ইমতিয়ার শামীম
১.গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
ইমতিয়ার শামীম: আমার গল্প লেখার চেষ্টা অথবা অপচেষ্টার কারণ খানিকটা পারিবারিক, খানিকটা পারিপার্শ্বিক। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আমার গল্প লেখার শুরু হয়েছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে--আমার স্কুলের সহপাঠীর দেখাদেখি। রিশিত খান নামে ও-ও একসময় লেখালেখিতে সক্রিয় ছিল। এখন আমাদের দেখাসাক্ষাৎ প্রায় হয়ই না বলা চলে। কিন্তু ওই সময়ে আমরা ছিলাম হরিহর আত্মা। ওর আর গল্পকার ইসহাক খানের বাড়ি একই গ্রামে।
সেই সুবাদে ওর গল্প লেখার শুরু আর আমার গল্প লেখালেখির কথা শোনার শুরু। গল্প শোনার কান অবশ্য আমার অনেক আগে থেকেই তৈরি ছিল। শৈশবে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেসব কাজের মানুষ ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন একেকজন দারুণ গল্পবলিয়ে মানুষ। ফয়েজ জোয়াদ্দার দাদা আর কুরমান আলী চাচার মতো গল্পবলিয়ের এমনকি কামলাদের মধ্যেও আলাদা কদর ছিল। আমার মতো বালকদের উপস্থিতি তাদের জন্যে অবশ্য তেমন প্রীতিকর ছিল না। কেননা তাদের বলা গল্পের এমনকি রূপকথার জমিনও ছিল আদিরসে ভরা। আমরা থাকলে তাই তাদের গল্প বলতে হতো সম্পাদনা করে। আমাদের তাড়াতাড়ি বিদায় করার চেষ্টা চালাতে চালাতে তারা কথা চালিয়ে যেতেন। এদের একেকজনের গুরুত্ব আমার কাছে এখনও অপরিসীম। আমরা তখন প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে গ্রামের বাজারের পোস্টঅফিসে যেতাম প্রতিদিনকার দৈনিক পত্রিকা ও চিঠিপত্র নিয়ে আসতে। তো পত্রপত্রিকায় রিশিতের লেখা গল্প ছাপা হতে শুরু হলো, দেখাদেখি আমিও লিখলাম ২/১ টা। গল্প লেখার পেছনে ওই সময় অবশ্য পারিপার্শ্বিক ঘটনাও ভূমিকা রেখেছিল। আমার মনে আছে, আমাদের এক ভাবীর ছোটভাই একবার গ্রামে এলো। প্রেমিকার বেরসিক ভাই মাস্তানদের নিয়ে ওর ওপর চড়াও হয়ে কানের খানিকটা কেটে দিয়েছিল। তো আমি সেটা নিয়েও একটা গল্প লিখেছিলাম। আমাদের সেই ভাবীর ভাইটি অবশ্য অল্প বয়সেই মারা গেছে, কিন্তু ওর কথা এখনও আমরা আমাদের আড্ডাগুলোতে বলাবলি করি। তো এভাবেই শুরু হয়েছিল আমার গল্প লেখা। নিশ্চিন্তেই বলতে পারেন, আমার গল্প লেখা মোটেও গল্প পড়ার ফসল নয়।
২.শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
ইমতিয়ার শামীম : কি শুরু, কি এখন--কোনওকালেই আমার লেখা কোনও গল্প পাঠক হিসেবে আমার কাছে তত আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। লেখা ছাপা হওয়ার পর পাঠক হিসেবে পড়তে গেলেও সেসবের নির্মাতা হওয়ার যে-দায় অবচেতনে বয়ে বেড়াতে হয়, তা লেখকের পাঠকমনকেও প্রভাবিত করে, লেখার দুর্বলতা ও ফাঁকগুলো তাকে প্রভাবিত করতে থাকে। তবে একেবারে গল্প লেখার মন নিয়ে আমি বোধহয় প্রথম যে গল্পটি লিখেছিলাম, সেটি ছাপা হয়েছিল তখনকার সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে। ডাকযোগে লেখাটি যখন পাঠাই, তখন আমি কলেজের ছাত্র। তবে এ গল্পও ছিল আমার এক বন্ধুর গল্প। স্কুলের পড়া অনেক চেষ্টা করে শেষ করতে না পারলেও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার ও ব্যবসা করার সুবাদে ও এখন বেশ বড়লোক। বলাই বাহুল্য, আমাদের বোধহয় গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে আর দেখা হয় না। লেখাপড়া শেষ করতে না পারলেও শরৎচন্দ্রের বই থেকে লাগসই বাক্য তুলে নিয়ে প্রেমপত্র লেখার কায়দাটা ও বেশ ভালো করেই রপ্ত করেছিল। ওর শরীরস্বাস্থ্য আমার দ্বিগুণ, স্কুলে পড়ার সময়েই ও মাটির ওপর থেকে অনায়াসে পাঁচনম্বরী ফুটবল পাঁচ আঙুলে আঁকড়ে ওপরে তুলে ধরতে পারত। পড়াশুনা শেষ না করে ও হয় প্রথমে ট্রাক ড্রাইভার। ওর জীবনের এই পর্ব পর্যন্ত আমাদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। পরে তো ও সৌদি আরব চলে গেল, তারপর আমাদের বোধহয় মাত্র একবার দেখা হয়েছিল। তো ওকে নিয়ে আমি লিখেছিলাম আইনকানুন। সন্ধানীতে লেখাটি ছাপা হলো, অলঙ্করণ করেছিলেন কাইয়ূম চৌধুরী। এখন তাঁর সঙ্গে আমার কখনও সখনও কথাবার্তা হয়, কিন্তু এই কথাটি তাকে কখনোই বলা হয় নি যে, গল্পটি ছাপার হরফে দেখার সময় কাইয়ূম চৌধুরী যে ইলাস্ট্রেশান করেছেন, এটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তারপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই পোস্টকার্ডে গল্পকার সুশান্ত মজুমদারের চিঠি পেলাম। সন্ধানীতে তিনি কাজ করতেন। আরও লিখতে বলেছিলেন তিনি, বেশ ভালোভাবেই মনে আছে। তখন অবশ্য সক্রিয় রাজনীতিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। শুরুর দিককার এইসব গল্পের একটি ছাড়া (অচরিতার্থ পূর্বজন্ম) আর কোনওটিই আমার কোনও গল্পগ্রন্থে নেই।
৩.গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
ইমতিয়ার শামীম : প্রস্তুতি বলতে যদি পঠনপাঠনের কথা বুঝিয়ে থাকেন, তা হলে বলব, তেমন কোনও প্রস্তুতি আমার কখনোই ছিল না। আগেই বলেছি, গল্প লেখার আঁকুতি আমার খুব বেশি ছিল না। তবে এও সত্য, লেখালেখির আবহ আমার চারপাশে সবসময়েই ছিল। আমার এই লেখালেখি যতটা না আমার, তারও চেয়ে আমার বন্ধুদের প্রাণান্ত চেষ্টার ফল। দিনের পর দিন আমার পেছনে লেখার জন্যে লেগে থাকার অদ্ভূত ক্ষমতা দিয়ে, নতুন নতুন পড়া বই নিয়ে কথা তুলে আমাকে লেখালেখিতে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে আমার বন্ধুরা। যা আমরা লিখি তার সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে অভিজ্ঞতার নির্যাস যুক্ত থাকে। আলাদাভাবে গল্প লেখার প্রস্তুতি নেয়া বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে কখনও বিশেষ করে চিন্তা করিনি। লিখতে গেলে টের পাই, অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞানে রূপান্তর করার শক্তি ও ধৈর্য থাকা চাই-- নইলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই সারা জীবন পার হয়ে যাবে, লেখা আর হবে না। টের পাই, যত অভিজ্ঞতাই থাক না কেন খানিকটা শূন্যতা থেকেই যায় তার ভেতরে, কখনও আবার তাতে ভিন্ন ব্যাখ্যা যুক্ত হওয়াতে অভিজ্ঞতা অতিঅভিজ্ঞতার দায়ে দুষ্ট হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞতার এই শূন্যতাকে ভরাট করার ও অতিরিক্ততাকে ছেঁটে ফেলার মতো কল্পনাশক্তি থাকা চাই। অভিজ্ঞান আর কল্পনাশক্তির মিশেলে যে রহস্যময়তা দানা বাঁধতে থাকে, তাই হয়তো গল্পকে এগিয়ে নিতে থাকে। জানি না, এই রহস্যময়তার কোনও ব্যাখ্যা আছে কি না, কিংবা কীভাবে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। আমি সংক্ষেপে এরকম বুঝে থাকি, অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞানে রূপান্তর করার শক্তি ও ধৈর্য অর্জন করা, অভিজ্ঞতার শূন্যতাকে ও অতিরিক্ততাকে কল্পনাশক্তি দিয়ে ভরাট করার ও ছেঁটে ফেলার ক্ষমতা অর্জন করা। এগুলো আপনি বই পড়েও অর্জন করতে পারেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলে আর পরিভ্রমণের মধ্যে দিয়েও অর্জন করতে পারেন। তবে এ-ও বলি, এরকম বুঝলেও বা মনে করলেও তা আমি অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
