অনিল ঘোষ
মাদার মন্ডল অনেকক্ষণ থেকে চেষ্টা করছিল একবার উঠে
দাঁড়ায়। হাত দু-খানা শক্ত করে আতা গাছের গোড়ায় থেবড়ে বসা ওই হাড় বজ্জাত বেবুশ্যে
মাগিটার গলা টিপে ধরে। সামান্য একটু চাপ, ব্যস
খেল খতম। সেটাও যদি না পারে, তবে অন্তত কষে
দু-তিন থাপ্পড় তো মারা যায়। গলা টেপা, থাপ্পড়
মারা-- কিছু একটা করতে হবে। নইলে রাগের আগুনে টগবগ
করে ফুটতে থাকা শরীর শান্ত হবে না। মন মাথায় যে আগুন জ্বলছে ধিকিধিকি-- তাও নিভবে না। নাহ্, কিছু একটা করতেই হবে। নইলে সে পুরুষ কেন, পুরুষ জন্মই বা কেন!
ভাবছে মাদার। ভাবতে ভাবতে টের পেল শরীরটা যত
গরম হওয়ার কথা, ততটা হচ্ছে না। আসলে এসব করতে গেলে
প্রথমে দরকার একটা হট্টাকট্টা জোয়ান শরীর। নিখুঁত গা-গতর। নইলে ওই মেয়েমানুষকে কবজা করা সোজা নয়। ও মেয়ে হলে কী, চিমসে শরীর নয়। রীতিমতো পেটাই চেহারা।
শক্তসমর্থ। ওর সঙ্গে টক্কর নিতে গেলে নিজের শক্তপোক্ত শরীর তো চাই-ই, সঙ্গে দু-খান হাত চাই, দু-খান পাও চাই। আর এখানেই মার খেয়েছে মাদার।
দু-হাত ঠিক থাকলেও একখান পা কোমরের নিচ থেকে উধাও। গিলা নদীর কামট হাঁটু অবধি
কেটেছিল, বাকিটা কেটেছে বসিরহাটের হাসপাতাল। এখন
বাঁশের ক্র্যাচ ছাড়া চলে না। এরই সুযোগ নিয়েছে বোধহয় ওই হাড় বজ্জাত মাগি।
নাহ্, শরীরের
খুঁত নিয়ে মাথা ঘামালে চলে না। একবার, অন্তত
একবার প্রমাণ করে দিতে হবে সে খোঁড়া নয়, খুঁতো নয়। মানুষ। একখান আস্ত মানুষ। তাই চেষ্টা বলো
চেষ্টা, ইচ্ছা বলো ইচ্ছা-- সেটা এমন যে, মাদারের
মন মাথা থেকে চারিয়ে যাচ্ছে শিরা উপশিরায়, রোমকূপে
রোমকূপে। শরীরের প্রতিটি কোষ জুড়ে চলছে দাপাদাপি, মার
শালিকে, মার। কানের কাছে যেন আয়লার উথালপাথাল
গর্জন, ওরে মাদার, তুই শালো ম্যাদা মেরি আচিস ক্যানো? তোর বে করা মাগ বলে! গতরভাঙা পয়সা এনেচে
খাওয়াবে বলে! ওরে শালো কিচু কর, নালি পস্তাবি।
হ্যাঁ, করতে
হবে। হবেই। মাদার আর ভাবতে পারছে না। ভাবনাচিন্তা শেষ। এবার কাজ। কাজ মানে সামনে
দাঁড়ানো মাগির গুমোর ভাঙতে হবে। ওকে চরম শিক্ষা দিতে হবে। নইলে সে মরদ কীসে!
‘মরদ’-- কথাটা কী মারাত্মক! তিনমাস ধরে শুনতে
শুনতে কান পচে যাওয়ার জোগাড়। হাটের লোক, মাঠের
লোক, এমনকী
ঘাটে বসা মেয়েমদ্দ পর্যন্ত শোনাতে ছাড়েনি, ও
মাদার, তুই কেনদারা মরদ র্যা! তোর নাকের ডগা
দে বউ চলে গ্যালো পরপুরুষের নায়ে খাটতি, তুই
কিচু বললি নে! পয়সার নেগে শেষকালে বে করা মাগেরে গতর খাটাতি নামালি!
তিনমাস ধরে এসব প্যাঁচ মারা কথা শুনেছে মাদার।
শুনতে শুনতে একলা ঘরে গুমরেছে। দুটো হাত এমন জোরে ঘষেছে যে জ্বালা ধরে গেছে। মনে
মনে কিরা কেটেছে, শালিরে একবার হাতের বেড়ে পাই, দেখাব তুই ক্যামন আর আমিই বা ক্যামন!
