আনোয়ার শাহাদাত
বিদ্যাবুদ্ধির জোরে তিন সালের অধিক হিসাব রাখা সাধ্যে কুলোয় না। প্রকাশ-কালে তাও আবার তিন বছর গুরুত্বের ‘তিত্তা-সাল’ হয়ে ওঠে। অঙ্কের কিঞ্চিৎ বাড়া-বাড়ি মনে হলে স্বগত হিসাব কষে উচ্চারিত হয়- ‘তিন তিরিক্কা নয়’। সেই ভুল-ভাল হিসাব মতে ‘তিন তিরিক্কা নয়’ সালের মাথায় ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। এক প্যাকেট কারিগর বিড়ি, কান্দা-ভিত্তিক ক্যানভাস করার দু’খানা চোঙা, ঘর কিস্তি একটি পোস্টার, এইসব শেষে আসে ভোটের দিন। নিজের নাম লেখা ভোটার লিস্টের পাতাখানা পাওয়ার আশায় আইন্তন কোনো প্রার্থীর হয়ে ফুট-ফরমায়েশগুলো সারাদিন করে। সন্ধ্যায় ভোটার লিস্টের সেই পাতাখানা কখনো বুকের কাছে, কখনো সতর্ক হাতে উলটিয়ে-পালটিয়ে দেখতে দেখতে মেঠো-পথে আইন্তন বাড়ি ফেরে। কোনো প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে তার আনন্দ-বেদনার কিছু নেই।
ছাপার অক্ষরে লেখা স্বনাম ‘অ্যান্টনি গোমেজ’ই তার সর্বস্ব পাওয়া হয়ে ওঠে। পৃথিবীর অন্য কোনো খাতায় বা নথিতে আইন্তনের নাম লেখা নেই, কেবল ঈশ্বরের দলিলের কোণায় আছে বলে বিশ্বাস। কাঁচা পাতি-গাবের কষ দিয়ে আইন্তন সেই পাতাখানা ঘরের পাটকাঠির বেড়ায় সযত্নে লাগিয়ে রাখে। নিজের নামের সর্বদা বিকৃত উচ্চারণে অভ্যস্ত হলেও কখনো হঠাৎ ব্যক্তিত্বের সংঘাত শুরু হয়। আর তখন বিকৃত নাম উচ্চারণকারীকে দু’কথা শোনায়- ‘ব্যাগর ব্যাগর করিস না ব্যাডা, আইন্তনডা কী, তোগো বাফের নামডা কইতে ভুল অয়না, মোরডা কইতে ভুল অয় কিয়া, ঘরে বান্দাইয়া রাখছি যাইয়া দেহিস, ছাপার অক্ষর, অ্যান্টনি গোমেজ।’ সেরকম কারও কখনো দরকার পড়েনি দেখার আইন্তনের পাটকাঠির বেড়ায় লাগানো ছাপার অক্ষরে নির্ভুল নাম।
দেশান্তর কাঠি গ্রামের বিশেষ এ মৌজায় একটি ভিন্ন সংস্কৃতি আছে। তা প্রধানত ধর্মীয় কারণে। পুরো জেলায়ও এরকম ব্যাপার আর নেই। গ্রামের পুব মাথার এ হাওলায় বসবাস করে কিছু খ্রিস্টান পরিবার। দলিলপত্রে এই হাওলার পরিচয় চৌদ্দঘর বলে। কোনো একদিন এই হাওলায় চোদ্দটি খ্রিস্টান পরিবার বসবাস শুরু করে কিংবা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়, যদিও সেই চোদ্দ পরিবার বেড়ে এখন দু’শোতে পৌঁছেছে। মুখে-মুখে এ হাওলার পরিচয় খ্রিস্টানদের কাছে ‘খেরেস্তান মহল্লা’ আর চারদিকের গ্রামগুলোর মানুষের কাছে ফ্যারাঙ্গি-পাড়া। খ্রিস্টানরা ফ্যারাঙ্গি বলে নিজেরা মেনে নেয়, কিন্তু তাই বলে ‘ফ্যারাঙ্গি-পাড়া’ হতে যাবে কেনো? তারাও তো মা-বোন নিয়ে থাকে, ‘পাড়া’ কেনো? এ নিয়ে বিস্ফোরণ-হীন দ্বন্দ্ব দীর্ঘকাল লেগেই আছে।