৪. আপনার গল্প লেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
ইমতিয়ার শামীম : সত্যি কথা বলতে গেলে, এসব নিয়ে আমি কখনও আলাদাভাবে কিছু চিন্তা করিনি। দেখুন, লেখার কথা তো পরের ব্যাপার--এই যে আমরা পাঠক হিসেবে এত কিছু পড়ছি, কোনও লেখককে প্রিয় ভাবছি, কাউকে আবার হয়তো ভালোই লাগছে না, কিন্তু আমরা কি কড়া হিসেব কষে দেখাতে পারব, তার বা তাদের লেখার কৌশল এই বা এইরকম? হয়তো আমরা একটি রূপকল্প দাঁড় করাতে পারি। তার খানিকটায় ভাষার ব্যাপার থাকে, খানিকটা পঠনের পরিভ্রমণ থাকে, তাত্ত্বিক প্রসঙ্গও টেনে আনা সম্ভব। কিন্তু গল্প লেখার ক্ষেত্রে সার্বজনীন কৌশল বলতে কোনও কিছু আছে কি? আপনি কী বলছেন, কতটুকু বলবেন, কেন বলবেন তার ওপর ভিত্তি করে গল্পের ক্রাফট দাঁড়াতে থাকে। আপনি যদি আগে থেকেই কমিউনিকেটিভ ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার দায়ভার নিয়ে লিখতে শুরু করেন, তা হলে এই ক্রাফট একরকম হবে; আপনি যদি দেখেন চারপাশে যা ঘটছে তা আপনার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, আপনার নিজের সঙ্গে সম্পর্করহিত মনে হচ্ছে, তা হলে তার ক্রাফট অন্যরকম দাঁড়াবে। আবার ভাষা নিয়ে রাজনীতি আছে, সেই রাজনীতিও আপনার গল্পের ক্রাফটকে অন্যরকম করে তুলতে পারে। আমি এটি তীব্রভাবেই বিশ্বাস করি যে, পূর্ব বাংলায় ভাষা নিয়ে একটি পরিকল্পিত রাজনীতি ছিল, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার পরেও অব্যাহত আছে। শুধু গল্পের নয়, আমাদের সাহিত্যের ভাষা, ভাষারীতি ও শৈল্পিকতা নির্মাণের ক্ষেত্রেও এ রাজনীতি ভূমিকা রাখছে। এখন একজন গল্পকারের গল্পের কৌশল বলুন, স্টাইল বলুন আর টেকনিক বলুন, কিংবা সৃজনশীলতাই বলুন, এগুলো নিয়ে অনেক কথাই বলা যেতে পারে; কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত গল্পকার এলস্পেথ ডেভি যেমন বলেছেন, গল্পকারের প্রকৃত কল্পনাশক্তি কোথা থেকে আসে, সেটি একটি অপার রহস্য। যে কারণে পাঠকের কাছে লেখকের ক্রাফট আলাদা মনে হয়, পাঠক হিসেবে আমার বিবেচনায় সেটা হলো এই রহস্যময়তা।
৫. আপনার নিজের গল্প সম্পর্কে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
ইমতিয়ার শামীম : আমার কোনও বিবেচনা নেই। বলতে পারেন, নির্দয়তা আছে, মমতা আছে। যা লিখেছি, ছাপা হওয়ার পর তা পড়ে তো মনে হয়, এর দায় যদি অস্বীকার করা যেত! কিন্তু লেখা হলো অটিস্টিক শিশুর প্যারেন্ট হওয়ার মতো ঘটনা। আপনি জানেন, একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে, অসীম যতœ ও সময় নিয়ে সেটি ঘুচানোর জন্যে আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। অপূর্ণতা থাকার পরও আপনি তাকে কখনোই অস্বীকার করতে পারবেন না, বরং পরম মমতায় আগলে রাখবেন, নির্মাণ-পূণর্নির্মাণ করে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে তা আপনি কখনোই জানতে পারবেন না।
৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেন তাদেরকে আদর্শ মনে করেন?
