কুলদা রায়
১.
লেখক হরিপদ দত্ত দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। বয়স হয়েছে ৬৫ বছর। এতকাল মাটি কামড়েই ছিলেন দেশে। থেকেছেন ঢাকার মেসে। তাঁর চিরসঙ্গী ছিল অর্থসংকট, ক্রমবর্ধমান বয়স, নিঃসঙ্গতা, রোগশোক, বিষাদ। একজন প্রকৃত লেখকের এরা ছাড়া আর কে সঙ্গী হবেন!
জাতিস্মরের জন্মজন্মান্তর নামের আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, টিনের স্যুটকেস বাবার হাতে, আমি তার পেছনে। হেঁটেই যেতে পারতেন চার মাইল দূরের ঘোড়াশাল রেল স্টেশনে। বদলে মালোপাড়ার রাখাল মাঝির কেরায়া নৌকায় করে চলেছেন। আমার চোখ শীতলক্ষ্যার স্রোতহীন জলে আর দু’তীরের গ্রামগুলোতে। প্রার্থনা করছিলাম নৌকাটি ডুবে যাক, সাঁতরে বাড়ি ফিরব, ঢাকা যেতে হবে না। নৌকা ডুবে না, ডুবে আমার চোখের মনি। বুঝতে পারছি এই নদী আমাকে চিরদিনের জন্য পরিত্যাগ করছে।
হরিপদ দত্তের লেখাটির এইখানে এসে আমার চোখ ভরে ওঠে জলে। সে জলের বাষ্পের ভারে দেখতে পাই–আমার বসার ঘরের সোফা সেটটি কে বা কারা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে আমার মেয়েরা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের পুতুলের বাক্সটি প্রতিবেশীর মেয়েটি কুড়িয়ে নিয়েছে। তাদের মা মুখে আঁচল গুঁজে ভেঙে পড়ছে। এই সোফা সেটটির কাঠ তিনি নিজে পছন্দ করে কিনেছিলেন। আজ ঘর শূন্য হয়ে গেল। এর মধ্যে আমাদের বাড়িঅলা বগুড়া রোডের মাথায় এসে শেষবার আলিঙ্গন করে বললেন, দাদা, দেশে এলে আসবেন। এইভাবে একদিন আমি, আমার মেয়েরা, আমার স্ত্রী, আমরা দেশশূন্য হয়ে গেলাম। আমার বাবা শুয়ে আছেন মধুমতির পাড়ে। মা শূন্যচোখে চেয়ে আছেন। আর আমি হাডসন নদীর পাড়ে বসে এখন কীর্ত্তনখোলা নদীটিকে ডাকি। নদী বলে, আয়, আয়। নদী, আমি আর আসবো না বোন।
হরিপদ দত্ত লিখেছেন, তবু আমি শীতলক্ষ্যার কাছে বারবার ফিরে যাই। এই নদীর জলেই মিশে আছে আমার হাজার বছরের পূর্বপুরুষের চিতাভস্ম। আমার বাড়ি নেই, কিন্তু টিকে আছে আমার জন্ম গ্রামের অবশেষ অংশ। ওখানে আমি আজ অচেনা আগন্তুক। এই আগন্তুকের জন্য কারো বেদনা জাগে না। তিনি নীরবে চলে যান। ভূমিশূন্য হয়ে যান। মনে হয়– একজন প্রকৃত সৃষ্টিশীল মানুষের জীবনে ভূমিশূন্য হওয়া ছাড়া আর কোনো নিয়তি নেই। আপনাকে বিদায় অগ্রজ লেখক হরিপদ দত্ত।
২.
