদের অধীন হয়ে যায়। যদিও অমিয়ভূষণ মনে করতেন উপন্যাস শেষ পর্যন্ত বাস্তবতালগ্ন--

‘‘জন্ম থেকেই এই দায় আছে উপন্যাসের যে তাকে বাস্তবের বিশ্বাস উৎপাদন করতে হয়। রূপকথা, গল্প, মহাকাব্য, নাটক প্রভৃতির এমন দায় নেই। তারা খুশিমতো বাস্তবের কথা বলে বটে, না বললেও তাদের চলে। কে যেন বলেছিলেন গল্পের গরু গাছে উঠতে পারে। তা হয়তো পারে কিন্তু সে গল্প উপন্যাস নয়, কারণ উপন্যাসে তাদের ঘাস খেতে হয় মুখ নিচু করে এবং মাঠে। রাবণের দশ মাথা নিয়ে কাব্যে কোনো নালিশ নেই, আর সেখানে আমরা তা বিশ্বাসও করি, কিন্তু উপন্যাসে যদি বা সে তেমন আসতে চায়ই তবে তাকে বলে নিতে হবে একটার বেশি তার কাঁধে যা আছে তা মুখোশ।’’ (অমিয়ভূষণ, ১৯৯৬: ২০)

অন্যদিকে, দেবেশ রায় আমাদের সাহিত্যে কোনো বিদেশি মতবাদের প্রয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। এর আগে তিনি সাহিত্যের মূল একটি দিক সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে নিয়েছেন। তিনি লিখেছেন,

‘‘গল্প-উপন্যাসের এই কেমন-করেটা কী করে হয় তা নিশ্চিতভাবে জানা একটু কঠিন। কোনো শিল্পের পক্ষেই সহজ নয়। গল্প-উপন্যাসের পক্ষে একটু বেশি জটিল, গল্প-উপন্যাসের এই আধুনিকতা ও স্থায়ীত্বের পরস্পরনির্ভরতা। যারা গল্প-উপন্যাস লিখি তাদের আঙুলে সেই স্পর্শমায়া থাকা দরকার, শোনা যায় সেই স্পর্শমায়া থাকত তের- চৌদ্দ পেরিয়েছে, পনের- ষোল পেরয় নি, এমনি সব বাঙাল মেয়েদের আঙুলের ডগায়, তাই, তারাই শুধু বুনতে পারত সর্বোত্তম ঢাকাই মসলিনের সুতো।’’ ( দেবেশ,২০০০:তিন-চার)

ফলে বিষয়টির ভেতরে কিছু পরিস্থিতিমূলক এবং শর্তসাপেক্ষ ব্যাপার থাকে। যেকোনো নির্মাণেই সেই সঙ্গে থাকে কিছু অব্যাখ্যেয় প্রক্রিয়া, যার পুরোটুকু জানা যায় না; কোনো তত্ত্বে বা ছকে এদের ছানাও যা না। কিন্তু কোনো তত্ত্ব ও মতবাদ যদি কোনো সৃষ্টিশীল সাহিত্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে যায়, বা তত্ত্বই যদি কোনো শিল্প সৃষ্টির শর্ত হয়ে থাকে, তাহলে সেটি কতটা কার্যকর হতে পারে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সাহিত্যের যে-স্বয়ংক্রিয় দিক আছে, যা কোনো ছকে মতবাদে বাঁধা যায় না, সেখানে বাইরে থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনোকিছুকে তাই দেবেশ রায় বলতে চান ‘অবান্তর হাওয়া’। তিনি এ-সম্পর্কে লিখেছেন,

‘‘এর ভিতর ভীষণ অবান্তর হাওয়া আসে।

রিয়ালিজম, ক্রিটিক্যাল রিয়ালিজম, সোস্যালিস্ট রিয়ালিজম, সুররিয়ালিজম, স্ট্রাকচারালিজম, পোস্ট-স্ট্রাকচারালিজম, মর্ডানিজম, পোস্টমর্ডানিজম, পোস্ট কলোনিয়ালিজম, ম্যাজিক রিয়ালিজম-- এই সব হাওয়া। গল্প-উপন্যাসের পক্ষে এমন মারক আর হয় না, যেখানে মাটি এ-গাঁয়ের, সার এ-গাঁয়ের, জল এ-গাঁয়ের, বিছন এ-গাঁয়ের, চারা এ-গাঁয়ের, অথচ গাছ ফলন্ত হওয়ার জন্য যে-হাওয়াটা দরকার সেটাই শুধু বাইরে থেকে আসবে। এ-সব নিয়ে একজন গল্পকার-ঔপন্যাসিক নিশ্চয়ই ভাববেন, তর্ক করবেন, আরো পড়বেন, আরো তর্ক করবেন, কিন্তু, এই সব তত্ত্বের সঙ্গে তাঁর লেখাকে জড়িয়ে ফেললে লেখারও সর্বনাশ, তত্ত্বেরও সর্বনাশ। এই সব তত্ত্ব কোনোটাই গল্প-উপন্যাস লেখার জন্য বেরয় নি। এক ম্যাজিক রিয়ালিজমের তত্ত্বই উপন্যাস থেকে গজিয়েছে।’’( দেবেশ, ২০০০:চার)

