বারই গ্রামের জ্যোৎস্নাকে কে না চিনত? তার বাবা হাতেম আলি ছিলেন ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, মামা চান মিয়া দশ গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি। কিন্তু জ্যোৎস্নার খ্যাতি তার বাবা অথবা মামার জন্য নয়। খ্যাতির কারণ ছিল তার গানের গলা। পুরোনো লোকজনকে এখনো জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন, তারা বলবেন, জ্যোৎস্না যখন গান গাইত, যেন মনে হতো মর্তের কেউ নয়, আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো পরি গান গাইছে।
এই পুরোনোদের একজন, সিরাজুদ্দিন, এখনো বিশ্বাস করেন, রাতে জ্যোৎস্নার গান শুনে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে আসা কোনো বাঘ লেজ গুটিয়ে বসে থাকত, সে আর গৃহস্থের ছাগল অথবা মুরগি খেতে উৎসাহ পেত না।
এই পুরোনোদের একজন, সিরাজুদ্দিন, এখনো বিশ্বাস করেন, রাতে জ্যোৎস্নার গান শুনে জঙ্গল থেকে লোকালয়ে আসা কোনো বাঘ লেজ গুটিয়ে বসে থাকত, সে আর গৃহস্থের ছাগল অথবা মুরগি খেতে উৎসাহ পেত না।
এক বুড়োবাঘের আক্রমণে সিরাজুদ্দিনের একটা হাত নুলো হয়েছে। সেটি অবশ্য বড় কথা নয়; অথবা এটাও তেমন কোনো দেওয়ার মতো তথ্য নয় যে তার ছেলে মকন বাঘটিকে পিছু ধাওয়া করে পিটিয়ে মেরেছিল। তবে মকনের নামোল্লেখটা একসময় করতেই হতো--আগেভাগে করে ফেলাতে লাভই হলো। যেহেতু জ্যোৎস্নার সঙ্গে মকনের একটা সম্পর্ক হয়েছিল, বাঘের সঙ্গে বাঘিনীর যেরকম সম্পর্ক হয়।
এই তুলনাটির একটু ব্যাখ্যা করতে হয়। আমরা দেখেছি, প্রত্যন্ত গ্রামেও মানুষের ঘরবাড়ি বেড়েছে, ফসলের জমি হাত বাড়াচ্ছে জঙ্গলের অন্দরমহলেও; সেজন্য বাঘের দিন গেছে। মহা দুর্দিনই চলছে বলা যায়। এ কারণে কি না কে জানে, বাঘের দাম্পত্য এবং যৌনজীবন সম্পর্কে মানুষের জানাবোঝা যেমন নেই, আগ্রহও তেমন নেই। যেমন, আপনারা কজন জানেন যে, সঙ্গী নির্ধারণে বাঘিনীই প্রথম উদ্যোগ নেয়, সঙ্গীকে সে প্রলোভিত করে। তখন তাকে দেখলে মনে হবে যেন সে-ই পুরো বিষয়টার নিয়ন্তা। বাঘটা আছে শুধু তার পায়ে পায়ে ঘোরার জন্য। অথচ একবার সম্পর্ক স্থাপন হলে দেখুন, বাঘিনী বিনম্র শরাফতি দেখিয়ে পুরো জায়গাটা ছেড়ে দেয় বাঘ মহাশয়ের হাতে। যেন তার এখন কাজ একটাই। প্রতিটি কাজে ওই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো।
বাঘেদের যৌন আচার বিষয়ে আরেকটি তথ্য কি জানেন অথবা জানা সম্ভব আপনাদের? বাঘ অনেক দূর থেকে যে বাঘিনীটির ডাক শোনে, তা তার হুংকার অথবা অহুংকার শুনে নয়, তার গায়ের গন্ধ শুকে। সঙ্গীকামী বাঘিনীর গা থেকে একটা বিশেষ ঘ্রাণ বেরোয়, বিশেষ করে জোছনার রাতে, যার টানে বাঘ বেহুঁশ পর্যন্ত হয়ে যায়।
বাঘেদের সম্পর্কে অনেক তথ্য দেওয়া হলো, আরও যদি জানতে চান সিরাজুদ্দিনের কাছ থেকে জেনে নিন । তিনিই আমাকে এই জ্ঞানগুলি দিয়েছেন। সত্য-মিথ্যা তিনিই জানেন। তাকে সালাম।
