বাঁশির বাঁশে বদল

মেহেদী উল্লাহ

সমস্ত পৃথিবীর শক্তিরা জন্মগ্রহণের উল্লাসে যখন মানবের শরীরে প্রথম ঘনায়, কোলাহলে ঢলাঢলি করে, পরিপূর্ণ প্রকাশ সফলতার আনন্দে প্রাণের দরজায় স্টেশন থেকে যাত্রারত ট্রেনের হুইসেল বাজে আর অতিকায় সজাগে মানব চোখ জাগরণে-নিদ্রায় পৃথিবীকে পাহারা দেবার অধিকার পায় তখন থেকে অজিউল্লা শেষ।

বিষণ্ণ অস্থিরতার নির্মোকে ঢাকা ঢাকার ফার্মগেট সিগন্যালের যানজট কবে কিভাবে বাড়তে বাড়তে বাড়তেই থাকল তার খোঁজ পৃথিবীর কেউ কেউ কি, সিটি করপোরেশন, ঢাকার বাসিন্দারা রাখলেও শুধু একজন কি রাখবে; অথবা তার রাখার দরকার আছে? মানব জীবনের ছলনায় যেখানে জীবন থেমে রয়, সেখানে তাকে পুনরায় থামাবার কাজে, মানব শরীর আজ থেকে লালবাতি জ্বালিয়ে রাখল, তবে কী আজ এই শরতের পড়ন্ত সূর্যবেলা থেকে অজিউল্লা আন্দাজে ছুটবে— যে রকম মেঘের ভেতর-বাহির চলাচল দেখা যায় সূর্যের।

আজ যে যানজট, রকমারি যানের সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকার অবসর অথবা যানজট কমানোর সফলতা কিংবা বৃথা চেষ্টা, ট্রাফিক পুলিশের যা-তা, তাতে লাভ-ক্ষতি হতে চলল না অজিউল্লার। তেজগাঁও কলেজের সামনের রাস্তায় প্রতি দফায় লাগা ১০-১৫ মিনিটের জ্যামটা আর ভালো হয় না; সিগন্যালের লালবাতি নয়, ট্রাফিক পুলিশের হাতের নাচানাচিতে গাড়ির ব্রেক নড়চড় করে, চালকের হাত-পা নড়ে। এইমাত্র আবার ‘এখন থামুন’ ইশারায় ট্রাফিক পুলিশ সমবেত গাড়ি-জনতার উদ্দেশে হাত উপরে তুলে খানিক স্থির করে, খানিক নাচিয়ে ছেড়ে দেয়। অবিশ্রান্ত শসাওলার হাঁক, মিনারেল ওয়াটারের বোতল উঁচিয়ে গাড়ি থেকে গাড়ির কয়েক ইঞ্চি দূরত্বের ফাঁক দিয়ে হেঁটে চলা পানিওলা, রুমাল-কেতাব-ওয়ার্ডবুক-দুনিয়ার মানচিত্র- ধ্বজভঙ্গ রোগের মহৌষধ যাবতীয় বারো রকম বিক্রেতা-হকারের পা-প্রাণ ও মুখের শোরগোল লেগে আছে জ্যামের গায়ে। এ গাড়ি-ও গাড়ি, যে যেখানে যেমন পারছে, সময় নিয়ে পয়সা তুলে বেরিয়ে আসছে তাৎক্ষণিক, সেই তুলনায় কমে গেছে পত্রিকার হকার। সকালের দিকে যে ব্যস্ততা, নগদ নগদ খবর পড়ানোর তাগাদায় হকারের ডাক-আহ্বান সবই দুপুর কি বিকেলে ম্লান, ভেল্যুহীন।
ফুটপাত থেকে উঠে আসে ওজিউল্লা। বগলের তলায় সব দুই টাকা দামের পত্রিকা, বেচা হয় বেশি, এবার নিশ্চয়ই জ্যামটা বিশ-পঁচিশ মিনিট ছাড়াবে। লুঙ্গিটা কোমরে আরেকবার শক্ত করে জড়িয়ে পত্রিকার বান্ডেলটাকে বোগলের নিচে চাপা দিয়ে বাম হাতে তুলে নেয় গোটা তিন-চারেক কপি। একটা সিটিং বাস টার্গেট করে, দরজা টপকে ভেতরে ঢুকে গিয়ে শরীরে উত্তেজনা এনে, কণ্ঠে জোর খেলিয়ে ওজি ডাকতে থাকে, ‘অ্যাই খবর লন, দুই টাকায় খবর লন, দ্যাশ-বিদ্যাশের খবর লন, বইসা বইসা খবর লন, খবর হিট, হিট খবর…।’

