শমীক ঘোষ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
হতে চেয়েছিলেন রাজনীতিক। এর মধ্যে বুঝতে পারলেন-- সিনেমার পোকা মাথায় ঢুকে বসে আছে। শুরু করেছিলেন বিজ্ঞান দিয়ে-- শেষ অব্দি পড়েছেন হিসাব বিজ্ঞান। এখন চাকরী করেন ব্যাংকে। প্রতিরোজ চার ঘণ্টা ট্রেন জার্নি টু মুম্বাই।
কাফকা, দেরিদা, কুন্ডেরা, ফুকো মাঝে মাঝেই শমীকের সঙ্গে ঝামেলা করেন। ফলে রাত জেগে লিখতে হয় প্রবন্ধ। করতে হয় অনুবাদ। এবং গল্প। স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন--এ জীবন গল্পের নদী। েএই নদীর মাঝির মত লেখেন শমীক ঘোষ। প্রাণবান। এখনো শমীক ঘোষের বই বের হয়নি। ছোটো পত্রিকা, বড় পত্রিকা, নেটে তার গল্প প্রকাশিত হয়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
হতে চেয়েছিলেন রাজনীতিক। এর মধ্যে বুঝতে পারলেন-- সিনেমার পোকা মাথায় ঢুকে বসে আছে। শুরু করেছিলেন বিজ্ঞান দিয়ে-- শেষ অব্দি পড়েছেন হিসাব বিজ্ঞান। এখন চাকরী করেন ব্যাংকে। প্রতিরোজ চার ঘণ্টা ট্রেন জার্নি টু মুম্বাই।
কাফকা, দেরিদা, কুন্ডেরা, ফুকো মাঝে মাঝেই শমীকের সঙ্গে ঝামেলা করেন। ফলে রাত জেগে লিখতে হয় প্রবন্ধ। করতে হয় অনুবাদ। এবং গল্প। স্পষ্টভাবে বুঝতে পারেন--এ জীবন গল্পের নদী। েএই নদীর মাঝির মত লেখেন শমীক ঘোষ। প্রাণবান। এখনো শমীক ঘোষের বই বের হয়নি। ছোটো পত্রিকা, বড় পত্রিকা, নেটে তার গল্প প্রকাশিত হয়।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
আমি প্রথম গল্প লিখি আমার সাত/ আট বছর বয়সে। একটা ডায়েরীতে। গল্পের নাম কিশোর গোয়েন্দা অমনিবাস। তাতে নিজেই ইলাস্ট্রেশনও করেছিলাম। আমার লিখতে বসে ধারণা হয়েছিল যে এটা বহুলোক পড়বে। কয়েকজন পড়েছিলেন এবং হেসেও ছিলেন। সেইটা প্রথম গল্প লেখার শুরু। আমাকে ছোটবেলায় খাওয়ানোর সমস্যা ছিল। আমাকে খাওয়ানোর সময় গল্প বলিয়ে খাওয়াতে হত। আমার মা একজন অসাধারণ গল্পকার। যাঁর বলা প্রত্যেকটা গল্প অন্যরকম ছিল। কিন্তু রোজ গল্প বানাতে বানাতে একদিন তাঁর স্টক ফুরোতে শুরু করল। তাছাড়া সেই সময় আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। অবিবাহিত পিসি, ঠাকুমা এরা সব ছিলেন। তাই মা ব্যস্ত থাকতেন খুব।
অতএব গল্প বানিয়ে শোনানোর বদলে গল্পের বই পড়ে শোনানো শুরু হল। আমার যখন ছয় বছর বয়স তখন একবার কোন একটা অনুষ্ঠানে আমার মাসতুতো দিদি আমাকে ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে শুনিয়ে খাওয়াচ্ছিল। তবে ঠিক খাওয়া বন্ধ হওয়া মাত্রই সে গল্পটাকে একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছেড়ে রেখে বই বন্ধ করে উঠে গেল। এবং অনেক অনুনয় বিনয় করেও তাকে দিয়ে বাকি অংশটা পড়াতে না পেরে আমি বইটা নিজেই পড়তে শুরু করি। আমি সেই বয়সেই মনে মনে পড়তাম। ফলে প্রথমদিকে সব্বাই ভাবত যে আমি বই পড়ার অভিনয় করছি। কিন্তু ক্রমশ আমাকে বই জোগাড় করে দেওয়াটাই একটা সমস্যা হয়ে উঠতে লাগল। আমার গল্প বানানোর শুরুও প্রায় এই সময় থেকেই।
