কার্তিক ঘোষ
আমি সমালোচক নই, পাঠক মাত্র । বই পড়তে ভালোবাসি। আর পড়ে ভালো লাগলে, যা মনে আসে লিখি। না লাগলে সরাসরি বলি, ভালো লাগেনি। এতে কোনো কোনো লেখক ক্ষুণ্ণ হোন।
সুতরাং আমার লেখা কখনোই সমালোচনা সাহিত্য নয়। Book- Review তো নয়ই। ওটা পাঠক সাহিত্য বা পাঠক-বচন বললেও অত্যুক্তি হবে না।
সম্প্রতি পাপিয়া ভট্রাচার্যের “ললিতা ঘাট” গল্প- গ্রন্ধটি নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে পুরোটা পড়ে ফেলি একসময়। মোট আঠারোটি গল্প। দু-তিনটি গল্প বাদ দিয়ে অন্য গল্পগুলি প্রত্যেকটি স্বত্যন্দ্র গুনে উদ্ভাসিত।
প্রধম গল্প “অবগাহন”। লেখিকা মূল জায়গায় আঘাত করেছেন। আগে হারমোনিয়াম ও তবলার সঙ্গতে গান গাইত গায়ক/গায়িকারা। তাঁদের সুরের মাধুয্যে মাতোয়ারা হতেন শ্রোতারা। আর এখন? 20/25 বা 50 জন হ্যাণ্ডস নিয়ে গান করেন। গান নয়, বাজনাটাই মুখ্য এখন। গৌণ হয়ে যাচ্ছে গান আর গানের সুর।
বাউল সংগীত তো আবার একক সংগীত। একটা একতারা-ই হচ্ছে এ-গানের উপযুক্ত সঙ্গতধারী। কিস্তু চাটুকারিতায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, বাউল সংগীত।
এই সংগীত ধাকে রক্তে, বংশ পরস্পরা। গুরু ধরে শিক্ষা নয়, শুনতে শুনতে শেখা, কান তৈরি হওয়া। তাই ফুলমণিমাসি বলেন, ”গান শিখেছিনু? বাউল গান আবার শেখা লাগে নাকি? ও তো আমাদের রক্তে গো মা। আর তখন অত শেখাশেখির বালাই ছিল না। আমার বাপ গাইত, দশ এগারোতে বিয়ে হলো, শ্বশুর গাইত। ওই গান শুনে শুনে শেখা হয়ে যায় মা। পরস্পরা। আমার তো মনেই পড়ে না, কখনও গান গাইতে পারতুম না বলে।”
লেখিকা খুব সুনিপণভাবে পাশাপাশি রেখেছেন দু-ই জীবনবৃত্ত------ ফুলমণিমাসি, জাত বাউলে আর একজন জাত বাউলের পরস্পরা ব্যবসায়ী বাউল গায়ক।
ফুলমণিমসি শুদ্ধাচারে, সংযত জীবন-যাপনে দারিদ্রকে সাথী করে বাউল সংগীতের আসল ঘরানা টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট, ফলে অর্ধনৈতিকভাবে দুর্বল। আজো তাঁকে একতারাতে সুর তুলতে হয়,”দু-পালি চাল, একটা পটল।” ফুলমণিমাসি সময়ের সাধে তাল রেখে আধুনিকা হোননি। যদিও, প্যারিস, মার্কিন মূলক ঘুরে এসেছেন। গানকে শুধুই ভালোবেসেছে, গানকে বাণিজ্যে পরিণত করেননি। অর্ধনৈতিক বিষয়টা তাঁর মাধায় আসেনি কখনো।আর অন্যদিকে, জাত বাউলের বংশ পরস্পরা নাতির নাম, গোগোল। আধুনিকতার ঘেরাটোপে বাউল গানের সাথে চড়া হিন্দী গানেও তার চর্চা। আর গোগোলের বাবা-”কালো জিনস্ আর নীল গেঞ্জি পরা এক ভদ্রলোক, দেখে বাউল গায়ক বলে মনেই হয় না।” আবার বাবার প্রসঙ্গে গোগোল বলে-” বাবা যখন সেজে-গুজে আসরে নামে, তুমি চিনতে পারবে না আণ্টি, গেরূয়া পোষাক পড়ে, লম্বা চুল রেখেছে, দেখছ না।” অথাৎ ভেকধারী বাউল গায়ক।
তাই লেখিকা আপশোষ করেন-” সংগীত মোড়কে ব্যবসা, নাকি ব্যবসা মোড়কে সংগীত।” তাঁর আশাংখা -” শুদ্ধ গানের আসরটাই কমে গেছে, হয়তো মুছেই যাবে একদিন।”
এখনো যে শুদ্ধ গানের চর্চা মুছে যায়নি তার কারণ, ফুলমণিমাসিরা। দারিদ্রের সাথে লড়াই করে ক্ষুদ্র সামার্থ নিয়ে স্বল্প পরিসরে আসর জমিয়ে রেখেছে এখনও।
