স্বপ্না মিত্রের গল্প : সাইকেল

“ Life is like riding a bicycle. In order to keep balance, you must keep moving.” 


চরৈবেতি, চরৈবেতি-- 

শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে যৌবন, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব, প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্য, চলতে থাকো, চলতেই থাকো। মুখ থুবড়ে পড়ে গেলে আবার উঠে দাঁড়াও, হে পথিক পথ চলো-- 

যত ক্ষণ চলমান, তত ক্ষণ জীবিত, থেমে গেলে মৃত সমান। আর কে না জানে, মৃতের ঠাই ভাগাড়ে-- 

অবশ্য মরা হাতির দাম লাখ টাকা, গ্যারেজের কোণে পড়ে থাকা ধূলি ধূসরিত মলিন সাইকেলের মূল্য পাঁচশো। আজ ওই দামেই অভি বিক্রি করে দিল সাইকেলটা। পশ্চিমের বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে বিমলবাবু সবই চুপচাপ দেখলেন। 

চলে গেল বিমলবাবুর বাল্য সাথী বাবুলাল। রদ্দিওয়ালাটাকে দেখাচ্ছিল ঠিক শ্মশান ঘাটের ডোমের মত। তবে মরা মানুষকে অন্তিম যাত্রায় পাঠাতে গ্যাঁটের পয়সা খরচ হয়, বাতিল বাবুলাল যেতে যেতে দিয়ে গেল পাঁচটা কড়কড়ে একশো টাকার নোট। 

কত দাম ছিল নতুন সাইকেলটার? 

সে কথা আজ আর বিমলবাবুর মনে নেই। শুধু মনে আছে বিমলবাবু তখন ক্লাস নাইনে পড়ে, জন্মদিনে বাবা উপহার দিয়েছিল সাইকেল। সাইকেলটার চেহারা ছিল ফুরফুরে, টুকটুকে লাল হ্যান্ডেল আর রড, কালো সিট, কেরিয়ারটাও ছিল কালো। টুকটুকে লাল রঙের কারনে মা সাইকেলটাকে বলতো ‘লালবাবু’। হঠাৎ ঝেঁপে বৃষ্টি এলে মা গলা তুলে ডাকতো, বিমল তোর লালবাবুকে বারান্দায় তুলে রাখ, বৃষ্টিতে ভিজে অত সুন্দর লেদারের সিটটা নষ্ট হয়ে যাবে-- 

বাবা হেসে বলেছিল, লালবাবু শুনলেই ফুলবাবু চেহারাটা মনে পড়ে। সাইকেলটা কিন্তু খুব কাজের, খুব তেজি, বরং এটার নাম দাও বাবুলাল। 

সাইকেলটার সামনে একটা লাল বাস্কেটও লাগিয়ে দিয়েছিল বাবা, টিউশন থেকে ফেরার পথে মা-র ফরমাশ মত দুধ পাউরুটি বা ডিম আনতে। ক্লাস নাইন, বিমলবাবু তখন ঝকঝকে সবুজ, সদ্য বেশ খানিকটা ঝেড়ে লম্বা হয়েছে, প্রায় বাবার মাথা ছুঁইছুঁই, চিবুকে নরম দূর্বা ঘাসের মত দু-চারটে দাড়ি, গোঁফের সরু কালো আভাস। 

বাবুলালের আগমনের পর মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও স্কুল ভ্যান ছেড়ে দেয় বিমলবাবু, সাইকেল চেপে রোজ স্কুল যাওয়া-আসা শুরু করে। বিকেলে টিউশন থেকে ফেরার পথে মাঝেমধ্যেই ঘুরতে যেত বন্ধুদের সঙ্গে, দূরে অনেকদূরে। বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া মানে শহরের পাকা রাস্তা থেকে বেরিয়ে নদীর চরের দিকে মেঠো পথে, ফাঁকা রাস্তায় সাইকেল রেস-- 

