পাপড়ি রহমান
------------------------------------------------------------------------------------------------------
গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। গল্পগ্রন্থ: লখিন্দরের অদৃষ্টযাত্রা, হলুদ মেয়ের সীমান্ত, অষ্টরম্ভা, ধূলিচিত্রিত দৃশ্যাবলি। উপন্যাস: পোড়ানদীর স্বপ্নপুরাণ, বয়ন, মহুয়াপাখির পালক। সম্পাদনা: ধূলিচিত্র। জীবনীগ্রন্থ: ভাষাশহীদ আবুল বরকত।
গল্পপাঠের সঙ্গে দুদফায় পাপড়ি রহমান বলেছেন তাঁর গল্পের ভুবন। পাপড়ি রহমান আসলে লিখতে লিখতে তাকিয়ে থাকেন মানুষের মুখের দিকে। তাদের ছায়ার দিকে। গাছের দিকে আর তার সবুজ পাতার দিকে। কখনো নদীর দিকে, নদীর উজান জলের দিকে। বাদামি মাটির দিকে অথবা আকাশের দিকে। পালকের দিকে। আর সকল বকুল ফুলের দিকে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------
------------------------------------------------------------------------------------------------------
গল্পকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। বিভিন্ন গবেষণা কর্মের সঙ্গেও যুক্ত আছেন। গল্পগ্রন্থ: লখিন্দরের অদৃষ্টযাত্রা, হলুদ মেয়ের সীমান্ত, অষ্টরম্ভা, ধূলিচিত্রিত দৃশ্যাবলি। উপন্যাস: পোড়ানদীর স্বপ্নপুরাণ, বয়ন, মহুয়াপাখির পালক। সম্পাদনা: ধূলিচিত্র। জীবনীগ্রন্থ: ভাষাশহীদ আবুল বরকত।
গল্পপাঠের সঙ্গে দুদফায় পাপড়ি রহমান বলেছেন তাঁর গল্পের ভুবন। পাপড়ি রহমান আসলে লিখতে লিখতে তাকিয়ে থাকেন মানুষের মুখের দিকে। তাদের ছায়ার দিকে। গাছের দিকে আর তার সবুজ পাতার দিকে। কখনো নদীর দিকে, নদীর উজান জলের দিকে। বাদামি মাটির দিকে অথবা আকাশের দিকে। পালকের দিকে। আর সকল বকুল ফুলের দিকে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------
পাপড়ি
রহমান : মনে হলো আমি আসলে অনেক কিছু বলতে চাই, জীবন
সম্পর্কে বিস্তৃত কথাবার্তা বলতে চাই, তাই গল্প লিখতে শুরু করলাম।
তাছাড়া আমার বেড়ে ওঠাটাও ছিল অনেকটা রূপকথার ভেতরই। ছোটবেলায় গল্প না শুনে
ঘুমাতে পারতাম না। সেই গল্পগুলোতে ছিল মজা আর রহস্য আর টানটান উত্তেজনা। এসবই হয়তো
আমাকে গল্প লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে।
পাপড়ি রহমান : আমার
মাথার ভেতর অহর্নিশ এতসব কিছু ঘোরাফেরা করে যে সেসব রিলিজ না দেয়া অব্দি অস্বস্তি
হতেই থাকে। তাছাড়া আমার চিন্তা-চেতনা-জীবনদর্শন-জ্ঞান-বুদ্ধি-পড়াশুনা যা-ই বলুন
না কেন তাও কিন্তু অন্যদের চাইতে ভিন্নতর, তাইনা? তেমন অন্যরাও আমার চাইতে ভিন্ন। আমার
কাছে কবিতা কিছুটা অবগুন্ঠনবতী। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি কবিতা অ্যাবস্ট্র্যাক্ট
ফর্মে হলেই ভাল হয় বা ভাল দেখায়। আর কবিতা কিন্তু লেখককে বেশ খানিকটা
আড়াল-আবডালেও রাখে। গদ্য কিন্তু তা নয়। গদ্য হলো রোদেলা উঠানে ধান শুকাবার মতো
একটা ব্যাপার। যা সকলেই সব দিক থেকেই দেখতে পায়। তো আমি চেয়েছি আমি যা বলতে চাই
তা যেন স্পষ্ট করে বলতে পারি। সকলে যেন আমার বলাটাকে সহজ ও সরলভাবে বুঝতে পারে।
তাছাড়া ভাল কবি হওয়া ভাল গদ্যকার হওয়ার চাইতেও চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এইসব নানান
কারণেই আমি গদ্য লেখাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি।
৩. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
পাপড়ি রহমান : অন্য অনেকের মতো আমিও তো শুরু করেছিলাম কবিতা
দিয়ে। সেসব কবিতা যে একেবারে ট্র্যাশ তা কিন্তু নয়। তবে কবিতা লিখা খুব কঠিন
কাজ। ফলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম না সে আমাকে ছেড়ে গেল তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমার তো
মনে হয় শুরুর গল্পগুলোই আমার আসল গল্প। তখন বয়স কম ছিল। আবেগ ছিল কাঁচা। যা মনে
এসেছে একটানে লিখে ফেলেছি। ফলে তা অন্যরকম দ্যোতনা নিয়ে এখনো বেঁচে আছে। আগের
লেখা গল্পগুলোর প্রতি আমার রয়েছে অসীম মমতা ও দূর্বলতা। এখনো যদি কেউ আমাকে তিনটে
গল্প নির্বাচন করতে বলে, দেখা যায় শুরুর গল্পগুলো থেকেই অন্ততঃ দুটোকে আমি
নির্বাচন দিয়ে দিয়েছি।
৪.আপনার শুরুর লেখাগুলি যখন লেখেন-তখন আপনার পাঠক
কারা ছিলেন? তাদের
প্রতিক্রিয়া কি ধরনের ছিল?
পাপড়ি রহমান : শুরু মানে কি? হাঃহাঃহাঃ, একেবারে শুরু মানে তো আমার শৈশব। দাদাভাইয়ের কচিকাঁচার আসর। যুগভেরীর ছোটদের পাতা। কিশোর বাংলা। পরে ইশকুল, কলেজ, ভার্সিটির সাময়িকীগুলি। আরো পরে বিভিন্ন ছোটকাগজ, পাঠক ফোরাম। ফোরামে তো সব ধরনের পাঠক ছিল। এবং আমার লেখার জন্য অনেক পাঠকের অপেক্ষাও ছিল বলে জানি। সিরিয়াসভাবে যখন গল্প লিখতে শুরু করি তখন ছোটকাগজের পাঠকদের পাশে পেয়েছি। পেয়েছি সাহিত্যের কাগজ ‘শৈলীর’ পাঠকদের। মুক্তকণ্ঠের খুব আলোচিত সাহিত্যপাতা ‘খোলাজানালার’ বোদ্ধা পাঠকদের। ছিল ‘সংবাদ’ ও ‘ভোরের কাগজ’। কোথাও মন্দ কিছু শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না!। বরং ‘শৈলী’ বা ‘খোলাজানালায়’ প্রকাশিত আমার লেখাগুলো পাঠকরা আজও মনে রেখেছে! আমি সত্যি বিস্মিত হই এতে। একজন লেখকের বড় প্রাপ্তি কিন্তু পাঠকদের ভালবাসা। পাঠকের মনোযোগ। এই দুটোই আমি পর্যাপ্ত পেয়েছি বলেই মনে করি।
পাপড়ি রহমান : শুরু মানে কি? হাঃহাঃহাঃ, একেবারে শুরু মানে তো আমার শৈশব। দাদাভাইয়ের কচিকাঁচার আসর। যুগভেরীর ছোটদের পাতা। কিশোর বাংলা। পরে ইশকুল, কলেজ, ভার্সিটির সাময়িকীগুলি। আরো পরে বিভিন্ন ছোটকাগজ, পাঠক ফোরাম। ফোরামে তো সব ধরনের পাঠক ছিল। এবং আমার লেখার জন্য অনেক পাঠকের অপেক্ষাও ছিল বলে জানি। সিরিয়াসভাবে যখন গল্প লিখতে শুরু করি তখন ছোটকাগজের পাঠকদের পাশে পেয়েছি। পেয়েছি সাহিত্যের কাগজ ‘শৈলীর’ পাঠকদের। মুক্তকণ্ঠের খুব আলোচিত সাহিত্যপাতা ‘খোলাজানালার’ বোদ্ধা পাঠকদের। ছিল ‘সংবাদ’ ও ‘ভোরের কাগজ’। কোথাও মন্দ কিছু শুনেছি বলে তো মনে পড়ছে না!। বরং ‘শৈলী’ বা ‘খোলাজানালায়’ প্রকাশিত আমার লেখাগুলো পাঠকরা আজও মনে রেখেছে! আমি সত্যি বিস্মিত হই এতে। একজন লেখকের বড় প্রাপ্তি কিন্তু পাঠকদের ভালবাসা। পাঠকের মনোযোগ। এই দুটোই আমি পর্যাপ্ত পেয়েছি বলেই মনে করি।
৫. গল্প লেখার জন্য কি
প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
পাপড়ি রহমান : যে কোনো লেখার জন্যই পড়াটাই কিন্তু সব চাইতে বড়
প্রস্তুতি। আমি যখন সাহিত্য পড়তে আসি বা সাহিত্যের ছাত্র হই তার আগে থেকেই আমার
কাছে বই পড়াটা ছিল প্রায় নেশার মতো। ছোটবেলায় এত বই পড়েছি যে বলার নয়। গল্পের
বই পড়ার জন্য ক্লাসের টিচারদের ম্যালা তিরস্কারও সহ্য করেছি। তবে আমি চেয়েছি
আমার গল্প যেন গতানুগতিক না হয়। বা অন্য কারো মতো যেন না হয়। আমি চেয়েছি সেই
গল্পটি লিখতে যে বিষয় নিয়ে অন্য কেউ হয়তো লিখবে না বা লিখেনি। ফলে আমি থিম বা
প্লট এর উপর জোর যেমন দিয়েছি,
ভাষার উপরও একইভাবে নজর রেখেছি। আসলে আমি এক
প্রকার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়েই গল্প লিখতে শুরু করেছি।
৬. আপনার গল্পলেখার কৌশল বা
ক্রাফট কি?