বুকের কিরা এখনও বুকেই থমকে আছে। মাদার কিছু
করতে পারছে! না। সময় যেন থমকে আছে। তিনমাস বাদে বউ ফিরেছে। গাঙআটির ঘাটে নেমে
হেলতে দুলতে এসেছে, মাথা উঁচু করে। যেন কিছুই হয়নি। ঘাটপথে, মাঠপথে, ঝোপেঝাড়ে, আড়ালে আবডালে দেখল সবাই। দেখল চোখ টেরিয়ে, মুখ বেঁকিয়ে। কেউ কিছু বলল! না। শুধু ভ্যানচালক
রসিক হাটখেলায় গিয়ে তাসের আসরে বসা মাদারকে মুচকি হেসে বলল, ও মাদার ঘরে তোর বউ এয়চে, যা--।
তখন বেলা কত! সূর্য মাঝ আকাশ থেকে গড়াচ্ছে
পশ্চিম পানে। গাড়া নদীর জলের ঢেউ যেন রুপোলি ফুল হয়ে খিল খিল করে হাসছে। ওপারে
বাদাবনের বুক উজিয়ে একঝাঁক টিয়া ক্যাঁ ক্যাঁ শব্দে হাসতে হাসতে চলে গেল মাথার উপর
দিয়ে। সেই হাসি মাদার যেন দেখতে পেল তাসের আসরে, সকলের
চোখে মুখে। এতদিনের সঙ্গীসাথী সব, ওরাও হাসছে! যেন কী মজার ব্যাপার! মাদারের কাটা
পা রি রি করে ওঠে। মুখে কিছু বলা হয় না। নিঃশব্দে ক্র্যাচ টেনে উঠে দাঁড়ায়।
ভেবেছিল চলার সময় কেউ হয়তো ডাকবে। ডাকল না। বললও না কিছু। রাগে দুঃখে অভিমানে
মাদার দ্রুত চলতে থাকে ভেড়ি পথে। মনে মনে বলে, যা
শালা তোদের সঙ্গে কিচু না,
তোরা আমার কেউ
না। যা শালা--।
হাটপথ থেকে মাঠপথ, তারপর ভেড়িপথ ধরে বাড়ি। এতটা আসা দু-ঠ্যাং
থাকলে যত দ্রুত হয়, তার থেকে বেশি সময় লাগে মাদারের। এখন
যেন আরও বেশি সময় লাগল। একটা করে পা ফেলছে আর ভাবছে, কী
করব! শালিকে মারব না কাটব,
নাকি লাথি মেরে
বলব ‘যা যেখানে ছিলিস সেখানে যা--’। বলব কি, বলা
যাবে কি! ভাবছে মাদার । ভাবতে ভাবতে দুটো পায়ের অভাব ভীষণভাবে অনুভব করছে। এই পা
থাকলে তো বউটা বাড়ির বার হত না, যেত না কোথাও।
মাদারের রাগ হচ্ছে। রাগ এমন প্রায় টাল খায় আর
কী। হেলতে দুলতে কোনওরকমে চলতে থাকে । আর তখন থেকেই বউটাকে চরম শিক্ষা দিতে হবে
ভাবনাটা মাথার খোঁদলে গিয়ে সেঁধিয়েছে। কেন গেল ও? কী দরকার
ছিল? পয়সার জন্যে! নাকি দেখাতে চেয়েছিল
মাদার একটা ঠুঁটো। ওকে দেখানো-- এই দ্যাখো তোমার
দ্বারা তো হল না, তাই আমি--। বলতেই
পারে। আস্ত শরীর থাকলে সবই সম্ভব। নাকি হাজরা সর্দার ওকে লোভ দেখিয়েছিল! দেখাতেই
পারে। সে মহাজন লোক। তার বড়ো বড়ো নাও আছে। মহাজনী নাও। সাতমণি দশমণি। আবার ট্রলার
ভাড়া নিয়ে দূর সমুদ্রে যায় মাছ ধরতে। সে নিজেই থাকে নায়ে। আলাদা একটা নাও তার
বরাদ্দ। এসব কাজ এক-আধ দিন বা এক-দুজনের নয়। লোক-লশকর লাগে । কত লোক খাটে তার
নায়ে। মাদারও ছিল একসময় ওই দলে। মাছ ধরা কাজ। জাল টানা, জাল গোটানো। তারপর মাছ নিয়ে যাওয়া আড়তে। নায়ে
বসে কাজ যেমন, তেমনই রান্নাবান্না, খাওয়া দাওয়া। ঘর-সংসারের যা কাজ-- সবই। প্রায় তিন-চার মাসের ধাক্কা। শুধু জল আর
জলের মধ্যে থাকা। আর ওই করতে গিয়ে পা
খুঁতো হল। আর খুঁতো মানে কী! ঠুঁটো। পা নেই তো চল নেই। চল না থাকলে কী! আয়-পয়
ঢনঢন। পেটে চড়া। মরো শুকিয়ে। লোকে আহা-উহু করে, কিন্তু
একথালা ভাত দিয়ে বলে না, আয় মাদার খাবি আয়। যা কিছু দেওয়া থোওয়া
সবই করেছে হাজরা সর্দার। তাই হাজরা লোক খারাপ এ কথা বলতে পারবে না মাদার। পা গেলে
হাসপাতাল, চিকিৎসা, ওষুধ, টাকাপয়সা দেওয়া থোওয়া-- সবই করেছিল । এমনকী মাদার সুস্থ হয়ে ফিরলে একটা
কাজ জোগাড়ও করে দিয়েছিল। শিবতলিতে হাজরার মেছোঘেরি দেখাশোনার কাজ। তা শিবতলি কি
এখানে! ক্র্যাচ বগলে যেতে আসতে সময় পার। কাজ করবে কখন! গেল না সে। তাহলে চলে কীসে!
