ভাষা খুব সহজে বদলায় না। তার পরিবর্তন অতি ধীর। অতি দীর্ঘ জীবনচর্যার ফসল সেসব। এতো সহজেই বুঝি বলা যায় না “আমরা আলাদাই।“
--জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
আপনার জন্ম
কুষ্ঠিয়ায়, বাড়ি পাবনা, পড়াশুনা করেছেন বগুড়া-ঢাকায়, ৭৪কে সরিয়ে ৭৫-এর দিকে পা রাখছেন। তো, জ্যোতিদা, জীবন
নিয়ে কী ভাবেন?
জন্ম আমার
কুষ্ঠিয়ায়, পৈত্রিক বাসস্থান পাবনায়, লেখাপড়া বগুড়া-ঢাকায় শুধু নয়, ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, মিজৌরী এইরকম নানা জায়গায়। কর্মক্ষেত্র ও বাস
ঢাকা, পেনসিলভেনিয়া, ইলিনয়, লুইজিয়ানা, নিউ ইয়র্ক, কলোরাডো
ইত্যাকার নানাস্থানে। জীবন নিয়ে ভাববার সময় খুব পেলাম কৈ? বয়স-ই কেবল বেড়েছে, জীবন অনিত্য, অসার
কী মায়াবৎ, অথবা পদ্মপত্রে নীরবৎ অথবা জীবন মানেই
আনন্দ, ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ, এসব
ভাববার সময় হয়নি খুব। তাই ভাবিও না। আমার
স্মৃতিকথা সময় ভোলে না কিছু গ্রন্থে একটি লেখা আছে, নাম
‘জীবন বাড়ালে হাত সহজেই ধরি’। নামের মধ্যেই জীবন নিয়ে আমার ভাবনা ধরা আছে।
জীবন যখন যে-পথে নিয়ে আমায় বাঁচিয়েছে, তেমনি
বেঁচেছি। সে সামনে চলেছে,
আমি পেছনে। এই
কথার মধ্যে কিঞ্চিৎ নিয়তি-নিয়তি গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে কী?
হাহাহা, তা মনে একটু পাচ্ছি তো!
না, ওসব কিছু নয়। ও-রকম কিছু ভাবি না। জীবন বাঁচায়, তাই বাঁচি।
বিচিত্র আপনার
পেশাগত জীবন,-- আচ্ছা, আপনার
লেখালেখির ক্ষেত্রে কোন সব ঘটনা দারুণ প্রভাব রেখেছে বলে আপনার মনে হয়!
শুনুন তাহলে,-- স্কুলের শেষ ক্লাসের কালে বন্ধুবান্ধবসহ হাতে
লেখা পত্রিকা প্রকাশই কি?
অথবা কলেজ
বার্ষিকীর জন্যে গল্প, কবিতা, রম্যরচনা
যা-ই লিখেছি, স্বনামে বেনামে ছাপিয়ে দিয়েছিলেন
বার্ষিকীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক। সেটিই আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছিল অথবা প্রভাব
ফেলেছিল! সম্ভবত নয়, তারও চেয়ে বড় মনে হয় ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে একসাথে লেখালেখি করা : সেবাব্রত
চৌধুরী, হায়াৎ মামুদ, হুমায়ুন চৌধুরী, শামসুল
হক-- এই সকলে মিলে। এনামুল হক সম্পাদিত
দ্বিমাসিক উত্তরণ-- এর কথাও মনে আসে। আমি সহকারী সম্পাদক ছিলাম। তবুও ‘এ-সব
“দারুণ’ প্রভাব
ফেলেছে বলা যায় কি?
নিশ্চয়ই হাহাহা
“জল পড়ে পাতা নড়ে”র মতো নিশ্চয়-ই- না হাহাহা...
হাহাহা, ঠিকাছে, এবার
ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি,-- আপনি শুরু করলেন, রহস্য উপন্যাস দিয়ে, যা অসমাপ্ত আকারেই রাখলেন, কিন্তু লেখালেখি বলতে যা বোঝায় তা শুধু গল্প
নিয়ে থাকলেন! আপনি গল্পসৃজিত মানুষ হয়ে কেন থাকলেন! নাকি আপনার মানসিক গড়নটাই এমন
যে আপনার আর কিছু সেইভাবে আর লেখা হলো না!
সম্ভবত এই
কথাটাই ঠিক। মানসিক গড়ন-ই এমন। দীর্ঘ, বিস্তৃত
রচনার আমার স্ফুর্তি আসে না। নিজের কথা বলবার জন্যে, নিজেকে
প্রকাশ করবার জন্যে যতো কম কথা বলা যায় সেটিই আমার অন্বিষ্ট। ‘মিতভাষী’ বলে
কি একে? গল্পের বেলায় কি এমন করা চলে? পাঠকের কাছে বিশদভাবে জীবনের কথা বলা আমার হয়
না। আভাসে, ইঙ্গিতে, বিদ্যুৎ
চমকের মতো মুহূর্তে ভেসে যাওয়া স্বপ্নজীবনের কথাই বলি আমি। ঠিক-ই, মনের গড়নই বুঝি এমন। অবশ্য দীর্ঘাকার না-হলেও গল্পের বাইরে
বিভিন্নরকম গদ্য রচনাও কিন্তু আমার খুব কম নয়। উপন্যাস লিখিনি-- এই আর-কি!
লেখালেখির জন্য
মানসিক প্রস্ততি, পরিবেশ একটা বড়ো ব্যাপার? তা না হলে ষাট দশকের শেষে এসে একেবারে প্রায়
দুই দশকের গ্যাপ দিলেন, আবার লিখতে শুরু করলেন!
মনে হয় তাই।
ঊনসত্তরে আমার লেখা শেষ গল্প ‘পুনরুদ্ধার’। তার পরের গল্প ‘দিন ফুরনোর খেলা’ প্রকাশিত
হয়েছিল সাতাশিতে। প্রায় দু’দশক তো বটেই। বিদেশে দীর্ঘকাল লেখাপড়া, পড়ানো ইত্যাদির শেষে বেশ কিছুকালের জন্যে দেশে
ফিরেছিলাম ঐ-সময়। সামান্য কয়েক মাসের মধ্যেই চারটি গল্প লিখেছিলাম। শুভানুধ্যায়ীরা
বলেছিলেন, দেশে ফিরেছি বলেই লেখা হচ্ছে। তারপরে
আবার বিদেশে ফিরে গেছি। এবং ঐরকম যাওয়া-আসার মধ্যেই কেটেছে এতোকাল। তবে আবার লেখা শুরু করবার পরে আর ঐরকম
দীর্ঘসময়ের জন্যে বন্ধ থাকেনি। মাঝখানে প্রায় দশ বছর তো দেশেই আমার ঠিকানা ছিল।
লেখালেখির প্রথম দশ বছরে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন-চারটি। শেষের কুড়ি বছরে
অন্তত পঁচিশটি। মানসিক প্রস্তুতির তো প্রয়োজন
অবশ্য-ই। পরিবেশ তো নিঃসন্দেহে।
আপনি আপনার
গল্পজগতে রিয়েল ফিকশন বলে যা বোঝাচ্ছেন তা তো আপনার গল্পলেখার শুরুতে ছিল না!