পাপড়ি রহমান : এই প্রশ্নের জবাব কিছুটা পূর্বের প্রশ্নে দিয়ে দিয়েছি। নির্দিষ্ট
কোনো কৌশল নেই। তবে আমি মূলত থিমেটিক রাইটার। অর্থাৎ ভাল থিম বা আমার মনপূতঃ থিম
না হলে আমি গল্প লিখতে বসি না। এজন্য বছরে আমার গল্পও তিন-চারটের বেশি হয়না। অনেক
লেখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সম্ভব হবেও না কোনোদিন। তবে যা নিয়ে আমি গল্প লিখব সে
বিষয়টা ভাল করে জেনে না নিয়ে লিখতে বসি না। খুব গতানুগতিক বিষয় আমার না-পছন্দের
বিষয়। ফলে সেসব নিয়ে লিখি না বা লিখতে চাইও না।
৭. আপনি যখন উপন্যাস
লেখেন --আপনার বয়ন বা পালাটিয়া, দেখা যায়--আপনি এক ধরনের গবেষণা করে
নেন বা মাঠ পরিদর্শন করে নিয়েছেন। কেনো এটা করেন? এ ধরনের পদক্ষেপ কি গল্পের বেলায়ও অনুসরন
করেন? সে ধরনের কয়েকটির কথা বলুন।
পাপড়ি রহমান : আমার তিনটে উপন্যাস পোড়ানদীর স্বপ্নপুরাণ, বয়ন ও পালাটিয়া-তিনটি কিন্তু তিন ধরনের বিষয় নিয়ে লেখা।। আপনারা যাকে গবেষণা বলছেন, আমি তাকে বলি স্বচক্ষে দেখে নেয়া। দেখে নিজের মাঝে এবজর্ব করে নেয়া। না দেখলে বা না জানলে আমি লিখব কিভাবে? লিখতে গেলে দেখতে ও জানতে তো হবেই। আমি অন্ধের হাতি দর্শনের মতো কোনো কাজ করতে চাইনা। যা লিখি তা বাস্তব থেকেই লিখি বা লেখার চেষ্টা করি ।
হ্যাঁ, গল্পের বেলায়ও এমন করি । যে বিষয়টি জানিনা তা জেনে নিয়েই লিখতে বসি। যেমন আমার ‘সোহাগা’ নামের গল্পটি। এতে এক সোনারু মানে কর্মকার নারীর লাইফ নিয়ে লিখলাম। ফলে আমাকে জানতে হয়েছে সোনার গয়না তৈরির কৌশল। যেমন ‘শোধ’ গল্পটি। এতে যে জীবন তা কিন্তু আমি একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নিয়েছি। বা ‘অভিবাসী’ গল্পের নীহার কিন্তু আমার দেখা চরিত্র।
এভাবে আমার ‘তুরাগসিরিজের’ গল্পগুলি-যা আমি দেখে এসেই লিখেছি। এভাবে আমার আরো অসংখ্য গল্পের কথা বলা যায়।
পাপড়ি রহমান : আমার তিনটে উপন্যাস পোড়ানদীর স্বপ্নপুরাণ, বয়ন ও পালাটিয়া-তিনটি কিন্তু তিন ধরনের বিষয় নিয়ে লেখা।। আপনারা যাকে গবেষণা বলছেন, আমি তাকে বলি স্বচক্ষে দেখে নেয়া। দেখে নিজের মাঝে এবজর্ব করে নেয়া। না দেখলে বা না জানলে আমি লিখব কিভাবে? লিখতে গেলে দেখতে ও জানতে তো হবেই। আমি অন্ধের হাতি দর্শনের মতো কোনো কাজ করতে চাইনা। যা লিখি তা বাস্তব থেকেই লিখি বা লেখার চেষ্টা করি ।
হ্যাঁ, গল্পের বেলায়ও এমন করি । যে বিষয়টি জানিনা তা জেনে নিয়েই লিখতে বসি। যেমন আমার ‘সোহাগা’ নামের গল্পটি। এতে এক সোনারু মানে কর্মকার নারীর লাইফ নিয়ে লিখলাম। ফলে আমাকে জানতে হয়েছে সোনার গয়না তৈরির কৌশল। যেমন ‘শোধ’ গল্পটি। এতে যে জীবন তা কিন্তু আমি একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে নিয়েছি। বা ‘অভিবাসী’ গল্পের নীহার কিন্তু আমার দেখা চরিত্র।
এভাবে আমার ‘তুরাগসিরিজের’ গল্পগুলি-যা আমি দেখে এসেই লিখেছি। এভাবে আমার আরো অসংখ্য গল্পের কথা বলা যায়।
৮. আপনার কোনো গল্পে প্রচলিত ছড়া, গীত ব্যবহার করেন। এগুলোর উৎসগুলো কি?
পাপড়ি রহমান : আসলে এটা ইচ্ছা করেই করি আমি। তবে চরিত্রের সাথে যায় না, বা খাপ খায় না, এমনভাবে করিনা। আসলে অই ছড়া-গীত-শ্লোক কিন্তু আমাদের হেরিটেজ। আমাদের হিসট্রি। আমাদের রুটস। যা কালে-কালে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের জীবন কিন্তু ছিল গল্পগীতশ্লোকময়।যেমন মহুয়াপালার ‘তুমি হও গহীন গাঙ আমি ডুইব্যা মরি’ শুনে শুনেই আমরা বেড়ে উঠেছি। এবং অইসবেই আমরা আনন্দ পেয়েছি। আমাদের দাদাদাদীফুপুচাচারা গীতগল্পের মানুষ ছিলেন। আমরা তাদের মুখে শুনেছি কাঞ্চনমালার গল্প। রূপকুমারী, ঝিনুকবতী,কিরনমালা- কত কি? ছড়াগীতশ্লোক ছাড়া তখনকার বিয়েবাড়ি- ভাবাই যেতনা। আসলে আমার প্রাচীনতার প্রতি খুব মায়া রয়েছে। ভালবাসা রয়েছে। ঝোঁক রয়েছে। ফলে আমি পাঠককেও ওইসব শোনাতে চাই, চাই বলেই ব্যবহার করি ।
৯. গল্পের চেয়ে উপন্যাসে
আপনার ভাষাভঙ্গী বদলে যায়। সেখানে আপনি অনেক বেশি সুসংগঠিত ভাষাভঙ্গী ব্যবহার
করেন। এবং প্রায় সব উপন্যাসেই আপনার অধিক যত্ন বা মনোযোগ লক্ষনীয়। অর্থাৎ বুঝা
যায় যে উপন্যাসের জন্য আপনি বিশেষ প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কি কারণে এটা করেন?
পাপড়ি রহমান : যে কোনো গল্পে ভাষা বা চরিত্র ভাঙ্গাভাঙ্গি করার স্কোপ কম। কারণ এখানে স্পেস একটি বড় ফ্যাক্টর। উপন্যাস মানে তো বিস্তৃত জীবন বা অনেক জীবনের কোরাস। গল্প আমার কাছে ঝর্ণা বা দিঘী। উপন্যাস কিন্তু নদী বা সমুদ্দুর। ঝর্ণা বা দিঘীতে ঢেউ কম উঠবে, জলের কলতান কম শোনা যাবে, এটাই কিন্তু বাস্তবতা। নদী বা সমুদ্দুরের ঢেউ হবে বেগবান ও স্রোতস্বিনী। জল বইবে কলকল ছলছল ধারায়।
তবে গল্পও আমি যা-তা করে লিখিনা, গল্পেও আমি যত্নবান- একটু ভাল করে খেয়াল করলে তা স্পষ্ট ধরা পড়বে।
তবে ভাষা ব্যাবহারে আমি বরাবরই খুঁতখুঁতে। মনপছন্দ না হওয়া পর্যন্ত কাটাছেঁড়া চলতেই থাকে। পাতা ছিঁড়ে ফেলা চলতেই থাকে।
তবে হ্যাঁ, আমার নিজের লেখা উপন্যাসের প্রতি আছে আমার গভীর ডিভোশন। আছে অন্তহীন দূর্বলতা। আমি চাই সেই উপন্যাসটি লিখতে, যা আমাদের সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। শুধুশুধি ট্র্যাশ লেখা লিখে লাভ কি?
