প্রত্নপ্রতিম মেহদী
না বলে কোনো এক ফুল ঝরেছিলো নিদ্রাবৃত মোহনায়। ধরে রাখে নি রুগ্ণ পাতারা— যাদের রঙ সলজ্জ লোহিত। “চলে গেলে বলে যেতে হয়”, এই কথা সেই ফুল জানে নাই। কার কথা কে ভাবে বলো এই সচল বাস্তুতন্ত্রে? কতো গান গেয়ে গেয়ে— শুনে শুনে আমি ডুবেছি বিষণ্ন সমুদ্রে! তবুও আমায় দেখে নি সেইসব পচনকারী ভয়াল ডিকম্পোজার। আমি সেই সুরের তাড়নায় জেগে থাকি সদা— জেগে থাকি এই চরাচরে। যেই জেগে থাকা আমরণ হয়ে থাকে জাদুবাস্তবিক। আমাদের তন্দ্রাশিল্পে ফাটল ধরেছে; এই জেনে— ভোরের পাখিদের সমুচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে কোমল শিশির আর কুয়াশাচ্ছন্ন দীর্ঘ সমতট...
আমি কবিতার ছাত্র। আকারে-বিকারে আমি শিক্ষকতার দীক্ষাদানে থাকি প্রাণান্ত— যেন দৃশ্যমান হয় অধম শিক্ষকের শিষ্যপাণ্ডিত্যে আক্রান্ত হওয়ার ভাষিক সংস্করণ। আমি তো রুগ্ণ নিশাচর। আমি রক্তাপ্লুত চাঁদের স্বপ্নহন্তারক— আমি শিল্পের শক্তি— উষ্ণ হিমের অসাড় সভ্যতা...
শাহরিক অবসাদের অন্তরালে আমি রেখেছি এক স্বপ্ন-বিটঙ্ক। বিটঙ্ক খুলে ওরা কখনও উড়ে আসতো কোনো দাঁতাল কুয়াশায়। যে কুয়াশায় তারা জানতে পারে জোনাক-পুরাণ। আমার স্বপ্নসংহিতা লিখেছিলো কিছু বিদীর্ণ কথা— যাদের সমন্বয়ে রেখে যেতো তারা বীতবাক্য অনড় কাহিনি। স্বল্পপ্রতিভায় আমি জেনেছি, মানসশাখায় কৃষ্ণচিন্তার মুক্ত প্রলম্বন সত্ত্বেও চাঁদের ভাষা বুঝতে আমার ভুল হয় নি। চন্দ্রালোক ও মাটির পারস্পরিক মিলনে তীব্র ঝঞ্ঝাঘাত। ধ্বসে পড়েছিলো প্রেমাকৃতি দূর-পাহাড়ি মঠ। তখন আমি বলেছিলাম যেন, সেপ্টেম্বরের অকালমৃত্যু, ওহে— কোন সংখ্যাগুরু বজ্রাঘাতে ঝলসে ওঠে প্রত্ন-সঙ্ঘারাম? তাবৎ নিরুত্তর! কংসের বালিয়াড়ি— কেমন বিমর্ষ নদীপথ। একটিও সরল ছন্দিত কম্পন থাকে নি বিষণ্ন পিয়ানোয়— ক্রমহ্রাসমান জলজ অশনি সম্পাদিত ভেক্টর জ্যামিতি আজি তাড়িত বিস্মরণে...
পপির বাগানে এখন প্রতিটি রাত— দেখো ঘোরে আর ফেরে শত শত ‘আমি’। আর এইসব আমির মাঝে প্রকৃত সে আমির প্রকৃত শয়ন। এই মর্গ; চৌদ্দতলা পপির বাগান— সঙ্ঘারামের মধ্যবিন্দু। পপিফুল ঝরে ঝরে দেহখানি ঢেকে দিলো প্রবল ঝঞ্ঝায়। যে ঝড়ের ভাষা ছিলো মদের মতো। বাতাসের তোড়ে পাতা সরে গেলে ঝাউবন থেকে আমাকে দেখে ফেলেন ঈশ্বরগণ। ফুলগুলি সব স্বপ্ন হয়ে ওঠে, আকাশের গায়ে দোদুল্যমান সোনার ঝুমকোগুলির মতো। এই রাতে মনে হলো, ভোরকে আমি খুব ভালোবাসি। কেননা, প্রতিটি ভোরের গ্লাসে পড়ে থাকে রাত্রির তলানি...
আমি নকল করতে ভালোবাসি, কেবল স্বপ্নকর্ম ব্যতীত। স্বপ্ন এমন কিছু দেখায়, যা দেখাতে পারে না কোনো অন্ধ জাদুকর— পারে না কোনো সচল বিশ্বকোষ। যখন আমি স্বপ্ন দেখি, তখন ভুলে যাই ‘জীবন’ কাকে বলে— সে কোন অর্জিত রাতে নির্জলা মেঘে বাড়ি? আমার স্বপ্নে একদা বিরান চন্দ্র গান গেয়েছিলো। তার সুর জ্যোৎস্নাধোয়া স্বপ্নধোঁয়ায় ধূমায়িত কারসাজি। এইসব বেয়াড়া স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে আমি ক্লান্ত— ক্লান্ত হই। আসলে ক্লান্তির কোনো ঘর্মগ্রন্থি নেই...
