সাক্ষাৎকার : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম--'উত্তরাধুনিকতা প্রান্তজনের শিল্পকে তুলে ধরছে'


সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের একজন অন্যতম শক্তিশালী কথাশিল্পী। তিনি বাংলা ছোটগল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তিনি তাঁর গল্পগুলো উত্তরাধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করে থাকেন। তাঁর গল্প বাস্তব ও জাদুবাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়। সমকালে বেশিরভাগ লেখকই ধার করা ভাষায় লিখে অভ্যস্ত, অন্যদিকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ভাষা মেদহীন ও ঝকঝকে যা পাঠককে অনায়াসেই কাছে টেনে নেয়। আবার তাঁর লেখা উপন্যাসগুলো নানা কারণে তাঁর সমকালীনদের চেয়ে ভিন্ন। এ ভিন্নতা তাঁকে বিশিষ্টতা দান করেছে। অপরদিকে তাঁর প্রবন্ধসমূহ পড়লে বোঝা যায়, তিনি বিশ্বসাহিত্যের একজন বোদ্ধা বিশ্লেষক ও পাঠক।
তবে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ প্রভৃতি বিচিত্র শাখায় তাঁর দৃপ্ত পদচারণা থাকলেও তিনি নিজেকে কেবল গল্পকথক বলেন। ১৮ জানুয়ারি তিনি ৬৪-তে পা দিয়েছেন। জন্মদিন উপলক্ষে সাহিত্যের নানাদিক নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন তুষার তালুকদার


তুষার তালুকদার : আধুনিকতাবাদ ও উত্তরাধুনিকতাবাদের মধ্যে ব্যবধান দেখাতে গিয়ে আপনি আমাদের কী জানাবেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : উত্তরাধুনিকতার অনেকগুলো ব্যাখ্যা আছে। কিছু মানুষ ভাবেন, উত্তরাধুনিকতা হচ্ছে আধুনিকতার পরের সময়টি। কিন্তু এটি কোনো সময়ের বিচার নয়, এটি কালানুক্রমিক কোনো বিবর্তন নয়। উত্তরাধুনিকতা হলো একটি প্রবণতা। প্রবণতাটা শুরু হয়েছিল আধুনিকতার অনেকগুলো স্বেচ্ছাচারের কারণে। আধুনিকতার ভেতর অনেক আদর্শবাদও ঢুকে পড়েছিল। Age of Enlightenment বা জ্ঞানালোক প্রাপ্তির যুগে যুক্তি-তর্কের একটা ব্যাপার ছিল অর্থাত্ যুক্তি দিয়ে, তর্ক দ্বারা সবকিছুই ব্যাখ্যা ও সমাধান করা যায়। তাছাড়া আধুনিকতার আরেকটি ব্যাপার ছিল কেন্দ্রিকতা। এ-কেন্দ্রিকতার সঙ্গে ইউরো কেন্দ্রিকতা একাত্ম হয়ে গেল। ইউরোপে যখন আধুনিকতার সূত্রপাত হলো আবার সেই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান হয়ে উঠল। অনেকটা সেই মধ্যযুগের মতো। তবে এবার অন্য নামে। তারা জানান দিল, এবার তারা আদর্শের দিকে যাচ্ছে, সত্যের সন্ধানে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে কয়েকটা দেশ বাদে গোটা ইউরোপেই ঔপনিবেশি শাসন শুরু করল বিশ্বজুড়ে। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। কারণ, তাদের শাসন শুরু হয়েছিল এ সূত্র দেখিয়ে যে, তারা পৃথিবীর অনাধুনিক অঞ্চলসমূহে আধুনিকতার আলো নিয়ে যাচ্ছে। ফলে দেখা গেল, জাতীয়তাবাদ, আধুনিকতাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠল। অথচ আপনারা অনেকেই জানেন, রবীন্দ্রনাথ এই জাতীয়তাবাদকে প্রচণ্ডভাবে ঘৃণা করতেন। ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদকে তিনি একটি দৈত্য বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে আমি কেবল কয়েকটা উদাহরণ দিচ্ছি। জালিয়ানওয়ালাবাগের এত বড় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পর টি. এস. এলিয়ট বলেন আর অডেন বলেন, কেউই একটা টুঁ শব্দ পর্যন্ত করেননি। এর মানে একটা বিভাজন সৃষ্টি হয়ে গেল, এডওয়ার্ড সাঈদ যাকে বলেছেন ওরিয়েন্টালিজম। অর্থাত্ পশ্চিম ধরেই নিয়েছে তারা সভ্য, তাই পূর্বের অসভ্যতা থাকবেই। তাদের কাজ হচ্ছে অসভ্য সমাজকে সভ্য করা। এখন যে বিশ্বায়নের নামে পুঁজির নতুন ঢেউ এসেছে, তাও কিন্তু আধুনিকতার সূত্র ধরেই এসেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ডাবের পানি খাওয়া গ্রাম্যতা, কোক খাওয়া আধুনিকতা। এ ধরনের সূত্র আধুনিকতার নামে চলে এসেছে। এ জাতীয় আরোপিত সত্যকে প্রশ্ন করার কেউ ছিল না। 

