নীহারুল ইসলাম
রশিদ মেম্বারের কাছে শোনার পরও খবরটা বিশ্বাস হয়
না আত্তাব মৌলবীর। সরকার নাকি
ইমামদের মাসে মাসে ভাতা দেবে! বাপ জন্মে কেউ কখনো শুনেছে এমন কথা? রশিদ মেম্বার
রাজনীতি করে। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। সেই কারণে যত সব ভুজুং ভাজুং কথা বলে হয়ত তাকে হাতে রাখতে চাইছে। স্বভাবতই সে
রশিদ মেম্বারের কথার পাত্তা দিচ্ছে না। আনাকানি দিচ্ছে।
তবু রশিদ মেম্বার আত্তাব মৌলবীর পেছনে জোঁক লাগার
মতো লেগে আছে। টিভি দেখে, খবরের কাগজ পড়ে সে অন্তত এটুকু বুঝেছে যে, ইমাম হাতে
থাকা মানে ভোটে ফায়দা। তাই তো বড় বড় নেতাদের কাছে কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের
ইমাম, দিল্লীর জামা মসজিদের ইমামের এত কদর! সেই কথাটাই সে হাবভাবে আত্তাব মৌলবীকে
বোঝানোর চেষ্টা করছে। কারণ, সে জানে আত্তাব মৌলবীর মতো ইমাম হয় না! গ্রামের ছোট
থেকে বড় প্রত্যেকে আত্তাব মৌলবীর গুণগান গায়। অবশ্য এমনি এমনি গায় না, আত্তাব মৌলবীর স্বভাবটাই
যে খুব নরম প্রকৃতির। সৎ মানুষ। খুব কম কথা বলে। ডিউটি সম্পর্কে সচেতন। ফজরের ওয়াক্ত থেকে
এষার ওয়াক্ত পর্যন্ত এই গ্রামেই পড়ে থাকে। গ্রাম বলতে শ্রীরামপুরের জুম্মা মসজিদে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
পড়ায়। সকাল সন্ধ্যা
গ্রামের যেসব বালবাচ্চারা মক্তবে দ্বীন-ইসলাম শিখতে আসে, তাদের দ্বীন-ইসলাম শেখায়। কায়দা, আমপারা, কোরাণ শরীফ! অথচ মাস গেলে মাত্র দেড়হাজার টাকা দরমাহা!
সেই যুক্তিতে রশিদ মেম্বার আত্তাব মৌলবীকে খোয়াব
দেখানোর চেষ্টা করেছে। মাসে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে সরকার ভাতা দেবে। আল্লারে
আল্লা! যেখানে আজ পর্যন্ত ইমামতী করে মাস গেলে দেড়হাজার টাকার বেশী রোজগার করতে
পারে না, সেখানে আড়াই হাজার টাকা! প্রথম প্রথম ঝেড়ে ফেললেও শেষপর্যন্ত আত্তাব
মৌলবী নিশ্চয় লোভ সামলাতে পারবে না। রশিদ মেম্বারের এরকম ভাবে। এরকম ভাবনাতেই সে নিজেকে পরিচালিত করে।
দুই
ইমামদের সম্মেলন। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে।
প্রধান বক্তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ঘোষণা শুনে রশিদ মেম্বারের রাজনৈতিক ভাবনার
অগ্রগতি হয়। সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। আবার মেম্বার হতে গ্রামের লোকের ভোট চায় তার। অথচ বিপিএল তালিকায় নাম তোলানো, নতুন রেশনকার্ড
তৈরি, একশো দিনের কাজ, ওবিসি সার্টিফিকেট বের করে দেওয়া নিয়ে গ্রামের লোকের কাছে
সে যাচ্ছেতাই ভাবে নাস্তানাবুদ হয়ে আছে! এই অবস্থা থেকে সে মুক্তি পেতে পারে
একমাত্র ওই ইমাম ইস্যুতেই। সেই কারণে ওই সম্মেলনে আত্তাব মৌলবীকে যে করেই হোক নিয়ে
যেতে হবে! কিন্তু কীভাবে?
ভাবতে ভাবতে রশিদ মেম্বার গিয়ে হাজির হয় একেবারে
মসজিদে। তখন এষার নামাজের ওয়াক্ত। সবাই নামাজে দাঁড়িয়েছে। দেখাদেখি সে নিজেও
নামাজে দাঁড়ায়। নামাজ পড়ার অভ্যাস
না থাকলেও তার কোনোরকম ভুল হয় না কিন্তু। ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে ফরজ নামাজ চার রাকাত। সুন্নত নামাজ
দু’রাকাত। বেতের নামাজ এক রাকাত। মোট সাত রাকাত নামাজ পড়ে সে। কিন্তু মোনাজাতে বসে সবার মোনাজাত শেষ হলেও তার মোনাজাত শেষ হয় না। যে যার
বাড়ি চলে যায়। শুধু ইমামসাহেব তার মোনাজাত শেষ হওয়ার ইন্তেজার করে।
যদিও এই গ্রামে ইমাম আত্তাবসাহেবের বাড়ি নয়।
আত্তাবসাহেব আসে গঙ্গাপাড়ের সেই সাহেবনগর থেকে। সাইকেল চড়ে আসে। সাইকেল চড়ে আবার
ফিরেও যায়। বিবি আসমানতারা না খেয়ে তার ইন্তেজার করে। কখন মিঞা বাড়ি আসে! মেলা
দূরের রাস্তা! তার ওপর দিনকাল ভালো নয়। কখন কোথায় কী হয় না হয়! বিবি আসমানতারা
আসমানের দিকে তাকিয়ে মিঞার কথা ভাবে। আসমানে কোনো তারা খসে পড়লে কিংবা আল্লা
শয়তানকে কোড়া মারলে তার বুকের ভেতরটা ছ্যাঁক্ করে ওঠে। মিঞার কথা ভেবে তার ভয় হয়।
ভাবনা হয়। কষ্টও হয়। মিঞার কিছু হল নাকি? আসছে না কেন?
আসবে কী করে? সঙ্গে যে আজ রশিদ মেম্বার! মসজিদ
থেকে বেরিয়ে সেই যে কথা বলা শুরু করেছে, কিছুতেই তার কথা শেষ হচ্ছে না। কী কথা? না
তো, ... আমাদের মুখ্যমন্ত্রী আপনাদের জন্য কী ভাবছেন সেটা আপনাদের নিজের কানে শোনা
উচিৎ। আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, আমাদের সরকার আপনাদের জন্য মানে ইমামদের জন্য কী
ভাবছেন! আমার কথা হয়ত আপনার বিশ্বাস হয়নি। তাই আপনার কাছে আমার আর্জি, আপনি আমার
সঙ্গে কাল ভোরের ভাগীরথী এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা চলেন। মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন নিজের কানেই শুনবেন।
বিবি কী করছে? বালবাচ্চারা ঘুমলও কি না! রাতে
সবাই কী খেল না খেল! বাড়িতে আলু, পিঁয়াজ ছিল না। বিবি কাল রাতেই বলেছিল সেকথা। বিশটা টাকা রেখে আসবে ভেবেছিল। কিন্তু বিশটাকা তো
দূর, পকেটে দশটাকাও ছিল না। সময়ের অনেক আগেই তাই সে আজ সবার অগোচরে বাড়ি থেকে
বেরিয়ে এসেছিল। কিছু একটা ব্যবস্থা করবে ভেবেছিল। মোড়ল বা সর্দারকে বলে মাস
মাহিনাটা আগাম পাওয়ার আর্জি জানাবে! কিন্তু আজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মোড়ল, সর্দার
কারুরই দেখা পায়নি। তারা সব কোথায় গেছে কে জানে! এখন ভরসা রশিদ মেম্বার। যে তার সঙ্গেই আছে। তাকে কাল ভোরের ভাগীরথী
এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা যাওয়ার কথা বলছে। তাহলে রশিদ মেম্বারকে ব্যাপারটা বললে কেমন
হয়?
আত্তাব মৌলবী সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করে না। রশিদ
মেম্বারকে খুলে বলে ব্যাপারটা, ভাই- বাড়িতে আলু, পিঁয়াজ কিছু নেই। পকেটে টাকাও
নেই। এসবের ব্যবস্থা না করে আমি কীভাবে আপনার সঙ্গে কলকাতা যাবো বলেন তো?