‘বড়দিনে’ সব ঘরে সাধ্যমতো ভালো খাবারের আয়োজন, পরিধানে রঙিন পোশাক, একুশ দিন গন্দম দিয়ে বাড়িতে বানানো পটকা ফোটানো। এক পটকার প্রতি-উত্তরে অপর প্রান্তেও পটকা রা-রা শব্দে ছড়ায়। বিশেষ কোনো রাতে বা বিয়ে-পার্বণে ঘরে-বানানো পান্তাভাত পচা ও তালের রসের তাড়ি-মদ পান, গেলা-শেষে রুমাল উড়িয়ে ঢাক পিটিয়ে অতি সাধারণ লম্ফঝম্ফ-প্রধান নৃত্য। ফি-বছর গির্জা-ঘরে যিশুর হত্যাবিষয়ক পালা-নাটক, আষাঢ় এবং কার্তিকের অভাবের দিনগুলোতে ঘরের দ্রব্য-সামগ্রি খুদকুঁড়োর বিনিময়ে বেঁচে দেয়াল এই একধরনের আলাদা সংস্কৃতি।
চারদিকের মুসলমানেরা যখন একে অপরকে গালি দেয় ‘হালার পো’ বলে এই মহল্লার খ্রিস্টানরা সে ক্ষেত্রে বলবে ‘বউয়ার পো’। বাবাকে পাপু-পাপু বলে গলা চড়িয়ে ডাকলে আশ-পাশের অন্য ধর্মের লোকেরা যতই হাসুক এ সবই তাদের ভিন্ন সংস্কৃতি। আইন্তন এই সংস্কৃতির মাঝে বেড়ে ওঠে।
জীবনের এক পর্বে শুদ্ধ বলার চেষ্টা, কথার ফাঁকে জানা ইংরেজির ব্যবহার, রবিবার সকালে প্রার্থনা করতে গির্জায় উপস্থিতি- কানে সস্তা সুগন্ধি-মাখানো বালিশ-ফুটো শিমুল-তুলা গোঁজা। বগলে চেপে ধরা বাঁধানো পুরনো বাইবেল। নিজ হাতের চেয়ে বিঘাত-খানেক লম্বা হাতওয়ালা জামার গোটানো হাতা। তেল-ময়লায় ফেটে যাওয়া কলারের উপর দু'ভাঁজ করা রুমালের দুই কান-ছেঁড়া কলার ঢেকে রাখা ও ফের ছিঁড়তে না দেয়া। লম্বায় জামা বেঁটে-খাটো ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের আইন্তনের হাঁটু ছোঁয়া। কিন্তু সে জামার এ বেঢপ লম্বা বোঝা যাবে না। তা তার কোমরের ঢোলা প্যান্টের নিচে। কোমরে বেল্ট থাকার কারণে তার এই প্যান্টের নাম ‘টেডি বেল্ট-বটম’ সেরকম কাউকে কাউকে সে বুঝিয়েছে। ‘নেপালি দারোয়ানকে’ হার মানায় তার প্যান্টের নিচের ফুট-প্রায় লম্বা। জুতা ও হাঁটুর মাঝখানটায় প্যান্টের লম্বা শুকোতে দেয়া গোছানো ইলিশের জালের মতো কুচি করে থাকে। পায়ের জুতার বয়স পঁচিশ বছর অনুমেয় হলেও তা অস্বাভাবিক নয়। কুমার-বাড়ির পোড়ানো পুণ থেকে ফেলে দেয়া ঝামা চাড়ির মতো দেখতে সে জুতার ভেতরে একদলা ত্যানা ঢুকিয়ে আইন্তন হেলে-দুলে হেঁটে আসে গির্জায়। হাসির গল্পের ছবির মতো তার প্যান্টের পেছনে ছাড়া, সামনে ‘ইন করা’- ‘বেল্টেবটম’ দেখানোর কাজ।
আইন্তনের পরিধানের এসব নিয়ে খোঁচা-খুঁচি হয় না তেমনটি নয়। যদিও আইন্তনের পদ্ধতিতে এই খ্রিস্টান পল্লির অনেকে প্যান্ট-শার্ট সংগ্রহ করে। সংগ্রহের সে পদ্ধতি অবশ্য অমার্জিত কিছু নয়। চেয়ে আনা বা ফেলে দেয়ার আগে সংগ্রহ। যারা খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে তারাও জানে কীভাবে আইন্তনের পরিধেয় সংগৃহীত। তারপরও জিজ্ঞেস করে-
‘ও আইন্তন দাদু, হ্যা তোমার এই পুরা আতার ফুলফেন আর পুরা আতার কোরতা ছার্ট কেনছো কোন আডে গোনে।’
