২০১৯ সালে প্রকাশিত বই নিয়ে আলাপ : ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের  জন্ম সাল ১৯৬৫। জন্মস্থান আড়িয়াদহ। বর্তমান আবাসস্থল : দক্ষিণ কলকাতা। লেখেন ছোটগল্পপ্রবন্ধভ্রমণ কাহিনীকবিতা, রম্যরচনা।  প্রথম উপন্যাস কলাবতী কথা(আনন্দ), ত্রিধারা(ধানসিড়ি), কিশোর গল্প সংকলন - চিন্তামণির থটশপ( ধানসিড়ি)। রম্যরচনা সংকলন স্বর্গীয় রমণীয় ( একুশ শতক), অণুগল্প লেখেন। প্রকাশিত  কবিতার ব‌ই মোর ভাবনারে"।  রান্নার ব‌ই :  English)  89 Recipes. ভ্রমণকাহিনী : চরৈবেতি। 
ছোটগল্প সংকলন : দ্বাদশী । প্রাপ্ত পুরস্কার : দ্বাদশ বেহালা ব‌ইমেলায়(২০০৯) কবিতার ব‌ই শ্রেষ্ঠ পুরষ্কারে সম্মানিত ।রোমানিয়ান পত্রিকায় কবিতার অনুবাদের জন্য রোমানিয়ান ব্লগের প্রেসকার্ড

গল্পপাঠ :
আপনার প্রকাশিত বইগুলোর  বিষয় সম্পর্কে বলুন। বইগুলোলিখে কেমন বোধ করেছেন? প্রকাশের পর কেমন বোধ করছেন।

 ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় :
আমার এ যাবত প্রকাশিত ৫টি গদ্যের ব‌ই। তার মধ্যে এ বছর ২০১৯ ব‌ইমেলায় ছিল দুটি নতুন ব‌ই। ছোটদের জন্য লেখা গল্পের সংকলন "চিন্তামণির থটশপ’ (ধানসিড়ি) আর অন্যটি বিগত ১০ বছর ধরে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত রম্যরচনার সংকলন "স্বর্গীয় রমণীয়"(২০১৮, একুশশতক)। 

চিন্তামণির থটশপ কিশোর সংকলন টিতে এ যাবত বিভিন্ন ছোটদের পত্রিকায় প্রকাশিত বাছাই করা গল্প আছে ২০টি। কল্পবিজ্ঞান থেকে ম্যাজিক রিয়েলিটি, পশুপাখীর সঙ্গে ছোট্ট ছেলের ওঠাবসা থেকে আমার কিশোর গোয়েন্দা পুপুলের গোয়েন্দাগিরির মত গল্প রয়েছে। এছাড়াও আছে অটিষ্টিক শিশুকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সারিয়ে তোলার কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ছোট্ট মেয়ের জ্যোতির্জগতে স্বপ্ন দেখা কিম্বা খনি রহস্য ভেদ করা। কোথাও আবার রসায়নবিদ চিন্তামণির স্ফটিকের ওপর গবেষণা করতে করতে স্বর্গের আঙিনায় পা রাখা। এছাড়াও আছে ভূতের গল্প আর খুদে পড়ুয়ার রান্নার রিয়েলিটি শো'তে অংশ নেওয়ার মত বিচিত্র বিষয় । কিশোর সংকলন চিন্তামণির থটশপ একটি বছর দশেকের সাহিত্যচর্চার ফসল। প্রথমে অনলাইন ছোটদের পত্রিকায় হাত পাকাতে শুরু করি ২০০৮ থেকে। তারপর আনন্দমেলা, কিশোরভারতী, শুকতারা, ইচ্ছামতী, ম্যাজিকল্যাম্পে প্রকাশিত গল্পগুলি থেকে বাছাই করে সংকলন করতে চাইলেন ধানসিড়ি। আমার নিজের পছন্দের নানান স্বাদের ছোটদের গল্পগুলি সাজিয়ে দিলাম অবশেষে। 

রম্যরচনার সংকলন "স্বর্গীয় রমণীয়' তে স্বর্গের দেবদেবীরা যেন বাস্তব জগতে পা রেখে হেঁটেছেন। তাদের রমণীয় সংলাপ, আলাপচারিতায় উঠে এসেছে সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ। তাদের জীবনযাপনের ধরণধারন, প্রেম, সম্ভোগ, রতিক্রিয়া, সন্তানধারণের মুখরোচক গল্প। সেই সঙ্গে মর্ত্যের সমসাময়িক বহু আলোচিত প্রসঙ্গ গুলিও এসে পড়েছে কয়েকটি রচনায়। এই লেখাগুলিও গুরুচণ্ডালী, উত্তরবঙ্গ সংবাদে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয়েছিল একসময়। 