কেউ খবর নিল না, খবরপত্র ওজির হাত ও বোগলের নিচেই চাপা থাকল, যাত্রীরা সিটে বসেই থাকল, ওজির ডাকে সাড়া দিল না। বাসের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত মধ্য গলি দিয়ে ওজি বার কয় আসল-গেল, কারোরই দুই টাকার খবর পড়ার আগ্রহ নাই। যাত্রীদের একজন পেছন থেকে ধমক মারল,‘ওই হালা দেহস না জ্যাম বাইজা আছে, কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস না, এইডা তর গলা না ফাডা বাঁশ, যা… গরমে বাঁচি না, হালায় পেপার…’

পটকা মাছের মতো হঠাৎ চুপসে গেল ওজি, বেকার থাকল বিছুক্ষণ, নামার সময় চোখ পড়ল পাশের একটা লোকাল বাসে। মনে মনে নিজের প্রতি ঘেন্না ধরিয়ে ভাবল, ‘হালার বুইড়া, ক্যাচ ক্যাচ কইরা কি কয় না কয়, আর হুমড়াইয়া লাগছে সব।’ পাশের বাসে বিক্রি সফল হকারের মুখখানা হাসিখুশি, এই বিকেলেও তার কত কপি যাচ্ছে আনন্দের সীমানা নাই। তাই দ্যাখে ওজি…। ফার্মগেটের পড়ন্ত বিকেলের এই ত্যক্ত-বিরক্ত চাকাওলা বাসগুলোর গোঙানিতে নিঃশ্বাস বাতাসে মিশেছে কি না আওয়াজ পাওয়া গেল না। শুধুই গোঙানি বেড়েই চলল, ট্রাফিক পুলিশের হাত নাচানাচিতে গাড়িগুলো হেলে-দুলে কাওরানবাজারের পথে বাড়িয়ে গেল চাকা।

ওজিউল্লা একা-স্থির-নিরস বদনে শুধু কনকর্ড টাওয়ারের সবুজ গ্লাসের দিকে মুখ তুলে ফুটপাত ধরে দাঁড়িয়ে; অতপর ল্যছাড়া-লীছাড়া একটু-আধটু হাঁটা। বগলে তার সারাদিনের পেপার, এক কপিও বেচতে পারে নাই। ফুটপাতের মাঝ উচ্চতার চিকনা চাকনা বেনামি গাছগুলো বৃথা ছায়া ছড়াতে চায় দুপুরবেলা। আর এই বিকেলে কেমন যেন মরে গেছে, জীর্নশীর্ণ সন্ধ্যা হওয়ার আগেই এরা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যায়, কিছুক্ষণ পরপর দু-একটি রেইনট্রি কড়ই হয়তো থাকে, তার ছায়াও ছায়াহীন অপ্রয়োজনীয় ছন্নছাড়ার শহরে। দু-একটা পাখি, বললে কালোকাক, কক কক ডাকতে ডাকতে রেইনট্রির এ ডাল থেকে ও ডালে ওড়াউড়ি করে, আশপাশে জায়গা পরিবর্তনের জন্য বড়গাছ নেই, তাই এক গাছেই সময়ের পর সময় ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে যায়।
গাছগুলোর নিচ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছিল এতক্ষণ ওজি। একটা-দুটো ভিক্ষুকের সঙ্গে দেখাও হয়ে গ্যাছে। ভাঙা-বিকৃত হাত-পা আর একটা থালা ফুটপাতে বিছিয়ে বসে গেছে, ভিক্ষার ঝুলিতে দান পড়লে এখন আর আগের মতো ঝনঝন করে উঠে না, এ তো নতুন এক সময়, দেশে কি আর পয়সার দাম আছে এখন, এক টাকার নোটও উঠে গেছে, শহরে ভিক্ষা মানে এখন দুই টাকা—
টাকা পড়লে শব্দ হয় না, উপর থেকে অর্ধহলুদ বা শুকনো মরা পাতা উড়ে এসে পড়লেও শব্দ হয় না। ভিক্ষুকের থালায়, নোটের সঙ্গে দু-একটা পাতাও পড়ে রোজ। ওজি আজ ওদের সঙ্গে মশকরা করল না, একই স্থান অথচ ফার্মগেটের এই ফুটপাতে দীর্ঘদিনের পরিচিত আত্মীয়তুল্য ভিক্ষুকদের ভিক্ষাপাত্রে টাকার বদলে ঠিসারা-মশকরার দান দিল না ওজি। অন্যদিন এ পথে বিকেল গড়ালে ওজিও ভেড়ে। আজও ভেড়ে, কিন্তু অন্যদিনের চেয়ে আজ যে ভিন্ন।