একেবারে অত প্রস্তুতি নিয়ে গল্প লেখার প্রয়োজন আছে কি?
না, ছিল না। অথবা তাই কি? আমার প্রায় প্রথম দিকের গল্প ‘পরমাত্মীয়’র
কথা অনেকে বলেন। ঐ গল্পটিতে কিন্তু প্রকৃত-ই রিয়ালিটিকে ‘ফিকশন’-এর
চেহারা দিয়েছি। ‘সিনিক রিকন্সট্রাকশন’ প্রচুর ছিল, অবশ্য
প্রচুর ফিকশনাল ইমেজারি-ও ছিল। এমনি করেই আমার গল্প হয়। প্রায় প্রথম থেকেই। আমি আমার লেখা প্রায় কোন
গল্পের কথাই ভাবতে পারি না ‘রিয়ালিটি’র চাদরে যেটি মোড়া নয়। হরহামেশা ঘটে এমন
রিয়ালিটি নয়, আমার নিজ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বাস্তব। এটিকে কি মনে হয় অনেক প্রস্তুতি নিয়ে আয়ত্ব করা?
আগের কথাই বলি
আবার-- আমার মনের গড়ন-ই অমন, লেখার ধরনই অমন।
আমরা মূলত এমন
এক ন্যাচারেল গল্পকারদের জমিনে বাস করি, যেখানে
মনে হয় গল্পের ওরাল ফর্মই মানে আমাদের দাদা-দাদি, নানা-নানী, বা বাপ-চাচারা সেই জগতের মূল আয়োজক, সেখানে এত প্রস্তুতি নিয়ে নিজেকে আলাদা করার
সাধনা নিয়ে আপনি কেন গল্প লিখতে গেলেন!
‘ওর্যাল ফর্ম’-এর ব্যাপারটা আমি ভালো বুঝি না। সেটি কি আদিম
সমাজের গুহাবাসী মানুষের মধ্যে মুখে মুখে গল্প বলার রেওয়াজ, না আরো পরে পিদিমের আলোয় দাদা-দাদি, নানা-নানির মুখ থেকে শোনা গল্প-- দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার যেসব তাঁর ঠাকুরমার
কিংবা ঠাকুরদার ঝুলিতে ভরে দিয়েছেন। অথবা ‘কথক’-এর মুখে বলা গল্পকাহিনী বা ‘পালা’!
আমি বলতে চাইছি, মুখে মুখে গল্প ছড়ানোর একটা বিষয় তো আছে?
কিন্তু ভাবুন, ঐ মুখে মুখে বলা গল্পও তো লেখার পরে আর ওরাল
ফর্ম-এর অনুগত থাকে না। আর যদি ওরাল ফর্মকে মূলত ঘটনার বর্ণনা, কাহিনী পরম্পরা, পরিবেশ
ও প্রকৃতির আশ্রয়ে গল্পের পাত্র-পাত্রীর আচার-আচরণ ইত্যাদি বর্ণনামূলক সমান্তরাল
কি প্যারালাল ফর্ম মনে করা হয়, তবে বলা যাক সেই
ফর্মও বহুলাংশে পাল্টেছে। গল্প বলার ধরনটা হয়তো অমন-ই আছে, কিন্তু গল্পটি আর তেমন নেই। সে-জন্যেই গল্পটির
চেহারা স্পষ্ট করবার জন্যে একটি ভিন্ন ফর্ম-এর আশ্রয় নেয়া। এমনি করেই গল্পের ওরাল
ফর্ম আর চালু থাকে না। আর ‘ওরাল ফর্ম’ যদি
বৈদ্যুতিক বিন্দু- নিশ্চয়-এর মাধ্যমে গল্প বলা-শোনার কথা বোঝায়, তাহলে ঐ ফর্ম আমাদের কথাবার্তায় এখনো স্থান করে
নেয়নি। গল্প উপভোগের অভ্যাসেও।
সব শিল্পীই নিজ
নিজ স্বাভাবিক জগতে বাস করেন। কিন্তু সেই ‘ন্যাচারাল’ জমিনে বাস করেও তাঁরা যখন নিজকে প্রকাশ করেন
তখন সেটি ন্যাচারাল জমিনকে ট্র্যানসেন্ড করে যায়। মানে ভিন্ন জমিনে চলে যায়।
কিন্তু সেটি আপাতদর্শন, মূলত তিনি তো আছেন নিজ ভূমিতেই।
গুহাবাসীদের আঁকা ছবির কথা ভাবুন, এবং ভাবুন
কালিদাস কর্মকারের আঁকা ছবির কথা। উভয়েই কি নিজ ভূমিতেই স্থিত নন? প্রকাশের ধরনটাই যা আলাদা। আর নিজস্ব একটি
প্রকাশভঙ্গি আয়ত্ব করবার জন্যে কি কিছু প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না?
আচ্ছা, আপনি সাধারণত প্রমিত ভাষা ব্যবহার করলেও আপনার
সৃজিত সেই ভাষার যে অন্তর্গত টান, তা কিন্তু পায়
সাধুভাষার দিকেই, তৎসম শব্দও আপনি প্রচুর ব্যবহার করেন।
লোকায়ত আবহ আপনি এভোয়েডই করেন বলা যায়! কেন?
আমার রচনায় তৎসম
শব্দের ব্যবহার বেশি থাকে ঠিক, কিন্তু সেই
সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে তদ্ভব শব্দের ব্যবহার-ও
আছে-- দেশি, বিদেশির-ও।
যখন যেমন প্রয়োজন হয়। এ-কারণে প্রমিত ভাষা ব্যবহার করলেও টানটা সাধুভাষার দিকে মনে
হতেই পারে। কিন্তু এর বিপরীত দিকটা ভাবুন। প্রমিত ভাষা ব্যবহার করছেন, অথচ তার টানটা রইছে আঞ্চলিক ভাষার দিকে-- খুব সুখকর হবে কি?
‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আর “নীরস
তরুবর’ এর লোকায়ত উপমাটা ভাবুন!
না, লোকায়ত আবহ আমি আদৌ এড়িয়ে চলি না। আমি সেটিকে
যে আবরণে পরিবেশন করি সেটিই তার ভিন্ন চেহারা দেয়। লোকায়ত আবহ এড়িয়ে চলি এমন মনে করার কারণ এই হতে
পারে যে আমি আমার গল্পটিকে অন্য সকলের গল্প থেকে আলাদা করতে চাই।
তা ইচ্ছা করেই
করেন!
