বীরেন মুখার্জী
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জন্ম: ৪ মার্চ ১৯৬৯ দরিশলই, শালিখা, মাগুরা। প্রকাশিত বই: কবিতা প্রণয়ের চিহ্নপর্ব (২০০৯) প্লানচেট ভোর কিংবা মাতাল বাতাস (২০১০) নৈঃশব্দ্যের ঘ্রাণ (২০১২) পালকের ঐশ্বর্য (২০১৩) জলের কারুকাজ (২০১৩)। প্রবন্ধ কবির অন্তর্লোক ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২) কবিতার গহনকথা (প্রকাশিতব্য)। গল্পগ্রন্থ মস্তকহীন ঘোরসওয়ার (প্রকাশিতব্য)
সম্পাদনা দৃষ্টি (ছোটকাগজ)। পেশায় সাংবাদিক।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
উত্তর: প্রতিনিয়ত যা ভাবছি তা সব সময় কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ অসম্ভব মনে হচ্ছিল, যে কারণে গল্পের আশ্রয় নিয়েছি। সম্ভবত এটা ভেবেই যে, গল্পের মাধ্যমে সহজে ম্যাসেজটা পৌঁছে দেয়া যাবে। কিংবা অন্য কোনও কারণ, যা ঠিক আমারও জানা নেই...
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
উত্তর: কলেবরের ক্ষেত্রে বেশ ছোট। ভাষার আড়ষ্ঠতাও অস্বীকার করছি না। এটা আমার উপলব্ধি। ‘মস্তকহীন ঘোড়সওয়ার’ আমার প্রথম গল্প, দ্বিতীয় গল্প ‘স্বীকারোক্তি’-- গল্প দুটি ১৯৯৭ সালে তৎকালীন ‘আজকের কাগজ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প দুটি পড়ে পাঠক-আলোচক মন্তব্য করলে আমি নিজেও বুঝতে পারব।
৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
উত্তর: প্রস্তুতি বলতে মূলত গল্পপাঠের ওপর জোর দিয়েছি। বিদেশি গল্পের অনুবাদসহ ও বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গল্পগুলো খুঁজে খুঁজে বার বার পড়ার চেষ্টা করি। বিশিষ্ট গল্পকারদের গল্পভাষা বা গল্প বলার কৌশল বোঝার চেষ্টা করেছি।
৪. আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
উত্তর: ছোটগল্প সাহিত্যের একটি অতি মূল্যবান অংশ। ছোটগল্প শুরু থেকে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পথ পেরিয়ে একটা অবস্থানে এসেছে। কোনো ফর্মূলায় ফেলে ছোটগল্পের জ্যামিতি খোঁজা যায় কিনা আমার জানা নেই। আমি অতিসাধারণ মানুষের জীবন ঘেঁটে গল্প তুলে আনতে চেষ্টা করি। চরিত্রকে এমন একটা অবস্থানে দাঁড় করাতে চেষ্টা করি যাতে পাঠক মোহাবিষ্ট হয়।
৫. আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
উত্তর: আমি আসলে জনপ্রিয় গল্পলেখক হতে চাই নি। তাই সৃষ্টি প্রাচূর্যের চেয়ে গল্পের মানের ওপর জোর দেই। কবিতা চর্চার মধ্য থেকেই গল্প লেখা শুরু তাই গল্পের বাক্যবিন্যাসে কবিতার ছোঁয়া স্বভাবজাত বলা যায়। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন কিংবা বিচার তো পাঠক-আলোচকের কাছে, তাই না?
৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন?
উত্তর: ‘আদর্শ’-কে সংজ্ঞায়িত করতে চাই না। আমার যেমন রবীন্দ্রনাথ প্রিয় তেমনি প্রিয় বঙ্কিম চন্দ্র। রবীন্দ্রনাথের কাছে যে আশ্রয় পাই তা আবার বঙ্কিমে পাই না। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলকুমার মজুমদার, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, শওকত ওসমান, আবু ইসহাক, শওকত হোসেন, হাসান আজিজুল হক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হরিপদ দত্ত, আলাউদ্দিন আল আজাদ, মঈনুল আহসান সাবের, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, শহিদুল জহির, সালাম সালেহ উদ্দিন, আহমাদ মোস্তফা কামাল, রাজীব নূর, আনিসুল ইসলাম, শাহাদুজ্জামান রয়েছেন আমার পাঠের তালিকায়। এদের কারো সমাজ অণ্বেষা, কারো বা মানবমনস্তত্ত্ব নিয়ে বোঝাপড়া কিংবা প্রেম, দাম্পত্যসহ যাপনের খুঁটিনাটি আমার ভালো লাগছে। আবার মুক্তিযুদ্ধ কিংবা দেশভাগের ফলে সৃষ্ট জটিলতা আমাকে টানছে। আসলে পড়তে পড়তে একটা মিশ্রবোধের মধ্য দিয়ে আমার গল্প বেড়ে উঠছে। কাব্যিকধর্মী গল্পগুলোই আমাকে বেশি টানে।
৭. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
উত্তর: পাঠকের জন্য তো বটেই, আবার আত্মপ্রশান্তির জন্যও লিখি। তবে লেখার সময় ঠিক পাঠকের কথা মাথায় থাকে না। আমি গুরুত্ব দিই বাস্তবতা ও কল্পনার সংমিশ্রণে গল্পটা ঠিক গল্প হয়ে উঠছে কিনা তার ওপর। সমাজ-রাষ্ট্রের নানা অসঙ্গতি, টানাপড়েন, নানা শ্রেণির মানুষের জীবনযাপন, দারিদ্র্য, হ্যালুসিনেশন, দাম্পত্য সঙ্কট, মানব মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমি যেটা ভাবছি সেটা কী অন্য সবাই ভাবছে-- নিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় লিখতে গিয়ে। আবার গল্পভাষার বিষয়টিও চিন্তায় এসে যায়। আমি যেটা বলতে চাই সেটা বলতে পারছি কিনা সে বিষয়টাও কাজ করে।
৮. এখন কি লিখছেন?