‘হুইয়া-বইয়া তো শালা মেলা কামাই নিলি’ এক পা খোঁড়া যুবতী রমিজাকে ঠাট্টার আনন্দ দিয়ে তারপর যেখানে যাওয়ার যেত ওজি। এই এখন রমিজাকে পাশ কাটিয়ে বগলে পেপারের বান্ডেল ধরে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল কিশোর।
‘যাচ গা নি, বেচা কেমুন?’ রমিজার প্রশ্নে সামান্য পেছন ফিরে ওজি জানাল, ‘ভালা না, আইজ একখানও না।’
‘কই যাচ হুন।’ রমিজা পাশে বসার ইঙ্গিত দেয়। শুনেও শোনে না ওজি। ঘাড়টা এমন ভাবে বাঁকালো, বুঝিয়ে দিল আজ তার মোটেও সময় নেই।
‘কারো কতা হুনার সময় নাই। আইজ ওজি নিজের লগেই কতা কইতে ব্যস্ত।’ এমনই হয়তো ভাবল ওজি।

এইটুকু পথ, অথচ অতিক্রমের কোনো তাড়া নাই, ওজির পা দুটো তার মনের সঙ্গে সঙ্গে সুর মিলিয়ে যাচ্ছে বোধহয়। কয়বার জ্যাম এলো-গেল, জট ছাড়ার অনুমতি দিয়ে ট্রাফিক হাত নাড়ালো, কিছুই ওজির লরে বিষয় নয় আজ। সে আবৃত, প্রায় পাঁচ-ছয় মাস হলো!

নিজের আগের রূপের সঙ্গে দেখা হয় না অনেক দিন। দেখা নাই। যে দিন চলে গেছে, সেই দিনের স্মরণে, মিলাতে না পারার আফসোস, ওজির বিষণ্ণ মুখের ভাষা ছুটে গেছে। থমকে থমকে আসা চাকা-ইঞ্জিন গুমড়ে পড়ে থাকা জ্যামের বাসের মন্থরতা তার ঠোঁট জুড়ে, রা নাই, ঠোঁটের নড়ন-চড়ন নাই। কোথায় যাচ্ছে ওজি? জানে না। জানে না।

লহীন-লক্ষ্মীহীন-লহীন-লক্ষ্মীহীন…

এই পথ তো ওজির অচিন নয়, এই পথ তো অজানা কিছু নয়, তবুও কোথায় যাচ্ছে সে! লেদাকালে ফার্মগেটের এই রাস্তাখান ছাড়া আর আশপাশের টুকটাক চিপাচাপা বাদে কিছুই চিনত না সে। আর এখন? ফার্মগেট থেকে শাহবাগ-বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গুলিস্তান, ওদিকে গাবতলী থেকে মিরপুর-বেড়িবাঁধ সবই চেনা, আসল রাস্তা, সহকারী রাস্তাও চেনে সে; অথচ কিশোর পথ হারিয়েছে। তখন চিনত না, জানত না, তবু চেনার কত চেষ্টা ছিল, আয়োজন ছিল, আর এখন? সব চেনা জগৎ, তবুও কত সংকীর্ণ ওজি, যাওয়ার কিংবা পা বাড়ানোর জায়গা নাই। একটু নড়চড়ে কত সময় ক্ষেপণ, শরীর নেতিয়ে পড়তে চায়। শুকনো মুখে খালি পা বাড়াতে বাড়াতে এক সময় সন্ধ্যার আন্ধারের কালো গালিচায় গিয়ে উঠবে সে। এ হাঁটা চির শতাব্দীর কায়দা মাফিক।

সেন্টু, রুকন, মহব্বত, খাদেম, জুবা, দেলারা কোথায়? হ্যাঙ্গারে দোলানো পাঞ্জাবির মতো একটা একটা শরীরকে মুখসমেত ওজিউল্লার চোখের সামনে কে যেন টাঙিয়ে ধরছে, সেন্টুর পর রুকন, তারপর মহব্বত, মহব্বত-খাদেম, খাদেম-জুবা, জুবা-দেলা; সিরিয়াল উল্টায় না। নাগরদোলার ডানার মতো নিচে নামে, ওঠে উপরে । কেউ চড়েনি তাতে, শরীরগুলো ঝোলানো। বাম হাতের পিঠ ঘষে কপাল থেকে ঘাম সরিয়ে দেয় ওজি। তারপর হাতখানা পাছায় লাগায়, কোঁচকানো লুঙ্গির সুতা খেয়ে নেয়, ফুটপাতের শেষ মাথায় এসে রাস্তা শুরু হয়ে কনকর্ড টাওয়ারের আঁচলের তলে তলিয়ে যায় ওজি ও তার লেদাকাল।

