
১.
জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় ঘুরে ঘুরে 'নরক'-এর কথা লিখছেন। ডায়েরিতে বিভিন্ন প্রসঙ্গে দান্তের 'ইনফের্নো' বা নরক যাত্রার প্রসঙ্গ তুলেছেন।গল্প ও উপন্যাসে পরোক্ষভাবে আভাস দিচ্ছেন নরকযন্ত্রণার।
দেখে নেওয়া যাক কবিতায় কীভাবে 'নরক' এসেছে:
১.বিনুনিতে নরকের নির্বচন মেঘ/গোধূলিসন্ধির নৃত্য
২.অরেঞ্জপিকোর ঘ্রাণ নরকের সরায়ের চায়ে/সৃষ্টির তীরে
৩.নরকের আগুনের মতো অহরহ রক্তপাত/পরিচায়ক
৪.নরকের মতন শহর/নাবিকী
৫.বৈকুন্ঠ ও নরকের থেকে তারা দুইজনে কতখানি দূর/সুবিনয় মুস্তফী
৬.মানুষ সর্বদা যদি নরকের পথ বেছে নিত/মনোকণিকা
৭.নগর নরক ব্যাধি সন্ধি ফলাফল/পৃথিবী আজ
৮.নরকের থেকে সিঁড়ি এঁকেবেকে ঘুরে/চেতনা-কবিতা
৯.তখন নরক তার অকৃত্রিম প্রাচীন দূয়ার/ঘাস
১০.যেন কোনো নরকের কার্নিশের থেকে/প্যারোডিম
১১.নরকের থেকে পাপীতাপীদের গালাগালি/সোনালি সিংহের গল্প
১২.নরকের নিরাশার প্রয়োজন রয়ে গেছে জেনে/অনেক মৃত বিপ্লবী স্মরণে
এমন অজস্র লাইন। 'নরক' ঘুরে ঘুরে জীবনানন্দর কবিতায় এসেছে।
জীবনানন্দের দান্তে-প্রীতির কথা আমরা জানি।প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালকে কবির 'নৃমুন্ডের হেঁয়ালি' মনে হয়েছে।।ধর্মের কল নাড়াচ্ছে ভাঁড় ও গাধারা।নগর সভ্যতা 'লিবিয়ার জঙ্গল'।'সুন্দর যেতেছে মরে ধীরে ধীরে'।'হত্তেল ঘুঘু'রা সিংহাসন দখল করছে।
'বাসমতীর উপাখ্যান'উপন্যাসে লিখছেন 'কোনো আপ্তবিশ্বাস বা শ্রদ্ধা নেই আমাদের'।'অমেয় তিমির দুর্গন্ধের মতো' আজ পৃথিবীর সমস্ত রূপ।
নরককে 'ফিচেল পাতাল' বলছেন।'অসমান' পৃথিবীতে এখন 'মৃত্যুশব্দ' 'ভয়াবহ ডাইনির' মতো নাচে।
১৩১০-এ দান্ত 'ইনফেরনো' লিখেছিলেন।প্রায় ৬৩০ বছর বছর বাংলার এক কবি 'ইতিহাসযান'-এ লিখবেন,'নীড় ভেঙে অন্ধকারে এই যৌন যৌথ মন্ত্রণার মালিন্য এড়ায়ে উৎক্রান্ত হতে ভয় পাই'।লিখবেন 'কেবলই আত্মক্রীড়া করি'।
পৃথিবীর গভীরতর অসুখ এখন।যাদের সামান্য হলেও আজও আস্থা আছে মানুষের প্রতি তাদের হৃদয় আজ শকুন ও শেয়ালের খাদ্য। 'এখানে পৃথিবী অসমান'।
কেন 'অসমান'?কোথায় ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে?নাকি আন্দাজ করতে পারছেন না কবি?'ম্যাকবেথ'-এ যে 'অন্ধকার' নরকের কথা বলা হয়েছে সেই ঘাপটি মেরে বসে থাকা 'অন্ধকার'-ই তো জীবনানন্দর কবিতায় ফিরে আসে।
