ওয়াহিদা নূর আফজা গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লেখেন। ২০১৩ সালে কথাসাহিত্যে কালি ও কলম পুরষ্কার পেয়েছেন। ঢাকায় জন্ম। এখন থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। পেশায় তড়িৎ প্রকৌশলী। তাঁর প্রকাশিত বই : কিন্নরকণ্ঠী নদী, বিতংস, ঘরট্ট। তিনি নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন। নিজের মতো করে লেখেন। প্রকাশের ব্যাপারেও তাড়াহুড়া করেন না। গল্পপাঠে বছর দুয়েক আগে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন।
গল্পপাঠ :
গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
ছোটবেলায় চিলেকোঠায় বসে গল্প লিখতাম, ডায়েরি লিখতাম। তখন বড় হয়ে লেখক হবার স্বপ্ন দেখতাম। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী কিংবা আইনবিদ কিভাবে হয় সে পথটা জানা আছে কিন্তু লেখক হবার পথটা তো সম্পূর্ণ অজানা ভ্রমণ। শুধুমাত্র স্বপ্নকে সম্বল করে একদিন গল্প লিখতে বসে গেলাম। লিখতে গিয়ে দেখলাম আমার মধ্যে অনেক গল্প জমে আছে। আর এই কাজটাই সম্পূর্ণভাবে মনের আনন্দ মিশিয়ে করতে পারছি। যেখানে আনন্দ, সেখানে সহজতা। আমরা তো শেষ পর্যন্ত জীবনের একটি সহজ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ক্ষেত্র খুঁজে ফিরি। তাই শেষ পর্যন্ত আমার ঘুরেফিরে এই লেখালেখির ভূবনে ফিরে আসতে হয়।
গল্পপাঠ :
শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
স্কুল-কলেজে থাকতে ফরমায়েসি লেখা লিখতাম। বিশেষ করে একুশে ফেব্রুয়ারীর সময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে গল্প-কবিতা লেখাটা একটি নিয়মিত ব্যাপার ছিল। তারপর একটা দীর্ঘ সময় সাহিত্যের সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না। না লেখা, না পড়া। দশ বছরের উপর তো হবেই। সে সময়টাতে আমি লেখাপড়া শেষ করে সংসার শুরু করলাম, চাকরি শুরু করলাম। এর সব কিছুই হল প্রবাসে। তারপর লেখালেখির ইচ্ছাটা এক সময় হঠাৎ করেই আবার জেগে উঠলো। প্রথমে কয়েকটা গল্প লিখলাম। সময়টা ২০০৮ সালের দিকে হবে। সে সময় বাংলাদেশে ব্লগ জগৎ খুবই জনপ্রিয়। ক্যাডেট জীবনের স্মৃতি নিয়ে ক্যাডেট কলেজ ব্লগে কয়েকটি ব্লগ লিখলাম। পাঠকরা খুব উৎসাহিত করল। তারপর থেকে অন-এন্ড অফ লেখালেখি আমার সাথেই আছে।
গল্পপাঠ :
গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
পড়তে শেখার শুরু থেকেই আমি নিয়মিত পাঠক। সাহিত্য-শিল্প-বিজ্ঞান-দর্শন থেকে শুরু করে যে কোন বিষয়ের প্রতিই রয়েছে আমার সমান আগ্রহ। আমি অনেকটা সর্বভূক পাঠকের মতো। তবে লেখার ব্যাপারে ফিকশন আমার প্রথম পছন্দের। এর পেছনে হয়তো এ কারণটা রয়েছে যে মানুষ আমার মনযোগের প্রধান আকর্ষণ। আমাকে সব সময়ই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ দেখে আসতে হয়েছে। যে বিষয়টা আমার মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় তা হল স্বপ্নহীন মানুষ, স্থবির মানুষ। আমি দেখেছি মাত্র কয়েকটি শব্দেই একজন স্বপ্নহীন মানুষ আবার জেগে উঠতে পারে, স্থবির মানুষ চলতে শুরু করে। তখন আমার মনে হল লেখালেখির মাধ্যমে আমি বরং স্ব-উদ্যোগী হয়ে কিছু গল্প বলার কাজ চালিয়ে যাই। কেউ তা পড়লে পড়ল। আমি অন্তত চেষ্টা করেছিলাম আমাদের সময়টাকে তুলে ধরবার।
গল্পপাঠ :
আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
যে বিষয় নিয়ে আমি লিখতে চাই প্রথমেই তার শেষটুকু নিয়ে ভাবার চেষ্টা করি। শেষ অংকের চিত্র আমার কাছে স্পষ্ট না হলে সে লেখা আর এগুতে চায় না। যখন লিখি তখন যে কোন বিষয় আমি খুব গভীরভাবে তুলে ধরতে চাই। চারশ পৃষ্ঠার কোন বইয়ে আমি হয়তো কবি কাজী নজরুল ইসলামকে প্রাসংঙ্গিকভাবে নিয়ে আসবো যা হয়তো এক পৃষ্ঠার সমান হবে। কিন্তু তার জন্য আমি কবির উপর প্রায় পনেরটি বই পড়েছি। উপন্যাস আমি কয়েকটি ধাপে ধাপে লিখি। প্রথমে মূল গল্পের কাঠামোটি দাঁড় করাই। তারপর আস্তে আস্তে তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার লাভ করে। তবে এই ক্ষেত্রটিতে আমি এখন শিক্ষানবিস। লেখকদের সাক্ষাতকার পড়তে আমার খুব ভাল লাগে। তাতে শেখার অনেক উপকরণ পাওয়া যায়।
গল্পপাঠ :
আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
শেখার আছে অনেককিছু, যেতে হবে অনেকদূর।
গল্পপাঠ :
আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
দেশে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর বিদেশে স্টাইনবেক।
গল্পপাঠ :
কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
আমার কল্পনার পাঠকরা কেউ কেউ খুব স্মার্ট, আবার কেউ কেউ খুব আটপৌরে। তবে কল্পিত পাঠকদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমার কল্পিত-নাতি-পুতিরা। আমি চাই তারা জানুন যে তাদের নানি / দাদি একদম হাত-পা গুটিয়ে বসা কোন মানুষ ছিল না। তিনি কখনই পেছনের দিকে হাঁটতে চাননি। সবসময়ই সামনের দিকে হেঁটে চলেছেন।
গল্পপাঠ :
এখন কি লিখছেন?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
এখন “ছোট পৃথিবীর বাসিন্দারা” নামে একটি আত্মজীবনীমূলক লেখা লিখছি।
গল্পপাঠ :
আগামীতে কি লিখবেন?
ওয়াহিদা নূর আফজা :
আগামীতে ‘তিতীক্ষা’ নামে একটি উপন্যাস লিখব।
0 মন্তব্যসমূহ