‘মহব্বতরে কই দেহা যাইবো।’ ভাবছে ওজি। অরা সবাই এহন আর সেই দিনগুলোর মতন লেদা নাই।

’৯৮ সালের বন্যার মাঝের মাসে ঢাকায় আসে ওজি ল্যাংটাকালের খুব বেশি দিন পর নয়। চাঁদপুরের দহুলিয়া গেরামে পানি বাড়তে থাকল, বাড়ির নামায় সন্ধ্যা হয় হয় সময় পানির উপরে কাঠির মাপ বসিয়ে নিশানা দিয়ে আসত ওজি আর লগের পোলাপানরা। পরের দিন সূর্য ওঠার আগে গিয়ে দেখত, কাঠি পুরো পানির তলে। আবার কখনো এমন ডুবেছে যে, বোঝা যায় ঠিক কতটুকু পানি বাড়ল। খবরটা দিতে দেরি হতো না, পানি বাড়তাছে, পানি বাড়তাছে, পানি বাড়তাছে, পানি বাড়…কয়দিনের মধ্যে উঠানে হাঁটু পানি, রসুইঘর-কলতলা-বাঁশতলা-তালতলায় পানি আর পানি। ওজিগো ছনের ঘরে পানি ওঠার দিন বেশি দূরে নাই। সেই সঙ্গে গেরামে কাম-কাজ নাই, খাওন নাই, দাওন নাই, পেট খারাপ হলে ওষুধ নাই, শরীরের তাপ বাড়লে টষুধ নাই। বেশি মনে নাই ওজির। খালি মনে আছে, পানি বারন্তি খেলা যখন খুব জমলো তখন তার এক মামা ঢাকায় রিকশা চালাতো, ওজির বাপ মরা, দুখি মা আছে, ভাই নাই, বোন নাই, খালি ওজি আছে। পানির দৌড়ানিতে ওজিরে সঙ্গে করে মায় লুকায় ঢাকার ফার্মগেটে। তেজগাঁও রেললাইনের বস্তির একটা ঘরে ওঠে তারা। ওজির ভাসাভাসা মনে আছে এখনো, মায় ফার্মগেটের বাসায় বাসায় ভাত রান্ধা-বাড়া আর কাপড় কাচতো, ধোয়ামোছার কাম লইছিল, ঘর ভাড়া তহন ২০০ ট্যাকা। প্রথম দিনেই মহব্বতের লগে পরিচয়, খাতির হয়ে যায়। মহব্বত ওজিরে দ্রুত নতুন জগতের সন্ধান দেয়, সেন্টু-খাদেম-দেলা গো দলে ওই দিনই নাম লেখায় সে। এদের বয়সের তেমন ফারাক নাই। ওজির যদি চার তো মহব্বতের পাঁচ আর খাদেমের সাড়ে চার, সবার বয়স আশপাশ।

‘ওজি কই যাচ, জুবারে দেখছি হেমুই যাইতাছে।’ তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের সামনে রিকশার গ্যারেজের সাত্তার জুবার খবর দেয়। ওজি পাত্তা দেয় না। এই মুহূর্তে তার কাকে দরকার? জানিয়ে দেয় সাত্তাররে ওজি, ‘জুবা মরুগগা, মহব্বতের কাছে যাইতাছি।’
‘ওইডার লগ ধরছস নাহি, এইবার তো খাইসে, তর ছাড়ন নাই, পেপার বেচা বাদ দিয়া চোখ লাল টমটো কইরা রাস্তারপর জুরনইন্না মুরগীর লাহান ঝিমাইস।’

ওজি কথা বলে না। চুপচাপ সাত্তারকে এড়িয়ে চলে যায়।
‘ওই হালা বেশি কতা কয়, চেইনের একটা বল লাগাইতে লাগায় এক মাদান।’ ওজি হয়তো এই মুহূর্তে মনে মনে বিরক্তির পেন্সিল দিয়ে এই ছবিই আঁকছে সাত্তারের বিরুদ্ধে।

কলেজ পার হয়ে সোজা রাস্তায় হাঁটা দেয় তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের দিকে। ওখান থেকে মহব্বতের কাছে যাবে, ‘হালায় টিপ না থাকলে টেরাকের ছাদে হুইয়া হুইয়া ডাডি মারে’ তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডে মহব্বতের থাকা-পরা দিন। ট্রাকের হেলপার, ড্রাইভাররে ওস্তাদ কইতে কইতে মালের চালান লইয়া মহব্বত চলে যায় কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর, নোয়াখালী। ওস্তাদ তো ওগো ভাষা। উঠতে বসতে ওস্তাদ কইতে হয়, ড্রাইভাররা খুশি! ওজির অবশ্য এইসব নাই, সে লেদাকাল থেকেই একার কারবার করে। ফার্মগেট ছন্দ-আনন্দ সিনেমা হলের লগে যে পত্রিকার দোকানটা, সেখান থেকে ভোরবেলায় গিয়ে খবরের কাগজ নিয়ে আসে, তারপর আর সারাদিন খবর নাই, মালিকের লগে কথাও নাই কুনো; সন্ধ্যায় বেচার টাকা জমা দেয় আর যত কপি আবেচা থাকে ফেরত।

