অনিল ঘোষ
সন্দেহ নাকি
বিষপোকা! সে কুটুস করে না,
কটাসও করে না।
আঁচড়ায় না, কামড়ায়ও না। সরাসরি হুল ফোটায়। তাতেই
গা-গতর জ্বলে ওঠে রি রি করে। তখন মন-মাথায় যেন বিষের ছোবল পড়ে। অস্থির লাগে
সবকিছু। হ্যাঁ, সেই হুলের খোঁচায় এখন জেরবার আমিনা
বেওয়া। বেশ কিছুদিন ধরে সন্দেহটা হচ্ছিল। বুকের মধ্যে পাথরচাপা হয়ে পড়েও ছিল।
বেরুবার একটা পথ, জুতসই সুযোগ পাচ্ছিল না। পাচ্ছিল না
বলে গুমরে গুমরে বেড়াচ্ছিল বুকের ঘরে, শরীরের
অলিগলির ভিতরে।
তবে আমিনা বেওয়া চুপ থাকলে কী, ওর বুকের কথা শুধু ওর বুকেই চাপা নেই-- খানপাড়ার ঘাটে-পথে, হাটখোলায়, মসজিদতলায়
সেটা মৌমাছির ডাকের মতো ভোঁ ভোঁ করছে তো করছেই। অনবরত ফিসফিসানি, চোখ-মুখ টেরিয়ে হাসা-- এসব চলছিলই, এর
মধ্যে রফিকের মা-বুড়ি আজ সাতসকালে তো স্পষ্টাস্পষ্টি বলেই দিল, তোর আর কী বউ, ব্যাটা
তোর মেয়ে পাচার করতে গে জেল খাটতেছে, আর
ব্যাটার বউ বসিরহাট গে গতর বেচতেছে--!
কথা তো কথা নয়, একেবারে
কালাচ সাপের ছোবল। এমন জ্বালান পোড়ান, যে
চিৎকার করবে সে উপায়টি নেই। মুখে একেবারে কুলুপ। মনে মনে প্রার্থনা চলছিল, ও আল্লা গো, কেয়ামতের
দিনটা আজই এনে দ্যাও না গো! ও আল্লা মাটি ফাইটে দ্যাও, আকাশ ফাইটে বাজ পড়ুক। পড়ুক ওই রফিকের মা-বুড়ির
মাথায়। নয়তো আমার মাথায় ফেলো গো। তওবা তওবা, কবরে
যাওয়ার বয়সে এ কী গজব গো!
চাপা কথা এভাবে দিনের আলোয় ঝলসে উঠতে আমিনার
সত্যিই মরমে মরে যেতে ইচ্ছা করছিল। এমনিতে মুখরা স্বভাবের আমিনা। কেউ ক্যাঁক করলে
ও ফোঁস না করে ছাড়বে না। কথার তোড়ে তার সাত গুষ্টি উদ্ধার করে তবে শান্তি। কিন্তু
রফিকের মা-বুড়ি এমন মোক্ষম প্যাঁচ মারল-- জোঁকের
মুখে নুন পড়লে যেমন হয়, তেমন অবস্থা এখন আমিনার। কথাটা ওর মনেও
যে ফড়িং-এর মতো ফরফর করছিল। নিজের সন্দেহের কথা এভাবে অন্যের মুখে শুনবে আশা
করেনি। মুখটা কালো হয়ে যায় আমিনার। সেই কালো মুখ আঁচলে ঢেকে ঘাটপথে, আগান-বাগান দিয়ে ঘরে ফিরে আসে। ছি-ছি, কী লজ্জা কী লজ্জা! খোড়ো ঘরের চাপা অন্ধকারও
সেই লজ্জা ঢাকার মতো আড়াল দিতে পারে না। মনে মনে ভাবে, আসুক ব্যাটা হায়দার, ওই বারোভাতারি মাগিরে যদি জুতিয়ে না তাড়াতি
পারি, তবে আমিও রমজান হাজির বেটি নই।
পা দবদবিয়ে বাড়ি ঢুকল আমিনা। ভরা ভাদরের তাত
আর কতটুকু, মন-মাথায় যেন তার থেকেও বেশি তাপের
গুলিগোলা বর্ষণ চলছে। মুখটা তিতকুটে লাগছে। ওই হাড়বজ্জাত রফিকের মা-বুড়িকে মুখের
মতো জবাব দেওয়া গেল না, এটা যে কতবড়ো জ্বালা তা বুঝবে কেউ!
বুঝলে ওর কপাল এমন করে পোড়ে! অকালে হায়দারের বাপ গেল মেছোঘেরির হাঙ্গামায়। উপযুক্ত
ছেলে হায়দার, সে এখন জেলের ভাত খাচ্ছে। আর কী হা
কপাল পোড়া কপাল গো, ওর ভরা জোয়ানি বউটা বেবুশ্যে হয়ে গেল!