‘সবাই যে-আডে গোনে কেনে হেই আডে গোনেই কিনছি। তয় বেমাক্কে আবার হেই আডে গোনে কেনার সুযুগ পায় না’ উত্তর দিয়ে আইন্তনও প্রশ্নকর্তাকে খোঁচায়। সে বোঝাতে চায় সবাই চাইলেই চট্টগ্রাম বা কলিকাতা ও বোম্বাই যেতে পারে না। বহু বছর আগে সে যখন খ্রিস্টান মহল্লার অন্যান্যদের মতো চট্টগ্রাম যায় তখনই তার ওইসব প্যান্ট, শার্ট, জুতা সংগ্রহ করে। সে সময় তার কাজ জুটেছিলো এক বিদেশি সাহেবের ঘরে ‘হাউস মেটের’। বছর-খানেক পরেই সে গ্রামে ফিরে গর্ব করে বলা শুরু করেছে যে সে বিদেশিদের সঙ্গে চাকরি করেছে, তার পদ ছিলো ‘হাউস মেট’। তখন অবশ্য পূর্বের হাউস মেট চাকরিজীবীরা আইন্তনকে হেনস্তা করার জন্য বলে দিয়েছে- ইংরেজিতে হাউস মানে ঘর আর মেইট মাইনি চাকর, মোটমাট মাইনি অইলো ‘ঘরের চাকর’। বউয়ার ফোয় গপ্প করে।’
আইন্তন গ্রামে ফিরে যখন দু’একজনকে তার চাকরির বর্ণনা শুরু করেছে তখন তারা আইন্তনের কাছে জানতে চেয়েছে ‘হাউস মেইট মাইনিডা কী’ -আইন্তন তখনই বুঝতে পারে ঘটনা তার বিরুদ্ধে কতদূর গেছে।
এতে আইন্তন হতাশ না হয়ে নতুন পথ ধরেছ- ‘বউয়ার ফোয়রা ঢাকা আর চট্টগ্রামে হাউস মেটগিরি করে, পারলে কইলকাত্তা-বোম্বাই যা, একদিন গুড মর্নিং এ স্যান্ডউইচ মেইক করতে গেলে প্যাদাইয়া দেবে না! পারলে হেগোর লগে ছড়-ছড়াইয়া ইংরেজি ক’ দেহি পাপুর ক্ষ্যামতায় কুলাইলে!’ একথার পর সে তার রপ্ত করা সব ইংরেজি একসঙ্গে বলতে থকে। উপস্থিত খোঁচা-কারীর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ‘বউয়ার ফো’ এবং অন্যান্যদের জানান দেয়- টাইম ছট, হারি-য়াপ, ব্যারি-বিজি, কুইট, ডেলিসাস টেস্টিং, বেরি-গুড, ঠ্যাংকু, ডন্ট ফরগেট মি নট, ভাই ভাই, গুডভাই, বেরি-গুড, এন লাস্ট, ব্রাদার ব্রাদার। শেষের ব্রাদার ব্রাদার আইন্তনের নিজস্ব ইংরেজি-করণ। বিদেশিরা ভাই ভাই গুড ভাইর ইংরেজি বলতে ভুলে যায় মনে করে আইন্তন নিজস্ব ইংরেজি করে তার ক্ষেত্রে ‘ব্রাদার-ব্রাদার’ বলে থাকে।
নিজ সম্পর্কে আইন্তনের উচ্চ ধারণার আরও উন্নতি হয়।
জার্মান ধর্ম-যাজক ফাদার জার্মেন দেশান্তর-কাঠি গির্জায় অনিয়মিত হলে তিনি তুলনামূলক অবস্থা-সম্পন্ন বেনসন গোমেজকে রবিবারের প্রার্থনা করিয়ে নিতে বলেন। বেনসন প্রার্থনা শুরু করলে আইন্তন তার নেতৃত্বে প্রার্থনা হতে পারে না বলে গুঞ্জন শুরু করে পেছনের বেঞ্চে। কোথায় খোৎবা শেষে বেনসন আমেন বলেনি সেটি নিয়ে আইন্তন তৎপর হয়। তখন হাই স্কুলে পড়া জুজাইর মেয়ে ম্যাকদেলেনা চুলের বেণি দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে হেসে বলে, ‘তুমি কি এহন ফাদারও অইতে চাও নাহি?’ ম্যাকদেলেনার সে কথায় আইন্তন আপত্তি করে না, বরং দু’চোখ কষিয়ে টিপ মেরে ‘বেনসইন্নার চাইতে বালো পারতাম’ বলে। এভাবে আইন্তনের উন্নতি হতেই থকে। সে তার জীবনের গল্প নিয়ে চট্টগ্রাম-ঢাকা-কেন্দ্রিক তো দূরের কথা, কলিকাতায়ও থামে না। সে দিল্লি-বোম্বাই এবং করাচীর নিচে নামে না। এবং শিগগিরই একদিন আবার সে জাহাজে চেপে বোম্বাইর দিকে রওনা দেবে সেকথা সবাইকে বলছে। হাওয়াই জাহাজে সে যেতো, কিন্তু তার হাওয়াই জাহাজের দোলনায় বমি হয়। যারা বোঝার তাদের বুঝতে বাকি থাকে না কোথাকার গল্প কোথায় চলছে। এসব করে সময় চলে যায়, কিন্তু আইন্তনের আর গ্রাম ছাড়া হয় না। সাধারণ কোনো ভারী কাজের উপযুক্ত তার শরীর নয়। হাল ধরলে গরু জোরে টানে। মাটির ভেতর থেকে উঠে আসে লাঙলের ফাল। লাঙলের কুটি হাতছাড়া হয়ে গেলে আইন্তন মাটিতে পড়ে যায়। হাঁটুজলে ভুঁই রোয়া কি আগাছা বাছা এসব কাজে গেলে জোঁক চারদিক থেকে আইন্তনকে চেখে খাবে যেনো! মুখের ছ্যাপের পুকুর ঢেলে দিলেও জোঁক আর ছাড়ে না। ঘরের চাল বুনতে উঠলে ধুপ করে পড়ে যায়। কোথায় কী কাজ করবে আইন্তন! গরু চরাতে গেলে আইন্তনকে রাখাল মানে না গরু, অন্যের ক্ষেতে মুখ দিয়ে দু'ছোপ ধান খেয়ে ফেলবে। কোনো কাজ করে ‘খেয়ে-পরে’ থাকার সামর্থ্য আইন্তনের ভগ্ন-স্বাস্থ্যে কুলাবে না সে তারও বুঝতে বকি থাকে না। চাপায় জোর আছে একথা স্বীকৃত হওয়ার পর সে হাটে দাঁতের মাজন ও কৃমির ঔষধ বিক্রি করে দেয়ার চাকরি নিতে চেয়েছিলো। একবারেই অক্ষরজ্ঞানহীন এবং অশুদ্ধ কথার দোষে তারা তাকে নেয়নি। যদিও তার বনানো বোম্বাই ও করাচীর গল্প শুনে কৃমি-ম্যানেজার পছন্দ করেছিলো। এরপর আইন্তনের হাতে আর কিছু থাকে না জীবিকার জন্যে। ভিক্ষা করার কথা মনে হয় না এমনটি নয়। কিন্তু গপ্পে-গপ্পে তার যে-মর্যাদা ও আত্মসম্মানবোধ এখন হয়েছে তাতে করে পেশা হিসেবে অন্তত ভিক্ষা করা আইন্তনের পক্ষে সম্ভব নয়। তা আশপাশের গ্রামে কেনো, দূর শহরেও নয়। কেননা মূল সমস্যা তার ভেতরের মানুষ।
সবকিছুর ঊর্ধ্বে ক্ষুধাই যখন তার কাছে বড় তখন হঠাৎ ঝড় আসে। নিয়মিত বার্ষিক ঝড়গুলোর চেয়ে বড়। সাগরের জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের মানুষ আর প্রাণীরা একাকার হয়ে যায়। মাচার তক্তা, গৃহস্থের দোহারা ছাগল, বাড়ির পাল-রাওয়া মোরগ একযোগে ভাসতে দেখা যায়। আসে রিলিফ বিদেশ থেকে। সুস্বাদু বিস্কুট, টিনের কৌটায় মাছ-মাংস, পাউডার দুধ, ছাতু, পুরনো কাপড়, কম্বল, সাবান, ম্যাচ-বাতি আরও কতো কী! দেশান্তর কাঠি গ্রামে কেনো, আরও অনেক দক্ষিণের কোনো গ্রামও বন্যায় আক্রান্ত নয়। কিন্তু রিলিফ এসেছে এসব গ্রামের জন্যেও। এসেছে যখন তার ভাগ আর কে ছাড়ে! লেগে গেলো মানুষের হাহাকার আর ভিড়। বন্যা হলেই কী, না হলেই কী, অভাব আর ক্ষুধা সমান। আইন্তনও নিয়মিত ছাতুর থালা হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কখনো রিলিফ-কর্মীদের ফুট-ফরমাশ খাটে আর দ্যাখে।
বন্যা আর রিলিফের সেই সময় পিছিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু এক খাবলা ছাতু, কখনো বিস্কুট, একটি সাবানের জন্য অভাবীরা আজীবন ব্যাকুল। অনন্তকাল তারা রিলিফ-সামগ্রী পেতে হাঁ করে থাকবে আইন্তন তা জানে। সে তাদেরই যে একজন!