বস্তির ওজি ও তার সঙ্গীরা লেদাকাল থেকেই কর্মবান, জীবিকার সন্ধানে তৎপর, এদের একেকজন একেক কাজে চলে এসেছে, ছিনতাইকারীও নাকি হয়েছে কেউ কেউ, ওই যে রুকন, ওইটার সঙ্গে ওজির এখন আর বন্ধুত্ব নাই, কয়দিন জেলে থাকে, কয়দিন ছিনতাইয়ের স্পটে মদ-গাজায় দিন যায় ওর। কিছুদিন আগে পেপারে ছবি ছাপা হয়েছে। এক মহিলার গলার চেইন টান মারতে গিয়ে ধরা খেয়ে গণধোলাই, তারপর পুলিশ। ওজি কাউকে কাউকে বলেছেও, ‘ আমাগো রুহন, ধরা খাইচে, ছবি আইচে পেপার অ।’

ওজি নতুন নতুন ঢাকায় এসে করত পানি চেঁচানির কাম। হোটেলে চা দোকানে পানি সাপ্লাই দিতো। এখন যায় হকারি করে, ওই লোকের সঙ্গে পরিচয় পানির কারবার দিয়েই। দোকানটায় পানির ডিব্বা দিয়ে যেত প্রতিদিন। ওজির বন্ধুরা টুকটাক কাজ করে, তাই তাকেও করতে হয়, এভাবেই কাজে অভ্যস্ত হলো সে। একদিন নিজে থেকেই পেপারের হকারিতে নাম লেখালো, মাসিক ট্যাকাও আছে। পেপার বেচনে খাটনি কম, ট্যাকা সমান। তাই পেপারের হকারি করাই ভালো ঠেকলো তার।

কিসের টানে যেন হাঁটায় গতি ফিরে পায় ওজি। সে সময়ে ফার্মগেটের সেই ফুটপাত থেকে রেলক্রসিং পর্যন্ত এসেছে, তার তুলনায় অনেক কমের মধ্যেই চলে এলো মহব্বতের ডেরায়, মহব্বত থাকলে কই থাকতে পারে, তা স্পষ্ট জানে ওজি। ঢুকে যায় একটা গলির চিপায়। ট্রাকের নানা পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ, পুরনো টায়ার, চাকার লোহার খোলে ঠাসা গলিটা। এখানেই কোথাও না কোথাও ঝিম মেরে বসে থাকা মহব্বতকে পাওয়ার আশা করছে ওজি। চগর-বগর চোখে এদিক-ওদিক তাকিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না মহব্বতকে। ওজি একটা ঝুপড়ির ভেতর মুখ ঢুকিয়ে কার কাছে যেন জানতে চাইল, ‘মহব্বত আইছে?’
ভেতর থেকে উত্তর এলো, ‘মহব্বত কেঠায়, কুন মহব্বত?’
‘উই যে, হ্যাংলা-টোটকা, জিনজের প্যান আর গ্যাঞ্জি পইরা ঘুরে, হেলপার, পোলাডা…’

আর কিছু জানার থাকল না ওজির, মুখটা আরো শুকিয়ে গেল। বগলের নিচের পেপারগুলোর বিশ্রী অবস্থা, বেদশা। আগের মতো এগুলোতে যত্নের ভাঁজ নাই, অগোছালো হয়ে কোনোটার এ কোনা, আরেকটার ও কোনা এদিক-ওদিক বেরিয়ে আছে। বান্ডেলটার ওজন কি সইতে পারছে ওজি? খুব কি ওজন!

অবহেলা আর অযত্নের জিনিস এমনই অপ্রয়োজনীয় নিয়তির আগাছা-অদরকারি-উদাসী। এর বন্ধনে ভালোবাসা নাই, ধরে থাকলেও পড়ার কিংবা হারানোর ভয় নাই।