সত্যি হল, না মিথ্যে রটনা কেউ বুঝবে! ওই যে কথায়
বলে না যা রটে তার কিছুটা হলেও তো ঘটে। হায় হায় গো, কী
সুখের সংসার আমার দ্যাখো
সব চোখ মেলে!
এসব জ্বালাপোড়ার কথা কাকে বলবে, কে-ই বা বুঝবে! মনে মনে আকুল প্রার্থনা করে চলে
আমিনা, ও আল্লা গো, আমারে তোমার কাছে টেনি ন্যাও গো। আমি যে আর
পারি না গো।
ঘরে ঢোকার আগে কান খাড়া হয়ে গেল আমিনার। হ্যাঁ, যা ভেবেছে, তাই।
বেবুশ্যে মাগিটা আছে ঘরে। সাজগোজ করছে। আর ওই কী এক ফোন হয়েছে, কানে গুঁজে কথা বলা যায়, তাতে গানও শোনা যায়। সেই ফোন থেকে গান বাজছে।
হিন্দি গান। আমিনার মুখটা রাগে বেঁকে যায়। ও কি কালা! ওর কানে কি কিছুই যায়নি!
পাড়ার লোকে যে মুখ ভ্যাটকায়, ওকে দেখে চোখ
টেপাটেপি করে, চিপটিনি মেরে কথা বলে-- সেসব কিছুই কি জানে না ও! নাকি সব জেনেবুঝে চুপ
করে আছে! নাকি ঠোঁট উল্টে ‘বলুক গে যা খুশি’ বলে ডাঁট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে! বেড়াতেই পারে।
লাজলজ্জার মাথা খাওয়া মাগির কাছে মুখ ভ্যাটকানো কী, সাতকাহন
কথাই বা কী! ওসবের কোনও কিছুরই হুল-দাঁড়া নেই যে গায়ে-গতরে খোঁচাবে, পোড়াবে কিংবা একটু-আধটু জ্বালা-যন্ত্রণা দেবে!
গতর যার এঁটো, সে কি কথার চড়-থাপ্পড়ে ঘুরবে! বেশরম
মাগি। রফিকের মা-বুড়ির কথার চাপড়ে বন্ধ হওয়া মুখের কল এতক্ষণে খুলে যায়। বগবগিয়ে
জল পড়ার মতো গালাগালগুলো বুক ঠেলে উঠে আসে মুখের গোড়ায়। ফোকলা মাড়িতে যেটুকু বিষ
আছে, তাই দিয়ে বেশ করে মাখিয়ে নেয় কথাগুলো।
কিন্তু ওগরাবে কী, কাকেই বা ওগরাবে! ওকে দেখেই লতিফা
গানের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। কী আওয়াজ রে বাবা! যেন গাঁক গাঁক করে মাইক বাজছে। আমিনা
না পেরে লতিফার ঘরের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জোরসে বলে, ওরে
ও লাজখাগি মাগি, ও গু-খেয়োর বেটি--, বলি হায়া শরমের মাথা খেইচিস নাকি! খসম যার জেলে, সে কোন হুরুষে এমন সাজগোজ করে, গান শোনে আঁ!
গান বন্ধ হল না। লতিফা যেমন সাজগোজ করছিল, তাই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে রইল। আমিনা পা দাপিয়ে বলল, ওরে ও আবাগির বেটি, কতা কানে গ্যালো না নাকি!
এবার
গান বন্ধ হল। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এল লতিফার গলা। একেবারে টিনের চালে ঢিল পড়ার
মতো খনখনে গলা ছেড়ে বলল, খসম জেলে বলেই তো রসের গান শুনতিছি, নালি তোমার খেউড় শোনতাম।
ও হারামজাদি, তোর
জ্বালায় কি এবারে পাড়া ছাড়া হব! তোর নেগে যে কান পাতা দায় হল র্যা।
কান পাততি কে বলেছে! শুনো না।
না শুনলি হবে! মানুষজন নে বাস করি।
তা সে মানুষজন কি তোমারে একথালা ভাত বেড়ি দ্যায়!
তোমার ছেলেরে ছাড়াতি যায়!
বলতে বলতে ঘরের বাইরে আসে লতিফা। আমিনার দিকে
না তাকিয়ে বলে, তোমার সঙ্গে বকবক করার সময় নেই আমার, আমি চললাম।
আমিনা প্রায় চার হাতপায়ে ছিটকে ওঠে। দাঁত
ছিরকুটে বলে, ওরে ও ইবলিশের ছা, চললি কনে আঁ!
বসিরহাট যাব।
আঁ, ব্যাটা
আমার জেলে পচতেছে, আর তুই কিনা ফুর্তি মারতি চললি!
না গেলি চলবে! তোমার ওই চুলোয় আগুন জ্বলবে কী
করে! তোমার ওই মুখি বোল ফুটবে কী করে! কেউ দেবে!