আমি প্রথম গল্প লিখি আমার সাত/ আট বছর বয়সে। একটা ডায়েরীতে। গল্পের নাম কিশোর গোয়েন্দা অমনিবাস। তাতে নিজেই ইলাস্ট্রেশনও করেছিলাম। আমার লিখতে বসে ধারণা হয়েছিল যে এটা বহুলোক পড়বে। কয়েকজন পড়েছিলেন এবং হেসেও ছিলেন। সেইটা প্রথম গল্প লেখার শুরু। আমাকে ছোটবেলায় খাওয়ানোর সমস্যা ছিল। আমাকে খাওয়ানোর সময় গল্প বলিয়ে খাওয়াতে হত। আমার মা একজন অসাধারণ গল্পকার। যাঁর বলা প্রত্যেকটা গল্প অন্যরকম ছিল। কিন্তু রোজ গল্প বানাতে বানাতে একদিন তাঁর স্টক ফুরোতে শুরু করল। তাছাড়া সেই সময় আমাদের একান্নবর্তী পরিবার। অবিবাহিত পিসি, ঠাকুমা এরা সব ছিলেন। তাই মা ব্যস্ত থাকতেন খুব।
অতএব গল্প বানিয়ে শোনানোর বদলে গল্পের বই পড়ে শোনানো শুরু হল। আমার যখন ছয় বছর বয়স তখন একবার কোন একটা অনুষ্ঠানে আমার মাসতুতো দিদি আমাকে ঠাকুরমার ঝুলি পড়ে শুনিয়ে খাওয়াচ্ছিল। তবে ঠিক খাওয়া বন্ধ হওয়া মাত্রই সে গল্পটাকে একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছেড়ে রেখে বই বন্ধ করে উঠে গেল। এবং অনেক অনুনয় বিনয় করেও তাকে দিয়ে বাকি অংশটা পড়াতে না পেরে আমি বইটা নিজেই পড়তে শুরু করি। আমি সেই বয়সেই মনে মনে পড়তাম। ফলে প্রথমদিকে সব্বাই ভাবত যে আমি বই পড়ার অভিনয় করছি। কিন্তু ক্রমশ আমাকে বই জোগাড় করে দেওয়াটাই একটা সমস্যা হয়ে উঠতে লাগল। আমার গল্প বানানোর শুরুও প্রায় এই সময় থেকেই।
আমি গল্প বানাতাম
দুপুরে বারন্দায় বসে। আমাদের পুরোনো বাড়িটায়
কাঠের সোফাকাউচে বসে আমি গল্পের পর গল্প বানিয়েছি। নিজে অভিনয় করে দেখেছিও সেই সব গল্প। অর্থাৎ আমার গল্প লেখার শুরু আমার একদম শৈশবে। এরপর যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি সেই সময়
সমরেশ বসু পড়তে শুরু করি। এবং ওর প্রায় সমবয়সে লেখা নয়নপুরের মাটি পড়ে ফেলি। এবং এই সময়েই আমার মাথায় ঢোকে যে আমাকেও পারতে হবে। আমাকে লিখতে হবে। আমার ছাত্রবয়স খুব সুখের নয়। আমি খুবই
অমনোযোগী ছাত্র ছিলাম। এবং নানা ব্যক্তিগত কারণে আমার ছাত্র বয়সেই আমি বুঝতে পারি আমার দ্বারা খুব বেশীদূর লেখাপড়া হবে না। এইসময় একটা নেশা আমায়
পেয়ে বসে – সেইটা হল ফিল্ম দেখার। এবং ক্রমশ এই মাধ্যমটার প্রতি আমার একটা
চরম আকর্ষণ তৈরী হয়। এবং আমি নিজেও ফিল্ম ডিরেক্টর হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। সেইটা ২০০৩ সাল। আমি একবছর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ইতি টেনে ফিজিক্স পড়তে