রশিদ মেম্বার পথ চলতে চলতে থমকে দাঁড়ায়। নিজের
পকেট থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে বলে, হেই- আগে বলবেন তো! আপনিও যেমন! এই
নেন, রাখেন। এটা বাড়িতে ভাবীর হাতে দিয়ে বাজার হাট করতে বলবেন। আর আপনি যে সময়ে
রোজ আমাদের মসজিদে আসেন ঠিক ওই সময়ে পীরতলা স্টেশনে পৌঁছে যাবেন। তাহলেই হবে। আমি
ওখানেই টিকিট-কাউন্টারের সামনে আপনার ইন্তেজার করবো। টাকা-পয়সার কথা ভাবতে হবে না।
আমি তো আছিই।
একশো টাকার নোটটা হাতে পেয়ে রশিদ মেম্বারকে কোনো
কথা বলতে পারে না আত্তাব মৌলবী। কী বলবে? কোন মুখে বাড়ি ঢুকবে! বিবি আসমানতারার
সামনে গিয়ে কীভাবে দাঁড়াবে! এই সব কথা ভাবতে ভাবতে আজ তার সারাদিন কেটেছে। এমনও
ভেবেছে ইমামতী ছেড়েছুঁড়ে রাজমিস্ত্রী কামে চলে যাবে কিনা! চেন্নাই কিংবা কেরালা! দেশ-ঘরের বহু মানুষ এখন ওই সব
জায়গায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করছে। তিন মাস, ছ’মাস অন্তর বাড়ি আসছে। প্রচুর রোজগার করে
আনছে। নিজের চোখেই দেখছে
সব। রাস্তাঘাটে
মোটরসাইকেল আর মোটরসাইকেল! শান্তিতে হাঁটার উপায় নেই। এবারকার ইদে নাকি বাজারের
কোনো শো-রুমে একটাও মোটর সাইকেল পড়ে থাকেনি! রহমতের খ্যাপা বেটাটাও পঁচাশি হাজার
টাকা দামের মোটর সাইকেল কিনেছে! পাঁইপুঁই করে চালিয়ে বেড়াচ্ছে। মাথায় হেলমেট নেই
কিন্তু কানে আবার মোবাইলের তার গোঁজা! মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে সর্বক্ষণ ছাই কী
যে শোনে! কে জানে!
রশিদ মেম্বার চলে গেছে। অথচ কী জানি কেন, একশো
টাকার নোটটা হাতে ধরে বেশ কিছুক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আত্তাব মৌলবী। অনেক কিছু
ভাবছে। হয়ত এই সবই ভাবছে যে, তার টাকা
নেই! মোটরসাইকেল নেই! মোবাইল নেই!
-
কিন্তু সাইকেলটা তো
আছে!
কে বলল এমন কথা? যেই বলুক, মনে হঠাৎ জোর পায়
আত্তাব মৌলবী। মনের সেই জোরেই সে ‘বিসমিল্লা’ বলে এক লাফে তার ভাঙাচোরা সাইকেলটাই
চড়ে বসে। জশইতলা মোড়ে
আলু-পিঁয়াজ কিনে তবেই বাড়ি ঢুকবে। কে জানে এত রাতে মোড়ের দোকান খোলা আছে কিনা!
খোলা না থাকলে এনামুলভাইকে জাগিয়ে দোকান খোলাবে। সে জানে এনামুলভাই রাতে দোকানেই
ঘুমায়। তারপর যদি ভোলা ঘোষের দোকানে গরম জিলাপি পায়! পাঁচশো কিনবে। লালগোলায় রথের
মেলা চলছে। সার্কাস এসেছে। বালবাচ্চারা যাবো যাবো করে জিদ ধরে আছে। অথচ নিয়ে যেতে
পারেনি। আজ জিলাপি খাইয়ে ওদের শান্ত করবে। তারপর আল্লা দিলে মাসে মাসে তো
আড়াইহাজার টাকা করে ভাতা পাবেই! রশিদ মেম্বার বলেছে। রশিদ মেম্বার এও বলেছে কাল
ভোরের ভাগীরথী এক্সপ্রেস ধরে কলকাতা যাওয়ার কথা! কলকাতা যাবে সে। মুখ্যমন্ত্রী
তাদের জন্য কী বলে, শুনবে। কী করে, দেখবে। কিন্তু শ্রীরামপুরের মসজিদে কাল তার
ডিউটি করবে কে?
ডিউটি বলতে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত আজান দেওয়া!
নামাজীদের নামাজ পড়ানো! তারপর যে দু’-চার জন যারা মক্তবে দ্বীন-ইসলাম শিখতে আসে,
তাদের দ্বীন-ইসলাম শেখানো। এসবের কী হবে তাহলে? মোড়ল-সর্দারকে বলে ছুটি নিলেও না
হয় কথা ছিল। কিন্তু আজ তো সারাদিন তাদের দেখাই পায়নি!
মুসিবতে পড়ে যায় আত্তাব মৌলবী। ব্রেক কষে আচমকা
সাইকেল দাঁড় করায় সে। একটু কিছু ভাবে। তারপর আবার সাইকেল ঘুরিয়ে শ্রীরামপুরের
উদ্দ্যেশে রওনা দেয়। একদিনের জন্য ইমামতীর দায়িত্বটা কাউকে দেওয়া যায় যদি!