ফলে দেবেশ রায়ও ম্যাজিক রিয়ালিজমের বিশিষ্টতাকে স্বীকার করে নিচ্ছেন। গল্প-উপন্যাস রচনায় ক্ষেত্রে জাদুবাস্তববাদ-যে আগের সব মতবাদ বা যেটিকে দেবেশ রায় ‘অবান্তর হাওয়া’ বলছেন, সেখানে এটি যে ঠিক মেলে না, তা নির্ণয় করেছেন এভাবে--

‘‘দক্ষিণ-আমেরিকার যে-উপন্যাসগুলি থেকে এ-সব কথা উঠেছে, সেগুলি হয় স্প্যানিশ নয়, ফ্রেঞ্চে লেখা। ঐতিহাসিক অর্থে কার্পেন্তিয়ার, রুলফো, মার্কোয়েজ, ফুয়েন্তেস, কোর্তাজার, ঝোসা-- এরা ইয়োরোপীয় উপন্যাসের ঐতিহ্যের সঙ্গেই যুক্ত। ইয়োরোপীয় উপন্যাসে বাস্তববাদের চর্চা এত দূর ও ভিতর পর্যন্ত গড়িয়েছে ও চরিয়েছে, এখন বাস্তবকেই বোঝার জন্যে তাঁদের একটা অন্য অবজারভেটরি দরকার। ম্যাজিক রিয়ালিজম তেমনই একটা অবজারভেটরি।’’ (দেবেশ,২০০০: চার)

তাহলে জাদুবাস্তববাদকে তিনি বাস্তবাদেরই একটা ‘অবজারভেটরি’ বা ‘সাহিত্যিক-মানমন্দির’ বলছেন, যা দিয়ে একে লাতিন আমেরিকার ইউরোপীয় ঐতিহ্যে লালিত সাহিত্যিকরা বা গল্প-উপন্যাস রচয়িতারা বাস্তববাদকে ভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। দেবেশের এই বিশ্লেষণ জাদুবাস্তববাদের মূল বিষয়টিকে বুঝতে নিশ্চয়ই আমাদের সাহায্য করে।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘মানুষ ও মিনোটর: ল্যাটিন আমেরিকার উপন্যাস’ প্রবন্ধে জাদুবাস্তববাদ বিষয়টি এসেছে লাতিন আমেরিকার উপন্যাস আলোচনার সূত্রে। আধুনিকবাদ তথা মর্ডানিজমের আত্মচেতনা, আত্মকেন্দ্রিকার বিপরীতে লাতিন আমেরিকায় জীবন ও মানুষের কথা সেখানকার লেখকদের হাতে নতুন একটি মাত্রা পায়। আত্মচেতনা ও সমাজচেতনার মিশ্রণে হেনরি জেমস বা আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সাহিত্য যেভাবে নির্মিত হয়, সেটি দিয়ে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যকে বোঝা যাবে না (সৈয়দ মনজুরুল, ২০১২: ১২৪-২৫)। এমনকি কাফকা সাহিত্যকে অস্তিত্ববাদীচেতনার যে ধাপের নিয়ে গিয়েছিলেন-- ব্যক্তির মনোজগতের বিপরীতে যে-‘পরিস্থিতি নির্ভর’ অভিব্যক্তি বা এক্সপ্রেশান তৈরি করছেন লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তববাদ তার নিকটবর্তী হলেও আলাদা। ফরাসি ঔপন্যাসিক নাতলি সারৎ তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধ ÔThe Age of SuspicionÕ-এর শুরুতেই লিখেছেন,Ô The novel, we constantly hear it said today, falls into two quite distinct categories: the psychological novel and the novel "in situation." On the one hand, Dostoievski and, on the other, Kafka.Õ(Sarraute,1963:11)| লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তববাদ দস্তয়েভস্কি ও কাফকা-- এই দুজনের প্রতিনিধিত্বকারী যথাক্রমে Ôthe psychological novelÕ  এবং Ôthe novel "in situation"Õ  -- দুটির ধারায়ও পড়ে না। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মতে,