ভর্তি হয়েছি। এবং সেইখানেও আমি বুঝতে পারছি যে আমার মন লাগছে না। আমার শিক্ষকরা আমার বিষয়ের প্রতি আগ্রহটা ক্রমশ নম্বরে পর্যবসিত করে ফেলে আমাকে
ক্রমশ শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে তুলছেন। সেই সময় আমার মাথায় ঢোকে যে ফিল্ম করলে টাকা রোজগারও হবে আবার নিজের ইচ্ছাটাও বজায় থাকবে।
কিন্তু ফিল্ম করা তো বললেই সম্ভব নয়। প্রথম যে প্রশ্নটা আমার মাথায় আসে তা হল আমি আদৌ ততটা ক্রিয়েটিভ কিনা। খানিকটা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েই আমি
আমার প্রথম গল্প লিখতে শুরু করি। খাতায় কয়েকদিন পড়ে থাকার পর একদিন সাহস করে আমি আমার মাকে দেখাই। এবং তিনি প্রায় জোর করেই সেই গল্পটা নিজে হাতে
টুকে নিয়ে দেশ পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন। কয়েকমাস পড়ে একদিন বিকেলে বাড়ি ফেরার পর মা বলেন যে তোর নামে দেশ থেকে একটা চিঠি এসেছে। একটা পাতলা ফিনফিনে খাম। আমার ধারণা হয়েছিল যে চিঠিটা বুঝি রিজেকশন স্লিপ। চিঠিটা খুলে দেখি
মনোনয়নের চিঠি। আমার গল্প লেখার সেই শুরু। এক অর্থে আমার পরিণত বয়সের প্রথম লেখা গল্পই বাংলা ভাষার প্রথমসারির কাগজে ছাপা হয়।
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
আমি আগেই বলেছি, আমার ছাত্রজীবন সে বড় সুখের সময় নয়। এই সময় আমি রাজনীতিগত কারণেই হোক, পড়াশুনো না করার কারণেই হোক আরো একবছর ড্রপ দিই। এই একই সময় আমার জীবনে প্রেম আসে অবিরত। নিয়ত মেঘের মত। গুরু গুরু গর্জনে, সামান্য বর্ষণে নিভে যায় যথাযথ। আমার মোহভঙ্গ হয় রাজনীতি নিয়েও। আমি সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাস করতাম। আমি বন্দুকের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাম । আমি কমিউনিজমে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু জীবন আমাকে শেখাল যে আসলে সব রাজনীতিই পঙ্কিল কম্বু পথে চলে। এই সময় আমি যাকে বলে প্রবল একটা ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করি। আমি প্রায় সব কিছুতেই বিশ্বাস হারাই। এবং আমার লেখাও আসলে একধরণে অন্ধকারে পতিত হয়। একটা সময়ের পর আমি বুঝতে পারি যে আমার ইতি টানা উচিৎ। এবং আমি লেখা বন্ধ করি।
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
আমি আগেই বলেছি, আমার ছাত্রজীবন সে বড় সুখের সময় নয়। এই সময় আমি রাজনীতিগত কারণেই হোক, পড়াশুনো না করার কারণেই হোক আরো একবছর ড্রপ দিই। এই একই সময় আমার জীবনে প্রেম আসে অবিরত। নিয়ত মেঘের মত। গুরু গুরু গর্জনে, সামান্য বর্ষণে নিভে যায় যথাযথ। আমার মোহভঙ্গ হয় রাজনীতি নিয়েও। আমি সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাস করতাম। আমি বন্দুকের রাজনীতিতে বিশ্বাস করতাম । আমি কমিউনিজমে বিশ্বাস করতাম। কিন্তু জীবন আমাকে শেখাল যে আসলে সব রাজনীতিই পঙ্কিল কম্বু পথে চলে। এই সময় আমি যাকে বলে প্রবল একটা ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করি। আমি প্রায় সব কিছুতেই বিশ্বাস হারাই। এবং আমার লেখাও আসলে একধরণে অন্ধকারে পতিত হয়। একটা সময়ের পর আমি বুঝতে পারি যে আমার ইতি টানা উচিৎ। এবং আমি লেখা বন্ধ করি।
