১.
২০০০ সালে ক্যানাডার
মন্ট্রিয়ালে আসার পরে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে জেনেছিলাম নর্থ আমেরিকায় কোন কোন
কবি, সাহিত্যিক বসবাস করেন। নিউইয়র্কে
লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত আর পূরবী বসুর নামও এভাবেই আমাদের গোচরভুক্ত হয়ে গেল।
নতুন ইমিগ্রান্ট কাঁচের
বোতলে পাতাবাহারের ডালের মত, ভালো করে শেকড় গজাতে সময় লেগে যায়। আমাদেরও ঘোরাঘুরির
ছাড়পত্র ইত্যকার ফর্মালিটি শেষ হতে দু’চার বছর লাগলো। তারপর একদিন আমরা মন্ট্রিয়াল
শহর থেকে নিউইয়র্ক ঘুরে এলাম, খুব ইচ্ছে ছিল, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু কিংবা
শহীদ কাদরী কারুর সঙ্গে দেখা করি! হয়নি। যোগাযোগ ছাড়া কি করে হবে!
গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ
দত্ত’র দেখা প্রথম পাই ২০০৯ সালে। কয়েকটি গল্প বাদ দিলে দূর্ভাগ্যক্রমে এই
স্বনামধন্য লেখককে পাঠ করার তেমন সুযোগ তখন পর্যন্ত পাইনি। কারণ দর্শাতে হলে প্রথমেই বলবো যে এই
২০০৩/৪ অবধিও বাংলা বইপত্র মন্ট্রিয়াল শহরে তেমন পেতাম না, অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বই কেনার ঘাটঘোট তেমন চেনা
ছিল না, ইচ্ছে থাকলেও সুতরাং তৃষ্ণা মেটেনি। আর তখন অব্ধি আজকের ভার্চুয়াল জগত আমার নাগালের মধ্যে ছিল না।
দেশের সাহিত্যজগত মোটের ওপরে দেখতে পাওয়া অত সুলভ হয়নি বলাই বাহুল্য।
উপলক্ষ্য তৈরী হলো। চিত্রশিল্পী
রাকীব হাসানের স্টুডিও –গ্যালারী উদ্বোধন পর্বে আমরা স্থির করলাম যে নর্থ আমেরিকায়
বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে থাকা কিছু বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে একটি সাহিত্য
সাংস্কৃতিক আড্ডার আয়োজন করবো। মওকামত পেয়েও গেলাম আমাদের আবাসস্থল থেকে খুব কাছে
ন্যাচারাল পার্ক ব্যোয়া দ্য লিয়েজ আর প্রেইরী নদের ধার ঘেষে একটি কটেজ, যেখানে
প্রায় ৪০/৫০ জন মানুষের একসাথে হওয়া সম্ভব। (এ প্রসঙ্গে না বললে নয় যে, গল্পকার,
লেখক পূরবী বসু এই সাহিত্য আড্ডাগুলো নিয়ে “উঠান থেকে অরন্যে” শিরোনামে বড় একটি মনোমুগ্ধকর
লেখা লিখেছিলেন আর তা সযত্নে ছাপা হয়েছিল মাসিক কালি ও কলম পত্রিকায়। তাঁর দেয়া শিরোনামটি
আমরা ভালোবেসে লুফে নিই)।
এবার জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত
আর পুরবী বসুকে মন্ট্রিয়ালে বেড়াতে আসবার আমন্ত্রণ জানাই। পূরবীদি’র অত্যন্ত আকর্ষনীয়
চেহারা পত্রিকার পাতায় দেখেছি। জ্যোতিদা’র ফটো তখনো দেখিনি। নিউইয়র্কের পমোনাতে
তাঁদের বাড়িতে যখন ফোনের রিং বেজে যায় আমার সামান্য নার্ভাস হওয়া অব্যাহত থাকে, আর
ভয়েস মেইল বক্সে গম্ভীর গলায় –‘হ্যালো, দিস ইজ জ্যোতি ডট্টা,’ শুনে গলা শুকিয়ে
আসে। কথা বলতে গিয়ে তরবড় করে দু একটা দরকারী শব্দ খাপছাড়া ভাবে বাদ পড়ে যায় হয়তো,
তবুও মেসেজ রাখি। জ্যোতিদা, পূরবীদি (পরবর্তীতে সম্যক জেনেছি) সময়ানুবর্তী মানুষ!
তা নইলে উত্তর আমেরিকায় কর্মজীবনে এত সাফল্য আসে না। আমার দেখা যে দু’চারজন সফল
পেশাজীবিকে চিনি তাদেরকে কখনো কাজ ফেলে রাখতে দেখিনি, প্রতিটি যোগাযোগ ঠিক সময়ে
করতে দেখেছি। পূরবীদি তাদের একজন। কাজেই কোন দ্বিরুক্তি ব্যতিরেকে জানতে পারলাম যে
তাঁরা আসছেন!
