উত্তর আধুনিকতা ও সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের গল্প



পুরুষোত্তম সিংহ 

আমরা সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের গল্প পড়িনি। কেন পড়িনি তা আমরা জানি না, জানতেও চাই না। তবে না পড়ে আমারা নিজদেরই গরিব করে তুলেছি। বিদেশে শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি দেশে ফিরে বিশ্বের প্রায় সমস্ত সাহিত্য পাঠে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের যেমন ভক্ত তেমনি বাংলাদেশের গল্পের দৈনদশা উপলব্ধি করলেন। ফলে বিশ্বসাহিত্যকে সামনে রেখে তিনি বাংলা গল্পকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। উত্তর আধুনিক মননের পাশাপাশি গল্পের গল্পহীনতা, জাদুবাস্তবতা, নারীচেতনা, পাঠকের প্রসারিত ভাবনাবলয়কে সামনে রেখে তিনি গল্প গড়ে তুলেছেন।
গল্প উপন্যাসে কাহিনি বলার দিন হয়ত আজ শেষ হয়েছে। গল্প আজ যেন এক রহস্য সন্ধান। কিংবা জাগতিক জীবন সম্পর্কে আমি অনেককিছু জানি তার কিছু অংশ পাঠককে শোনাতে চাই। আর এই শোনানোটা বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে শোনান। মনজুরুল ইসলাম নিজস্বভাবে শুনিয়েছেন তাঁর ‘না থাকার গল্প’ গ্রন্থে। 

‘মহাজাগতিক’ গল্প শুরু হয়েছে একটি স্টেটমেন্ট দিয়ে। আপাত ভাবে জাদুবাস্তব, কল্পনা, রোমান্টিকতা ও আপাত উদ্ভটতা এখানে স্থান পেয়েছে। এক গল্পহীনতার গল্প এ লেখা। গল্প বা কাহিনি আছে কিন্তু তা পরিবেশ গুণে ভিন্ন হয়ে উঠেছে। আর একজন লেখকের সেটাই বড় কাজ। মহাজগতের নিত্য লীলা দেখতে ভিন্ন গ্রহ থেকে এসেছিল আহসান হাবিব। এ জগতে এসে সে নিজেই প্রেমে পড়েছে। আর এই প্রেমকে কেন্দ্র করে ওপারের মানুষদের উৎসাহ, হাবিবের নিজের উদ্দীপনা ও সাধারণ প্রেমকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি মানুষের উৎসাহ প্রকৃত কাজকে কীভাবে লুপ্ত করে দেয় তা লেখক দেখান। দেবতা থেকে মানব প্রত্যেকেই নারী প্রেমে মত্ত, আর সে নারী যদি সুন্দর হয় তবে পুরুষের বিপদ আরও বেশি। গল্পের শুরুতেই লেখক আমাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন –“আপাতত এটুকু বলা যায় গল্পের শেষে তার বয়স আমাদের হিসাবে ৩৪, এবং সে অবিবাহিত।“ পরিণতিও তাই ঘটেছে। কিন্তু এর মধ্যেই লেখক আমাদের গল্পের আখ্যান শুনিয়ে দিয়েছেন। হাবিবের বিবাহ করা হয়নি রেশমাকে, তবে রেশমা যখন ধরা দেয় তখন সে স্পর্শের বাইরে চলে গেছে। লেখক এক প্লেটনিক প্রেম সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতেন , তা না করে তিনি মহাজগতের মধ্যেই নায়ককে নিয়ে এসেছেন। এ যেন হাবিবের নরক দর্শন। তেমনি হাবিবের যে পতন তা কী ব্যক্তি মানুষের পতন নয় ? প্রেমের নামে যুব সমাজের ভুল পথে চলা নয় ! এ পথভুল শুধু মানুষ নয় দেবতারও হয় তাই হাবিব অন্য গ্রহের জীব হয়েও হয়েছে। আসলে এ জগৎ সংসার এক রহস্য আবারণে আবৃত। সেখান থেকে ব্যক্তি মানুষের মুক্তি নেই। শুধু প্রেম নয় একের পর এক অনন্ত রহস্য ব্যক্তি মানুষকে গ্রাস করছে, সেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব ! রক্ষা পায়নি হাবিবরাও। আসলে এ মহাজগতের লীলা বোঝা ভার। তা বোঝেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই। তবে লেখকও তা বোঝেন তবে সম্পূর্ণ নয়, আংশিক। সেই আংশিক জীবনের সাতকাহনই তো ছোটোগল্প বলতে চায়, লেখকও তাই বলেছেন। 