ঠেকনো দেওয়ার লোক তো একটাই। সে ওর বউ, বাণী।
এ ওর বাড়ি গিয়ে ধান ভাঙছে,
গাঙে নেমে মাছের
পোনা ধরছে। সে পোনা বেচছে হাজরার কাছে। নাহ্, খাটতে
খুটতে দড় বউ। অস্বীকার করবে না মাদার। কিন্তু এ কাজটা সে কেন করল এটাই মাথায় আসছে
না ওর।
মন্ডলদের বাঁশবাগানের কাছে এসে টের পেল মাদার, পথ জনশূন্য নয়, চারদিক
থেকে নানা ধরনের চোখ হামলে পড়ছে ওর উপর। মুখ গোঁজ করে হাঁটতে থাকে মাদার। কারও
চোখে পড়তে চায় না । ওর ঝামেলা ওরই। সবাই টোনা মারতে পারে। কেউ এসে হাত বাড়িয়ে বলে
না, আয় রে মাদার--।
বেশ জোরেই হাঁটছিল মাদার। এর মধ্যে শরীর বেশ
গরম হয়ে গেছে। হাঁটছে আর টের পাচ্ছে পিছনে পিছনে তাড়া করে আসছে হা-হা হি-হি খিকখিক
হাসি। গা গরম হয়ে যাচ্ছে,
মাথাও টলমল।
হাঁটছে ধীর লয়ে। এখনই কি বাড়ি ফিরবে! কী হবে গিয়ে!
ভাবতে ভাবতে কখন সরকার বাড়ির সামনে এসে
পৌঁছেছে খেয়াল নেই মাদারের। আর পড়বি তো পড় একেবারে সরকারদের নিমে পিসির সামনে। তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকা
বুড়ি। মাজা কোমর ভেঙে দ হয়ে
গেছে, তবু
মুখের লাগাম নেই। ওকে এড়িয়ে চলে সবাই। কিন্তু সবাই যা পারে, মাদার কি তা পারে! পারে না। নিমে পিসি ছড়াক করে
একদলা মিসি ফেলে বলে, ও মাদার, বউ তোর গতর ভেঙে ফিরল র্যা, যা অ্যাখন ভাত জল দে, গা গতর টিপেটাপে সেবা করগে যা--।
মাদার যা কখনও করেনি, তাই করেছিল। গরম মাথা থেকে গল গল করে আগুন
বেরিয়ে আসছে। ক্র্যাচ তুলে সে চিৎকার করে বলল, আমার
বউ কনে গ্যালো, কী করল-- তুমারদের
কী দরকার! ওই যে দু-সন আগে মাঝিপাড়ার বয়স্থা মেয়ে চাঁপি নায়ে গ্যালো, ত্যাখন তো কতা ওঠেনি। তাপ্পর হরিশের বোনডা গে
আর ফিরল না-- তার বেলা তো রা কাড়ো না। আমার বউ গেচে
বলে খুব ধম্মো কতা শোনাতি এয়োচ! কই একদিন তো বলোনি, মাদার
তোর খাওয়া হয়েচে! তোর মেয়েডা কী খেল!অ্যাখন এক্কেরে ফোঁস কাটতি নেগেচ! ক্যানো আমি
কেডা! আমার কি কাজকাম আচে?