দূর্নিবার আগ্রহের সঙ্গে
তাঁদের জন্য অপেক্ষা করি। সংগ্রহে নেই, সুতরাং নাম জানা থাকলেও পড়া সম্ভব হয়না-
সূর্বিনীত কাল, বহে না সুবাতাস, সিতাংশু তোর সমস্ত কথা, পূনরুদ্ধার এর মত আলোড়ন
তোলা নামবাহী গল্পগ্রন্থগুলি যার প্রণেতা জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। এর মধ্যে বন্ধুদের
থেকে আরো কিছু বৃত্তান্ত জানা হয়ে গেছে, জ্যোতিদা সেই ১৯৬৯ সালে আমেরিকায় পাড়ি
জমিয়েছিলেন। আমাদের সাহিত্যের ইতিহাসে সবচে কম বয়সে পেয়েছেন সাহিত্যে অবদানের জন্য
বাংলা একাডেমী পুরস্কার! তারপর আমেরিকাতে পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র ইত্যকার বাবদে দীর্ঘ
আঠারো বছর লেখালেখি থেকে দূরে সরে থেকেছেন! কিন্তু অন্তর্গত সৃষ্টিশীলতার তাগিদ জলের
জোরের মত, যার শক্তি পাথরের চেয়ে বেশী। ফিরেছেন লেখালেখিতে আবার।
২
শিল্পী রাকীব হাসানের
ষ্টুডিও উদ্বোধনের দিন। সকাল থেকে ব্যস্ত দিন কাটছে, বুকের ভেতর উত্তেজনা নিয়ে
দরকারী কাজ কর্ম সেরে যাচ্ছি। শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যারা আসবেন সবার সঙ্গে আগে
দেখা হয়েছে, কেবল জ্যোতিদা, পূরবীদি ছাড়া। বিকেল তিন, সাড়ে তিন নাগাদ আমাদের বাসার
উল্টোদিকের পার্কিং লটে তাঁদের গাড়ি। চেনা কণ্ঠে জ্যোতিদার ডাক! নেভিগেটরের সীটে
অপূর্ব পূরবী বসু হাসছেন। মূহুর্তেই দু’জনকে আপন মানুষ বলে অনুভব হলো। আমি পথ
দেখিয়ে আমাদের অনুষ্ঠানের বাড়িটিতে নিয়ে গেলাম তাঁদের। পরে ভেবেছি- এই যে এঁদেরকে
এত আপন মনে হলো, এর পেছনে আমার ভূমিকা যত না, তার চেয়ে ঢের বেশী তাদের বাড়ানো
আন্তরিক, বাৎসল্যময় বন্ধুত্বের হাত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কত মানুষের সঙ্গে
মেশার অভিজ্ঞতা, জ্যোতিদার কর্ম, গবেষনার বড় অধ্যায় যোগাযোগ- এই পয়েন্টগুলো একপাশে
সরিয়ে রেখেও বোঝা যায় এই বন্ধুত্ব সৃজনশীল মননের!
সন্ধ্যেবেলা রাকীবের ষ্টুডিও-গ্যালারী
উদ্বোধন পর্বে অল্প কয়েকজন বক্তার তালিকায় জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে ডাকলে তিনি
প্রস্তুতিবিহীন, প্রথমবারের মত রাকীবের কতিপয় চিত্রকর্ম দেখে চমৎকার বক্তব্য রাখলেন।
এর পরপরই সবাই মিলে কটেজে,
যেখানে থাকা এবং সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানমালার আয়োজন সেখানে চলে এলাম। অনুষ্ঠানে
জ্যোতি’দাকে নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার পর্ব হলো, কবি গল্পকার ইকবাল হাসান আর
কথাসাহিত্যিক সাদকামালীর আলাপচারিতায় দারুণ জমে উঠলো পর্বটি। ১৯৬৯ থেকে ৮৪ দেড় যুগেরও
বেশী জ্যোতিপ্রকাশ ইউ এস এ তে মাষ্টার্স, পি এইচ ডি ডিগ্রী শেষ করে বিভিন্ন ষ্টেট
এ চাকুরী ব্যপদেশে স্থানান্তর করেছেন। দেশে ফিরতে চাইলেও ফেরা হয়না। লিখতে চাইলেও
লিখতে না পারার প্রেক্ষিত ঘিরে আবার লেখালেখিতে ফিরে আসবার অভিজ্ঞতা, ইত্যকার স্মৃতিচারণ।