এমনি করে আমি ঘুরি আর ফিরি এই স্বপ্নবৃত্তায়নে। আমাদের ঘুমের স্কুলের নাম ‘স্বপ্নবৃত্তায়ন’। ঘুম ডিপার্টমেন্টের ডিন ‘নৈঃশব্দ্য’। তাঁর কাছে জেনেছি, ছুরি-চিকিৎসায় আসলে মন লাগে না, সে কাজ বড়ো নৃশংস। মন নয়— মাতলামি প্রয়োজন শুধু...

আমি যদি হই বৃক্ষ, তবে তার পত্রকুল পুঞ্জিত স্বপ্নগুচ্ছ। আর কথা ছিলো পাতাদের সবুজ হবার। হয় নি—
পাতাকে আমি সবুজ বলেই জানি
তবু সে আমার চোখে লাল হয়ে রয়
তাই তো আমি কেবলই ঝরে যাই...
আমি ঝরতেও জানি! ওভাবে নয়—
এ
ই
ভা
বে...
ঝরে যেতে যেতে আমি চাঁদের গন্ধ পাই। যখন আমি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম— তখন আমাকে একমুঠো বিষ দিয়েছিলো বাদুড়-বিভূতি— তার গন্ধটি ছিলো ঠিক এমনই। আমার স্বপ্নের সঞ্চয় যখন হয় মাত্রাতিরিক্ত— তখন আমরা চন্দ্রকলায় পূর্ণিমা দেখি। সেসব স্বপ্ন ভেঙে ভেঙে যায়, ক্রমশ। আবার ভরে ওঠে— চূর্ণ হয় পুনর্বার। চাঁদ যে আমার চুক্তিবদ্ধ স্বপ্নপিণ্ড...
এমন রাতে বড়ো কাঁদতে ইচ্ছে হয়। জানিয়ে রাখি, সকালে আমি না-ও থাকতে পারি। যেমন বিকেলে থাকে নি আমার ‘আপন’ সে জন। সে এক সকালের ওপর দাঁড়ি-কমা বসিয়ে চলে গেছে। যেই সকালের অন্ধকারে ছিলো জীবনের প্রলম্বিত সন্ন্যাস...
“এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায়...”...
না বলে কোনো এক ফুল ঝরেছিলো নিদ্রাবৃত মোহনায়। ধরে রাখে নি রুগ্ণ পাতারা— যাদের রঙ সলজ্জ লোহিত। “চলে গেলে বলে যেতে হয়”, এই কথা সেই ফুল জানে নাই। কার কথা কে ভাবে বলো এই সচল বাস্তুতন্ত্রে? কতো গান গেয়ে গেয়ে— শুনে শুনে আমি ডুবেছি বিষণ্ন সমুদ্রে! তবুও আমায় দেখে নি সেইসব পচনকারী ভয়াল ডিকম্পোজার। আমি সেই সুরের তাড়নায় জেগে থাকি সদা— জেগে থাকি এই চরাচরে। যেই জেগে থাকা আমরণ হয়ে থাকে জাদুবাস্তবিক। আমাদের তন্দ্রাশিল্পে ফাটল ধরেছে; এই জেনে— ভোরের পাখিদের সমুচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে কোমল শিশির আর কুয়াশাচ্ছন্ন দীর্ঘ সমতট...
আমি কবিতার ছাত্র। আকারে-বিকারে আমি শিক্ষকতার দীক্ষাদানে থাকি প্রাণান্ত— যেন দৃশ্যমান হয় অধম শিক্ষকের শিষ্যপাণ্ডিত্যে আক্রান্ত হওয়ার ভাষিক সংস্করণ। আমি তো রুগ্ণ নিশাচর। আমি রক্তাপ্লুত চাঁদের স্বপ্নহন্তারক— আমি শিল্পের শক্তি— উষ্ণ হিমের অসাড় সভ্যতা...
শাহরিক অবসাদের অন্তরালে আমি রেখেছি এক স্বপ্ন-বিটঙ্ক। বিটঙ্ক খুলে ওরা কখনও উড়ে আসতো কোনো দাঁতাল কুয়াশায়। যে কুয়াশায় তারা জানতে পারে জোনাক-পুরাণ। আমার স্বপ্নসংহিতা লিখেছিলো কিছু বিদীর্ণ কথা— যাদের সমন্বয়ে রেখে যেতো তারা বীতবাক্য অনড় কাহিনি। স্বল্পপ্রতিভায় আমি জেনেছি, মানসশাখায় কৃষ্ণচিন্তার মুক্ত প্রলম্বন সত্ত্বেও চাঁদের ভাষা বুঝতে আমার ভুল হয় নি। চন্দ্রালোক ও মাটির পারস্পরিক মিলনে তীব্র ঝঞ্ঝাঘাত। ধ্বসে পড়েছিলো প্রেমাকৃতি দূর-পাহাড়ি মঠ। তখন আমি বলেছিলাম যেন, সেপ্টেম্বরের অকালমৃত্যু, ওহে— কোন সংখ্যাগুরু বজ্রাঘাতে ঝলসে ওঠে প্রত্ন-সঙ্ঘারাম? তাবৎ নিরুত্তর! কংসের বালিয়াড়ি— কেমন বিমর্ষ নদীপথ। একটিও সরল ছন্দিত কম্পন থাকে নি বিষণ্ন পিয়ানোয়— ক্রমহ্রাসমান জলজ অশনি সম্পাদিত ভেক্টর জ্যামিতি আজি তাড়িত বিস্মরণে...
