পার্থ মুখোপাধ্যায়
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে লোকটা পুড়ে গেল, উড়ে গেল অবিশ্বাস্য বেগে, লাঠি ও চশমা ফেলে রেখে ।
স্বচ্ছ কিছু মানুষ থাকে স্ফটিক দিয়ে তৈরি, ভূতুড়ে টাইপ, শিরা
উপশিরা অবধি দেখা যায়, সে রকম । ঋজু কিছু
মানুষ থাকে পিঁপড়ের অধ্যবসায় নিয়ে পাহাড় বানিয়ে দিয়ে যায় । সে রকম । স্বাধীন ও
নিঃসঙ্গ কিছু মানুষ থাকে "তোমার কি শরীর খারাপ" শুনলে বিব্রত হয়, সে রকম । পাগল কিছু থাকেন, টাকা ধার করে করে জ্ঞাতিগুষ্টির বিপত্তারণ বাবা হয়ে ওঠেন, সে রকম ।
সিনেমার ফ্রেমের মত আজকাল চোখ বুজলে দেখতে পাই
স্ফটিকের তৈরি অশীতিপর বৃদ্ধ এক পিঁপড়ে, রোদ্দুরে ঝলসে যাওয়া মাঠ
পেরিয়ে আসছে,
পরনে আটপৌরে ধুতি আর খদ্দর । হাতে
বাজারের থলে । আর অন্য ফ্রেমে এক
বৃদ্ধার আটপৌরে অপেক্ষা । এলে
তবে রান্না ।
নইলে দেখি অপেক্ষা সন্ধ্যেবেলা এক বীরপুরুষের, যে সামান্য কিছু সরকারী টাকার জন্য প্রাণ হাতে করে চোরডাকাত
ধরে বেড়ায় সারাদিন । ফেরে যখন, হাতে একটা সন্দেশ, রোজকার উৎকোচ । । একটা রিকেট আর আমাশায় ভোগা টিংটিঙে ছেলে, চার কি পাঁচ হবে, লোকটার
একমাত্র দুর্বলতা, হ্যারিকেনের আলোয় গলার শিরা
ফুলিয়ে গেয়ে যাচ্ছে প্রবল গরমে ঘামতে ঘামতে "পৌষ তোদের ডাক
দিয়েছে" । চারটে গান গাইলে তবে সে দুর্লভ প্রাপ্তি ।
একটা স্বচ্ছ ঋজু অথচ নারকোলের শাঁসের মত নরম পিঁপড়ের কাছে
দায়বদ্ধ আমি স্টারবাকসে বসে গরম কফি খেয়েও হিম হয়ে যাই । কাঁচের আয়নায়
নিজেকে দেখি বার বার । একটু শিরা উপশিরা, অথবা পিছনের দেয়ালটা, যাতে পিঠ ঠেকে গেছে বহুদিন, দেখা যায় যদি ।
আলোগুলো হ্যারিকেনের মত লাগে । নিভন্ত । স্টারবাকসের ছাদ
থেকেই মনে হয় জল পড়ে অঝোরে । আমি
নিজেকে প্রমাণ করতে সদ্য শেখা মল্লার গেয়ে উঠি । এখানে কত হাজার ছাতা কিনতে
পারি, তোমার একটাও কেন নেই? বলতে বলতেই লোকটা ভিজতে ভিজতে মাঠ পেরিয়ে চলে যায় । তার হাতের
চাঁদসন্দেশটা গলে গলে পড়ে হলুদ ঘাসফুল হয়ে ফোটে, পায়ে পায়ে একটা হলুদ রাস্তা ঝাপসা দিগন্তের দিকে চলে যেতে
থাকে ।
মাসটা হয়ত আষাঢ় ছিল না, তবে সেদিন থেকেই একটা ভূতুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল ।
0 মন্তব্যসমূহ