এক রাতে হাতেম আলি চেয়ারম্যান নিজের বাড়িতে গানের আসর বসিয়েছিল । এটি ছিল তার একটা বিশেষ সখ। তার আসরে কুলাউড়া, শ্রীমঙ্গল, এমনকি সুনামগঞ্জ থেকেও শিল্পীরা আসতেন। রাধারমণের গান গাইতেন মাক্কু শাহ, অথবা দূরবীন শাহের গান গাইতেন ময়না বিবি। কোনো কোনো সময় সরকারি কোনো কর্তাব্যক্তি ছুটিতে এলে তার সম্মানে গানের আসর হতো। মৌলভীবাজারের এসডিও কাজেম শেখ একবার হাতেম আলির বাড়িতে এসে সারা রাত ঠায় বসে গান শুনেছেন আর মশার কামড় খেয়েছেন। তিন দিন পর তার ম্যালেরিয়া হয়েছিল এবং এগারো দিন পর তিনি মারাও গিয়েছিলেন।
কাজেম শেখের বাড়ি ছিল শিয়ালকোটে, যদি জানতে চান। তার মৃতদেহ সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য এই মৃত্যুর অপরাধটা হাতেম আলির ওপর বর্তায় নি। আর বর্তালেও তিনি বেঁচেই যেতেন শেষ পর্যন্ত, যেহেতু হাতেম আলি ছিলেন স্থানীয় মুসলিম লীগের এক শক্তিশালী নেতা।
বাড়িতে গানের আসর বসানোর পেছনে অন্য একটা উদ্দেশ্যও ছিল হাতেম আলির। বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে এক কাতারে মেয়ে জ্যোৎস্নাকে বসিয়ে দিয়ে গান গাওয়ানো। মাক্কু শাহ জ্যোৎস্নার গান শুনে এতোটা আপ্লুত হয়েছিলেন যে তাকে শিষ্যা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হাতেম আলি রাজি হন নি। তিনি চান নি জ্যোৎস্না বাড়ির বাইরে গিয়ে গান করুক, বা গুরুর সঙ্গে সময় কাটাক। কেননা জ্যোৎস্নার বিবাহ হয় নি। আর দ্বিতীয় কারণ ছিল একটি সুপ্ত অহংকার। আমার মেয়ে কারও থেকে কম নয়, মাক্কু ভাই, সে মনে মনে বলেছিল, তার গুরুর দরকার নেই।
হাতেমের সংগীতপ্রীতি যতটা পরিমাণগত, ততটা গুণগত ছিল না। থাকলে এই কথাটি সে বলতে পারত না।
আর জ্যোৎস্নার যে বিবাহ হয় নি বলে জানিয়েছি, কেন হয় নি? বয়সই বা তার কত?
তার বয়স ২৪। বিবাহ হয় নি কারণ তার একটি পা নুলা। ছোটবেলা পলিও হয়েছিল ।
বেচারা!
২
মাক্কু শাহ জ্যোৎস্নাকে শিষ্যা হিসেবে না পেয়ে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছিলেন। এরকম প্রতিভাবান শিল্পী জগতে তিনি আর দ্বিতীয়টি দেখেন নি। তার আফসোস হলো, এরকম একটি মেয়েকে তিনি নিজে তালিম দিলে না জানি কেমন উচ্চতায় পৌঁছে যেত। তিনি যে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা তাকে 'ভ্রমর কইও গিয়া' গানটি শিখিয়েছেন, তাতেই যে পারদর্শিতা জ্যোৎস্না দেখাল তা রীতিমত হতবাক হওয়ার মতো। মাক্কু শাহ বয়সে খুব প্রবীণ নন, মাত্র ৫৪, অথচ তাকে দেখতে ৮০ বছরের বৃদ্ধ মনে হয়। খোদাতালা জগতে এরকম কিছু অকালবৃদ্ধ তৈরি করেছেন। কিন্তু মাক্কু শাহ ক্ষোভের সঙ্গে সৃষ্টিকর্তাকে বলেছেন, আমার ডিজায়ার বলে কি কিছু থাকতে নেই, হে পরমেশ্বর? এবং ডিজায়ার মেটাবার কোনো উপায়? যথা জ্যোৎস্না?