৩. গল্প লেখার
জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
আমি গল্প লেখার
জন্য কোন আলাদা প্রস্তুতি নিই নি। আমার পড়ার অভ্যেস আমাকে সাহাজ্য করেছে। যেহেতু সমরেশ বসু আমার অন্যতম প্রিয় লেখক।
বা বলা চলে আমার বাল্যকালের হিরো, আমার যৌবনের উত্তমকুমার, আমি লেখার সময় প্রায়শই সমরেশের বই খুলে বসে দেখেছি উনি কি ভাবে লেখেন।
কি ভাষা নিয়েছেন। আমার লেখা উপমাবহুল। কারণ সমরেশের লেখা উপমাবহুল। আমার ভাষা আয়ত্ব করা সমরেশের ভাষা থেকে। আরেকজন মানুষ, যিনি আমাকে প্রবল ভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন, যাঁর জন্ম ১৮৮৩ সালে, আমার জন্মের ঠিক
একশো বছর আগে, তিনি হলেন ফ্রাঞ্জ কাফকা। কাফকার থেকে বড় কোন লেখককে আমি আজ অবধি চিনিনি। তার
লেখা – বিশেষ করে ইন দ্য পেনাল কলোনি, গ্রেট ওয়াল অফ চায়না, দ্য হাঙ্গার আর্টিস্ট, ট্রায়াল – আমি যদি কোনোদিন অমন একটা লেখাও লিখতে পারতাম! আমি যে সময় ছাত্র সেই সময় গোটা পৃথিবী
জুড়েই জাদুবাস্তবতা নিয়ে বিরাট হইচই। ফলে আমি মার্কেজ পড়ি। রুলফো, কার্পেন্তিয়ার, কোয়ার্তাজার ইত্যাদি পড়ি। মার্কেজের আত্মজীবনি লিভিং টু টেল দ্য টেল, বা রুলফোর পেদ্রো পারামো আমাকে সাহিত্যকে বুঝতে শিখিয়েছে। আরেকজন যাঁকে ছাড়া আমার এক মুহূর্ত চলে
না তিনি হলে মিলান কুন্দেরা। কুন্দেরা হলেন কাফকার পরে আমার দ্বিতীয় ঈশ্বর। কুন্দেরা আর যৌনতার মধ্যে আমি কুন্দেরাকে বাছব! সব শেষে বলি। আমার সব থেকে পছন্দের গল্প বলার
কৌশল হল ফিল্ম। আমি ফিল্মবাফ হতে চেয়েছিলাম। আমি ফিল্মবাফ হতে পারিনি। কিন্তু আমি যদি এত ছবি না দেখতাম আমার গল্পগুলোও অন্যরকম হত।
৪. আপনার
গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
জানি না। বুঝতে
চাইছি। যেদিন পুরো বুঝে যাব সেইদিন আর লেখার ইচ্ছা থাকবে কিনা সন্দেহ। তবে গল্প জিনিসটা খুব ইন্টারেস্টিং। আমরা নিয়ত
যে জীবনে বাস করি সেই জীবন ডাল, সেই জীবন বোরিং – একঘেয়ে, বিরক্তিকর। এই আমি মুম্বাই শহরে বাস করি, আমাকে প্রতিদিন আমার ভালো লাগুক না ভালো লাগুক দীর্ঘ সময় যাতায়াত করতে হয়। আমার চাকরী করতে ভালো
লাগছে না, অথচ নেহাত জীবন ধারণের কারণে আমাকে প্রতিদিন দাঁত চেপে করে যেতে
হচ্ছে। ধরা যাক একজন নারী একজন পুরুষকে চাইছেন, কিন্তু পুরুষটি তাঁকে পাত্তা দিচ্ছেন না।
বা উলটো টা। ধরা যাক একজন অপেক্ষা করতে করতে পাগোল হয়ে