সময় সংকটে আজ গল্পের পরিবর্তে স্থান দখল করতে চলেছে অনুগল্প। এ প্রবণতার থেকেও বড় হল আজ মানুষ শুধু নিজের লেখাই অন্যকে শোনাতে চাইছে, নিজে পড়বে না। আমার হাতে খাতা কলম আছে আমি আপনার লেখা পড়ব কেন, আপনি আমার এই লেখটা পড়ুন – ভাবটা যেন এমন। তেমনি সাহিত্যে সম্পাদক গল্প পড়ে খুশি হন না, পরিণতি যেন তিনি আগেই জেনে গেছেন। উত্তর আধুনিকতা পাঠককে চিন্তার স্বাধীনতা দিয়েছে, গল্পের পরিণতি থেকে তিনি নিজেই এক পরিণতি ভেবে নিতে পারেন। লেখক যেখানে থেমেছেন পাঠকক সেখানে নাও থামতে পারেন, নিজেই এক আখ্যান কল্পনা করে নিতে পারেন। একটি বিষয় সম্পর্কে লেখক যা সর্বোচ্চ স্তরে ভেবেছেন তাই তিনি শুনিয়েছেন আমাদের, কিন্তু সমস্ত মানুষের মুখমণ্ডল যেহেতু আলাদা তাই সবাই গল্পের ভিন্ন ভিন্ন পরিণতি পাঠক মনে মনে কল্পনা করে নিতে পারেন। সেই ভিন্ন ভিন্ন পরিণতির কথাই লেখক আমাদের শুনিয়েছেন ‘একটি অসমাপ্ত গল্প’ এ। প্রথমে একটু লেখকের বিবরণ শুনে নেওয়া যাক – 

“ কোন গল্পটা ? শোনার আগ্রহ আছে তাহলে ? সুখের কথা । কারণ, মানুষ আজকাল নিজের গল্প ছাড়া অন্য কারো গল্প শুনতে চায় না। খালি হাই তোলে আর ইতর প্রকৃতির হলে নাক সিঁটকায়। অথবা গল্পটা খুব করুণ হলে, চোখ ছলছল করার ভান করে। এটি বাঙালি খুব শিখেছে, অল্পতেই কেঁদে ফেলার অভিনয় করে। এই করে বাঙালি একদিন চাঁদে পৌঁছে যাবে, জেনে রাখুন। 

হৈ চৈ করছেন কেন ? গল্পটাতো হাওয়া হয়ে যাচ্ছে না, আর আপনার সময়ের কীই বা বাহারি মূল্য ? বাঙালি তো ; হয় ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে বাহাদুরি, নইলে বাইরে গিয়ে আকাম কুকাম। এর বাইরে কী করেন ভাই ? একটা গল্প আস্ত শোনার ধৈর্য নাই। এক মিনিটের আয়ু উচ্ছাস আর উত্তেজনার। আপনার জন্য গল্পটা এক মিনিটেই বলব, কথা দিচ্ছি, আমি জানি, এটি আলিমুজ্জামানের গল্প না হলে ওই এক মিনিটও দাঁড়াতেন না।“ ( পৃ. ৫৯) 

এ গল্পে আছে ব্যঙ্গের চাবুক। তিনি যে আমাদের ঘটনা শোনাতে বসেছেন। কিন্তু পাঠক প্রথম থেকেই অমনোযোগী। এক অনামী লেখক আর কী গল্প শোনাবেন। আসলে বর্তমান সাহিত্য চর্চা সম্পর্কে লেখক ওয়াকিবহল হয়েই এ গল্প লিখেছেন। তিনি একটি ঘটনা সাজিয়ে গল্পের মাঝপথে এনে বিদায় নিয়েছেন। গল্পের পরিণতি সম্পর্কে দুটি বক্তব্য রেখেছেন –পাঠকের যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করবেন। আর সেটিও গৃহীত না হলে পাঠক নিজেই একটি পরিণতি ভেবে নেবে। গল্প শেষেও আছে ব্যঙ্গ। সে ব্যঙ্গ বাংলাদেশের কথাকারদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের সব কথাকারই প্রায় মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে কল্পনায় ডানা মেলে গপ্প শুনিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। সেই ফেনানো গল্প আর কতদিন চলবে ! তা থেকে বুঝি কথাকারদের বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। এবার গল্পে প্রবেশ করা যাক। পুলিশের দারগো আলিমুজ্জামান। অন্যদিকে আছে ছাত্রনেতা আক্কাস। বোবামেয়ে আফরিনকে কলেজ যেতে বিরক্ত করত কিছু ছেলে। তাঁকে সাহায্য করেছিল তুষার। দারোগার চোখে খারাপ ছেলে আক্কাসরা। এই আক্কাসদের দ্বারাই তুষার একদিন আহত হয়ে থানায় গিয়ে আর মৃত্যুমুখী হয়েছে। সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের যা করণীয় পুলিশ তাই করেছে। তুষার যখন মৃত্যুমুখী তখন আলিমুজ্জামান নিজের ছেলেকে চিনতে পারছে। মৃত্যুমুখী ছেলেকে লেখক বাঁচিয়েছেন ঠিকই, তবে গল্পের পরিণতির দুটি দিক নির্দেশ করে দেন। আসলে উত্তর আধুনিকতা নির্দিষ্ট বিন্দুতে থামতে রাজি নয়। গল্পের শেষ থেকে পাঠক নিজেই একটি পরিণতি ঠিক করে নেবেন – 