বাউল সংগীত শুধুমাত্র কানে শোনা নয়, অনুভবের গান। গায়ক ও শ্রোতার--------- উভয়ই। গানের ভিতর দিয়েই চলে ভাবের আদান -প্রদান। গানের সঠিক ভাবটা বুঝতে পারলেই অপার আনন্দ। তা ভাষা যা হোক না কেন। স্বত:স্ফুততা হলো এ গানের মূল বৈশিষ্ট্য। তাই ভিন্ন ভাষাভাষি মানুষরা গানের তালে তালে নাচে।
বাউল গানের এই অবক্ষয়ের দৃশ্যপট লেখিকা তুলে ধরেছেন আমাদের চোখের সামনে। অনবদ্য তাঁর দেখার দৃষ্টিভঙ্গী। তবে কযয়কটি জায়গায় হোঁচট খেতে হয়েছে মুদ্রণ বিভ্রাটে।
পাপিয়া ভট্রাচার্যের “ললিতা ঘাট” গল্প গ্রন্থের 2য় গল্প ”টান”।
কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গা দিয়ে গল্পটা শুরু। যা নিয়ে দিপালী-মার ভয়। স্বার্থপর জগতে দুই ছেলের লোভাতুর চিত্রপট অঙ্কন করেছেন লেখিকা সা্বলীয় মুন্সীয়ানায়।
গল্পের নায়িকা দিপালী একজন মা। স্বামী, ছেলেদের অন্যায় অত্যাচারে নিপীড়িত। এবং কি শারিরীক অত্যাচারের প্রতিবাদে নিশ্চুপ।
ছোটবাবু-কাকিমার কল্যাণে ও প্রশ্রয়ে দিপলিীর সংসার প্রতিপালিত হয়েছে একসময়। কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন নেই। ছেলেরা বড়ো হয়েছে, আয় বেড়েছে সংসারে। এখন দিপালীর অন্যবাড়িতে কাজ করতে যাওয়াটা ছেলেদের আত্মসন্মানে লাগে।সামাজিক ভাবে তারা ষ্লাঘা বোধ করে। ছোটবাবুকে জড়িয়ে মাকে নোংরা কধা বলতেও কসুর করেনি ছেলেরা। তবুও আটকারো যায়নি দিপালীকে ওই বাড়ি যেতে। ছোটবাবু-কাকিমা প্রতি ভালবাসা,টান ও কৃতঙ্গতা তাঁকে আকুল করেছে। তাই ছোটবাবু-কাকিমার আশ্রয়টাই বেছে নেয় দিপালী।
চাকর- মনিব এর এই মধুর সম্পর্কের কথা বাংলা গল্প উপন্যাসে প্রচুর রয়েছে এবং বাস্তবে তা ছিল। কিন্তু বর্তমানে? এখন give & take policy. বাংলার এই সামাজিক বন্ধন এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।একজন বাড়িতে আজীবন কাজ করছে কোন লোক -এ যেন কল্পনার অতীত।
গল্পটা অর্ধ প্রস্ফুটিত গোলাপ যেন। সৌরভটা পুরোপুরি বাতাসে ভাসেনি। লেখিকা যেন কৃপণতার বশে বন্দী।
পুরাতন পন্থীর সাথে আধুনিকতার মেল-বন্ধন নিয়েই ‘আন্তরালে’ গল্পটা। উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতে পারে-- এটা যেন সুমনার কাছে অকল্পনীয়। নিজের জীবনের ছোট্র একটা ঘটনা থেকে সেই শিক্ষাই তিনি পেয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনিও আধুনিক ভাবধারায় জারিত। তাই নিজের মেয়ের চিন্তা ভাবনাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে মুনিয়া সুখী হয়নি। উচ্চাশা পিছনে ছুটছে রাজিব, মুনিয়াকে সময় দেওয়ার মতো সময় তার নেই। একাকিত্ব অবসাদে ভুগছে মুনিয়া। তাই আজ মুনিয়া উপলব্ধি “শৈবালকে ফেরানো আমার উচিত হয়নি।” শৈবালকে তিনিও চেয়েছিলেন জামাই হিসাবে। আবার দিয়া যখন বলল,”প্রেম? কার সঙ্গে করবো? চারদিকে সব নাবালক ছেলে-পিলে। প্রেমের সঙ্গে বিয়ের একটা মোটামুটি সম্পর্ক আছে। আর বিয়েটা আমার কাছে খুব সিরিয়াস ব্যাপার। নির্ভর করতে পারবো এমন কারোর সঙ্গে সেটা হওয়া উচিত।” সুমনা তখনও আবাক হোননি। লেখিকা স্পষ্ট দেখিয়েছেন, আবেগ আর ভালোবাসা মিশেল দিয়ে সংসার করা যায় না।সংসারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের আগমণটা বেশী বাস্তব। বাস্তব আর ভালোবাসা--- এই দু’য়ের যোগফল হলো সংসারে শান্তি। এখানেই মুনিয়ার সঙ্গে দিয়ার দ্বন্ধ। মুনিয়া সেই বাস্তব বোধের পরিচয় দিয়েই আজ একাকিত্ব অবসাদে বন্দী। দিয়া সেই পথের পথিক।