অতি প্রেম, অতি যত্ন, অতি রাগ বা অনুরাগ, অতি খুঁতখঁতানি এইসব থেকে হয়তো ‘বিশেষ প্রস্তত্তি’ আপনা-আপনিই হয়ে যায়। কি আর করা? নিজের সন্তানের প্রতি এই ‘অতির’ বাহুল্য আমার কাছে দোষ বলে মনে হয়না , কি আর করা বলুন?
পাপড়ি রহমান : যে কোনো গল্পে ভাষা বা চরিত্র ভাঙ্গাভাঙ্গি করার স্কোপ কম। কারণ এখানে স্পেস একটি বড় ফ্যাক্টর। উপন্যাস মানে তো বিস্তৃত জীবন বা অনেক জীবনের কোরাস। গল্প আমার কাছে ঝর্ণা বা দিঘী। উপন্যাস কিন্তু নদী বা সমুদ্দুর। ঝর্ণা বা দিঘীতে ঢেউ কম উঠবে, জলের কলতান কম শোনা যাবে, এটাই কিন্তু বাস্তবতা। নদী বা সমুদ্দুরের ঢেউ হবে বেগবান ও স্রোতস্বিনী। জল বইবে কলকল ছলছল ধারায়।
তবে গল্পও আমি যা-তা করে লিখিনা, গল্পেও আমি যত্নবান- একটু ভাল করে খেয়াল করলে তা স্পষ্ট ধরা পড়বে।
তবে ভাষা ব্যাবহারে আমি বরাবরই খুঁতখুঁতে। মনপছন্দ না হওয়া পর্যন্ত কাটাছেঁড়া চলতেই থাকে। পাতা ছিঁড়ে ফেলা চলতেই থাকে।
তবে হ্যাঁ, আমার নিজের লেখা উপন্যাসের প্রতি আছে আমার গভীর ডিভোশন। আছে অন্তহীন দূর্বলতা। আমি চাই সেই উপন্যাসটি লিখতে, যা আমাদের সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। শুধুশুধি ট্র্যাশ লেখা লিখে লাভ কি?
অতি প্রেম, অতি যত্ন, অতি রাগ বা অনুরাগ, অতি খুঁতখঁতানি এইসব থেকে হয়তো ‘বিশেষ প্রস্তত্তি’ আপনা-আপনিই হয়ে যায়। কি আর করা? নিজের সন্তানের প্রতি এই ‘অতির’ বাহুল্য আমার কাছে দোষ বলে মনে হয়না , কি আর করা বলুন?
১০. আপনার নিজের গল্প
বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
পাপড়ি রহমান : আমি আমার যে কোনো লেখার জন্যই খুব পরিশ্রম করি । বারংবার খসড়া করি।
তারপর সেটা ছাপা হলে আর খুলে দেখি না। ভয় লাগে যদি অনেক বেশি ভুলভাল নজরে পড়ে, তবে মন
খারাপ হবে বলে। আমি যেহেতু পরিশ্রম করে লিখি তো এই নিয়ে আমার আলাদা কোনো বিবেচনার
দরকার কি? তা থাক না পাঠকের উপর। তবে আমার কোনো লেখাকেই আমি ‘সস্তা’ বলতে
রাজি নই। আমি একটা কথা প্রায়ই বলি আমার শরীরের তিন ব্যাগ রক্ত ঝরিয়ে এক একটি
গল্প লেখা হয়।
১১. আপনার আদর্শ গল্পকার কে
কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন?
পাপড়ি রহমান : আদর্শ না বলে প্রশ্নটা পছন্দের গল্পকার বললে হয়তো
সামান্য দিক পাওয়া যেতে পারে। আমি যা যা পছন্দ করি তার সব কি আর এক লেখকে পাওয়া
যায়? না যাবে?
যাঁদের গল্প ভাল লাগে তাঁদের তালিকা বেশ দীর্ঘ।
তাঁদের লেখা পাঠ মাত্রই যে কোনো বোদ্ধা পাঠকই ধরতে পারবেন কেন আমার এই ভাললাগা?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, হাসান
আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জগদিশ
গুপ্ত, শহীদুল জহীর, নবারুণ ভট্টাচার্য, গ্যাব্রিয়েল
গার্সিয়া মার্কেজ, এডগার এ্যালান পো প্রমুখ।
১২. আপনি শহীদুল জহির
পর্যন্ত প্রিয় গল্পের সীমা নির্ধারণ করেছেন। এর পরের বা আপনার সমসাময়িক বা
আপনারও পরের কোনো গল্পকারের নাম কিন্তু নেননি !
আপনি কি আসলে মনে করেন--নাম নেওয়ার মত কোনো লেখক সত্যি সত্যি নেই?
যদি থাকেন--তাদের সম্পর্কে আপনার অভিমত জানান। আর যদি না থাকেন--তাহলে তাদের ব্যর্থতাগুলো কি ?
পাপড়ি রহমান : আসলে ‘টপ ফেভারিট’ বলে একটা কথা আছে। কেউ যখন প্রিয় কিছুর কথা বলে অই ‘টপ’ শব্দটি মাথায় রেখেই বলে। আমিও তাই বলেছি। এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে টুদ্দেশ্য কিন্তু নেই। আসলে দেখেন, যে যার মতো করে লিখে যাচ্ছে, আমার বা আপনার নাম নেওয়া বা না নেওয়াতে কিন্তু কিছুই যাবে আসবে না। অই নাম নেওয়ার দিন কিন্তু শেষ। পাঠক আর নাম শোনা মাত্রই দৌঁড়ায় না। পাঠককে আর ভুলভুলাইয়ার ভেতর চক্কর খাওয়ানো যায় না। আগে যেমন পত্রিকাওয়ালার খাওয়াতো। পাঠক কিন্তু এখন আর শুধুমাত্র হুজুগে ছোটে না। এখন শুধু পাঠক কেন লেখকও জানে, একজন লেখককে কিন্তু তার লেখাই বাঁচিয়ে রাখে। দেখা গেল যাকে আমরা চিনি না বা জানিনা তেমন কেউ একদিন কালজয়ী লেখা লিখে গিয়েছেন- তখন কি হবে বলুন? আমরা কি জগতের সব সংবাদ জানি?
আমার সময়ের লেখকদের কিন্তু আমি নিজের শক্তি বলে মনে করি । আমরা এক বাগানেই ফুটেছি রঙ, বর্ণ বা গন্ধের হয়তো হেরফের থাকতে পারে। কিন্তু বাগান কিন্তু একটাই। আমার সময়ের লেখকরা আমার সময়বাগানের শোভা ও শক্তি। তাদের ইর্ষা করার কিছু নেই। কারণ একেজনের মেধা, পড়া বা লেখা ভিন্নতর। এখানে ইর্ষা আসবে কেন? বা আসে কেন? নিজের লেখা লিখে কূল পাইনা ইর্ষা করার টাইম কই? তবে আমি মনে করি নব্বইয়ের লেখকরাই এ সময়ের দীপ্র লেখক। তাদের সব চাইতে ভাল কাজগুলি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। আবার আসার টাইমও কিন্তু চলে যায়নি। আমরা সবাই সেই লেখার অপেক্ষায় আছি।
কারো লেখার ব্যর্থতা দেখিয়ে দেয়ার আমি কে? আমি কি টোলের পণ্ডিত নাকি? আমি পণ্ডিত ফণ্ডিত হতে চাইনা। শুধু চুপচাপ নিজের লেখাটি করে যেতে চাই।
তবে আমাদের পরে কিন্তু প্রায় তের বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, এর মাঝে খুব অন্য স্বরের কাউকে আমি তেমন করে পাইনি। হয়তো আমার পড়ার খামতি রয়েছে, হয়তো সে আমার পাঠের বাইরে রয়ে গিয়েছে। আসলে স্থায়ীভাবে কিছুই বলা ঠিক নয়। উচিতও নয়। দু/চারজন যে ঝলসে ওঠে নি তেমনও নয়। তবে তাদের আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য কিছু সময় আমি নিতে চাই।
আপনি কি আসলে মনে করেন--নাম নেওয়ার মত কোনো লেখক সত্যি সত্যি নেই?
যদি থাকেন--তাদের সম্পর্কে আপনার অভিমত জানান। আর যদি না থাকেন--তাহলে তাদের ব্যর্থতাগুলো কি ?
পাপড়ি রহমান : আসলে ‘টপ ফেভারিট’ বলে একটা কথা আছে। কেউ যখন প্রিয় কিছুর কথা বলে অই ‘টপ’ শব্দটি মাথায় রেখেই বলে। আমিও তাই বলেছি। এতে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে টুদ্দেশ্য কিন্তু নেই। আসলে দেখেন, যে যার মতো করে লিখে যাচ্ছে, আমার বা আপনার নাম নেওয়া বা না নেওয়াতে কিন্তু কিছুই যাবে আসবে না। অই নাম নেওয়ার দিন কিন্তু শেষ। পাঠক আর নাম শোনা মাত্রই দৌঁড়ায় না। পাঠককে আর ভুলভুলাইয়ার ভেতর চক্কর খাওয়ানো যায় না। আগে যেমন পত্রিকাওয়ালার খাওয়াতো। পাঠক কিন্তু এখন আর শুধুমাত্র হুজুগে ছোটে না। এখন শুধু পাঠক কেন লেখকও জানে, একজন লেখককে কিন্তু তার লেখাই বাঁচিয়ে রাখে। দেখা গেল যাকে আমরা চিনি না বা জানিনা তেমন কেউ একদিন কালজয়ী লেখা লিখে গিয়েছেন- তখন কি হবে বলুন? আমরা কি জগতের সব সংবাদ জানি?