ইমতিয়ার শামীম : আমার কোনও আদর্শ গল্পকার নেই। অনেকের গল্প পড়তে আমার ভালো লাগে, কখনও নেশাগ্রস্তের মতো পড়ি-- এই আরকি।
৭ .কার জন্যে গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে গল্প লেখেন? লিখলে কেন লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তা হলে কেন পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়?
ইমতিয়ার শামীম : না, আমি পাঠকের কথা মনে করে লিখি না। পাঠককে মনে রেখে লেখা আমার তো মনে হয়, পাঠকের প্রতি এক ধরণের অবিচারও করা; তিনি যে নিজেকে অতিক্রম করে যেতে পারেন, তার সাধারণ পাঠাভ্যাসের সীমা অতিক্রম করতে পারেন, এই সত্যকে তরল ও হালকা করে দেখা। তা ছাড়া লেখা আমার কাছে এক পরিভ্রমণ; অমিয়ভূষণের কথা ঋণ করে বলা যায়, ট্রমা থেকে মুক্তি অর্জনের মতো এক পরিভ্রমণ। পাঠকের কথা মাথায় রেখে প্রবন্ধ, আলোচনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ--এইসব লেখা যায়; কিন্তু ফিকশন আর কবিতার ক্ষেত্রে তা পাঠককে অতিক্রম করতে না পারলে আপনি হয়তো সুখপাঠ্য কোনও কিছুর জন্ম দিতে পারেন, কিন্তু ওই পরিভ্রমণের, মুক্তি অর্জনের স্বাদ আপনি তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিতে পারবেন না।
৮.এখন কী লিখছেন?
ইমতিয়ার শামীম : দুটো গল্প লিখতে লিখতেও শেষ হয়নি। সেগুলো মাঝেমধ্যে পড়ি আর কাটাকুটি করি। একটা উপন্যাসের অবস্থাও তাই। এ ছাড়া গত বছর ঈদসংখ্যায় একটা উপন্যাস ছাপা হয়েছিল। সেটি নেড়েচেড়ে দেখছি।
৯. আগামীতে কী লিখবেন?
ইমতিয়ার শামীম : বেশি কিছু লেখার পরিকল্পনা নেই, এটুকু বলতে পারি। এত ভালো কিছু পড়ার আছে, এত কিছু দেখার আছে আর আড্ডা দেয়ার মতো এত প্রিয় মানুষ আছে যে, এসব মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে থাকা বরং অনেক ভালো। তবে শৈশব খুব প্রিয় আমার, তা ছাড়া বিস্মৃতিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় আমাকে প্রায়ই তাড়িয়ে বেড়ায়--তাই শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো নিজের প্রয়োজনেই আমি লিখে নিতে চাই--যাতে পরে মনে না-আসার যন্ত্রণায় আক্রান্ত না হতে হয়। আর, নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের অঞ্চলে ইংরেজ শাসনামলে একটি ঐতিহাসিক কৃষকবিদ্রোহ হয়েছিল। ওই সময়ের মানুষ নিয়ে, জীবন নিয়ে অনেক আগে থেকেই বড় আকারের একটি উপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে আমার। সেটি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। লিখতে চাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও। তবে লেখা তো একটা জার্নি-- আমার মনে হয়, তার স্বাদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করাই ভালো। উপসংহারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকাই ভালো। এমনও হতে পারে, এসব আমার কোনওদিনই লেখা হবে না!