এই দুই দ্বন্ধের লেখিকা কোন দিগনির্দেশ করেননি। তবে লেখিকা গল্প বলার ঢংটি বড়ো সুন্দর। সংসার নামক যন্ত্রে বিবাহিত মেয়েদের অন্য গুণাবলীর যে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় --- তা স্পষ্ট ভাবে বলেছেন।
গল্পটা বেশ তরতরিয়ে এগোছিল। হঠাৎ যেন ছন্দ পতন।
সুমনার আত্মবিক্ষণের পরেই, “ হ্যাঁ, যে কথা বলব ভাবছিলাম,....................... তার মাঝে হঠৎ আপনি লিখতে শুরু করলেন, অসুবিধা হত না।”
এই কথার কোনো ধারাবাহিকতার খুঁজে পেলাম না। কথাটা কে বলল, দিয়া না চন্দন? অনুচ্চারিত।
আবার সুমনা এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই নিজের সাংসারিক চিন্তায় মগ্ন থেকেছে।
এই জায়গাতেই ছন্দ পতন ঘটেছে----- অন্তত: আমার তাই ধারণা।
আমি আগেই বলেছি, আমি পাঠক। পড়তে গিয়ে এই জায়গাটিতে হোঁচট খেয়েছি বলেই অকপটে সে কথা বললাম।
বাঙালীরা জীবন জগৎ নিয়ে ভাবে, পরকালের রহস্য নিয়েই চিন্তিত। মনন চর্চা বাঙালীর অন্যতম চর্চার বিষয়। তাই জীবন ও জগতের মৌল জিঙ্গাসার সদুত্তর পাবার চেষ্টা করেছেন লেখিকা “বৃষোৎসর্গ”, ”ললিতাঘাট” “শোক”, ”অন্তহীন”, প্রভৃতি গল্পে। আধুনিক ঘেরাটোপে সমাজ ও ধর্মের আচার-আচরণের মধ্যেও স্বার্থনেষী মানুষের জীবন উপভোগের সাধনার প্রতি কটাক্ষ করেছেন। মুখে কুসংস্কার বলা আর নিজেদের অজানা বিপদে ত্রস্ত শেখর ‘বৃষোৎসর্গ’ গল্পে বলতে বাধ্য হয়েছে,”অবশ্য পৃথিবীতে অনেক জিনিষ আছে, বুদ্ধি দিয়ে তার ব্যাখা চলে না।” আবার সেই শেখরই “ কি আশ্চর্য, আমি তো বারণ করছি। রসগোল্লা খাকবেই তো, বেশী করেই তো করা হয়েছে। কাল সকালে জলখাবারে লাগবে।যাও বালতিটা রেখে এসো, বলবে আমি বারণ করেচি।” --------বলেছে। এখানেই সেই চিরকালীন আত্মরতির মাধ্যমে বাঙালী জীবনের আত্মস্বার্থ, যদিও নিজেদের কল্যাণে শেখরদের মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে কুসংস্কারকে। তার এই জীবন তত্ত্বে ফ্লাট কালচার গভীরভাবে প্রস্ফুটিত আধুনিক মোড়কে, যেটা হেমলতা মেনে নিতে পারেননি। আত্মপীড়নে হেমলতা জীবন-রহস্য ও জগৎতত্ত্বের মূলে যে বিষয়টি চিরন্তন, “ দেহতত্ত্ব” তা অনুধাবন করেছেন, কিন্তু নীরব থেকেছেন সারাক্ষণ। শোষণে পেষণে তিনি বিচলিত হোননি, হোননি স্বভাবভ্রষ্ট।
পাপিয়া ভটাচার্য গার্হস্থ্য জীবনের ছবি এঁকেছেন নিপুণ তুলিতে। আন্তজ্যদের নিয়ে গল্প লিখেছেন। “রিখির ভুবন” তার মধ্যে অনবদ্য। রিখির বিপদগ্রস্খ নারীচরিত্রে দৃঢ়তা, নির্মোহ ও নির্লোভ জীবন্ত ও বাঙ্গয়ভাবে ফুটে উঠেছে।