বিপিএল কাড আচে? তোমরা সব চেটেপুটে নে আঙগা বেলায় চরিত্তির
খুঁজতি এয়োচ! বেশি বাখান মেরো না, তুমারদের কতা বলতি গেলি ওই গাঙে য্যাত জল, তাতেও আঁটবে না--। বলতে
বলতে প্রায় এক পায়ে ছুট লাগায় মাদার। ছুটতে ছুটতে একেবারে গাড়া নদীর পাড়ে। হাঁপাতে
থাকে। বুকের খোলে যত বিষ ছিল, সেটা বেরিয়ে
যেতে স্বস্তি পেল মাদার।
অনেক ঘুরে যখন ঘরে এল মাদার, তখন সূর্য বাঁজা তেঁতুল গাছের আড়ালে মুখ
লুকিয়েছে। রোদ গুটিগুটি পায়ে সরে যাচ্ছে।
মাদার দেখল উঠোনের কোণে আতা গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে বসে আছে বাণী। মাথা নিচু। কেমন
ঝিম ধরা ভাব। রোগা হয়ে গেছে। গা-গতর চিমসে মেরে গেছে। তিনমাস নোনা জল হাওয়ায় শরীর
পুষ্ট হওয়ার কথা। তা হয়নি। তবে কি হাজরা ওরে খেয়ে খেয়ে ছিবড়ে করেছে!
কথাটা মনে হতেই মাদারের শরীর রি রি করে উঠল।
সন্দেহের বিষপোকা কুটুস কুটুস কাটতে থাকে মন মাথা-- সবকিছু।
মাদার আর কী করে, ক্র্যাচ খটখটিয়ে সোজা ঘরে। ঘর অবশ্য
নামেই। হেলে পড়া খুঁটি, ধসে পড়া দেওয়াল, খুলে পড়া চাল। কোনও রকমে পলিথিন শিট দিয়ে মাথা
বাঁচানো। দিনের আলো সেখানে ঢুকতে ভয় পায়। সেখানেই এখন স্বচ্ছন্দ বোধ করল মাদার।
ক্র্যাচ রেখে যেন হাওয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল, দূর
হ তুই, যে
বাগে ছিলিস সে বাগে যা, এহানে কী মারাতি
এলি আঁ!
থামল মাদার। ওদিক থেকে কোনও সাড়া আসছে কিনা
অপেক্ষা করল। এল না দেখে একটু যেন হতাশ হল। রাগে গুমরোতে গুমরোতে বলল, এহানে তোর কে আচে! কেউ নেই। যা তুই--।
এবারও কোনও সাড়া নেই। চুপ। ওদিক যেন পাথর হয়ে
আছে।
মাদার বেরিয়ে এল। আতা গাছের গোড়ায় ঠেস দিয়ে
সেইভাবে বসে আছে বাণী। সেই ঝিম ধরা ভাব। আর তখনই মাথা চাড়া দিয়ে উঠল সেই প্রবল
ইচ্ছেটা। নাহ্, ওকে খুন করতে হবে। খুন না হোক, সজোরে চড়-থাপ্পড় মারতে হবে।
ইচ্ছেটা প্রবল হতেই মাদার ক্র্যাচদুটো টেনে
নেয়। শব্দ হয়। সেই শব্দে বাণী যেন চমকে ওঠে। ও কি ভয় পেল! ভাবছে নাকি মাদার ওকে
মারবে! তার জন্য কি প্রস্তুতি নিচ্ছে! ধুস শালা--। ইচ্ছেটা
যেমন প্রবল এসেছিল, তেমনই চলে গেল। রাগটা জমা থুতুর মতো
বেরিয়ে এল সশব্দে, ওরে খানকি মাগি মুক পোড়াতি এহানে এলি
ক্যানো! সদ্দার তোরে নে গ্যালো না?
বাণী নড়ল। মুখ তুলল একটু একটু করে। তারপর নিচু
স্বরে বলল, সদ্দারের নেগে যাব বল্যে তো নায়ে উঠিনি।
স্পষ্ট ও পরিষ্কার কথা। চমকে উঠল মাদার। বাণীর
চোখ ওর দিকে মেলে দেওয়া। আই ব্বাস কী চোখরে বাবা! যেন মাদারের বুক ফুঁড়ে ফেলবে।
একেবারে ছিঁড়েখুঁড়ে তছনছ করে দেবে ওর ভিতরের রাগ-দুঃখ-অভিমান।
বাণী উঠে দাঁড়াল। পা পা এগিয়ে আসছে। কেঁপে উঠল
মাদার। ও কি মাফ চাইবে নাকি! বলবে নাকি এবারডার মতো ক্ষমাঘেন্না করে দ্যাও--!