তা বলে তুই যা খুশি তাই করবি!
লতিফা যেতে গিয়েও ফিরে দাঁড়ায়। মুখ ভেঙচে বলে, উঁ, অ্যাত
যদি দরদ, তবে যাও না ক্যানো জেল থে ছাড়িয়ে আনো
তোমার ছেলেরে--।
হ্যাঁ, সে
তো আসবেই একদিন-না-একদিন,
তখন দেখিস তোর
কী করি!
ওই ভেবে মুখি শান দাও, আমি চললাম।
বলে আর দাঁড়ায় না লতিফা। চটি ফটফটিয়ে বেরিয়ে
যায়। কেমন হেলতে দুলতে যাচ্ছে দ্যাখো! কানে আবার ফোন গুঁজেছে।কোনও দিকে ভ্রূক্ষেপ
নেই। একা ঘরে দাঁড়িয়ে বিষজ্বালায় জ্বলতে থাকে আমিনা।
ছেলে হায়দার জেল খাটছে ঠিকই, তবে চুরি-ডাকাতি কেস না। বাংলাদেশ থেকে মাল
আনা-নেওয়ার কাজ করত। অনেকদিন ধরেই করছে। এমন কাজ খানপুরের কে না করে! গাঁয়ের দু-পা
দূরে নদী ইছামতী। ওপারে বাংলাদেশ। মধ্যিখানে শুধু নদী ব্যবধান। মাল পাচার, গরু পাচার সবই চলছে, মাঝে মধ্যে মানুষজনও। এ নিয়ে পুলিশ বি এস এফ যে
ঝামেলা করে না, তা নয়। কখনও সখনও রাতবিরেতে হল্লা
পার্টির মতো হামলে পড়ে। যাকে সামনে পায় ধরে নিয়ে যায়। দু-দিন পরে ছেড়েও দেয়।
পুলিশের কেস দরকার। পুলিশ ধরবে। প্রতি মাসে দু-চারজনকে কেস খেতে হয়।
এভাবেই তো চলে। হায়দারের আয়পয় খুব ভালো না হলেও দু-বেলা ভাতের অভাব ছিল না।
মুখে বলত, হাতে টাকা ভালোমতো এলে ট্রেকার কিনবে, হাসনাবাদ-ভেবিয়া রুটে চালাবে।
তা ছেলেটা একটু রগচটা স্বভাবের। বেশি
কথাবার্তা ওর পছন্দ নয়। আমিনা আবার উল্টো স্বভাবের। তাই আমিনা মুখ খুললেই হায়দার
অ্যায়সা ধমক দেয় যে, পেটের যা কিছু হড়াস করে বেরিয়ে আসে
বুঝি। আমিনা যত বলে, ও বাপ আমার, তুই কী করিস, তোর
খোঁজে পুলিশ আসে কেন?
হায়দার ধমকে বলে, তা জেনে তোমার কী দরকার! তোমার কিছু অভাব আছে!
তা অভাব নেই সত্যি। মোটা ভাতকাপড় জুটে যাচ্ছে
ঠিকই। কিন্তু পেটের ছেলে কী করছে, সেটা ভালো না
মন্দ-- মা হয়ে সেটা জানবে না!
তবে মুখে না বললেও আমিনা জানে হায়দার মাল পাচারের
কাজ করে। হরেক কিসিমের মাল আসে যায়, বস্তাবন্দি, প্যাকেটবন্দি হয়ে। কখনও মালের সঙ্গে আসে
গরু-মোষ, কখনও মানুষজন। একদিন অমনভাবে এসেছিল
লতিফাও। সেদিন নতুন এক মোটর সাইকেলের পিছনে চাপিয়ে ওই মেয়েকে নিয়ে এসেছিল হায়দার।
আমিনা সেদিন খুব অবাক হয়েছিল। কার ঘরের মেয়ে, কারই
বা মোটর সাইকেল! মেয়েটা অবশ্য দেখতে শুনতে খারাপ না। রোগা, শ্যামলা গায়ের রং। চোখ টানা টানা। মাথা ভর্তি
চুল। চেহারায় বেশ চটক আছে। তবে আমিনা জানত পাচারের মাল, ঠিক চলে যাবে।
ও মা, সে তো যাবার নামও করল না। উল্টে
হায়দারের ঘরে গিয়ে সেঁধোল। দেখেশুনে আমিনার তো গালে হাত। থাকতে না পেরে শেষে
হায়দারকেই গাল পেড়ে বসে, ওরে ও আবাগির পুত, ওই আন ঘরের মেয়েরে তুই ঘরে তুললি! ও আল্লা গো এ
কী বিচ্ছিরি কাণ্ড!
হায়দার জোরসে ধমক দেয়, তা ও যাবে কনে!
যাবে কনে মানে! যেখানকার জিনিস সেখানে যাবে।
ঘরের বউ কি সেখানে যেতে পারে!
ঘরের বউ মানে!