“কিন্তু আপনি সন্তুষ্ট হলেন না, এ প্রস্তাবনায় ? আমি কি করব , বলুন ? লোকজন বিয়োগান্তক গল্প চায় না। সবাই চায় নায়ক বেঁচে থাক। একবার এরকম একটা বিয়োগান্তক গল্প বলে প্রায় মার খেতে বসেছিলাম, মানুষের হাতে। 

আপনার নিজস্ব একটা পরিণতির প্রস্তাব আছে ? বলেন কি, ভাই, শিগগির দিন ! এ পর্যন্ত আমার গল্প, তাতেও লোকজন শুনতে চায় না। এখন যদি আপনার পরিণতিটা তাদের মনে লাগে।“ ( পৃ. ৬০ ) 

উত্তর আধুনিকতা গল্প বলয়কে আর নির্দিষ্ট করে রাখে না। নির্দিষ্ট সীমার গণ্ডির মধ্যে যেমন পাঠককে থাকতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই তেমনি লেখকেরও নির্দিষ্ট কোন বাধন নেই। গল্পে আজ লেখকের উপস্থিতি যেমন বাঞ্ছনীয় নয় তেমনি গল্পে লেখক বহু সময় পাঠককেও নিজেই প্রবেশ করিয়ে দেন। মনজুরুল ইসলামের ‘আমার থাকা না থাকা’ গল্পে লেখক জানিয়েছেন এখানে তিনি উপস্থিত থাকবেন না তবে তিনিই আমাদের গল্প শুনিয়েছেন। গল্পটি ডায়েরি রচনার ঢঙে লেখা। শুরু ১১ জুন ১৯৯২ এবং শেষ ২ রা জুলাই ১৯৯৩। লেখক এসেছেন তাঁর অঙ্কের শিক্ষকের কাছে। যিনি সারাজীবন ফেরমার থিওরেমের সমাধান নিয়েই অতিবাহিত করে চলেছেন। উত্তর আধুনিকতা কোন নির্দিষ্ট তত্ত্বে স্থায়ী হয়না, সমস্তই যেন তার কাছে আপেক্ষিক। তেমনি গল্পের চিরকালীন সংজ্ঞা বা ফর্ম আজ যে আর নেই তাও লেখক আমাদের মনে করিয়ে দেন – 

“স্যারকে নিয়ে এই গল্প। আমি কেন নিজেকে আবার তাতে জড়াবো ? এতে পাঠক কি অসন্তুষ্ঠ হবে না, বিশেষ করে যে পাঠক ‘একদা এক দেশে এক রাজা ছিল’র গল্পে বিভোর হয়ে থাকে, যেন যে কোনো নেশাও খেয়েছে এবং প্রতিদিন, এটাই খেতে হবে ? তার কাছে আমার গল্পটি খুব বিরক্তিকর মনে হবে না ? স্যারকে নিয়ে যেহেতু আমার গল্প, আমার নিজের গল্পটি বরং থাকুক পাথরচাপা পড়ে।“ ( পৃ. ৯৮ ) 