তবে বাবুলাল কখনও বিপদে ফেলেনি বিমলবাবুকে, বিশ্বস্ত সহচরের মত পাশে পাশে থেকেছে সবসময়, মাঝরাস্তায় চেন খুলে গড়াগড়ি যায়নি বা গর্তে হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়েনি। বাবুলালের কারণেই টুটুলের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বিমলবাবুর, যদিও খুব ফিল্মি পন্থায়। 

বয়েজ-স্কুল থেকে বেরিয়ে স্টেশন-রোড ক্রস করে সোজা তিন চার মিনিট এগোলেই লাল ইটের পাঁচিল ঘেরা হলুদ বিল্ডিংটা মেয়েদের স্কুল, টুটুল সেখানে পড়তো। টুটুল ক্লাসে ফার্স্ট গার্ল, মারকাটারি সুন্দরী। স্থানীয় বিমলবাবুর বয়সী ছেলেরা সবাই টুটুলকে চিনতো, সরস্বতী পুজোর দিন গার্লস স্কুলে ঢুকে দূর থেকে টুটুলকে দেখতো, কিন্তু কথা বলতে সাহস পেত না। বাজারে খবর ছিল টুটুলের নাক নাকি আকাশ সমান উঁচু! 

সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি পড়ছিল, তবু টিউশন না গেলেই নয়, সামনে হায়ারসেকেন্ডারির টেস্ট পরীক্ষা, দুটো ইংলিশ অ্যানালিসিস স্যারকে দেখাতেই হবে। স্যারের কাছে মেয়েদের ব্যাচে টুটুল পড়তো। কোন এক বিশেষ প্রয়োজনে সেদিন টুটুলও এসেছিল। পড়া শেষ হতে হতে সন্ধ্যে হয়ে যায়। মেঘলা দিনের সন্ধ্যাবেলা, চারপাশ খুব তাড়াতাড়ি হিমহিম ঘন অন্ধকারে ঢেকে গিয়েছিল। দু-সপ্তাহ আগে স্টেশনের কাছে বকুলতলায় একটা কেস হয়ে গেছে। স্যারই বললেন, টুটুলকে ড্রপ করে দাও বিমল, এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে এতটা রাস্তা একা মেয়ে পায়ে হেঁটে না যাওয়াই ভালো। 

টুটুলকে নিয়ে ডাবল রাইডিং! 

বিমলবাবুর বুক ধড়পড় টুটুল না টের পেলেও বাবুলাল নিশ্চয়ই বুঝেছিল। সেই থেকেই গার্লস স্কুলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাবুলালের গতি ধীর হয়ে যেত আর বিমলবাবুর চোখ খুঁজত সূর্যমুখীর মত উজ্জ্বল টুটুলকে। টুটুলের সঙ্গে আলাপটা জমেছিল, একটা প্রেম প্রেম ভাব যেন, তবে ধরি মাছ না ছুঁই পানি, কেউই আগবাড়িয়ে প্রেমের কথা বলেনি। 

ইউনিভার্সিটি থেকে বেরোনোর পর টুটুলের প্রতি টানটা আস্তে আস্তে থিতিয়ে যায়। মুখ্য হয়ে ওঠে চাকরি, উন্নতি, থিতু হওয়া। প্রতিমার সঙ্গে বিমলবাবুর বিয়ে হয় দেখেশুনে, হান্ড্রেড পারসেন্ট নেগোসিয়েশন ম্যারেজ। বিয়েতে কোন দেনাপাওনা হয়নি। তবে শখ করে শ্বশুর উপহার দিয়েছিলেন জামাইকে,একটা সিলভার কালারের বাইক। 

সেই শুরু। মোটরচালিত বাইকের আগমনে দু-চাকার বাবুলালের স্ট্যাটাস হয়ে দাঁড়ায় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মত-- 

নতুন বৌ প্রতিমাকে নিয়ে সিনেমা যেতে হলে বিমলবাবু বাইকে চেপেই যেতেন। একদিন বাবুলালের কথা পাড়তে প্রতিমা হেসেই খুন, গোড়ালির ওপর শাড়ি তুলে বরের পিছনে সাইকেলে ধানক্ষেতের আলপথ দিয়ে যাওয়া ব্যপারটা শুনতে রোমান্টিক, তবে বড় দৃষ্টিকটু, আমাকে দিয়ে হবে না। 