ইকবাল হাসান এবং সাদ কামালী দু’জনেই এই কিংবদন্তী গল্পকারকে কাছ থেকে জানেন, নিবিড়ভাবে
তার লেখা পাঠ করেছেন। তাদের পক্ষে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নমালা দিয়ে উত্তরের মাধ্যমে
প্রায় মিনিট পনেরোর এই অংশটিকে উপভোগ্য
করে তোলা খুব দূর্লভ হলো না।
গল্পকার জ্যোতিপ্রকাশ
দত্ত বললেন যে, লিখছিলেন তিনি, আর সবার মত কিংবা তাদের চেয়ে সামান্য ভিন্ন ঢং এ। সহসা
একদিন তাঁর মনে হলো, না সবাই যেভাবে লিখছেন সেভাবে তিনি লিখবেন না। শুরু হলো একটা
ভিন্ন ভাষাভঙ্গী তৈরীর নিরলস যাত্রা। গল্পকে কি করে অন্যান্য গল্প থেকে ভিন্ন করে
নিজের কন্ঠস্বর তৈরী করলেন জ্যোতিপ্রকাশ, সে কাহিনী স্বয়ং তাঁর মুখনিসৃত! আমরা
মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতামন্ডলী।
আমার আর রাকীবের জন্য
সেবার উপহারের ঝাঁপিতে সেবার ছিল জ্যোতি’দার শ্রেষ্ঠ গল্প, নালন্দা থেকে প্রকাশিত।
সেখান থেকে গোগ্রাসে পূনর্বার পড়া হলো কেষ্টযাত্রা, রংবাজ ফেরে না, পরমাত্মীয়,
গোলাপের নির্বাসন এর মত গল্পগুলি। বার বার। জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পের মেজাজই
এমন, বহুপাঠে আস্বাদন কমে না।
আমাদের এই অনুষ্ঠানের
অব্যবহিত পরেই জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত’কে নিয়ে ‘অগ্রবীজ’ নামের লিটল ম্যাগাজিন এর বিশেষ
সংখ্যাটি হাতে পাই। কেন তাঁর গল্প অন্যদের থেকে আলাদা, পেছনের দর্শন ইত্যকার
ভাবনার মিতব্যয়ী শব্দের ব্যাখ্যা জ্যোতি’দার লেখালেখির নিজস্ব একটা প্রেক্ষিত
বানাতে সহায়তা করে, সজ্জিত সে প্রেক্ষিত তীক্ষ্ণ, কারুকার্য খচিত আর আড়াল দিয়ে
রহস্যাবৃত। জীবনের বঞ্চনা, দীর্ণতা, ক্লিষ্টতা জ্যোতিপ্রকাশ সরাসরি লেখেন না। আলো-আঁধারী
দিয়ে বর্ণিল করে সেসব পাঠকের কাছে পরিবেশন করেন। সে পরিবেশনার পরম আস্বাদ নিতে পাঠকেরও প্রস্তুতি দরকার পড়ে।
৩
‘উঠান থেকে অরন্যে’র পরের
বারের আড্ডার জন্য আমাদের তর সইছিল না। পূরবীদি বরাবরকার উৎসাহে আমরা আরো দ্রুত
সক্রিয় হয়ে গেলাম। জুন মাসের পরে আবার সেপ্টেম্বরে। লেবার ডে উইকএন্ডে ইউ এস এ আর
ক্যানাডাতে একসঙ্গে তিনদিনের ছুটি পাওয়া যায়। এবার আয়োজন একটু বড়, সময় বেশী,
লোকজনের পরিমান আগের চেয়ে বেশী। সব মিলিয়ে আনন্দের ঢেউও বেশী।
জ্যোতিদা আমাদেরকে
স্বকন্ঠে গল্প পাঠ করে শোনান। খুব গুছিয়ে, শব্দের অর্থবোধকে কিঞ্চিত জোর দিয়ে
নিজের লেখা পড়েন জ্যোতিদা, যা শ্রোতা পাঠকের মনযোগ ধরে রাখতে বাধ্য। শুনতে শুনতে আমার মনে হয়, লেখক হিসেবে কেবল নয়,
নিজের লেখা পড়বার সময়ও তাঁর ডিটেইল যেন কিছুতেই বাচালতা না হয়ে পড়ে সেদিকে
বেখেয়ালেও নজর রাখেন জ্যোতি’দা।
অথচ সামনাসামনি? গাম্ভীর্য
আর আভিজাত্য সবসময় জ্যোতিদার উপস্থিতি সংলগ্ন থাকে, কিন্তু ক্ষমতাধর লেখক হিসেবে