সমাজ ও মানুষ, মানুষ ও সমাজ---- এটাই লেখিকার গল্পের বিষয় বস্তু। ক্ষয়িষু সমাজ, সংস্কৃতি ও আত্ম-নিমগ্ন মানসিকতার বিরোধী তিনি। কৃত্রিম সভ্যতার ধার ধারেন না; ফ্লাট বড়ির নগ্ন সত্যকে প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। সোচ্চার প্রতিবাদের রাস্তায় না হেঁটেও ফ্লাটবাসীদের ফতোয়া ও ফরমানের পরোয়া না করে, হেমলতা(বৃষোৎসর্গ), মনীষা(ললিতা ঘাট), মানসী(তরঙ্গ ওঠে) মতো মায়েরা সমঝোতা ও আপোষের মোকাবিলা করে জীবনের সত্যকে উন্মোচন করেছেন নীরব ও সুদৃঢ় প্রতিবাদে। সোচ্চার প্রতিবাদে বাক-বিতণ্ডা, দোষারোপ যা অহরহ ঘটছে, বাবা-মা সাথে পুত্র-কন্যা, শাশুড়ির সাথে পুত্রবধূর, যা সাংসারিক অশান্তি ডেকে আনছে প্রতিনিয়ত। সেটাই পরিহার করেছেন, প্রতিবাদের ধরণ পাল্টিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর কলম খেকে যে ধূমায়িত স্ফুলিঙ্গ উদগিরণ হয়েছে, তাতে পাঠকদের মনে নিশ্টয়ই শংকা জাগছে আগামী দিনের কল্পনায়, শেখরের উপলব্ধিই তার প্রমাণ।
ঠিক যেমন আত্মোপব্ধি ঘটেছে তৃষ্ণা ‘সন্ধিকাল’ গল্পে। চাকরির জন্য একটা লেবেল পর্যন্ত পড়াশুনা করলেই চলে, তার পরেও পড়াশুনাটা প্রয়োজন গবেষণার কাজে। কিন্তু অজনার গবেষণায় নিয়োজিত হতে চাইছে না মেধাবী ছাত্ররা, কেননা গবেষণা সময়-সাপেক্ষ এবং চাকরির মতো স্টাটাস,লাইফ-স্টাইল ও টাকা পয়সা তেমন কিছু নেই। তাই জিষ্ণু চাকরি পাওয়াটা জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে করেছে। চাকরির জন্য পড়াশুনা ---এই মনোভাবটাই মেধাবী সহ সব পড়ুয়াদের মধ্যে জারিত। চাকরির জন্য জিষ্ণু একটা পর একটা হার্ডল পার হয়েছে দূরন্ত গতিতে। চাপ নিতে নিতে এগুতে হবে, খামলেই পদস্খলন। চাকরিতে যা আয়, যে লাইফ স্টাইল, সেই মোহ ছেড়ে অজানা গবেষণায় সামিল হতে ভয় পাচ্ছে মেধাবী ছাত্ররা। ফলে নতুন কিছু পাওয়া থেকে বঞ্জিত হচ্ছে সমাজ,দেশ ও ব্যাক্তি নিজেও।
প্রশ্নটা লেখিকা করলেন, কিন্তু সমাধানের কোনো রাস্তার সন্ধান দিলেন না।
প্রতিদিনের অসংগতির ও ক্ষতিকারক দিকগুলির বিরূদ্ধে পাপিযা ভটাচার্য কলম ধরেছেন। যেমন,‘সন্ধিকাল’ গল্পে, চাকরির মোহে মেধাবী ছাত্রদের হারিয়ে যাওয়া, ‘উজির’ গল্পে শিশু শ্রমিক ও গ্রামীন অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, ‘র্দুঘটনার পরে’ বিমল, অনিলবাবুর সাথে জীতেন ও জীতেনের বৌয়ের মানবিক বৈষম্যের অনুভূতি প্রভৃতি গল্পে। অসাম্য ও বিশৃঙ্খলাকে জনসমাজে উন্মোচিত করেছেন সুনিপুণভাবে। মানুষের অপমান, সামাজিক বৈষম্য ও অবিচার, নারীর প্রতি বীভৎস ও নির্মম ব্যবহার ‘রিখির ভুবন’ ‘অন্তরালে’ ঠিকানা’ ‘টান’ প্রভৃতি গল্পে তুলে ধরেছেন।
গল্পের মধ্যে রোমাণ্টিকতা যেমন প্রশ্রয় দেননি লেখিকা, তেমনি কোনো ভাবাবেগকে প্রশ্রয় দেননি গল্পের পরিবেশনায়। ঠিকানা গল্পে আলো বা অনুর প্রেম একটা নিষ্ঠুর সংযমের ফ্রেমে আটকে রেখেছেন্। এই বাস্তবচিত্রই অভিঙ্ঘতা নিরিখে অসামান্য সংযম ও সহানুভুতির সাথে তিনি গল্পে পেশ করেছেন। বাস্তবতা ও শৈল্পিক সংযমের এক অনবদ্য সৃষ্টি তাঁর গল্পগুলো।
’ছায়াপথ’ ”ফেরা’ ‘সম্পর্ক’ গল্পগুলি এ কথায় বলি, ভালো লাগেনি। একটা দুস্তর ফারাক রয়েছে আগের গল্পগুলির সাখে।