আমার সময়ের লেখকদের কিন্তু আমি নিজের শক্তি বলে মনে করি । আমরা এক বাগানেই ফুটেছি রঙ, বর্ণ বা গন্ধের হয়তো হেরফের থাকতে পারে। কিন্তু বাগান কিন্তু একটাই। আমার সময়ের লেখকরা আমার সময়বাগানের শোভা ও শক্তি। তাদের ইর্ষা করার কিছু নেই। কারণ একেজনের মেধা, পড়া বা লেখা ভিন্নতর। এখানে ইর্ষা আসবে কেন? বা আসে কেন? নিজের লেখা লিখে কূল পাইনা ইর্ষা করার টাইম কই? তবে আমি মনে করি নব্বইয়ের লেখকরাই এ সময়ের দীপ্র লেখক। তাদের সব চাইতে ভাল কাজগুলি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। আবার আসার টাইমও কিন্তু চলে যায়নি। আমরা সবাই সেই লেখার অপেক্ষায় আছি।
কারো লেখার ব্যর্থতা দেখিয়ে দেয়ার আমি কে? আমি কি টোলের পণ্ডিত নাকি? আমি পণ্ডিত ফণ্ডিত হতে চাইনা। শুধু চুপচাপ নিজের লেখাটি করে যেতে চাই।
তবে আমাদের পরে কিন্তু প্রায় তের বছর পেরিয়ে যাচ্ছে, এর মাঝে খুব অন্য স্বরের কাউকে আমি তেমন করে পাইনি। হয়তো আমার পড়ার খামতি রয়েছে, হয়তো সে আমার পাঠের বাইরে রয়ে গিয়েছে। আসলে স্থায়ীভাবে কিছুই বলা ঠিক নয়। উচিতও নয়। দু/চারজন যে ঝলসে ওঠে নি তেমনও নয়। তবে তাদের আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠার জন্য কিছু সময় আমি নিতে চাই।
১৩. হুমায়ূন আহমদ জনপ্রিয় লেখক। তিনি আপনার প্রিয় তালিকায় নেই, কি কারণে নেই?
পাপড়ি রহমান : তিনি সকলেরই প্রিয়, আমার প্রিয় নাহলে কিইবা যাবে-আসবে তার? বা তাঁর পাঠকদের?
তাঁর প্রথম দিককার লেখাগুলো আমার পাঠের সংগে যেত। আমি ‘নন্দিত নরকে’ ও ‘শংখনীল কারাগারের’ কথা বলছি। তাঁর বেশিরভাগ লেখা বড়বেশি ভাবালুতায় আচ্ছন্ন। জীবন কিন্তু শুধু আবেগ, ছেলেমানুষী, চটুল বা অলৌকিকপ্রেম নির্ভর নয়। জীবন বরং জটিল ও কঠিন। জীবন কিন্তু রুপকথাও নয়। হুমায়ূন তো আধুনিক রূপকথাই লিখে গিয়েছেন। যদিও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি যে, তাঁর লেখা তরুণ সমাজকে অবাস্তব এক জীবন চিনিয়েছে। তবে এ কথাও তো সত্য যে, বাঙালীর বই পড়ার আগ্রহ বা অভ্যাস তিনিই তৈরি করে দিয়েছিলেন। এজন্য তাঁর কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা। তিনি বরাবর সিরিয়াস বিষয় এভয়েড করেছেন, কারণ তিনি জানতেন আমাদের বহুবিধ জটিলতায় পাঠক সেসব আর পড়তে চায়না। সাধারণ পাঠক চায় হালকা ও রসাত্মক বই পড়তে। তাই হয়তো তিনি ওদিকেই গিয়েছেন।
১৪.
আপনার উল্লেখযোগ্য বয়ন উপন্যাসটি লেখার
বীজ কিভাবে পেলেন ? এই
উপন্যাসটি লেখার পেছনের বৃত্তান্তটি একটু বিস্তারিত বলুন।
পাপড়ি রহমান : আরে সে তো সহস্র এক আরব্য রজনীর গল্প। আমাদের বাড়ি তিনতলা বানানোর টাইমে (সেটা ৯১-৯২ সালের ঘটনা) যিনি কেয়ারটেকারের কাজে ছিলেন তিনি ছিলেন জোলা। আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর কাছ থেকে তাঁতীদের গল্প শুনতাম। বরাবরই আমার ফোক বিষয়াদির উপর খুব ঝোঁক রয়েছে। এর মাঝে তিনতলা বানাতে বানাতেই আমার শ্বশুর মারা গেলেন। আর আমার তাঁতীজীবন লেখা মাথায় উঠলো। কিন্তু আমার ধৈর্য্য খুব বেশি। আমি হাল ছাড়ার পাত্রও নই। আমি লেগে রইলাম। বয়নের সবেদালি যিনি তিনিই অই জোলা। আমি তার পিছু পিছু একদিন চলে গেলাম মুগরাকুল গ্রামে। তারাবোতেও গেলাম। দেখতে লাগলাম জোলাদের জীবন। রেকর্ড করতে লাগলাম তাঁদের কথাবার্তা। এত খুঁতখুঁতে আমি! কিছুতেই লিখতে বসতে পারিনা। এর মাঝে আমার রেকর্ডার একজন ইচ্ছা করেই গায়েব করে দিল। ভাগ্যিস রেকর্ডগুলা ছিল। আমার টাকাও হাতে নাই যে ফের রেকর্ডার কিনব। লিখে কিছু টাকা পেলাম। আমার বন্ধু কবি সাজজাদ আরেফিনকে নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে ফের কিনলাম মিনি রেকর্ডার। তাও লিখতে বসতে পারিনা। সে এক দিন গেছে আমার! এর মাঝে হঠাৎ বাংলা একাডেমিতে জামদানী গবেষক মুহাম্মদ সাইদুরের সাথে দেখা হলো। তাঁর থেকেও কিছু ক্লু নিলাম। জামদানী নিয়ে যেখানে যা পেলাম গোগ্রাসে গিললাম। আমার আরেক কবি বন্ধুও এ ব্যাপারে আমাকে ইনফর্ম করতে লাগলো।
লেখা শুরু করলাম ২০০৫ এর দিকে।এ উপন্যাসে তাঁতীদের সর্বশেষ অবস্থাও আমি পাঠককে জানাতে চেয়েছি। ফলে শুরু হলো নোট নেয়া। আর আমি জানি সৎ মানুষের সাথে স্বয়ং ঈশ্বর থাকেন।
তবে এ উপন্যাসটি লেখার টাইমে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব স্থির ছিলাম। মানে মানসিকভাবে স্বাধীন আর কি ! যদিও টাকাপয়সার বেজায় টানাটানি ছিল। ছিল ভয়ানক অনিশ্চিত জীবন। এর মাঝে আমার ছোট মেয়েটার টাইফয়েড হলো, কি যে টানাপোড়েনের মাঝে লেখা সে আর কি বলবো?
যিনি এর প্রুফ দেখছিলেন, তিনি আমার সেই কবি বন্ধু এবং আমার খুব আপনজন। আমি এক এক পর্ব লিখছিলাম আর তাকে পৌছে দিচ্ছিলাম। তিনি এক পর্যায়ে বললেন ‘কিসব অখাদ্য লিখছ, এটা কোনো উপন্যাস হলো?’
আমি তখন ৪২ পর্ব লিখে ফেলেছি, ভাবুন তখন এমন বিষবাক্য!