তা বলতে পারেন, আমার অধিকাংশ গল্প লোকায়ত জীবনের গল্প। আমার ‘ফিরে যাও জ্যোৎস্নায়’, ‘ জল্পপরী তো নাচবেই’ , ‘গল্পকল্প ও বাঁচামরার জীবন’, এমন কি সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিবি হাওয়ার আপনজন’ গ্রন্থসমূহের গল্প সে-কথাই প্রমাণ করবে।
আপনার গল্প পড়তে
পড়তে আমার এটা বারবারই মনে হয়, আপনার গল্পে
জনপ্রিয়তার কোনো উপাদান নাই। এটাকে আমি ভালোই বলছি-- আপনি
কি এ বিষয়টি নিয়ে কোনো ভাবনায় থাকেন?
‘জনপ্রিয়তার উপাদান’ ব্যাপারটা আমি ভালো বুঝি না। সেটি কী?
হাহাহা, আমি আপনাকে কী বলব! কথাশিল্পের চটুল, মন-জাগানিয়া, চিত্তচাঞ্চল্যের
লঘুধারা আছে না?
ও তাই! ‘ছোট গল্প’ একটি
আধুনিক শিল্প মাধ্যম। সব পাঠকের এই মাধ্যমটির সঙ্গে সম্যক পরিচয় থাকে না। অনেকেই
মোটা দাগের গল্প বা কাহিনী পছন্দ করেন।
কাহিনীর বা ঘটনার শিল্পসম্মত পরিবেশনা নয়। এটি আমি বুঝি। আর বুঝি বলেই আমার
সব গল্পেই পাঠপ্রিয়তা ব্যাপারটার ওপরে খুব জোর দিই। যেনো গল্পটি পড়তে ভালো লাগে।
একবার পড়বার পরে যেনো আবার পড়তে ইচ্ছে করে ঐ লেখাটি। শিল্পরূপটি বোঝার জন্যে। ‘জনপ্রিয়তা’ সকলের
ভাগ্যে জোটে না। সব ভাষার,
সব দেশেই এমন
লেখক থাকেন। জেমস জয়েসকে আপনি কি খুব
জনপ্রিয় লেখক বলবেন? হোসে সারামাগো, অধরা বাস্তবতার লেখক, তিনিই কি খুব জনপ্রিয়?
না, না, তা
কেন? আচ্ছা, আপনার
প্রথম দিককার গল্পে যে শিকড়লগ্নতা আছে, তার
সাথে দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থাৎ নয় দশকের পরের গল্পে বিদেশি সাহিত্যের ছাপ বেশি।
উপমার জায়গায় সাঙ্কেতিকতার ব্যবহার বেশি দেখছি।
তবে এর সাথে রাজনৈতিক বাস্তবতা আপনি বরাবরই ইশারায় দিয়ে রাখেন। আমার কেন
জানি মনে হয়, আমাদের এই কষ্টাকষ্টির বাংলাদেশে
সামাজিক-রাজনৈতিক পেষণ আরও জ্যান্তভাবে আসতে পারত!
কষ্টাকষ্টির বাংলাদেশে সামাজিক-রাজনৈতিক পেষণের গল্পতো
অনেকেই লিখছেন, জ্যান্তভাবেই নিশ্চয়-- আমিও লিখি। বুঝি অতো জ্যান্ত নয়। আমার কয়েকটি
গল্পের উল্লেখ করি, নব্বুই-এর পরে লেখা গল্পই, যেমন ‘ফিরে
যাও জ্যোৎস্নায়’, ‘যে তোমায় ছাড়ে’, ‘শূন্যগসনবিহারী’, ‘নামহীন
ফিরিবে সে নীল জ্যোৎস্নায়,
‘হিমজীবন’, ‘জলজকুসুম, ‘হিম
চন্দ্রাতপে’, ‘যদি পাখি না ওড়ে’, ‘নিরালোক নগরী ও স্থিরজলে পারাপার’ ইত্যাকার নানা গল্পেই কষ্টাকষ্টির বাংলাদেশে
কষ্টে বেঁচে থাকা, মরে যাওয়া মানুষের কথাই লেখা-- সামাজিক ও রাজনৈতিক পেষণের-ও। হয়তো যথেষ্ট জ্যান্ত নয়! এ-জন্যেই চোখ এড়িয়ে যায় অনেক পাঠকেরই--
যেমন, আমার সাম্প্রতিক একটি গল্প ‘দেহাবশেষ’ও
তেমন কারো চোখে পড়েনি। কষ্টে মরে যাওয়া মানুষের দেহাবশেষ কোলে নিয়ে কষ্টে বেঁচে
থাকা আর এক মানুষের গল্প।
আমার প্রথম
দিকের গল্পের শিকড়লগ্নতার ও
নব্বুই-পরবর্তী গল্পে বিদেশি
সাহিত্যের ছাপ-এর পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা
বল্বার আছে। শিকড়লগ্নতার বিষয়টি মেনে
নিয়েও বলা যায়, পরবর্তী সময়ের গল্পসমূহও এমন কিছু
শিকড়বিচ্ছিন্ন নয়। তবে স্পষ্টতই সময় ও লেখকের অভিজ্ঞতা ও মানসিক পরিণতি এইসব
গল্পকে ভিন্ন আবহে স্থাপন করেছে -- যেটিকে বিদেশি
সাহিত্যের ছাপ বলে মনে হতেও পারে। আমি দীর্ঘকাল বিদেশে, বিদেশের জীবন ও বিদেশি সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত, তার কিছু ছাপ পড়তেই পারে লেখায়; বিশেষত অবয়বে, কিন্তু
হৃদয়ে নয়। যদিও ভাবি কেন এমন মনে হয় না যে আমাদের বাংলা ভাষার কিছু বিশুদ্ধ বাঙালি
লেখক মানসিক পরিণতি ও রচনাশৈলীর এমন স্তরে পৌঁছেছেন যে তাঁদের রচনাশ্রিত জীবনচেতনা
ও বোধ বিদেশি সাহিত্যের সমান্তরাল বলে ভ্রম হয়! কেননা আমরা জানি না কোন দেশের
সাহিত্যের তুল্য সেটি। কেন এমন মনে হয় না যে আমাদের এইসব লেখায় বিদেশি সাহিত্যের
ছাপ নয় বরং যে জীবনচেতনা,
বোধ, মানসিকতা স্পষ্ট করে তা এখনও আমাদের কাছে যথেষ্ট
পরিচিত নয়। তবু-ও সেটি আমাদেরই,
বিদেশের নয়।
আপনার গল্প
বুঝতে গেলে সিরিয়াস পাঠক হওয়া বিনে উপায় নাই! পাঠকের সাথে হৃদ্যতার বিষয়টা ভাবেন
কি?