‘জাদু বাস্তবতার পরিচয়টি এই বিচিত্রধর্মী চিন্তার মধ্যে পাই, যে চিন্তায় কাফকা ও আলবেয়ার কাম্যুর সঙ্গে পরাবাস্তববাদী ভাবনার কোথায় যেন একটি সম্মেলন হয়। যে বাস্তব আমাদের প্রতিদিনের, তার থেকে বেরিয়ে আসা এক ধরনের পরিত্রাণ অথবা উত্থান বটে, কিন্তু আমাদের প্রাত্যহিকতার ঘটনাগুলো কখনো আমাদের নিস্তার দেয় না। বরং, ঠিক যে মুহূর্তে বাস্তবতাকে আমরা পেছনে ফেলে আসতে চাইছি, ঠিক সে মুহূর্তেই বাস্তবের চেহারাটা পাল্টে যায়।’(সৈয়দ মনজুরুল, ২০১২: ১২৫)

যদিও মনজুরুল এটিকে ‘জাদুবাস্তববাদে’র পরিবর্তে ‘জাদু বাস্তবতা’ হিসাবে উল্লেখ করছেন, কিন্তু বুঝতে অসুবিধা হয় না তিনি ম্যাজিক রিয়ালিজম বা ‘জাদুবাস্তববাদ’কেই বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি ‘জাদুবাস্তববাদী উপন্যাস’ শব্দটির বদলে ব্যবহার করেছেন ‘জাদু বাস্তবতার উপন্যাস’। তাতেও বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে তিনি মূলত জাদুবাস্তববাদের লক্ষণ বা ধরনটিকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। সেটি কী? জাদুবাস্তববাদ তাহলে কী করে? সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন,

‘জাদু বাস্তবতা ক্রমাগত বিভ্রম সৃষ্টি করে বাস্তবের অবস্থান নিয়ে: আমরা কল্পনাকে খুব শক্তিশালী দেখি, মুহূর্তকে শক্তিশালী দেখি,-- এবং এই মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে মানুষের পদচারণাকে তার একটি ক্রমবিলয়মান পৃথিবীতে টিকে থাকার উপায় হিসেবে দেখি। মানুষ এই সাহিত্যে তার অস্তিত্বকে ঘষা কাচের ভেতর দিয়ে দেখে, অথবা একটি তুর্কি আয়নায় প্রতিফলিত হতে দেখে এবং এই জীবনের অস্বচ্ছ অথবা বাঁকাচোরা চেহারা তাকে যুগপৎ চিন্তিত এবং কৌতুকাক্রান্ত করে। ওই মানুষ যখন এইভাবে আকৃতি/ সঙ্গতি বদলে যাওয়া বস্তুকে দেখে হাসে, অথবা বিস্মিতভাবে নিজের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চায়, তখন বস্তুর প্রেক্ষাপট, তার সময়, ইতিহাস বা দেশের বিস্তৃত পেছনভূমিটি অবধারিতভাবে উঠে আসে।’(সৈয়দ মনজুরুল, ২০১২: ১২৫)

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম হোর্হে লুই বোর্হেসের বরাতে আমাদের জানান, কিংবদন্তির গোলকধাঁধায় মানুষ ও মিনোটর (গ্রিক কিংবদন্তীর আধা-মানুষ, আধা-বৃষ চরিত্র, যার অবস্থান ডিডেলাস নির্মিত গোলকধাঁধায়)-এর যে অবস্থান, তাতে তারা পরস্পরকে অর্থবহ করে। মিনোটর মানুষটিকে ভক্ষণ করবে বলে তাড়া করছে, আর মানুষটি আজীবন ওই গোলকধাঁধায় ঘুরছে। একসময় দেখা গেল মিনোটরের পদচিহ্ন তার সামনে, এবং সেই মুহূর্তে সে-ই হয়ে গেল মিনোটরকে তাড়িয়ে বেড়ানো শক্তি। মানুষ ও মিনোটরের এই সহঅবস্থান, অর্থাৎ মানুষ ও তার ভয়, অথবা তার নির্জ্ঞান অথবা কৌতূহল অথবা নিস্পৃহতা এমনভাবে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায় যে তারা যে কোনো মুহূর্তে স্থান বদল করে। এরকম হলেই শুধু অর্থপূর্ণ হয় গোলকধাঁধার রহস্যটি(সৈয়দ মনজুরুল, ২০১২: ১২৫)।