আমি সমালোচক নই, পাঠক মাত্র । বই পড়তে ভালোবাসি। আর পড়ে ভালো লাগলে, যা মনে আসে লিখি। না লাগলে সরাসরি বলি, ভালো লাগেনি। এতে কোনো কোনো লেখক ক্ষুণ্ণ হোন।
সুতরাং আমার লেখা কখনোই সমালোচনা সাহিত্য নয়। Book- Review তো নয়ই। ওটা পাঠক সাহিত্য বা পাঠক-বচন বললেও অত্যুক্তি হবে না।
সম্প্রতি পাপিয়া ভট্রাচার্যের “ললিতা ঘাট” গল্প- গ্রন্ধটি নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে পুরোটা পড়ে ফেলি একসময়। মোট আঠারোটি গল্প। দু-তিনটি গল্প বাদ দিয়ে অন্য গল্পগুলি প্রত্যেকটি স্বত্যন্দ্র গুনে উদ্ভাসিত।
প্রধম গল্প “অবগাহন”। লেখিকা মূল জায়গায় আঘাত করেছেন। আগে হারমোনিয়াম ও তবলার সঙ্গতে গান গাইত গায়ক/গায়িকারা। তাঁদের সুরের মাধুয্যে মাতোয়ারা হতেন শ্রোতারা। আর এখন? 20/25 বা 50 জন হ্যাণ্ডস নিয়ে গান করেন। গান নয়, বাজনাটাই মুখ্য এখন। গৌণ হয়ে যাচ্ছে গান আর গানের সুর।
বাউল সংগীত তো আবার একক সংগীত। একটা একতারা-ই হচ্ছে এ-গানের উপযুক্ত সঙ্গতধারী। কিস্তু চাটুকারিতায় হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ, বাউল সংগীত।
এই সংগীত ধাকে রক্তে, বংশ পরস্পরা। গুরু ধরে শিক্ষা নয়, শুনতে শুনতে শেখা, কান তৈরি হওয়া। তাই ফুলমণিমাসি বলেন, ”গান শিখেছিনু? বাউল গান আবার শেখা লাগে নাকি? ও তো আমাদের রক্তে গো মা। আর তখন অত শেখাশেখির বালাই ছিল না। আমার বাপ গাইত, দশ এগারোতে বিয়ে হলো, শ্বশুর গাইত। ওই গান শুনে শুনে শেখা হয়ে যায় মা। পরস্পরা। আমার তো মনেই পড়ে না, কখনও গান গাইতে পারতুম না বলে।”
লেখিকা খুব সুনিপণভাবে পাশাপাশি রেখেছেন দু-ই জীবনবৃত্ত------ ফুলমণিমাসি, জাত বাউলে আর একজন জাত বাউলের পরস্পরা ব্যবসায়ী বাউল গায়ক।
ফুলমণিমসি শুদ্ধাচারে, সংযত জীবন-যাপনে দারিদ্রকে সাথী করে বাউল সংগীতের আসল ঘরানা টিকিয়ে রাখতে সচেষ্ট, ফলে অর্ধনৈতিকভাবে দুর্বল। আজো তাঁকে একতারাতে সুর তুলতে হয়,”দু-পালি চাল, একটা পটল।” ফুলমণিমাসি সময়ের সাধে তাল রেখে আধুনিকা হোননি। যদিও, প্যারিস, মার্কিন মূলক ঘুরে এসেছেন। গানকে শুধুই ভালোবেসেছে, গানকে বাণিজ্যে পরিণত করেননি। অর্ধনৈতিক বিষয়টা তাঁর মাধায় আসেনি কখনো।আর অন্যদিকে, জাত বাউলের বংশ পরস্পরা নাতির নাম, গোগোল। আধুনিকতার ঘেরাটোপে বাউল গানের সাথে চড়া হিন্দী গানেও তার চর্চা। আর গোগোলের বাবা-”কালো জিনস্ আর নীল গেঞ্জি পরা এক ভদ্রলোক, দেখে বাউল গায়ক বলে মনেই হয় না।” আবার বাবার প্রসঙ্গে গোগোল বলে-” বাবা যখন সেজে-গুজে আসরে নামে, তুমি চিনতে পারবে না আণ্টি, গেরূয়া পোষাক পড়ে, লম্বা চুল রেখেছে, দেখছ না।” অথাৎ ভেকধারী বাউল গায়ক।
তাই লেখিকা আপশোষ করেন-” সংগীত মোড়কে ব্যবসা, নাকি ব্যবসা মোড়কে সংগীত।” তাঁর আশাংখা -” শুদ্ধ গানের আসরটাই কমে গেছে, হয়তো মুছেই যাবে একদিন।”
এখনো যে শুদ্ধ গানের চর্চা মুছে যায়নি তার কারণ, ফুলমণিমাসিরা। দারিদ্রের সাথে লড়াই করে ক্ষুদ্র সামার্থ নিয়ে স্বল্প পরিসরে আসর জমিয়ে রেখেছে এখনও।
