
উল্লম্ব (vertical) এবং অনুভূমিক (horizontal) লেখা-কী, কীভাবে তা লিখতে হয় এবং লেখায় কেন তা বৈচিত্র্য আনে
ছোট গল্প লেখক, আন্দ্রে ডুবুস লেখালেখিকে উল্লম্ব (vertical) এবং অনুভূমিক (horizontal) মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন। “নভেল ভয়েসেস” সঙ্কলনটির একটি সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর প্রথম উপন্যাস “লেফটেনেন্ট” লেখার সময় লেখালেখির যে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হয়েছিলেন তা নিয়ে বলেছেন।
আপনি কখনো আমেরিকার মধ্যপশ্চিম বরাবর একটানা গাড়ি চালিয়েছেন? দিগন্ত যেন অনন্তকাল ধরে বিছিয়ে আছে এ দিকে, পাশেই সমতল এবং ভবিষ্যৎ-বাচ্য প্রাকৃতিক-ভূদৃশ্যের সমাহার। এই সীমাহীন তৃণভূমিতে গাড়ি চালাতে আমি খুব ভালোবাসতাম, মিনেসোটা থাকার সময় প্রতি গ্রীষ্মে উত্তর এবং দক্ষিণ ডেকোটা পাড়ি দিতাম গাড়ি নিয়ে।
কিন্তু আমি খুব চাইতাম একটুখানি বৈচিত্র্য এই সীমাহীন তৃণভূমিতে থাকুক, কারণ চোখ খুলে রাখাটা ছিল রীতিমত একটি সংগ্রামের ব্যাপার।
কিছুটা উত্তেজিত বোধ করতাম এইসব রাজ্যের পশ্চিমের কিনারে পৌঁছে গেলেই যখন মেসা আর পাহাড়গুলো মাথা তুলতে শুরু করতো। তিনদিনের সমতলভূমি শেষে আমি সবসময় এই ব্যাডল্যান্ডের জন্য প্রতীক্ষায় থাকতাম। এই নতুন উল্লম্ব (vertival) ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্য অধিকতর উত্তেজনা এবং বৈচিত্র্যের যোগান দিত, প্রতিটি বাঁকের পর কী আছে জানার পর তা হয়ে উঠত ঘুমন্ত মুহূর্তগুলোর সাথে একটি মধুর সংঘাত।
ভূ-প্রাকৃতিক দৃশ্যের এই বৈচিত্র্য যেমন একজন দূরগামী যাত্রীকে উত্তেজিত করে ঠিক তেমনিভাবে অপ্রত্যাশিত মুহূর্তগুলো আপনার বইটিকে শক্তি, উৎকণ্ঠা এবং উত্তেজনায় চাঙ্গা করে করে তোলে।
যদি আমরা ডুবুসের শব্দগুলোকে গ্রহণ করি, তাহলে এই উল্লম্ব (vertical) মুহূর্তগুলো হতে পারে বাহ্যিক- একটি উৎকণ্ঠা-পূর্ণ প্লটের মোচড়, যেন শেষ দৃশ্যে জরুরীবিভাগে মুমূর্ষু রোগী-অথবা অভ্যন্তরীণ মুহূর্ত যেখানে একটি চরিত্র তাঁর জীবনের বাঁক বদলে দেয় আর আমরা পাঠক হিসেবে এই দারুণ পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে তা প্রত্যক্ষ করি।
একটি উল্লম্ব (vertical) মুহূর্তে পাঠক উৎকণ্ঠিত এবং নিজেকে সংযোগ রাখেন, কখনো প্লট আমাদেরকে পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে দমবন্ধকরা সৌন্দর্য অবলোকন করিয়ে নেয় বা কখনো অশ্রুমিশ্রিত সত্যের সম্মুখীন করিয়ে দেয়। এই মুহূর্তগুলো আমাদের দেখানো হয়, এবং আমরা থাকি এর ঠিক মাঝখানে আঁটসাঁট হয়ে, আমাদের বসার জায়গার একদম কিনারে।
উল্লম্ব (vertical ) এবং অনুভূমিক (horizontal) মুহূর্ত, বইয়ে দু’টোরই প্রয়োজন আছে
বইতে, উল্লম্ব এবং অনুভূমিক উভয়েরই দরকার আছে আপনার। আপনার একটি অংশ দরকার যেখানে একটি শান্ত শোবার ঘরের বর্ণনা, কোন সিনেমার দৃশ্যের পর্দার মত আলো আসছে তার ভেতর দিয়ে, এবং সেখান দিয়েই দেখা যাচ্ছে একজন প্রেমিকের গাড়ি করে চলে যাবার দৃশ্য। দৃশ্যপটের এই শান্ত মুহূর্তের বর্ণনা পরবর্তী দৃশ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে , যেখানে কেউ গাড়ির ইগনিশন চালু করে চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছে, তার একটি প্রয়োজনীয় উপক্রমণিকা হতে পারে। একইভাবে ধীরতর মুহূর্তে দু’জন মানুষ বালুতটে হাঁটছে, এক অপরের সাথে সাবলীল, আলোচনা করছে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার কথা নিয়ে যেখানে হয়তো এমন কিছু ঘটবে যা তাদের জীবন পাল্টে দেবে একবারেই।