খুব-ই ভাবি।
ভাবি বলেই তো চেষ্টা করি,
গল্প পাঠের
শুরুতেই গল্পের পাঠপ্রিয়তা যেন পাঠককে তাৎক্ষণিকভাবে আকর্ষণ করে। পরে গল্পের গভীরে ঢুকে কিঞ্চিৎ
অস্বস্তির মুখোমুখি হলেও সেটি যেন তার ঔৎসুক্য বাড়ায়। এইরকম যখন ঘটে, তখন তো সে সিরিয়াস পাঠক-ই। সাধারণ পাঠক-ই
সিরিয়াস পাঠক হয়ে যাক-- এই আমার আশা থাকে। হয়তো মেটে না। তবুও
গল্পের পাঠপ্রিয়তার দিকে নজর দিতে ভুলি না, যদি জনপ্রিয়তার শিকে ছেঁড়ে!
এবার গল্পের
আলাপে আসি, আপনি ট্রাডিশনাল গল্পের বাইরে মনোজগতের
বোধের বিষয়কে ধরে গল্প লিখছেন-- এতে আপনি নিজে
আলাদা হলেন, কিন্তু হাসান, ইলিয়াস, কায়েস
বা মাহম,ুদুল হকরা কি তাদের মতো করে প্রত্যেকে
আলাদা নন?
অবশ্য-ই তারা
প্রত্যেকে আলাদা। তাদের-ও নিজ নিজ
স্বাতন্ত্র্য আমার মতো করেই অর্জন করতে হয়েছে। আমার স্বাতন্ত্র্য কিঞ্চিৎ বেশি
প্রকট, এই কারণেই এতো চোখে পড়ে। আর মনোজগতের
বোধের বিষয়কে নিয়ে লেখা, সে তো আধুনিক ছোটগল্পের চিহ্ন। হাসান, ইলিয়াস, মাহমুদুল, কায়েস
এঁদের লেখা কি মনোজগতের বোধে পরিব্যাপ্ত নয়?
তা ঠিক!
সব সার্থক
ছোটগল্পের মূল প্রোথিত মনোজগতের বোধেই। কথাটা বুঝি বেশি সাদামাটা হয়ে গেল,--
তো ব্যাপারটা
এরকম-ই।
তাদের
গল্প-প্রণোদনা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
আগের কথাটাই
এখানে আবার বলতে হয়। হাসান,
ইলিয়াস, মাহমুদুল, কায়েস-- এঁদের গল্প-প্রণোদনা আমার চাইতে এমন কিছু ভিন্ন
নয়। খিন্ন, ক্লিন্ন, যন্ত্রণাবিদ্ধ
মানুষ, বলা যাক জনগণ, - তাঁরাই তো ওঁদের রচনার-ও অনুপ্রেরণা, আমার মতোই। সমাজ, রাজনীতি, প্রকৃতি, পরিবেশ, মনোজাগতিক টালমাটাল সব-ই শেষে মনোজগতের বোধের
বিন্দুতে এসে স্থির হয়।
আমার খুবই প্রিয়
একটা গল্প হচ্ছে ‘কেষ্টযাত্রা’-- দারণ তার এরেঞ্জমেন্ট! আচ্ছা, এখানে কেষ্টবাবুর একটা হাহাকার আছে, একটা পাওনা আছে, কিন্তু
তা গল্পে খোলাসা করা হয়নি! সেটা কি!
আপনার ‘কেষ্টযাত্রা’র
উল্লেখে কায়েস আহমদের কথা মনে পড়ল। ‘কেষ্টযাত্রা’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিকীতে প্রকাশিত
হয়েছিল। গল্পটি পড়বার পরে কায়েস নাকি ঘোরগ্রস্তের মতো রাস্তায় ঘুরে
বেরিয়েছিলেন। তাঁর মুখ থেকেই শোনা।
লিখেছেন-ও তিনি এ-কথা। হাহাকারটি তো স্পষ্ট-ই সীমাহীন। অন্ধকার, লাঞ্ছনার, বঞ্চনার, অপমানিত জীবনের হাহাকার,-- পাওনাটিও তেমনি। সব মানুষ-ই সমান অধিকার, বলা যাক পৃথিবীর কাছে পাওনা নিয়ে জন্মায়।
রাষ্ট্র, সমাজ, সময়, ব্যক্তিগত দীনতা, হীনজীবন
ক্রমে ক্রমে তাকে সেই পাওনা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
‘পরমাত্মীয়’ও আমার প্রিয় একটা গল্প--
গল্প যে কত
শক্তিশালী কিছু হতে পারে,
এ তারই উদাহরণ।
এর বহু তল আছে, ভাষার জাদুময়তা তো আছে, যেন শব্দের কিউবিজম! দুই বন্ধু সাঈদ আর
শ্রীমন্তর পরম আত্মীয়তা তো আছেই, দেশভাগের
করুণচিত্র এখানে থাকতে পারে। হতে পারে, স্বজাতপ্রেম
বা পুরুষ-পুরুষ প্রেমের এক মাদকতাময় প্রকাশ। গল্পটির মূল ম্যাসেজটা শেষ পর্যন্ত কি?
কোনো ম্যাসেজ
দেয়ার জন্য তো লিখি না! পাঠক গল্পটি যেভাবে গ্রহণ করেন, পড়ে তাঁর যা মনে হয়, সেটিই ধ্রুব। এই গল্পটির বহু তল আছে। পাঠক যদি
সবকটি তলের খবর না-ও পান এটি তো নিশ্চয় বোঝেন যে জীবন যতো আশার কথা বলুক, যতো স্বপ্ন দেখাক, বঞ্চিতের কাছে কিছুই ধরা দেয় না। যে যতোই
ভিন্নপথে চলুক না কেন, এই বঞ্চনাই তাদের পরম আত্মীয়তার সূত্রে
বাঁধে। অবশ্য এইভাবে গল্পটি ব্যাখ্যা করলে বরং সেটি পান্সে মনে হয়। তার চেয়ে বহু তলের বিচরণকারীকে সিঁড়ি দিয়ে
ওঠানামা করতে দেয়াই ভালো।
’ফিরে যাও জোৎস্নায়’কে মনে হয় পরমাত্মীয়ের এক্সটেনশন, এখানেও যেন একটা ছায়া-মানুষ লেখক সত্তার সাথে
যুক্ত হয়ে আছে। আপনি এ ধরনের প্রবণতা পাঠকের জন্যে রাখছেন। তা দিয়ে পাঠকই যেন
বিকল্প জীবন তৈরি করতে পারছে-- ঠিক কিনা?