কোন অহংকার ঘুণাক্ষুরেও অনুভব করা যায় না। বরং জ্যোতিদা শিশুতোষ, চমৎকার সেন্স অব
হিউমার। বরং অধিক মনযোগী শ্রোতা। সবকিছু আগাগোড়া শুনে (অন্যমনস্ক হবার ছিটেফোটা
আমি অন্তত ধরতে পারিনি) অর্থবোধক মন্তব্য করেন তা থেকে প্রেরণা পাওয়া যায়।
৪
আগেই বলেছি ‘উঠান থেকে
অরন্যে’র অনুষ্ঠানগুলোতে সাহিত্য পাঠ ও আলোচনা পর্বটির বাইরে গান শোনা, আর আড্ডায়
কাটে। গান শুনে শুধু নয়, সমঝদার শ্রোতাকে গান শুনিয়ে সঙ্গীত শিল্পীরাও যে আনন্দ
পান তা এই আড্ডাতে বোঝা যায়। জ্যোতি’দা সকাল, দুপুর কিংবা বিকেলে আড্ডাতে যোগ
দিচ্ছেন, আপাত নিরব মনোযোগী শ্রোতা জ্যোতিদা জমিয়ে গল্পও বলছেন। সবটা সময় হয়তো তাঁর কাছাকাছি থেকে কথা শুনবার
অবকাশ মেলে না, তবু কোন এক ফাঁকে শুনে ফেলি কাউকে বলছেন, ‘ নীলুফার ইয়াসমিন নিউইয়র্কে এলে
আমাদেরকে (স্বস্ত্রীক জ্যোতিপ্রকাশ) খুঁজতেন। গান শুনিয়ে আনন্দ পেতেন’। পরে আরেকবার তাঁর সংক্ষিপ্ত এক ভাষণ শুনেছি, জ্যোতিদা বলছেন-
‘ গান তেমন করে গাই না, কিন্তু দেশে, বিদেশে, আমেরিকার বিভিন্ন ষ্টেটে নামকরা সব
শিল্পীর গান শুনে কান তৈরী হয়েছে, ভালো গান শুনলে বুঝতে পারি’।
এবার তিনদিন ব্যাপী বিরতি
দিয়ে দিয়ে গান শোনা হলো। এই একটা বিষয়ে, লক্ষ্য করেছি জ্যোতি’দার ক্লান্তি নেই।
পরম ধৈর্য্য নিয়ে ভালো গান শুনতে থাকেন। সে জন্যেই বুঝি ‘রংরাজ ফেরে না’ গল্পে
গানের প্রসঙ্গে লেখা হয়.... “ কিন্তু কথা হচ্ছে, গানের মতো কিছু না। গানের
কথাগুলোর বেশ, ভাবের কথাগুলো কেমন করে সুর হয়ে দুই কানে আসর জমায়। ভালোবাসার
মধ্যে, চোখের জল মেশানো। মনোরঞ্জন যখন গান ধরল, ‘ গাহুর রূপ দেইখ্যা হইলাম পাগল,
ঔষধে আর মানে না, চল সজনী যাই লো নদীয়ায়...’। স্পষ্ট করে সবকিছু দেখা গেল
ভালোলাগার মতো। ...মনোর গানের সঙ্গে রাখালের নতুন তৈরী ঢোলকের হাত যেদিন বসে না
সেদিন রঘুনাথ হায় হায় করার শব্দ শুনতে পায়। সে জন্যে গানের মতো কিছু না। তাই রঘু
গানও শোনে”।
ভালো গান হলে প্রতিটি সঙ্গীতের
আসরে গভীর রাত জেগে শোনেন জ্যোতি’দা, যথাযথ প্রশংসা করেন, আর বোঝা যায় যে গান
শোনার এই কান একদিনে প্রস্তুত হয়নি।
৫
অরন্যের তৃতীয় আড্ডায়
জ্যোতিদা’রা এলেন সন্ধ্যে নাগাদ। বিকেল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আমার ইচ্ছে
ছিল এবার তাদের প্রথমে বাসায় নিয়ে আসবো। দু’মিনিট হাঁটাপথের দূরত্বে থেকেও ব্যস্ততার
কারণে গতবার তাঁদের আনতে পারিনি, এবার আগে একপাক ঘুরে তারপর কটেজে যাবেন,
পূরবীদি’র সঙ্গে সেইমত কথা হয়ে আছে। তাদের গাড়ি যখন এসে থামলো তখনো বৃষ্টি। রাস্তা পার হতে গিয়ে দুজনেই ভিজে গেছেন
কিছুটা। পূরবীদি যথারীতি রাজকীয় দেখতে। জ্যোতিদা সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠেও ঘুরে ঘুরে দেখলেন। আমাদের টুকিটাকি
সংগ্রহ দেখলেন, তার খুঁটিনাটি দেখার গভীর দৃষ্টি!