শুধুমাত্র অল্পকিছু লেখক তাঁদের সম্পূর্ণ বইয়ে মাত্রা বুঝে এই উল্লম্বের (vertical) পরিমাপটি ঠিক রাখতে পারেন। এটা ভালো কারণ অধিকাংশ পাঠক তিন’শ পৃষ্ঠা জুড়ে উল্লম্বের (vertical) খাড়া কিনারে থাকতে চায়না। এমনি উৎকণ্ঠায় ভরপুর লেখাতে আমাদের বিশ্রাম নেয়ার এবং চিন্তার করার জন্য সময় দরকার, এই পর্যন্ত কী ঘটেছে, কেনই বা ঘটলো, এর সাথে গল্পটির কী সম্পর্ক।
একটি ভারসাম্য আবশ্যক এবং আপনার বই লেখার ভ্রমণে, এই ভারসাম্য খুঁজে বের করাটা পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে ।
পরবর্তী খসড়ায় পার্থক্য
পূর্বে “আইল্যন্ডস”, লেখা উল্লেখযোগ্যভাবে অনুভূমিক (horizontal) হতো।
এখনও আমরা আমদের গল্পগুলো বলে যাই, বিষয়বস্তুর উষ্ণতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। অপরিহার্যভাবে আমরা সময় ব্যয় কাটাই কোন কিছু না লিখে বরং কী লিখব এই ভেবে। দৃশ্যগুলো সাধারণত হবে প্রতিফলিত, অভ্যন্তরীণ, এবং দেখানোর চেয়ে বরং বলতে হবে।
এটা খুবই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যে আমাদের লেখার উপাত্তগুলোর সাথে পরিচিত হই কাগজের পৃষ্ঠায় ।
প্রায়ই, এই শুরু দিকের লেখাগুলোয় প্রতিটি দৃশ্য একজন পাঠকের জন্য রোমাঞ্চকর উত্তেজনাপূর্ণ নয়। পাঠক যেন যেন অন্য কোন ব্যক্তির ছুটি কাটানোর স্লাইড শো দেখছে। আমাদের কাছে, প্রতিটি প্রতিচ্ছবি আবেগপূর্ণ, অত্যন্ত সজীব কারণ আমরা সম্পূর্ণ ছবিটিকে ধরে রাখি এবং তা আমাদের মনে ও মগজে উপলব্ধি করি।
কিন্তু একজন পাঠকের জন্য কাগজের পাতায় তা এখনও জীবন্ত হয়ে উঠেনি। সেই প্রতিচ্ছবিগুলো কারও মনে এখনও কোন সাড়া জাগিয়ে তোলে না।
অনুভূমিকের (horizontal) ভারসাম্য শুরু করার জন্য আপনার ঘটনার আরও অনেক গভীরে যেতে হবে-আরও বেশি নাটকীয়তা-অথবা আপনার চরিত্রগুলোকে আরও বেশি অর্থবহ করে তুলতে হবে। এর যে কোন একটি উল্লম্বের (vertical) জন্য দ্বন্দ্বের আহবান করবে যা কী-না একটি ভালো গল্পের প্রধান চাহিদা।
লেখক ই. এল. ডক্টরোর এই কথাটি আমি ভালোবাসি, “একটি ভালো লেখাকে পাঠকের সংবেদনশীলতাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। বৃষ্টি হচ্ছে এই বিষয়টি নয়, বরং বৃষ্টি পড়ার পর তার অনুভূতি।“
আমাদের কাজ হলো, শেখা কীভাবে অনুভূমিক (horizontal) এবং উল্লম্ব (vertical) উভয় ভাবেই লেখা যায়, আমরা যা জানি তা তাৎক্ষণিক এবং উত্তেজনার সাথে লেখায় তার সংমিশ্রণ ঘটাতে হবে।
অনেকসময় তা করা সম্ভব হয়ে উঠতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বইটির খসড়া তৈরি করি, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা গল্পটির প্রধান অংশুগুলোর ছক না কাটি। তারপর, পুনরায় পাঠ এবং সংশোধনের সময় আমরা অধ্যায়গুলোকে চমৎকার সুরে ছন্দবদ্ধ করার চেষ্টা করি যাতে তা হয়ে উঠে বলিষ্ঠ লেখনী যা একজন পাঠক বই থেকে দাবী করে।
1 মন্তব্যসমূহ
বাহ ! দারুন হইসে তো । সাধারনভাবে অসাধারণ কিছু বলসে উনি । আরামদায়ক একটা অনুবাদ হয়েছে। কাজে দিবে ।
উত্তরমুছুন