ভাবতে ভাবতে মাথা গরম হয়ে ওঠে মাদারের। রাগে
সে ছিলাছেঁড়া ধনুকের মতো ছিটকে ওঠে। চিৎকার করে বলে, দুর
হ তুই, দুর হ --। ক্র্যাচ
বগলে প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
ছুটতে ছুটতে আবার সেই গাড়া নদীর পাড়ে। কী করবে
সে ঠিক করতে পারছে না। একবার মনে হচ্ছে ঘরে ফিরে যায়, দা কুড়–ল
যা হোক দিয়ে ও মাগির দফারফা করে আসে। সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল, ঘওে কোনও অস্ত্রই নেই। সামান্য ছুরি, তাও নেই। নাহ্, এহানে
আর থাকার কোনও মানে হয় না। যেদিকে দু-চোখ যায় চলে যায়। আবার এও মনে হচ্ছে, তা কেন বউ যখন আমার, মারি আর কাটি সে আমি ঠিক করব, লোকের বলার কী আছে!
ভাবতে ভাবতে হাঁটছে মাদার। রোদ একেবারে পড়ে
গেছে। ওপারের বাদাবনে এর মধ্যেই আঁধার নেমে এসেছে। নিঃস্তব্ধ চারদিক। গিলা নদীর
জলও স্থির। মাদার টুকটুক করে হাঁটছিল। কোনদিকে যে যাচ্ছে নিজেই জানে না। জানে না
মানে জানার ইচ্ছে নেই। বুকের খোঁদলে একটা কান্না অনেকক্ষণ থেকে বুড়বুড়ি কাটছিল।
সেটাই এখন ফেটে বেরিয়ে এল। কেন, কেন গেল ও! কী
দরকার ছিল! ওদের কি খাওয়াপরা জুটত না! ও শালি তোর এত লোভ! সদ্দাররে দেখে আর মাথা
ঠিক রাখতি পারলি নে! হ্যাঁ,
হাজরা এসেছিল
চারমাস আগে। হাতে করে এনেছিল চালডাল আর বিশাল সাইজের আড়ট্যাংরা। রায়মঙ্গল নদীতে
নাকি ধরেছে! বাণী রেঁধেছিল খুব তরিজুত করে। হাপুস হুপুস করে খেয়েছিল হাজরা আর
মাদার। তারপর বিড়ি ধরিয়ে হাজরা বলেছিল, তা
কী করবি ও মাদার?
মাদার মাথা চুলকোয়, কী করি বলোদিনি! আর তো চলে না।
তোরে তো বললাম শিবতলি চল, তাও গেলি নে।
কী কর্যেযাই বলোদিনি!
আরে বাবা, এহানে
থাকতি হবে ক্যানো, শিবতলি গে ঘরবসত করবি চল।
তাই কখনও হয়! মাদার মাথা নাড়ে, বাপ দাদাকেলে জমিতে বাস। ওঠো বললেই ওঠা যায়!
চেরকাল কি এক জাগায় থাকে কেউ!
বাণী আড়াল থেকে শুনছিল সব। মাদার কথা বলছে না
দেখে আর পারল না। ঘর থেকেই বলল,এহানে থাকলি
খাবা কী, হাওয়া! নিজি তো নড়তি পারো না, আমি আর ক-দিক সামলাই বলোদিনি!
মাদার রেগে গেলেও কিছু বলতে পারল না। কঠোর
বাস্তব যেন বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় বসিয়ে দিল ওর গালে। মাথা নিচু হয়ে গেল সঙ্গে
সঙ্গে। বাণীই মুখ ধরল। পা গিয়ে মাদারের কী হাল হয়েছে সংসারের-- এ কথা সবিস্তারে শোনাল হাজরাকে। আর এই অবস্থার
জন্য যে হাজরাই দায়ী সেটাও বুঝিয়ে দিল পরোক্ষে।
হাজরা শুনল মাথা নিচু করে। মাদারের ব্যাপারে
দায় এড়াতে পারে না-- এটা সে মানে। তাই ছুটে আসে মাদারের
কাছে। মুখেও বলে, আমি চাই তোর একটা হিল্লে হোক। কিন্তু
কীভাবে করব বল, আমার তো অনেক নেই।
কথাটা ওখানেই অসমাপ্ত থেকে যায়। হাজরা কিছু
বলেনি, মাদারও কিছু চায়নি। কিন্তু বাণী তা
মানবে কেন। দায় তো ওর ঘাড়ে পড়েছে। সে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নানাভাবে হাজরাকে কথা শোনাতে
থাকে। তাকেই যে এই দায় উদ্ধার করতে হবে সেটাও বোঝাতে থাকে।
শুনতে শুনতে হাজরার মাথা নিচু হয়ে যায়। বাণীর
কথা শেষ হলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, দ্যাখ মাদার আমি
ব্যাপারী মানুষ, লাভ-লোকসান বুঝি। তুই যদি চাস তো এট্টা
উপায় করতি পারি।
মাদার নিচু স্বরে বলে, কী উপায়?