হরিপদ দত্তর অজগর উপন্যাসটি পত্রিকায় যখন ছাপা হয়েছিল তখন পড়েছিলাম। একটা সময়ের রাজনৈতিক উপন্যাস হিসেবে উপন্যাসটি অনুপম। তার ভাষা মধুর। আটপৌড়ে। সহজে মানুষকে স্পর্শ করে। বোঝা যায় তিনি নিজের কথাটি কইছেন। বানানো গপ্প ফাঁদছেন না। আমাদের চারিদিকে বানানো গপ্পেরই ভিড়। মাছটিকে মাছের মত লাগে না— মাছের আইস থেকে আষটে জল ছিটে আসে না, খেলনা খেলনা মনে হয়। অথচ এই মাছটিই তো আমি। এই গাছটিইতো আমি। এই ধুলো-বালি-মাঠ-গঙ্গা ফড়িং, আমি ছাড়া আর কে? আমার ভেতরে কীর্ত্তন খোলার নদী ছাড়া আর কিছু নেই।
অথচ আমার-আমাদের লেখার ভিতরে যে নদীটিকে দেখতে পাচ্ছি –তার পাশে ঘাস গজিয়ে ওঠে না। ছপছপ জলের স্রোত ভাসে না। জলপিদিম রাতে জাগে না। এইখানে বুঝতে পারি হরিপদ একা। তিনি লিখেছেন, আমার মায়ের গর্ভধারিণী জননী যেমনি কোনো মনুষ্য আরোপিত তথাকথিত পূণ্যবতী নারী ছিলেন না, বরং ছিলেন অতি সাধারণ নারী, আমিও ঠিক নই কল্পিত অবতার। পূণ্যবতী নারীর গর্ভ ছেড়ে ধরাধামে আবির্ভাবের মতো অলৌকিক ঘটনা নয় আমার জন্ম।… আমার মায়ের প্রথম সন্তান বড়দিদির জন্মের বার বছর পর ছোড়দির জন্ম, তার এগার বছর পর আমি।..তাই পড়শিদের কেউ কেউ আমাকে বাঘিনীর বাচ্চা বলে ঠাট্টা করতো। তাদের বিশ্বাস ছিল জঙ্গলের বাঘিনী বার বছর পর পর সন্তান জন্ম দেয়।
জন্মটি কখন হচ্ছে হরিপদ দত্তের? অনিশ্চিত-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ইতিহাসকালে। সে সময়ে দেশ ভাঙছে, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে, মানুষের চেয়ে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে ধর্ম আর ঈশ্বর বড় হচ্ছে। তিনি বুঝতে পারছেন তার জন্মটি একটি বাসনা পূরণের ফাঁদ। তাঁর পিতামাতা পুত্রসন্তানহীন। একটি পুত্র না হলে পুৎনামক নরকে গমন ছাড়া গতি নেই। ফলে হরিপদর জন্ম হচ্ছে এই নরকম ভীতি থেকে জন্মদাতাদের বাঁচানোর জন্য। তারা কি শেষমেষ নরক থেকে স্বর্গ পেয়েছেন? সেটা জানা যায় না। তবে হরিপদ নরককে বেছে নিয়েছেন। মাতৃগর্ভে থাকতে থাকতে দেশভাগ হয়ে যাচ্ছে। তার পিতা বিরক্তিকরভাবে বলে উঠেছেন, কী কুক্ষণে কুলাঙ্গারের জন্ম।
তিনি লিখেছেন, জাতিস্মরের চোখ দিয়ে আমি কল্পনা করতে পারি আমার জন্মগৃহ আর বিছানাকে। অন্ধকারাচ্ছন্ন সদ্য নির্মিত ছনের কাঁচা ক্ষুদ্রাকৃতি গুহাগৃহ। আলো-বাতাস অবরুদ্ধ ঘরের মেঝে সদ্য ফেলা লাল এঁটেল মাটির ফ্লোর। স্যাঁতস্যাঁতে। পাটশোলার বেড়ার লেপে দেয়া গোবর-মাটির গন্ধ। আমার জন্মরক্ত জীর্ণ কাঁথা চুষে বাঁশের চাটাই ভেদ করে লাল মাটির ফ্লোর বেয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আমার জন্মরক্ত আর জন্মমাটিকে আলাদা করে কার সাধ্য? এই জন্মরক্তই হরিপদদের চিরকাল আলাদা