আবার ধরুন, আধুনিকতার আরেকটা দিক হচ্ছে যে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখাটা গ্রাম্যতা। ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখাটাকে যদি আমরা গ্রাম্যতা বলি, তবে জোর করে অনেকগুলো মানুষের বিশ্বাসের ওপর আঘাত হানছি। উত্তরাধুনিকতা, আদর্শবাদের নামে যে বিচলন দেখা দিচ্ছে তাকে এবং ইউরোকেন্দ্রিকতাকে প্রশ্ন করছে। প্রতিষ্ঠানের নামে চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন যুক্তিতর্কের কাঠামোগুলোকে প্রশ্ন করছে। অর্থাত্ excesses of modernism অথবা আধুনিকতার নামে যে অতিরঞ্জন হচ্ছে, অতিশয় উক্তি হচ্ছে—এগুলোকে প্রশ্ন করছে। কাঠামোকে প্রশ্ন করছে—কেন্দ্র কার? আপনি যে সভ্যতা ছড়াচ্ছেন তা কার সভ্যতা? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়াটা হচ্ছে উত্তরাধুনিকতার ইতিবাচক দিক। অপরদিকে, নেতিবাচক দিকটি হলো, এটি দৃশ্য মাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে ছড়াচ্ছে। দৃশ্যমাধ্যম উপরিতল-সর্বস্ব। দৃশ্যমাধ্যম পশ্চিমের আরোপিত। যখন দৃশ্যমাধ্যমের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিস্তৃত হচ্ছে তখন দৃশ্যমাধ্যমের ওই বিষয়গুলোও চলে আসছে। অর্থাত্ পুঁজি, উত্তরাধুনিকতাবাদের পেছনে পশ্চিমের পুঁজিও সক্রিয়। কিন্তু এ ব্যাপারে উত্তরাধুনিকতাবাদ নিজেই নিশ্চিতভাবে বলছে, আমরা হচ্ছি সেই এক একটা বাদ, যার মৃত্যু নিশ্চিত। 

উত্তরাধুনিকতা সর্বদাই বাদগুলোকে প্রশ্ন করছে, একসময় সে নিজেকেও প্রশ্ন করছে। উত্তরাধুনিকতার মূল বিষয়টি হলো প্রশ্ন করা। যেমন—আমরা প্রায়ই বলে থাকি জাতীয় সংস্কৃতির কথা, আসলে জাতীয় সংস্কৃতি বলতে কিছু নেই। জাতীয় সংস্কৃতির নামে আমরা অকাতরে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর একাংশের ওপর অত্যাচার করছি। আবার তাদেরকে আদিবাসী বলেও আখ্যা দিচ্ছি। এটি হচ্ছে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি স্বেচ্ছাচারিতা। উত্তরাধুনিকতা এসব স্বেচ্ছাচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। উত্তরাধুনিকতার আরেকটা ইতিবাচক দিক হলো স্থানীয় বিষয়াবলিকে মূল্য দেওয়া, যা আধুনিকতার চোখে গ্রাম্যতা। High art and low art অর্থাত্ উচ্চ শিল্প, নিম্ন শিল্প। রিকশা শিল্প হচ্ছে নিম্ন শিল্প আর ধরা যাক, মোহাম্মদ কিবরিয়ার ছবি উচ্চ শিল্প। নিঃসন্দেহে কিবরিয়ার ছবি অত্যন্ত ভালো শিল্প কিন্তু এটা কয়জন লোক দেখছে, আর রিকশা শিল্প নিন্দনীয় হলেও প্রতিদিন হাজার মানুষ সেটা দেখছে, আন্দোলিত হচ্ছে। তাই এটিকে নিম্ন বলার অধিকার আমাকে কে দিয়েছে? আর কোন বিবেচনায় আমি এটিকে নিম্ন বলব। উত্তরাধুনিকতা এই বিবেচনাগুলোকে প্রশ্ন করছে। এতে কিন্তু কোনো অরাজকতা বা নৈরাজ্য সৃষ্টি হচ্ছে না। 