মহব্বতকে পাওয়া গেল না, ড্যাণ্ডিও খাওয়া হলো না, এই নিস্তরঙ্গ সন্ধ্যার নেমে আসা আন্ধারে গাদলা গাদলা মেঘে ছাওয়া মন নিয়ে ট্রাকস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোর ওজিউল্লার এক টান কি দুই টান ড্যান্ডিতে ভালো লাগত, ‘ফুঁকতো, ফুঁকতো, আহ আহা আহ ফুঁকছে, এই জীবনে এই প্রথম।’ কেউ একজন পাশ থেকে হুঁশিয়ার করত, আর পলিথিনের মুখ নিজ মুখে ঢুকিয়ে অজিউল্লা টান মারত একেবারে কলিজার বোঁটা থেকে, আহ আহ…। তারপর ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চোখ টমোটোর মতো লাল আর মুখ আলুর মতো বাদামি বানিয়ে পরাজয়ের গ্লানির ঘোমটা আন্ধারের মাথায় পরিয়ে দিত। যানজটের মতো নিশ্চিত জানা অপচয়ের ভারে মন্থর জীবনটাকে তেজগাঁও রেললাইনের গায়ে গজিয়ে ওঠা দুর্বার মতো ছড়িয়ে রাখত। ট্রেনের নিচে থেতলে যেত সব আশা, স্বপ্ন, সবুজ, সব সব সব। আহা জীবন! ওজিউল্লার ভেতরে একটা জলপাই রঙা ট্রেন না ঢোঁড়া সাপ মোড়ামুড়ি করছে, বাঁকিয়ে-আঁকিয়ে চলছে, আর কচকচ করছে বালির পথের মতন, ওজি টের পায়।

বস্তির জীর্ণ জীবনে মেলে ধরা সন্ধ্যার আন্ধারের ছাতাটা এবার ঘুরে যায় ঘুটঘুটে রাতের সূচনার দিকে। ওজিকে ফিরতে হবে, যেতে হবে, বলতেই হবে। সমস্ত পরাজয়-আÍবিকৃতির পথ থেকে শরীরে যনজটের মন্থরতা লাগিয়ে জমা দিতে হবে হিসেবের সঞ্চয়, পরাজয়ের বিবর্ণ খাতা। সরে দাঁড়াতে হবে। আশাপাশ থেকে ভেসে আসা গাঁজা কি টায়ার পোড়ানোর-ড্যান্ডির গন্ধটা নাক দিয়ে ঢুকে সোজা নেমে যায়, শান্ত করে অশান্ত সাপটাকে। বস্তির কোন কোনায়, পরিত্যক্ত চিপায় পোলাপানরা কোন প্রয়োজনে ধোঁয়ার ধোঁয়াশায় ছিন্নভিন্ন সংসার পেতেছে কে জানে! ওজির জন্য এতটুকুই যথেষ্ট, হয়তো বাতাসে ভেসে আসা ঘ্রাণ টেনে নিয়ে প্রথমের স্বাদ পায় ওজি। স্ট্যান্ডের সদ্য জ্বালানো বৈদ্যুতিক বাতিগুলো সেই গাম্ভীর্যের শরীরে আলো ঢালে, রাস্তার উপরে খাম্বায় করপোরেশনের নিয়ন বাতি স্নিগ্ধতা দেয়। শরতের আকাশে চাঁদ ডুব ডুব। রাস্তায় ধুলা নেই, কাছে-দূরে কোথাও কাশের সাদার চিহ্ন নেই, শুধু বিবর্ণ এই নগর বেদনার্ত। সন্তানবতী নারীর মতো নগরীর জরায়ুপথে ওজিউল্লা কেবল পৃথিবীর নতুন আলো দেখার আশায় ছটপট ছটপট করে।

সব আলো, আশার আলো নিভিয়ে বস্তির আন্ধার ঘরে আরেকটু পরেই ঘুম আসবে নেমে। ঘুমিয়ে পড়বে অন্য সব মায়ের মতো ওজিউল্লার মা হাসিনা।

এই তো মাস ছয় আগে ওজির ঠোঁটে সবে গোঁফ ঠেলা দিল, চিবুকে দাঁড়ির গুনগুন শব্দ শোনা গেল, বাহুতে বল এলো, শরীরের কোথাও কোথাও কালো পৃথিবী তার ডানার রোমশ দেহ উন্মোচনের আভাস দিল, নতুন প্রাণে-শরীরে নতুন রস ও ঘামের ঘ্রাণ পেতে শুরু করল ওজি। বয়স তার ১১ বা ১২ হয়েছে কী? বস্তির ফাতেমার মার চোখ পড়ল লণটায় সবার আগে। হাসিনাকে ঠিসারা করতে করতে বলে ফেলল, ‘সাওয়াল তো মাসাল্লা, বিয়ার উপযুক্ত অইছে, নায়েক অইছে, ও ওজির মা পোলার লাইগা মাইয়া দ্যাহো না ক্যা?’