গল্পপাঠ : 
 পুর্ব-প্রকাশিত গ্রন্থ কি কি? প্রথম গ্রন্থ কবে প্রকাশিত হয়? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
এর আগে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত ভ্রমণকথার সংকলন "চরৈবেতি’ প্রকাশ করেছিলেন সৃষ্টিসুখের রোহণ কুদ্দুস। ২০১৪ সালের বইমেলায়। এরপর ২০১৫ সানন্দা পুজোসংখ্যায় প্রকাশিত আমার প্রথম উপন্যাস "কলাবতী কথা' ব‌ই আকারে বের হয়েছে আনন্দ পাবলিশার্স থেকে । এরপর দ্বিতীয় উপন্যাস "ত্রিধারা' প্রকাশে ২০১৭ এ উদ্যোগী হয়েছিলেন ধানসিড়ির শুভ বন্দ্যোপাধ্যায় ।


গল্পপাঠ : 
বই রচনাকালের সময় কতদিনের ছিল? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
সেদিক থেকে বলতে গেলে প্রথম গ্রন্থ চরৈবেতিও একটি চলার পথে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানোর ভ্রমণবৃত্তান্ত যেগুলি ২০০৯ থেকে ২০১৩ অবধি আনন্দবাজারে একনাগাড়ে প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলি নিয়ে । আর প্রথম উপন্যাস "কলাবতী কথা" লিখেছিলাম প্রায় আড়াইবছর ধরে। সেও একটা জার্নি আর গবেষণার ফসল। আমার কোনো গ্রন্থ‌ই সেদিক থেকে চটজলদি প্রকাশের তাড়নায় নয়। অনেকটা পথ হাঁটার পর প্রকাশকরাই এগিয়ে এসেছেন। আমিও তখনি অনুভব করেছি ব‌ই এর তাগিদ। দু মলাটের মধ্যে আবদ্ধ হলে লেখাগুলি পরিচিতি পাবে,সেই আশায়।


গল্পপাঠ : 
কোনো গল্পের জন্য বিশেষ গবেষণার বা পড়াশোনার প্রয়োজন ছিল? থাকলে কিভাবে সেই প্রস্তুতি নিয়েছেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
 দেখুন আমার এ যাবত প্রকাশিত দুটি উপন্যাস বেশ সময় নিয়ে গবেষণার ফসল। কলাবতী কথা যেমন এক আদিবাসী মেয়ের পটশিল্পের হাত ধরে উত্তরণের কাহিনী। আর তার মধ্যে দিয়ে হিন্দুবাঙালী ঘরে বিবাহের সুবাদে আদিবাসী মেয়ের বাঙলার বারব্রত, স্ত্রী আচার নিয়ে তার অকুন্ঠ জানা ও পালনের ইচ্ছা। সেটা বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি কলাবতীর হাত ধরে। আর আমার পাঠকেরাও এই ব‌ই পড়ে বারেবারে জানিয়েছেন হারিয়ে যাওয়া এইসব আচার, রীতিনীতির কথা পড়ে তাদের মুগ্ধতার কথা। তথ্যভিত্তিক উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে কলাবতীর প্রেম, পরকীয়া এবং পজিটিভ এক উত্তরণের গল্প আজকের মেয়েদের অগ্রগতির কথাও বলে। 

দ্বিতীয় উপন্যাস তিন প্রজন্মের নারীর কাহিনী "ত্রিধারা' । 

তিন রক্তসম্বন্ধীর জীবনের টানাপড়েনের গল্প ।যুগের সাথে তাল মেলানো তিন আধুনিকা, শিক্ষিতা এবং রুচিশীল নারীর ভালোলাগা, মন্দলাগা গুলো মিলেমিশে যাবেই কারণ রক্তের স্রোত। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে তাদের জীবনের সাক্ষী এক রোমাঞ্চকর অলৌকিকতা।

তিনজন নারীই সৃষ্টিশীলতায় আজীবন বাঁচতে চেয়েছে। তিনজনের জীবনে অনেক সাদৃশ্য আবার বৈসাদৃশ্যও আছে চিন্তাধারায়।