মারিও বার্গাস ইয়োসার ‘সৎমায়ের প্রশংসায়’ বা ‘ইন প্রেইজ অফ স্টেপমাদার’ উপন্যাসের দৃষ্টান্ত দিয়ে মনজুরুল মানুষ ও মিনোটরের এই বিষয়টি কীভাবে নির্মাণ করা যায় তার ব্যাখ্যা করেছেন। এখানে সৎ মা লুক্রেসিয়ার প্রতি বালক আলফানসোর তীব্র জৈবিক আকর্ষণের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি লুসিক্রিয়া একটি গোলকধাঁধায় প্রবেশ করেছে এবং আলফানসো তার মিনোটর। আবার বালকটির জন্য লুসিক্রিয়াও মিনোটর। এতে তৈরি হয় একটি ‘যৌন ল্যাবিরিন্থ’ যা থেকে মুক্তি নেই মানুষ ও মিনোটরের। এখানে তারা একে অন্যকে তাড়িয়ে বেড়ায়। এই পারস্পরিক তাড়না তো মানুষের সারা জীবন জুড়ে। জীবন তো এমনই দ্বান্দ্বিক যে, ঘরে এসে একটি মানুষ সুরক্ষিত থাকতে চায়। ঘরের দেওয়াল তাকে রক্ষা করে। কিন্তু ঘরে থেকে বেরও হতে চায়, এজন্য ঘরে সে দরজাও তৈরি করেছে। নইলে ঘরতো হতে পারতো একটা দরজা-জানালাহীন অন্ধকূপের মতো স্থান। কিন্তু মানুষ তো সেই স্থানে বেশিক্ষণ থাকতে বা টিকতেও পারে না। ঘরের টান ও বাইরের মায়া-- এই দুয়ের টানাপোড়েনে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে হাজির হয় একের পর এক জাদুবাস্তবতার ঘটনাগুলি। জাদুবাস্তববাদী প্রকরণ দিয়ে সেটিকে কেবল উপস্থাপন করা যায় মাত্র।

প্রায় ক্ষেত্রে বাংলায় জাদুবাস্তববাদ সম্পর্কিত নানান রচনা এমন নির্দেশক হয়ে ওঠার পরিবর্তে বরং বিভ্রান্তিকর হয়ে দেখা দেয়। আগেই বলা হয়েছে, আমাদের আলোচ্য বিষয়টি ‘জাদুবাস্তবতা’ নয়, ‘জাদুবাস্তবতাবাদ’ও নয়। ‘জাদুবাস্তবতাবাদ’ ‘আধুনিকতাবাদে’র মতো ভুল একটি পরিভাষা, কারণ এটি ‘আধুনিকবাদ’। একারণে আমরা বলতে চাই এটি ‘জাদুবাস্তববাদ’। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ে বিভ্রান্তি বেড়েছে বই কমেনি।

আমরা বিস্ময়করভাবে লক্ষ করি, সমালোচক রবিন পাল তাঁর ‘‘জাদু বাস্তবতা: বাস্তবতার ভিন্ন স্বর’’ শিরোনামে দীর্ঘ যে প্রবন্ধটি লিখেছেন, সেখানে যে সব দৃষ্টান্ত দিয়েছেন এর মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া বাদবাকিগুলির কোনোটাই জাদুবাস্তববাদের দৃষ্টান্ত নয় (হাবিব; ২০১৪: ২৬১-২৬৩)। এছাড়া সৌমিত্র শেখরের ‘‘যাদুবাস্তববাদ, মায়া-প্রপঞ্চ এবং বাংলা সাহিত্যের ইচ্ছাপূরণ’’ (সৌমিত্র, ২০০৩: ৫৪-৫৮), এবং মাহবুবুল হকের ‘‘যাদুবাস্তববাদের যাদু: তত্ত্বে ও কবিতায়”(মাহবুবুল, ২০০৩: ৬০-৬৭) প্রবন্ধ দ্বয়ে সাহিত্যে জাদুবাস্তববাদের প্রয়োগের পরিপ্রেক্ষিত (context), এটি উদ্ভবের কারণ, এর আর্থসামাজিক রাজনৈতিক ইত্যাদি দিক যতটা হাজির হয়েছে, কোনো পাঠের (textআলোকে বা সেই সব পাঠ থেকে দৃষ্টান্ত নিয়ে এসময়ের সাহিত্যে জাদুবাস্তববাদ কীভাবে হাজির হয়, সে-বিষয়টি তত স্পষ্ট করা হয়নি। অর্থাৎ কোন ধরনের রচনায় ও কাদের উপন্যাসে এটি আছে, এ সম্পর্কে অন্যদের কী মত, কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রচনায় জাদুবাস্তবতা দেখা দিয়েছে-- তার উল্লেখ থাকলেও, জাদুবাস্তববাদ বোঝাতে তাঁদের সেইসব রচনা থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্ধৃতি হাজির করেননি, করলেও সেটি জাদুবাস্তবতা সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা দেয় না। প্রায় ক্ষেত্রে তাঁরা এবং জাদুবাস্তববাদকে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে মিলিয়ে-মিশয়ে বুঝেছেন-- সেটি দেখতে পাওয়া যায়।