জীবনানন্দ বিশ্বসাহিত্য গুলে খেয়েছেন।ভারতীয় দর্শন ও সাহিত্যও।ছোটোবেলায় বাবার বইয়ের তাক থেকে নামিয়ে Thompson-এর 'Heridity', Pannet-এর 'Mendelism', Wallace-এর 'Derwinism', Drummond-এর 'The Ascend of Man' বা শিবনাথ শাস্ত্রীর 'রামতনু লাহিড়ী...' এমন বহু বই তিনি পড়ে ফেলছেন।
'ঈনিড'-এর 'সুগভীর গুহা' আর 'প্যারাডাইস লস্ট'-এর 'ভয়াবহ অগ্নিকুণ্ড' আসলে যে 'নরক'-এর ইঙ্গিত তা তিনি বুঝেছিলেন।
রক্তশব্দ ও মৃত্যুশব্দ টের পাচ্ছেন যে কবি তাঁর দান্তের মতো ভার্জিলকে প্রয়োজন হয় না পথপ্রদর্শক হিসেবে।জীবনানন্দ দাশ এক উৎকন্ঠিত ও উদ্বিগ্ন চিন্তক।সম্রাট, সৈনিক, ভাঁড় ও বামনদের 'যূথবদ্ধ' লালসা তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন।শূকর ও শূকরীর মিলোনৎসব, সুন্দরী ও মূর্খের সঙ্গম, পরচুলা ও মুখোশের দৌরাত্ম তাঁর মতো কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি।তাঁর কোনও ভার্জিল বা বিয়াত্রিচের প্রয়োজন হয়নি।
'মানব ক্রমপরিণতির পথে লিঙ্গশরীরী' না লিখে যাঁর পরিত্রাণ নেই,'অবক্ষয়ের মানবসাগর' তো তিনি দেখেছেন।
বিভিন্ন ধর্মে আমরা নরকের বর্ণনা পাই।হিন্দু ধর্মে ৮৬ টি,মুসলিম ধর্মে ৭ টি, খ্রিস্টীয় ধর্মে ৪টি ও বৌদ্ধ ধর্মে ৮ টি নরকের স্তরের কথা বলা হয়েছে
পরীক্ষিৎ শুকদেবকে প্রশ্ন করেছিলেন, নরকের অবস্থান কোথায়।উত্তরে শুকদেব বলেছিলেন, ভূমণ্ডলের দক্ষিণে, ভূমির নীচে, জলের উপরে, যেখানে অগ্নি বিদ্যমান,সেখানেই মৃতদের আনে যম,শাস্তিবিধান করে।
খোঁপার চুলের মধ্যে যে 'নরকের নবজাত মেঘ' জীবনানন্দ দেখেন,তা কি দান্তের নারীমূর্তির 'hellish furies'? 'বেদ'-এ যে ধ্বনিহীন তমসাময় গহ্বরের কথা বলা হয়েছে,জীবনানন্দ তো তার কথাই বলেছেন।রিপুচরিতার্থ করে বেঁচে থাকবার কথা বলেছেন।
তবে শেষ অবধি জীবনানন্দ জীবনানন্দই।তিমিরবিলাসী কবি তিমিরবিনাশী হয়ে উঠতে চান।প্রশ্ন চারিয়ে দেন আমাদের মগজে,'আবার বিশুদ্ধ হতে কতদিন লাগে?'
আমরা ছোট ছোট অন্ধকারগুলো চিহ্নিত করি, ছোট ছোট বৃত্তগুলো মার্ক করি,ছোট ছোট ক্রন্দনগুলো-আর্তনাদগুলো-হতাশাগুলো মার্জিনে নিয়ে রাখি।হ্যাঁ!আমাদের নরকযাত্রা এবার শুরু হবে।আমাদের পথ দেখাবেন নাবিক শ্রীজীবনানন্দ দাশ।
২.
আরে! জীবনানন্দ দাশের নায়ক যে সে নায়ক নয়।সে মালার্মের বই কেনে।মালার্মের কোন বই?দু-তিনখানা বই।আমলকীপল্লবের থেকে শিশির ঝরে পড়লে হেমন্ত রাতের পাখির পালকে যে ছায়া-আঙুলের নিঃস্তব্ধতার জন্ম হয়, বইগুলো অন্তর্হিত হয়ে থাকে সেখানে।কী আকার বইগুলোর? রয়্যাল না ডিমাই? ফোলিও?কোয়ার্টে?