আইন্তনের অভাবী এবং হাহাকারি সেই বোধ থেকে নতুন চিন্তা হয়। রিলিফ প্রত্যাশীদের ঘিরে তার জীবিকার ফন্দি সংগঠিত হতে থাকে। রিলিফ-কর্মীদের কাছ থেকে আগেই তার সংগ্রহে ছিলো সাবানের খালি বাক্স, বিস্কুটের টিন, ছাতুর বস্তা। আপাতত একটি সাবানের খালি বাক্স নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে কোথাও। পাশের গ্রামে মায়ের বিয়ের পিতলের বদনা বন্দক দিয়ে টাকা নেয়। পথে হাট থেকে চারখানা কাপড়-ধোয়া সাবান কেন। একখানা সাবান গুঁড়া করে বাক্সের কোণা-কানচিতে ছড়িয়ে দেয়। অবশিষ্ট তিনখানা সাবান বিদেশি সেই সাবানের বাক্সের অপরিসীম শোভাবর্ধন করে।
এর পরের ঘটনা আইন্তনের সাবান কেনার পর। রামনগর গ্রামের এক প্রান্তে একজন দেশি সাহেব আসেন। তিনি মিঃ অ্যান্টনি গোমেজ। পাদ্রি-শিবপুর মিশনারির জন-দরদি ফাদার। নিজহাতে গরিব মানুষদের সাবান রিলিফ দিচ্ছেন। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, আজ আর সময় নেই। সারাদিনই ওই যে গ্রাম আছে না, সেখানে তিনি রিলিফ দিয়েছেন। অ্যান্টনি হাত তুলে আঙুল দিয়ে এসময় দূরের শ্রীনগর গ্রাম দেখায়। আজ এখন দিনও শেষ, রিলিফের সাবানও শেষ। মাত্র তিনখানা সাবান আছ। এ তিনখানা তিনি কাউকে দেবেন না, সবাইকে দেয়ার মতো সাবান যেহেতু তাঁর কাছে নেই। একজন দু’জনকে দিয়ে অন্যদের মন খারাপ করতে তিনি পারেন না। ফাদার তাঁর বাক্স খুলে উপস্থিত দু’চারজনকে দেখান। বাক্স কাত করলে গুঁড়াগুলো বাক্সের এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঝরঝর করে গড়ায়। গ্রামবাসীরা পীড়াপীড়ি করে জন-দরদিকে রিলিফ নিয়ে আর একদিন এ গ্রামে আসতে। তিনি রাজি হন, বলেন, ‘ঈশ্বর মানুষের কল্যাণের জন্যে মানুষকে পাঠিয়েছেন জগতে।’ এ সময় মিঃ অ্যান্টনি বিদেশিদের চরিত্র সম্পর্কে একটু বিশ্লেষণ করেন গ্রামবাসীর সামনে। তাদেরকে বোঝা খুব দায়। দেখুন, তারা এত রিলিফ দিচ্ছে মাগনা, অথচ এই যে বিদেশি বাক্স তার দাম নিচ্ছে। গ্রামবাসীরা সাহেবদের এইসব কাণ্ড শুনে অবাক হয়ে চাঁদা তুলে বাক্সের দাম আগেই দিয়ে দেয়। দেশি সাহেব নিজেই কথা দেন আগামী রবিবার প্রার্থনা শেষে যিশুকে ডেকে সকালেই রিলিফ নিয়ে এখানে চলে আসবেন।
মিঃ অ্যান্টনি গোমেজের তিন সাবান আর কমে না। গুঁড়া-ফালানো বিস্কুটের টিনও আর খালি হয় না। তার রিলিফ কার্যক্রম গ্রামের পর গ্রাম বাড়তে থাকে। কখনো সাবান রিলিফ-দান কর্মসূচি, কখনো বিস্কুট, কখনো তা কাপড় বা অন্যকিছু। আইন্তনের কোনোটাতেই লোকসান নেই। সে শুধু রিলিফ দেয়ার খরচ আনে। সাবানের বাক্সের খরচ কি বিস্কুটের টিনের খরচ। রিলিফের এই খরচটুকু আনাই তার এখন জীবিকা। সবার চাঁদায় এ খরচ সে আনে। তাতে সবার ভাগে খুব সামান্য পড়ে। দু’একজনের কাছ থেকে আনলে তার ভাগে বেশি পড়ে। এক জনার জন্য বেশি হলে সে যখন দেখবে রিলিফ কিছু নয়, ভুয়া, তখন আইন্তনকে খুঁজে টাকা ফেরত চাইবে। সবাই মিলে টাকা দিলে তাতে আইন্তনকে খুঁজে সে টাকা তুলে পেষায় না। অভিজ্ঞতা থেকেই আইন্তন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হত-দরিদ্র সেই ব্যক্তি খ্রিস্টান মহল্লায় এসে আইন্তনের ‘বাড়ি কোনডা’ জানতে চায়। মহল্লার সবাইও জানে আইন্তনের আজকালকার কারবার। তারা বলবে ‘বাড়ি অই পশ্চিমে, তয় হের চাইতে গির্জা-ঘরে যিশুরে নালিশ কইরা আয়েন।’ দু’একজন খুঁজে আইন্তনকে পেয়েছেও, ‘ও মর্দ শণ্ডামি হরলা কিয়া তুমি ফ্যারাঙ্গিগো ইজ্জত মারছো, মোর রিলিফ লাগবে না, টাহাডা ফেরত দেও।’ এ কথা শুনে আইন্তন আকাশ থেকে পড়ে- ‘ও বাই, তুমি আইন্তনের কতা কও, বউয়ার ফোয় মোরে জ্বালাইয়া খাইলো!’ বিষণ্ন মুখে সে আগন্তুকের দিকে তাকায়- ‘নাম কইছে কী, অ্যান্টনি গোমেজ, মোরা দুইজন জোড়া বাই, অর কতা মুই কিচু কইতে পারি না, আডে-গাডে পাইলে ঘোডা কেনু মাইররা টাহা উডাইয়া লইও।’ আইন্তন নিজেই নিজের বিরুদ্ধে দুর্নাম করে, কোনো কাজের অজুহাতে সরে পড়ে আগন্তুকের সামনে থেকে। সে অভিজ্ঞতা থেকে আইন্তন রিলিফেরও খরচ আনে চাঁদা তোলা অর্থ থেকে।
কিন্তু এসবেরও শেষ আছে। আয় ভালোই হয়েছিলো, টাকা জমেনি। খেরেস্তান মহল্লায় দান-খায়রাত করেছে দু’হাতে। বড়দিনে পালা করা ছেলেপুলেদের বলেছে- ‘এই যেন ছোডো-কাল হইতে অইজতক বুড়া অইছি বুইল্লা দেহি পেরতেক বচ্ছর গির্জা-ঘরডার পিছে হালাইয়া যিশুডারে খুন হরতাচো, হের চাইতে একটা কাম হরো বেডারা, বাইরে টেইজ বানাইয়া বাইদ্দার মাইয়া জোছনা নাইলে রাখখাল বোন্দে পালা হরো, জরির জামা-কাফুর আর বালা-হ্যাজাকের যে ভাড়া লাগে দিয়া দিমুনে।’ এসব বিবিধ খরচের পর ভালো আয় থাকা সত্ত্বেও আইন্তনের টাকা জমেনি। লাভের মধ্যে লাভ হলো দু’টো- সে সময় পেটের একটা নিশ্চয়তা হয়েছিলো, আর বোকা-সোকা মানুষেরা অনেকে তাকে ডাকতো ফাদার। এর মধ্যে আবার যাদের আত্ম-মর্যাদা বেশি তারা ডাকতো ব্রাদার বলে। সে-সবই-বা আইন্তনের জীবনে কম কিসে!
কোনো গ্রাম আর বাকি থাকে না যেখান থেকে রিলিফের খরচের নামে আইন্তন টাকা আনেনি। মানুষও সবকিছু টের পেয়ে যায়। আবার তার কিছু করার থাকে না। আশ্বিন মাসের বেকার গরুর মতো ঘরে আপন গোবরে জাবর-কাটন।
উত্তরের বাড়ির বেনডিক কাম্পু চির-অলস তেল-গড়ানো পাঁঠার মতো, বসে আর শুয়ে থাকা যার প্রধান কাজ। আইন্তনের তুলনায় কম অভাবী। চার হাটবার অন্তত বড় আরশির সামনে বসে সদাই নাপিতের হাতে খেউরি করে। ফরসা গায়ের রঙে হওয়াই শার্ট পরে জীর্ণ প্যান্ট জুতা পরিধানে সেও ২৫ ডিসেম্বর চোখে গগলস লাগিয়ে গির্জায় আসে। ইতালিয়ান ফাদারের দেখা কাঁধ-ঝাঁকানো বাতিক এখন তার নিজস্ব সম্পদে পরিণত হয়েছে। তাকে দেখে আইন্তনের অন্তহীন আফসোস হয়েছে জীবনে। যদি সে বেনডিক কামপুর মতো দেখতে হতো নিঃসন্দেহে অ্যান্টনি গোমেজ নামই তাকে জড়িয়ে থাকতো।
আইন্তন বেনডিকের সেই উত্তরের বাড়ি যায়। হাতের বীচিকলা আস্তে মুখে পুরে আলগা চিবোয়। চড়ুইর ধান ছোলা ফেলে দেয়ার মতো আইন্তন ফেলে দেয় কলার বিচি। চৈত্রের ধবধবে সাদা উঠান কালো কালো বিচি পড়ে ফোঁটা ফোঁটা সাজে।
- ও বেনডিক, হুনছি দক্ষিণা মানু একটু সিদা-সরল অয়।
বেনডিক আগ্রহ নিয়ে সাড়া দয়।
-হয় হয়, হোনো নায় হেরা ঢেহির মুশলের দুই দিকদা দুই আত মিলাইয়া লোপ ভইররা কাচা চাউল চায় এলানির ধারে, চাবাইবে। এলানি-বেডি লোপ ভইররা চাউল দেলে হেই আত আর বাইর হরতে পারে না। খবর পাডায় কোলায়, বেডাগো। বেডারা আল ছাইররা বাড়তে আইয়া কুড়াল দিয়া ঢেহি কাডে। চাউল হুদ্দা আত বাইর হরে। আরে গোদার গুষ্টি গোদা, দুই আতের লোপের চাউল ছাইররা দেলেই তো খালাস। বেডাডি আইয়া আবার কুড়াল মারে। তয় অচুককা আবার দহিনা মানের কতা জিগাইলা কিয়া? বেনডিক তার কাঁধ ঝাঁকায়, ঘাড় ঘুরিয়ে পরনের জামা ঠিক করার ভঙ্গি করে।
- কাম আছে কাম, তুমি যাবা মোর লগে?