সেপ্টেম্বর মাসের এক
তারিখ জ্যোতিদার জন্মদিন। মন্ট্রিয়াল আসবার আগে টরন্টোতে তাঁর একদফা জন্মদিন উদযাপিত
হয়ে গেছে। দু’দিন দেরী, তাতে কি? আমরাও
তাঁকে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা জানাতে চাই। অফিস ফেরত মন্ট্রিয়ালের নামকরা দোকান
‘এদোনিস’ থেকে খুব মন-পসন্দ কেক অর্ডার করে আসি। শুক্রবার বিকেল নাগাদ ডেলিভারী
দিলে ফ্রিজে রাখতে হবে। সংগ্রহ হয় বিশালাকার জন্মদিনের কার্ড, তাতে সকলের সই,
শুভেচ্ছা আর মন্তব্য।
আয়োজন করে শনিবার বিকেলে
জ্যোতিদার জন্মদিনের কেক কাটা হলো। নিউইয়র্ক থেকে এসেছেন তাজুল ইমাম। তার স্বরচিত জন্মদিনের
গানে সুর মেলাই সবাই। জ্যোতি’দার পরিমিত প্রকাশভঙ্গি স্বত্ত্বেও মনে হলো- খুব
উপভোগ করছেন আমাদের এই হই-হট্টগোল। আসলে তো জ্যোতিদা নিজেও দারুণ আড্ডাবাজ মানুষ।
সেটা বুঝতে আরো সময় লাগলো। কিন্তু তার আগে কল্পনাচক্ষে দেখতে পাই, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাটে, আড্ডার আসরে লেখক-বন্ধু পরিবেষ্টিত জ্যোতিপ্রকাশ
দত্ত।
জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের বৃহৎ
পরিসরের রচনা তাঁর আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা। এই লেখার ভঙ্গী, বর্ননাকে শুধু অসাধারণ
বললে কম বলা হয়। আর তাঁর স্মৃতিশক্তি! প্রখর সে স্মরণে ভর করে পাঠক আমার ভ্রমণ হয়ে যায় গ্রাম থেকে বগুড়া শহরে, তাঁর শৈশব,
কৈশোরে। সাক্ষাৎ হয় ১৯৪৫ এ শহরে তার আত্মীয় স্বজনদের সাথে। একটি ক্ষয়িষ্ণু জমিদার
পরিবারের মাতুতালয় আর পিত্রালয়ের সংগ্রামের কাহিনী কষ্টিপাথরের মত সৎ, তাজা শব্দে
মূর্ত হয়ে আমার সামনে ধরা দেয়! মায়ের মৃত্যুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা থেকে বিষাদময় দীর্ঘ
ছায়া উঠে এলে আমি বোবা হয়ে বসে থাকি। মনে হয়- বেশীরভাগ ক্ষেত্রে লেখকেরা, যত বয়সীই
হোন না কেন শৈশবে অধিবাস করেন, ঘুরে ফিরে তার শৈশবকে লিখতে ভালোবাসেন।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে
সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গে লেখেন, তা পাঠ করে এক নির্বিকার অবোধ বাস্তবতার সঙ্গে
অনেক পরে জন্মানো আমার পরিচয় ঘটে, যা এই
ভূখন্ডের বিশাল জনগোষ্ঠীকে অনিশ্চিত সময়ের মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল, আর
দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ অবধি তা আমাদেরকে মুক্তি দিতে পারেনি। জ্যোতি’দা লেখেন, “
হিন্দু মুসলমান বিভেদের ব্যপারটি অনেকদিন বুঝিনি আমি। এমনকি সাতচল্লিশের পরেও
অনেকদিন। সম্ভবত পঞ্চাশেরি, যখন পাড়াপড়শি সবাই শেষরাতের গাড়িতে উঠতে শুরু করে,
বাবার কথায় ব্যাপারটি আঁচ করতে পারি। আমরাও থাকবো না, ওপারে চলে যাবো, এই ভেবে
বাবা আমার স্কুলের বেতন দেন না, স্কুলেও যাওয়া হয় না তাই। যদিও ওপারেও না”। তাঁর আত্মস্মৃতি মূলক রচনা ‘সময় ভোলে না কিছু,
মানুষেরই ভুল’ এ ছোট ছোট দু চারটে ষ্ট্রোকে যে ছবি আঁকেন তাতে দেখি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কি অবিমৃষ্যকারীতায় ধর্মের
সংকটে ঢুকে গেল, রন্ধ্রে পৌঁছে গেল ধর্মভিত্তিক আত্মোপলব্ধির সংকট।
সাক্ষাৎকারে পড়ি,
আত্মজীবনী লেখার প্রসঙ্গে জ্যোতিদা বলেছেন যে খেয়াল থাকে যেন তাঁর লেখা আত্মকাহিনী
কীর্তিমানের কথামাত্র না হয়ে ওঠে। আমি গোচরে, অগোচরে নিবিষ্টভাবে দেখি, মিতবাক আর
স্বভাবে মিতভাষী মানুষটি কেমন সবখানে না থেকেও কীর্তিমান মানুষের মাপে নিজের
উপস্থিতি বজায় রাখেন!
