সেযান শহরের মেয়র বললেন, ক’দিন আগে আমি ভেনিস দেখেছি এক ভিডিওয়, নির্জন শহর, কোথাও কোনো মানুষ নাই, দ্বিপ্রহরে নগর জনশূন্য হয়ে গেছে, মানুষ খুব ভয় পেয়েছে! শুধু ক’টি পায়রা ঘুরঘুর করছে একটি উদ্যানে।
মার্কো চুপ করে থাকলেন। তাঁর চোখে অশ্রুকণা দেখতে পেলেন সেযান শহরের মেয়র। মেয়র ভাবছিলেন মার্কো যে শহর থেকে এল সেই শহরের মতো তাঁর শহরেরও একটি নদী আছে। সেযান সেই নদীর নাম। এই নদীও তাঁর শহরের পশ্চিমকে ঘিরে আছে।
গঙ্গা যেমন পবিত্র নদী, এই নদীও পবিত্র। গঙ্গা যেমন ঐ জনপদে মাতৃরূপে বন্দীত, এই নদীও এই নগরের মা। এই জাতির জন্ম হয়েছে সেযান নদী থেকে। মেয়র এই শহরকে ভালোবাসেন। তাঁর পিতৃপুরুষ যোদ্ধা ছিলেন, মেষপালক ছিলেন, কৃষিকাজ করতেন, নৌকো বাইতেন, সওদাগরী করতেন, অতিথি বরণ করতেন। এখনো করছেন। ইতালীয় ঘুরুয়া মানুষ মার্কো পোলোর ভূ-পর্যটনের কথা মেয়র ইতিহাসে পড়েছেন। ৭৫০ বছর আগের কথা। মার্কো তাঁর শহরে এসেছেন, তিনি তাঁর আপ্যায়নের ত্রুটি রাখবেন না।
গঙ্গা যেমন পবিত্র নদী, এই নদীও পবিত্র। গঙ্গা যেমন ঐ জনপদে মাতৃরূপে বন্দীত, এই নদীও এই নগরের মা। এই জাতির জন্ম হয়েছে সেযান নদী থেকে। মেয়র এই শহরকে ভালোবাসেন। তাঁর পিতৃপুরুষ যোদ্ধা ছিলেন, মেষপালক ছিলেন, কৃষিকাজ করতেন, নৌকো বাইতেন, সওদাগরী করতেন, অতিথি বরণ করতেন। এখনো করছেন। ইতালীয় ঘুরুয়া মানুষ মার্কো পোলোর ভূ-পর্যটনের কথা মেয়র ইতিহাসে পড়েছেন। ৭৫০ বছর আগের কথা। মার্কো তাঁর শহরে এসেছেন, তিনি তাঁর আপ্যায়নের ত্রুটি রাখবেন না।
মার্কো পোলো ভুলেই গেছেন যেন ভেনিসের রূপ। কতকাল আগে ভেনিস ছেড়ে বেরিয়েছেন। জনপদের পর জনপদে গিয়েছেন। গিয়েছেন। যেতে যেতে ভেনিসের হর্ম্যশ্রেণী, ক্যানেল, গন্ডোলা, গির্জা, ক্রীড়াভূমি, রঙ্গালয়ের কথা ভুলে গেছেন। ভেনিসে ফেরার জন্যই সব তাঁর মনে ফিরিয়ে আনতে হবে। জানেন একদিন না একদিন তিনি ভেনিসে পৌঁছে যাবেনই। এখন এমন এক সময়, যখন মানুষ তার নিজের শহরে, নিজের জনপদে ফিরছে, তিনিও তাই ভেনিসের পথে হেঁটেছেন। মার্কো এই শহর দেখেছিলেন নদীর ওপার থেকে। ওপার থেকে এই সেযান শহর পুবে। যেমন কলকাতা শহর যদি গঙ্গা নদীর ওপার থেকে দেখা হয়, পুবেই দেখা যাবে। এক জনপদের সঙ্গে আর এক জনপদের কত মিল। এই মিল এক ১০০০ বছরের শহরের সঙ্গে ৩০০ বছরের শহরের। সেযান যত প্রাচীন, ভেনিসও তত। মার্কো যদি সেযান শহরের দিকে চেয়ে ভেনিসের মুখ দেখতে পান, সেই মুখে যেন কলকাতার কোনো এক ভিখারিনী মায়ের মুখের আদল দেখতে পান। ভেনিস কিংবা সেযান কিংবা সেই কলকাতা, কেউই সেই মায়ের মুখ চেনে না। ভুলে গেছে।
মেয়র বললেন, এই নগরকে আপনি কেমন দেখেছেন ?