শেষকথা, উত্তরাধুনিকতা একটি শিল্প আর শিল্পের নিজস্ব একটা যাচাই-বাছাই আছে। যা-ই লিখলাম উত্তরাধুনিক নামে তা-ই শিল্প নয়। উত্তরাধুনিক অ-শিল্পও আছে। অ-শিল্পসমূহ আপনা থেকেই ঝরে যায়। আর শিল্পগুলো টিকে থাকে। যেমন—আমাদের দেশের যে ব্যান্ড মিউজিক চলছে তা উত্তরাধুনিক একটি প্রতিভাত। তবে এর সবগুলো কি টিকে আছে! যেগুলো টিকে আছে সেগুলো শিল্প। অতএব, সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণের দায়িত্ব আমি কোনো গুরু বা প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দিচ্ছি না। উত্তরাধুনিকতার ক্ষেত্রে কেন্দ্রজন আর ব্রাত্যজনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সাবঅলটার্ন ও elite দু-পক্ষেরই ইতিহাস আছে। উত্তরাধুনিকতা বরং elite-এর ইতিহাসটিকে পেছনে রেখে সাবঅলটার্ন-এর ইতিহাসটা সামনে তুলে ধরছে। প্রান্তজনের শিল্পকে সামনে তুলে ধরছে। যেমন—সেলিম আল দীনসহ অনেকেই প্রান্তজনদের জীবনধারা নিয়ে নাটক লিখেছেন। অর্থাত্ উত্তরাধুনিকতাবাদে স্থানীয় বিষয়গুলো অনেক মূল্যায়িত হচ্ছে। আমার কথা হচ্ছে, সময় এসেছে high art and low art অর্থাত্ উচ্চ শিল্প ও নিম্ন শিল্প-এর ব্যবধান ঘোচানোর। শিল্পের মধ্যে উচ্চ-নিম্ন বলে কিছু থাকা উচিত নয়। শিল্পের অনেকগুলো প্রকাশ থাকে। কতগুলো লৌকিক, কতগুলো আধুনিক, আবার কতগুলো ঐতিহাসিক বা সামাজিক।

প্রশ্ন : সমর সেন আপনার প্রিয় কবিদের একজন। সমর সেনের কবিতার কোন দিকগুলো আপনাকে আকৃষ্ট করেছে?
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সমর সেন ছিলেন একজন নাগরিক কবি। তিরিশ ও চল্লিশের একজন প্রতিনিধি তিনি। তাঁর কবিতার তিনটি দিক আমার পছন্দ। প্রথমত, তিনি নাগরিক চেতনাকে তাঁর মনে লালন করতেন। তাঁর সামনে উদাহরণ হিসেবে ছিলেন পশ্চিমের নগরকেন্দ্রিক কবিরা যেমন—টি. এস. এলিয়ট, এজরা পাউন্ড প্রমুখ। তাঁরা নগরকে আধুনিকতার একটি বিতর্কিত জায়গা হিসেবে দেখেছেন। যে নগর আধুনিকতার জন্ম দিয়েছে বা আধুনিকতার সমার্থক, সে নগরই আবার আধুনিক মানুষকে বিনষ্ট করেছে। বিচ্ছিন্নতা, পার্থক্যবোধ ইত্যাদি প্রবলভাবে ব্যক্তির ভেতর জাগিয়ে তুলেছে আধুনিকতা। নগরকেন্দ্রিক আধুনিকতা মানুষকে একটি শেকড়হীন পদার্থে পরিণত করেছে। সমর সেনের কবিতায় যে কলকাতা তা আসলে সে অর্থে পশ্চিমের লন্ডন কিংবা প্যারিসের মতো নয়।