কাছেই ছিল ওজির মা। ‘তর মাইয়াতো এহনও পিণ্ডুলি, আমার পোলার উপর চোখ গেল কেমুনে, হা হা হা…।’
হাসিনা ব্যাপারটাকে হালকা করে দেয়।
‘দ্যাশে ছেমড়ি কি টান পরছে, আশপাশেই তো কত লা, তর পোলার ইনকাম ভালা, বিয়া করাইয়া এহন একটু জিরা।’
‘তা পোলার এত খালা থাকতে মার অ্যাত ট্যাশুন ক্যা। তোরা দেইখা কবি, অসুবিধা কি…।’

হাসিনা ফাতেমার মাকে মেয়ে দেখার দায়িত্ব দিয়ে বোধ হয় নিজের অধিকার ও দায়িত্বকে আরো সচেতন করে নিল-ঝালিয়ে নিল। একটা মাত্র পোলা, মাস গেলে ঘর ভাড়া দেয়, মাসের খোরাকি কিনে দেয়, পোলার খারাপ কুন স্বভাব নাই, পরের মাইয়া তো শান্তিতে সোজা রাস্তায় ঘরের বউ হবে… কপালের ভাইখ। নিমিষে আড়ালে লুকিয়ে চুরিয়ে হাসিনা ছেলের জন্য বউ খুঁজতে থাকল, মায়ের চোখ ঠাউর করব‍ার সাধ্য কার!

এখনো কী তাই খোঁজে হাসিনা? পাঁচ-ছয় মাস ধরে ছেলের মতি-গতি কি সে ঠাউর করতে পারে নাই। এতটুকু ধরতে পারে নাই ছেলের ভালো-মন্দ, সময়-অসময়। ওজিউল্লা কি আগের সেই আছে? সব কিছু, দেহ-মন-কাজ-কারবার সব ঠিক তো?
আলো দূরে ঠেলে ঘুটঘুটে আন্ধার বেছে বেছে ফিরছে ওজি। ফিরছে ফার্মগেটে। আলো এখন বিশ্রী, সকালের আলো আরো বিশ্রী লাগে ওজির। আন্ধার ভালো। আন্ধার ভালো, আন্ধারে পেপারের রাস্তাঘাটে কোনো কাজ নাই। হাঁকডাকের ব্যাপার নাই। আন্ধার ভালো ওজির কাছে, পেপারের দিন ভালো না। আগে দিন ছিল ভালো, পেপারের দিন ছিল ভালো। এমনকি ভোরের পরে আলোর দিন ছিল ভালো, অনেক অনেক ভালো।

চার কি পাঁচ বছরের ওজি হাফ প্যান্ট পরে একই কায়দায় বগলের নিচে পেপারের বান্ডেল নিয়ে উঠত বাসে, ফার্মগেট তখন ‘৯৮-৯৯, এত জ্যাম ছিল না। তবুও ওজি যখন বাসে উঠত অচেনা এক মাহাত্মের সুর খেলে যেত। গলায় কি বাঁশি বসানো ছিল তার, কথা বললেই মিষ্টি এক সুর ছড়িয়ে পড়ত বাসময়। যাত্রীদের সে কি আগ্রহ! অথচ এখনো তো সেই একই ওজিউল্লা-একই রোদন। কাজ হয় না, কাজের কাজ।

আশপাশের হকারগুলো দাঁড়িয়ে শুধু দেখল ওজির গলার জাদু। সুরের উৎস খোঁজার বৃথা চেষ্টা তাদের সারাদিন। ওজির একই কণ্ঠ থেকে ঝরল, ‘…এই খবর লন, খবর লন। বইসা বইসা খবর লন।’ কি এক আমুদে ভরে ওঠে বাসটা। যাত্রীরা হুড়মুড়িয়ে পড়ে, ওজির হাত পেপারহীন হয়, যাত্রীর দরকার শেষ হয় না। খালি হাতেই অভ্যাসের চর্চা চালায় ওজি, ‘ওই খবর লন, খবর লন…।’ তাতেও যাত্রীর বিরক্তি নাই, ধমক নাই, বেমানান চুর পীড়নের ইঙ্গিত নাই। যে বাসেই ওঠুক, ওজি বলুক, তার গলার আওয়াজে যাত্রীরা মশগুল। ছোট্ট ওজির টাকা গোনারও সময় নাই, এক এক কপি দেয় আর মুঠি করে টাকা গুঁজে রেখে দেয় পকেটে, যেই বাসেই উঠুক কচিকণ্ঠের মাতানো সুরের কোলাহল পড়ে যায়, যাত্রীর হৃদয়ের কোনো এক পথে ঢুকে তা আত্মীয়তা করে বসে। যাত্রীরা খবরে কি আছে তার চেয়ে বেশি প্রণোদিত ওজির ডাকে। অথচ একি ঘটল! মাত্র তো ছয় মাস!