পাপড়ি রহমান : আরে সে তো সহস্র এক আরব্য রজনীর গল্প। আমাদের বাড়ি তিনতলা বানানোর টাইমে (সেটা ৯১-৯২ সালের ঘটনা) যিনি কেয়ারটেকারের কাজে ছিলেন তিনি ছিলেন জোলা। আমি কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁর কাছ থেকে তাঁতীদের গল্প শুনতাম। বরাবরই আমার ফোক বিষয়াদির উপর খুব ঝোঁক রয়েছে। এর মাঝে তিনতলা বানাতে বানাতেই আমার শ্বশুর মারা গেলেন। আর আমার তাঁতীজীবন লেখা মাথায় উঠলো। কিন্তু আমার ধৈর্য্য খুব বেশি। আমি হাল ছাড়ার পাত্রও নই। আমি লেগে রইলাম। বয়নের সবেদালি যিনি তিনিই অই জোলা। আমি তার পিছু পিছু একদিন চলে গেলাম মুগরাকুল গ্রামে। তারাবোতেও গেলাম। দেখতে লাগলাম জোলাদের জীবন। রেকর্ড করতে লাগলাম তাঁদের কথাবার্তা। এত খুঁতখুঁতে আমি! কিছুতেই লিখতে বসতে পারিনা। এর মাঝে আমার রেকর্ডার একজন ইচ্ছা করেই গায়েব করে দিল। ভাগ্যিস রেকর্ডগুলা ছিল। আমার টাকাও হাতে নাই যে ফের রেকর্ডার কিনব। লিখে কিছু টাকা পেলাম। আমার বন্ধু কবি সাজজাদ আরেফিনকে নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে ফের কিনলাম মিনি রেকর্ডার। তাও লিখতে বসতে পারিনা। সে এক দিন গেছে আমার! এর মাঝে হঠাৎ বাংলা একাডেমিতে জামদানী গবেষক মুহাম্মদ সাইদুরের সাথে দেখা হলো। তাঁর থেকেও কিছু ক্লু নিলাম। জামদানী নিয়ে যেখানে যা পেলাম গোগ্রাসে গিললাম। আমার আরেক কবি বন্ধুও এ ব্যাপারে আমাকে ইনফর্ম করতে লাগলো।
লেখা শুরু করলাম ২০০৫ এর দিকে।এ উপন্যাসে তাঁতীদের সর্বশেষ অবস্থাও আমি পাঠককে জানাতে চেয়েছি। ফলে শুরু হলো নোট নেয়া। আর আমি জানি সৎ মানুষের সাথে স্বয়ং ঈশ্বর থাকেন।
তবে এ উপন্যাসটি লেখার টাইমে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব স্থির ছিলাম। মানে মানসিকভাবে স্বাধীন আর কি ! যদিও টাকাপয়সার বেজায় টানাটানি ছিল। ছিল ভয়ানক অনিশ্চিত জীবন। এর মাঝে আমার ছোট মেয়েটার টাইফয়েড হলো, কি যে টানাপোড়েনের মাঝে লেখা সে আর কি বলবো?
যিনি এর প্রুফ দেখছিলেন, তিনি আমার সেই কবি বন্ধু এবং আমার খুব আপনজন। আমি এক এক পর্ব লিখছিলাম আর তাকে পৌছে দিচ্ছিলাম। তিনি এক পর্যায়ে বললেন ‘কিসব অখাদ্য লিখছ, এটা কোনো উপন্যাস হলো?’
আমি তখন ৪২ পর্ব লিখে ফেলেছি, ভাবুন তখন এমন বিষবাক্য!
আমার
মনে হলো আমি মারা যাচ্ছি। এত ভেঙ্গে পড়লাম যে বলার নয়। যিনি কম্পোজ করছিলেন তাঁর
নিজের প্রডাকশনহাউস রয়েছে। তিনি বাইরের কারো কিছুই কম্পোজ করেন না। তিনি নিজেও
লিখেন। আমার অনুরোধে বয়ন কম্পোজ করছিলেন।
তাঁর নাম শিহাব বাহাদূর। তাকে আমার কবি বন্ধুর বিষবাক্যের কথা বললাম। শুনে টুনে
বললেন ‘লিখে যান, কারো কথায়
পাত্তা দিয়েন না’।
এবং আমি লিখলাম। যেমন আমি লিখতে চেয়েছি ঠিক তেমন।। টানা তিনবছর লিখে গেলাম আর কাটলাম। কাটলাম আর লিখলাম। ২০০৮ এর জানুয়ারীতে শেষ হলো লেখা। আমার কম্পোজিটর- যিনি কবি,সাহিত্যিক ও প্রকাশক, সেই শিহাব বাহাদূর বললেন
‘ আমি অনেক বই করেছি কিন্তু এমন পাণ্ডুলিপি আমার হাতে পড়েনি। টাকা থাকলে বইটা আমরাই করতাম’। শুনে আমার চোখে প্রায় জলে এসে গেল।
তিনি কম্পোজ বাবদ কোনো টাকা নিলেন না !
বললেন ’একজন শিল্পী ছবি এঁকেছে আমি তাকে রঙ আর তুলি দিয়েছি, তার জন্য টাকা নেব কেন?’
একথা শুনে আমি কতবার যে কাঁদলাম ! অবশ্য তিনি টাকা চাইলেও আমি দিতে পারতাম না। আমার কাছে অত টাকা ছিলও না।
আমি মনে করি সব ভাল কাজের সঙ্গে ঈশ্বর থাকেন। ঈশ্বর আসেন মানুষের রূপ ধরে। আপনারা এমন সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করেছেন যে ফের আমি ফিরে যাচ্ছি ২০০৮ সালে।
মাওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারির বই মেলায় আমার কাছ একটি পয়সা না চেয়ে এবং না নিয়ে বইটি করলেন। কাইয়ূম চৌধুরি করলেন এর অসামান্য প্রচ্ছদ। ভেবেছিলাম কাইয়ূম ভাইয়ের টাকাটা অন্ততঃ আমি দিয়ে দেই। কিন্তু মাহমুদভাই তা দিতে দিলেন না। তাঁর কাছে আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা।
না, আমি বই হয়ে বেরুবার আগে উপন্যাস কোথাও ছাপতে দিতে অপছন্দ করি। আমি আসলে নিভৃতে কাজ করে যেতে চাই।
হ্যাঁ, আমি এমন উপন্যাসই লিখতে চেয়েছি।
‘বয়ন’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমি তাঁদের কাছেও চিরঋণী। বাংলা একাডেমির ডিজি শামসুজ্জামান খান বইটির আলোচনা করেছেন। কামরুজ্জামান জাহাংগীর বলেছেন-
‘আমাদের এই বাংলাদেশে অনেক কিছুই নেই কিন্তু ‘বয়নের’ মতো উপন্যাস আছে।‘
সালাহউদ্দিন শুভ্র আলোচনা করেছে। শবনম নাদিয়া ‘ডেইলি স্টারে’ দারুণ এক আলোচনা করছে।
ভগীরথ মিশ্র, যিনি অইবার জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের জাজ ছিলেন, তিনি পরে আমাকে উনার লিখিত অভিমতটি পাঠিয়েছেন, এবং বলেছেন বয়নকে সর্বোচ্চ নাম্বার দেওয়া স্বত্তেও কেন পুরস্কৃত করা হলো না, আমরা সত্যি অবাক হয়েছি !
এইসব দেখে এবং শুনে আজ আমি জানি, আমার লেখক জীবনের বড় পুরস্কার এসবই, আর কিছু নয়। এই যে এত জনের ভালবাসা পাওয়া।
২০০৯ এর জেমকন সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হলো নির্মলেন্দু গুণকে। কিন্তু জাজেরা সারাক্ষণ বয়ন নিয়েই কথা বলে গেলেন।
যদিও নানান রাজনীতিতে ‘বয়নকে’ অনেক বড় পত্রিকাওয়ালারা কোনঠাসাও কম করেনি।কারণ আমি তো কোনো দলের নই।আর কিছুতেই চামচামি করতে পারিনা! অনেকে তো ‘বয়নের’ নামও ছাপেনি! কিন্তু তাতে কি এসে গেল বলুন? শুধুমাত্র বয়নের লেখক হিসেবে কত মানুষ যে আমাকে মনে রেখেছে!তাঁদের প্রতি আমার অশেষ ঋণ আর কৃতজ্ঞতা ।
এবং আমি লিখলাম। যেমন আমি লিখতে চেয়েছি ঠিক তেমন।। টানা তিনবছর লিখে গেলাম আর কাটলাম। কাটলাম আর লিখলাম। ২০০৮ এর জানুয়ারীতে শেষ হলো লেখা। আমার কম্পোজিটর- যিনি কবি,সাহিত্যিক ও প্রকাশক, সেই শিহাব বাহাদূর বললেন
‘ আমি অনেক বই করেছি কিন্তু এমন পাণ্ডুলিপি আমার হাতে পড়েনি। টাকা থাকলে বইটা আমরাই করতাম’। শুনে আমার চোখে প্রায় জলে এসে গেল।
তিনি কম্পোজ বাবদ কোনো টাকা নিলেন না !
বললেন ’একজন শিল্পী ছবি এঁকেছে আমি তাকে রঙ আর তুলি দিয়েছি, তার জন্য টাকা নেব কেন?’
একথা শুনে আমি কতবার যে কাঁদলাম ! অবশ্য তিনি টাকা চাইলেও আমি দিতে পারতাম না। আমার কাছে অত টাকা ছিলও না।
আমি মনে করি সব ভাল কাজের সঙ্গে ঈশ্বর থাকেন। ঈশ্বর আসেন মানুষের রূপ ধরে। আপনারা এমন সেনসেটিভ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করেছেন যে ফের আমি ফিরে যাচ্ছি ২০০৮ সালে।
মাওলা ব্রাদার্সের আহমেদ মাহমুদুল হক ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারির বই মেলায় আমার কাছ একটি পয়সা না চেয়ে এবং না নিয়ে বইটি করলেন। কাইয়ূম চৌধুরি করলেন এর অসামান্য প্রচ্ছদ। ভেবেছিলাম কাইয়ূম ভাইয়ের টাকাটা অন্ততঃ আমি দিয়ে দেই। কিন্তু মাহমুদভাই তা দিতে দিলেন না। তাঁর কাছে আমার আজীবন কৃতজ্ঞতা।
না, আমি বই হয়ে বেরুবার আগে উপন্যাস কোথাও ছাপতে দিতে অপছন্দ করি। আমি আসলে নিভৃতে কাজ করে যেতে চাই।
হ্যাঁ, আমি এমন উপন্যাসই লিখতে চেয়েছি।
‘বয়ন’ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আমি তাঁদের কাছেও চিরঋণী। বাংলা একাডেমির ডিজি শামসুজ্জামান খান বইটির আলোচনা করেছেন। কামরুজ্জামান জাহাংগীর বলেছেন-
‘আমাদের এই বাংলাদেশে অনেক কিছুই নেই কিন্তু ‘বয়নের’ মতো উপন্যাস আছে।‘
সালাহউদ্দিন শুভ্র আলোচনা করেছে। শবনম নাদিয়া ‘ডেইলি স্টারে’ দারুণ এক আলোচনা করছে।
ভগীরথ মিশ্র, যিনি অইবার জেমকন সাহিত্য পুরস্কারের জাজ ছিলেন, তিনি পরে আমাকে উনার লিখিত অভিমতটি পাঠিয়েছেন, এবং বলেছেন বয়নকে সর্বোচ্চ নাম্বার দেওয়া স্বত্তেও কেন পুরস্কৃত করা হলো না, আমরা সত্যি অবাক হয়েছি !