৬
২০১২ সালে উঠান
চিত্রশালার সাহিত্য আড্ডা হলো না। জ্যোতি’দা, পূরবী’দি বেড়াতে এলেন আমাদের বাড়ি।
উপলক্ষ্য আমরাই মাত্র নই, তাঁদের আত্মীয় অটোয়া শহরে থাকেন, তাদের দেখতে যাবার আগে
আমাদের সঙ্গে এক রাত্রি থাকবার অনুরোধ রক্ষা করতে তাঁরা এলেন। এই প্রথম দু’জন
প্রিয় মানুষকে একলা করে পেলাম। নানান গল্প, অভিজ্ঞতা, স্মৃতিচারণ দিয়ে ঘিরে রইল
আমাদের সেই সন্ধ্যাটুকু।
আমেরিকার প্রবাস, দু’সন্তান
জয়ীষা, দীপনের শৈশবের কয়েক পশলা, লেখালেখির বাইরে রাজনীতি ইত্যকার বিষয় আশয় সব
মিলিয়ে গল্প হয়। দেশে ফিরে গিয়েছিলেন দু’জনেই বেশ পদস্থ চাকুরী নিয়ে। কয়েক বছর
ছিলেনও। জ্যোতি’দা বলেন, তখন লিখেছেন। সৃষ্টিশীলতায় কেটেছে সময়। বন্ধুবান্ধব আর
আড্ডা তো ছিলই। জ্যোতি’দা, পূরবী দি দুজনেই যার পর নাই বন্ধু অন্তঃপ্রাণ।
জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের অতি
উচ্চ মার্গের সেন্স অব হিউমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। আমাদের দু’ কন্যা চিত্রণ আর
চারণের সঙ্গে এতদিনে জ্যোতিদার ভালো পরিচয় হয়েছে, সুতরাং নির্দ্বিধায় গল্পগাছা
চলছে। ওরা যার কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম নেয় তার নাম প্রেমলতা মহাজন,
দিল্লীর মিরান্ডা মিউজিক স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। বহুবছর মন্ট্রিয়াল প্রবাসী। নাম
শুনে জ্যোতিদা ঝটিতি ইংরেজী করে দিলেন- ‘লাভ ক্রিপারস ইউজারার’। আমরা তো হেসেই
খুন। পূরবীদি তখন হাটে হাড়ি ভাঙ্গলেন। আরো আছে, জ্যোতিদা আশাপূর্ণা দেবীর ইংরেজী
নাম দিয়েছিলেন ‘হোপফুলা দেবী’। জগতে আনন্দের এত উপকরণ!
আরো পরে আমাদেরই কোন
অনুষ্ঠানে একজনকে দেখিয়ে জ্যোতি’দাকে বললাম, এ হলো তোতনের বৌ। শুনে সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতিদা
বিড় বিড় করে বললেন- ‘বোতনের তৌ!’ অন্য এক প্রসঙ্গে চটজলদি তমালিকা কর্মকার উলটে ‘কতালিকা মর্মকার’
হয়ে উঠলো আরেকদিন! তো সে রাতে গল্পে গল্পে আড্ডা ভেঙ্গেছে প্রায় ভোর রাতে।
আমাদের এক বয়স্য, অধ্যাপক, লেখক বন্ধু পূরবী’দি আর জ্যোতি’দার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন।
তাঁকে সকালে আসতে বলেছি। দীর্ঘকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কারণে সম্ভবত ভদ্রলোকের
দৈনন্দিনে নিয়মানুবর্তিতা ভালোরকম বিদ্যমান। সকালের নাস্তার নিমন্ত্রণে তিনি সকাল
বেলাতেই আসবেন, সেটি স্বাভাবিক। কিন্ত ভোর রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আড্ডার লোভ আর
তোড়ে আমরা সে কথা ভাবতে পারিনি। ভোরবেলা ডোরবেল বাজলে একটু বেকায়দায় পড়ে গেলেও আমি
আর পূরবীদি আধো ঘুম জাগরণে তার সঙ্গে গল্প করতে বসি। কথাবার্তায় ঘুমের ব্যঘাত
নিশ্চইয়ই ঘটেছিল, তবে জ্যোতিদা উঠলেন আরো পরে। ততক্ষণে আমরা না ঘুমানোর ঝক্কি
সামলে নিয়েছি। ততক্ষণে আমাদের আরো কিছু অতিথি এসে গেছেন। জ্যোতিদারা দুপুর অব্ধি থাকতে
পারবেন না বিধায় সকলকেই সকালের নাস্তায় ডেকেছিলাম। জ্যোতিদা ধীরে সুস্থে, প্রাতঃরাশের
প্লেট নিয়ে অধ্যাপকের দিকে ফিরে সহজ ভঙ্গীতে বললেন, “ আর্লি টু বেড এন্ড আর্লি টু
রাইজ, মেইক্স এ ম্যান হেলদি, ওয়েলদি এন্ড ওয়াইজ’ এর পারফেক্ট উদাহরণ হচ্ছেন আপনি”।
এই রসিকতা হজম করতে অধ্যাপকের অসুবিধে হচ্ছিল কিনা, অতিথি তদারকে আটকে গিয়ে দেখার
ফুরসত পাইনি!