১.গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
ইমতিয়ার শামীম: আমার গল্প লেখার চেষ্টা অথবা অপচেষ্টার কারণ খানিকটা পারিবারিক, খানিকটা পারিপার্শ্বিক। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, আমার গল্প লেখার শুরু হয়েছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে--আমার স্কুলের সহপাঠীর দেখাদেখি। রিশিত খান নামে ও-ও একসময় লেখালেখিতে সক্রিয় ছিল। এখন আমাদের দেখাসাক্ষাৎ প্রায় হয়ই না বলা চলে। কিন্তু ওই সময়ে আমরা ছিলাম হরিহর আত্মা। ওর আর গল্পকার ইসহাক খানের বাড়ি একই গ্রামে।
সেই সুবাদে ওর গল্প লেখার শুরু আর আমার গল্প লেখালেখির কথা শোনার শুরু। গল্প শোনার কান অবশ্য আমার অনেক আগে থেকেই তৈরি ছিল। শৈশবে আমাদের গ্রামের বাড়িতে যেসব কাজের মানুষ ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন একেকজন দারুণ গল্পবলিয়ে মানুষ। ফয়েজ জোয়াদ্দার দাদা আর কুরমান আলী চাচার মতো গল্পবলিয়ের এমনকি কামলাদের মধ্যেও আলাদা কদর ছিল। আমার মতো বালকদের উপস্থিতি তাদের জন্যে অবশ্য তেমন প্রীতিকর ছিল না। কেননা তাদের বলা গল্পের এমনকি রূপকথার জমিনও ছিল আদিরসে ভরা। আমরা থাকলে তাই তাদের গল্প বলতে হতো সম্পাদনা করে। আমাদের তাড়াতাড়ি বিদায় করার চেষ্টা চালাতে চালাতে তারা কথা চালিয়ে যেতেন। এদের একেকজনের গুরুত্ব আমার কাছে এখনও অপরিসীম। আমরা তখন প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে গ্রামের বাজারের পোস্টঅফিসে যেতাম প্রতিদিনকার দৈনিক পত্রিকা ও চিঠিপত্র নিয়ে আসতে। তো পত্রপত্রিকায় রিশিতের লেখা গল্প ছাপা হতে শুরু হলো, দেখাদেখি আমিও লিখলাম ২/১ টা। গল্প লেখার পেছনে ওই সময় অবশ্য পারিপার্শ্বিক ঘটনাও ভূমিকা রেখেছিল। আমার মনে আছে, আমাদের এক ভাবীর ছোটভাই একবার গ্রামে এলো। প্রেমিকার বেরসিক ভাই মাস্তানদের নিয়ে ওর ওপর চড়াও হয়ে কানের খানিকটা কেটে দিয়েছিল। তো আমি সেটা নিয়েও একটা গল্প লিখেছিলাম। আমাদের সেই ভাবীর ভাইটি অবশ্য অল্প বয়সেই মারা গেছে, কিন্তু ওর কথা এখনও আমরা আমাদের আড্ডাগুলোতে বলাবলি করি। তো এভাবেই শুরু হয়েছিল আমার গল্প লেখা। নিশ্চিন্তেই বলতে পারেন, আমার গল্প লেখা মোটেও গল্প পড়ার ফসল নয়।
২.শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
ইমতিয়ার শামীম : কি শুরু, কি এখন--কোনওকালেই আমার লেখা কোনও গল্প পাঠক হিসেবে আমার কাছে তত আর গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। লেখা ছাপা হওয়ার পর পাঠক হিসেবে পড়তে গেলেও সেসবের নির্মাতা হওয়ার যে-দায় অবচেতনে বয়ে বেড়াতে হয়, তা লেখকের পাঠকমনকেও প্রভাবিত করে, লেখার দুর্বলতা ও ফাঁকগুলো তাকে প্রভাবিত করতে থাকে। তবে একেবারে গল্প লেখার মন নিয়ে আমি বোধহয় প্রথম যে গল্পটি লিখেছিলাম, সেটি ছাপা হয়েছিল তখনকার সাপ্তাহিক সচিত্র সন্ধানীতে। ডাকযোগে লেখাটি যখন পাঠাই, তখন আমি কলেজের ছাত্র। তবে এ গল্পও ছিল আমার এক বন্ধুর গল্প। স্কুলের পড়া অনেক চেষ্টা করে শেষ করতে না পারলেও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার ও ব্যবসা করার সুবাদে ও এখন বেশ বড়লোক। বলাই বাহুল্য, আমাদের বোধহয় গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে আর দেখা হয় না। লেখাপড়া