বাউল সংগীত শুধুমাত্র কানে শোনা নয়, অনুভবের গান। গায়ক ও শ্রোতার--------- উভয়ই। গানের ভিতর দিয়েই চলে ভাবের আদান -প্রদান। গানের সঠিক ভাবটা বুঝতে পারলেই অপার আনন্দ। তা ভাষা যা হোক না কেন। স্বত:স্ফুততা হলো এ গানের মূল বৈশিষ্ট্য। তাই ভিন্ন ভাষাভাষি মানুষরা গানের তালে তালে নাচে।
বাউল গানের এই অবক্ষয়ের দৃশ্যপট লেখিকা তুলে ধরেছেন আমাদের চোখের সামনে। অনবদ্য তাঁর দেখার দৃষ্টিভঙ্গী। তবে কযয়কটি জায়গায় হোঁচট খেতে হয়েছে মুদ্রণ বিভ্রাটে।
পাপিয়া ভট্রাচার্যের “ললিতা ঘাট” গল্প গ্রন্থের 2য় গল্প ”টান”।
কাঁচের গ্লাস ভাঙ্গা দিয়ে গল্পটা শুরু। যা নিয়ে দিপালী-মার ভয়। স্বার্থপর জগতে দুই ছেলের লোভাতুর চিত্রপট অঙ্কন করেছেন লেখিকা সা্বলীয় মুন্সীয়ানায়।
গল্পের নায়িকা দিপালী একজন মা। স্বামী, ছেলেদের অন্যায় অত্যাচারে নিপীড়িত। এবং কি শারিরীক অত্যাচারের প্রতিবাদে নিশ্চুপ।
ছোটবাবু-কাকিমার কল্যাণে ও প্রশ্রয়ে দিপলিীর সংসার প্রতিপালিত হয়েছে একসময়। কিন্তু এখন আর তার প্রয়োজন নেই। ছেলেরা বড়ো হয়েছে, আয় বেড়েছে সংসারে। এখন দিপালীর অন্যবাড়িতে কাজ করতে যাওয়াটা ছেলেদের আত্মসন্মানে লাগে।সামাজিক ভাবে তারা ষ্লাঘা বোধ করে। ছোটবাবুকে জড়িয়ে মাকে নোংরা কধা বলতেও কসুর করেনি ছেলেরা। তবুও আটকারো যায়নি দিপালীকে ওই বাড়ি যেতে। ছোটবাবু-কাকিমা প্রতি ভালবাসা,টান ও কৃতঙ্গতা তাঁকে আকুল করেছে। তাই ছোটবাবু-কাকিমার আশ্রয়টাই বেছে নেয় দিপালী।
চাকর- মনিব এর এই মধুর সম্পর্কের কথা বাংলা গল্প উপন্যাসে প্রচুর রয়েছে এবং বাস্তবে তা ছিল। কিন্তু বর্তমানে? এখন give & take policy. বাংলার এই সামাজিক বন্ধন এখন প্রায় শেষ হয়ে গেছে।একজন বাড়িতে আজীবন কাজ করছে কোন লোক -এ যেন কল্পনার অতীত।
গল্পটা অর্ধ প্রস্ফুটিত গোলাপ যেন। সৌরভটা পুরোপুরি বাতাসে ভাসেনি। লেখিকা যেন কৃপণতার বশে বন্দী।
পুরাতন পন্থীর সাথে আধুনিকতার মেল-বন্ধন নিয়েই ‘আন্তরালে’ গল্পটা। উঠতি বয়সি ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বন্ধুত্ব হতে পারে-- এটা যেন সুমনার কাছে অকল্পনীয়। নিজের জীবনের ছোট্র একটা ঘটনা থেকে সেই শিক্ষাই তিনি পেয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তিনিও আধুনিক ভাবধারায় জারিত। তাই নিজের মেয়ের চিন্তা ভাবনাকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু মেয়ে মুনিয়া সুখী হয়নি। উচ্চাশা পিছনে ছুটছে রাজিব, মুনিয়াকে সময় দেওয়ার মতো সময় তার নেই। একাকিত্ব অবসাদে ভুগছে মুনিয়া। তাই আজ মুনিয়া উপলব্ধি “শৈবালকে ফেরানো আমার উচিত হয়নি।” শৈবালকে তিনিও চেয়েছিলেন জামাই হিসাবে। আবার দিয়া যখন বলল,”প্রেম? কার সঙ্গে করবো? চারদিকে সব নাবালক ছেলে-পিলে। প্রেমের সঙ্গে বিয়ের একটা মোটামুটি সম্পর্ক আছে। আর বিয়েটা আমার কাছে খুব সিরিয়াস ব্যাপার। নির্ভর করতে পারবো এমন কারোর সঙ্গে সেটা হওয়া উচিত।” সুমনা তখনও আবাক হোননি। লেখিকা স্পষ্ট দেখিয়েছেন, আবেগ আর ভালোবাসা মিশেল দিয়ে সংসার করা যায় না।সংসারে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের আগমণটা বেশী বাস্তব। বাস্তব আর ভালোবাসা--- এই দু’য়ের যোগফল হলো সংসারে শান্তি। এখানেই মুনিয়ার সঙ্গে দিয়ার দ্বন্ধ। মুনিয়া সেই বাস্তব বোধের পরিচয় দিয়েই আজ একাকিত্ব অবসাদে বন্দী। দিয়া সেই পথের পথিক।