তিনি জ্যোৎস্নাকে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেছেন। তখন তার মনে প্রবল দ্বন্দ্ব হয়েছে। আশীর্বাদ করছেন এক কন্যাসম মেয়েকে, কিন্তু হাতে সুখানুভূতি পাচ্ছেন একজন দয়িতের। হা খোদা, রক্ষা করো।
খোদা তাকে রক্ষা করেছেন। সুনামগঞ্জ থেকে টেলিগ্রাম এসেছে, মাক্কু শাহের বড় বোন আলতাবুন্নেছা মৃত্যুশয্যায়। তিনি সুনামগঞ্জ ছুটে গেছেন। কিন্তু তার আগে তিনি জ্যোৎস্নাকে নিজের হাতে একটা নোলক উপহার দিয়েছেন। নোলক কেন? নোলক পরে গান গাইলে সে গানে একটা আলাদা অনুরণন থাকে। যখন জ্যোৎস্না এই নোলক পরে গাইবে- 'শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে, অঙ্গ যায় জ্বলিয়ারে ভ্রমর' তখন সেই অনুরণনে শ্রোতার অঙ্গও জ্বলবে। মাক্কু শাহ নিজ হাতে জ্যোৎস্নাকে নোলক পরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কি আর সম্ভব? সেজন্য হাতটা চাদরের নিচে ঢুকিয়ে তিনি নিষ্ক্রান্ত হয়েছেন।
বিদায় মাক্কু শাহ।
জ্যোৎস্না ভরা গলায় গাইল- 'ভ্রমর কইয়ো গিয়া'। রাত দশটা বাজে। বারইতে ভর মধ্যরাত। মানুষজন, পাখি, বৃক্ষলতা সব নিদ্রামগ্ন। শুধু শ'চারেক মানুষ হাতেম আলির বিশাল উঠানে বসে গান শুনছে।
তাদের মধ্যে মকনও ছিল। জ্যোৎস্না যখন 'শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে' বলে টান দিচ্ছে, তখন সকলের সঙ্গে মকনের মনেও টান। মকন সেই টানে উঠে দাঁড়াল। সে উসখুস করছে। আগেও জ্যোৎস্নার গান সে। শুনেছে। কিন্তু আজ জ্যোৎস্নার গান যেন তার মর্মমূল কাপিয়ে দিচ্ছে। কেন তার শরীরের কোষে কোষে এমন অনুরণন?
সে মন্ত্রমুগ্ধের মতোই হাঁটা দিল সেই দিকে যেখানে বসে জ্যোৎস্না আপন মনে চোখ বন্ধ করে গাইছে।
যেখানে মানে বাইরের ঘরের দাওয়ায়। তার বায়ে একতারা হাতে বাবুল বিশ্বাস, ডানে তবলায় তারা মিয়া এবং বেহালা বাজাচ্ছে সুরেন্দ্র। সুরেন্দ্র পাল, জ্যোতির্ময় পালের দৌহিত্র।
জ্যোতির্ময় পাল, যদি আপনাদের স্মরণে থাকে, শান্তিনিকেতনে রবিঠাকুরের সামনে আড়াই ঘণ্টার এক অপার্থিব বেহালা বাদনে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে রেখেছিলেন কোনো এক আষাঢ়ের দিনে। রবীন্দ্র জীবনীকাররা জানিয়েছেন সেই বাদনে রবিঠাকুরের চোখে জল এসেছিল। তবে সে জল বৃষ্টির ফোঁটাও হতে পারে।
মকন দাওয়ার ঠিক নিচে বসে পড়ল। তার দেহ অবশ, চক্ষু অবশ, অথচ মনের রাজ্যে বিরাট ওলটপালট। সে চোখ দিয়ে জ্যোৎস্নাকে দেখছে, আর তাকে অল্প অল্প করে মনের আহার্যে পরিণত করছে। জ্যোৎস্না যখন গাইল- 'ভবের তরী কোথায় ভিরাই গো সাঁই' এবং 'আমার সাধন হইল না গো সাঁই, মনের মধ্যে আরেক গোসাই মকনের তখন এমন অপার্থিব আনন্দ হলো যে তার শরীরে এর প্রতিক্রিয়ায় এক বিশাল তোলপাড় ঘটে গেল।
এ ধরনের গানের প্রতিক্রিয়ায় যা কখনো হওয়া উচিত নয় তাই ঘটল । তার নিম্নাঙ্গে টান পড়ল । বংশদণ্ড দাঁড়িয়ে গেল, এবং তার ভেতর দিয়ে নানাবিধ বৈদ্যুতিক স্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। একসময় লজ্জায় লাল হয়ে মকন অনুভব করল, একটা প্রবল ছিপিখোলা উৎক্ষেপণ কিছু পদার্থ ছড়িয়ে দিল সারা নিম্নাঙ্গে।
সেই ছড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তে জ্যোৎস্নার গায়ে কোনো কাপড় দেখল না এবং তার হাত দুটোকে সে দেখতে পেল জ্যোৎস্নার শরীরের যত্রতত্র। তার প্রচুর ভয় হলো, লজ্জাও হলো। কোনোক্রমে দাঁড়িয়ে উঠে সে নষ্ট কাপড় সামলে বাড়ির পথে দৌড়াল। যদিও সে জানে মাঝপথে তাকে কোনো পুকুরে নামতে হবে।
অগ্রহায়ণ বলে রক্ষা। মাঘ হলে কী করত মকন?