শেষ করতে না পারলেও শরৎচন্দ্রের বই থেকে লাগসই বাক্য তুলে নিয়ে প্রেমপত্র লেখার কায়দাটা ও বেশ ভালো করেই রপ্ত করেছিল। ওর শরীরস্বাস্থ্য আমার দ্বিগুণ, স্কুলে পড়ার সময়েই ও মাটির ওপর থেকে অনায়াসে পাঁচনম্বরী ফুটবল পাঁচ আঙুলে আঁকড়ে ওপরে তুলে ধরতে পারত। পড়াশুনা শেষ না করে ও হয় প্রথমে ট্রাক ড্রাইভার। ওর জীবনের এই পর্ব পর্যন্ত আমাদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। পরে তো ও সৌদি আরব চলে গেল, তারপর আমাদের বোধহয় মাত্র একবার দেখা হয়েছিল। তো ওকে নিয়ে আমি লিখেছিলাম আইনকানুন। সন্ধানীতে লেখাটি ছাপা হলো, অলঙ্করণ করেছিলেন কাইয়ূম চৌধুরী। এখন তাঁর সঙ্গে আমার কখনও সখনও কথাবার্তা হয়, কিন্তু এই কথাটি তাকে কখনোই বলা হয় নি যে, গল্পটি ছাপার হরফে দেখার সময় কাইয়ূম চৌধুরী যে ইলাস্ট্রেশান করেছেন, এটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছিল। তারপর কয়েকদিন যেতে না যেতেই পোস্টকার্ডে গল্পকার সুশান্ত মজুমদারের চিঠি পেলাম। সন্ধানীতে তিনি কাজ করতেন। আরও লিখতে বলেছিলেন তিনি, বেশ ভালোভাবেই মনে আছে। তখন অবশ্য সক্রিয় রাজনীতিই অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার কাছে। শুরুর দিককার এইসব গল্পের একটি ছাড়া (অচরিতার্থ পূর্বজন্ম) আর কোনওটিই আমার কোনও গল্পগ্রন্থে নেই।
৩.গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
ইমতিয়ার শামীম : প্রস্তুতি বলতে যদি পঠনপাঠনের কথা বুঝিয়ে থাকেন, তা হলে বলব, তেমন কোনও প্রস্তুতি আমার কখনোই ছিল না। আগেই বলেছি, গল্প লেখার আঁকুতি আমার খুব বেশি ছিল না। তবে এও সত্য, লেখালেখির আবহ আমার চারপাশে সবসময়েই ছিল। আমার এই লেখালেখি যতটা না আমার, তারও চেয়ে আমার বন্ধুদের প্রাণান্ত চেষ্টার ফল। দিনের পর দিন আমার পেছনে লেখার জন্যে লেগে থাকার অদ্ভূত ক্ষমতা দিয়ে, নতুন নতুন পড়া বই নিয়ে কথা তুলে আমাকে লেখালেখিতে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে আমার বন্ধুরা। যা আমরা লিখি তার সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে অভিজ্ঞতার নির্যাস যুক্ত থাকে। আলাদাভাবে গল্প লেখার প্রস্তুতি নেয়া বলতে কী বোঝায়, তা নিয়ে কখনও বিশেষ করে চিন্তা করিনি। লিখতে গেলে টের পাই, অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞানে রূপান্তর করার শক্তি ও ধৈর্য থাকা চাই-- নইলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতেই সারা জীবন পার হয়ে যাবে, লেখা আর হবে না। টের পাই, যত অভিজ্ঞতাই থাক না কেন খানিকটা শূন্যতা থেকেই যায় তার ভেতরে, কখনও আবার তাতে ভিন্ন ব্যাখ্যা যুক্ত হওয়াতে অভিজ্ঞতা অতিঅভিজ্ঞতার দায়ে দুষ্ট হয়ে পড়ে। অভিজ্ঞতার এই শূন্যতাকে ভরাট করার ও অতিরিক্ততাকে ছেঁটে ফেলার মতো কল্পনাশক্তি থাকা চাই। অভিজ্ঞান আর কল্পনাশক্তির মিশেলে যে রহস্যময়তা দানা বাঁধতে থাকে, তাই হয়তো গল্পকে এগিয়ে নিতে থাকে। জানি না, এই রহস্যময়তার কোনও ব্যাখ্যা আছে কি না, কিংবা কীভাবে ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। আমি সংক্ষেপে এরকম বুঝে থাকি, অভিজ্ঞতাকে অভিজ্ঞানে রূপান্তর করার শক্তি ও ধৈর্য অর্জন করা, অভিজ্ঞতার শূন্যতাকে ও অতিরিক্ততাকে কল্পনাশক্তি দিয়ে ভরাট করার ও ছেঁটে ফেলার ক্ষমতা অর্জন করা। এগুলো আপনি বই পড়েও অর্জন করতে পারেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলে আর পরিভ্রমণের মধ্যে দিয়েও অর্জন করতে পারেন। তবে এ-ও বলি, এরকম বুঝলেও বা মনে করলেও তা আমি অর্জন করতে পেরেছি বলে মনে হয় না।