- লঞ্চ ভাড়া? এহন তো আর লঞ্চ দিয়া ঘাডের গাঙ্গে লাফাইয়া পড়ার বয়স নাই, মনে আছেনি হেসব কতা আইন্তন?
সাগর পারের অঞ্চলের চৈত্রমাসের শুকনো ক্ষেতের মাঝখানে গগলস-পরা সুদর্শন সাহেব আর তার সহকর্মী আমিন চেইনের পর চেইন টেনে মাপতে থাকেন। যতদূর ইচ্ছা ততদূর মাপেন আর খেজুরের ডগার মাথায় লাল কাগজের নিশান পোঁতেন। যতক্ষণ দু’একজন না আসে তাঁদের পাশে তারা ঝনঝন শব্দে শেকল টেনে কখনো লম্বা কখনো আড়াআড়ি মাপতে থাকেন। কাছে লোক আসতেই সহযোগী আমিন শেকলের এক মাথা সেই লোককে ধরে টানার নির্দেশ দিয়ে গগলস-পরা সাহেবকে বলেন, বড়বাবু, রেস্ট, রেস্ট। বড়বাবু বিরক্ত-মুখে দাঁড়ান, বাম হাতের অচল ঘড়ি দেখেন বারবার যেনো সময় কম, শেখানো ইংরেজি বলেন, ‘টাইম সট, ডন্ট ফরগেট মি নট, হারিয়াপ অ্যান্টনি।’ অ্যান্টনি বিনীত অনুনয় করেন, ‘ছার ছার, আর ফাইব মিনিট।’ গগলস-সাহেব মিঃ বেনডিক চড়া মেজাজি কন্ঠে গর্জেন, ‘নো টাইম, স্যান্ডউইচ ডেলিসাস টেস্টিং, ভাই-ভাই, টাইম সট। লোক আরো আসছে, কী ব্যাপার! ব্যাপার তেমন কিছুই না, তারা ভূমি অপিসের লোক। এসেছেন জেলা-সদর থেকে। আজই ফিরে গিয়ে জানাতে হবে কী আয়তন কী মাপে হবে। লোকজন চৈত্রের দুপুরে বিজলি-চমকানো ঠাডা দেখে- কিসের মাপ কিসের আয়তন? অ্যান্টনি কঠোর মুখভঙ্গি করে উপস্থিতদের জানান, ‘এই ওয়াপদার বাঁদ দিয়া কে সোনার জমি বানায়ে দিয়াছিলো আপনাদের মনে আছে?’ ‘আয়ুব খাঁ, আয়ুব খা’ বলে লোকজন কলকল করে ওঠে। ‘হে কী আছিলো আপনারা জানেন তো?’ একজন ত্বরিত উত্তর করে, ‘দারোগা, মস্ত বড় দারোগা ছেলে।’ আইন্তন তাদের বোঝান- ‘দারোগা না, হেগোর বাপ, মিলিটারি, মিলিটারি। নাইলে হারা সাগর পার এত্ত বড় বাঁধ দেওনের পাগলামি কাগো অইতে পারে!’ আবারও আইছে আর এক আয়ুব খাঁ, মাইরা কাইট্টা আইছে জানেন তো, হেও কালা চশমা পরে, আমাগোর ছার হের দেহা-দেহি কালা চশমা, হেই নতুন মিলিটারিরই সাক্ষাৎ অডার- দিঘি অইবে, খাস দিঘি, এই চত্তিরেই কাডা অইবে দিঘি।’ আরও অনেক কথাই অ্যান্টনি বলতে চায়, লোকজন এরই মধ্যে হায়-হায় করে ওঠে। তারপর তা হলে এখন কী হবে, কী উপায়! উপায় অ্যান্টনি বলে দেন, গগলস-ছার পারে ঠ্যাকাইতে, কিন্তুক- কিন্তুক কী? এরই মধ্যে বেনডিক ছারের জন্য আসে ডাবের পানি। অ্যান্টনিও বাদ থাকে না সাহেবি আপ্যায়ন থেকে। আসে আরও কিছু যাতে করে স্যার মিলিটারি গহরমেনকে বোঝান যে এখানকার মানুষের এই ভূমিটুকু ছাড়া আর কিছু নাই। এখানে দিঘি কাটা হলে তাতে রাজহাঁস ভাসিয়ে দিঘির পারে বসে তা দেখলে মানুষের পেটের ক্ষুধার লাভ নেই।
আইন্তন ও বেনডিক সে যাত্রা সরকারি খাস দিঘি থেকে চাষাদের রেহাই দিয়ে জাগতিক পুণ্যের কাজ করে। রিলিফ-দান পুণ্যের মতো সে পুণ্যও শেষ হয় সময়ের ব্যবধানে।
এখন অচল আইন্তন মাদারের ডালের লাঠি ভর দিয়ে হাঁটে। হাঁটবারে পথে হাটযাত্রীদের উদ্দেশ্য করে বাসন পেতে বসে। কোনো মিনতি করে না ভিক্ষার জন্যে। বাসনের পর ঠ্যাংগা, ঠ্যাংগার পর নিজে, কখনো শুয়ে কখনো বসে থাকে। সে বাসনে প্রসারিত কোনো হাত থেকে ঠন করে কিছু পড়লে আইন্তন তার ডান হাত, দুই বাহু এবং কাঁধের গোড়ায় ছেুঁয়ে যথাক্রমে বুকে, কপালে ও ঠোঁটে ছোয়ায়। ঠোঁট দিয়ে উচ্চারণ-ভঙ্গি করে- মাতা পিতা পুত্র পবিত্র আত্মার জয় হোক! আমেন!