বউ মানে বউ। ওরে আমি নিকে করিছি।
আর ওই মোটর সাইকেল!
ওর বাপ দেছে।
আমিনা এবার সটান উঠোনে আছড়ে পড়ে। কপালে করাঘাত
করতে করতে চিলচিৎকারে সারা পাড়া জানান দিয়ে বলে, ও
আল্লা গো, আমার কী সর্বনাশ হল গো! ওই ইবলিশের ছা, তুই মোটর সাইকেলের লোভে ওই সাতঘাটের জল খাওয়া
মেয়েরে ঘরে তুললি! হায় হায়, আমি কনে যাব গো! ও আব্বা গো, ও আম্মা গো--!
উত্তরে হায়দার কথা বলেনি। রান্নাঘর থেকে
চ্যালাকাঠ নিয়ে এসে আমিনার সামনে দাঁড়িয়ে
শুধু বলেছিল, আর একটা কতা বলবি তো এই কাঠ তোর পিঠে
ভাঙব।
না, আর
কথা বলার সাহস হয়নি আমিনার। তবে লতিফাকে যে ওর পছন্দ হয়নি এটা ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে
দিতেও ছাড়েনি। ওর ধারণা লতিফা মেয়েটা ঠিক সুবিধের নয়। আগে ক-টা ঘর পার করে এসেছে
কে জানে! নির্ঘাত ওই মাগি আর ওর বাপ মিলে জাদুটোনা করেছে হায়দারকে! মোটর সাইকেলের
লোভ দেখিয়ে একটা বাজে মাল গছিয়ে দিয়েছে। কোথাকার মেয়ে, স্বভাব কথা চরিত্র কেমন-- কে জানে! আমিনা শুধু জানতে পেরেছিল লতিফা আবাদ
শুলকুনির মেয়ে। ওর বাপ গরু কেনাবেচার কাজ করে। ও মেয়ের আগে একবার বিয়ে হয়েছে। ব্যস
এইটুকুই। কিন্তু আমিনার সন্দেহ যায় না। তখন থেকে ওর ধারণা লতিফার স্বভাব চরিত্র
ভালো না। ঘরের কাজকামে তো মোটেই মন নেই। আর ওই এক হয়েছে কানে গোঁজা ফোন, মোবাইল। দিনরাত গুজগুজ ফুসফুস, খিলখিল হাসি। হায়দার ঘরে থাকলে তার মোটর
সাইকেলের পিছনে বসে হাওয়া খেতে ছুটল। লাজলজ্জা বলে তো কিছু নেই। সবার সামনে
হায়দারের গায়ে হাত দিয়ে কথা বলছে। একদিন আমিনা দেখেছিল ওই ধুমসি মেয়ে হায়দারের
কোলে চড়ে আদর খাচ্ছে। ছি ছি, কী শরমের কথা!
তা এ মেয়ে কি ঘর করার, নাকি ঘর ভাঙার! এ যে বেবুশ্যে হবে, এতে অবাক হওয়ার কী আছে! সময়মতো যদি
বাচ্চাকাচ্চা হত তাহলেও কথা ছিল। মেয়েমানুষকে বশে রাখতে হলে বাচ্চাকাচ্চা ভালো
দাওয়াই। তা সেদিকে মন আছে ওদের! কতদিন কথাটা হায়দারকে ইনিয়ে বিনিয়ে শুনিয়েছে
আমিনা। তাতেও কাজ না হলে গাল পেড়েছে, ওরে
ও কাল খেকুরে, আমারে কি ড্যাকরা বানাবি! কবরে আমি কী
নে যাব, ও কানার মরণ! বলি শুনতি পাস না! আমারে
তুই নানা দে, নানি দে--।
হায়দার শুনলে তো! সে আছে তার তালে। ইদানীং তার
কাজকাম বেড়েছে। দিনরাত মোটর সাইকেল হাঁকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। খুব ব্যস্ত। মাঝে মাঝে
বাড়িতে লোকজন তুলে আনছে। কচিকাচা থেকে সবে জোয়ান। মেয়েই বেশি। দু-চারদিন থাকে, তারপর হায়দারই তাদের পৌঁছে দিয়ে আসে কোথায়। এই
নিয়ে লতিফার সঙ্গে খুটখাট লাগে। মাঝে মধ্যে ঝগড়াঝাঁটি, এমনকী মারধোর পর্যন্ত। এভাবে মেয়েমানুষ পাচার
করার কাজটা যে লতিফার মোটে পছন্দ নয়, সেটা
বলতে কসুর করে না। হায়দারের সাফ কথা, আমি
কি জোর করে এসব করি! ওরা নিজেরাই আসে। ইচ্ছে না হলে আসবে না। ভাত ছড়ালে কাকের
অভাব! কিন্তু লতিফা তা মানবে না। লেগে যায় ধুন্ধুমার। লতিফা কচি মেয়ে হলে কী, বড্ড মুখরা স্বভাবের। মুখের কোনও আটঘাট নেই।
একবার মুখ ছাড়লে বাড়িতে কাক-চিলও বসতে সাহস পায় না। তখন আমিনা বেওয়াকেও বোবা বনতে
হয়। তবে সেটা হয় কালেভদ্রে। এমনিতে চুপচাপ স্বভাবের লতিফা। কিন্তু রেগে গেলে কে
খসম আর কে-ই বা শাশুড়ি!