নদীর ওপার থেকে দেখেছি যেমন, পুবে তাকিয়ে, নাকি পশ্চিমে তাকিয়ে এই নগরের কেন্দ্রভূমি থেকে? মেয়রের উত্তরের অপেক্ষা না করে মার্কো বললেন, ভেনিসের মতো, ভেনিসকে যেমন মনে পড়ে।
ভেনিসকে কেমন মনে পড়ে মার্কো ?
মার্কো বললেন, এই শহরে এসে আমি ভেনিসকে দেখতে পাই যেন, যেমন দেখেছিলাম কলকাতার ভিতরে ভেনিসের প্রাণ, কত মানুষ, অত মানুষ আমার ভেনিসে ছিল না মনে হয়, মানুষে মানুষে গলাগলি করে থাকে যেন, খুব উল্লাস করে, যেমন ভেনিসের মানুষ করে, ছবি আঁকে, রঙ্গালয়ে ভীড় করে, ক্রীড়াভূমিতে ভীড় করে, যেমন আমার ইতালি করে, ভেনিস করে, অথচ কলকাতার বয়স কতটুকু।
মেয়র শুনতে শুনতে বললেন, যেন আমার সেযান শহরের কথা শুনছি মহাশয়।
মার্কো চুপ করে থাকলেন। মেয়র তো জানেন না, তিনি ভেনিসের কথা হয় ভুলে গেছেন, অথবা ভেনিস দ্যাখেননি কখনো, তাঁর জন্ম হয়েছিল অজানা এক জনপদে, তাঁর মা তাঁকে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছিলেন, হয়ত ভেনিসের পথেই চলেছিলেন, কিন্তু মা শেষ পর্যন্ত কোথায় গেলেন, তা মার্কোর জানা নেই, মা চলে গেলেন এক সৈনিকের সঙ্গে, নাকি এক আমলার সঙ্গে, ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে, সওদাগরের সঙ্গে, তাকে রেখে গেলেন এক এতিমখানায়, মার্কো তাঁর শৈশব, কৈশোর, যৌবনের কথা ভুলেই গেছেন সব, শুধু জানেন তাঁকে ভেনিস যেতে হবে, ভেনিস যাওয়ার কুহক মা তাঁর কানে দিয়ে গেছেন, মার্কো পর্যটক, নগরে জনপদে যাওয়া তাঁর রক্তে, তাঁর পূর্বপুরুষের কথা তিনি মায়ের কাছে শুনেছেন, অভিযাত্রা ছিল তাঁদের রক্তে, এমন হতে পারে তাঁর পূর্বপুরুষ তিনিই, এই ভয়ানক দিন না এলে তাঁর দিন চলে যাচ্ছিল চমৎকার, এক জনপদ থেকে অন্য জনপদে গিয়ে সেই জনপদকে প্রাণ ভরে আস্বাদ করতে করতে জীবন মধুর হয়ে উঠেছিল যখন, তখন নগর, জনপদের ফটক বন্ধ হতে লাগল। সকলে নিজের শহরে, নিজের গ্রামে ফিরতে লাগল। মার্কোর তখন মনে পড়ল ভেনিস। ভেনিস ফিরে যেতে হবে। মা বলত, আমরা ভেনিস ফিরে যাব। মায়ের মুখ মার্কো ভুলে গেছে। মায়ের কথাটি মার্কোর নিজ কল্পনা কি না সে বুঝতে পারে না। মেয়রের কথায় মার্কো তাঁর দিকে ফিরলেন। শুনতে পাননি স্পষ্ট করে। কী বলছেন নগরাধিপতি, মেয়র স্যার ?