তেজগাঁও রেলক্রসিংয়ের সামনে এসে দাঁড়ায় ওজি। কিছুণ আগেই চলে গেছে রাত আটটার ট্রেন। ট্রেন আসার আগে ও পরে পনের-বিশ মিনিট এখানটায় জটলা পাকায় রিকশা ও কার। যারা দেখে, এ এক মজার খেলা দেখে। এরি মধ্যে এক রিকশাওলা ও এক কারওলায় হাতাহাতি। সে কি কাণ্ড! জটলার ফাঁক গলে বেরিয়ে পড়ে ওজি। হাঁটতে থাকে ফার্মগেটের দিকে। শেষপর্যন্ত কি এক টানে, কি এক খেয়ালে বগলের নিচের পেপারের বান্ডেলটায় চোখ পড়ল তার। এবার বেশ প্রয়োজন মাখানো দৃষ্টিতে বান্ডেলটা ডান বগল থেকে বাম বগলে বদল করে, আর বিড়বিড় করে বলে, ‘দুই ট্যাকা দাম, তাও পারি না, এক কপিও পারি না।’ বুক পকেটে ডান হাতের আঙুল গুঁজে নেড়েচেড়ে দেখল, একটা পয়সাও নেই, টাকা দূরে থাক। আবার বিড়বিড় করে ঠোঁট, ‘পারি না, ক্যান পারি না, পারি না, আইজ পাঁচ-ছয় মাস পারি না…পারি না…পারি না… বেচা কইম্যা গ্যাছে গা।’

ছন্দ-আনন্দ সিনেমা হলের কোলাহল ফুরাতে শুরু করেছে, দুই-একটা ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে সব বন্ধ হতে থাকছে। হকারের হাঁকডাক নাই, ফুটপাতের পসরা গুটিয়ে গেছে। ‘শুভ সংবাদ পত্রিকা বিতান’-এর মালিক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনেরও আজকের মতো ব্যস্ততা শেষের পথে, হকাররা যে যা বেচেছে, সারাদিনের খোরাক তিন-চার রুটের হকার জমা দিয়ে, অবিক্রিত কপি ফেরত দিয়ে গেছে। শুধু আসেনি ফার্মগেট। ফার্মগেটের এমনকি মোয়াজ্জেমের সবচেয়ে নামডাকওলা হকার ওজিউল্লা এখনো ফেরেনি।

ওই তো কিশোর! ওজিকে দেখেই মালিক মোয়াজ্জেমের মেজাজ বিগড়ে যায়। অপেক্ষা আক্ষেপের ধমকে রূপ নেয়, ‘নবাবজাদা আইচেন নি, সারাদিন কুনাই আচিলেন আন্নে। ওরোই হেতে এক কপিও লাগে বেচে নো। এরে ওজি, এরুম শুরু কইচ্চস কিল্লাই? তুইতো আগে এরুম আচিলি না, এক্কেরে নষ্ট অই গেছস গোই। কাম বাদ দি কোনানে গেছস ক…. শিগগির ক…। অন এক্কেরে হিডি হাডাইলাম। খানকির হোলা, এরে তুই না বাসে উইঠলে হত্রিকা শেষ, আর অন এরুম শুরু কইচ্চস কিল্লাই? আইজ্জা লাইচ্চাই ঠিক করি হালামু।’ নোয়াখাইল্লা মালিক মোয়াজ্জেমের এত ধমকেও মুখ ফুটল না ওজির। ফার্মগেটের দীর্ঘ জ্যাম তার ঠোঁটে। আবার চটে মোয়াজ্জেম, ‘এরে কতা কস না ক্যা, হ্যাতে কতা কয় না ক্যা… রাইত বারোটা হইজ্জনতো তোর লাই ইয়ানে বই থাকুম নি? হাচ-ছ মাস ধরি এক পইসার নাম নাই। কোনাই য….।’

ওজির মুখে কোনো কথা নাই, স্থির দাঁড়িয়ে আছে। মোয়াজ্জেম এবার পেপারের বান্ডেল কাটার ছুরিটা তড়িঘড়ি করে বের করে তেড়ে আসে, ‘এক্কেরে আইজ্জা কাডিয়ালামু, হারামজাদা… বান্দির বাইচ্চা….।’

আর পারে না ওজি। ফার্মগেটের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ ও বালক দুর্দান্ত হকার ওজিউল্লা বগলের পেপার বান্ডেল হাতে নিয়ে উঁচুতে উঠিয়ে দোকানের গদিতে ছুঁড়ে ডুকরে কেঁদে বলে, ‘আমার গলায় ব্যারাম অইচে, ব্যারাম অইচে মোয়াকাকা।’



লেখক পরিচিতি
মেহেদী উল্লাহ

তরুণ গল্পকার।
‘পোস্টমাস্টার ও অন্যান্য গল্পে’র পাণ্ডুলিপির জন্যে পেয়েছেন  জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য-২০১৩ পুরস্কার।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