সেই রাগটা একবারই ফাটতে দেখেছিল আমিনা। সে কী
রাগরে বাবা! সেদিনও বাড়িতে মেয়েমানুষ এনেছিল হায়দার। লতিফারই বয়সি। খুব ফর্সা।
একেবারে হুরিপরি চেহারা। দেখেশুনে বেশ
ভদ্র ঘরের মনে হয়েছিল। খুব কাঁদছিল সে। ছিল দুটো দিন। দ্বিতীয় দিন রাতে লেগে গেল।
হায়দার ফিরতে মুখের লাগাম খুলে যাওয়া যাকে বলে, সেইভাবে
ফেটে পড়ল লতিফা। চিলচিৎকার করে হায়দারকে বলল, তুমি
এ কাম করবা না বলে দেলাম। যেখানকার জিনিস সেখানে দে এসো।
হায়দার স্বভাববিদ্ধ ভঙ্গিতে লতিফার কথা উড়িয়ে
দিয়েছিল। আমিনা বরাবরই ছেলের পক্ষে। সেও মুখ ধরেছিল, উরে
আমার ধম্মের বেগম সাহেবা এলেন রে! ছেলে মুখ দে রক্ত তুলে পয়সা রোজগার করতেছে, আর উনি ধম্মের বাণী শোনাচ্ছেন। তা এতই যদি
দোজখে যাওয়ার ভয় তা আচিস কেন এখানে!
লতিফা শুনলে তো! ওর কাছে শাশুড়ির কথার কোনও
গুরুত্বই নেই। হায়দারকে যাচ্ছেতাই ভাষায় গাল পাড়তে থাকে। ব্যস, এক
কথা দু-কথায় বেধে যায়। হায়দারও ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। সংসারে মেয়েমানুষ কথা বলবে, তাই শুনতে হবে নাকি! উরে বাপ, কে এলেন রে নবাবজাদী! হায়দার মুখে বেশি কথা বলে
না। সে হাতের কথায় বিশ্বাসী। সোজা রান্নাঘরে ঢুকে চ্যালাকাঠ নিয়ে এসে দমাদ্দম
পিটতে শুরু করে লতিফাকে।--
মুখে মুখে চোপা!
দ্যাখ কেমন লাগে! এত মার খাচ্ছে, তবু কি ওর মুখ
বন্ধ আছে! সপাটে চালিয়ে যাচ্ছে। আর হায়দারও তেমনি। যত চোপা করে তত মারের বহর বাড়ে।
আমিনা দাওয়ায় দাঁড়িয়ে সমানে উৎসাহ দিয়ে চলে হায়দারকে, মার-মার, মেরে
এক্কেরে মুখ ভেঙি দে।
এত যে মার খেল, তবু
কি ওর রোখ কমল! না। সাপের মতো ফোঁসফোঁসানি চলতেই থাকে। হায়দার আর কী করে! কতক্ষণ
হাত চালাবে! শেষে নিজেই হাল ছেড়ে দেয়। সেই রাতেই বেওয়ারিশ মেয়েমানুষটাকে নিয়ে চলে
গেল বসিরহাট। লতিফা আর কথা বলেনি। তাতে আমিনার জ্বালা থামবে কেন! অনেকদিন বাদে
হায়দার একটা পুরুষের মতো কাজ করেছে। লতিফা আসার পর থেকে আমিনা ভেবেছিল ছেলেটা বুঝি
পর হয়ে গেল। ওই জিনের হাতের পুতুল হয়ে গেল। সেটা যখন মিলল না, তখন আনন্দ হবেই। আমিনা সেই আনন্দে বিভোর ছিল।
আর তাতে খোঁচানোর লোভ সামলাতে পারল না। বলেই বসল, ওরে
হয়েছে তো! চ্যালাকাঠে পেট ভরেছে তো! অত যদি দোজখের ভয়, তবে আচিস ক্যানো, যা
না কোনও পির-ফকিরের ঘর কর না! হায়দার কী এমন খারাপ কামডা করেছে শুনি! পেটে ভাত আর
পরনে ত্যানা জুটতেছে তো, তাতেই তেল একেবারে টুপটুপিয়ে পড়তেছে।
তখনই লতিফা আবার ফোঁস করে ওঠে, লজ্জা করে না তোমার এমন কথা বলতি!
কীসের লজ্জা, অ্যাই
মাগি!