আসলে তো মালার্মের বই না পড়েই জীবনানন্দ দাশের নায়ক গ্রন্থাকারের রচনাপ্রসাদের গভীরতাকে নিজেই যেন সৃষ্টি করে সেই আতল স্বচ্ছতার মর্মভেদ করে চলেছে।কীভাবে সম্ভব এটা? অমা-আঁধার, ফিকে-আঁধার ও আলো- আঁধারের নিঃশব্দ নিরবচ্ছিন্ন মাখামাখির কত শত চোরাপথের ভেতর দিয়ে সে দেখতে পাচ্ছে সবকিছু।সম্ভব কেননা হরফগুলো ও বাক্যযোজনা পরিষ্কার ভাবে আয়ত্ত করে নিয়েছে সে।
'শ্রেষ্ঠ কবিতা'-র ভূমিকায় যে চার-পাঁচজন কবির নাম করেছিলেন জীবনানন্দ তাঁদের মধ্যে মালার্মে অন্যতম।কারও মীমাংসায় যে জীবনানন্দর কাব্য 'একান্তই প্রতীকী' তা তো মালার্মীয়!
বোন সুচরিতা দাশ এসে দাদা জীবনানন্দকে প্রশ্ন করছে,'কি পড়ছিস দাদা'?দাদা উত্তর দিচ্ছেন, 'মালার্মে'।এখানে উত্তর শেষ হলে একরকম হত।দাদা আরও বলছেন,'যখনই সময় পাই পড়ি।বড়ো ভালো লাগে।...পড়ার শেষ আছে?রোজই নতুন জগৎ আমাদের চোখের সামনে উদঘাটিত হয়।বইয়ের মতো সম্ভাবনা আর আছে?...বই পড় বই'।
আমাদের নজর ঠিক একটি বাক্যে এসে আটকে যায়।'বইয়ের মতো সম্ভাবনা'।মালার্মে তো সারাজীবন ধরে বইয়ের এই সম্ভাবনার কথাই বলে গেছেন।মালার্মের কাছে গ্রন্থ কোনও বস্তুনিষ্ঠ আকৃতি নয়।তাঁর কাছে পৃথিবীর যেকোনো লেখক সচেতন বা স্বয়ংক্রিয় রভসে গ্রন্থের আর্কিটেকটনিক নির্মাণে সচেষ্ট।গ্রন্থের অনুপস্থিতিতেই গ্রন্থ স্বয়ং ওমনিপ্রেজেন্ট।
আশ্চর্য ঠেকছে আর জীবনানন্দর গল্প!গল্পের নায়ক মালার্মে না পড়েই না হয় মারা গেল, জীবনানন্দর নায়ক সম্পূর্ণভাবে তো মালার্মিয়ান।একটি গ্রন্থের সম্ভাবনার কথা জীবনানন্দ ছাড়া আর কে বুঝবেন!'কবিতার কথা'য় মালার্মের নামটি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো।
সারাজীবন ধরে একটি বই লিখতে চেয়েছিলেন মালার্মে।নামও রেখেছিলেন সেই বইটির: লো লিভর!কী লিখেছেন সেই বইতে!লিখছেন:
বইয়ের এই একের পর এক পাতায় যদি ভাঁজের আড়াল না থাকত আর যদি না থাকত সেই ক্রমসঞ্চিত আড়ালের আলম্বিত গভীরতার জ্যামিতি, বইয়ের ভেতর সেই অলক্ষবাসরের কালো অক্ষরের অন্ধকারের কোনও প্রশ্নই উঠত না আর ক্রমশঃ ক্ষণিক বিচ্ছুরণ থেকে এক বিস্তীর্ণ রহস্য পরম্পরায় অবগতিও হত না তার --- এই পাতার পর পাতার নিভাঁজ গতিশীলতার ভেতর দিয়ে আমাদের অনাস্বাদিত দৃশ্যপাঠের উৎসুক তাড়নায়।
জীবনানন্দ জানেন পাঠক যত বেশি আপনাকে খরচ করতে উদ্যত হয় একজন লেখকের তত বেশি দেউলে হবার সম্ভাবনা।বড়ো অতখানা আকাশের নগ্ন আলোর মুখ তিনি চেনেন।মালার্মের মতো জীবনানন্দও বোঝেন বইয়ের প্রতিটি ভাঁজের অবদীর্ন সতীত্বের আজ কেমন নির্লজ্জ বিনিয়োগ ঘটছে।
জীবনানন্দর নায়ক যে সে নয়।পোস্ট মালার্মিয়ান।
-----------------------------
(কৃতজ্ঞ: অনির্বাণ পাল_
৩.