৩
মকনের চোখে বারই-সুন্দরী জ্যোৎস্নার কোনো বিকল্প ছিল না। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিল না। সে নানাভাবে এই সৌন্দর্যকে হাতে ধরে নিতে সচেষ্ট হয়ে পড়ল।
প্রথমেই সে যা করল, জ্যোৎস্নার বাড়ির আশপাশে টহল বাড়িয়ে দিল। দিনে ২-৩ ঘণ্টা ওই বাড়ির এক শ' গজের মধ্যে কাটে তার। তার পরও জ্যোৎস্নার দেখা নেই।
কিন্তু দেখা একদিন পাওয়া গেল বটে। এবং সেদিন মকন সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিল, এরকম অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তির জন্য। জ্যোৎস্না দুপুরের পর বেরুল, চৌঢালা যাবে বলে। বারই-এর এক গ্রাম দূরে চৌঢালা, সেখানে তার চাচাতো বোন তানজিলার শ্বশুরবাড়ি। তানজিলা সন্তানসম্ভবা, তাকে দেখতে যাচ্ছে জ্যোৎস্না।
একটা ভ্যানগাড়ি আনা হয়েছে তার জন্য, যেহেতু তার পা নুলা। ভ্যানগাড়িতে দুটো বালিশ, যাতে সেগুলোতে ঠেস দিয়ে আরাম করে বসতে পারে জ্যোৎস্না। হাতেম আলি তার প্রিয় বান্দী সোনাভানকে দিয়েছেন জ্যোৎস্নার সঙ্গে। কিন্তু সঙ্গে কোনো পুরুষ নেই। টহলদানরত মকন এগিয়ে এসে বলেছে, চাচা, আমি পশ্চিম পাড়ার হাজী সিরাজুদ্দিনের ছেলে মকন। চৌঢালায় আমিও যাচ্ছি। জ্যোৎস্না আপাকে দেখভালও করে নিয়ে যেতে পারব, যদি অনুমতি দেন।
এমনি নিচ্ছিদ্র সুখ্যাতি সিরাজুদ্দিনের, একজন ভালো মানুষ হিসেবে যে, হাতেম আলি দ্বিতীয়বার চিন্তা না করে বলেছে মকনকে- বাবা, যদি এই কষ্টটা করো, বড়ই কৃতার্থ হই।
আর জ্যোৎস্না আপা যদি কাল ফেরে তাহলে তখনো সঙ্গে থাকতে পারি।
তোমার জয় হোক বাবা, বলেছে হাতেম আলি ।
৪
জ্যোৎস্না কিছু বুঝে ওঠার আগেই মকন নিজেকে চালিয়ে দিয়েছে তার ওপর। নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেছে। সে বসেছে ভ্যানগাড়ির এক পাশে, পা ঝুলিয়ে। কিন্তু আধা ঘণ্টার যাত্রায় জ্যোৎস্না পরিষ্কার শুনেছে মকনের হার্টবিট। তার প্রতিটি নিঃশ্বাস সে পড়তে পেরেছে।
সোনাভান কানে খাটো, কালা। না, না, ভাববেন না, গল্পের কারণে তার শ্রবণশক্তি আমরা বিনষ্ট করে দিচ্ছি। সোনাভান প্রকৃতই কিছু শুনতে পায় না। নিচুস্বরে প্রমিত প্রেমালাপ তো মোটেও না। কাজেই সে শুনতে পেল না জ্যোৎস্না বলছে মকনকে, আমি এক সামান্য গায়িকা, আমাকে এত অসামান্য বলছেন কেন আপনি? এবং জবাবে মকন বলছে, আমাকে কি একবার 'তুমি' বলবে প্লিজ? যদি একবারও আমাকে তুমি বলো, আমি যে আনন্দ পাব, সেই আনন্দে আমি মরতে রাজি থাকব।
সোনাভান আরও শুনল না, আধা ঘণ্টা পার হওয়ার আগের কথোপকথন :
মকন : তোমার হাত ধরে পৃথিবীর শেষ মাথায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে।
জ্যোৎস্না : তুমি এত সুন্দর করে কথা বলো। তোমার কথা শুনে আমি আগুনে ঝাঁপ দিতে পারি, পতঙ্গ যেমন ঝাঁপ দেয় সন্ধ্যার প্রদীপে।
অথবা যাত্রা শেষ হওয়ার ঠিক আগের সংলাপ :
মকন : তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় তোমার সারা শরীর ভরিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।
জ্যোৎস্না : এই ইচ্ছাটুকু আমার কাছে মনে হচ্ছে খুব পবিত্র একটি অভিলাষ।
পবিত্র অভিলাষ? হাঃ! জ্যোৎস্না জানে না, মকনের সারা চিন্তা জুড়ে যে অভিলাষ, তা আর যাই হোকক, পবিত্র অবশ্যই নয়।
কেননা, মকনের মনে হচ্ছে, সে জ্যোৎস্নার শরীরে প্রবেশ করছে এবং তার যথারীতি...