তোর বউ আমার নায়ে চলুক। সেখানে কাজকামের
তদারকি করবে, রাঁধাবাড়া করবে। পয়সাকড়ি তুই য্যামন
পেতিস ত্যামন পাবে। ভেবি দ্যাক।
মাদার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে হাজরার দিকে। ঘরে
বাণীও নিশ্চুপ। যেন কোথাও কোনও শব্দ নেই। সব চুপ। মাদারের একবার ইচ্ছে হল বলে, তুমার পয়সা আচে বল্যে যা খুশি তাই বলবা! কিংবা
বলে, যাও সদ্দারের পো আমার রাগ মাতায় চড়ার
আগে এহান থে যাও। তুমার মুক আর দেকতি চাইনে।
খানিক সময় এভাবেই চলে যায় নীরবে, নিস্তব্ধতায়। কেউ কোনও কথা বলছে না। শেষে
হাজরাই মুখ খোলে, কী র্যা, কতা বলিস নে ক্যানো!
হাজরা মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলে, তা কী কর্যেহয়!
ক্যানো, অ্যাখন
তো কত মেয়ে বউ যায়। তারা সব খারাপ! আমি কি খারাপ, বল
তুই!
তা বলি না--।
তা’লি!
গাঁ-ঘরের ব্যাপার, মান-সম্মান ইজ্জত আচে না!
তা’লি
আর কী, ইজ্জত মুঠো কর্যেথাক, আমি চললাম।
চলে গেল ব্যাপারী। তার পরের মাসে ওর নাও লাগল
গাংআটির ঘাটে। চাল-ডাল-খাবার জল, আর সব যা যা
লাগে সব তুলল। মাদারও ছিল ওদের সঙ্গে। কিন্তু নাও চলে যাওয়ার পর আবিষ্কার করল বাণী
নেই। একলা ঘরে মেয়েটা হাঁ করে ঘুমুচ্ছে। সেদিন গাঁ-ঘরের লোক বাড়ি বয়ে এসে খবর
দিয়েছিল, বাণীকে তারা ব্যাপারীর নায়ে উঠতে
দেখেছে। সেদিন বাণী চলে যেতে যত না রাগ
হয়েছিল, তার থেকে বেশি রাগ হয়েছিল মেয়েটাকে
দেখে। ওকে কেন নিল না! কেন ফেলে গেল! শালির গা-গতর এত কামড়াচ্ছে! মেয়েটা তোর কী
দোষ করেছে! মাদার জানত বাণী আর ফিরবে না। জন্মের মতো চলে গেল। পাড়ার লোকে নানা কথা
বলে। ওরা কি মেয়ের দায় নেবে! নেবে না।
হাঁটতে হাঁটতে কখন ঢেমনাখালির দিকে পা
বাড়িয়েছে মাদার নিজেরই খেয়াল নেই। আঁধার যেন বাঘের মতো ওত পেতে আছে। এই বুঝি পড়ল
ঘাড়ে। মাদার দ্রুত পা চালায়।
একপায়ে যত জোরে যাওয়া সম্ভব, তার থেকেও বেশি চলতে চলতে পৌঁছয় ঢেমনাখালি।
মুখ আঁধারে দাস পাড়ার কাছে শিরিষতলায় ঝুঁকেপড়া ঘরের সামনে নিচুস্বরে ডাক দেয়, কমলি রে, ও
কমলি--।
বেশি ডাকতে হল না, আঁধার ঘর থেকে মাঝবয়সি মেয়ে বেরিয়ে এল। মাদারের
সামনে দাঁড়িয়ে বলল, কী বলো দাদা?
খপর শুনেচিস!
কী?
ফিরেচে।
বলো কী!
হাঁ।
তুমি তারে ঘরে ঢুকতে দেছ!
বায়কায় বস্যে আচে।
যাচ্ছি আমি, ঝ্যাটাব
ওরে--।
মেয়েডারে নে যাবি!
সে তো যাবই। ওরে দেখ্যে বলব, তুই পারলি কী কর্যে, মেয়েটার কতা মনে পড়ল না! তুই কি পাষাণী! তুমার
এই বোনটা না থাকলি তো মেয়েটা বেঘোরে মরত। না দাদা তুমি থাকো এখানে, আমি যাচ্ছি--।
কমলা দ্রুত ঘরে ঢুকে গেল। তারপর বছর পাঁচেক
বয়সের মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে এল। মাদারকে বলল, তুমি
থাকো, তুমার বোনাই হাট থে এসি পড়বে এখুনি।
মাদার মেয়েকে দেখল। রোগা হয়ে গেছে। আহা
মা-ছাড়া মেয়ে। কমলি ওর দূর সম্পর্কের বোন। এই দায় সে স্বেচ্ছায় নিয়েছে। মেয়ের যত্নআত্তিও
করেছে। তবু মায়ের কাছে সেসব কিছু না। মা আলাদা এটা মাদারও বোঝে। সেজন্য কি বাণী
ফিরতে মেয়ের কথা মনে পড়ল!