মেয়ে হয়ে একটা মেয়ের সর্বনাশ হচ্ছে সেটা দেখতি
লজ্জা হয় না! ছিঃ--!
ও বাবা! আমিনা মুখ বেঁকায়, এত মার খেয়েও বউয়ের মুখের তড়পানি কমেনি দেখছি।
আচ্ছা আসুক হায়দার, দেখি তোরে সিধে করা যায় কিনা!
কিন্তু হায়দারের আর ফেরা হয়নি। ওই বজ্জাত
বেওয়ারিশ মেয়েমানুষটা কোন ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়েছিল। চেঁচিয়ে লোক জড়ো করেছিল। তাতেই
হায়দারের বারোটা বেজে যায়। থানা-পুলিশ-কোর্ট-কাছারি কতকিছু। আমিনা ভেবেছিল এসব তো
নতুন কোনও ব্যাপার নয়। আগেও এমন হত, দু-দিন
বাদে হায়দার আবার হাসতে হাসতে চলে আসবে।
ও মা, কোথায়
কী! সপ্তাহ যায়, মাস যায়, হায়দারের
ফেরার কোনও লক্ষণই নেই। ব্যাপার যে গুরুতর এটা বুঝতে আমিনার সময় লেগেছিল। পাড়ায়
ফিসফাস, গুঞ্জন ক্রমে বেড়েই চলে। আর তখনই চোখ
পড়ে ওই লতিফার দিকে। খসম যার জেলে সে কোথায় হায়া-শরমের মধ্যে থাকবে, ঘরের মধ্যে মুখ লুকোবে, কথাবার্তা মোটে বলবে না-- সে কী করছে! রোজ সকাল হল, অমনি সেজেগুজে বেরিয়ে পড়ল। বলে, কোর্টে যাচ্ছি। কোর্টের নাম করে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে জানবে কী করে আমিনা! এখন পাড়ার লোকের
মুখ চাপা দেয় কী করে!
##
দিনের আলো ক্রমে নিভে যায়। লতিফা সেই যে গেছে
ফেরার নামও নেই। হায়দার জেলে তাই যা খুশি সে করতেই পারে। বলবে কে! বললেও বা শুনছে
কে! ও কি সেই মেয়েমানুষ যে বললে শুনবে! যে হায়া-শরমের মাথা খায়, সে কি কারও কথায় কান দেবে! মনে তো হয় না। আজ না
হোক কাল, হায়দার তো ফিরবে। ও মাগির কপালে
নির্ঘাত চ্যালাকাঠ নাচছে। আমিনা রান্নাঘরে ঢুকে কাঠকুটোগুলো ঠিকমতো সাজিয়ে রাখে।
যাতে হায়দারকে বেশি খুঁজতে না হয়। একনাগাড়ে প্রার্থনা করে চলে আমিনা, ও আল্লা গো, আমার
হায়দাররে ছাড়িয়ে দাও গো, আমি নাক-কান মুলছি গো আল্লা, আর ওসব কু-কাম ওরে করতি দোবো না। এবারটার মতো
মাপ করে দাও আল্লা।
কিন্তু এতসব প্রার্থনা সন্ধে হতে-না-হতেই
ফুরিয়ে যায়। ও মা দ্যাখো কাণ্ড, দুটিতে
মানিকজোড়ের মতো কেমন ঢুকছে বাড়িতে! একেবারে গায়ে গায়ে লেপটে আছে। বকম বকম তো
চলছেই। দেখলে মনে হবে না একজন জেল খেটে ফিরল, আর
একজন শরীর বেচে আসছে। যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে দুটিতে ঘরে ঢুকল। হা হা হি হি-- হাসির কত রকমফের।
দেখেশুনে আমিনার তো গালে মাছি। হায় হায় অ্যাদ্দিন বাদে ছেলেটা জেল থেকে ফিরল, একবার মা বলে কি ডাকল, দুটো ভালোমন্দ কথা কি জিজ্ঞেস করল! ওই সব্বনেশে
ঘরজ্বালানি পরভুলোনি মাগির পাল্লায় পড়ে কি সব বোধবুদ্ধি লোপ পেল হায়দারের! হায় হায়
কী হবে গো! কত কিছুই তো ভেবে রেখেছে সে। রান্নাঘরে চ্যালাকাঠগুলো গুছিয়েও রেখেছে।
কিন্তু দেখেশুনে মনে হচ্ছে সেগুলো আর কাজে লাগবে না বোধহয়। দাওয়ায় বসে আমিনা নিজের
কপাল চাপড়ায়।
হেই মা, কী
নিজের মনে বিড়বিড় করিস! হায়দার এতক্ষণে মায়ের কাছে এসে বসে।
ছেলের কথা শুনে আমিনা ভেউ ভেউ করে কেঁদে ওঠে।
অশক্ত হাতদুটো দিয়ে হায়দারকে জড়িয়ে ধরে। তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলে, ও হায়দার, বাপ
আমার, তোরে আমি কত কষ্ট করে মানুষ করেছি।
কোনও ডান-জিনের হাওয়া লাগতি দেইনি।
তাতে হলটা কী, অমন
মড়াকান্না জুড়েছিস কীসের জন্য!