কী কামাতুর ছেলেরে বাবা!
কিছুদিন পর মকন একটি চিঠি পেল। নীল কাগজের চিঠি। ভেতরে ছড়ানো কিছু গোলাপ ফুলের পাপড়ি, এবং কাগজে মাখানো কিছু সুগন্ধি। হাতের লেখা খুব একটা জুতসই নয়, কিন্তু মকনের পড়তে অসুবিধা হয় নি। জ্যোৎস্না লিখেছে :
আম মিষ্টি জাম মিষ্টি তেতুল কেন টক
তোমার গালে চুমা খেতে আমার বড় শখ।
আপনি হয়তো বলবেন, নিখাদ গ্রাম্যতা। তা বটে। কিন্তু আপনি এই মেয়েটির জায়গায় হলে কী করতেন, বলুন? চব্বিশ বছরের যৌবন, গায়িকা হোক আর নাই হোক, বাউল অঙ্গের গান পরিবেশন করুক আর নাই করুক, এই অবস্থায় তার রক্ত কণিকায় কি কামনা-বাসনা জমাট বেঁধে থাকবে বরফের মতো, নাকি বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো কল্লোলিত হবে? সে অতিশয় সুন্দরী, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু একটি নুলা পায়ের জন্য তার জীবন একটা খাদের মধ্যে পড়ে গেছে। দিকচিহ্নহীন। যদি মকন তাকে একটা দিকচিহ্ন দেখায়, এবং তাকে বলে, তুমি আর তোমার গান, তোমার গান আর তুমি এ নিয়েই আমার সারা জীবন, অথবা, তোমাকে এই দুটি হাতে ধরে বুকের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে পারলে আমার সুখ, অথবা--
মেঘ কালো, কালি কালো, আর কলঙ্ক যে কালো
তবু তোমার সবুজ মন যে সেই কালোতেও আমার আলো
তোমায় সখি তাই সারা জীবন ধরে আমি বাসব ভালো।
তাহলে সে কী করবে? মকনের এই স্বরচিত কবিতা পড়ে জ্যোৎস্না তার হৃদয়টা একটা দুর্দান্ত গিফট র্যাপারে চমৎকারভাবে প্যাক করে মকনকে পাঠিয়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন মকন একটা অদ্ভুত ঘ্রাণ পাচ্ছিল--যে ঘ্রাণটা আদি ও অকৃত্রিমভাবে জ্যোৎস্নার গায়ের । এক চাঁদের রাতে সেই ঘ্রাণের টানে সে আধামাইল হেঁটে নদীর ধার পর্যন্ত গিয়েছিল। এবং এক সময় ভুল বুঝতে পেরেছিল। জ্যোৎস্নার শরীরের ঘ্রাণ সে পাচ্ছিল বটে, কিন্তু জ্যোৎস্না ওই নদীর পারে ছিল না।
তাহলে ঘ্রাণটা কীভাবে এল?
উত্তরটা খুব সহজ। পাঁচদিন আগে জ্যোৎস্না এই নদীতীর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে গিয়েছিল চান মিয়ার বাড়ি। বিশিষ্ট মুরব্বি চান মিয়ার বাড়ি একটু দূরে নদীর বড় বাঁকে।
মকন নদীর তীরে একটা ঝোঁপের পাশে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে। সে বলেছে, হা খোদা, রক্ষা করো।
৫
জ্যোৎস্নার সঙ্গে এক সন্ধ্যায় মাঠের এক কোণায় কিছুক্ষণ হাঁটতে গিয়ে মকনের চোখে পড়ল, জ্যোৎস্নার নাকের নোলক খুব আলো ছড়াচ্ছে। নোলকটা তার পছন্দ না, একেবারে সেকেলে একটা ব্যাপার। সে বলল, নোলকটা তোমাকে মানায় না।
জ্যোৎস্না অবাক হয়ে বলেছে, অবশ্যই মানায় ।
মকন বলেছে, তোমাকে গ্রাম্য গ্রাম্য লাগে। জ্যোৎস্না হেসে বলেছে- আমি গ্রামের মেয়ে। গ্রাম্য লাগবে না তো কি শহুরে লাগবে?