৭
এ বছর জুন মাসে হয়ে গেল
উঠান থেকে অরন্যের চতুর্থ দফার আয়োজন। সবার মনে এ নিয়ে চনমনে ভাব। নানা কারণে আগের
বছর এটি হয়ে ওঠেনি। আমাদেরকে সর্বাগ্রে স্বভাবসুলভ উৎসাহ দিয়ে আসছিলেন পূরবী দি।
মাঝখানে জ্যোতিদার
শারিরীকভাবে বেশী ভালো ছিলেন না। কিছুটা উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম, কি রকম
দেখবো। আমাদেরকে অবাক করে দিয়ে স্বাস্থোজ্জ্বল জ্যোতিদা আর পূরবীদি নিজেদের নিজস্ব
আভা নিয়ে হাজির হলেন। এবারও যথারীতি নিউইয়র্ক, টরন্টো, অটোয়া আর মন্ট্রিয়ালের লেখক,
কবি, ছড়াকার, সঙ্গীতশিল্পী আর সংস্কৃতিমনা
বন্ধুরা উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের আড্ডা বলাই বাহুল্য জমে উঠলো বিনা আয়াসে। জ্যোতি’দা
তার স্ফটিক ব্যক্তিত্বের আলো ছড়িয়ে বসে আছেন, আনন্দিত মুখ।
পরেরদিন শনিবারের সাহিত্য
আড্ডায় ধৈর্য্যশীল হয়ে সকলের লেখা শুনলেন। পূরবী বসু, লুৎফর রহমান রিটন, সাদ
কামালী, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, তাজুল ইমাম সহ বেশ অনেকের উপস্থিতিতে জমে উঠলো
নিজের লেখা পাঠ এবং পাঠোত্তর আলোচনা। সব শেষে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের গল্পপাঠ। গল্পের
নাম ‘দেহাবশেষ’। কষ্টে মরে যাওয়া মানুষের
দেহাবশেষ কোলে নিয়ে কষ্টে বেঁচে থাকা আরেক মানুষের গল্প।
দু’দিনের মিলন মেলা
ভেঙ্গে গেলে আমরা প্রতিবার বিষণ্ন মনে ঘরে ফিরি, এবার তার ব্যতিক্রম হলো।
জ্যোতি’দা, পূরবী’দি আর রিটন ভাই (লুৎফর রহমান রিটন) আরো একদিন আমাদের সঙ্গে রইলেন।
রিটন ভাই যেখানে উপস্থিত থাকেন সেখানে সম্ভাব্য সকল আলাপের বিষয়বস্তুই ‘লাফটার দ্য
বেষ্ট মেডিসিন’ হয়ে ওঠে। দেশ, রাজনীতির সিরিয়াস
টপিক নিয়েও কথা হয়, আমরা স্মৃতিকাতর, সচেতন হয়ে কথাবার্তা বলি। পরক্ষণেই রিটন
ভাইয়ের ব্যোমশেল, হয় কোন কৌতুক, না হয় নিজের অভিজ্ঞতা। জ্যোতিদা’র ভান্ডারও
সমৃদ্ধ। পূরবী’দিও কম যান না। রাত ভোর হতে দ্বিধা করে না।
পরেরদিন আমার কাজ। এমন
আড্ডার লোভে অফিস কামাই করা তুড়ি মারার শামিল, কিন্তু তাঁদেরকে ফিরে যেতে হবে।
গন্তব্য অটোয়া। রিটন ভাই সেখানে বাস করেন, আর জ্যোতি’দা পূরবীদি আমেরিকা ফিরে
যাবার আগে বোনঝিকে দেখে যেতে চান। মন্ট্রিয়াল থেকে অটোয়া দু’ঘণ্টার পথ যে এঁদের
জন্য নিমেষমাত্র হবে তা ভেবে নিজেকে কিঞ্চিত ইর্ষাতুর আবিস্কার করলাম।
৮
‘দেহাবশেষ’ গল্পটি পাঠ
শুরুর আগে জ্যোতিদা বলছিলেন যে আপাতত এটি তাঁর শেষ গল্প। এর পর হয়তো অন্যকিছু
লিখবেন। জ্যোতি’দার উচ্চারণে কি কোন অভিমান লুকিয়ে আছে? তাই বা কেন? একজন তারকা
লেখক এমন সিদ্ধান্ত তো নিতেই পারেন, তখন লিখবেন আরো অন্যরকম কোন মহৎ রচনা। তবু কেন
যেন একটি অন্তর্নিহিত অভিমানের সুর খুঁজতে ইচ্ছে করে জ্যোতি’দার ঘোষণায়।
আমাদের দেশ সৃজনশীল
মানুষের দেশপ্রেম সাধারণত বুঝতে পারে না। পঁচিশে মার্চের কালরাত্রে যখন ঢাকায়