করেছে। পূর্বপুরুষের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা-মল্লিকবাড়ি এলাকায়। পলাশী যুদ্ধের পরেই নৌপথে ব্রহ্মপুত্র-শীতলক্ষ্যা পাড়ি দিয়ে এই নরসিংদীর খানেপুর গ্রামে চলে এসেছিলেন। কেন এই দেশান্তর? তিনি শুনেছেন ‘রাজ্যে গোলযোগ হওয়ায়’ এই দেশান্তর। সোজা কথায় সুঁতো ছিড়ে যাওয়া। তাদে সুঁতোটি ছিড়ে গেছে। তিনি একদিন তাঁর ছিড়ে যাওয়া সুঁতোটিকে খুজতে খুঁজতে ভালুকাতে চলে গিয়েছিলেন। তিনি দেখেন সেখানে আপন কেহ নাহি। সেটা পরবাস। তারা সবাই ধীরে ধীরে ভূমিচ্যূত হয়ে যাচ্ছে। অথচ চিরকাল ভূমির বাসনা যায় না। মনের মধ্যে কুরে কুরে মারে।
৩.
তার বিদ্যাশিক্ষা শুরু হয়েছিল কলাপাতায়। তার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন মোহন পণ্ডিত, বনমালী পণ্ডিত, শামসুদ্দিন পণ্ডিত আর হাফিজউদ্দিন পণ্ডিত। হাফিজউদ্দিন পণ্ডিত ছিলেন দীর্ঘদিন নিঃসন্তান। আরেকটি বিয়ে করেন তিনি। যিনি স্ত্রী হয়ে এলেন, সেই মেয়েটির পিতৃপরিচয় নেই। ৪৭ এর দেশভাগ আর দাঙ্গার সময়ে মেয়েটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিল শ্বশুরকুলের লোকজন। মেয়েটি কি হিন্দু, না, মুসলমান? জিজ্ঞাসে কোন জন? মেয়েটি মানুষ। মানুষ কখনো হিন্দুও হয় না। মুসলমানও হয় না। খ্রিষ্টানও হয় না। মানুষ সবার আগে মানুষই। এই মানুষটিই হাফিজউদ্দিন পণ্ডিতের দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে এসেছিলেন। তাঁর ছাত্র হরিপদ দত্ত।
রোজা ছুটি শেষে খেয়াঘাটে এসে জানতে পারেন হরিপদ, সহাপাঠিনী মঞ্জু কলেরায় মারা গেছে। সাহাপাড়ার ঘাটের পাশে মঞ্জুর চিতার পাশে ছাই। একটি মেটে কলস। এই-ই মঞ্জু। এই মঞ্জুর সঙ্গে তাঁর কখনো কথা বলা হয়নি। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে এই মঞ্জুর কথাটিই লিখেছেন।
লিখেছেন তাঁর ইংরেজি শিক্ষক লাল মিয়া স্যারের কথা। মুসলিম লীগার ছিলেন। কিন্তু একাত্তরে যুদ্ধের সময় তিনি পাকিপন্থাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন জন্মের তরে।
১৯৬৪-৬৫ সালের দাঙ্গা আর যুদ্ধের দুঃসময়েই পলাশ সার-কারখানার জন্য হরিপদ দত্তদের বাড়ির জায়গা জমিন সরকার নিয়ে নেয়। এই জমি ফিরে পেতে তার বাবা হাত জোড় করে মন্ত্রীদের সামনে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, আমি হিন্দু, পাকিস্তানের শত্রু নই, আইয়ূব খানকে ভোট দিয়েছি, পাকিস্তান ছেড়ে হিন্দুস্তান যাব না। দয়া করে আমাকে উচ্ছেদ করবেন না, পাকিস্তান রাষ্ট্রের দোহাই দিচ্ছি।
রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে কোনো কাজ হয়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্র তাকে বিমুখ করেছেন। তার বাবার পরিণতি হয়েছে ইতিহাসর সাক্ষী শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর আর বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার ট্রাজেডিতে। তিনি হয়ে পড়েন শোকড়হীন, আশ্রয়হীন। এইখানে এসে থেমে যায় না তার কলম। তিনি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ করে আমাদেরকে চমকে দিয়ে শুকবানুবিবি ফুপুর কথা বলে ওঠেন। তিনি ছিলেন তাঁর বাবার ধর্মবোন। কোন ধর্ম? হিন্দু ধর্মের? না, মুসলমান ধর্মের? কঠিন প্রশ্ন। হরিপদ লিখেছেন, সন্তানহীনা-স্বামীহারা ঐ বৃদ্ধা আমাদেরকে আপন ভাইয়ের সন্তানদের মতোই ভালোবাসতেন। পিতার সংসারে ভাগে যে জমিন তিনি লাভ করেন তাতে একা বেঁচে থাকা ছিল দায়। ঈদ বা পূজা-পার্বনে আমাদের বাড়ি আসতেন। চাল, নগদ টাকা, শাড়ি দিতেন বাবা তাকে। খুব বিপাকে পড়লে ভিক্ষায়ও বেরুতেন। একবার খবর পেয়ে বাড়িতে ডেকে এনে বাবা তাকে শাসন করে বলেছিলেন, ভিক্ষা করলে তুই আমাকে বড় ভাই বলে পরিচয় দিবি না, ঘরে চাল না থাকলে বাজার সদাইয়ের পয়সা না থাকলে নিয়া যাস, যদ্দিন বেঁচে আছি, ভাতের আভাবে তুই মরবি না।
তিনি লিখেছেন, পাকিস্তান নামক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রটি মোটেই বাবার পক্ষে ছিল না। রাষ্ট্র ছিল প্রতিপক্ষ, বন্ধু নয় মোটেই। শাসকদের তিনি বিশ্বাস করেছেন, শ্রদ্ধা দিয়েছেন, কিন্তু শাসকশ্রেণী তাকে বিশ্বাসও করেনি, পদে পদে অপমানই করেছে। ১৯৬ সালের শেষে এসে রাষ্ট্রের কাছে তাদের সম্পত্তি হয়েছে শত্রু সম্পত্তি।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে তার বাবা পরিত্যাগ করেননি। কিন্তু ত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে। এখানেই ইসলামিক রিপাবলিকের কাছে হার মানে পিপলস রিপাবলিক। পরিণতিতে বাবা কিন্তু এই হার মানাটাকে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাষ্ট্র তার নাম-পদবী পাল্টালেও চরিত্রে পাল্টায়নি। আমাদের রাষ্ট্র চিরকাল প্রতারক—কারো দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে না।
তার বাবা মা দুজনে যখন দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তখন তারা বয়সের ভারে আনত। হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। সহায়সম্পদহীন হয়ে সত্যিকারে ভূমিচ্যূত হয়ে তার বুড়ো বাবা বুড়ো মাকে ধরে ধরে যাচ্ছেন। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে যাচ্ছেন। সামনে পেছনে কোথাও ভবিষ্যত নেই। ভরসার স্থল পুত্রও নেই। পুত্র রয়ে গেছে পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশে। সে পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে না। বিদায়ের বেলা ঝাপসা চোখে বুড়ো বাবা-মা তাকে বলেছেন, ‘সাবধানে থাকিস’?
৪.