কোন সত্যই নির্দিষ্ট নয়। সবাই আপন ভাবে তা জানতে চায়। লেখক একটি বিষয়কে সত্য হিসাবে জেনেছেন বা কাহিনি সম্পর্কে এটিই সার্বাধিক সত্য বলে মনে হয়েছে তাই তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু এই সত্য থেকেই আবার মানুষ নতুন সত্যে এগিয়ে যাবে। নির্মাণ থেকেই বিনির্মাণে এগিয়ে যাবেন। গাণিতিক সূত্র সম্পর্কে ফেরমা কোনো নির্দিষ্ট সমাধান দিয়ে যাননি। তিনি হয়ত সমাধানের কথা ভেবেছিলেন কিন্তু তা লিপিবদ্ধ করার আগেই মৃত হয়েছেন। তেমনি কোনো আইডিয়া সামনে নেই বলে স্যারও সঠিক সত্যে পৌঁছতে পারছেন না। আসলে সত্য একটা ধারণা। সেই ধারণাকে নিজেকেই গড়ে নিতে হয়। আর যিনি গড়ে নিতে পারেন না তিনি সারাজীবন অন্বেষণ চালান। এই অন্বেষণও যেন এক নির্দিষ্টপথে যাত্রা, তেমনি গল্পও তাই। কন্যা পুত্ররা পিতা সম্পর্কে ভিন্ন ধারণার বশবর্তী হয়ে কাটান। লেখকের স্ত্রীর নাম ছিল সিগমা। আবার সিগমা হল এক গাণিতিক প্রতীক। স্যার আবার ‘মিডলটন ল’র’ জটিলতার সূত্রে নিজেকে নিয়োগ করেছেন কিন্তু এখানেও সমাধানে পৌঁছতে পারেনি। একজন লেখকই কি প্রকৃত সত্য বা যা লিখতে চান তা লিখতে পারেন ? বেশিরভাগ কথাই যেন অলিখিত থেকে যায়। নিজের শ্রেষ্ঠ লেখাটি যেন আজও অলিখিত থেকে গেছে। স্যারেরও তাই হয়েছে –“আজ মনে হ’ল লেখার ওপর তাঁর যেন আর আস্থা নেই। যেন ভাবটা এই, লিখে কী কী হবে ? যা ভাবি তার সবটাই কি লেখা যায় ? লেখা কি থেকে যায় ।“ ( পৃ. ১০১ ) স্যারের মৃত্যু অবধারিত ভাবে ঘটবে। কিন্তু সেই মৃত্যুর জন্য লেখক কোন মেলোড্রামার পথে যাননি, বাস্তবকেই জোড় দিয়েছেন। আসলে তিনি বলতে চান গল্পে মেলোড্রামার দিন শেষ হয়ে এসেছে। আজ মেলোড্রামার বদলে গল্পে স্থান পেয়েছে অ্যাবসার্ড। আপাত উদ্ভট বিষয়কে সামনে রেখেই গল্পের সত্যে আজকের গল্পকার উপনীত হন। মনজুরুল ইসলাম বিশ্বসাহিত্যকে সামনে রেখেই গল্প লিখেছেন। তাই বাংলা গল্পের চিরকালীন পথ বা বৃত্ত এখানে মিলবে না। আর এও তো সত্য সেই একই পথে গল্প আর কতদিন চলবে। মনজুরুল ইসলামরাই হয়ত নতুন বৃত্ত রচনা করবেন যা হবে আগামী দিনের বাংলা গল্পের ভবিষ্যৎ। তবে সে ভবিষ্যতও আপেক্ষিক । 