তিন প্রজন্মের এই নারীর জীবনে অদ্ভূত এক ঘটনা ছিল । তাকে সাদৃশ্য, কাল্পনিক নাকি নিছক অলৌকিক বা কাকতালীয়... কি বলা যায় তা ভাববে পাঠক । মধ্যপ্রদেশের অভ্যন্তরে ভীমবেটকার গুহা দেখে এসে যশোধরার দশবছরের বিবাহিত জীবন সফল মাতৃত্বের আস্বাদ পায় । মায়ের ডায়েরী পড়ে স্রগ্ধরাও ঐ অঞ্চলে যায় । সেখানে গিয়ে সেও অন্তঃসত্ত্বা হয়। আর এই দুই ঘটনার মধ্যে অদ্ভূত মিল খুঁজতে হবে পাঠককে যা খুঁজে বেড়ায় শ্রীধারাও। সেও এক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করে চলে । স্থান ও কালের এক চরম আবর্তের মধ্যে সে খুঁজতে থাকে সাদৃশ্য । অজানা এক উত্তর তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় মধ্যপ্রদেশের গুহায়, পাহাড়ে, মন্দিরে। অন্তঃসলিলা নদীর বহমানতার মত চলতেই থাকে সেই অনুসন্ধিত্সা, যা হল ত্রিধারার ট্র্যাডিশান। 

এই উপন্যাসে আছে তিন সময়ের প্রগাঢ় প্রেম। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে যা নতুন করে ঘটে যায় আছে আর সে প্রেমের পরিণতি হয় রহস্যের মাতৃত্বে । আর আছে কিছু প্রশ্ন যা পাঠককে দাঁড় করায় যুক্তিতর্ক এ সবের ঊর্ধ্বে থাকা এক অদ্ভুত মায়াময় অলৌকিকতায়।


গল্পপাঠ : 
সমসাময়িক কোন ঘটনার প্রভাব? থাকলে, কখন মনে হল, এ-নিয়ে লেখার প্রয়োজন আছে? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
কলাবতী কথা বা ত্রিধারা তে সমসাময়িক জীবনের কথা তো আছেই। বারেবারে উঠে এসেছে চরিত্রগুলির সংলাপের মধ্যে সমসাময়িক ঘটনাবলী। লিভিং টুগেদার বা সমকামের প্রসঙ্গ। কলাবতী নিজের স্বামীর পুরুষত্বহীনতায় মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়ে অবশেষে খুঁজে পেয়েছে জাপানী এক পুরুষ কে। যার হাত ধরে বিশ্বের দরবারে তার আঁকা পটশিল্পকে স্থায়ী জায়গা করে দিয়েছে। পাঠক প্রশ্ন করেছেন, মেয়েটির ঘর ছাড়া নিয়ে। শাশুড়ি, স্বামীর প্রতি অবিচার নিয়ে। কিন্তু আমি প্রশ্ন রেখেছি এইটাই, একজন পুরুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে আবার বিয়ে করলে যদি কেউ প্রশ্ন না করেন কেন কলাবতীকে আঙুল তুলবে তারা? সে মেয়ে বলে? 


গল্পপাঠ : 
গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য নতুন কোন ড্রাফট বা প্রস্তুতি নিয়েছেন? কোন গল্প / লেখা বাদ দিয়েছেন? সেক্ষেত্রে প্রকাশকের চাপ ছিল না গুণগত মানের কথা ভেবে বাদ দিয়েছেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
 ঐ যে বললাম আগের অংশেই, গুণগত মান উত্কৃষ্ট করার জন্য সব লেখাতেই এটুকুনির প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি। বারেবারে নিজের লেখাটি পড়ে, সম্পাদনা করে, নির্মেদ করতে হবে। দরকার হলে বাদ দিয়ে আবারো লিখতে হবে সেই অংশটুকু। আর তারপরেই ঘষে মেজে সেটিকে প্রকাশিত হতে দিতে হবে। 


গল্পপাঠ : 
গ্রন্থটির প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের থেকে কিরকম সাহায্য পেয়েছেন ? বই বিপণনের জন্য প্রকাশক কি কোনো ধরনের প্রমোশনাল পদক্ষেপ নিয়েছেন? না, আপনি আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই বইয়ের প্রচার, প্রসার, বিক্রি, আলোচনা করেছেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
ধানসিড়ি থেকে ত্রিধারা বা চিন্তামণির থটশপ প্রকাশের ব্যাপারে খুব সাহায্য পেয়েছি। রীতিমত সম্পাদনার পরে প্রকাশক তিনবার প্রুফ দেখিয়েছেন। ধানসিড়ি খুব খুঁতখুঁতে এ ব্যাপারে। আর বিপণন? হ্যাঁ, বহুল প্রচলিত ম্যাগাজিন, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেন ওরা। রিভিউও করিয়ে দেন। আর সেই সঙ্গে আমিও আর পাঁচজন লেখকের মত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বারেবারে বিজ্ঞাপিত করেছি। আর বিপণন আর বন্টন ব্যবস্থা ভালো হলেই ব‌ইয়ের বিক্রি ভালো হবেই এটুকুনি বলতে পারি। তবে আরেকটা কথাও মাথায় রাখা জরুরী। পাঠক এই মুহূর্তে কি চাইছেন সেটা জানাও দরকার। বড় প্রতিযোগিতার মঞ্চ এই লেখালিখির দুনিয়া। 