কমলি চলে যেতে মাদার দাওয়ায় বসে বিড়ি গুঁজল
ঠোঁটে। দেশলাই জ্বলে ওঠার সময় দৃষ্টি যেন ঝলসে উঠল। চোখ চলে গেল খোড়ো চালের
বাতায়। সেখানে গোঁজা একটা দা। সদ্য ধার দেওয়া। চকচক করছে তীক্ষèধার অস্ত্রটা।
মাদারের চোখদুটো জ্বলজ্বল করে
উঠল। অনেকক্ষণ থেকে যে ভাবনাটা মাথায় তুলকালাম করে দিচ্ছে, সেটাই ফিরে এল প্রবলভাবে। শালির আর ছাড়ান নেই।
নিঃশব্দে শুধু তাক বুঝে একটা কোপ। ব্যস, শালির
দফা গয়া। ও হাজরার নায়ে গেছে এটা যত না অপমানের, তার
থেকে বেশি অপমান ও কি ভেবেছে মাদার একেবারে ঠুঁটো হয়ে গেছে! তাই ওকে দয়া দেখানো, করুণা করা! না, এটা
সে সহ্য করবে না। কিছুতেই না।
মাদার বিড়ি ফেলে দিয়ে চালের বাতা থেকে দা-টা
টেনে নেয়। কোমরে গুঁজে ক্র্যাচ বগলে আবার চলতে শুরু করে। এবার আর দ্রুতলয়ে নয়, ধীরেসুস্থে, আস্তে
আস্তে। নাহ্, তাড়াহুড়ো করা চলবে না মোটে। কাউকে
বুঝতে দিলে চলবে না। যা করার নিঃশব্দে, নিজের
মতো করে।
গাড়া নদীর বুক উজিয়ে হাওয়া এল উথাল পাথাল। মন
মাথা বুঝি জুড়িয়ে আসে। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে মাদার। আকাশ জুড়ে তারার মেলা। নোনা জলে
তাদের মিটমিট ছায়া। ওপারে বাদাবন যেন বাঘের মতো ওত পেতে আছে। যে-কোনও মুহূর্তে
শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। হাঁটতে হাঁটতে মাদার টের পায় ওর শরীর শক্ত হয়ে যাচ্ছে।
হাতদুটো নিশপিস করছে। দাঁড়িয়ে পড়ল সে। এভাবে এগোনো যাবে না। মনকে বাঁধতেই হবে।
নইলে আবারও সে হেদিয়ে যাবে। শালির আর বাঁচার অধিকার নেই। ওকে মরতে হবে। হবেই।
##
অনেক পথ ঘুরে
মাদার যখন ঘরে ঢুকল, তখন গভীর রাত শ্বাস ফেলছে ঘন ঘন। একবুক
আশঙ্কায় বাতাসও বুঝি গুটিয়ে নিয়েছে তার হাত পা। বাঁজা তেঁতুল গাছ আকাশের তারার আলো
শুষে নিয়ে থম মেরে দাঁড়িয়ে। মাদার দেখল দাওয়ায় লম্ফ জ্বলছে। বাণী মেয়েটাকে পাশে
নিয়ে শুয়ে আছে। ক্র্যাচের শব্দ পেয়ে সে ধড়মড়িয়ে উঠে বসল। অজানা আশঙ্কার ছায়া বোধহয়
মাদারকে দেখে মিলিয়ে গেল। ভাবখানা বুঝি, ও
তুমি--! যেন কিছুই না। বাণী আবার শুয়ে পড়ল
মেয়েকে কোলের মধ্যে নিয়ে। আর এটাই মাদারকে রাগিয়ে দিল। রাগে সে ক্র্যাচ দিয়ে
লম্ফটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল উঠোনে। দপদপ করতে করতে সেটা নিভে গেল। ঘন আঁধারে ছেয়ে গেল
চারদিক। মাদার আস্তে আস্তে কোমর থেকে
দা-টা টেনে বের করল। তুলে আনল বাণীর মাথা বরাবর। এখনই কোপ বসিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু
তাতে বুকের জ্বালা জুড়োবে না। ঘোঁত ঘোঁত
করে সে বলল, এই শালি সত্যি কর্যেবল এহানে এলি
ক্যানো?
দাওয়ায় শোয়া বাণীর নিচু অথচ কঠিন স্বর ভেসে এল, এহানে না এসি যাব কনে!
ক্যানো, এহানে
কী আচে তোর!