এই দুই দ্বন্ধের লেখিকা কোন দিগনির্দেশ করেননি। তবে লেখিকা গল্প বলার ঢংটি বড়ো সুন্দর। সংসার নামক যন্ত্রে বিবাহিত মেয়েদের অন্য গুণাবলীর যে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় --- তা স্পষ্ট ভাবে বলেছেন।
গল্পটা বেশ তরতরিয়ে এগোছিল। হঠাৎ যেন ছন্দ পতন।
সুমনার আত্মবিক্ষণের পরেই, “ হ্যাঁ, যে কথা বলব ভাবছিলাম,....................... তার মাঝে হঠৎ আপনি লিখতে শুরু করলেন, অসুবিধা হত না।”
এই কথার কোনো ধারাবাহিকতার খুঁজে পেলাম না। কথাটা কে বলল, দিয়া না চন্দন? অনুচ্চারিত।
আবার সুমনা এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই নিজের সাংসারিক চিন্তায় মগ্ন থেকেছে।
এই জায়গাতেই ছন্দ পতন ঘটেছে----- অন্তত: আমার তাই ধারণা।
আমি আগেই বলেছি, আমি পাঠক। পড়তে গিয়ে এই জায়গাটিতে হোঁচট খেয়েছি বলেই অকপটে সে কথা বললাম।
বাঙালীরা জীবন জগৎ নিয়ে ভাবে, পরকালের রহস্য নিয়েই চিন্তিত। মনন চর্চা বাঙালীর অন্যতম চর্চার বিষয়। তাই জীবন ও জগতের মৌল জিঙ্গাসার সদুত্তর পাবার চেষ্টা করেছেন লেখিকা “বৃষোৎসর্গ”, ”ললিতাঘাট” “শোক”, ”অন্তহীন”, প্রভৃতি গল্পে। আধুনিক ঘেরাটোপে সমাজ ও ধর্মের আচার-আচরণের মধ্যেও স্বার্থনেষী মানুষের জীবন উপভোগের সাধনার প্রতি কটাক্ষ করেছেন। মুখে কুসংস্কার বলা আর নিজেদের অজানা বিপদে ত্রস্ত শেখর ‘বৃষোৎসর্গ’ গল্পে বলতে বাধ্য হয়েছে,”অবশ্য পৃথিবীতে অনেক জিনিষ আছে, বুদ্ধি দিয়ে তার ব্যাখা চলে না।” আবার সেই শেখরই “ কি আশ্চর্য, আমি তো বারণ করছি। রসগোল্লা খাকবেই তো, বেশী করেই তো করা হয়েছে। কাল সকালে জলখাবারে লাগবে।যাও বালতিটা রেখে এসো, বলবে আমি বারণ করেচি।” --------বলেছে। এখানেই সেই চিরকালীন আত্মরতির মাধ্যমে বাঙালী জীবনের আত্মস্বার্থ, যদিও নিজেদের কল্যাণে শেখরদের মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে কুসংস্কারকে। তার এই জীবন তত্ত্বে ফ্লাট কালচার গভীরভাবে প্রস্ফুটিত আধুনিক মোড়কে, যেটা হেমলতা মেনে নিতে পারেননি। আত্মপীড়নে হেমলতা জীবন-রহস্য ও জগৎতত্ত্বের মূলে যে বিষয়টি চিরন্তন, “ দেহতত্ত্ব” তা অনুধাবন করেছেন, কিন্তু নীরব থেকেছেন সারাক্ষণ। শোষণে পেষণে তিনি বিচলিত হোননি, হোননি স্বভাবভ্রষ্ট।
পাপিয়া ভটাচার্য গার্হস্থ্য জীবনের ছবি এঁকেছেন নিপুণ তুলিতে। আন্তজ্যদের নিয়ে গল্প লিখেছেন। “রিখির ভুবন” তার মধ্যে অনবদ্য। রিখির বিপদগ্রস্খ নারীচরিত্রে দৃঢ়তা, নির্মোহ ও নির্লোভ জীবন্ত ও বাঙ্গয়ভাবে ফুটে উঠেছে।