ধ্বংসযজ্ঞ, জ্যোতিদা তখন ফিলাডেলফিয়ায় টেম্পল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। নিউজল্যাবের
সহকারী হিসেবে তিনিই সম্ভবত প্রথম বাঙ্গালী যিনি সংবাদটি জেনেছেন। তারপর থেকেই
শুরু হয় পথে নেমে পড়া। বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন, অর্থ সংগ্রহ, প্রচার।
আমেরিকার রাজধানীতে গিয়ে বুকে পোষ্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা, বাল্টিমোর-ফিলাডেলফিয়ায়
পাকিস্থানী অস্ত্রবাহী জাহাজের পথ আটকানোয় সাহায্য করা সব করেছেন। দেশের মাটিতে
স্বশরীরে বন্ধুক কাঁধে যুদ্ধ করা ব্যাতীত সর্ব অর্থে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন
জ্যোতিদা। নিজের পড়াশোনা সুদূর আমেরিকাতেও
প্রায় নয় মাসের জন্যই পিছিয়ে গিয়েছিলো।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ,
সক্রিয় থাকার স্পৃহা কখনোই জ্যোতি’দাকে ছেড়ে যায় না। সেজন্যেই দেখি পৃথিবীর ভিন্ন
প্রান্তে থেকেও সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন চলমান গণ জাগরণ কর্মসূচীর সঙ্গে, পূংখানুপুংখ
সংবাদ রাখেন। বিনিদ্র থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় শোনার জন্য উন্মুখ থাকেন।
বুকের মধ্যে স্বাধীন, সার্বভৌম, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে প্রতিনিয়ত
শ্বাস-প্রশ্বাস নেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।
শুধুই কি দেশ? আরো
নির্দ্দিষ্ট পরিসরে সাহিত্যের জগতেও কি নেই একই রকম অবহেলা ভরে ঠেলে দেয়ার রেওয়াজ?
আধুনিক ছোটগল্প লেখা চর্চায় যে দরজা জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত খুলে দিয়েছেন, সেটি কেন্দ্র
করে কয়েক দশক পরে একটা গোছান বাড়ি তৈরী হয়ে গেছে, আর সে বাড়ি জুড়ে পরিবর্তনের যে হাওয়া,
সে হাওয়াটি বুঝতে এবং যথাযোগ্য স্বীকৃতি দিতেও তো উন্মুক্ত চিন্তাশীলতা প্রয়োজন।
তবু, আশা আর ভরসা দুটোই
করতে মন চায় যে দেশ আর বাংলা সাহিত্যের অঙ্গন এই দেশপ্রেমিক লেখকের মন আর কাজ দুইয়ের
যথাযথ মূল্যায়ন করবে।
যৎসামান্য যতটুকু দেখেছি,
তাতে লেখক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত’র পাশাপাশি আমি মানুষ জ্যোতি’দার ‘জ্যেনুইনিটি’ আর
‘রিয়ালনেস’ এর ভক্ত ( এ শব্দদুটোর বাংলা যে হয় না, তা তো না। কিন্তু ‘লষ্ট ইন
ট্রান্সশ্লেশন’ এর আশংকা হচ্ছে)। বাংলাদেশ
ক্রিকেটে জিতলে ফোন তুলে উত্তেজনা ভাগ করা, পুরনো দিনের সিনেমা থেকে হালের ভালো
মুভি দেখার মত ছোটখাটো উল্লেখে বুঝেছি- জ্যোতি’দা যাই দেখেন না কেন, সে দেখা বা
বোঝার নেপথ্যে বোধের জটিল মনস্তাত্বিক গল্প লেখকের মননশীলতা থাকে, সচেতনে না হলেও
অবচেতনে নিশ্চয়ই।
বর্তমান নিবাস : কানাডা।
গল্পগ্রন্থ : পৃষ্ঠাগুলি নিজের।
লেখক পরিচিতি
0 মন্তব্যসমূহ