গেছে, তার ইচ্ছা করছে সেই মানুষটা এক্ষুনি চলে আসুক। কিন্তু হচ্ছে না। বা
আবার সমাজের ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষেত্রে আরো বড় পরিসরে ভাবা যেতে পারে, যে একটি ছেলে একটা বস্তিতে থাকে, তার ইচ্ছা সেও শাহরুখ খান হবে, কিংবা সে যার সাথে প্রেম করবে তাকে ঐশ্বর্য রাইয়ের মত দেখতে হবে। হচ্ছে না। হবে না।
হওয়ার নয়। কিন্তু সে কি সেইটা মেনে নেবে? হয়ত সে চোর হবে, বা ডাকাত। ঐশ্বর্য রাইকে পাচ্ছে না বলে
হয়ত সে একটা সুন্দরী মেয়েকে রাস্তায় টন্ট করে বসল। বা
রেপ করে বসল। আপনার আমার চোখে সমাজের চোখে সে একজন খারাপ মানুষ। কিন্তু তার ভিউ পয়েন্ট থেকে দেখলে কি নির্মম কি নিষ্ঠুর। স্বপ্ন আছে, পৌঁছানোর উপায় নেই। আমার মনে হয় গল্প অনেক কিছু হতে পারে। দেখ আমি কত ভালো আছি, ও কত খারাপ, এই ভয়ারিস্টিক টেনডেন্সিটাও গল্প হতে পারে। বা না পাওয়ার
ইচ্ছাপূরণটাও গল্প হতে পারে। আমাদের সুপ্ত ইচ্ছাগুলোই গল্প।
আমার মনে হয়, আমি এটা বারবার বলি, রিয়ালিটি ইজ বোরিং। আমার মনে হয় আনরিয়াল
অথচ প্রায় রিয়াল, রিয়ালের মত, যা রিয়ালে ঘটতেই পারে ঠিক ঘটনা পরিক্রমায় চললে অথচ ঘটে না সবার
জীবনে। সেইটাই গল্প। আমার চারপাশে যা কিছু ঘটছে, মানুষের, মানুষের আকাঙ্খার মৃত্যু, কনজিউমারিস্ট সোসাইটির ভয়াবহ আক্রমণ এইগুলোই গল্প। গল্প
আসলে মানুষকে ভালো সভ্য করে তোলার উপায়। মানুষকে খুশি করবার
উপায়। মানুষকে নিজের আয়নার মুখোমুখি বসিয়ে দেওয়ার উপায়।
৫. আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
আমার গল্প লেখার জীবনে ছেদ আছে। আমি
দীর্ঘ কাল কোন গল্প লিখিনি। আবার লিখতে শুরু করেছি। আমার জীবনে সময় খুব কম। গল্প কল্পনার যে সময় যে কাল দরকার তা এইমুহূর্তে আমার জীবনে নেই। তা ছাড়া আমি
খুব অধৈর্য মানুষ। দীর্ঘ সময় কোন কিছুকে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমার নিজের মানসিক বাধা এসে যায়। অতএব – তাছাড়া পরিকল্পনা করে আমার জীবনে কিছুই ঘটেনি। যা ঘটেছে দুম-দাম
ঘটেছে। না ভেবেই ঘটেছে। অতএব আমি গল্প নিয়েও খুব
পরিকল্পনা করে এগোতে চাই না। আমি মানুষকে বুঝতে চাই। মানুষের আবেগকে, তার ইচ্ছা, যন্ত্রণাগুলোকে।
আমার কাছে মানুষ বেঁটে ক্ষুদ্র। সে লম্বা
মানুষদের ভীড়ে একা, রিডিকিউলড। কিন্তু সে এই যন্ত্রণাগুলোকে মেনে নিতে পারে না। সে নিজেকে প্রমাণ
করতে চায়। তাই একদিন দেখা যায় সে বসে বাঁশ কাটছে। কেন ? না মই বানাবে। পৃথিবীর লম্বাতম মই। যে বেয়ে সে উঠে যাবে সবার উপরে
আকাশের চাঁদে। আমার গল্প লেখার ইচ্ছাটাও অমন।
৫। আপনার নিজের
গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
কিছুই হয় না।
৬। আপনার আদর্শ
গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন?