পপির বাগানে এখন প্রতিটি রাত— দেখো ঘোরে আর ফেরে শত শত ‘আমি’। আর এইসব আমির মাঝে প্রকৃত সে আমির প্রকৃত শয়ন। এই মর্গ; চৌদ্দতলা পপির বাগান— সঙ্ঘারামের মধ্যবিন্দু। পপিফুল ঝরে ঝরে দেহখানি ঢেকে দিলো প্রবল ঝঞ্ঝায়। যে ঝড়ের ভাষা ছিলো মদের মতো। বাতাসের তোড়ে পাতা সরে গেলে ঝাউবন থেকে আমাকে দেখে ফেলেন ঈশ্বরগণ। ফুলগুলি সব স্বপ্ন হয়ে ওঠে, আকাশের গায়ে দোদুল্যমান সোনার ঝুমকোগুলির মতো। এই রাতে মনে হলো, ভোরকে আমি খুব ভালোবাসি। কেননা, প্রতিটি ভোরের গ্লাসে পড়ে থাকে রাত্রির তলানি...
আমি নকল করতে ভালোবাসি, কেবল স্বপ্নকর্ম ব্যতীত। স্বপ্ন এমন কিছু দেখায়, যা দেখাতে পারে না কোনো অন্ধ জাদুকর— পারে না কোনো সচল বিশ্বকোষ। যখন আমি স্বপ্ন দেখি, তখন ভুলে যাই ‘জীবন’ কাকে বলে— সে কোন অর্জিত রাতে নির্জলা মেঘে বাড়ি? আমার স্বপ্নে একদা বিরান চন্দ্র গান গেয়েছিলো। তার সুর জ্যোৎস্নাধোয়া স্বপ্নধোঁয়ায় ধূমায়িত কারসাজি। এইসব বেয়াড়া স্বপ্নের চূড়ান্ত পর্বে আমি ক্লান্ত— ক্লান্ত হই। আসলে ক্লান্তির কোনো ঘর্মগ্রন্থি নেই...
এমনি করে আমি ঘুরি আর ফিরি এই স্বপ্নবৃত্তায়নে। আমাদের ঘুমের স্কুলের নাম ‘স্বপ্নবৃত্তায়ন’। ঘুম ডিপার্টমেন্টের ডিন ‘নৈঃশব্দ্য’। তাঁর কাছে জেনেছি, ছুরি-চিকিৎসায় আসলে মন লাগে না, সে কাজ বড়ো নৃশংস। মন নয়— মাতলামি প্রয়োজন শুধু...

আমি যদি হই বৃক্ষ, তবে তার পত্রকুল পুঞ্জিত স্বপ্নগুচ্ছ। আর কথা ছিলো পাতাদের সবুজ হবার। হয় নি—
পাতাকে আমি সবুজ বলেই জানি
তবু সে আমার চোখে লাল হয়ে রয়
তাই তো আমি কেবলই ঝরে যাই...
আমি ঝরতেও জানি! ওভাবে নয়—
এ
ই
ভা
বে...
ঝরে যেতে যেতে আমি চাঁদের গন্ধ পাই। যখন আমি আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম— তখন আমাকে একমুঠো বিষ দিয়েছিলো বাদুড়-বিভূতি— তার গন্ধটি ছিলো ঠিক এমনই। আমার স্বপ্নের সঞ্চয় যখন হয় মাত্রাতিরিক্ত— তখন আমরা চন্দ্রকলায় পূর্ণিমা দেখি। সেসব স্বপ্ন ভেঙে ভেঙে যায়, ক্রমশ। আবার ভরে ওঠে— চূর্ণ হয় পুনর্বার। চাঁদ যে আমার চুক্তিবদ্ধ স্বপ্নপিণ্ড...
এমন রাতে বড়ো কাঁদতে ইচ্ছে হয়। জানিয়ে রাখি, সকালে আমি না-ও থাকতে পারি। যেমন বিকেলে থাকে নি আমার ‘আপন’ সে জন। সে এক সকালের ওপর দাঁড়ি-কমা বসিয়ে চলে গেছে। যেই সকালের অন্ধকারে ছিলো জীবনের প্রলম্বিত সন্ন্যাস...
“এ আঁধার যে পূর্ণ তোমায়...”...
0 মন্তব্যসমূহ