ও বাপ, তোরে
যে জেনে ধরেছে। তোর খুন চুষতেছে ফুকফুক করে। তুই টেরও পাচ্ছিস নে।
কী যে বলিস ছাই মাথামুণ্ডু বুঝি না। কে কী
করেছে আমারে!
ও বাপ, তুই
কি একেবারে অন্ধ হয়ি গেলি! তোরে জেলে পাঠিয়ে ওই রূপখাগি মাগি কী অঙ মারাতি যেত, শুধো উয়ারে। পাড়ায় যে কান পাতা দায় হল রে। এরপর
যে এখানের বাস ওঠাতে হবে রে বাপ।
তুই ওরে দেখতি পারিস নে বলে যা খুশি তাই বলবি!
ওর জন্য তোর ছেলে আজ তোর সামনে এসে দেঁড়িয়েছে। ও রোজ জেলে যেত আমার সঙ্গে দেখা
করতি, তারপর কোর্টের হ্যাঙ্গাম সব ও পুইয়েছে।
ওই তো আমারে ছাড়িয়ে এনেছে,
বুইলি!
আমিনা এবার সজোরে নিজের কপালে চাপড় মারে, ও বাপ, তুই
ওরে শুধো তোরে কেমনে ছাড়িয়ে আনল, অত টাকাপয়সা ও
পেল কেমন করে! শুধো ওরে বাপ! এই ঘর থে বার হ, শোন
পাড়ার লোকে কী বলে!
লোকের কথা বাদ দে দিনি। ওদের খেয়েবসে কাজ নেই, শুধু কুচ্ছো গাইতি পারে। হায়দার এবার রেগে যায়, এত লোক লোক করতিছিস, ওরা কি আমারে কোনও দিন দেখতি গেছে! নাকি
টাকাপয়সা দে সাহায্য করেছে! ফালতু লোক লোক করিস নে তো। শুনলি মাথা গরম হয়ি যায়।
তা তোর বউ সেই টাকাপয়সা পেল কোথা সেটা জানতি
চাইবি নে! নাকি সেটাও জানতি নেই! ওই বেবুশ্যেগিরির টাকায় তুই হা হা হি হি করিস, তোর লাজ হায়া নেই! বিশ্বাস না হয় জিগা তোর বউরে, জিগা--!
এত কথায় কী বুঝল ছেলে, পিচিক করে একদলা থুতু ফেলে বলল, বাদ দাওদিনি, তোমার
খেয়েবসে কাজ নেই তাই ওসব ভাবো। বলে হায়দার ওর ঘরের দিকে ফিরে বলল, হেই লতিফা, মা
কী বলতেছে!
আধো অন্ধকার ঘর থেকে জবাব ভেসে আসে, যা বলতেছে সে তো শুনতি পাচ্ছ।
না মানে এটা তো আমারও কথা, তুই এত টাকাপয়সা পেলি কোথ্থেকে! কে তোরে এত
টাকা দিল! তোরে যে গলার হারটা দিছিলাম সেটা কি বেচি দিলি!
সে হার তো কবেই তুমি খ্যায় দেছ।
তবে! তুই কী বেচলি?
তুমি যা বেচতি গে জেলে গেছ, আমি তাই বেচে তোমারে ছাইড়ে এনিছি।
কী বললি হেই মাগি--! হায়দার দপ করে জ্বলে ওঠে, শালি তোর লজ্জা করল না এ কথা বলতি!
ঘর থেকে সপাটে উত্তর আসে, লজ্জা করবে কেন! তুমি আন মেয়েরে বেশ্যা বানিয়ে
রোজগার করতি পারো, এতে যদি তোমার লজ্জা না করে, আমার করবে কেন!
এতবড়ো কথা, হেই
শালি আজ তোর একদিন কি আমার একদিন--। বলতে বলতে
হায়দার ছুটে যায় ঘরে। কিন্তু যে বেগে গিয়েছিল, সেই
বেগেই ছিটকে চলে এল ঘরের বাইরে, ও আম্মাগো আমারে
কেটে ফেলল গো--!
আমিনা এতক্ষণ দোয়া পড়ার মতো একনাগাড়ে
ছেলে-বউয়ের বাপ চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করছিল, সেইসঙ্গে
নিজের পোড়াকপালের দোষারোপও চলছিল। হায়দারের ওই মরণ আওয়াজ শুনে মুহূর্তের জন্য থমকে
যায় আমিনা, তারপর প্রায় চার হাত পায়ে ছুটে আসে, ওরে ও খানকি মাগি, তোর কি শরীল ঠান্ডা হয়নি! হেই বারোভাতারি আমার
ছেলেডারে কী করলি বল--?