তিন
মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনে আত্তাব মৌলবী খুব
আশাবাদী। রশিদ মেম্বারের সঙ্গে এসে সে যে ভুল করেনি, বুঝতে পারছে। ইমাম-ভাতার জন্য
সামনের মাসেই রাজ্যের প্রত্যেকটি বিডিও অফিসে ফর্ম পাওয়া যাবে। সেই ফর্ম ফিলাপ করে
জমা দিতে হবে। ট্রেনে ফিরতে ফিরতে রশিদ মেম্বার আত্তাব মৌলবীকে বলে, আপনার কোনো
চিন্তা নেই ইমামসাহেব। শুনলেন তো সব নিজের কানেই! আমি সব ব্যবস্থা করে দিব। ফর্ম
তোলা, ফিলাপ করা, জমা দেওয়া।
ট্রেনে ফিরতে ফিরতে রশিদ মেম্বারের সঙ্গে আরো
অনেক কথা হয় তার। যদিও মাস মাস
আড়াইহাজার টাকা করে ভাতা পাওয়ার ব্যাপারটা তার মাথা থেকে যায় না। মাসে মাসে ভাতা পেলে সংসারে শ্রী ফিরবে। বিবি
আসমানতারাকে একটু হলেও সুখে রাখতে পারবে। হাজারো অভাব থাকা সত্ত্বেও আসমানতারা
শুধু ইমামের বিবি বলে বিড়ি বাঁধতে পারে না। পাট ছড়াতে পারে না। পরের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করতে পারে না। এসব করলে
নাকি ইমামসাহেবের সম্মানহানি হয়!
- কিছু ভাবছেন নাকি ইমামসাহেব?
চমকে ওঠে আত্তাব মৌলবী।
বলে, কই? না তো!
- মনে হল কিছু ভাবছেন বোধহয়। যাকগে,
আপনি কিচ্ছু ভাববেন না। আমি তো আছিই।
রশিদ মেম্বারকে বিশ্বাস
হয় আত্তাব মৌলবীর। সেই বিশ্বাস থেকে ট্রেণে খানিক জেগে খানিক ঘুমিয়ে
ফজরের ওয়াক্তের বেশ কিছু আগে রশিদ মেম্বারের সঙ্গেই পীরতলা স্টেশনে নামে। গ্যারেজ
থেকে সাইকেল নেয়। তারপর সরাসরি শ্রীরামপুরে মসজিদে এসে পৌঁছায়। অন্যদিন যেমন বাড়ি
থেকে আসে, তেমনি।
মসজিদ লাগোয়া একটা ঘর
আছে। লোকে জানে সেটা ইমামসাহেবের ঘর। ইমামসাহেবের বিশ্রামের জন্য। অন্যদিন বাড়ি
থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে আত্তাব মৌলবী সেই ঘরে একটু হলেও বিশ্রাম নেয়। কিন্তু আজ
তার বিশ্রাম নেওয়ার সময় নেই একেবারে। মসজিদের সামনেই একটা পুকুর। সেই পুকুরে নেমে
গোসুল করে। কলকাতা জার্নির ধকল বলে কথা! গোসুল করে তার শরীর ঝরঝরে হয়। মন পাক্-পবিত্র
হয়। তারপর আজান দেবে বলে সে বেরিয়ে আসে। আর দেখে তার ঘরের
দরজায় এহেসান মিঞাকে দাঁড়িয়ে থাকতে।
আত্তাব মৌলবীর মনে পড়ে
গত চব্বিশ ঘণ্টা ইমামতীর দায়িত্ব সে দিয়ে গেছিল এই এহেসান মিঞাকেই। সেই দায়িত্ব
এহেসান মিঞা ফিরিয়ে দিতে এসেছে নিশ্চয়! খুব ভালো ছেলে এই এহেসান মিঞা। একসময় তারই মক্তবে দ্বীন-ইসলাম শিখতে আসত। মাথা খুব ভালো ছিল। তা দেখে
সাইদাপুর মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছিল সে তার ওস্তাদ মৌলানা জহিরুল সাহেবকে বলে।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে কী যে হল, ছোঁড়া আর পড়ল না! ‘আলেম’ পাশ না করেই সাইদাপুর থেকে পালিয়ে এল।
সেই এহেসান মিঞাকে সামনে
দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আত্তাব মৌলবী জিজ্ঞেস করল, সব ঠিক আছে তো এহেসান মিঞা?
- জী ওস্তাদজী।
- কেউ কিছু বলেনি তো? কেউ কিছু
জিঞ্জেস করেনি?
- কী বুলবে? কী জিঞ্জাসা করবে? কাইল
সারাদিন গোটা গাঁ-ই ব্যতিব্যস্ত ছিল।
- কী নিয়ে ব্যতিব্যস্ত ছিল?