দেশ ভাগ হয়।একটা দেশ থেকে দুটো দেশ।দুটো দেশ থেকে তিনটে দেশ।তিনটে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র।তিনটে আলাদা ক্ষমতা বলয়।তিনটে জাতীয় সংগীত।তিনটে সংবিধান।তিনটে পতাকা।
কবি কিন্তু ভাগ হন না। এক থেকে যান।অক্ষরকে ভাঙা যায় না।ভাবনায় কোনও ফাটল ধরে না।ভাষার কোনও রং বদলায় না।সীমান্তের কাঁটাতার কবিকে স্পর্শ করতে পারে না।
'বাসমতীর উপাখ্যান' উপন্যাসে এই দেশ ভাগ নিয়ে উদ্বেগের কথা আছে।'দেশ স্বাধীন হলে কলকাতা কোন এলাকায় চলে যায় কে বলবে?' রমার এই প্রশ্নের উত্তরে তার বাবা প্রভাসবাবু 'ও--তুমি ভেবেছ পাকিস্থানে যাবে?' সিদ্ধার্থ অবশ্য প্রত্যয়ী 'কলকাতা পাকিস্থানে যাচ্ছে না'।অবশ্য বাসমতী নিয়ে,যা আসলে বরিশাল,কারও কোনও সংশয় নেই।'বাসমতী তো পাকিস্থানে পড়বে'।প্রভাসবাবু এবার নিঃসংশয়।
'বাসমতীর উপাখ্যান' তো ১৯৪৮-এ লেখা।ততদিনে দেশ স্বাধীন হয়ে গেছে।কলকাতা ও বাসমতী বা বরিশাল যে দুটো ভিন্ন দেশের অধীনে তা লেখক জীবনানন্দ জানেন।
আসলে জীবনানন্দের সমস্যাটা দুটো দেশ বা স্বাধীনতা নিয়ে নয়।এই উপন্যাসের অন্যত্র দেখি দ্বন্দ্ব মফস্বল শহর বাসমতী ও মহানগর কলকাতা নিয়ে।কোনও আড়াল রাখছেন না জীবনানন্দ।কলকাতা ও বাসমতীর মধ্যে কাকে বেশি ভাল লাগে,প্রভাসবাবুর এই সরাসরি প্রশ্নের উত্তরে নায়ক সিদ্ধার্থ সেন জানায়,'প্রাণের দিক দিয়ে বাসমতীকেই বেশি'।
বাস্তবে তখন অবশ্য জীবনানন্দ কলকাতার বাসিন্দা।আর ফিরবেন না বা ফিরবার সম্ভাবনাও নেই।তবু তিনি উপন্যাসে বরিশালের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছেন।অথচ যখন তিনি বরিশালে চাইলে থাকতেই পারতেন,১৯২৩০-১৯৩৫ পর্বে, তখন 'প্রন্তরের মতো মুক্তির খোঁজে' বারবার ছুটে গেছেন কলকাতা।
হিসেব করে যদি দেখি, ৫৫ বছরের জীবনে বরিশালে কেটেছে প্রায় ৩০/৩২ বছর।আর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কলকাতায় ১৪ বছর।বাকিটা কলকাতা-বরিশাল,বরিশাল- কলকাতা করে কাটিয়েছেন।একটা বিষয় যদি লক্ষ করি,পান্ডুলিপির খাতা ধরে,জীবনানন্দের বেশিরভাগ গদ্য লেখা কলকাতায় বসে আর বেশিরভাগ কবিতা বরিশালে।অর্থাৎ কলকাতায় যখন,স্নায়ুচাপ ও মানসিক অস্থিরতা বাড়ছে,অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, মুক্তি পেতে দ্রুত গদ্যের কাছে আশ্রয় নিচ্ছেন আর বরিশালে যখন আপাত স্থিতিশীল, অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল,কবিতা লিখছেন।