এইসব দেখে এবং শুনে আজ আমি জানি, আমার লেখক জীবনের বড় পুরস্কার এসবই, আর কিছু নয়। এই যে এত জনের ভালবাসা পাওয়া।
২০০৯ এর জেমকন সাহিত্য পুরস্কার দেয়া হলো নির্মলেন্দু গুণকে। কিন্তু জাজেরা সারাক্ষণ বয়ন নিয়েই কথা বলে গেলেন।
যদিও নানান রাজনীতিতে ‘বয়নকে’ অনেক বড় পত্রিকাওয়ালারা কোনঠাসাও কম করেনি।কারণ আমি তো কোনো দলের নই।আর কিছুতেই চামচামি করতে পারিনা! অনেকে তো ‘বয়নের’ নামও ছাপেনি! কিন্তু তাতে কি এসে গেল বলুন? শুধুমাত্র বয়নের লেখক হিসেবে কত মানুষ যে আমাকে মনে রেখেছে!তাঁদের প্রতি আমার অশেষ ঋণ আর কৃতজ্ঞতা ।
১৫. ‘বয়ন’ টাঙ্গাইলের আখ্যান। ‘পালাটিয়া’ দিনাজপু্রের আখ্যান। সেটাও কিন্তু ভিন্ন আখ্যান। তবে মিল আছে। মিলটি হল--দুটোই গ্রামীণ নিম্ন বর্গের মানুষের আখ্যান। এ দেশে জনপ্রিয় ধারার উপন্যাসে নিম্নবর্গ বরাবরই তাৎপর্যরূপে উপেক্ষিত থাকে। যদি কেউ লিখেও থাকে্ন সেখানে থাকে ভাবালুতা, হাল্কা প্রেম, সস্তা যৌনতা, দূর থেকে দেখা এক চিলতে,আধ চিলতে কাহিনীর আভাষ--যা পরে লেখক বানিয়ে ফেলেন, অর্থাৎ গ্রামজীবনের নিম্নবর্গের কাহিনীতে এক ধরনের আরবানাইজেশন থাকে, এক ধরনের এনজিওবৃত্তি থাকে। এ দিকগুলি কিভাবে আপনি সামলেছেন?
পাপড়ি রহমান : সত্যিই কি আমি সব সামলাতে পেরেছি? সত্যি? আমি জানিনা আমি ওসবের বাইরে
যেতে পেরেছি কিনা?
যদি পেরে থাকি, তা হয়েছে আমার নিখাঁদ ভালবাসার জোরে।
যদি পেরে থাকি, তা হয়েছে আমার নিখাঁদ ভালবাসার জোরে।
আর আপনারা কেন যে
আমার থলের সব বেড়াল বের করতে চাইছেন কে জানে?
সব বেড়াল বেরিয়ে গেলে আমার থলে যে খালি হয়ে যাবে!
বয়ন নারায়নগঞ্জ এলাকার। রূপগঞ্জের। আমি কিন্তু টাঙ্গাইলের তাঁতী নয় শুধু জামদানীতাঁতীদের নিয়ে লিখেছি। জমাদানী শাড়ি হয় বাংলাদেশের নরসিংদী আর নারায়নগঞ্জে।ফলে ‘বয়ন’ শুধুই জামদানীতাঁতীদের জীবনের চলচ্ছবি।
তবে ‘পালাটিয়া’ লিখতে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে। দিনাজপুর আমার একেবারে অপিরিচিত ভূগোল। অপরিচিত ভাষা। আর এটা একেবারে তৃনমূল পর্যায়ের কাজ ছিল। পালাগুলো সংগ্রহ করতে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে তা বলার নয়। পালাকাররা কিছুতেই আমাকে বিশ্বাস করে পালা দিতে চাইছিল না! কেন দেবে? আমি যদি সেসব নিজের নামে ছাপিয়ে দেই। কি মুশকিল বলুন? পালার মানুষদের সাথে কথা বলতে গিয়েও দেখি সমস্যার অন্ত নেই।। তাঁরা কিছুতেই আমার ভাষা বোঝে না! আমিও তাঁদের ভাষা বুঝি না। সংলাপ লিখতে জান জেরবার হয়ে গিয়েছিল।
হ্যাঁ, যা বলেছেন সব সত্য। আসলে সবাই তো রাতারাতি ‘তারকালেখক’ বনে যেতে চান। তাই ফাঁকিঝুকি বেশি থাকে। আমি তা চাইনা বা চাইনি। আমাদের গ্রামের গরীবগুবরাদের কি সত্যিই কেউ ভালবাসে? না বাসে না। মন থেকে কেউ বাসেনা। তাঁদের নিয়ে লিখতে গেলে তাঁদের সত্যিকরে ভাল না বাসলে চলবে কি করে? ভালবাসা মানে যাকে বলে ফিল করা। আমি তাদের ফিল করি। ঔওন করি।
আমি যা লিখি তাঁদের প্রতি মমতা থেকেই লিখি। টান থেকেই লিখি। আমি তো দেখি তাদের জীবন-যাপন। তাঁরা কি খায়, কি পরে? কিভাবে বেঁচে থাকে?
আমার ভেতরে বসে আছে অইসব নিচুতলার মানুষেরা। যাঁরা আমাদের মতো চাতুরি জানে না। যাঁদের ভালবাসা দিয়ে পলকে কেনা যায়। আমি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ঢাকায়, তবুও ঢাকাকে আপন ভাবতে পারিনি। এসব হয়তো আমার আদিখ্যেতা। অনেকে বলবে ন্যাকামি। আমি জানিনা কেন তাঁদের জন্য আমার এত মায়া লাগে? তবে আমি ফিরে যেতে চাই আমার সেই শৈশবগ্রামে। জানি না কোনোদিন যেতে পারব কিনা। এসবই হয়তো আমার অন্য রকম লেখার কারণ। আমি ইচ্ছা করে কিছু সামলাতে চাই নি। হয়তো সব আপনাআপনিই সামলে উঠেছে !
সব বেড়াল বেরিয়ে গেলে আমার থলে যে খালি হয়ে যাবে!
বয়ন নারায়নগঞ্জ এলাকার। রূপগঞ্জের। আমি কিন্তু টাঙ্গাইলের তাঁতী নয় শুধু জামদানীতাঁতীদের নিয়ে লিখেছি। জমাদানী শাড়ি হয় বাংলাদেশের নরসিংদী আর নারায়নগঞ্জে।ফলে ‘বয়ন’ শুধুই জামদানীতাঁতীদের জীবনের চলচ্ছবি।
তবে ‘পালাটিয়া’ লিখতে আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়েছে। দিনাজপুর আমার একেবারে অপিরিচিত ভূগোল। অপরিচিত ভাষা। আর এটা একেবারে তৃনমূল পর্যায়ের কাজ ছিল। পালাগুলো সংগ্রহ করতে যে কি পরিমাণ কষ্ট হয়েছে তা বলার নয়। পালাকাররা কিছুতেই আমাকে বিশ্বাস করে পালা দিতে চাইছিল না! কেন দেবে? আমি যদি সেসব নিজের নামে ছাপিয়ে দেই। কি মুশকিল বলুন? পালার মানুষদের সাথে কথা বলতে গিয়েও দেখি সমস্যার অন্ত নেই।। তাঁরা কিছুতেই আমার ভাষা বোঝে না! আমিও তাঁদের ভাষা বুঝি না। সংলাপ লিখতে জান জেরবার হয়ে গিয়েছিল।
হ্যাঁ, যা বলেছেন সব সত্য। আসলে সবাই তো রাতারাতি ‘তারকালেখক’ বনে যেতে চান। তাই ফাঁকিঝুকি বেশি থাকে। আমি তা চাইনা বা চাইনি। আমাদের গ্রামের গরীবগুবরাদের কি সত্যিই কেউ ভালবাসে? না বাসে না। মন থেকে কেউ বাসেনা। তাঁদের নিয়ে লিখতে গেলে তাঁদের সত্যিকরে ভাল না বাসলে চলবে কি করে? ভালবাসা মানে যাকে বলে ফিল করা। আমি তাদের ফিল করি। ঔওন করি।
আমি যা লিখি তাঁদের প্রতি মমতা থেকেই লিখি। টান থেকেই লিখি। আমি তো দেখি তাদের জীবন-যাপন। তাঁরা কি খায়, কি পরে? কিভাবে বেঁচে থাকে?