উত্তর: এখন কবিতা লিখছি। সম্প্রতি একটি বড়গল্পের প্রথম ধাপ লিখেছি। হরিজন-ডোম সম্প্রদায়ের জীবন-যাপন নিয়ে ইতিহাসনির্ভর একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলাম তিন বছর আগে। এ পর্যন্ত উপন্যাসের ৬০ শতাংশ লেখা হয়েছে। এটি লিখতে আরও ২/৩ বছর সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে এটি নিয়েও বসছি।
৯. আগামী কি লিখবেন?
উত্তর: মূলত কবিতা লিখতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। গল্প আমার দ্বিতীয় পছন্দের। শিশুতোষ গল্প-কবিতা ও রাজনৈতিক ছড়া লেখার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। রাজনৈতিক কলাম, মৌলিক ও মননশীল প্রবন্ধ লিখছি মাঝে মাঝে। তবে সময়ের খুব অভাব। জীবিকার কারণেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি বরাররই সন্দিহান।

বীরেন মুখার্জীর গল্প পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে>>
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
জন্ম: ৪ মার্চ ১৯৬৯ দরিশলই, শালিখা, মাগুরা। প্রকাশিত বই: কবিতা প্রণয়ের চিহ্নপর্ব (২০০৯) প্লানচেট ভোর কিংবা মাতাল বাতাস (২০১০) নৈঃশব্দ্যের ঘ্রাণ (২০১২) পালকের ঐশ্বর্য (২০১৩) জলের কারুকাজ (২০১৩)। প্রবন্ধ কবির অন্তর্লোক ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০১২) কবিতার গহনকথা (প্রকাশিতব্য)। গল্পগ্রন্থ মস্তকহীন ঘোরসওয়ার (প্রকাশিতব্য)
সম্পাদনা দৃষ্টি (ছোটকাগজ)। পেশায় সাংবাদিক।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?
উত্তর: প্রতিনিয়ত যা ভাবছি তা সব সময় কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ অসম্ভব মনে হচ্ছিল, যে কারণে গল্পের আশ্রয় নিয়েছি। সম্ভবত এটা ভেবেই যে, গল্পের মাধ্যমে সহজে ম্যাসেজটা পৌঁছে দেয়া যাবে। কিংবা অন্য কোনও কারণ, যা ঠিক আমারও জানা নেই...
২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?
উত্তর: কলেবরের ক্ষেত্রে বেশ ছোট। ভাষার আড়ষ্ঠতাও অস্বীকার করছি না। এটা আমার উপলব্ধি। ‘মস্তকহীন ঘোড়সওয়ার’ আমার প্রথম গল্প, দ্বিতীয় গল্প ‘স্বীকারোক্তি’-- গল্প দুটি ১৯৯৭ সালে তৎকালীন ‘আজকের কাগজ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। গল্প দুটি পড়ে পাঠক-আলোচক মন্তব্য করলে আমি নিজেও বুঝতে পারব।
৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?
উত্তর: প্রস্তুতি বলতে মূলত গল্পপাঠের ওপর জোর দিয়েছি। বিদেশি গল্পের অনুবাদসহ ও বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গল্পগুলো খুঁজে খুঁজে বার বার পড়ার চেষ্টা করি। বিশিষ্ট গল্পকারদের গল্পভাষা বা গল্প বলার কৌশল বোঝার চেষ্টা করেছি।
৪. আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?