ঐরকম কিছুই,-- জ্যোৎস্নার নকশা থেকে বেরিয়ে এলে থাকে ঐ
বালিয়ারির গর্তে ডুবে যাওয়া। তাই সবাই ফিরে চলুক জ্যোৎস্নায়-- জীবনে।
’রংরাজ ফেরে না’ গল্পটি নানাভাবেই আলোচিত। এখানে প্রাণীর বন্যতা
ধরে স্বাধীনতার সিম্বল প্রকাশ সত্যি চমৎকার। গল্পটির ফিলসফির জায়গাটা একটু বিশদ
করুন প্লি¬জ।
জীবন নানা রঙের
স্বপ্ন দেখায়। নানা পথে তুলে দেয়। কিন্তু
বাঁধা থাকে সব-ই ঐ অস্তিত্বের শেকলে। সেটি খোলে না। আশা, স্বপ্ন
কিছুই পূর্ণ হয় না তাই। সব-ই হারায়। তবে গল্পটিকে এইসব তত্ত্ব দিয়ে বিচার না-করে
স্বপ্ন ও তার অপূর্ণতার গল্প বলেই ধরে নেয়া ভালো।
এই দেশে
সংখ্যালঘু নিপীড়নের একটা বিষয় তো আছেই, আপনিও
নিজেও এ নিয়ে লিখেছেন। এর সমাধান কিভাবে হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
পরিপূর্ণ
গণতন্ত্র-ই পারে এর সমাধান করতে।
রাষ্ট্রের চোখে সব অধিবাসীর সমান অধিকার। এটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে কেবল সরকার বা
জনগণ নয়, রাজনৈতিক চিন্তানুসারী সকলের-ও প্রকৃত
গণতন্ত্রের অভিমুখী হতে হবে। সেখানেই সমাধান আছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রসারের
চাবিকাঠি তো সেখানেই।
আপনি যতই
আদর্শকে অস্বীকার করেন, তা কিন্তু কোনো না কোনো ফর্মে দরকারই।
এই দেশের মুসলমানরাও কিন্তু ইংরেজ-শাসন আর হিন্দু জমিদারদের হাত থেকে বাঁচার মানসে
প্রায় একাট্টা হয়ে পাকিস্তান চেয়েছিল। এখানে ইংরেজ-প্রশাসনের ডিভাইড এন্ড রুলকেই
শুধু আমি দায়ী করতে চাই না। আপনি যদি শেখ মুজিবের অসমাপ্ত আত্মজীবনীও পড়েন, সেখানেও বার বার বলা হচ্ছে, পাকিস্তানবিনে মুসলমানদের বাঁচার পথ নাই।
লাঞ্ছিত-বঞ্চিত মুসলমান সম্প্রদায়ের পাকিস্তান-আন্দোলনকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন।
আমি
ভেবেছিলাম আমাদের কথাবার্তা সব গল্পকল্পের
সীমানাতেই থাকবে। তবু-ও আধুনিক গল্পকার তো
রাজনীতিসচেতনও। বাংলার লাঞ্ছিত-বঞ্চিত
মুসলমান সমাজের জন্যে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সর্বদাই ন্যায্য ছিল। পশ্চিম
অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়,
বিশেষত পাঞ্জাব
ও সিন্ধু অঞ্চলের, বর্ধিষ্ণুই ছিল বলা যায়। পাকিস্তান
আন্দোলন তাদের কাছে প্রতিযোগিতাহীন অবস্থায় নিজ বৈভব বাড়ানোর চিন্তাই জুগিয়েছিল।
শেখ মুজিবুর রহমান ওইসময়ে বাংলার
মুসলমানের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্য কোন পথ খুঁজে পাননি বলেই পাকিস্তান আন্দোলনে
সম্পৃক্ততার কথা চিন্তা করেছিলেন। তবে পথ খুঁজে পেতে খুব দেরীও তো তাঁর হয়নি-- পনের-কুড়ি বছর বড় জোর।
ঠিকাছে, তবে আবারও গল্প নিয়েই কথা বলি,-- আচ্ছা, আপনার
কোনো গল্পগ্রন্থই দ্বিতীয় সংস্করণ আছে কি? রয়েলটি
পান? গল্পের এই দুর্দিনে আপনি গল্পই লিখছেন-- এ এক সাধনা বটে!
আমার প্রথম
তিনটি গ্রন্থের-ই দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। “গল্পসমগ্র” প্রকাশিত
হবার পরে আগের সব একক গল্পসংগ্রহ প্রকাশ করবার কোন যুক্তি তো থাকে না! গল্পসমগ্র--১ অনেককাল আগেই ছাপার বাইরে চলে গেছে। প্রকাশক
বলেন, গল্পসমগ্র- ১ এর দ্বিতীয় সংস্করণ
প্রকাশের আগে গল্পসমগ্র -২ প্রকাশ করে নিই। তিনি তাই করেছেন।
“রয়্যালটি” অনেক প্রকাশক অতি নিষ্ঠার সঙ্গে লেখকের হাতে
তুলে দেন-- আমাকেও দিয়েছেন। তবে বিদেশে থাকি বলে
প্রকাশকদের কাছে তাগাদা দিতে কখনো যাওয়া হয় না। তাই তাঁরা রয়্যালটি দেবেন কি দেবেন
না জানি না। গল্পের এই দুর্দিনে আমি শুধু যে গল্প-ই লিখছি তার কারণ তো স্পষ্ট-ই।
এটিই আমি সামান্য যা পারি।
সমকালীন গল্প
পাঠ করার সুযোগ হয় আপনার?
কালি ও কলম
অনিয়মিত হলেও হাতে আসে। সেখানে প্রকাশিত গল্প পড়া হয় প্রায়-ই। এক সময়ে “আটলান্টিক” প্রতি
সংখ্যায় গল্প ছাপতো। ইদানিং আর ছাপে না। তাই গ্রন্থাকারে প্রকাশিত সাম্প্রতিক ‘শর্ট শর্ট ফিকশন’-এর
সংগ্রহ অথবা নানাদেশের সাম্প্রতিক ‘শর্ট
ফিকশন’ পড়বার চেষ্টা করি। এই আর কি!
ইন্টারেনেট
সাহিত্য নিয়ে আপনার অবজার্ভেশন কি? এটা
তো দেশের সাথে যোগসূত্র করার চমৎকার মাধ্যমও বটে!
গভীর কোন চিন্তা
নেই। নিজে কখনো ইন্টারনেট-এ কিছু লিখিনি।
ইন্টারনেটের সাহিত্যসাধক সম্প্রদায় তরুণ। চলে যাওয়া দিনের লেখালেখির দিকে হয়তো খুব
মনোযোগ দেন না তাঁরা। তরুণ লেখক আমরাও দিতাম না-- সে
কিছু নয়। নতুন ইনফরমেশন হাইওয়েতে ভিড় বড্ড বেশি। নিয়ন্ত্রণকারী তো কেউ নেই!
নিয়ন্ত্রণ অর্থে ‘সেন্সর’ নয়
কিন্তু-- সম্পাদনার কথাই বলছি। দেশের সঙ্গে
একরকম নিয়মিত যোগাযোগ-ই আমার আছে বলা যায়।
ইন্টারনেট-ও কিছু সাহায্য করে নিঃসন্দেহে।
কমলকুমার, মানিক, রবিঠাকুরের
গল্প নিয়ে কথা বলুন।
কী শুনতে চান?
তাদের গল্প
সম্পর্কীয় আপনার মতামত আর-কি!