মকন বলেছে, তোমার নোলকটা আমার একটুও ভালো লাগে না।
জ্যোৎস্না কণ্ঠে পুলক ঢেলে বলেছে, এটি আমার গুরু দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই নোলকটা পরলে আমার গলায় একটা বিশেষ আওয়াজ আসবে, যা মানুষের বুকের ভেতরে চলে যাবে ।
কে তোমার গুরু?
নাম বলা নিষেধ, বলেছে জ্যোৎস্না।
মকন নোলক পরা জ্যোৎস্নার গলা শুনে চিত্তহারা হয়েছে। তার ভেতরে জ্যোৎস্নার জন্য অনুরণন তুলেছে। হয়তো নোলকটা না পরলে মকনের মনের গহিনে চলে যেত না জ্যোৎস্নার কণ্ঠস্বর । কিন্তু অসুরটা এই সত্যটাকে ধরতে না পেরে বরং তা অস্বীকার করেই বলে বসল, নোলক পরলে তোমাকে ভালো লাগে না।
জ্যোৎস্না তখনো বাঘিনী। সে হেসে বলল, গুরুর দেওয়া নোলক, এটি মৃত্যু পর্যন্ত পরতে হবে আমাকে।
জ্যোৎস্নার কথা মকনের চোখে এমন একটা শীতল ছাপ ফেলে গেল যে, যদি মাক্কু শাহ তা দেখতেন, তাঁর রক্তও হিম হয়ে যেত।
ভাগ্য, তিনি সুনামগঞ্জে। বড় বোন মারা গেছেন। তাকে পিতৃমাতৃহীন ভাগ্নে-ভাগ্নিদের দেখাশোনা করতে হচ্ছে।
৬
বাঘিনী যে ক্রমেই বিক্রম হারাচ্ছে, এটি আমাদের চোখে ধরা পড়ল। কিন্তু জ্যোৎস্নাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে, মকনকে আমি আলস্যের পথ থেকে কাজের পথে ফিরিয়ে আনব। মকন কর্মহীন যুবক। জ্যোৎস্না ভালোবাসে কর্মময় জীবন। কিন্তু কে ফেরায় কাকে। কিছুদিনের মধ্যে জ্যোৎস্না ভাবতে শুরু করেছে, তারা দুজন বিয়ে করে সন্ন্যাসী হবে । অর্থাৎ সারা দেশে ঘুরে বেড়াবে। গান শোনাবে মানুষজনকে। গান শুনিয়ে যেটুকু আয়-ইনকাম হয়, ব্যস, তা দিয়ে চলবে। মকন তাকে বলেছে, তা বটে, তোমার আমার জীবন একটা অভিন্ন সুতায় বাঁধা।
সেই সুতাটার এমাথা-ওমাথা দেখা দরকার, কী বলো? মকন বলেছে।
জ্যোৎস্না বলেছে, অসম্ভব, জীবনের এমাথা-ওমাথা একসঙ্গে কেউ দেখতে পায় না, এটি একমাত্র ওপরওলার এক্তিয়ার।
মকন কথায় হারতে রাজি নয়। সে রেগে গেল। আমি বলছি, জীবন শুরু করার আগে জীবনটাকে একটু জেনে নিতে হবে। এখন আমাদের তাই করা উচিত।
সেটি কি ভাবে সম্ভব ? সরল প্রশ্ন জ্যোৎস্নার ।
তোমার সঙ্গে কটা দিন কাটিয়ে। সরল উত্তর মকনের।
অতএব যা হওয়ার তাই হলো।
মাস-তিনেক পর বাঘিনী বাঘের পায়ের কাছে এসে পড়ল। এখন আর উপায় নেই। পেটে সন্তান। এখন তাড়াতাড়ি কিছু একটা করো।
কী করতে হবে মকন তা ভেবে রেখেছে। কিন্তু সেজন্য সিলেট যেতে হবে। সিলেটেও সম্ভব কি না, কে জানে। হয়তো ঢাকাতে গেলে সমাধানটা হয়। সমাধানটা আর কিছু নয়, ভ্রূণটিকে বিসর্জন দেওয়া।
মকনের কাছে যা ভ্রূণ, জ্যোৎস্নার কাছে তা সন্তান। জ্যোৎস্না জানাল- সম্ভব নয়। পেটের সন্তানকে সে ফেলবে না। জ্যোৎস্নার কাছে সমাধানটি আরও সহজ- তারা বিয়ে করে ফেলবে।
তাতে মকন রাজি নয়। কেন রাজি নয়, এ এক রহস্য। সে যে জ্যোৎস্নাকে ভালোবাসে না, তা কিন্তু নয়। তবে স্ত্রী হিসেবে তাকে কখনো কল্পনা করে নি। করে নি বলেই সে বেঁকে বসেছে। চাপের মুখে বিয়ে না। যাক আর কিছুকাল। ইতিমধ্যে ভ্রূণটা ফেলে দিলেই হবে।