সৌমিত্র শেখর তাঁর প্রবন্ধটিতে বাংলা ভাষায় প্রাচীন ও মধ্যযুগের সাহিত্য থেকে একের পর এক যে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন, তাতে সেকালের রূপকথাময়, অলৌকিক দিকই উঠে এসেছে, আধুনিক জাদুবাস্তববাদ বিষয়টি কী-- সেটি উপস্থাপিত হয়নি। একথা জোর দিয়ে এখন বলা দরকার যে, প্রাচীন সাহিত্যের ভেতরে এর লক্ষণ, আভাস বা বৈশিষ্ট্য খুঁজলে তা হবে আরোপিত। তদুপরি সাম্প্রতিক সময়ে সেটি বার বারই প্রাচীন সাহিত্যে সন্ধান করার মানসিকতা লক্ষ করা যাচ্ছে। আফসার আহমদ তাঁর ‘জাদুবাস্তবতার প্রাচ্যরূপ’ প্রবন্ধে সিদ্ধান্ত টেনেছেন এই বলে যে, হাজার বছর আগেই জাদুবাস্তবতা প্রাচ্যে তথা বাংলায়ও বিকশিত হয়েছিল। আফসার লিখেছেন--

‘‘প্রাচ্যের জাদুবাস্তবতায় বাস্তবতাকে ভিত্তি করে কল্পনা ডানা মেলেছে আকাশে। কিন্তু কোন আকাশকুসুম তারা চয়ন করেনি। জীবনের সমগ্র সত্তার ভেতরে বাস্তবতা এবং কল্পনার মিশেলে জীবনের আধ্যাত্মিক রূপটি উপলব্ধি করেছে প্রাচ্য। তাই শুধু ভূমিহীন কল্পনার জগতের না থেকে বাস্তবতা ও লৌকিকতার প্রত্যয়ী ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেছে। আর এখানেই প্রাচ্য বিশেষ করে, বাঙালির কাব্য-আখ্যানে জাদুবাস্তবতা হাজার বছর পূর্বেই জীবনের সামগ্রিকতায় বিকশিত হয়েছিল।’’ (আফসার, ২০১৫: ৪৬)

কিন্তু সেটি ‘জাদুবাস্তবতা’, জাদুবাস্তববাদ নয়। জাদুবাস্তবতা সব সময় সর্বত্র ছিল, কিন্তু জাদুবাস্তববাদের মাধ্যমে সেটিকে সচেতনভাবে শনাক্ত করার ব্যাপারটি সাম্প্রতিক, কিন্তু লক্ষণীয় যে জাদুবাস্তবতাকে অনেক সমালোচকই জাদুবাস্তববাদের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলছেন, তারা জাদুবাস্তবতা বলতে জাদুবাস্তববাদকেই বুঝছেন বা বোধ করেছেন যে, জাদুবাস্তববাদ মানেই জাদুবাস্তবতা। এজন্য প্রাচীন সাহিত্যের অলৌকিত্ব বিষয়সমূহকে বর্তমানের জাদুবাস্তববাদী দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হলেও এটি আসলে যুক্তিযুক্ত নয়। সেসবে আমরা জাদুবাস্তবতার লক্ষণ পেতে পারি মাত্র, কিন্তু সেগুলি জাদুবাস্তববাদী সাহিত্য নয়। মূলত কোনো ব্যক্তি-লেখকই জাদুবাস্তববাদ সচেতনভাবে প্রয়োগ করে থাকেন। এছাড়াও আরো একটি কথা এই যে, গত শতকের কুড়ির দশকের আগে যা কিছু জাদুবাস্তববাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে সেগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আরোপিত বলে ধরে নিতে হয়; কারণ জাদুবাস্তববাদ বা ম্যাজিক রিয়ালিজম বলতে আমরা এখন যেটি বুঝি সেটি স্পষ্টত ইউরোপীয় মনোভঙ্গির আরেকটি শিল্পকৌশল, যা বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে জার্মান চিত্রসমালোচক ফ্রানৎস রোহ প্রথম চিহ্নিত করেন। J. A. Cuddon  ম্যাজিম রিয়ালিজমের পটভূমিটি সম্পর্কে লেখেন--