মেয়র তাঁর কথা আবার বলতে মার্কো বললেন, তিনি সেযান নদীর ওপারে পৌঁছে, পুবের দিকে তাকিয়ে, দূরবীনের ভিতর দিয়ে দেখলেন গির্জার চূড়া, মসজিদের মিনার, রঙ্গালয়ের আশ্চর্য গড়ন, প্যারাবোলার মত ঢেউ তার শিয়রে, দেখে মনে হয়েছিল ভেনিস, তাই পার হয়ে এসেছিল, হ্যাঁ, মেয়রের কথা সত্য, সেযান শহরকে তার ভেনিসের মতো মনে হয়, যদিও ভেনিসের সব স্মৃতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার কাছ থেকে, কিংবা আছে, স্বপ্নের ভিতরে হানা দেয় তাহলে কোন শহর ? যে শহরে প্রবেশ করতে গেলেই ভেঙে যায় স্বপ্ন। সেই শহর এইসব কোনো শহরের মতো নয়, আবার এইসব শহরের মতোও হয়ত। বুঝতে অসুবিধা হয়। স্বপ্নের স্থায়িত্ব খুব কম। একটা ক্যানেল দেখতে পান অনেক দূরে। তারপর ? অন্ধকার। অন্ধকারে জেগে উঠে দূর থেকে ভেসে আসা এক সুরের মূরচ্ছনা শুনতে পান তিনি। ভেসে এসে মিলিয়ে যায়। ভেনিস তো সুরের শহর। তাঁকে কলকাতার এক সুরসাধক বলেছিল আন্তনিও ভিভাল্ডির নাম। শুনিয়েছিল চার ঋতুর মূরচ্ছনা। শুনতে মার্কো নিজের দেশটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। বসন্তে তুষার গলেছে। ঝর্না মুক্ত হয়েছে দেখতে পাচ্ছিলেন তিনি। তারপর গ্রীষ্ম সবুজ হয়ে আছে মাঠ প্রান্তর। নিষ্পত্র গাছ ভরে উঠেছিল সবুজে। মাথার উপরে নীল আকাশ। আহ। মার্কো অন্ধকারে সেই সুরের একটা রূপ দেখতে পান। গ্রীষ্মের পর হেমন্তে পাতা খসানোর আগে গাছ-গাছালির পাতা ভরে ওঠে রঙে আর রঙে। আগুন রঙে ভরে যায় সব। মার্কো দেখতে পেয়েছিলেন। রঙ যেন মোর মর্মে লাগে। রঙ যেন ঢেউ হয়ে গাইছে। আবার মনে পড়ে যাচ্ছে সামনে শীত। ঢেউ কখনো মিলিয়ে যাচ্ছে, কখনো জেগে উঠছে প্রবল হয়ে। তারপর এল শীত। তুষারে ছেয়ে গেছে সব। মানুষ ঘরে ঢুকে গেছে। তুষারে ছাওয়া মহাপ্রকৃতির ভিতরে একটি ঈগল। নিঃসঙ্গ ঈগল। মার্কোর মনে হয়েছিল তিনি, তিনিই তুষারাচ্ছন্ন মহাপ্রকৃতির ভিতর দিয়ে একা হেঁটে যাচ্ছেন। লকডাউন। সব দুয়ার বন্ধ।