আমার ভেতরে বসে আছে অইসব নিচুতলার মানুষেরা। যাঁরা আমাদের মতো চাতুরি জানে না। যাঁদের ভালবাসা দিয়ে পলকে কেনা যায়। আমি প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ঢাকায়, তবুও ঢাকাকে আপন ভাবতে পারিনি। এসব হয়তো আমার আদিখ্যেতা। অনেকে বলবে ন্যাকামি। আমি জানিনা কেন তাঁদের জন্য আমার এত মায়া লাগে? তবে আমি ফিরে যেতে চাই আমার সেই শৈশবগ্রামে। জানি না কোনোদিন যেতে পারব কিনা। এসবই হয়তো আমার অন্য রকম লেখার কারণ। আমি ইচ্ছা করে কিছু সামলাতে চাই নি। হয়তো সব আপনাআপনিই সামলে উঠেছে !
১৬.
নিম্নবর্গের জীবন নিয়ে আপনি কেন লেখেন?
পাপড়ি রহমান : আমরা যদি তাঁদের নিয়ে না লিখি তাহলে কে বা কারা লিখবে?
তাঁরা কি পড়াশুনা জানে না লেখার মতো পড়াশুনা তাঁদের থাকে?
আর নিজের জীবনের প্যানপ্যানানি লিখতে আমার বিরক্ত লাগে।
বরং তাঁদের জীবনটাই কি লেখা ভাল নয় যাঁরা জীবনের অর্থই ভাল করে বোঝে না।
পাপড়ি রহমান : আমরা যদি তাঁদের নিয়ে না লিখি তাহলে কে বা কারা লিখবে?
তাঁরা কি পড়াশুনা জানে না লেখার মতো পড়াশুনা তাঁদের থাকে?
আর নিজের জীবনের প্যানপ্যানানি লিখতে আমার বিরক্ত লাগে।
বরং তাঁদের জীবনটাই কি লেখা ভাল নয় যাঁরা জীবনের অর্থই ভাল করে বোঝে না।
১৭.
আপনি কি কমিটমেন্ট থেকে লেখেন?
পাপড়ি
রহমান : যেহেতু
ভুয়া জিনিসপত্র লিখতে চাইনা, সেহেতু কমিটমেন্ট কিছু তো থাকেই। অন্ততঃ নিজের কাছে
থাকে।
সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ, সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রচলিত মূল্যবোধ সব মিলিয়েই কিন্তু ব্যক্তি আমি। আমি ব্যাক্তি কি অইসবের বাইরের কেউ? তা কিন্তু নয়।
আমি যা স্বচক্ষে দেখি তাই সরল ও সৎ ভাবে লিখে যেতে চাই। তবে প্রশংসার কাঙাল আমি নই। আমি চাই পাঠক যেন সত্য কথা বলে। সত্যিকারের ভাল লেখাটির কদর করে। কমিটমেন্ট আসলে আমার নিজের কাছে নিজেরই- প্রচণ্ড পরিশ্রম দিয়ে আমি আমাদের শেকড়ের জীবন তুলে আনতে চাই।
সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ, সংস্কৃতি, ধর্ম, প্রচলিত মূল্যবোধ সব মিলিয়েই কিন্তু ব্যক্তি আমি। আমি ব্যাক্তি কি অইসবের বাইরের কেউ? তা কিন্তু নয়।
আমি যা স্বচক্ষে দেখি তাই সরল ও সৎ ভাবে লিখে যেতে চাই। তবে প্রশংসার কাঙাল আমি নই। আমি চাই পাঠক যেন সত্য কথা বলে। সত্যিকারের ভাল লেখাটির কদর করে। কমিটমেন্ট আসলে আমার নিজের কাছে নিজেরই- প্রচণ্ড পরিশ্রম দিয়ে আমি আমাদের শেকড়ের জীবন তুলে আনতে চাই।
১৮.
শিক্ষাগত জীবনে আপনি কৃতি। কিন্তু কোনো পেশা গ্রহণ করেননি। গৃহিণী, জননী-
এর মধ্যে আপনি কিভাবে লেখেন? এই
লেখালেখির জন্য কে বেশি স্যাক্রিফাইস করছেন--আপনি? না, আপনার
পরিবার?
পাপড়ি রহমান : হুম ফের থলের বেড়াল লাফিয়ে পড়ছে দেখি !
হাঃহাঃহাঃ তেমন কৃতি নই। কোনো রকমে কলম পিষে খেতে পারতাম, এই আর কি !
এটুকু তো আপনাদের জানা উচিত ছিল- গৃহিনী, জননীর পাশে আমি কিন্তু কর্মীও। কর্মী ছিলাম, আছিও। ফ্রিল্যান্স জার্নালিজম তো এখনো করছি। আগে তো নিয়মিত করতাম। মুক্তকন্ঠে চাকরি করেছি কিছুদিন। তবে লেখকের আলাদা বা অন্য কোনো পেশার দরকার কি?
মানিকবাবুর কথা ভাবুন। আমি মানিকবাবুকে আমার আদর্শ ভাবি।
যদিও আমি তাঁর পায়ের ধূলার সমানও নই। তবুও তাঁর নাম স্মরণ করলাম।
আমি মনে করি লেখা ছাড়া অন্য যে কোনো কিছুই লেখককে উড়ালে বাঁধাগ্রস্ত করে।
আরে না, এমনিতেই বললাম। নিজের পক্ষে যুক্তি দিলাম আর কি? রাঁধা এবং চুল বাঁধা কি অনেকেই একসাথে করে না?
আমি প্রথমতঃ ভাল মানুষ হতে চেয়েছি, দ্বিতীয়তঃ ভাল মা হতে চেয়েছি। অতঃপর ভাল লেখক হতে চেয়েছি।
মনে মনে আমি তো ভাই পথের বাউল। পদ্মার পারে সংসার বাঁধতে চাই। তবে গৃহিনীর কাজ কিন্তু মোটেও সহজ নয়! পরিবার সুরক্ষিত না হলে সমাজ বা রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে উঠবে? পাশের দেশ ভারতে গৃহিনীদের বেতনভাতা দেবে বলে স্থির করেছে। তাই দেয়া উচিত বলে মনে করি।
আমি বাসায় বসেও অফিসের চাইতেও ঢের বেশি কাজ করি । আর পড়ার চাপে গৃহিনীপনার সুযোগ খুব কম পাই।
তবে আমি জননীই হয়তো সর্বাগ্রে। আমার বিশ মাসের ছোটবড় দুইমেয়ে, যাদের একলা ফেলে আমি চাকুরে হওয়ার সাহস পাইনি। আর পরিবারও আমাকে সাপোর্ট করেনি। পরিবার আমার লেখার ও কর্মজীবনের প্রধান অন্তরায় হয়েছে। এখনো আমার কোনো সাফল্য আমি আমার দুই মেয়ে ছাড়া আর কারো সাথে শেয়ার করতে পারিনা। কারণ পরিবারের অন্য কেউই আনন্দিত হননা ! উপরন্ত ইর্ষান্বিত হোন।
আর সংসার কিন্তু আমাকে মোটেই একবিন্দু ছাড়ও দেয়নি। টেবিলে চামচ লাগিয়ে, প্লেট সাজিয়ে রেখেই আমি ফাঁক খুঁজি লেখার জন্য। ঘরদোর ঝকঝকে তকতকে করিয়ে রাখি। সবার সব কিছু গুছিয়ে-সাজিয়ে রাখি।
এ কথা সত্য, সংসারের কেউ আমাকে কোনোদিন সামান্য ক্ষণের জন্যও ছুটিও দেয়নি লেখার জন্য।
আমার পরিবার আমার লেখার জন্য কোনোরকম স্যাক্রিফাইস করেনি। তারা বরং তাদের সব চাহিদা আমার কাছ থেকে পুরণ করে নিয়েছে। তাদের চাহিদা পুরণ করে তবেই আমি লিখতে পেরেছি বা পারছি।
হাঃহাঃহাঃ তেমন কৃতি নই। কোনো রকমে কলম পিষে খেতে পারতাম, এই আর কি !
এটুকু তো আপনাদের জানা উচিত ছিল- গৃহিনী, জননীর পাশে আমি কিন্তু কর্মীও। কর্মী ছিলাম, আছিও। ফ্রিল্যান্স জার্নালিজম তো এখনো করছি। আগে তো নিয়মিত করতাম। মুক্তকন্ঠে চাকরি করেছি কিছুদিন। তবে লেখকের আলাদা বা অন্য কোনো পেশার দরকার কি?
মানিকবাবুর কথা ভাবুন। আমি মানিকবাবুকে আমার আদর্শ ভাবি।
যদিও আমি তাঁর পায়ের ধূলার সমানও নই। তবুও তাঁর নাম স্মরণ করলাম।
আমি মনে করি লেখা ছাড়া অন্য যে কোনো কিছুই লেখককে উড়ালে বাঁধাগ্রস্ত করে।
আরে না, এমনিতেই বললাম। নিজের পক্ষে যুক্তি দিলাম আর কি? রাঁধা এবং চুল বাঁধা কি অনেকেই একসাথে করে না?