 ÔÔThis term was coined by Franz Roh and used in the title of his book Nach-expressionismus, magischer Realismus: Probleme der neuesten europäischer Malerei (1925). He was concerned with the characteristics and tendencies discernible in the work of certain German painters of the period, especially the neue Sachlichkeit (q.v.) artists of Munich. Their work was marked by the use of still, sharply defined, smoothly painted images of  figures and objects depicted in a somewhat surrealistic manner. The themes and subjects were often imaginary, somewhat outlandish and fantastic and with a certain dream-like quality. The effects could be powerful. Magic realism was also associated with the 1920s Italian movement stracittà (q.v.). ÕÕ(Cuddon, 2013: 416)


এ প্রসঙ্গে সৌগত মুখোপাধ্যায় আমাদের জানাচ্ছেন--

‘‘ ‘ম্যাজিক রিয়ালিজম’ শব্দটির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় ফ্রানৎস রো(১৮৯০-১৯৫৫) নামক এক জার্মান কলা সমালোচকের বইয়ে, যার নাম নাখ্ এক্সপ্রেসিওনিজ্মুস: মাগিশের রেয়ালিজমুস্: প্রোবলেমে ড্যের নয়েস্টেন্ অয়রোপেইশেন্ মালেরাই (১৯২৫; এক্সপ্রেশনিজম-এর পর ম্যাজিক রিয়ালিজম: নবীনতম ইউরোপীয় চিত্রকলার সমস্যাবলি)। পরে, ১৯২৭ সালে বইটি এস্পানিওল ভাষায় আংশিক অনুবাদাকারে রেভিস্ত দে অক্সিদেন্তে পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়। রোর মৌলিক ধারণা অনুযায়ী অবশ্য ম্যাজিক রিয়ালিজম উত্তর-এক্সপ্রেশনিস্ট চিত্রকলা (১৯২০-১৯২৫)-র সমার্থক আর তাকে কুহকী মনে হওয়ার কারণ এই যে সে সমস্ত ছবির উদ্দেশ্য ছিল দৈনন্দিন জীবনের রহস্যজনক উপাদানগুলিকে মেলে ধরা। একটি সাহিত্যশৈলী হিসাবেও ম্যাজিক রিয়ালিজম-কে রো কখনো কল্পনা আর বাস্তবের মিশ্রণ বলে মনে করেননি। তাঁর মতে শব্দটির ব্যবহারিক ভিত্তি ছিল দৈনন্দিন বাস্তবতার মধ্যেই শক্তভাবে গাঁথা আর তা ছিল রোজকার জীবনের চমকের সামনে মানুষের বিস্ময়েরই অভিব্যক্তি।”( সুধীর, ২০১১:৩৮১)


জাদুবাস্তববাদের প্রধান প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যাঁকে বার বার উল্লেখ করা হয় সেই লেখক মার্কেসের বক্তব্য এবং রোহ-র বক্তব্য প্রায় কাছাকাছি, যেটাকে সালমান রুশদিও বলেছেন,‘ÔÔcommingling of the improbable and the mundane .Ó(Rushdie, 1995: 9) অবিশ্বাস্য ও গতানুগতিকতার মিশ্রণে আমাদের দেখবার বিষয় বাস্তবতার ভেতরে জাদু তৈরি হচ্ছে, নাকি জাদুর ভেতরে বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে। আমাদের মতে, দ্বিতীয়টি জাদুবাস্তববাদের শর্ত নয়, তাহলে জাদুবাস্তবতা সঙ্গে রূপকথার তেমন কোনো তফাত থাকে না। রূপকথায় জাদুর ভেতরে প্রসঙ্গত বাস্তব পরিস্থিতি হাজির হয়, আর জাদুবাস্তবতাবাদে বাস্তবতার ভেতরে জাদু তৈরি হয়। রূপকথা অসম্ভবকে সম্ভব করে; আর জাদুবাস্তবতাবাদে সম্ভবকেই অসম্ভব করে, কিন্তু সেটা সঙ্গে সঙ্গেই সম্ভবের দিকেই ফিরে আসে, কারণ এর অন্তর্নিহিত সত্যের কারণে তা প্রশ্নাতীতভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে । ফ্রানৎস রোহ জাদুবাস্তববাদকে দেখেছেন চিত্রকলার বিবেচনায়। এটি--