৪. আপনার গল্প লেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
ইমতিয়ার শামীম : সত্যি কথা বলতে গেলে, এসব নিয়ে আমি কখনও আলাদাভাবে কিছু চিন্তা করিনি। দেখুন, লেখার কথা তো পরের ব্যাপার--এই যে আমরা পাঠক হিসেবে এত কিছু পড়ছি, কোনও লেখককে প্রিয় ভাবছি, কাউকে আবার হয়তো ভালোই লাগছে না, কিন্তু আমরা কি কড়া হিসেব কষে দেখাতে পারব, তার বা তাদের লেখার কৌশল এই বা এইরকম? হয়তো আমরা একটি রূপকল্প দাঁড় করাতে পারি। তার খানিকটায় ভাষার ব্যাপার থাকে, খানিকটা পঠনের পরিভ্রমণ থাকে, তাত্ত্বিক প্রসঙ্গও টেনে আনা সম্ভব। কিন্তু গল্প লেখার ক্ষেত্রে সার্বজনীন কৌশল বলতে কোনও কিছু আছে কি? আপনি কী বলছেন, কতটুকু বলবেন, কেন বলবেন তার ওপর ভিত্তি করে গল্পের ক্রাফট দাঁড়াতে থাকে। আপনি যদি আগে থেকেই কমিউনিকেটিভ ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার দায়ভার নিয়ে লিখতে শুরু করেন, তা হলে এই ক্রাফট একরকম হবে; আপনি যদি দেখেন চারপাশে যা ঘটছে তা আপনার নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, আপনার নিজের সঙ্গে সম্পর্করহিত মনে হচ্ছে, তা হলে তার ক্রাফট অন্যরকম দাঁড়াবে। আবার ভাষা নিয়ে রাজনীতি আছে, সেই রাজনীতিও আপনার গল্পের ক্রাফটকে অন্যরকম করে তুলতে পারে। আমি এটি তীব্রভাবেই বিশ্বাস করি যে, পূর্ব বাংলায় ভাষা নিয়ে একটি পরিকল্পিত রাজনীতি ছিল, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার পরেও অব্যাহত আছে। শুধু গল্পের নয়, আমাদের সাহিত্যের ভাষা, ভাষারীতি ও শৈল্পিকতা নির্মাণের ক্ষেত্রেও এ রাজনীতি ভূমিকা রাখছে। এখন একজন গল্পকারের গল্পের কৌশল বলুন, স্টাইল বলুন আর টেকনিক বলুন, কিংবা সৃজনশীলতাই বলুন, এগুলো নিয়ে অনেক কথাই বলা যেতে পারে; কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিখ্যাত গল্পকার এলস্পেথ ডেভি যেমন বলেছেন, গল্পকারের প্রকৃত কল্পনাশক্তি কোথা থেকে আসে, সেটি একটি অপার রহস্য। যে কারণে পাঠকের কাছে লেখকের ক্রাফট আলাদা মনে হয়, পাঠক হিসেবে আমার বিবেচনায় সেটা হলো এই রহস্যময়তা।
৫. আপনার নিজের গল্প সম্পর্কে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
ইমতিয়ার শামীম : আমার কোনও বিবেচনা নেই। বলতে পারেন, নির্দয়তা আছে, মমতা আছে। যা লিখেছি, ছাপা হওয়ার পর তা পড়ে তো মনে হয়, এর দায় যদি অস্বীকার করা যেত! কিন্তু লেখা হলো অটিস্টিক শিশুর প্যারেন্ট হওয়ার মতো ঘটনা। আপনি জানেন, একটা অপূর্ণতা রয়ে গেছে, অসীম যতœ ও সময় নিয়ে সেটি ঘুচানোর জন্যে আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। অপূর্ণতা থাকার পরও আপনি তাকে কখনোই অস্বীকার করতে পারবেন না, বরং পরম মমতায় আগলে রাখবেন, নির্মাণ-পূণর্নির্মাণ করে যাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী ঘটবে তা আপনি কখনোই জানতে পারবেন না।
৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেন তাদেরকে আদর্শ মনে করেন?