অনেকের নাম আসতে
পারে। প্রথমেই কয়েকটা নাম নিয়েছি। যাঁদের নাম নিই নি তাঁরা হলে সাদাত হোসেন মান্টো, আমার মতে এই উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ আধুনিক লেখকদের একজন। মিখাইল বুলগাকভ। একজন
মারাত্মক শক্তিশালী লেখক। যাঁকে না পড়লে লেখা শেখা হতে পারে না। সাহিত্য বোঝা তো নয়ই। দস্তেয়ভস্কি, উইলিয়াম ফকনার, বাংলায় মতি নন্দী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অতীন বন্দোপাধ্যায়, আহমেদ ছফা, মুস্তাফা সিরাজ, দেবেশ রায়, অমর মিত্র, শাহাজাদ ফিরদৌস, কুলদা রায়, নবারুণ ভট্টাচার্য... আর কতজনের নাম নেব? কাকে ছেড়ে কাকে বলব। আমি ইচ্ছা করেই তিন বাড়ুজ্যের নাম নিলাম না।
ইচ্ছা করেই সন্দীপনের নাম নিলাম না। সতীনাথের নাম নিলাম না। ইচ্ছা করেই আরো অনেকের নাম নিলাম না যাঁরা আমার খুব প্রিয় লেখক। কারণ লিস্ট শুরু করলে আমি নিজেই খেই
হারিয়ে ফেলব। আবার সবার সব লেখা ভালো লাগেও না। ভালো
লেখক নানা ভাবে লেখেন। নানা বিষয় নিয়ে লেখেন। কোনটা আমার পছন্দ কোনটা নয়। তবে এই বিষয়ে একটা কথা বলার আছে, আদর্শ শব্দটার অর্থ আইডিয়াল। আইডিয়াল
একটা নোশান মাত্র। আইডিয়াল বা আদর্শ অবস্থা
একমাত্র ল্যাবে ছাড়া কোথাও তৈরী হয় না। জীবন ল্যাব নয়। জীবন আদর্শও নয়। অতএব আমি এতদিন এটা বুঝেছি যে পুরো নিখুত কোন পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে না।
আমার মনে হয় আইডিয়াল লেখক বলে কিছু হয় না। আমার মানসিক গঠন, আমার ব্যক্তিগত জীবনধারণা এই সবই আমার
ভালো লাগা না লাগার উপর নির্ভরশীল। যেমন ধরুণ এখন আমার
খুব অস্থিরচিত্ত, এই সময় আমার একজিনিস পড়তে ভাল লাগবে, আবার আরেকসময় আমি খুব বিরক্ত তখন অন্যকিছু পড়তে।
৭। কার জন্য গল্প
লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে
কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
আমি নিঃসন্দেহে
পাঠকের কথা মাথায় রেখে লিখি। পাঠক না থাকলে আমার কথা শুনবে কে। আমার সারাদিন নাগাড়ে কথা বলে যেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু
আমার কথা লোকে শুনবে কেন? আমার লেখা আসলে একটা কুহক তৈরী করবার চেষ্টা যাতে বেচারা
পাঠক আটকে যান। এবং সেই ফাঁকে আমি আমার
কথাগুলো তাঁদের বলে ফেলতে পারি। এখন সমস্যা হল আমি যে দেশে থাকি, আমার সেই দেশে বাংলা ক্রমশ একটা মৃত ভাষায় পর্যবসিত হচ্ছে। উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে বাংলা না জানা, বাংলা না পড়তে পারা ইত্যাদি বিষয়গুলো ক্রমশ অত্যন্ত শ্লাঘার সাথে
আলোচিত হচ্ছে। কলেজ স্ট্রীট বলছে নতুন লেখকদের লেখা
বিশেষ বিক্রি হয়না। এখন গল্পবলিয়ে হিসাবে আমার ইচ্ছে করে আমার গল্প লোকে শুনুক জানুক, না হলে গল্প বলা হবে না। এবং এই বোধটা থেকেই আমি ক্রমশ আমার
আরেকটা মাধ্যম ফিল্মের প্রতি আবার আকর্ষিত হচ্ছি। আমার কাছে আসলে গল্প “লেখা”টা জরুরী নয়। আমার কাছে আসলে গল্প বলাটা জরুরী। সেইটা যে ভাবেই হোক।
৮. এখন কি লিখছেন?
কিছুই লিখছি না।
2 মন্তব্যসমূহ
khub valo laglo
উত্তরমুছুনবাঃ! ভাবনায় বেশ মিল পেলাম... হয়তো এমনটাই হয়।
উত্তরমুছুনশ্রাবণী দাশগুপ্ত।