(মৃত সহচরদের সাথে দেখা হবার পর )
আকাশ লীনা
আকাশ লীনা
আজকাল হয়েছে বিপদ । মৃত সহচরদের সাথে সময় কাটাই বেশি ।
ঘুমের ভেতর যে এটা না বোঝার কথা না । তাদের সাথে কথা বলি ,বেড়াই অনেক ঘটনা ঘটে । এসব যে ঘটছে তাতে আমার মনে দুটি শংকা
কাজ করছে । এক,
ভালো ঘুম হচ্ছে না ।
দুই, মৃতদের নিয়ে বেশি ভাবি হয়তোবা । তবে কী আমারও মরার সময় ঘনিয়ে আসছে । পাভলভের একটি বই না লেখা না কি যেন পড়েছিলাম । সেখানে তিনি বলেছিলেন , মৃতদের নিয়ে জীবিতরা তখনই বেশি ভাবে যখন সে মরণের জন্য সময় গুনে ।
দুয়েকটি মৃত সহচরদের সাথে সময় কাটানোর কথা বলব ? বলি । একটু হালকা হওয়া যাবে ।
দুই, মৃতদের নিয়ে বেশি ভাবি হয়তোবা । তবে কী আমারও মরার সময় ঘনিয়ে আসছে । পাভলভের একটি বই না লেখা না কি যেন পড়েছিলাম । সেখানে তিনি বলেছিলেন , মৃতদের নিয়ে জীবিতরা তখনই বেশি ভাবে যখন সে মরণের জন্য সময় গুনে ।
দুয়েকটি মৃত সহচরদের সাথে সময় কাটানোর কথা বলব ? বলি । একটু হালকা হওয়া যাবে ।
মনোনীতা : মনোনীতার সাথে দেখা গড়িয়াহাটে । ঠিক দেখা না ।
আমি ওকে দেখছিলাম বাসের জানালা দিয়ে । দেখি বাসা বদল করছে । মালবোঝাই ভ্যান যাচ্ছে
। সেই ভ্যানে একটি বড়ো আয়না ও যাচ্ছে । সেই আয়নার সাথে সাথে ছুটছে মনোনীতা । আয়নার
সামনে নানা কায়দা করে কী যেন গান গাইছে আর নিজের মুখ দেখছে । ও মনে পড়েছে , গানটি হলো , ‘ সেইয়া
সেইয়া ’।
( মনোনীতা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে । একটি হাসপাতালের নার্স ছিল । মনোনীতার সাথে অনেক রাত আমার নরক গুলজারে কেটেছিল )
( মনোনীতা মারা গেছে বছর দুয়েক আগে । একটি হাসপাতালের নার্স ছিল । মনোনীতার সাথে অনেক রাত আমার নরক গুলজারে কেটেছিল )
অজিত : একটি খাদের পাশে দাড়ানো ছিলাম আমি আর অজিত । অজিত মরা
মানুষের শুকনো খুলিতে আমের চাটনিতে সসেজ মিশিয়ে খাচ্ছিল । আমার মধ্যে এমন দৃশ্য
দেখার পরও কোনো রিএ্যাকশন নেই । অজিত খেতে খেতে গান গাইছিল ,
‘এই কথাটি মনে রেখো ।’
‘এই কথাটি মনে রেখো ।’
( অজিত সাইবার ক্যাফে চালাতো । ২০০৯ এ গাড়ির নিচে চাপা পড়ে
মারা যায় । আমি মাঝে মাঝে তার ক্যাফেতে যেতাম )।
রহমান : রহমান আমার চুলের ঝুটি ধরে বলে , আমায় একটা ডিপ কিস কর । আমি ভিটামিন সি-এর অভাবে ভুগছি ।
আমি এঘর ওঘর দৌড়াই । ঢাকডোলের আওয়াজ । রহমান আমার পেছনে দৌড়ায় । আমি দৌড়াতে যাই ।
পারি না ।
( রহমান এ্যাড ফার্মের কপি রাইটার ছিল । ২০১০ এ ক্যানসার ধরা
পড়ে । ওইবছরই মারা যায় । )
এখন বেশ রাত । অফিস থেকে ফিরেছি একটু আগে । বসে আছি জানালা
পাশে । ওপাশে বরষার পর আঁধার । জোনাক পোকা জ্বলে । ঝিঝি পোকা ডাকে । ব্যাঙও ।
ঘুমুতে যেতে ভয় করে । কে যে ঘুমের ভেতর আসবে কে জানে ?
মৃত মা আর বাবা’র মুখ আঁকছি । তারা আসেন না ।
তারা যদি আসতেন বেশ হতো । জীবিতদের মানুষ বেশি মনে রাখে না বলে আমার ধারণা । মৃতদের মনে রাখে জীবিতরা ।
আমি তাদের মনে মনে ডাকি । ওই যে জানালা , ওপাশে আঁধার । একদিন আমিও এমন আঁধারে মিশে যাবো তাদের ডাকতে ডাকতে ।
গেয়ে উঠি ‘সেইয়া সেইয়া ।’
মৃত মা আর বাবা’র মুখ আঁকছি । তারা আসেন না ।
তারা যদি আসতেন বেশ হতো । জীবিতদের মানুষ বেশি মনে রাখে না বলে আমার ধারণা । মৃতদের মনে রাখে জীবিতরা ।
আমি তাদের মনে মনে ডাকি । ওই যে জানালা , ওপাশে আঁধার । একদিন আমিও এমন আঁধারে মিশে যাবো তাদের ডাকতে ডাকতে ।
গেয়ে উঠি ‘সেইয়া সেইয়া ।’
ফ্রি ল্যান্স সাংবাদিক। ব্লগার।
0 মন্তব্যসমূহ