ধীরে ধীরে হরিপদ দত্ত জানাচ্ছেন মৌলবাদী রাজনীতি মুসলিম সমাজের মতো হিন্দু সমাজকেও গ্রাস করছে। মুসলমানরা এদেশে মৌলবাদী হচ্ছে ধর্মী বিশ্বাস নিয়ে আর হিন্দুরা হচ্ছে আপন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। সেই অস্তিত্বের প্রশ্নে কোনো নীতি বা আদর্শ নেই। থাকার কথাও নয়। ..আজ এদেশের লেখক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবী সমাজ ক্রমে ক্রমে হজম হয়ে যাচ্ছে মৌলবাদ তথা সাম্প্রদায়িকতায়। কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে একাত্তরের সেই আদর্শ আর সাহস। সবাই পেছনে হটছে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ছে সবাই।
এরপরই আরও মর্মভেদী একটা বাক্য দিচ্ছেন তিনি, জড়তা, ভীরুতা ক্রমেই গ্রাস করছে শিল্পীদের। জীবন ঘষে আগুন জ্বালাবার শক্তি ক্রমেই যাচ্ছে হারিয়ে। তাদের উঠোন থেকে মুছে যাচ্ছে তার হরিপদ দত্তর বাবা আর শুকবানুবিবি ফুফুপিসিমাকে।
অথচ তার জন্মগ্রাম নরসিংদীর খানেপুর। সেই গ্রাম, যে গ্রামের একাত্তরে একজন রাজাকারও জন্ম নেয়নি। জন্ম নিয়েছিল বেশ ক’জন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি লিখেছেন, তো সেই যে ’৬৪-এর দাঙ্গার কথা বললাম তখন আমাদের গ্রামে রূপকথার জন্ম হয়। আজ আমি যে কাহিনীর কথা বলবো হয়তো অনেকে তা বিশ্বাস করতেই চাইবে না। এক বিকালে আমার পাড়াতো চাচা তাহের ভূঁইয়া আমাদের বাড়িতে এসে হাজির। হাতে লম্বা দা। আমার বাবাকে ডেকে তাহের চাচা ক্ষুদ্ধ স্বরে জানতে চান, অ মাস্টার, শুনলাম উত্তরপাড়ায় যোগেন্দ্র নাকি হিন্দুস্থান পালানোর মতলবে আছে? বাবা ‘হ্যা’ সূচক উত্তর দিলে তাহের চাচা বাম হাতে দা, ডান হাত দিয়ে বাবার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলেন উত্তরপাড়া। যোগেন্দ্রের বাড়ি পৌঁছে তাকে কাছে ডেকে খুবই ঠাণ্ডা মেজাজে জানতে চান, কিরে যোগেন, তুই নাকি হিন্দুস্থান চলে যাওয়ার জন্য বাড়ি জমি বেঁচার তালে আছিস?
যোগেন্দ্র বিষণ্ন গলায় জানায়, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন চলে যাচ্ছে তাই সেও যাবে। হঠাৎ তাহের চাচা দা উঁচিয়ে চিৎকার করে ওঠেন, সাবধান যোগেন, এক পা বাড়াবি তো জবো করে ফেলব। বেঈমান, শীতলক্ষ্যা গাঙের পানি তোর পেটে যায় নাই। যার পেটে এই গাঙের পানি পড়েছে সে কি পারে রায়ট করতে? সে কি পারে খানেপুর গ্রাম ছেড়ে পালাতে? বাঘের বাচ্চা হরিপদ দত্ত অবশেষে বেড়ালের মত এই খানেপুর গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। শীতলক্ষ্যা নদী ছেড়েও অবশেষে চলে গেলেন। পার হলেন বর্ডারের শেষ রেখাটি। এখন এসে দাঁড়িয়েছেন নোম্যানস ল্যান্ডে। এর পর কোথায় যাবেন?
হরিপদ দত্ত তাহের চাচার সন্ধানে যাবেন। আর আমি শুকবানুবিবি ফুফুপিসিমার কাছে যাব।
1 মন্তব্যসমূহ
হৃদয়বিদারক।
উত্তরমুছুন