মেয়র ভাবছিলেন তিনি শহরটিকে সাজিয়েছেন অনেক। আরো সাজাবেন। সেযান শহর যেন এক বাগান। কোথাও যেন কোনো খুঁত না থাকে। বাগানের প্রতিটি ফুল যেন সময়ে ফুটে ওঠে। এই নগরে কোনো ভয় নেই। শিশুদের ভয় নেই, বৃদ্ধদের ভয় নেই, যুবক যুবতীদের ভয় নেই। সুবৃহৎ মসজিদ, গির্জা এবং সর্বধর্মের উপাসনালয় এই নগরেই। মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করেছে যে মধ্যবয়সী, সে গির্জার সমুখে এসে বুকে হাত রাখে। আমেন। শান্তি। এই নগরের মেয়েরা খুব সুন্দর। তাদের হাসি আরো সুন্দর। তাদের সেবা আরো সুন্দর। জয়িত্রী এক সুন্দরীর নাম। মেয়রের মনে হলো জয়িত্রী মার্কোর সঙ্গী হতে পারে। মার্কো তার সঙ্গে এই নগর দেখতে যেতে পারেন। অপেরা, কনসার্ট, সিনেমা, থিয়েটার। সেযান শহরের সুখ্যাতি যেন মার্কোর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রীষ্ম আসতে দেরি আছে প্রায় এক মাস। ফুটবে চেরি। চেরি প্রস্ফূটন পর্যন্ত যেন পর্যটক এই শহরেই কাটিয়ে যান। মেয়র দেখলেন তুষারপাত হয়েই যাচ্ছে।
মার্কো টেলিভিশন দেখছিলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার তেলিপাড়া গ্রামের সন্তান, তিন সন্তানের জননী আমিনা ইন্দালিব তৃষা (৩৯) ’র মৃত্যু হয়েছে গত ২৩ মার্চ। ইন্নলিল্লাহে ওয়াইন্না....রাজিউন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামীর নাম বোরহান চাকলাদার। এ নিয়ে নিউইয়র্কে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা তিন বাংলাদেশীর মধ্যে তিনি একজন। চার বছর আগে তৃষা সপরিবারে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।
আমরা তৃষা’র বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি....
দুই
জয়িত্রী বলল, নিউইয়র্কের কথায় বুক হিম হয়ে আসে।
জয়িত্রী মেয়েটির মুখখানি কঠিন নয়, সরল নয়, কত সুন্দর তা বলা যাবে না। মার্কো তার সঙ্গে এসেছে একটি উদ্যানে। কেন্দ্রীয় উদ্যান নয় এইটি, তবু কত বড়। উদ্যানে কত শাদা কালো পায়রা। তাদের দেওয়া দানা খুঁটে খাচ্ছে। পায়ের কাছে এসে ঘুরঘুর করছে।
তুষারপাত নেই আজ। আকাশ ঝকঝকে নীল। চমৎকার রোদ উঠেছে। মার্কো এবং জয়িত্রী বসে ছিল এক বেঞ্চে। বছর ২৪-এর তরুণী জয়িত্রির ইচ্ছা সাংবাদিক হবে। সে মার্কোকে জিজ্ঞেস করল, তুমি নিউইয়র্ক শহরে গেছ ?
মার্কো বলল, অবিরাম কান্নার বিবরণ শুনতে চাও ?