আমরা জানি, সে-সময় কলকাতায় কিছু উচ্চবিত্ত ছাড়া বেশিরভাগই ছিল নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এরা সবাই পারিবারিক বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। সে অর্থে একজন মানুষ নিজেকে শেকড়হীন ভাবার সুযোগ খুব কমই পেতেন। তারপরও আমরা বলতে পারি, সমর সেন, সুধীন্দ্রনাথ দত্তসহ যাঁরা কবিতা লিখেছেন, তাঁরা নগরকে প্রতীকী অর্থে আধুনিক মানুষের বিচ্ছিন্নতার জন্য দায়ী করেছেন। এসব বিষয়াবলি সমর সেনের ভেতরে কাজ করেছিল এবং তিনি কলকাতার রাস্তায় উট পর্যন্ত পেয়েছেন। এমনকি ক্যাকটাস, বালিয়ারি পেয়েছেন অর্থাত্ এলিয়টের ওয়েস্ট ল্যান্ডের যত চিত্রধর্মিতা সবই তিনি এখানে নিয়ে এসেছিলেন। এটি করতে গিয়ে তিনি সমাজের বিচ্যুতির দিকে নজর দিয়েছেন এবং এ তো ঠিক যে আমাদের তিরিশ বা চল্লিশের দশকে সমাজে একটা বিবর্তন এসেছিল। মানুষ শিক্ষিত হয়েছে। পশ্চিমের একটা প্রবল আঘাত এসে পড়েছিল প্রাচ্যে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছিল। কলকাতায় তো বোমাও পড়েছে। সভ্যতার বিবর্তন, পতন, যুদ্ধ তো সব মূল্যবোধকেই বিনষ্ট করে দিয়েছিল। আর অষ্টাদশ শতাব্দীতে আলোকপ্রাপ্তিতা বা Age of Enlightenment-এর যুগের যত বিধিবিধান বা অর্জন ছিল সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে আধুনিকতা। এ বিষয়টি সমর সেন তাঁর কবিতায় প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এভাবে বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমসাময়িক সমস্যাসমূহকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন।

প্রশ্ন :সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক? আমাদের জানাবেন কি?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন আমার মায়ের আপন মামা। মায়ের মামা হওয়ার সুবাদে যে পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাকে তিনি কখনো অবহেলা করেননি। অনেক সময় এমন হয়ে থাকে যে, একজন বিখ্যাত হয়ে গেলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা দূরত্ব এসে যায়। কিন্তু মুজতবা আলী এমন মানুষ ছিলেন যিনি পরিবারকে বরাবরই প্রাধান্য দিতেন। নিজের দুই সন্তানকে চমত্কারভাবে মানুষ করেন। স্ত্রীর প্রতি দায়-দায়িত্ব পালন করেন যদিও তাঁকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। যখন তিনি ছুটিতে আসতেন, তাঁর বিশাল ভাগ্নে-ভাগ্নির যে বাহিনী ছিল তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করতেন। আবার যখন ১৯৭২ সালে কলকাতার পাঠ চুকিয়ে একেবারে ঢাকাতেই চলে এলেন তখন প্রায়ই আমাকে খবর পাঠাতেন। আমি যেতাম। আমাদের প্রজন্মের যারা তাঁর নাতি-নাতনি তারাও তাঁকে দেখতে যেত, তাঁর সাথে কথা বলত।

তাঁর সাহিত্য চিন্তার কথা বলতে গিয়ে যা বলা জরুরি তা হলো, তিনি অসাধারণ একজন কথক ছিলেন। ভাষাবিদ তো ছিলেনই। যখন বাংলা বলতেন তখন সেটি হতো খুবই পরিচ্ছন্ন। আবার ইংরেজি বললে মনে হতো কোনো ব্রিটিশ ভদ্রলোক কথা বলছেন। আবার যখন সিলেটি বলতেন মনে হতো, আমাদের চেয়েও খাঁটি সিলেটি। জার্মান ভাষাও শুনেছি তাঁর। একবার এক জার্মান ভদ্রলোকের সঙ্গে যেভাবে তিনি জার্মান বলছিলেন তা এক কথায় অপূর্ব। এ তো ছিল তাঁর ব্যক্তি আকর্ষণের জায়গা। অত্যন্ত চমত্কার হাস্যরসের অবতারণা করতে পারতেন। প্রতিটি কথার ভেতর একটা কৌতুক থাকত। ইংরেজিতে যাকে আমরা wit বলি কিংবা বাংলায় বলি মাথা দিয়ে হাসা—এ বিষয়টি তাঁর কথাবার্তা ও সাহিত্যে ছিল স্পষ্ট। আর তাঁর জ্ঞান ছিল অপরিমিত। বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে এমন সুন্দর, স্বচ্ছ ধারণা খুব কম সাহিত্যিকের মধ্যেই দেখেছি আমি। একেবারে ক্লাসিকস থেকে শুরু করে সামপ্রতিক বিষয়াবলিতেও তাঁর অগাধ জ্ঞান ছিল। গ্যেটের ফাউস্ট জার্মান ভাষাতেই আবৃত্তি করতেন। বোদলেয়ারকে ভালোভাবে ফরাসি ভাষাতেই পড়েছিলেন।