- মোড়লের মাকে লিয়ে।
- মোড়লের মাকে নিয়ে! অবাক হয় আত্তাব
মৌলবী। জিজ্ঞেস করে, কেন কী হয়েছিল মোড়লভায়ের আম্মাজানের?
- মোড়লের মা জী কাইল ইন্তেকাল কর্যাছে
ওস্তাদজী!
- ইন্নালিল্লাহে অ-ইন্না এলাহে
রাজেউন! আত্তাব মৌলবী ভক্তি ভরে উচ্চারণ করে। তারপর জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছিল উনার?
- কিচ্ছু লয়। ভালো মানুষ। দিব্যি চলি
ফিরি বেড়াইছিল। কাইল ভোরেও আগান-বাগান ঘুরি এস্যাছে। তারপর বেটাবহুর কাছে পানি
চেহ্যাছে। বেটাবহু পানি লিয়ে আসতে না আসতেই শ্যাষ। সব খোদার ইচ্ছা!
আত্তাব মৌলবীর এসব কথা
শুনতে কৌতূহলী হয় না, তার কৌতুহল তখন অন্যকিছুতে। সে এহেসানকে জিজ্ঞেস করল, তা
মোড়লভায়ের আম্মাজানের জানাজা কে পড়াল?
- কিছু মুনে করিয়েন না ওস্তাদজী!
আপনি গাঁয়ে নাই। তার ওপর এত বড় ঘটনা। মুড়লের মা’র ইন্তেকাল বুলি কথা! আপনি হামাকে
দায়িত্ব দিন গেলছেন। হামি কি আপনার অসম্মান করতে পারি? হামি আপনার মান রাখতেই
মুড়লকে বুলি নিজেই জানাজা পড়হালছি।
- মোড়ল মানলে তোর কথা?
- কেনি মানবে না ওস্তাদজী! হামি জী
কহ্যাছি আপনি কলকাতা গেলছেন আপনার বিবিকে নি! ডাক্তার দেখাইতে! আপনি হামাকে
দায়িত্ব দিন গেলছেন!
দীর্ঘশ্বাস পড়ে আত্তাব
মৌলবীর। খুব জোর বাঁচা গেছে! এহেসান মিঞার জন্যই বেঁচে গেছে সে। এহেসান মিঞা তার মক্তবের তালবিলিম ছিল। মাথা ভালো ছিল খুব। ইচ্ছে করলে খুব বড় মওলানা হতে পারত! তার অনুমান যে ভুল ছিল না, সে আর একবার
প্রমাণ পেল ছোঁড়ার এহেন উপস্থিত বুদ্ধিতে।
নিজের তকদীর আর এহেসান
মিঞার কাছে মনে মনে শুক্রিয়া আদায় করে আত্তাব মৌলবী।
চার
ফজরের নামাজ শেষ। আত্তাব
মৌলবী মোনাজাত করছে। প্রায় চিৎকার করে আল্লার কাছে মোড়লের মায়ের জন্য রহমত ভিক্ষা
করছে। মসজিদে নামাজীর সংখ্যা বেশী নয়। হাতে গোনা। তারা
ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। কাল তো ইমামসাহেব ছিলই না। তাহলে কী করে জানল যে,
মোড়লের মা মারা গেছে? যদিও তারা ইমামসাহেবের মোনাজাতকে সমর্থন জানিয়ে ‘আমিন’
উচ্চারণ করছে। তারাও মোড়লের মায়ের জন্য আল্লার কাছে রহমত ভিক্ষা করছে।
মোনাজাত শেষ করে আত্তাব
মৌলবী এগিয়ে যায় মোড়লের কাছে। মোড়লকে কিছু বলবে ভাবে। তার আগেই মোড়ল তাকে জিজ্ঞেস
করে, আপনার বিবিসাহেবা কেমন আছেন ইমামসাহেব?
- ভালো আছেন। নিজের অজান্তেই উচ্চারণ
করে আত্তাব মৌলবী।
তারপরেই তার খেয়াল হয় যে
সে মিথ্যা কথা বলল। মোড়ল তার বিবির খবর জানতে চাইছিল। বিবিকে নিয়ে সে ডাক্তার দেখাতে কলকাতা নিয়ে গেছিল এই খবর শুনে নিশ্চয়! কিন্তু
ঘটনা যে সেটা নয়, মোড়লকে সেকথাটাও বলতে পারে না সে। আবার অপরাধ বোধ হয় তার। অগত্যা মনে মনে ‘তৌবা’ উচ্চারণ করে স্বস্তি খোঁজে। যদিও মোড়লকে সহানুভূতি জানাতে ভোলে না, মোড়লভাই- আপনি আমাকে মাফ করবেন। আপনার আম্মাজানের
জানাজায় আমি থাকতে
পারিনি। এটা আমার দুর্ভাগ্য! আমি আপনার আম্মাজানের মাটি পাইনি। আপনার আম্মাজান
আমাকে স্নেহ করতেন। নিজের সন্তান মনে করতেন ...