মনজুরুল ইসলামের মনন গড়ে উঠেছিল বিদেশী সাহিত্য পাঠে। ফলে তাঁর গল্পে উত্তর উপনিবেশিক মনন বর্তমান। তাঁর গল্পকে বাংলা গল্পের সনাতন ধারার অন্তভুক্ত করা যাবে না। কেননা তিনি বাংলা সাহিত্য পড়েই তা ভাঙতে চেয়েছেন। এ কোন বিদ্রোহ নয়, আসলে আজকের গল্প কেমন হবে তা লিখতে চেয়েছেন। বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কীভাবে বাংলা গল্প লেখা হবে তা যেন জানাতে চাইছেন। এমনই একটি গল্প হল ‘একটি অচল প্রেমের কাহিনী’। এ গল্প কেন লেখা হল তা লেখকের মুখেই শুনে নেওয়া যাক গল্পের অন্দরমহল থেকে –“তোমার বড় ভাই ফরিদের স্ত্রী ঝর্ণার বোন নাসরিন জাহান, যে উড়ুক্কু- র মতো এক অসম্ভব নামের উপন্যাস লিখেছেন কিছুদিন আগে, সে যদি একটা সেমিনারে প্রবন্ধ পড়ার অনুরোধ না করত আমাকে, তাহলে এ গল্পটির জন্ম হত না।“ ( পৃ. ১২৯ ) আর সে লেখা লিখতে গিয়েই লেখকের উমাবার্তো ইকোর ‘ট্রাভেলস ইন হাইপাররিয়ালিটি’ বইটির ওপর শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’ বইটি পরে যায়। ‘দেবদাস’ গ্রন্থটি লেখকের কাছে ছিল অতীব তরলতর বিষয়, আর গ্রন্থের ঘটনা নিয়ে বাঙালি পাঠকের আবেগবিহ্বল মননকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। সে জন্যেই লিখে বসলেন ‘একটি অচল প্রেমের কাহিনী’ নামে গল্প। সৃষ্টিকর্তা এ জগত গড়ে তুলেছেন, পাশাপাশি লেখকেও এক জগত গড়ে তুলতে হয়। লেখক যেন সব জানেন, তবে তাঁর জানাটা সম্পূর্ণ নয়। কেননা গল্পের শতশত অনু-পরমাণু এ পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকে, লেখকের কাজ হল সেগুলি জোড়াতালি দিয়ে ঘটনা তৈরি করা। তবে সে বৃত্তান্ত রচনা করতে সবাই পারে না , যিনি পারেন তিনিই শিল্পী। লেখকের কাছে সমস্তই যেন পূর্বনির্ধারিত। সেই পূর্বনির্ধারিতকেই তিনি আবার নবনির্মাণ করতে চান। গল্পটি চিঠির আকারে লেখা। লেখক চিঠি লিখেছেন সাজ্জাদকে। প্রথম তিনি আমিনুদ্দিনের বৃত্তান্ত শোনাতে চেয়েছেন সাজ্জাদকে। আমিনুদ্দিনের ডাক্তার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে মোটর পার্টসের ব্যবসায়ী। সবই যেন পূর্ব নির্ধারিত। যেমন লেখক ইয়েটস নিয়ে Ph.d করলেও পড়াতে হয় মার্লো, ক্যামু – এও যেন পূর্বনির্ধারিত। যে দেবদাসের কাহিনিতে বাঙালি পাঠক আত্মমোহিত সেই বাঙালিকে তিনি নতুন প্রেমের গল্প শোনাতে চেয়েছেন। ‘দেবদাস’ গ্রন্থটি লেখককে বন্ধু অপু উপহার দিয়েছিল। অপু জানতো ‘দেবদাস’ গ্রন্থে লেখকের বিরক্তির কথা, তাই এক প্রকার বিরক্তি উৎপাদনের জন্যই জন্মদিনে উপহার দিয়েছিল। সেই অপু আজ নেই। একদিকে অপুর প্রতি ভালোবাসা, অন্যদিকে ‘দেবদাস’ গ্রন্থের প্রতি অরুচি –দুই ঘটনাই এ গল্প লেখককে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে। ফলে লেখক আজ সাজ্জাদকে শোনাতে বসেছেন সৈয়দ মহিবুল হাসানের প্রেমের ঘটনা। কিন্তু সেখানেও প্রবেশ করিয়ে দেন জাদুবাস্তবতা ও অতীতচারিতা। লেখক ‘দেবদাস’ উপহার পেয়েছিলেন ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে, আর মহিবুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে। তিনি ছিলেন কবি, লিখতেন প্রেমের কাব্য। সে বৃত্তান্তই লেখক আমাদের শুনিয়েছেন। 

মনজুরুল ইসলাম নিজেই জানিয়েছেন –“ কোনো উপন্যাসই আসলে বাস্তবানুগ বা বাস্তববাদী বলে নিজেকে দাবি করতে পারে না। উপন্যাসে বড়জোর বাস্তবের একটি বিভ্রম সৃষ্টি করা যায়।“ এই বাস্তবের বিভ্রম তৈরি করাই হল জাদুবাস্তবের কাজ। লাতিন আমেরিকায় এই জাদুবাস্তবার সূত্রপাত হলেও আমাদের দেশের গল্পে তা বিভিন্ন ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে লাতিন আমেরিকা থেকে ভারতীয় জাদুবাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু প্রশ্ন হল বাঙালি লেখকরা কেন এই জাদুবাস্তবতার পথে বেঁছে নিল ? আজ এক অন্ধকার সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বললে রাষ্ট্র কণ্ঠরোধ করতে চাইবে। এই কণ্ঠরোধ তো প্রতিটি রাষ্ট্রই করে। তাই আজ বাঙালি লেখকদের পক্ষে এক সহজ পথ হল ‘বাস্তবের বিভ্রম’ তৈরি করা। এক গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে পাঠককে শেষ সীমায় পৌঁছে দেওয়া। যেখানে পাঠকের আর বুঝতে অসুবিধা হয় না সেই ঘোরতর বাস্তবকে। মনজুরুল ইসলামের ‘দুই ভবনের ভার’ এ বাস্তবকে সামনে রেখেই এক বিভ্রম রচনা করেছেন। আজাদের পিতা আফাজউদ্দিনের মৃত্যু ঘটেছে। এই মৃত্যু সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন –“আজাদের বাবা আফাজউদ্দিন শেখের মৃত্যুর ঘটনাটা শুনলে আপনাদের কাছে একটা anti climax এর মতো শোনাবে।“ এই anti climax হল আফাজউদ্দিন খুন হয়েছে শরাফত আলির হাতে। শরাফত আলি সম্পর্কে আফাজউদ্দিনের জামাই। অথচ খুন করে সে নিজেই মামলা করেছে। এমনকি সে দায়ভার পড়েছে দুই সাধারণ মানুষের ওপর। যেহেতু পুত্র আজাদ যেকোন মুহূর্তে এই রহস্য ফাঁস করে দিতে পারে তাই আফাজউদ্দিনদের হাতে খুন হয়েছে সেও। লোভ লালসা মানুষকে মনুষ্যত্বহীনের কোন সীমায় নিয়ে যায় তা লেখক দেখিয়েছেন। আজাদ একদিকে বাস্তবের যন্ত্রণা যেমন বহন করেছে তেমনি পিতা তাঁর সঙ্গে মৃত্যুর পরও কথা বলেছিল। কিন্তু কী বলেছিল তা আমাদের শোনা হয়নি, লেখকও জানিয়েছেন –“ আমাদের আফসোস, তার বাবা তাকে কি বলেছিল, আমাদের আর শোনা হল না।“ ( পৃ. ১২৮ ) ছোটগল্প শোনার সে অবকাশ দেয়না, ফলে আমাদেরও শোনা হয়নি। 