আমি বলি যে, বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ, অদ্বিতীয় গল্পকার রবীন্দ্রনাথ হলেও তাঁর অনেক
গল্প-ই মন কাড়ে না, বিশেষত শেষ দিকের; শুনতে চান কি মানিক-এর অবিস্মরণীয়, অসাধারণ গল্পের সংখ্যা দুই হাতের আঙুলে গুণেই
শেষ করা যায়; শুনতে চান কি কমলকুমার মজুমদারের
গল্পসমূহের ওপর থেকে তাঁর নিজস্ব বয়ানভঙ্গির চাদরটি তুলে নিলে মাত্র কিছু গল্প-ই
স্বপ্নের মধ্যেও হানা দেয়! না, অমন কিছুই বলছি
না। চিরকালের প্রাতঃস্মরণীয় গল্পকার তাঁরা। পাঠক জানেন। আমার কথায় কী আসে যায়!
য্ইা হোক, আপনার মতামতের সাথে একমত হওয়া গেল না। এবার
ভাষা নিয়ে কিছু কথা হোক,--
আঞ্চলিক ভাষা
বলে কিছু আছে কি! আমার তো মনে হয়, পৃথিবীতে যত
মানুষ তত ভাষা আছে। তবে আমার যেটা মনে হয় পূর্ববঙ্গের ইতিহাস, লড়াই-সংগ্রাম, ৫২-৭১-৭৫-৯০
ইত্যাদির ফলে আমাদের ভাষার অনেক বদল ঘটেছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা আলাদাই। কী বলেন?
আপনার কথা থেকে
করজিবস্কির তত্ত্ব মনে পড়ে গেল-- কোনো কিছুই
দ্বিতীয়বার ঘটে না। কোনো মানুষ-ই এক-ই রকম করে দ্বিতীয়বার কথা বলে না। যত মানুষ তত ভাষা কি ঐ জাতীয় কিছুই মনে করিয়ে
দেয় না? আঞ্চলিক ভাষা তো আছে বলেই আমরা জানি। কোনো বিশেষ অঞ্চলের মানুষের
জীবনচর্যা, পরিবেশ, তার
ভাষার ওপরেও প্রভাব ফেলে। এই তো জানি। যত মানুষ ততো ভাষা -- তাই সব মানুষের ভাষা তো আর সকলের পক্ষে জানা
সম্ভব হয় না -- এই জন্যেই প্রমিত ভাষা। পশ্চিম বাংলার
প্রমিত ভাষা এবং বাংলাদেশের প্রমিত ভাষার মধ্যে তফাৎ তেমন নেই-- তফাৎ আছে মেদিনীপুর অঞ্চলের ভাষার সঙ্গে
বগুড়া-রংপুর অঞ্চলের ভাষার। রাঢ় আর
বরেন্দ্র আর কি! আর তাছাড়া ভাবুন মার্কিনী
প্রমিত ইংরেজি ভাষা আর কানাডা, ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস্, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড
ইত্যাদি ইংরেজি বলিয়ে দেশের প্রমিত ভাষার মধ্যে তফাৎ আছে সামান্যই। তফাৎ যা
অর্থবলভেদে। টেক্সাস ড্রল আর সাদার্ন টোয়াং ব্রুকলিনবাসীর ইংরেজির সঙ্গে মিলবে না
কখনোই। কিন্তু তারা সকলেই তো পড়ে ডালাস
মর্নিং পোস্ট, নিউ অর্লিন্স টাইমস্-পিকায়ুন, নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ, টাইমস্, কি
ডেইলি অবজার্ভার-- সব-ই তো এক-ই ভাষায় লেখা! তফাৎ তো খুব
দেখি না। আমরা যেমন কোন তফাৎ দেখি না ঢাকা-রাজশাহী-চট্টগ্রাম ইত্যাদি শহর থেকে
প্রকাশিত সংবাদপত্রের ভাষায়। ভাষা খুব সহজে বদলায় না। তার পরিবর্তন অতি ধীর। অতি দীর্ঘ জীবনচর্যার ফসল সেসব। এতো সহজেই বুঝি বলা যায় না “আমরা আলাদাই।“
শেখ মুজিবের
সাতই মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে যে জনজাগরণের
সাথে আমাদের মোলাকাত হয়, তাতেও ভাষা আলাদা হয়েছে। আমাদের নদী, মাটি, জলও
আলাদা। মন্তব্য করুন।
শেখ
মুজিবের সাত-ই মার্চের ভাষণে কিছু আঞ্চলিক
বাগধারা ব্যবহৃত হয়েছে মাত্র। তার বেশি কিছু কি? আমাদের নদী, মাটি, জল আলাদা, তাই
এই নদী, মাটি, জল
দুই অঞ্চলের মানুষের জীবনকে কিয়ৎপরিমাণে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে নিঃসন্দেহে। এই পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ূন কবীরের আলোচনা স্মরণ
করুন। সে-সব জেনেও তো তিনি প্রকাশ করেছিলেন “চতুরঙ্গ’”ই। মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে যে জনজাগরণের সঙ্গে
আমাদের মোলাকাত হয় তাতে বরং বাংলার জন ঐক্যের পরিচয়-ই স্পষ্ট হয়; ভিন্নতা
নয়।
এবার
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা হোক,-- আচ্ছা, এ নিয়ে আপনার গল্প আছে, কিন্তু তাতে আপনার সরাসরি কোনো পার্টিসিপেশন
ছিল কি?
তাহলে শুনুন, পঁচিশে মার্চের কালরাত্রির কথা। আমি তখন
ফিলাফেলফিয়া শহরে টেম্পল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের গ্র্যাজুয়েট ছাত্র।
নিউজল্যাবের সহকারী। আমি-ই সম্ভবত আমেরিকায় প্রবাসী বাঙ্গালিদের মধ্যে প্রথম জানি।
রয়টার , এপি, এফপি
টেলিপ্রিন্টারে তাদের সংবাদ পাঠানোর মুহূর্ত থেকেই। আমি-ই স্থানীয় বাঙালি
পরিচিতজনকে সেই খবর দিই। এবং সেদিন থেকেই পথে নেমে পড়ি। বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের
জন্যে জনমতগঠন, বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলা, অর্থসংগ্রহ, প্রচারপুস্তিকা
ইত্যাদি প্রকাশ, কংগ্রেসম্যান, সেনেটরদের সঙ্গে কথা বলে, চিঠিপত্রে যোগাযোগস্থাপন করে বাংলাদেশের দাবী
তাঁদের বোঝানো, ওয়াশিংটনে ক্যাপিটলের সামনে পোস্টার
বুকে দাঁড়িয়ে থাকা, কি বাল্টিমোর-ফিলাডেলফিয়ায় পাকিস্তানী
অস্ত্র বহনকারী জাহাজ-এর পথ আটকানোয় সাহায্য করা, ইত্যাকার
কর্মকাণ্ড যদি মুক্তিযুদ্ধে ‘সরাসরি
পার্টিসিপেশন’ হয়, তাহলে
নিঃসন্দেহে আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি ও পূরবী উভয়েই। প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা।
জলে-জঙ্গলে পাকিস্তানী অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধরত মুক্তিসেনার একেবারে পাশে দাঁড়িয়ে
যুদ্ধ করিনি ঠিক-ই, এই আফশোস আমার আজীবন রইবে, তবুও মুক্তিযোদ্ধা আমিও এই কথাই বা না-বলি কী
করে!