বলতে বলতে আত্তাব মৌলবী
যেন কেঁদে ফেলবে! মোড়ল সেটা বুঝতে পেরে তার কাঁধে হাত রাখে। মোড়লকে সান্তনা দিতে
গিয়ে নিজেই সান্তনা পায়। কোনো রকমে চোখের পানি আটকায়। কিন্তু মোড়লের মাকে কিছুতেই
ভুলতে পারে না। নিজের মাকে সেই কোন ছোটবেলায় হারিয়েছিল। বোনের জন্ম দিয়ে তার মা
খোদার পেয়ারা হয়ে গেছিল। বোন আশ্রয় পেয়েছিল মামার বাড়িতে। আর, তার জায়গা
হয়েছিল সাইদাপুর মাদ্রাসায়।
সাইদাপুরের এলাহি বক্সের বাড়িতে
জায়গীর খেয়ে এলেম গ্রহণ। কপাল জোরে সেখানে ওস্তাদজী হিসাবে পেয়েছিল মওলানা জহিরুল
সাহেবকে। সেকারণেই হয়ত ‘আলেম’ ডিগ্রিটা লাভ করেছিল। পরের ডিগ্রিগুলিও হয়ত সে লাভ
করত! কিন্তু আচমকা বাপ সাত্তার মিঞার মওত। বাড়িতে ছোট বোন তখন একা।
ইচ্ছা থাকলেও আর এলেম গ্রহণ সম্ভব হয়নি। জীবন-যুদ্ধে নামতে বাধ্য হয়েছিল। তা নিয়ে
খুব আফশোষ ছিল তার।
কিন্তু যেদিন এই
শ্রীরামপুরে ইমাম হয়ে এল। মোড়লের বাড়িতে জায়গীর খাওয়া ধরল, সেই আফশোষ ভুলে গেল সে।
মোড়ল যেন তার বড়ভাই! আর মোড়লভায়ের মা তার নিজের মা! জোহর আর মাগরিবের নামাজের পর
সে যখন মোড়লবাড়িতে খেতে বসত, সেই মা তার পাশে বসে থাকতেন। হাতে পাখা থাকলে বাতাস করতেন।
না থাকলে মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে
দিতেন। মায়ের স্নেহ পেত সে।
পাঁচ
মোড়লবাড়িতে আর খেতে যায়
না আত্তাব মৌলবী। রমজান মাসে শেহেরী খাওয়ার মতো ওই ভোর রাতে গরমভাত খেয়ে আসে।
সঙ্গে থাকে বাড়ি থেকে আনা শুকনো চিড়া-মুড়ি। দরকারে খায়, না হলে না খায়! রাতে বাড়ি
গিয়ে আবার গরমভাত। কিন্তু মোড়লবাড়ি সে আর পা রাখে না। ওই বাড়ি গেলে তার পাপবোধ
জন্মে। একটা পাপ তাকে যেন কুরে কুরে খায়! তার চেয়ে মসজিদ লাগোয়া এই যে ঘরটা তার
বিশ্রামের জন্য আছে, এখানে সে স্বস্তি পায়। মোড়লবাড়ি থেকে প্রথম
প্রথম ক’দিন তার জন্য খাবার এসেছিল। সেই খাবার সে ফিরিয়ে দিয়েছে। তারপর একদিন মোড়লসাহেব নিজেই এসে হাজির। মোড়লসাহেব কিছু জিজ্ঞেস
করার আগে সে তার অস্বস্তির কথা ‘বড়ভাই’ মনে করে মোড়লসাহেবকে সব খুলে বলে। শুনে মোড়লসাহেব তাকে বলে, ঠিক আছে ইমামসাহেব।
আপনি যা ভালো বুঝছেন, করছেন। আপনাকে আমার কিছু বলার নাই। খালি একটা কথা! কখনো যদি
কোনো কিছুর প্রয়োজন হয়, নিঃসঙ্কোচে আমাকে বলবেন। বলতে কোনোরকম দ্বিধা করবেন না
যেন!