১. পরিমিতিবোধ ও তীক্ষè লক্ষ্যবিন্দু সম্পন্ন; কল্পদৃষ্টি(ভিশান) হবে ভাবালুতামুক্ত এবং আবেগহীন।

২. শিল্পী দৃষ্টি দেবেন দৈনন্দিন, তুচ্ছ, গুরুত্বহীন বিষয়ে; কোনোরকম সংকোচ ছাড়াই উপস্থাপন করবেন অস্বস্তিকর বিষয়াদি।

৩. একটি স্থির, ঘনবদ্ধ কাঠামো, যেটা প্রায়শই হতে পারে শ্বাসরুদ্ধকর, কাচে ঘেরা জায়গার মতো, এতে গতিশীলতার চেয়ে স্থিতিশীলতাই বেশি শ্রেয় হবে।

৪. আগের অঙ্কন পদ্ধতির কোনো চিহ্ন এখানে থাকবে না, এই চিত্রকলা অন্য সমস্ত রকমের হস্তশিল্প থেকে মুক্ত।

৫. এবং এতে চূড়ান্তভাবে আছে বস্তুজগতের সঙ্গে এক নতুন আধ্যাত্মিক সম্পর্ক।

(Menton,1983:26 )

এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আছে ১৯১৯-১৯২৩ সালে জার্মান ভাইমার রিপাবলিকের অস্থিতিশীল অবস্থা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে যে-পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল তারই প্রতিক্রিয়া হিসাবে জাদুবাস্তববাদের উদ্ভব। রাজনৈতিক হীনবল দশা, ক্ষমতার শূন্যতা, কাইজারের শূন্যস্থান দখলের জন্য ডানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ও বিপ্লবপন্থী বামপন্থীদের সংঘাত, এই সঙ্গে ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হিটলারের ন্যাশানাল জার্মান সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কস পার্টিও যোগ দিয়েছিল। সে এক চরম রাজনৈতিক সন্ত্রাসের সময়। বেঁচে থাকার উৎকণ্ঠা, ভয়, আশা ও আশঙ্কার দ্বন্দ্ব এবং অনিশ্চয়তায় শৈল্পিক প্রক্ষেপণ হিসেবেই তৈরি হল জাদুবাস্তববাদ (Bowers,2007:11)|  লাতিন আমেরিকার দেশে দেশে একনায়কদের শাসন, স্বৈরাচার ও চরম দমন-নিপীড়নের প্রেক্ষাপটে সেখানে যে বিশেষ ধরনের জাদুবাস্ততাবাদ দেখা দিল-- বিষয়টি তার সঙ্গে মিলে যায়। তখন কোনো কিছু সরাসরি না বলে এমন এক ভঙ্গিতে বলার প্রয়োজন দেখা দেয়, যা হয়ে ওঠে বাস্তবতা আর অবাস্তবতার মিশ্রণ। আমরা চর্যাপদের সিদ্ধাচার্যদেরও এমন পরিস্থিতির মধ্যে দেখতে পাই-- যখন বৈরীপরিবেশে তাঁরা সাধনার ভাষাকে ভিন্নভাবে রচনা করছেন। সেসবে অন্তর্নিহিত অনেক বিষয়াদি নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তা জাদুবাস্তববাদী নয়। ফলে বর্তমানের জাদুবাস্তববাদের কিছু বৈশিষ্ট্য সংকেতিক ভাষায় রচিত চর্যাপদে, নাট্যময় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন এবং এছাড়া মঙ্গলকাব্য, রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যান, গেয়আখ্যান-উপাখ্যান, গীতিকা, রূপকথা, উপকথার নানান প্রকাশভঙ্গির সঙ্গে মিলে যেতে পারে (আফসার, ২০১৫: ৩৬), কিন্তু এদের জাদুবাস্তববাদী সাহিত্য বলা চলে না। এই দিকটি অনেকের কাছে আজো স্পষ্ট হয়নি। জাদু আর বাস্তবতা থাকলেই সেটি জাদুবাস্তববাদ হয়ে যায় না।

