চেষ্টা নিই এমন ভাবে কিছু না বলতে যার ইঙ্গিত আমি ছাড়া অন্য কেউ বোঝে না

সপ্তর্ষি বিশ্বাস
১. গল্প লিখতে শুরু করলেন কেন?

জানি না। যেভাবে কোনো আপাতঃ কারন ছাড়াই কবিতা লিখতে আরম্ভ করেছিলাম – সে ভাবেই গল্প লিখতেও আরম্ভ করি।

২. শুরুর লেখাগুলো কেমন ছিল?

প্রথম বলতে? এখনো অব্দি সব মিলিয়ে বারোটা গল্পও লিখিনি। কাজেই ...

৩. গল্প লেখার জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছেন? নিলে সেগুলো কেমন?

প্রস্তুতি? প্রচুর গল্প পড়াকে যদি প্রস্তুতি বলা যায় তবে তা’ই আমার প্রস্তুতি। তবে সেই পড়া পড়ার টানে। গল্প লিখব বা লিখতে শিখব সেরকম কিছু ভেবে নয়। পরে, যখন লিখতে বসলাম, তখন সেই পাঠ নিশ্চয়ই আমাকে প্রভাবিত করেছে।

৪. আপনার গল্পলেখার কৌশল বা ক্রাফট কি?

সচেতন ভাবে কোনো ক্রাফ্‌ট বা কৌশল অবলম্বন করিনি এখনো। নিজেকে যে প্রশ্নটা করি তা হলো ‘তোমার গল্পটা পাঠক পড়বে কেন?’ উত্তরে গল্পটাকে এমনভাবে পাঠকের সামনে মেলে ধরতে চেষ্টা করি যাতে পাঠক পড়ে যাওয়ার উৎসাহ পান। যেমন মার্কেজের ‘ক্রনিকল্‌ অফ্‌ এ ডেথ্‌ ফোর্‌টোল্ড্‌’ শুরু হয় এইভাবে যে ‘অমুক যেদিন তমুকের হাতে খুন হয়েছিল সেদিন ...’ – যদিও কে খুন হয়েছে আর কে খুনী দুই’ই বলে দিলেন লেখক, প্রথম পংক্তিতেই, তবু পাঠক জানতে চায় কেন খুন। তাই পড়ে নিতে বাধ্য হয় গল্পটি। - আমি চেষ্টা নিই প্রথম আট দশ লাইনের মধ্যেই পাঠককে, ঐভাবে, সন্ধানী করে তুলতে।

৫. আপনার নিজের গল্প বিষয়ে আপনার নিজের বিবেচনা কি কি?

প্রশ্নটা বুঝতে পারলাম না।

৬. আপনার আদর্শ গল্পকার কে কে? কেনো তাঁদেরকে আদর্শ মনে করেন? 

তেমন ভাবে কোনো আদর্শ গল্পকার কি কেউ আছেন আমার? অনেকের অনেক গল্প ভালো লাগে। কিন্তু তাঁরা কি আমার আদর্শ? জানি না। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছের অধিকাংশ গল্পই আমার প্রিয়। বিভূতিভূষণের প্রতিটি গল্প আমার প্রিয়। সত্যজিৎ রায়ের প্রতিটি ছোটো গল্প যে কতবার পড়েছি, আজো পড়ি তার ইয়াত্তা নেই। ঠিক যেমন জয়েসের ‘ডাব্‌লিনার্স’। কমলকুমারের অনেক গল্পই আমার পছন্দের। মার্কেজের গল্পও আমার প্রিয়। অস্কার ওয়াইল্ড্‌ ভালো লাগে। ভালো লাগে বাল্‌জাক্‌, সমারসেট্‌ মম্‌। রয়াল ডাল্‌’ও আমার খুব প্রিয়। ভালো লাগে রাস্‌কিন্‌ বন্ড। জীবনানন্দ দাশের গল্প ভালো লাগে। ইয়েট্‌সের গল্পেরো আমি ভক্ত। - কিন্তু সচেতন ভাবে তাঁদের কেউ আমার আদর্শ নন। তবে তাঁদের প্রভাব আমার লেখায় আছে নিশ্চয়ই। কিভাবে আছে, কতোটা আছে তার খুঁজে দেখার, বুঝে দেখার দায় পাঠকের।

৭. কার জন্য গল্প লেখেন? আপনি কি পাঠকের কথা মাথায় রেখে লেখেন? লিখলে কেনো লেখেন? আর যদি পাঠকের কথা মনে না রেখে লেখেন তাহলে কেনো পাঠককে মনে রাখেন না লেখার সময়ে?

লেখার প্রেরণা যে কোত্থেকে আসে কে জানে। লিখতে আরম্ভ করি নিজের ভালোলাগাবশতঃ। ক্রমে পাঠকের কথা মনে আসে বৈ’কি। চেষ্টা নিই এমন ভাবে কিছু না বলতে যার ইঙ্গিত আমি ছাড়া অন্য কেউ বোঝে না। হ্যাঁ, ঠিক আমার মতো করেই যে পাঠককে সব কিছু টের পেতে হবে তেমন নয়। তবে পাঠককে তাঁর নিজের মতন করে টের পাওয়ার চাবি না দিতে পারাটা, আমার মতে, লেখকের ব্যর্থতা।

৮. এখন কি লিখছেন?

একটা উপন্যাস। আমার দ্বিতীয় উপন্যাস। আর কবিতা। কবিতা’ই মূলতঃ আমার নিজস্ব মাধ্যম বলে টের পাই।

৯. আগামীতে কি লিখবেন?

জানি না। কবিতা লিখব জানি কেননা ওটা আমার নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার মতোই জরুরী একটি প্রক্রিয়া।




লেখক পরিচিতি
সপ্তর্ষি বিশ্বাস
জন্ম ১৯৭২ সালে, আসামের শিলচর শহরে। পড়াশোনা করিমগঞ্জ-শিলচর মিলিয়ে। বাড়ি করিমগঞ্জ। কর্মসূত্রে এক দশকের থেকে বেশী বেঙ্গালোরে “প্রবাসী”। এতাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থ “পাপের তটিনী ধরে”(অনলাইন পড়ার ঠিকানাঃ http://paper-tatini-dhare.blogspot.com ) এবং ‘যুগল বন্দী’ (দশপদী সংকলন, যুগ্মভাবে শ্রী অনির্বান ধরিত্রীপুত্রের সঙ্গে, অনলাইন পড়ার ঠিকানাঃ http://kobiadoshpodi.blogspot.com) । সদ্য প্রকাশিত “গৃহপথগাথা”। 
গদ্যের ই-বুকঃ “হুমায়ুন ফরিদি ও অন্যান্য বিষাদগাথা” - http://www.boierdokan.com/uploads/9/2/4/3/9243378/humayunfaridi.pdf (http://www.boierdokan.com) দ্বারা প্রচারিত। ব্লগঃ http://amarsonarbanglaamitomaybhalobasi.blogspot.com ইমেইলঃ saptarshi.literature@gmail.com 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