আমি প্রথমতঃ ভাল মানুষ হতে চেয়েছি, দ্বিতীয়তঃ ভাল মা হতে চেয়েছি। অতঃপর ভাল লেখক হতে চেয়েছি।
মনে মনে আমি তো ভাই পথের বাউল। পদ্মার পারে সংসার বাঁধতে চাই। তবে গৃহিনীর কাজ কিন্তু মোটেও সহজ নয়! পরিবার সুরক্ষিত না হলে সমাজ বা রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে উঠবে? পাশের দেশ ভারতে গৃহিনীদের বেতনভাতা দেবে বলে স্থির করেছে। তাই দেয়া উচিত বলে মনে করি।
আমি বাসায় বসেও অফিসের চাইতেও ঢের বেশি কাজ করি । আর পড়ার চাপে গৃহিনীপনার সুযোগ খুব কম পাই।
তবে আমি জননীই হয়তো সর্বাগ্রে। আমার বিশ মাসের ছোটবড় দুইমেয়ে, যাদের একলা ফেলে আমি চাকুরে হওয়ার সাহস পাইনি। আর পরিবারও আমাকে সাপোর্ট করেনি। পরিবার আমার লেখার ও কর্মজীবনের প্রধান অন্তরায় হয়েছে। এখনো আমার কোনো সাফল্য আমি আমার দুই মেয়ে ছাড়া আর কারো সাথে শেয়ার করতে পারিনা। কারণ পরিবারের অন্য কেউই আনন্দিত হননা ! উপরন্ত ইর্ষান্বিত হোন।
আর সংসার কিন্তু আমাকে মোটেই একবিন্দু ছাড়ও দেয়নি। টেবিলে চামচ লাগিয়ে, প্লেট সাজিয়ে রেখেই আমি ফাঁক খুঁজি লেখার জন্য। ঘরদোর ঝকঝকে তকতকে করিয়ে রাখি। সবার সব কিছু গুছিয়ে-সাজিয়ে রাখি।
এ কথা সত্য, সংসারের কেউ আমাকে কোনোদিন সামান্য ক্ষণের জন্যও ছুটিও দেয়নি লেখার জন্য।
আমার পরিবার আমার লেখার জন্য কোনোরকম স্যাক্রিফাইস করেনি। তারা বরং তাদের সব চাহিদা আমার কাছ থেকে পুরণ করে নিয়েছে। তাদের চাহিদা পুরণ করে তবেই আমি লিখতে পেরেছি বা পারছি।
১৯. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি
পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
পাপড়ি রহমান : লেখা হলো আমার কাছে যে কোনো কাজের চাইতে অনেক বেশি কষ্টকর কাজ। আর এই
কাজ করতে আমার যতোটা স্বস্তি লাগে, অন্য যে কোনো কাজ ততটাই
বোরিং লাগে। কোনো কিছুই মাথায় রেখে গল্প লিখি না। সিরিয়াস কোনো কাজ করছি এই
ভাবনা থেকে গল্প লিখি। লেখার সময় কারো কথাই মাথায় থাকে না। শুধু চাই লেখাটা যেন
ভাল হয়। পূর্বের গল্পকে যেন অতিক্রম করতে পারে। লেখা কিন্তু আমার নিজের দর্শনও
নাকি? আমি যা ভাবছি তা যেন ক্লিয়ার বুঝা যায় এমন
চেষ্টাই থাকে। সেই সাথে তা যেন জীবনঘনিষ্ট হয় সেটাও মনে রাখি।
২০. এখন কি লিখছেন?
পাপড়ি রহমান : এখন ‘মায়াপারাবার’ নামে আত্মজীবনী লিখছি। যা www.dhakareport24.com এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এতে আমার ৪ থেকে
৯ বছর বয়স পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনার যতটুকু মনে আছে লিখছি।
২১. আগামী কি লিখবেন?
পাপড়ি রহমান : আসলে ভাবছি কি লিখব?
প্রস্তুতি নিচ্ছি নতুন উপন্যাসের। নতুন লেখার জন্য
যে ধ্যান দরকার তা আপাততঃ অনুকূলে নেই। যখন পুরোপুরি ধ্যানে মগ্ন হতে পারবো তখনই
লিখতে শুরু করবো আমার নতুন উপন্যাস। তার আগে কিছুতেই নয়।
২২.
লিখে কী হবে কথাশিল্পী পাপড়ি রহমান ?
পাপড়ি রহমান : এমন মানব জনম আর কি হবে।
মন, যা কর ত্বরায় এই ভবে ।।
আহা, চলিয়া যাব আমি , চলিয়া যাব চিরতরে !
আর ফিরিব না, কিছুতেই না। তো এই যে অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবী, মধুময় জীবন, এত প্রেম আর মায়া, এত হাসি আর গান- এসব উদযাপন করার জন্যই তো লিখছি আমি।
অন্যভাবে যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, যে প্রশ্নে ‘কি হবে’ থাকে তার কি কোনো সার্বজনীন জবাব দেয়া যায়?
আপনারাই বলুন বেঁচে থেকে কি হবে? পড়াশুনা করে? বিবাহ করে কি হবে? সংসার করে ? সন্তান জন্ম দিয়ে? সবই তো মায়ার খেলা। সবই তো নশ্বর নাকি? সবই তো মুছে যাবে কোনো একদিন, তো?
তাহলে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ লিখছে কেন? লিখছে পাথর খোদাই করে, গাছের বাকলে, কেন? বা লিখিত দলিল রাখার চেষ্টা করেছ কেন? চর্যাপদের চিহ্ন না থাকলে কি এমন আসতো যেত?
তবে আমি কেন লিখি ?- সেটা আমি জানি। আমি অন্য কিছু পারিনা বলেই লিখি।
লিখি মুষিকদের, উইপোকাদের যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য। হাঃহাঃহাঃ
আর আমি একটি বাক্য মনে মনে আওড়াই – জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর।
কথাকার পাপড়ি রহমান লিখে কি হবে? -- এর যথার্থ উত্তর এখন না পেলেও আমার কবরের এপিটাফ থেকে কেউ হয়তো একদিন উত্তর পেয়ে যাবে -
‘একদিন ঘাস হয়ে রবো মৃত্তিকার ‘পরে
পাপড়ি রহমান : এমন মানব জনম আর কি হবে।
মন, যা কর ত্বরায় এই ভবে ।।
আহা, চলিয়া যাব আমি , চলিয়া যাব চিরতরে !
আর ফিরিব না, কিছুতেই না। তো এই যে অনিন্দ্য সুন্দর পৃথিবী, মধুময় জীবন, এত প্রেম আর মায়া, এত হাসি আর গান- এসব উদযাপন করার জন্যই তো লিখছি আমি।
অন্যভাবে যদি বলি, তাহলে বলতে হয়, যে প্রশ্নে ‘কি হবে’ থাকে তার কি কোনো সার্বজনীন জবাব দেয়া যায়?
আপনারাই বলুন বেঁচে থেকে কি হবে? পড়াশুনা করে? বিবাহ করে কি হবে? সংসার করে ? সন্তান জন্ম দিয়ে? সবই তো মায়ার খেলা। সবই তো নশ্বর নাকি? সবই তো মুছে যাবে কোনো একদিন, তো?
তাহলে সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ লিখছে কেন? লিখছে পাথর খোদাই করে, গাছের বাকলে, কেন? বা লিখিত দলিল রাখার চেষ্টা করেছ কেন? চর্যাপদের চিহ্ন না থাকলে কি এমন আসতো যেত?
তবে আমি কেন লিখি ?- সেটা আমি জানি। আমি অন্য কিছু পারিনা বলেই লিখি।
লিখি মুষিকদের, উইপোকাদের যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেজন্য। হাঃহাঃহাঃ
আর আমি একটি বাক্য মনে মনে আওড়াই – জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর।
কথাকার পাপড়ি রহমান লিখে কি হবে? -- এর যথার্থ উত্তর এখন না পেলেও আমার কবরের এপিটাফ থেকে কেউ হয়তো একদিন উত্তর পেয়ে যাবে -
‘একদিন ঘাস হয়ে রবো মৃত্তিকার ‘পরে
খেয়ে যাবে দুরন্ত
খোরগোশ...’
‘গল্পপাঠের’ পাঠকদের প্রতি আমার অন্তহীন কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা।
‘গল্পপাঠের’ পাঠকদের প্রতি আমার অন্তহীন কৃতজ্ঞতা, ভালবাসা।
1 মন্তব্যসমূহ
হুমায়ুন আহমেদ সমন্ধে পাপড়ি রহমানের মন্তব্য অসম্পূর্ণ। হুমায়ুন আহমেদ সমন্ধে কোন হিংসুটে আনসাক্সেস্ফুল লেখক বলে থাকবেন যে হুমায়ুন হাল্কা লেখা লিখে জনপ্রিয়তা চুরি করেছেন। সেই মন্তব্যটিই বাজারে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। পাপড়ি রহমানও তাই করেছেন। শংখনীল কারাগার এবং নন্দিত নরকে ছাড়াও তিনি অনেক ভাল লেখা লিখেছেন। অন্য ভূবনের লেখাগুলো ছিল তাঁর এক্সপেরিমেন্টাল।
উত্তরমুছুন