কাহিনি বলার দিন শেষ করে গল্প উপন্যাস একদিন পাড়ি দিল চেতনাপ্রবাহরীতিতে। কাহিনি অপেক্ষা মানুষের চেতন –অবচেতন-অর্ধচেতন সত্ত্বা প্রাধান্য পেতে আরম্ভ করল। কাহিনিকে অনুঘটক হিসাবে রেখে লেখক ব্যক্তিমননে বিশেষ জোড় দিলেন। মনজুরুল ইসলামের ‘খোয়াব’ গল্পে চেতনাপ্রবাহরীতিতে পরলৌকিক ভাবনা, স্বপ্নচারিতা ও জাদুবাস্তবতা প্রাধান্য পেয়েছে। লোকাচার বিশ্বাসকে এর সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে প্লটে এক অভিনবত্ব আনেন। কথকের স্ত্রী সুধা। প্রকৃত নাম আঞ্জুম। কথক ভালোবেসে নাম দিয়েছে সুধা। সে কবরকে খোয়াব বলে। তাঁর চেতনায় সর্বদা প্রাধান্য পায় এই কবরের চিন্তা। সুধার এই স্বপ্ন জগতে কথকও মাঝে মাঝে প্রবেশ করেন। তবে মনজুরুল ইসলাম মিশ্র সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেন। ধর্মীয় মিথের মধ্যেও নৌকার প্রসঙ্গ এনে পাঠকের চেতনাকেও নাড়িয়ে দেন। সুধার দুই সন্তান জন্মের পরই মৃত হয়েছে ফলে এই পরলৌকিক চিন্তা আরও প্রবল হয়েছে। তবে কথক কখনোই বিরক্ত হননি বরং সে জগতে প্রবেশে আনন্দ পান। তবে শেষ সত্যে পৌঁছতে পারেন না। আসলে উত্তর আধুনিক চেতনা শেষ সত্য বলে কিছু ঘোষণা করে না –“ আমি জানি, তার খোয়াবটারও শেষ শোনা হবে না। এ খোয়াবটার শুরু নেই, শেষ নেই। আসলে সুধার কোনো খোয়াবই দু’থেকে তিনটে দৃশ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে না। আমার এক এক সময় মনে হয়, নিজেকে বিভ্রমের একটা ঘোরে রেখে দিতেই যেন স্বপ্নগুলোকে তার প্রয়োজন হয়। না হলে, এই আদিহীন অন্তহীন, ছাড়া ছাড়া, ওলটপালট স্বপ্ন কেন তাকে এতটা বিভোর করে রাখে ?” ( পৃ. ৬৪ ) আজ সুধার বিভ্রম কাটাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওঝার কাছে। কথকের বিশ্বাস না থাকলেও পারিবারিক ধ্যান-ধারণা নিতে বাধ্য করছে। সুধার স্বপ্ন আজ ভেঙে গেছে, সে জগতে কথকও আজ নেই। আসলে লেখক একটি বাস্তবের বিভ্রম তৈরি করতে চেয়েছিলেন, তা ভেঙে যেতেই তিনিও বিদায় নিয়েছেন। 