জুরি অঞ্চলে মকনের মতো রাগসম্পন্ন নির্বুদ্ধির মানুষকে বলে 'ছুকুমবুধাই'। জ্যোৎস্না তাকে বলল, এরকম ছুকুমবুধাইয়ের মতো গোঁ ধরো না। একটু ভেবে দেখো।
মকন কথা না বলে চলে গেল ।
কাজেই জ্যোৎস্না এক সন্ধ্যায় সিরাজুদ্দিনের বাড়িতে এসে উপস্থিত হলো। সিরাজুদ্দিনের স্ত্রী গত হয়েছে। বড় দুই ছেলে থাকে সিলেটে। একটি কাজ করে পোস্টঅফিসে, অন্যটি সিভিল সার্জনের অফিসে। এক মেয়ে থাকে মাধবপুরে স্বামীর বাড়িতে। সন্ধ্যায় সিরাজুদ্দিন বাজারে আড্ডা মারেন কিছুক্ষণ, আর কোথাও গানের আসর থাকলে নাওয়া-খাওয়া ভুলে সেখানে চলে যান।
যেমন, জ্যোৎস্নার কোনো গানের আসর তার বাদ যায় নি। অথবা হালিম বয়াতী অথবা পীতাম্বরী দেবীর। আজ সন্ধ্যায় বাজারে সুরত মিয়ার চায়ের দোকানে বসে তিনি বিষণ্ণ মনে নিজের জীবনটা নিয়ে ভাবছিলেন। আর কত দিন?
জ্যোৎস্নাকে দেখে মকনের হঠাৎ রাগ চড়ে গেল। সে বলল, এখানে এসেছ কোন সাহসে?
এটি আমার স্বামীর বাড়ি। এখানে আসতে সাহসের প্রয়োজন হয় না। শান্ত গলায় জবাব দিল জ্যোৎস্না।
তাতে মকনের রাগ আরও বেড়ে গেল। ছুকুমবুধাই বলে কথা। সে আরও রাগের কিছু কথা বলল। একসময় জ্যোৎস্নার নুলা পা নিয়ে কটু মন্তব্য করল।
স্তম্ভিত জ্যোৎস্না কিছুই বুঝতে পারছিল না। যা ঘটছে, যা বলছে মকন, যা সে শুনছে--কোনো কিছুই বিশ্বাস করতে পারছিল না।
সে বাকরুদ্ধ হয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। তার সেই কান্না বাড়তে থাকল।
মকন তাকে দু'হাতে জাপটে ধরে ঘরের ভেতরে নিয়ে গেল। বাইরে থেকে প্রহারের শব্দ শোনা গেল। দু'-এক রাগের চিৎকারও। 'নোলক' কথাটাও শোনা গেল। কিন্তু আমরা আমাদের দৃষ্টির আড়ালে থাকা এ দুই মানুষের মাঝখানে ঢুকে পড়তে নারাজ, সেজন্য আমরা কান খাড়া করে রাখাটাইও অনুচিত বিবেচনা করে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। কিন্তু একটি বিষয় সম্পর্কে আমাদের কোনো সন্দেহ রইল না--এ দুজনের মধ্যে এখন একটা বিশাল দেয়াল দাঁড়িয়ে গেছে, যেটি মকনের তৈরি। এবং যা ওই নুলা পা নিয়ে ডিঙানো সম্ভব নয় জ্যোৎস্নার ।
ঘণ্টাখানেক পরে শরীরে শাড়িটা আলগাভাবে জড়ানো জ্যোৎস্নাকে আবার পাঁজাকোলা করে ঘরের বাইরে নিয়ে এল মকন। তাকে অন্ধকারে ভালো দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু কেউ যদি দেখত, তার শরীরের সকল রক্ত হিম হয়ে যেত।
বাড়ির পেছনের বাঁশবন দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল মকন। জ্যোৎস্নার হাত-পা নিঃসাড়ভাবে ঝুলে আছে।
তার প্রাণ যে নেই, সে কথাটা উঠানে ঘুরঘুর করতে থাকা চিকাটাও বুঝতে পারল না।
৭
রাত আটটার দিকে সিরাজুদ্দিন ফিরলেন। মনটা বিষণ্ণ। কোথাও যেন একটা দুঃখ তার মনে কিছু ঝাপসা রং ফেলে দিয়েছে। সেটি কাটিয়ে মনটা কিছুতেই পরিষ্কার হচ্ছে না।