আমার ঘর, সংসার, তুমি আর এই মেয়েডা।
তালি এসব ফেল্যে গেলি ক্যানো?
না গেলি চলত না।
কাজটা তুই ঠিক করলি? অ্যাখন এ গাঁয়ে থাকব কী কর্যে।
অন্ধকার থেকে গভীর শ্বাস পড়ার শব্দ ভেসে এল। বাণী বলল, গাঁ কারও একার নয়, কাজকাম যাই করি সেটা ঠিক ভাবলি ঠিক, কু ভাবলি কু। তুমি চাওনি আমি কাজ কর্যে পয়সা
নে আসি?
মাদার হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, না চাইনি। তুই মানসম্মান, ইজ্জত খেয়ে এসি ভাবতিচিস আমি ঘরে জাগা দোব! না-।
বাণী নির্বিকার গলায় বলল, ঘর তুমার একার নয়।
কী বললি এই মাগি--! বলতে বলতে হাতের দা নির্ভুল নিশানায় তোলে। থর
থর করে কাঁপছে শরীরটা। ভিতর থেকে বাঘের গর্জন ভেসে আসছে, মার শালিকে, মার--।
আচমকা আঁধারের তলপেট ফাঁসিয়ে বাণীর খিলখিল
হাসি ভেসে এল, এ তুমার রাগের কতা। রাগ কর্যেকী হবে, একথালা
ভাত জোটাতি পারবা! মানসম্মান, ইজ্জতের
কতা বলতোচো, ওসব দে কী হয়, খাবার জোটে! ভালো করি মন্দ করি, করিচি আঙগা সকলার নেগে, সকলার বাঁচার নেগে। ভুল করিচি, বলো?
মাদারের হাত কেঁপে ওঠে। বুকের গভীরে আয়লার
মাতন। হু হু করে উড়ছে বাতাস। মাদার টের পেল ওর উঁচু হাত স্থির হয়ে আছে। নড়ছে না।
মুহূর্তের স্তব্ধ ছবি। তারপর হাতটা কাটা ডালের মতো ঝুলে পড়ল। দা-টা ছিটকে পড়ল কোন
অন্ধকারে। বাণী তখনও বলে চলেছে, বলো, ওগো চুপ ক্যানো, বলো?
মাদার ধপ করে বসে পড়ল দাওয়ায়। ফোঁস করে
দীর্ঘশ্বাস পড়ল। মুহূর্তেই আস্ত শরীরটা বেঁকেচুরে দ হয়ে গেল।
কতক্ষণ এভাবে কেটে গেল। গভীর রাত শ্বাস ফেলছে
ঘনঘন। দূর থেকে ভেসে আসছে ডাহুকের অবিশ্রান্ত ডাক। মাদার আস্তে আস্তে উঠে বসল। যেন
নিজের মনে বলে উঠল, হাজরা লোক ক্যামন?
আঁধারে শ্বাস পড়ার শব্দ। বাণী জড়ানো গলায় বলল, ভালো না।
তবে গেলি ক্যানো?
জানি নি।
আবার যাবি?
জানি নি।
বলে ঘুমন্ত মেয়ে নিয়ে পাশ ফিরল বাণী। মাদারের
মনে হল বাঘিনী যেন আগলে নিল তার সন্তানকে।
------------------------------------------------------------------------------------------
------------------------------------------------------------------------------------------
অনিল ঘোষ
জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট শহরে, নদীর তীরে। সেখানেই বসবাস, পড়াশোনা। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ। বাঁধাধরা চাকরির পথ ছেড়ে প্রায় বাউণ্ডুলে জীবনযাপন। কখনও টিউশানি, কখনও সাংবাদিকতা। বর্তমানে কলকাতার প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত।
পরিচয় পত্রিকার দপ্তর সম্পাদক। সম্পাদিত পত্রিকা ইছামতী বিদ্যাধরী।
লেখালেখির সূত্রপাত স্কুল থেকে। এ পর্যন্ত গল্প-উপন্যাস-নাটক ও অন্যান্য রচনা মিলিয়ে তেরোটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑÑ রণক্ষেত্র, চারাগাছ ও অন্যান্য গল্প, নিউ জার্সির ফোন, মহাযুদ্ধের পটভূমি (গল্প সংকলন), প্রান্তরের গান (উপন্যাস), নির্বচিত নাটক (নাটক), অকিঞ্চন কথামালা (কবিতা), শ্রেষ্ঠ শিখা, বিষয় বসিরহাট (সম্পাদনা) প্রভৃতি।
২০০৭ সালে ছোটোগল্পের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার প্রাপক।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------
1 মন্তব্যসমূহ
Galpo ta besh valo.
উত্তরমুছুন