তাই তো! আসলে
এটি এমন এক বিষয় যা সব বাঙালি, বা, এই জনপদের অন্য মানুষকে কোনো না কোনোভাবে
স্পর্শ করে!
মার্চ মাসে
টেম্পল-এ আমার মাস্টার্স কম্প্রিহেন্সিভ পরীক্ষা শেষ হওয়ার দু’দিন পরেই আসে পঁচিশে মার্চ। আমার থিসিস শেষ হওয়া , ডিগ্রী পাওয়ার কথা ছিল অগাস্টেই। সেটি পিছিয়ে
যায় পরের মে পর্যন্ত। প্রায় ন’মাস।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস। বাংলাদেশের
স্বাধীনতার জন্যেই আমেরিকাইয় পথে নেমেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুধু গল্প নয়, নিজ অভিজ্ঞতার বাস্তব কাহিনীও কিছু লিখেছি আমি।
দু’টি গ্রন্থে আছে সেসব। কে খবর রাখে
বলুন!
দেশভাগকে আপনি
কিভাবে দেখেন।
দেশভাগ বলতে
আপনি নিশ্চয় সাতচল্লিশ-- এর দেশভাগ –এর কথা বোঝাতে চাইছেন তো? কেননা একাত্তরের সংগ্রামকে আমরা “দেশভাগ” বলি
না। বলি “মুক্তিযুদ্ধ”, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
তা তো নিশ্চয়ই।
সাতচল্লিশ-এর “দেশভাগ” এখন
ইতিহাস। ওইভাবেই এটিকে দেখা ভালো।
সংসার নিয়ে কিছু
বলুন-- পূরবীদির সাথে পরিচয়, সংসার, জীপনযাপন
নিয়ে কিছু বলুন।
আমাদের যৌথজীবন
নিয়ে পূরবী বসুর একটি দীর্ঘ রচনা বাংলা একাডেমীর সাহিত্যপত্র “উত্তরাধিকার” এ
প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে সব-ই আছে। নতুন করে বলবার মতো কিছু নেই।
হাহাহা, তবু কিছু তো বলুন।
পঁয়তাল্লিশ
বছরের দীর্ঘ বিবাহিত জীবন আমাদের। দু’টি সন্তান।
জীবনের হাত ধরে সারা যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ঠাঁই খুঁজেছি নিজেদের। ফিলাডেলফিয়া, শিকাগো, কলাম্বিয়া-মিজৌরী, মোবিল-এ্যালাবামা, কুইন্সি-ইলিনয়, ফোর্টওয়ার্থ-টেক্সাস, সেন্ট লুইস-মিজৌরী। শেষে ঠাঁই মিলেছে নিউ
ইয়র্কে। এখন ডেনভারে, কলোরাডোয়। মাখখানে বেশ কিছুকাল ঢাকায়।
বলবার মতো কথা অনেক আছে মনে হয় না? কিন্তু
অতো কথা বলা বোধহয় এখন সম্ভব নয়।
তবু ধরেন, সাহিত্যমুখর এ যুগলজীবন কি সাহিত্যের কোনো কাজে
আসে? নাকি তা ঝামেলা তৈরি করে?
যৌথজীবনের
শুরুতে যেমন আমার লেখা দীর্ঘকাল বন্ধ ছিল, তেমনি
পূরবীও কিছু লেখেনি বহুকাল। কিন্তু দেখুন গত কুড়ি-বাইশ বছরে পূরবীর অন্তত পঁচিশটি
ও আমার অন্তত সাতাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এই না-- লেখা
লেখায় কি যুগলজীবনের কোনো প্রভাব আছে মনে হয়? নাকি বলা যায় যুগলজীবন সাহিত্যের কোন
কাজে আসে না?
হাহাহা, তা অবশ্য কথা বটে,-- আচ্ছা, লিটলম্যাগ
নিয়ে তো আপনার সংশ্লিষ্টতা আছে, একসময় এর সম্পাদনার সাথেও জড়িত ছিলেন। বিকল্প
সাহিত্য হিসাবে এর সাথে আর কি কি যুক্ত হতে পারে বলে মনে করেন।
‘লিটলম্যাগ’কে বিকল্প সাহিত্যমাধ্যম বলা কি ঠিক?
তাহলে কি বলবেন?
কেননা ওই লিটল
ম্যাগ-ই তো কন্ট্রাক্টরি নেয় মূলধারার সাহিত্যে লেখক সরবরাহ করার।
না না, তা নয়; এটা
বরং একধরনের চৈতন্যেরর ব্যাপার, যাই হোক, বলুন।
বরং বলা যাক ‘লিটলম্যাগ” সাহিত্য
ভূবনের প্রথম ভূমিখণ্ড। অনুমান করি “লিটলম্যাগ”-এর সঙ্গে বিকল্প সাহিত্য হিসাবে আপনি ইনফরমেশন
হাইওয়ের কিছু প্রোডাক্টসের কথা ভাবছেন। হ্যাঁ, সেরকম
হতেই পারে-- ইন্টারনেট সাহিত্যপত্র, ইন্টারনেটে সাহিত্যচর্চা। চাই কি সমমনা সাহিত্য সাধকদের জমায়েত বা
সাহিত্য আসরও এর সঙ্গে যোগ করতে পারেন। ‘লিটলম্যাগ’-এর
চরিত্রের সঙ্গে এদের-ও তো অনেক মিল!
এখানে সাহিত্যিক
প্রণোদনা একটা ব্যাপার,--
আচ্ছা, জীবন যেন কতক অনুষ্ঠানের নাম, প্রকৃতি, মায়া, যাপিত জীবন মিলে আপনি এক বৈশিষ্ঠ্য তৈরি করার
সুযোগ দিচ্ছেন-- এটাই কি আপনার সাহিত্যিক ফিলসফি-- সত্যি কথা হচ্ছে, আপনার
লেখার ভিতর দিয়ে কোনো আদর্শ বা দর্শন আমি দাঁড় করাতে ব্যর্থ হয়েছি। লেখায় এত রহস্য, এত আড়াল প্রয়োজন আছে কি?