তার মধ্যেই একদিন রশিদ
মেম্বার চুপি চুপি এসে খবরটা দেয়, ইমামসাহেব ইমাম-ভাতার ফর্ম ছাড়ছে। তবে বিডিও
অফিস থেকে নয়, পঞ্চায়েত অফিস থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। আমি আজ পঞ্চায়েত অফিস যাচ্ছি।
আপনার জন্য একটা ফর্ম নিয়ে আসবো। কাল আপনি শুধু আপনার ‘আলেম’ পাশের সার্টিফিকেটটা
নিয়ে আসবেন।
ছয়
আত্তাব মৌলবী জোহরের
নামাজ পড়িয়ে এহেসান মিঞাকে এক বেলার ইমামতীর দায়িত্ব দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। বিবি,
বালবাচ্চা সবাই তাকে অসময়ে বাড়িতে দেখে অবাক হয়! যদিও বালবাচ্চারা বাপকে দেখে খুশী
হলেও বিবি আসমানতারা শঙ্কিত হয়। মিঞার কিছু হয়নি তো? এভাবে তো মিঞা কখনো বাড়ি আসে
না!
না, মিঞার কিছু হয়নি।
ঘরে ঢুকে ঢুকেই মিঞা বিবিকে হুকুম করে, আমার কাগজপত্রের ফাইলটা কোথায় আছে বের করে
দাও তো!
আসমানতারা আলমারী খুলে
ফাইলটা বের করে দেয়। মিঞা সেটা নিয়ে ঘরের মেঝেতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিবি
কিছু বুঝতে পারে না। মিঞা কী খুঁজছে? কেন খুঁজছে?
মিঞাকে জিজ্ঞেস করবে
ভাবে আসমানতারা। কিন্তু মিঞার ভাবগতিক দেখে তার সাহস হয় না। মিঞা আজ কেমন যেন!
গোটা ফাইল তন্ন তন্ন করে
খুঁজে আত্তাব মৌলবী বাড়ির দলিল পায়। খাজনার রসিদ পায়। রেশন কার্ড পায়। ভোটার কার্ড
পায়। কিন্তু তার ‘আলেম’ পাশ সার্টিফিকেটটা পায় না। অথচ সেটার খুব দরকার তার। কাল
সেটা নিয়ে যেতে হবে। রশিদ মেম্বারকে দিতে হবে।
শুধু ওই ফাইলটাই নয়,
গোটা আলমারীটা খোঁজে আত্তাব মৌলবী।
আলমারীর এ-থাক্! ও-থাক্! সেসব
জায়গা থেকে কত কিছু বেরিয়ে আসে।
কাপড়চোপড়! পলিথিনের হাজারটা হাজার
রকমের ব্যাগ! নানা রঙের উলের বান্ডিল! বিবির মাথার ক্লিপ! চুড়ির বাক্স! ইমিটেশনের
গহনার বাক্স! বালবাচ্চার বাদ পড়া সব খেলনা! এমন কী তাদের বিয়ের ফোটোটাও! কিন্তু
সার্টিফিকেটটা কোথাও নেই। কী হল তাহলে?
মনে করতে চেষ্টা করে
আত্তাব মৌলবী ...
দু’হাজার সালের বন্যায় ঘর-দ্বোর ভেসেছিল! ঘরে
মেঝেতে পানি উঠেছিল। জান বাঁচাতে সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে পরিবার নিয়ে বাঁধপুলের রিলিফ
ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল। তাহলে কি তখনই
সার্টিফিকেটটা গায়েব হয়েছে? আত্তাব মৌলবীর শঙ্কা হয়। পরক্ষণেই আবার ভাবে, গায়েব
হলে তো সবকিছুই গায়েব হবে। আলমারী কিংবা ফাইলে আর সব জিনিস থাকবে কী করে? তাহলে কি এসব জ্বিনের কারবার?
হ্যাঁ, জ্বিনেরই কারবার। শয়তান জ্বিনের। আত্তাব
মৌলবীর কেমন সব অস্পষ্ট কিছু মনে পড়ে! যদিও তা নিয়ে বেশী ভাবতে পারে না সে। তার গলা শুকিয়ে আসে। কোনোরকমে শুধু বিবিকে বলে,
আসমানতারা- এক গেলাস ঠান্ডা পানি দাও তো!
বিবি আসমানতারা চট্জলদি কলসি গড়িয়ে এক গেলাস
ঠান্ডা পানি এনে ধরিয়ে দেয় তার হাতে। গেলাসের পানি তিন ঢোকে খাওয়া নিয়ম। সেই নিয়ম
ভুলে সে এক ঢোকেই গেলাসের সব পানি খেয়ে নেয়। তার পাপ হয়। কিন্তু পানি খেয়েই সে তার
পাপকে দেখতে পায়। ‘আলেম’ পাশ করার পর পকেটে সার্টিফিকেট নিয়ে শেষবারের মতো সকালের
নাস্তা খেতে গেছিল সাইদাপুর মাদ্রাসার সম্পাদক এলাহি বক্সের বাড়িতে। সেই বাড়ির নিয়ম মতো লাভলি ফুলতোলা গেলাসে পানি
এনে দাঁড়িয়েছিল তার সামনে। লাভলির হাতের পানি খেয়ে লাভলিকে সে রোজ ওই সময়ে দ্বীন-ইসলামের শিক্ষা দিত।
কিন্তু সেদিন সে লাভলিকে জিজ্ঞেস করেছিল, লাভলি- তোমার আব্বাজান কোথায়?