প্রথম প্রথম বাইকে চড়তে প্রতিমা খুব ভয় পেত, স্পীড বাড়ালেই দু-হাতে খামচে ধরত বিমলবাবুর পেট। ধীরে ধীরে গতির সঙ্গে প্রতিমাও অভ্যস্ত হয়ে যায়। বিয়ের দু-বছরের মধ্যেই অভি এসে পড়লো। প্রতিমা দক্ষ হাতে শিশু অভিকে কোলে নিয়ে বিমলবাবুর সঙ্গে বাইকে সিনেমা-হল থেকে ডাক্তারের চেম্বার সর্বত্র ঘোরাফেরা করতো। বাবুলাল ছিল বিমলবাবুর একার, রবিবারে বাজার বা ধারেকাছের প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য। 

অভির পাঁচ বছর বয়সে বাড়িতে চার চাকা এলো, বাইকের পিছন থেকে নীল মারুতিতে প্রতিমা চলে আসে বিমলবাবুর পাশের সিটে। নীল মারুতির পিছনের সিটে তখন অভির একার রাজত্ব। 

অভির দশ-বারো বছর বয়স আবার ডাক পড়েছিল বাবুলালের। প্রতিমাই বলেছিল, সাইকেল চালানো শেখার জন্য তোমার পুরনো সাইকেলটাই যথেষ্ট, একটু হাত পাকলে নতুন সাইকেল কিনে দেব। বিমলবাবু অবশ্য অন্যরকম ভেবেছিল, বাবুলাল তার আবাল্য সহচর, বাবুলালের হাতে বিশ্বাস করে অভির দায়িত্ব দেওয়া যায়। 

বাবুলালের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে বেশ তাড়াতাড়ি অভি সাইকেল চালানোয় দক্ষ হয়ে উঠলো। এবার পালা অভির নতুন সাইকেলের। অভির নতুন সাইকেল এলে আবার অতিরিক্ত হয়ে পড়লো বাবুলাল। তবে বিমলবাবু কখনও বাবুলালকে বাতিল হতে দেননি। ছ-মাসে ন-মাসে শখ করে তিনি বেরোতেন বাবুলালের সঙ্গে, হার্নিয়া অপারেশনের পর থেকে সেটুকুও বন্ধ, তিনি আর সাইকেল চালান না, ডাক্তারের বারন। সেই থেকে বাবুলালের জায়গা হয়েছে এক কোনে, বাতিলের মত। 

অভি আর অভির নতুন সাইকেল দেখে বিমলবাবুর মনে পড়তো নিজের ছেলেবেলা, টুটুলের কথা, সোনালী রঙের রেশমি রুমালে যত্ন করে মুড়ে রাখা এক মেঘলা দিনের সান্ধ্যস্মৃতি-- 

একদিন অভিকে দেখেছিল বিমলবাবু, অভির পিছনে একটি মেয়ে। সেই মেয়েটিই কী তুলি? সেকথা বিমলবাবু জানে না। তাছাড়া মেয়েটির চোখে ছিল সানগ্লাস, মাথায় আর গলায় জড়ানো স্কার্ফ, বিমলবাবু তখন তুলিকে চিনতো না। সেই মেয়েটি যেই হোক অভি নিজে বিয়ে করেছে তুলিকে, রেজিস্ট্রি ম্যারেজ। শ্বশুরের থেকে কোন উপহার পায়নি অভি, তবে চাকুরিরতা তুলি সাহায্য করেছে গাড়ি কিনতে, বাড়ি বাড়াতে। বাবার তৈরি বাড়িতে বিমলবাবু যোগ করেছিলেন অ্যাটাচড বাথরুম সহ একটা শোয়ার ঘর আর স্টাডি। অভি আর তুলি দোতলা তুলেছে, গ্যারেজ করেছে-- 