কবি লেখকদের বলা হয় অন্তর্যামী। তবে ঈশ্বরের মত তাঁরা সবটাই জানেন না। তাঁদের জানার জগতটা সীমিত। যে গল্পবলয় বা উপন্যাসটি লেখক গড়ে তুলছেন তার পরিণাম তিনি জানেন বা চরিত্রের ক্রিয়াকলাপ সব তার আয়ত্ত, তাই তিনি আমাদের গল্প শোনাতে বসেছেন। এই গল্প শোনানোয় পাঠক গল্পকারের ওপর বিশ্বাস রাখতেও পারেন আবার নাও পারেন। পাঠক নিজেই এক অনুবিশ্ব গড়ে তুলতে পারেন গল্পকারের ভাষ্য থেকে। কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে রেখে লেখক গড়ে তুলেছেন ‘অপমৃত্যু’ গল্পটি । সামান্য গল্পেই লেখক অনেকগুলি মৃত্যু ঘটিয়েছেন। মৃত্যু সম্পর্কে কোনো নির্ধারিত কারণ বলেননি, পাঠককে অনুমানের জগত গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। আজকের গল্পে কাহিনি অপেক্ষা যেহেতু মনস্তত্ত্ব প্রধান তাই তাই সে বোধে পাঠককে তিনি এগিয়ে দেন। কিন্তু সেখানেও জটিলতা। পুলিশ যদি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মনস্তত্ত্বে জোড় দেয় তবে পরিণাম ভিন্ন হতে পারে। সে পরিণাম অঙ্কনের কোন দায়িত্ব লেখক রাখেনি। উমেদ আলি ও ফরিদ আলি দুই ভাই। উমেদ আলির মৃত্যু হয়েছিল ছাদ থেকে পরে গিয়ে। জীবনানন্দের নায়কের মত সেও কোন অদ্ভুত জগতের সন্ধান পেয়েছিল কিনা তা আমরা জানি না। ফরিদ আলির মৃত্যু হয় জন্ডিসে। তবে সে ছিল পাগল। বিত্তবান হওয়া সত্ত্বেও সে রাস্তায় ভিক্ষা করত। পিতার মৃত্যুতে উমেদ আলির সন্তানরা রাস্তার নাম পাল্টে করতে চেয়েছিল উমেদ আলি লেন। রাস্তার যেহেতু হিন্দু নাম পঞ্চানন কর্মকার লেন ছিল তাই এই পরিবর্তন, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বাস্তব সত্য। কিন্তু সে নাম জনগন মেনে নেয়নি বা প্রচলিত হয়নি। তবে লেখকের মতে এ রাস্তার নাম হওয়া উচিত ছিল ‘ফকির মিসকিন লেন’। অন্যদিকে ফরিদ আলির সন্তানরা পিতাকে মনে রাখতে খুলেছে পিতার নামে গরমেন্ট। এই গরমেন্ট তৈরি নিয়েই দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ বাধে। দশতম পরিচ্ছেদে এসে লেখক আমাদের জানালেন –“গল্পটা শেষ করতে হয়, দিন ফুরিয়ে আসছে। না , আমাদের নয়, গল্পেরই কারো কারো।“ ( পৃ. ৫১ ) তবে শেষ নয়। কেননা এখনও লেখকের কিছু মৃত্যু ঘটানো বাকি। গরমেন্টে আগুন লেগে কিছু কর্মী সহ মৃত্যু ঘটেছে ফরিদ আলির সন্তান শহিদের। এই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে পাগল আদিল ( ফরিদ আলির ছেলে ) দায়ী করেছে রিয়াদকে। উমেদ আলির মত রিয়াদেরও মৃত্যু ঘটেছে ছাদ থেকে পরে। কাজের মেয়ে রহমতী তখন দেখেছিল আদিনকে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে। আবার রহমতী ভ্রান্ত বিশ্বাসে কল্পনায় দেখেছিল উমেদ আলিকে উড়ে যেতে। এবার পাঠক রহমতীর কুসংস্কার চেতনাকে বিশ্বাস করবে না মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করবে ! এই পর্যায়ে এসে লেখক আমাদের আরও জানালেন –“ গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারে, কী বলেন ? কিন্তু না, এখানে শেষ করলে বদিউজ্জামানের পড়া মনস্তত্ত্ববিদ্যা এবং সত্য অথবা বাস্তব, আমাদের ক্ষমা করবে না। সমান্যই একটু বাকি, এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলব, আপনিও এক নিঃশ্বাসে শুনে ফেলবেন।“ (পৃ. ৫৪ ) বদিউজ্জামান থানার দারগা, সে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করেছে। যেহেতু পুলিশ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চায় তাই মনস্তত্ত্ব জরুরি। ফলে বদিউজ্জামান হয়ত আদিনকেই দায়ী করবে। কিন্তু গল্পের সত্য তো প্রকৃত বাস্তব বলে দেয় না। তাই উমেদ আলি, রিয়াদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা জানি না। কিন্তু অনুমানে জানি। এই অনুমান নানা পাঠকের নানা রকম। গল্পের সত্য কখনোই আদালতের সত্য হতে পারেনা। বাস্তবকে সামনে রেখে এক অধিবাস্তব ও পরাবাস্তব সৃষ্টি করা লেখকের কাজ, আর তাই করেছেন লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। 