ম্যাগি অ্যান বাউয়ার্স-ও জাদুবাস্তববাদকে দেখিয়েছেন দুটো চরম বৈপরীত্যসম্পন্ন (oxymoron) অবস্থার সম্মিলন হিসেবে (Bowers,2007:1)| তাঁর মতেও, এর উৎসে রয়েছে ফ্রানৎস রোহ-র তত্ত্ব এবং মূলত দুজন লেখকের মাধ্যমে সমকালীন সাহিত্যেজগতে বিশ্বব্যাপী এর পরিচিতি ঘটেছে-- এঁরা হলেন গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ও সালমান রুশদি। জাদুবাস্তববাদের পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট এবং এর লক্ষণ যেখানে দেখা গেছে, যাঁদের লেখার মধ্যে এর প্রভাব পড়েছে, তাঁদের নিয়ে অন্যান্য সমালোচকরা কী কী বলেছেন, এর ওপর ভিত্তি করে তিনি Magic(al) Realism  বইটি লিখেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এর কোথাও মিলান কুন্দেরা সম্পর্কে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। অন্যদিকে জাদুবাস্তবতা আলোচনা করতে মূলত যে কজন লেখকের নাম উচ্চারিত হয় তাদের ভেতরে মিলান কুন্দেরা অন্যতম। ডেভিড লজ যেমন সেই প্রধান চারজন লেখক গ্যুন্টার গ্রাস (১৯২৭-২০১৫), গাবরিয়াল গার্সিয়া মার্কেস (১৯২৭-২০১৪), মিলান কুন্দেরা (১৯২৯--) এবং সালমান রুশদি (১৯৪৭ --)-র নাম এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উল্লেখ করে নিয়েছেন এবং ম্যাজিক রিয়ালিজমের দৃষ্টান্ত কুন্দেরার উপন্যাস থেকেই বেছে নিয়েছেন। লজ আবার ইতালো কালভিনো (১৯২৩-৮৫)-র কথা সেভাবে বলেননি। আবার এ-দুজনের কেউই হুয়ান রুলফো (১৯১৭-৮৬)-র কথা উল্লেখই করেননি। ম্যাগি অ্যান বাউয়ার্স বেশ জোর দিয়েছেন টনি মরিসন (১৯৩১--)-এর রচনায় জাদুবাস্তববাদের সম্পর্কে দেওয়া অন্যদের মতামাতের ওপর। তিনি আফ্রিকার বেন ওকারি (১৯৪৯--), আমোস তুতুয়ালা (১৯২০--৯৭) এবং এশীয় অমিতাভ ঘোষ (১৯৫৬--) এবং অরুন্ধুতী রায়(১৯৬১--)-এর রচনাও জাদুবাস্তববাদের আওতায় এনেছেন। তিনি চিত্রকলা এবং চলচ্চিত্রে এর উপস্থাপন ও বিবর্তন নিয়েও বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। কিন্তু জাদুবাস্তববাদের মূল অবলম্বন সাহিত্য। এটি একটি রচনারীতিমাত্র, প্রতীকবাদ বা পরাবাস্তবাদের মতো এটি কোনো নির্দিষ্ট আন্দোলন নয় বা সমকাল সম্পর্কিত ধারণাও নয় (সুধীর, ২০১১:৩৮১)। বিংশশতকের কুড়ির দশকে উদ্ভূত ইউরোপীয় এই নির্মাণশৈলী কী করে লাতিন আমেরিকার সাহিত্যে বিশেষভাবে আত্তীকৃত হলো তার ভেতরেই আছে এর ভূমিকা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ

  1. বাংলা কবিতায় ম্যাজিক রিয়ালিজম সম্পর্কে কোনো ধারণা আমার নেই, কেউ যদি এই বিষয়ে একটু সাহায্য করেন...ম্যাজিক রিয়ালিজম কাদের কবিতায় পাবো?

    উত্তরমুছুন
  2. লেখাটা অনেক ভাল লেগেছে।এ ধরণের লেখা আরো চাই।

    উত্তরমুছুন
  3. "অলীক মানুষ পড়তে গিয়ে জাদুবাস্তবতার search দেওয়া।খুবই ভালো লেগেছে। এরকম তথ্যবহুল লেখা আমাদের ভিত্তি কে মজবুত করে। ধন্যবাদ।

    উত্তরমুছুন
  4. লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম কিন্তু আমার একটি প্রশ্ন থেকে গেল হাসান আজিজুল হকের ‘সম্মেলন’ গল্পটি বিশেষত গল্পের মূল চরিত্র আরেফ তার জীবনে যে লাশের গন্ধ পায়।এই বিষয়টি কি জাদু বাস্তবতা নয়?

    উত্তরমুছুন