আধুনিকা, শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী তুলি গোছালো স্বভাবের, ছিমছাম থাকতে পছন্দ করে। এতদিন অভির সাইকেল ব্ল্যাকির হ্যান্ডেল ছিল নাতিবাবুর হাতে, এখন নাতিবাবুর জন্যও নতুন সাইকেল নেওয়ার সময় হয়ে এলো। তবে নাতিবাবুর বোধহয় সাইকেলে মন নেই, তার একটা মোপেড চাই। 

ব্ল্যাকিকে গ্যারেজ করতে বাবুলালকে সরতেই হত, গ্যারেজের আয়তন তো আর অসীম নয়। তাছাড়া বাবুলাল এখন লজঝড়ে, হ্যান্ডেলে রডে জায়গায় জায়গায় জং ধরেছে, ঘণ্টি বাজে না, পিছনের চাকার দুটো স্পোকস ভাঙা, চেন ঢিলা। পরিবর্তে ব্ল্যাকি এখনও কাজের, চলমান। 

শুধু বাবুলাল নয়, বাড়ির যত বাতিল জিনিস তুলি জড়ো করছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে। পাড়ার রদ্দিওয়ালাকে অভি বহুদিন চেনে। সরকারী বড় অফিসার অভি বলেছিল, পয়সার দরকার নেই, এমনিই দিয়ে দাও, বাড়িটা তো খালি হবে-- 

তুলি বলেছিল, আহা, দু-দশ টাকা যা পাওয়া যায় মন্দ কী! 

বারান্দা থেকে বিমলবাবু স্বচক্ষে দেখলেন, দু-দশ টাকা নয়, বাবুলাল একাই পাঁচশো দিয়ে গেল। তুলির গিন্নীপনা দেখে বিমলবাবুর মনে পড়ে যায় প্রায় ভুলে যাওয়া একটা ঘটনা-- 

প্রতিমা ছিল তুলির থেকেও বেশি পরিপাটি। প্রতিমার নিখুঁত সংসারে চট করে খুঁত চোখে পড়তো না। বাবা মারা যাওয়ার পর মা একটু আলগা স্বভাবের হয়ে গিয়েছিল, রান্নাঘরে ঢুকত না, অভি ছাড়া কারও সঙ্গে সেভাবে গল্পও করতো না, সারাদিন ডুবে থাকতো আলমারি ভরা বই আর খবরের কাগজ নিয়ে। 

মা-র হাতের এমব্রয়ডারি ছিল দেখবার মত, মন ভালো লাগলে চোখে চশমা লাগিয়ে মা বসতো সেলাইয়ের বাক্স খুলে। বাবার চশমাটা রাখা ছিল কাঁচের আলমারির কোনে, কাঁচ ভাঙা বাবার চশমাটা মা প্রাণে ধরে ফেলে দেয়নি। 

সেরিব্রাল অ্যাটাকে বাবা যখন মেঝেতে পড়ে যান, বাবার চোখে চশমা ছিল, চশমাটা চোখ থেকে ছিটকে পড়ে ঘরের কোনে, ডানদিকের কাঁচটা আড়াআড়ি ভাবে দু-টুকরো হয়ে যায়, বাঁ-দিকের কাঁচটা অক্ষত থাকে। মানুষটা চলে গেল, মা রেখে দিল চশমাটা-- 

প্রতিমা বলেছিল, ভাঙা চশমা পুষে রেখে লাভ কি? 

সত্যি, লোকে কুকুর পোষে, ঘৃণা পোষণ করে, তাই বলে একটা ভাঙা চশমা? 