'স্বাধীনতা' বা 'দেশভাগ' নিয়ে সত্যিই কোনও উদ্বেগ ছিল না জীবনানন্দ দাশের।দেশভাগের হিংস্র থাবা জীবনানন্দের ভিটামাটি কেড়ে নিয়েছে,তবুও।একবার দাঙ্গায় কলকাতায় জীবনানন্দের প্রাণ যেতে বসেছিল,তবু।উদ্বাস্তু হয়েছেন,তবুও।
কবিতায় লিখবেন,'মানুষ মেরেছি আমি --তার রক্তে আমার শরীর ভরে গেছে,পৃথিবীর পথে এই নিহত ভ্রাতার ভাই আমি...'।
এই ম্যাজিক কবিরাই পারে।যেখানে যেখানে হিন্দু মুসলমান প্রসঙ্গ এসেছে,গভীর সহমর্মিতায় জীবনানন্দ তা মোকাবেলা করছেন।'বাসমতী উপাখ্যান'-এই আছে,প্রভাসবাবুর ' পাঙাশ খাবার অভ্যাস নেই গফুর',এই প্রসঙ্গে গফুরের উত্তরটি কিন্তু চমৎকার। 'খাইয়া দ্যাখেন না,গরম গরম পাকাইয়া দি,মোটা-মোটা মিষ্টি ভাত হইব আউশের,বালাম কয়ন বালাম দিতে পারি,...পাঙাশের রসা -- হালার ঝিঙা ঢ়্যাড়স শসা কুইচ্যা,ছিটকি মরিচ বাইট্যা,চোখ নাক জিভ দিয়া জল বাইর কইরা ছাড়ব,...গফুরের লাহান পাঙাশ পাকাইয়া না দিতে পারলে হেই বিবিরে তালাক দিবেন এমুনি খুন চড়ব কত্তার মাথায়'।
আবার মনে করিয়ে দিতে চাই,১৯৪৮-এ লেখা উপন্যাস।সদ্য দেশভাগের দগদগে ঘা স্মৃতিতে।এবং বলা বাহুল্য সমস্ত চরিত্রই তো আসলে স্বয়ং লেখক জীবনানন্দ।
বরং 'দিল্লি পাটনা গোটা হিন্দি হিন্দুস্থান' যে একদিন কলকাতাকে 'বগলদাবা করবে',করেছে ইতিমধ্যেই সে ব্যপারে জীবনানন্দের উদ্বেগ ছিল বেশি।
কী আশ্চর্য!
এই একই কথা তো ২০১৯-এ আমারও বলবার ,লোকটা ৭০ বছর আগে টের পেয়ে গেলেন?টের পেয়ে যান আমাদের স্কাউট? আভাঁ গার্দ কবি।
১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কোনও উচ্ছ্বাস নেই জীবনানন্দ দাশের।ডায়েরি সেই কথাই বলছে।Independence Day লিখে শুধু একটা আন্ডারলাইন। লিখছেন,'সারারাত উৎসব,...আমি এই শেষ রাতের উৎসবে অংশ নিতে পারিনি'।লিখছেন,'However at 1A.M.2A.M. 4A.M. etc. I got up, rushed to the street and noticed everywhere the all night gala'।
জীবনানন্দ 'ঘিলুবীজ' বা 'কলমবীজ' নন,'রক্তবীজ' লেখক।রক্তবীজ লেখকরা 'খটকা' থেকে লেখেন,'খটকা'না থাকলে কবে লেখা থামিয়ে দিতেন,দিয়েছেনও,১৯৪৮-এর পর প্রায় কিছু লেখেননি।
দেশ ভাগ হয়।কবি ভাগ হন না।লেখককে ভাগ করা যায় না।মান্টোকে ভাগ করা যায়নি।কুন্দেরাকে ভাগ করা যায়নি।
জীবনানন্দ যতখানি কলকাতার ততখানি বরিশালের,যতখানি ভারতের ততখানি বাংলাদেশের,যতখানি আব্দুল মান্নান সৈয়দের ততখানি ভূমেন্দ্র গুহর।
লেখক পরিচিতি
গৌতম মিত্র
কোলকাতায় থাকেন।
জীবনানন্দ গবেষক।
0 মন্তব্যসমূহ