গল্পপাঠ : 
গ্রন্থ প্রকাশের জন্য কিভাবে পারিশ্রমিক পেয়েছেন? না পেয়ে থাকলে কি আপনি নিজেই লগ্নী করেছেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
দেখুন সৃষ্টিসুখ ২০১৪ তে চরৈবেতির পর্যাপ্ত বিক্রি দেখেই আমাকে সামান্য রয়্যালটি দিয়েছিল। আনন্দ পাবলিশার্স প্রতিবছরেই নির্ধারিত সময়ে পাঠিয়ে দেন প্রাপ্য রয়্যালটি। ধানসিড়িও আশ্বাস দিয়েছেন এ ব্যাপারে।

তবে নিজের ব‌ই প্রকাশ করতে আমাকে লগ্নী করতে হয়েছে তা বললে মিথ্যে বলা হবে। তবে বিজ্ঞাপনের জন্য যত সামান্য কিছু ব্যয়ভার বহন করেছি। আজকের বাংলার আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কথা ভেবে, ব‌ই বিক্রী কমে যাচ্ছে বলে গেল গেল রব উঠেছে চারিদিকে তাই বিপননের কথা চিন্তা করেছি মাত্র । বাংলাসাহিত্যের প্রতি কিছুটা হলেও তো আমার ঋণশোধ এটুকুনি। এখন লেখক বেশী, পাঠক কম। আমি কোথায় আছি বর্তমানে, কে আমার ব‌ই পড়তে চান সেটাও তো দেখতে হবে, জানতে হবে। তবে সত এবং অভিজ্ঞ প্রকাশনার মাধ্যমেই বই প্রকাশিত হলে লেখকের পক্ষে তা মঙ্গলজনক। 


গল্পপাঠ : 
আপনি কি পুরো সময়ের লেখক ? না অন্য জীবিকার পাশাপাশি কাজ করতে হয় ? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
আমি পূর্ণ সময়ের লেখক। অন্য কোনও জীবিকার সঙ্গে যুক্ত নই। তবে গৃহকর্মের অনেকটাই নিজেকে দেখাশুনো করতে হয়। আমি প্রথমতঃ একজন অধ্যাপকের ঘরণী, এক পুত্রের মা এবং তিনজন বয়স্ক মা, বাবা এবং শাশুড়ির দায়িত্ব আছে মাথায়। এসব সামলে লেখালেখি করি। তবে হ্যাঁ। লেখাটাই প্রায়োরিটি বর্তমানে। 


গল্পপাঠ : 
 বইয়ের কোন সম্পাদক ছিলেন কি? না থাকলে নির্ভুল বানান ও সম্পাদনার কাজটি কে করলেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
কলাবতী কথা লিখে মনে হয়েছিল কে প্রকাশ করবেন এই উপন্যাস। দুরুদুরু বুকে জমা দিয়েছিলাম আনন্দবাজার দফতরে। অনেকদিন অপেক্ষার পর ফোন এসেছিল মনোনীত হবার কথা জানিয়ে। প্রকাশিত হয়েছিল সানন্দা পুজোসংখ্যায় আর তারপরেই ব‌ই করবেন ঠিক করেন ওনারাই।

আর ত্রিধারার পান্ডুলিপি পড়েই ধানসিড়ি জানিয়েছিল তাদের প্রকাশের ইচ্ছার কথা। তবে দুটোতেই বেশ অনেকটা সময় ধৈর্য্যের পরীক্ষা ছিল। আবারো বলি লেখক জীবন একটা বিশাল যাত্রা। একটা কবিতা বা একটা অণুগল্প লিখে রাতারাতি প্রকাশ করে বা সোশ্যালনেটে হাততালি কুড়িয়ে যাপনের নয়। যেকোনো লেখার পর নিখুঁত সম্পাদনার প্রয়োজন। আজকের ডিজিটাল মিডিয়ায় সেই ছাঁকনিটি নেই। এমন কি ত্রিধারা প্রকাশের সময় আমার প্রকাশক ধানসিড়িও একজন পাকা সম্পাদকের হাতে উপন্যাসটি সম্পাদনা করেছিলেন। দুবছর ধরে লিখতে লিখতে আমি খেঁই হারিয়ে ফেলেছিলাম তিনটি প্রজন্মের সময়কাল কে ধরে রাখতে। সেই কঠোর সম্পাদক বারেবারে সম্পাদনা করেছেন এবং নিখুঁত, ত্রুটিমুক্ত সেই সম্পাদনায় ত্রিধারা হয়ে উঠেছে নির্ভুল। আমি ছাইপাঁশ লিখে যে পান্ডুলিপি প্রকাশকের হাতে ধরিয়ে দিলাম আর তাই সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্রকাশিত হল আর আমার ব‌ইয়ের তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল রাতারাতিই, এই পন্থায় বিশ্বাসী ন‌ই আমি।