আলমারি গুছোতে প্রতিমা বিদায় করেছিল আবর্জনা স্বরূপ সেই অকাজের চশমাটিকে। 

সেদিন ছিল রবিবার। দুপুরে মাংস ভাত খেয়ে বিমলবাবু বিছানায় গড়াচ্ছে, পাশে অভি বই হাতে শুয়ে। প্রতিমা তখনও রান্নাঘরে, ফ্রিজে খাবার তুলতে ব্যস্ত। হঠাৎ একটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদ। অভি চেঁচিয়ে ওঠে, বাবা, ঠাম্মা পড়ে গেছে-- 

পড়িমরি করে ছুটে গিয়ে বিমলবাবু দেখে, নাহ মা পড়ে যায়নি, খোলা আলমারি, সামনে দাঁড়িয়ে স্থাণুবৎ মা। 

অভি রিনরিনে গলায় জিজ্ঞাসা করে, কি হয়েছে ঠাম্মা? 

ঘরে ঢুকে বিমলবাবু চিত্রাপিতের মত থেমে যান, দেখেন,মা-র চোখে ভয় নেই, জল নেই, আছে শুধু বিস্ময় আর তিরস্কার। 

তত ক্ষণে প্রতিমাও এসে দাঁড়িয়েছে দোরগোড়ায়। প্রতিমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে মা বিড়বিড় করেছিল, ফেলে দিলে? আমাকে একবার জিজ্ঞাসাও করলে না? 

বাবুলালকে বিদায় দেওয়ার আগে বিমলবাবুকেও কেউ জিজ্ঞাসা করেনি, শুধু অভি এসে জানিয়েছিল--    

বাবা, গ্যারেজটা একদম ভরে গেছে, হার্নিয়া অপারেশনের পর তুমি তো আর সাইকেল চালাও না, তাছাড়া বাবুলাল এখন পুরোপুরি অকেজো, ওটা আর সাইকেল নয়, কয়েক কেজি লোহা মাত্র। এই রবিবার রদ্দিওয়ালাকে ডেকেছি, বাড়ির যত বাতিল জিনিস নিয়ে যাবে, বাবুলালকেও। 

প্রতিবাদে বেজে উঠতে গিয়েও বিমলবাবু থেমে যায়-- 

You must keep moving, জীবিতরা এগোয়। মৃতেরা থেমে থাকে, অচল। বাবুলাল এখন অচল, তাকে মায়ায় বেঁধে রেখে আর লাভ নেই, রদ্দিওয়ালাই তার যথার্থ স্থান। তাছাড়া, আজ বাদে কাল বিমলবাবুর নিজের স্থানই বা কোথায় হবে কে জানে। 

গত পরশু তুলির চাপা গলা বিমলবাবুর কানে এসেছে, কোলকাতার আশেপাশে অনেক ওল্ড-এজ হোম হয়েছে, মা চলে যাওয়ার পর তোমার বাবা এত লোনলি, মনের কথা বলার মত একজনও নেই, ওল্ড-এজ হোমে থাকলে অনেক বন্ধু হত-- 

তুলির কথায় অভির সায় বা প্রতিবাদ কোনটাই বিমলবাবুর কানে আসেনি। তার কানে এসেছে শুধু করিডর থেকে গ্র্যান্ডফাদার ক্লকের টিকটিক টিকটিক, সময়ের চাকা গড়িয়ে যায়, ঋতুর পরিবর্তন হয়, প্রতিমা বোঝেনি, তুলিও বুঝলো না, কেউ বোঝে না-- 

রদ্দিওয়ালা বেরিয়ে যেতে বিমলবাবুর চোখ পড়ে উঠোনের দিকে। উঠোন ভর্তি উত্তুরে হাওয়ায় উড়ে আসা বাগানের শুকনো পাতা-- 

কাজের মেয়েটি ঝাড়ু দিয়ে শুকনো পাতাগুলো এক জায়গায় জড়ো করছিল। তুলি উঁচু গলায় কাজের মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে, পাতাগুলো জড়ো করছিস কেন? ওগুলো প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দে। 

কর্ম পটু মেয়েটি বলে ওঠে, ডাস্টবিনে না গো বৌদি, আমি এগুলোকে আগুণ জ্বালিয়ে সগগে পাঠিয়ে দেব। 

তখনও দূরে রদ্দিওয়ালার সঙ্গে বাবুলালকে দেখা যাচ্ছে। 

সেদিকে তাকিয়ে বিমলবাবুর ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে--

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