ইমতিয়ার শামীম : আমার কোনও আদর্শ গল্পকার নেই। অনেকের গল্প পড়তে আমার ভালো লাগে, কখনও নেশাগ্রস্তের মতো পড়ি-- এই আরকি।
৭ .কার জন্যে গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে গল্প লেখেন? লিখলে কেন লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তা হলে কেন পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়?
ইমতিয়ার শামীম : না, আমি পাঠকের কথা মনে করে লিখি না। পাঠককে মনে রেখে লেখা আমার তো মনে হয়, পাঠকের প্রতি এক ধরণের অবিচারও করা; তিনি যে নিজেকে অতিক্রম করে যেতে পারেন, তার সাধারণ পাঠাভ্যাসের সীমা অতিক্রম করতে পারেন, এই সত্যকে তরল ও হালকা করে দেখা। তা ছাড়া লেখা আমার কাছে এক পরিভ্রমণ; অমিয়ভূষণের কথা ঋণ করে বলা যায়, ট্রমা থেকে মুক্তি অর্জনের মতো এক পরিভ্রমণ। পাঠকের কথা মাথায় রেখে প্রবন্ধ, আলোচনা, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ--এইসব লেখা যায়; কিন্তু ফিকশন আর কবিতার ক্ষেত্রে তা পাঠককে অতিক্রম করতে না পারলে আপনি হয়তো সুখপাঠ্য কোনও কিছুর জন্ম দিতে পারেন, কিন্তু ওই পরিভ্রমণের, মুক্তি অর্জনের স্বাদ আপনি তাড়িয়ে তাড়িয়ে নিতে পারবেন না।
৮.এখন কী লিখছেন?
ইমতিয়ার শামীম : দুটো গল্প লিখতে লিখতেও শেষ হয়নি। সেগুলো মাঝেমধ্যে পড়ি আর কাটাকুটি করি। একটা উপন্যাসের অবস্থাও তাই। এ ছাড়া গত বছর ঈদসংখ্যায় একটা উপন্যাস ছাপা হয়েছিল। সেটি নেড়েচেড়ে দেখছি।
৯. আগামীতে কী লিখবেন?
ইমতিয়ার শামীম : বেশি কিছু লেখার পরিকল্পনা নেই, এটুকু বলতে পারি। এত ভালো কিছু পড়ার আছে, এত কিছু দেখার আছে আর আড্ডা দেয়ার মতো এত প্রিয় মানুষ আছে যে, এসব মিথস্ক্রিয়ায় জড়িয়ে থাকা বরং অনেক ভালো। তবে শৈশব খুব প্রিয় আমার, তা ছাড়া বিস্মৃতিতে আক্রান্ত হওয়ার ভয় আমাকে প্রায়ই তাড়িয়ে বেড়ায়--তাই শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিগুলো নিজের প্রয়োজনেই আমি লিখে নিতে চাই--যাতে পরে মনে না-আসার যন্ত্রণায় আক্রান্ত না হতে হয়। আর, নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের অঞ্চলে ইংরেজ শাসনামলে একটি ঐতিহাসিক কৃষকবিদ্রোহ হয়েছিল। ওই সময়ের মানুষ নিয়ে, জীবন নিয়ে অনেক আগে থেকেই বড় আকারের একটি উপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে আমার। সেটি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। লিখতে চাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও। তবে লেখা তো একটা জার্নি-- আমার মনে হয়, তার স্বাদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করাই ভালো। উপসংহারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা না থাকাই ভালো। এমনও হতে পারে, এসব আমার কোনওদিনই লেখা হবে না!
0 মন্তব্যসমূহ