গল্পপাঠ : 
বইমেলা কেন্দ্র করেই কি প্রকাশে পরিকল্পনা হয়েছিলো? মেলা-কেন্দ্রিক প্রকাশনার ক্ষেত্রে কি বইয়ের মানের সাথে আপোষ করেতে হয়েছে? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
বইমেলা কেন্দ্র করেই উদ্যোগ নেন অনেক প্রকাশক তবে আমার রম্যরচনার সংকলন "স্বর্গীয় রমণীয়' যেটি ২০১৮ পুজোর আগেই বেরিয়েছে সেটির পাণ্ডুলিপি জমা দিয়েছিলাম দেড় বছর আগে। আমি কৃতজ্ঞ একুশ শতক প্রকাশনার কাছে যে তারা নিজে থেকেই বইটির ব্যাপারে যত্নবান হয়েছেন।


গল্পপাঠ : 
বই প্রকাশের পরে কি কোনো পাঠক তার অভিমত জানিয়েছেন? সেটা কী ধরনের অভিমত?

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
গ্রন্থগুলি প্রকাশের পরে সোশ্যালমিডিয়া আর হোয়াটস্যাপের দৌলতে প্রচুর সাড়া পেয়ে আমি কৃতার্থ আমার পাঠকের কাছে। কিশোর সংকলন পড়ে ছোটোরাও জানিয়েছে তাদের মতামত। মেলা প্রাঙ্গণেও আমার কিশোর সংকলনটি থেকে গল্পপাঠ করে শ্রোতাদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছি এবছরে ।


গল্পপাঠ : 
কোনো অগ্রজ লেখক কি বই কিনেছেন? জানিয়েছেন তার পাঠ প্রতিক্রিয়া? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
না, কোনো অগ্রজ লেখক আমার ব‌ই কিনে পাঠ প্রতিক্রিয়া জানান নি এখনো অবধি তবে তাঁরা সবসময় পাশে থেকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশে থেকেছেন।


গল্পপাঠ : 
আলোচক, সমালোচক, পত্রিকা কি কোনো লেখা প্রকাশ করেছেন এই গ্রন্থটি বিষয়ে? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
 অলোচনা, সমালোচনা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে সংবাদপত্রে, ই-পত্রিকায়, সোশ্যালমিডিয়ায়, ব্লগে।


গল্পপাঠ : 
লেখালেখি ছাড়া আর কী করেন?

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
লেখালিখির পাশাপাশি মাঝেমধ্যে সময় পেলে সঙ্গীত পরিবেশন করি। গান গাওয়া আমার মনের খোরাক। এছাড়া রান্না করতে ভালোবাসি। বাগান করা আর বইপড়া আমার অন্যতম সময় কাটানোর উপায়। 

গল্পপাঠ : 
এই বইপ্রকাশের পরে কি আর কোনো গ্রন্থ লিখছেন? 

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় : 
এইসময় সংবাদপত্রে ধারাবাহিক কলাম 'চালচিত্র' নিয়ে একবছর ধরে প্রকাশিত ফিচার পান্ডুলিপির আকারে জমা চেয়েছেন অনেক প্রকাশক। শিলাদিত্য পত্রিকায় দেড়বছর ধরে প্রকাশিত "কিংবদন্তীর হেঁশেল' ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে খুব। বেশ কয়েকজন প্রকাশক ব‌ই করতে চেয়েছেন।

আর যুগশঙ্খ দৈনিক সংবাদপত্রের রবিবারের পাতায় প্রকাশিত হয়েছে আমার ধারাবাহিক উপন্যাস "দেউলপোতার আড়ালে' । আপাততঃ সেই প্রকাশিত লেখাগুলির বিষয়ে ভাবনাচিন্তা আছে এইবছরে। তবে এর ফাঁকে ছোট গল্প, ভ্রমণকাহিনী, রম্যরচনা, ফিচার, প্রবন্ধ লিখে চলেছি। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