সমাজ ও মানুষ, মানুষ ও সমাজ---- এটাই লেখিকার গল্পের বিষয় বস্তু। ক্ষয়িষু সমাজ, সংস্কৃতি ও আত্ম-নিমগ্ন মানসিকতার বিরোধী তিনি। কৃত্রিম সভ্যতার ধার ধারেন না; ফ্লাট বড়ির নগ্ন সত্যকে প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। সোচ্চার প্রতিবাদের রাস্তায় না হেঁটেও ফ্লাটবাসীদের ফতোয়া ও ফরমানের পরোয়া না করে, হেমলতা(বৃষোৎসর্গ), মনীষা(ললিতা ঘাট), মানসী(তরঙ্গ ওঠে) মতো মায়েরা সমঝোতা ও আপোষের মোকাবিলা করে জীবনের সত্যকে উন্মোচন করেছেন নীরব ও সুদৃঢ় প্রতিবাদে। সোচ্চার প্রতিবাদে বাক-বিতণ্ডা, দোষারোপ যা অহরহ ঘটছে, বাবা-মা সাথে পুত্র-কন্যা, শাশুড়ির সাথে পুত্রবধূর, যা সাংসারিক অশান্তি ডেকে আনছে প্রতিনিয়ত। সেটাই পরিহার করেছেন, প্রতিবাদের ধরণ পাল্টিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর কলম খেকে যে ধূমায়িত স্ফুলিঙ্গ উদগিরণ হয়েছে, তাতে পাঠকদের মনে নিশ্টয়ই শংকা জাগছে আগামী দিনের কল্পনায়, শেখরের উপলব্ধিই তার প্রমাণ।
ঠিক যেমন আত্মোপব্ধি ঘটেছে তৃষ্ণা ‘সন্ধিকাল’ গল্পে। চাকরির জন্য একটা লেবেল পর্যন্ত পড়াশুনা করলেই চলে, তার পরেও পড়াশুনাটা প্রয়োজন গবেষণার কাজে। কিন্তু অজনার গবেষণায় নিয়োজিত হতে চাইছে না মেধাবী ছাত্ররা, কেননা গবেষণা সময়-সাপেক্ষ এবং চাকরির মতো স্টাটাস,লাইফ-স্টাইল ও টাকা পয়সা তেমন কিছু নেই। তাই জিষ্ণু চাকরি পাওয়াটা জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া মনে করেছে। চাকরির জন্য পড়াশুনা ---এই মনোভাবটাই মেধাবী সহ সব পড়ুয়াদের মধ্যে জারিত। চাকরির জন্য জিষ্ণু একটা পর একটা হার্ডল পার হয়েছে দূরন্ত গতিতে। চাপ নিতে নিতে এগুতে হবে, খামলেই পদস্খলন। চাকরিতে যা আয়, যে লাইফ স্টাইল, সেই মোহ ছেড়ে অজানা গবেষণায় সামিল হতে ভয় পাচ্ছে মেধাবী ছাত্ররা। ফলে নতুন কিছু পাওয়া থেকে বঞ্জিত হচ্ছে সমাজ,দেশ ও ব্যাক্তি নিজেও।
প্রশ্নটা লেখিকা করলেন, কিন্তু সমাধানের কোনো রাস্তার সন্ধান দিলেন না।
প্রতিদিনের অসংগতির ও ক্ষতিকারক দিকগুলির বিরূদ্ধে পাপিযা ভটাচার্য কলম ধরেছেন। যেমন,‘সন্ধিকাল’ গল্পে, চাকরির মোহে মেধাবী ছাত্রদের হারিয়ে যাওয়া, ‘উজির’ গল্পে শিশু শ্রমিক ও গ্রামীন অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, ‘র্দুঘটনার পরে’ বিমল, অনিলবাবুর সাথে জীতেন ও জীতেনের বৌয়ের মানবিক বৈষম্যের অনুভূতি প্রভৃতি গল্পে। অসাম্য ও বিশৃঙ্খলাকে জনসমাজে উন্মোচিত করেছেন সুনিপুণভাবে। মানুষের অপমান, সামাজিক বৈষম্য ও অবিচার, নারীর প্রতি বীভৎস ও নির্মম ব্যবহার ‘রিখির ভুবন’ ‘অন্তরালে’ ঠিকানা’ ‘টান’ প্রভৃতি গল্পে তুলে ধরেছেন।
গল্পের মধ্যে রোমাণ্টিকতা যেমন প্রশ্রয় দেননি লেখিকা, তেমনি কোনো ভাবাবেগকে প্রশ্রয় দেননি গল্পের পরিবেশনায়। ঠিকানা গল্পে আলো বা অনুর প্রেম একটা নিষ্ঠুর সংযমের ফ্রেমে আটকে রেখেছেন্। এই বাস্তবচিত্রই অভিঙ্ঘতা নিরিখে অসামান্য সংযম ও সহানুভুতির সাথে তিনি গল্পে পেশ করেছেন। বাস্তবতা ও শৈল্পিক সংযমের এক অনবদ্য সৃষ্টি তাঁর গল্পগুলো।
’ছায়াপথ’ ”ফেরা’ ‘সম্পর্ক’ গল্পগুলি এ কথায় বলি, ভালো লাগেনি। একটা দুস্তর ফারাক রয়েছে আগের গল্পগুলির সাখে।
0 মন্তব্যসমূহ