লাভলি তাকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কেনি- কী
দরকার?
-
দরকার আছে।
-
হামাকে কহিলে হবে
না?
-
না। এসব তুমি বুঝবে
না। উনাকেই বলতে হবে।
একথা শুনে লাভলির নিশ্চয় খুব রাগ হয়েছিল, কিংবা
অভিমান! সে বলে উঠেছিল, ল্যান ল্যান- জলদি ধরেন পানির গেলাস! মা হামাকে ডাকছে।
আপনার কাছে দাঁড়াবার সুমায় নাই হামার!
পানি ভর্তি ফুলতোলা গেলাসটা সে তার দু’হাত বাড়িয়ে
রোজ যেমন ধরে, তেমনি ধরেছিল। সেই সুযোগে তার পরণের পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ‘আলেম’ পাশ
সার্টিফিকেটটা ছোঁ মেরে তুলে নিয়েছিল লাভলি। আর বলেছিল, যেদিন এই বাড়ি থেকি আপনি হামাকে লালজোড়া পরিয়ে
লিয়ে যাবেন, এই কাগজ হামি সেদিন আপনাকে দিব।
সে লাভলিকে কিছু বলতে পারেনি। খালি ফুল তোলা
গেলাসের পানি এক নিঃশ্বাসে পী মেরে শেষ করে এলাহি বক্সের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল। তারপর জীবন-যুদ্ধে লড়তে গিয়ে সেসব কথা ভুলে
গেছিল। কোনোকিছুই মনে ছিল না তার। সার্টিফিকেট খুঁজতে গিয়ে আজ মনে পড়ল।
আত্তাব মৌলবী সেদিন তার ভুল বুঝতে পারেনি। শুধু
সেদিন কেন? তারপর আজ এতদিন- এই কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত সে তার ভুলটা বুঝতে পারেনি।
----------------------------------------------------------------------------------------------

নীহারুল ইসলাম
‘সাগরভিলা’ লালগোলা, মুর্শিদাবাদ, ৭৪২১৪৮ পঃ বঃ, ভারতবর্ষ।
জন্ম- ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৭, মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘী থানার হরহরি গ্রামে (মাতুলালয়)।
শিক্ষা- স্নাতক (কলা বিভাগ), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পেশা- শিক্ষা সম্প্রসারক।
সখ- ভ্রমণ। বিনোদন- উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শ্রবণ।
রৌরব, দেশ সহ বিভিন্ন লিটিল ম্যাগাজিনে লেখেন নববই দশক থেকে।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থঃ
পঞ্চব্যাধের শিকার পর্ব (১৯৯৬), জেনা (২০০০), আগুনদৃষ্টি ও কালোবিড়াল (২০০৪), ট্যাকের মাঠে, মাধবী অপেরা (২০০৮), মজনু হবার রূপকথা (২০১২)।
দু’টি নভেলা--, জনম দৌড় (২০১২), উপন্যাস।
২০০০ থেকে ‘খোঁজ’ নামে একটি অনিয়মিত সাহিত্য সাময়িকী’র সম্পাদনা।
পুরস্কার :
লালগোলা ‘সংস্কৃতি সংঘ’ (১৯৯৫)এবং শিলিগুড়ি ‘উত্তরবঙ্গ নাট্য জগৎ’ কর্তৃক ছোটগল্পকার হিসাবে সংবর্ধিত
(২০০৩)। সাহিত্য আকাদেমি’র ট্রাভেল গ্রান্ট পেয়ে জুনিয়র লেখক হিসাবে কেরালা ভ্রমণ (২০০৪)। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক “ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ‘ট্যাকের মাঠে মাধবী অপেরা’ গল্পগ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি প্রবর্তিত “সোমেন চন্দ স্মারক পুরস্কার” প্রাপ্তি (২০১০)। ভারত বাংলাদেশ সাহিত্য সংহতি সম্মান “উত্তর বাংলা পদক” প্রাপ্তি (২০১১)। রুদ্রকাল সম্মান (২০১৩) প্রাপ্তি।
niharulislam@yahoo.com
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
0 মন্তব্যসমূহ