এক হাটবারের সকালে আইন্তনের বাসনে হালকা শব্দে কিছু একটা পড়ে। রেইনট্রির ছোট্ট বাকল বাসনে ফেলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকে রামনগর গ্রামের মফিজ ভিক্ষুক। মফিজ আইন্তনের নতুন পেশায় অন্তরে খুশি হয়। সে খুশিতে পাওনার কথা মফিজ ভোলে না
- কিরে আইন্তন, রিলিফ দেওনের নামে অনা টাহাডা দিবি কবে?
আইন্তন ঘাড় উঁচু করে মফিজের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসে
- দিমু দিমু, শিগগিরই দিমু।
- হ্য দেবা তোমার বাফের ইডার মইদ্দে দিয়া।
- হেইডা যদি বোজো তয় আর চাও কিয়া?
- চামু না, টাহা কামাই হরা না!
- খয়রাত-করা টাহা আবার কামাই-হরা টাহা নাহি?
- বোঝো না এহন, নিজেও তো কামাই হরো।
আইন্তন তার পাওনা শোধরাবার ভিন্ন প্রস্তাব দেয়।
- হের চাইয়া মোরে দুইডা জোতার বারি দিয়া শোদ লইয়া দে মফিজ।
- এ হালার পোয় কয় কী! জোতার বাড়ি খাইবে, সাইবি কাম! জোতা কিন্না দেখছো বাফের বয়সে? হেরে পিডান দেওনের লাইগগা জোতা কিনুম, আউশ কতো!
- তয় দুইডা কিল দিয়া যা মোর পিডে বউয়ার ফো।
- মোর কি হেই রত আছে রে আইন্তন?
- তয় তোর ঠ্যাঙ্গা-লাডিডা দিয়া মোর পিডে এক কুড়ি পিডান মাইররা তোর শরিলডার ঝাল মিডা।
‘হাছা পিডামু, হাছা’ বলে মফিজ ভিক্ষুক তার হাতের লাঠি দিয়ে আইন্তনের পিঠে পিটান ছাড়ে। কিন্তু সে পেটানোয় কোনো জোর হয় না। পাঁজরে সুড়সুড়ি দিলে মানুষ যে রকম হাসে, মফিজের পিটানে আইন্তন সেরকম হেসে জীবনের ঋণ-শোধ-পর্ব সারে। অদূরে গির্জা-ঘরে তখন কারও মৃত্যু-সংবাদে টানা ঘন্টা শুরু হয়। আইন্তন সে ঘন্টা শুনে উৎসুক কান পেতে নিশ্চিত হয়ে মফিজকে বলে, ‘অই হোন বউয়ার ফো মৌয়াতের ঘুন্টি পিডায়।’ ‘ওডা ফ্যারাঙ্গিগো মৌয়াতের ঘুন্টি, তুই মরছো’- মফিজ পাল্টা উত্তর দিলে দু’জনেই হেসে গড়ায়।
মফিজ তার গাঁট খুলে পান্তা-ভাতের বাসন বের করে। এরপর অভিন্ন পেশার দুই মানুষ এক গোত্র হয়ে একই বাসনে কাঁচামরিচ ডলে পান্তা খেতে থাকে।
তখন গির্জা-ঘরে টানা ঘন্টা অব্যাহত থাকে।
-----------------------
নিউ ইয়র্ক ১৯৯৬ ।
0 মন্তব্যসমূহ