বলতে বলতে আমিনা লতিফার ঘরে ঢোকে। ও মা কী কাণ্ড!
বউয়ের হাতে ধরা লম্বা কাটারি, চকচক করছে তার
গা। একেবারে খাড়া হয়ে আছে ওর হাতে। যেন কোপ মারতে উদ্যত। আর ওই বারোভাতারি মাগিরে
দ্যাখো, হাতে কাটারি দুলিয়ে কেমন ভেউ ভেউ করে
কাঁদতে লেগেছে! ও বাবা, মাগির একচোখে জল অন্যচোখে যে আগ জ্বলে--! আমিনাকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে, মা-- ও
মাগো--!
যতবার ওইরকমভাবে ডাকে, ততবারই আমিনার বুকের ভিতরটা চিড়িক চিড়িক করে
ওঠে। হায় আল্লা, এ আবার কোন পোকার কামড় গো! ওই মা-মা
ডাকের সঙ্গে বুকের ভিতর তো বটেই, সারা শরীর কেমন
চিড়িক চিড়িক করে উঠছে! ও আল্লা, এ আমার কী হচ্ছে
গো! কোথায় কোন অতল থেকে একটা যন্ত্রণা পাকিয়ে পাকিয়ে উঠছে যে! আমার বুক কেন কাঁপছে, চোখ কেন ঝাপসা হচ্ছে গো! যন্ত্রণাকাতর আমিনা
টাল খেতে খেতে এগিয়ে যায় লতিফার দিকে।
উঠোনপাড়ে বসে হায়দার নিজের হাত পরখ করছিল। ওফ, খুব বাঁচা বেঁচে গেছে। আর একটু হলেই কোপ
খাচ্ছিল আর কী। চামড়ার উপর তার রেশ রয়ে গেছে এখনও। জায়গাটায় সরু সুতোর মতো একটা
লাল রেখা ফুটে উঠছে ক্রমশ । হাত নিয়ে এত মশগুল ছিল হায়দার যে খেয়ালই করেনি ঘরের
আওয়াজ থেমে গেছে। এতক্ষণে হায়দারের সংবিৎ ফেরে। কী ব্যাপার, একটু আগে মা যে তুরকি নাচন লাগাচ্ছিল, হঠাৎ চুপ মরে গেল কেন! ঘরটা যে একেবারে বরফের
মতো ঠান্ডা মেরে গেছে!
অদম্য কৌতূহলে গুটিগুটি পায়ে এগোয় হায়দার। ঘরে
উঁকি দিয়েই চমক খায় সে। দ্যাখো কাণ্ড, ওই
বেবুশ্যে মাগিটা মা-র কোলে মুখ গুঁজে হু হু করে কেঁদে চলেছে, আর আমিনা বেওয়া শক্ত মুখে ওর মাথায় হাত
বুলোচ্ছে! আই শালো, এ কী ব্যাপার রে--!
হায়দার ঘরের মধ্যে ঢুকতে যায়। তখনই চিলচিৎকার
ওর কানের পর্দা প্রায় ফেটে যায়, খপরদার, নিজেরে যদি শোধরাতি পারিস তবেই এ ঘরে ঢুকপি বলে
দেলাম--।
হায়দার অবাক হয়ে যায়, আই ব্বাস, এ
কী আজব কাণ্ড! লতিফার কাটারি এখন আমিনার
হাতে, সাপের ফণার মতো দুলছে! এই বুঝি ছোবল
বসাল!
লেখক পরিচিতি
অনিল ঘোষ
জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট শহরে, নদীর তীরে। সেখানেই বসবাস, পড়াশোনা। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ। বাঁধাধরা চাকরির পথ ছেড়ে প্রায় বাউণ্ডুলে জীবনযাপন। কখনও টিউশানি, কখনও সাংবাদিকতা। বর্তমানে কলকাতার প্রকাশনা জগতের সঙ্গে যুক্ত।
পরিচয় পত্রিকার দপ্তর সম্পাদক। সম্পাদিত পত্রিকা ইছামতী বিদ্যাধরী।
লেখালেখির সূত্রপাত স্কুল থেকে। এ পর্যন্ত গল্প-উপন্যাস-নাটক ও অন্যান্য রচনা মিলিয়ে তেরোটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থÑÑ রণক্ষেত্র, চারাগাছ ও অন্যান্য গল্প, নিউ জার্সির ফোন,মহাযুদ্ধের পটভূমি (গল্প সংকলন), প্রান্তরের গান (উপন্যাস), নির্বচিত নাটক (নাটক), অকিঞ্চন কথামালা (কবিতা), শ্রেষ্ঠ শিখা, বিষয় বসিরহাট (সম্পাদনা) প্রভৃতি।
২০০৭ সালে ছোটোগল্পের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার প্রাপক।
0 মন্তব্যসমূহ