জয়িত্রীর মুখখানি অন্ধকার হয়ে গেল। মাথা নামাল একবার। বলল, তার দুই বন্ধু আছে ঐ শহরে। তাদের ফোনে পায়নি সে, ক’দিন চেষ্টা করেছিল।
মার্কো বলল, আমি একসময় এক গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলাম, গ্রামখানি ছোট-বড় পাহাড় দিয়ে ঘেরা, সেখানে বটমূলে এক দেবী দেখেছিলাম, তিনি মানুষের কান্না থামাতে পারতেন, কাঁদনা বুড়ি ।
জয়িত্রী বলল, তার এক পিসি আছে, সে তিনবার বিয়ে করেছে, তিনটি বিয়েই ভেঙে গেছে, পিসি সংসার করতে চায় কিন্তু কোনো সংসারই টেকে না, পিসির জীবন কান্নায় ভরা।
মার্কো বললেন, হ্যাঁ, এমন হয়, কিন্তু এইটাই সত্য নয়, কান্না কতরকমে আসে, নিউইয়র্ক শহরে টাইমস স্ক্যোয়ার এক আনন্দের জায়গা, সেখানে পরিচয় হয়েছিল কয়েক ব্যক্তির সঙ্গে, তাদের নিজেদের শহরের নাম হবিগঞ্জ, চারজন একটি বাড়ির একটি ঘরে থাকে, খাদ্য বিপনিতে কাজ করে, প্রতিদিন ৫০ ডলার পায়, তাদের ভিতর দুজন খুব ভালো রান্না করে, আয়ের থেকে মাসে ৫০০ ডলার দেশে পাঠায়, তাদের দু’জনের একজন দেশে গিয়ে মরে গেছে, একজন নিউইয়র্কে মারা গেছে, বাকি একজন পালিয়েছে।
কোথায় পালিয়েছে ? জয়িত্রী জিজ্ঞেস করল।
জানি না, হয়ত হাসপাতালে ভর্তি হতে পেরেছিল, বাকিরা পারেনি, হাসপাতাল থেকে তার কবর হয়ে গেছে, কিংবা কবরের জন্য অপেক্ষা করছে মর্গে, কবে তার পালা আসবে।
জয়িত্রী দুহাতে মুখ ঢাকল, তারপর বলল, ভয়ের আগে সেই শহর কেমন ছিল?
মার্কো বলল, এমনি ছিল, আকাশচুম্বী বাড়ি, রঙ্গালয়, উদ্যান, যাদুঘর, খাদ্য বিপনি, ক্রীড়াভূমি, হাডসন নদীর ভিতরে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, নদীর উপরে প্রাচীন সেতু...ঠিক এমনি শহর।
তবে যে আমার বন্ধুরা বলে, এমনি না অন্যরকম।
তাহলেও এমনি, এমনি সে নগর, হাডসন নদীর ওপার থেকে দেখলে যেমন, সেযান নদীর ওপার থেকে দেখলেও তেমন, সেই শহরে যারা যায়, গিয়ে আর ফিরতে চায় না, আমার তো মনে হচ্ছে এই সেযান শহরে বাকি জীবন থেকে যাই। মার্কো বলল জয়িত্রীকে।
জয়িত্রী হাসল। সেই হাসির অনেক অর্থ হয়, মার্কোর মনে হলো, জয়িত্রী তার এই বাসনায় অনুমোদন দিল। আবার মনে হলো, না অনুমোদন দেয়নি। মার্কো নিজেই কি তা পারবে ? ৭৫০ বছর ধরে মার্কো পোলো হাঁটছে ভেনিস ছেড়ে এসে, সে কি কোথাও থেকে যেতে চেয়েছিল ? কোথাও চিরকালের মতো থেকে গেলে অন্য কোথাও যাওয়া যায় না।
জয়িত্রী বলল, সেই শহরে যারা গিয়ে পড়ে, তারা যদি না ফিরতে চায়, তবে তো সেই শহরের কুহক আছে।
সব শহরেরই কুহক থাকে। কুহকেই শহর সুন্দর হয়ে ওঠে। মরণেও কুহক যায় না। এতদিনে মার্কোর মনে পড়ল ভুলে যাওয়া ভেনিস নগরের কথা। তিনি যেন ভেনিসেই রয়েছেন। ভেনিস থেকে বেরিয়ে তাতার দেশ ঘুরে ভেনিসেই ফিরে এসেছেন। দূরে গির্জায় ঘন্টাধ্বনি। জনশূন্য নগরের পার্কে পায়রার দল খুঁটে খুঁটে দানা শস্য খাচ্ছে। মানুষ না থাকলে শস্যদানা দিল কে ? মার্কো দেখলেন শূন্য উদ্যানে একটিই মানুষ। এক উদ্ভাসিত মুখের বালক, সোনালি চুল, নীল পদ্মের মতো দুই চোখ, রৌদ্রময় হাসি। তার দুহাতে শস্যদানা। মাটিতে সে শস্যবীজ ছড়িয়ে দিচ্ছে। সামনে ফলনের কাল।
1 মন্তব্যসমূহ
অসাধারণ 😍
উত্তরমুছুন