এ গল্প সংকলনের সবচেয়ে হাল্কা গল্প ‘পরকীয়া’। কথক পিতামহ ও পিতামহীর গল্প বলতে বসেছেন, আর তা জাদুবাস্তবের মাধ্যমে। পিতামহের বিবাহ হয়েছিল ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে। সামান্য বিবাদের জন্য পিতামহী চলে গিয়েছিলেন। পরে পিতামহ ভুল বুঝতে পরেছে, কিন্তু তখন করার কিছু ছিল না, তবুও ফিরিয়ে এনেছে পিতামহীকে। তবে এ গল্পে আছে নারীচেতনা, নারীর স্বাধীনচেতনা ও ব্যক্তিত্ববোধ। পিতামহের কাছে থাকত রাহবার মানিক। সে একদিন আতস কাঁচ ভেঙে ফেলে বলে পিতামহ প্রহার করে মানিক ও স্ত্রীকে। এই অপমানে পিতামহী পিতৃগৃহে চলে আসে, নতুন করে বিবাহ হয় হাকিমের সঙ্গে,তবে এ স্বামীও অপছন্দ। আজ পিতামহ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, স্ত্রীকে আনতে গিয়েছে। স্ত্রী অন্যের বধূ হয়ে গেলেও পিতামহ নিজের অধিকার ছাড়েনি। নিজে তালাক দিলেও নিজের অধিকার প্রয়োগ করেছে। হাদিস মতে তা অবৈধ, পরকীয়া কিন্তু তবুও লেখক ভালোবাসাকেই জয়ী করেছেন। দুজনেই আবার মিলিত হয়েছে। এই ঘটনাকে সামনে রেখে লেখক অতীতে ডুব দিয়েছেন। দুইজনকে সামনে রেখে তিনি এক প্রণয়জীবনের ইতিবৃত্ত শুনিয়েছেন। ‘কারাগার’ গল্পে অনেকগুলি চরিত্রকে সামনে রেখে লেখক এক রহস্য নিকেতন গড়ে তুলেছেন। সংসার তো এক বন্দিশালা। এখান থেকে মানুষের মুক্তি নেই। অথচ কেউ কেউ মুক্তি পেতে চায়। মুক্তি চেয়েছিল রবীন্দ্রনাথের মৃণাল। মনজুরুল ইসলামের লেখার বড় গুণ বিষয় উপস্থাপন। অতি সাধারণ বিষয়কেও তিনি অসাধারণ করে তোলেন বিশ্লেষণ ও বক্তব্যধর্মীতায়। 

ভিন্নধারার লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। প্রশ্ন হল কেন মনজুরুল ইসলাম পড়ব ! বাংলা গল্পের বিবিধ ভাণ্ডারকে পূর্ণ করতেই এ লেখক পড়া জরুরি। আপাত সহজ ভাবেই তিনি গল্পে প্রবেশ করেন। গল্পের মধ্যপথে এসে পাঠককে এক গোলকধাঁধায় ফেলেন, যেখান থেকে পাঠকের বেরিয়ে যাবার উপায় নেই। কিন্তু শেষে পরিত্রাণ আছে, আত্মসুখ আছে। সামান্য বক্তব্য দিয়ে গল্প শুরু করেন, কখনও চরিত্রের একটি দিককে সামনে রেখে ঘটনা শুরু হয় কিন্তু সামান্য এগিয়ে গিয়েই বিবিধ বাঁকের সামনে তিনি পাঠককে দাঁড় করিয়ে দেন। কখনও অবচেতন স্তরে ভাসিয়ে নিয়ে যান। বাংলা গল্পের যে দিকবদল তা জানতে বর্তমান সময়ে মনজুরুল ইসলাম গল্পপাঠ বিশেষ প্রয়োজন। 



## পুরুষোত্তম সিংহ
গবেষক, প্রাবন্ধিক
ইমেল – purusattamsingha1991@gmil.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