কোনো আদর্শ বা
দর্শন প্রচার করবার জন্যে তো আমি লিখি না। অমন চাইলে বরং নানাপ্রকার জ্বালাময়ী
প্রবন্ধাদি কি প্যাম্ফলেট রচনা করা বেহতর ছিল। আমি মনে করি না কোনো প্রকৃত সৃজনশীল
লেখক-ই বিশেষ কোনো দর্শন বা আদর্শ প্রচারের জন্যে লেখেন। রবীন্দ্রনাথ নিজেও
লিখেছেন বলে আমি মনে করি না। তাঁর শেষ
কবিতাটির কথা ভাবুন। মানিক বন্দোপাধ্যায়ের
রচনার ধার-ও ক্ষয়ে যায় যখন পার্টি তাঁকে বাধ্য করে পার্টির মতানুসারী লেখায়।
আপনি নিশ্চয়-ই
প্লেটো-এ্যারিস্টটলের “অথরিটারিয়ানিজম”, ইমানুয়েল কান্ট-এর ক্যাটাগরিকেল ইম্পেরেটিভ
(কর্তব্য, বিশ্বাস, বিচারবোধ, আত্মপ্রণোদনা ইত্যাকার নানা চিন্তা কি
অস্তিত্ববাদী চিন্তাসমূহ,
অথবা যুক্তিবাদী
মানববাদ) অথবা জন স্টুয়ার্ট মিল-এর ইউটিলিটারিয়ানিজম (সবচেয়ে বেশি লোকের জন্যে
সবচেয়ে বেশি ভালো) কি মার্ক্সের কম্যুনিজম, ইত্যাকার
দর্শনাদি বোঝাতে চাইছেন না। আপনি কি আদর্শ বা দর্শন বলতে বোঝাতে চাইছেন যে মানুষ
কেমন করে বাঁচে বা বাঁচবে সেই সত্যের আলোচনা বা ইঙ্গিত বিধৃত থাকবে রচনায়। তাই কি?
কায়েস আহমেদ
অনেক কাল আগে আমার একটি সাক্ষাতকার নেয়ার
কালে এই জাতীয় একটি প্রশ্ন করেছিলেন। মনে
পড়ে, আমি
বলেছিলাম, কোনো বিশেষ আদর্শ বা মতবাদ আমার রচনায়
কেউ খুঁজুক আমি চাই না। কোনো আদর্শের সঙ্গে গাঁটছড়াও বাঁধা নেই আমার। সম্ভবত আপনি
অমন কিছুই বোঝাতে চাইছেন না। তাই আমি লেখায় কী কাজ করি, তাই বরং বলি। আদর্শ বা দর্শন আপনি-ই না হয়
খুঁজে নিন।
আমি পাঠকের
সামনে একটি আয়না তুলে ধরি। সেই আয়নায় ভাঙ্গাচোরা হলেও সে নিজের চেহারা দেখবার
চেষ্টা করে। হয়তো কখনো দেখে-ও। এবং দেখে
কখনো যদি ভাবে, আরে এইতো আমার জীবন, অথবা এটিতো আমার জীবন নয়! এবং পরক্ষণেই ভাবে
আমার এই জীবন এমন না-হলেই বুঝি ভালো হতো। অথবা ভালো জীবন কি হয় না! আপনি যেমন বলেছেন জীবনযাপনের নানা অনুষ্ঠান, প্রকৃতি, মায়া, যাপিতজীবন ইত্যাকার মেশাল -- হোক নিজ জীবনের কি অন্যের, জীবনের কি জগতের (জীবন ও জগৎ - দর্শনের আর বাকি
রইলো কি? ) নানা কথা, তাকে তো জানতেই হবে তাই!। হোক সে জানা
অবসরকালীন পাঠতৃপ্তির মাধ্যমে, কী গভীর
ঔৎসুক্যে পাঠে মনোনিবেশকালে। এখন মুস্কিল হচ্ছে এই যে, এই কথাগুলি যদি আমি সরাসরি বলে দিই তাহলে আর
লেখালেখির কি দরকার? তাই প্রয়োজন এতো আড়ালের, এতো রহস্যের। সত্য বড় সহজে ধরা দেয় না, এক কথায় বোঝাও যায় না। আড়াল থেকে, রহস্য থেকে সে যখন বেরিয়ে আসে, পাঠকই তখন সেটি বুঝতে পারেন এবং তার সহস্র
বর্ণিল রশ্মির আলোয় যখন অবগাহিত হন, তখনই
পরম আনন্দ তার কাছে ধরা দেয়। আমার লেখাকে আমি এভাবেই দেখি। অন্যের কথা জানি না।
মোটাকথায় বলি, আমার রচনার আরাধ্য মানুষের জীবন-- বঞ্চিত, ক্লিষ্ট, খিন্ন, দীর্ন
মানুষের জীবন।
আপনি তো
আত্মস্মৃতি ধরনের লেখাও লিখলেন? এ নিয়ে আপনার
উপলব্ধি কি? নিজেকে নিয়ে কথা বলতে কেমন লাগে।
আত্মস্মৃতিমূলক
রচনা লেখার কালে অনেক সংশয় ছিল-- কে আমার কথা
জানতে চাইবে? সে জন্যেই আত্মজীবনী না লিখে
আত্মস্মৃতিমূলক রচনার আশ্রয় নেয়া হাহাহা। নিজের মধ্য দিয়ে অন্যজনের কথাই বলা যায়
বেশি। পরিবেশনায় কিঞ্চিৎ আত্মপীড়ন, পরিহাস
ইত্যাদি মিলিয়ে যা দাঁড়ায় সেটি যেনো কীর্তিগাথা না-হয়, এই লক্ষ্য থাকে।
নিজেকে নিয়ে কথা বলতে কেমন লাগে?
আমার সময় ভোলে
না কিছু’ গ্রন্থ থেকে শৈশবের সাদা দেয়াল রচনার
প্রথম কটি ছত্র তুলে দিই বোঝানোর জন্যে।
‘গুণী মহাজন তাঁর আজীবন কীর্তিকথা লিখে
যান ভবিষ্যতের জন্য। রসিক শিল্পী দিগন্তবিস্তারি দেয়ালে এঁকেও রাখেন সেসব। বিশ্ববিশ্রুত দিগ্বিজয়ীর শৌর্যবিবরণ রয়ে যায়
ঐতিহাসিকের জন্যে এবং প্রায়-ই দেখা যায় , অভুক্ত
তুলিকার সেই বিবরণ নানা রঙে সাদা দেয়ালে ফুটিয়ে তোলেন-- যাকে বলা হয় ম্যুরাল। কিন্তু কীর্তিহীনের কি কোন কথা থাকে না কখনো?
সেই কীর্তিহীন-- আমার মতোই। জীবনের দেয়ালে কোনো রঙ লাগে না যার।’
আত্মস্মৃতিকে
উপন্যাসে নেয়ার বাসনা আছে?
সকলকেই যা
বলি আপনাকেও বলছি - আছে।
গল্প নিয়ে আপনার
ভবিষ্যৎ ভাবনা কি?
গল্প আর
না-লেখার!
হাহাহা, তাই নাকি, না
না, তা কেন,-- আপনি
গল্পে নিশ্চয়ই অমর হয়ে থাকবেন।
২৯.৫.২০১৩/
২৭.০৭.২০১৩
1 মন্তব্যসমূহ
খুব ভাল একটি সাক্ষাৎকার!
উত্তরমুছুন