উত্তর: ছোটগল্প সাহিত্যের একটি অতি মূল্যবান অংশ। ছোটগল্প শুরু থেকে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পথ পেরিয়ে একটা অবস্থানে এসেছে। কোনো ফর্মূলায় ফেলে ছোটগল্পের জ্যামিতি খোঁজা যায় কিনা আমার জানা নেই। আমি অতিসাধারণ মানুষের জীবন ঘেঁটে গল্প তুলে আনতে চেষ্টা করি। চরিত্রকে এমন একটা অবস্থানে দাঁড় করাতে চেষ্টা করি যাতে পাঠক মোহাবিষ্ট হয়।
৫. আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?
উত্তর: আমি আসলে জনপ্রিয় গল্পলেখক হতে চাই নি। তাই সৃষ্টি প্রাচূর্যের চেয়ে গল্পের মানের ওপর জোর দেই। কবিতা চর্চার মধ্য থেকেই গল্প লেখা শুরু তাই গল্পের বাক্যবিন্যাসে কবিতার ছোঁয়া স্বভাবজাত বলা যায়। তবে চূড়ান্ত মূল্যায়ন কিংবা বিচার তো পাঠক-আলোচকের কাছে, তাই না?
৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন?
উত্তর: ‘আদর্শ’-কে সংজ্ঞায়িত করতে চাই না। আমার যেমন রবীন্দ্রনাথ প্রিয় তেমনি প্রিয় বঙ্কিম চন্দ্র। রবীন্দ্রনাথের কাছে যে আশ্রয় পাই তা আবার বঙ্কিমে পাই না। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, কমলকুমার মজুমদার, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, অদ্বৈত মল্লবর্মণ, শওকত ওসমান, আবু ইসহাক, শওকত হোসেন, হাসান আজিজুল হক, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হরিপদ দত্ত, আলাউদ্দিন আল আজাদ, মঈনুল আহসান সাবের, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, শহিদুল জহির, সালাম সালেহ উদ্দিন, আহমাদ মোস্তফা কামাল, রাজীব নূর, আনিসুল ইসলাম, শাহাদুজ্জামান রয়েছেন আমার পাঠের তালিকায়। এদের কারো সমাজ অণ্বেষা, কারো বা মানবমনস্তত্ত্ব নিয়ে বোঝাপড়া কিংবা প্রেম, দাম্পত্যসহ যাপনের খুঁটিনাটি আমার ভালো লাগছে। আবার মুক্তিযুদ্ধ কিংবা দেশভাগের ফলে সৃষ্ট জটিলতা আমাকে টানছে। আসলে পড়তে পড়তে একটা মিশ্রবোধের মধ্য দিয়ে আমার গল্প বেড়ে উঠছে। কাব্যিকধর্মী গল্পগুলোই আমাকে বেশি টানে।
৭. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?
উত্তর: পাঠকের জন্য তো বটেই, আবার আত্মপ্রশান্তির জন্যও লিখি। তবে লেখার সময় ঠিক পাঠকের কথা মাথায় থাকে না। আমি গুরুত্ব দিই বাস্তবতা ও কল্পনার সংমিশ্রণে গল্পটা ঠিক গল্প হয়ে উঠছে কিনা তার ওপর। সমাজ-রাষ্ট্রের নানা অসঙ্গতি, টানাপড়েন, নানা শ্রেণির মানুষের জীবনযাপন, দারিদ্র্য, হ্যালুসিনেশন, দাম্পত্য সঙ্কট, মানব মনস্তত্ত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমি যেটা ভাবছি সেটা কী অন্য সবাই ভাবছে-- নিজের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় লিখতে গিয়ে। আবার গল্পভাষার বিষয়টিও চিন্তায় এসে যায়। আমি যেটা বলতে চাই সেটা বলতে পারছি কিনা সে বিষয়টাও কাজ করে।
৮. এখন কি লিখছেন?
উত্তর: এখন কবিতা লিখছি। সম্প্রতি একটি বড়গল্পের প্রথম ধাপ লিখেছি। হরিজন-ডোম সম্প্রদায়ের জীবন-যাপন নিয়ে ইতিহাসনির্ভর একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলাম তিন বছর আগে। এ পর্যন্ত উপন্যাসের ৬০ শতাংশ লেখা হয়েছে। এটি লিখতে আরও ২/৩ বছর সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে। মাঝে মধ্যে এটি নিয়েও বসছি।
৯. আগামী কি লিখবেন?
উত্তর: মূলত কবিতা লিখতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করি। গল্প আমার দ্বিতীয় পছন্দের। শিশুতোষ গল্প-কবিতা ও রাজনৈতিক ছড়া লেখার প্রতি ঝোঁক রয়েছে। রাজনৈতিক কলাম, মৌলিক ও মননশীল প্রবন্ধ লিখছি মাঝে মাঝে। তবে সময়ের খুব অভাব। জীবিকার কারণেই বেশিরভাগ সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি বরাররই সন্দিহান।

বীরেন মুখার্জীর গল্প পড়ুন এই লিঙ্কে ক্লিক করে>>
1 মন্তব্যসমূহ
ভালো লাগলো সাক্ষাৎকার পড়ে...
উত্তরমুছুন