তিনি দাওয়ায় হাত-পা ছড়িয়ে বসলেন। একটু জিরাবেন। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে খাবেন। বিকেল বিকেল বেঁধে রেখে বাড়ি চলে যায় কাজের মেয়েটি। খেতে দেরি হলে খাবারটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মকন কি বাড়ি নেই? তিনি বার দুই ডাকলেন। সাড়া নেই।

এটি এ বাড়ির নয়। এটি অন্য কোনো বাড়ির মেয়ের। যার সুগন্ধি ব্যবহারে বড়ই শখ। এবং যার জন্য মৌলভীবাজারের এসডিও এক বোতল বিদেশি সুগন্ধি এনে দিয়েছিলেন একবার ।
সিরাজুদ্দিন তখন ছিলেন, যখন সুগন্ধির শিশি পেয়ে মেয়েটি এসডিওকে হাসিমুখে সালাম করেছিল।
সেই এসডিও ছিলেন কাজেম শেখের রিপ্লেসমেন্ট, যদি জানতে চান, এ জন্য বলা যে তিনি বাঙালি, সংগীতপাগল মানুষ এবং সুগন্ধিপ্রিয়, তার স্ত্রীও।
সুগন্ধির শিশি স্ত্রীই তুলে দিয়েছিলেন মেয়েটিকে, সেদিন।
দাওয়া থেকে উঠতে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকে গেল সিরাজুদ্দিনের । চিকচিক করছে একটা কোনো বস্তু, দাওয়ায়। চাদের আলো পড়েছে তার। ওপর, সেজন্য। তিনি হাত বাড়িয়ে বস্তুটি তুললেন।
একটি নোলক।
কিন্তু নোলকের সঙ্গে লাগানো নরম বস্তুটি কী? সিরাজুদ্দিন রান্না ঘরে গিয়ে কুপি জ্বালালেন এবং কুপির আলোয় বস্তুটি মেলে ধরলেন।
তার গা গুলিয়ে এল। মনে হলো, তিনি মাথা ঘুরে পড়ে যাবেন। নরম বস্তুটি আর কিছু না, জ্যোৎস্নার নাকের বিচ্ছিন্ন একটি নরম অংশ। নোলকটি খামচে ছিঁড়ে ফেলতে গিয়ে সেটি উঠে এসেছে।
৮
মকন রাত দশটায় বাড়ি ফিরল। জ্যোৎস্নাকে গহিন জঙ্গলে ফেলে এসেছে সে, যেখানে শেয়াল-হায়নার দল রাত না পেরুতে হয়তো তাকে হাওয়া করে দেবে। এরকমই ভেবেছে মকন।
দাওয়ায় সিরাজুদ্দিন বসে। প্রথমে তাকে দেখতে পায় নি মকন। প্রায় পাশ কাটিয়েই চলে যাচ্ছিল।
কিন্তু তিনি ডাকলেন। মকন। মকন চমকে তাকাল।
জ্যোৎস্নাকে কোথায় ফেলে এসেছিস?
সিরাজুদ্দিনের প্রশ্নে একটা পুরো ইতিহাস ধ্বনিত হচ্ছিল। হ্যাঁ, তিনি জানেন। তিনি জানেন এবং বোঝেন।
মকন স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে রইল।
সিরাজুদ্দিন দাওয়া থেকে নেমে এলেন। বুড়োবাঘের কামড়ে নুলা হয়ে যাওয়া বাঁ হাতটা তার শরীরের সঙ্গে অনাবশ্যক ভঙ্গিতে ঝুলতে থাকল। কিন্তু তার সক্রিয় ডানহাতে এক বিশাল গজারি কাঠের ডাল । মকন মাটির দিকে তাকিয়ে ছিল বলে দেখতে পায় নি। যখন পেল, তখন কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। প্রবল আক্রোশে সিরাজুদ্দিন ছেলের ঘাড়ে মাথায় আঘাত করতে শুরু করলেন।
যেমন বাবার হাত নুলা করা বুড়োবাঘটিকে আঘাত করছিল মকন, পাঁচ বছর আগের এক দিন, সন্ধ্যাবেলায়।
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ গল্প। রচনাশৈলী চমকে দিয়েছে
উত্তরমুছুন