তাঁর বড় সুবিধা ছিল পাশ্চাত্য সাহিত্যকে তিনি পাঁচ-সাতটা ভাষায় পড়েছিলেন। কিছু গ্রিক ও ল্যাটিনও জানতেন। ফলে তিনি যখন কথা বলতেন আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতাম। যদিও 'মন্ত্রমুগ্ধ' শব্দটি অতিব্যবহারের দোষে দুষ্ট, তারপরও বলতে চাই, সত্যিই আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতাম। আর তাঁকে আমি রবীন্দ্রনাথের পর বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে বিবেচনা করি কয়েকটি কারণে। যেমন—wit ইংরেজি সাহিত্যে আমরা প্রচুর পাই কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তার খুবই অভাব। হাস্যরস আছে কিন্তু ওই যে বুদ্ধিবৃত্তির হাস্যরস যা আমাকে ভাবাবে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে বাধ্য করবে—এ বিষয়টি বাংলা সাহিত্যে খুবই কম। অথচ যারা পড়েছেন তারা নিশ্চয় জানেন তাঁর কৌতুকবোধ সম্পর্কে। দ্বিতীয়টি ছিল তাঁর গল্প, উপন্যাস ও ভ্রমণসাহিত্য। ভ্রমণকাহিনি বর্ণনা করেছেন গল্পের মতন। নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, কৌতুকরস আর ভাষার সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্য প্রয়োগের মাধ্যমে তিনি বর্ণনা করে চলছেন, পাঠককে সহযাত্রী করে। অকারণে জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা তাঁর ছিল না।

আমার মতে, বাংলা ভ্রমণসাহিত্য রবীন্দ্রনাথ ও মুজতবা আলী—এ দুজনকে বাদ দিলে একটা শূন্যতার মধ্যে পড়ে যায়। তাই তাঁর এই পরিচ্ছন্ন ভ্রমণসাহিত্যকে অতিক্রম করা কঠিন। দ্বিতীয়ত, তিনি ছিলেন একজন গল্পকথক। বাংলা ভাষায় আমি দুই ধরনের গল্পধারা দেখি। একটি হচ্ছে গল্প বলা, আর অপরটি গল্প লেখা। আমাদের ঐতিহ্য গল্প বলার আর পশ্চিমের ঐতিহ্য গল্প লেখার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের বহু সাহিত্যিক গল্প লেখার ঐতিহ্যে চলে গেছেন। গল্প লেখাটা আধুনিক ধারা, নতুন। আর গল্প বলার ঐতিহ্য বহু বছরের পুরোনো। সৈয়দ মুজতবা আলী এই গল্পবলার ঐতিহ্যকে গ্রহণ করেছিলেন। তৃতীয়ত, তাঁর মতো ভাষাবিদ তো কমই আছেন। তুলনা করতে গেলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এ—দুজনের কথা বলতে পারি। মুজতবা আলী যে গল্পের বর্ণনা দিতেন তাতে একটা নিটোল গল্প দাঁড়িয়ে যেত। এ তিন বিবেচনায় তিনি, বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পর একেবারে অদ্বিতীয়।

প্রশ্ন :ডব্লিউ বি ইয়েটসের সাংস্কৃতিক সমন্বয়ের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কি কোনো মিল পাওয়া যায়?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : না, রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে আমি যা বলতে পারি তা হলো—এই একজন কবি যাকে নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না যে তিনি কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন। এবং তিনি জানতেন এই মাটিই হচ্ছে আসল। রবীন্দ্রনাথ যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন তা ছিল অকৃত্রিম। ছোটবেলা থেকে ঘরের কাজের লোক শাসিত একটি সন্তান। স্কুলে যাননি। স্কুলে গেলে হয়তো তিনি এলিটভুক্ত হয়ে যেতে পারতেন। বাবার সঙ্গে হিমালয়ে গিয়েছেন। যাত্রায় খুব বেশি বিস্তৃতি পেয়েছিলেন। যাত্রা মানেই তো জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়া। জীবনযজ্ঞে অংশগ্রহণ করা। আমি যাত্রা করছি মানে জীবনের প্রতি লোলুপ হয়ে যাচ্ছি। ওই যে যাত্রার একটা আলাদা আনন্দ, নান্দনিকতা ও শিক্ষা আছে—এ বিষয়গুলো রবীন্দ্রনাথ গ্রহণ করেছিলেন নিজের ভেতরে। অর্থাত্ অকৃত্রিম একটা জীবনবোধ নিয়ে তিনি তাঁর যাত্রা শুরু করেছিলেন।
এবং তিনি জানতেন তিনি কী? সনাতন, হিন্দুধর্মের গোড়াদের বিপক্ষে তিনি গড়ে তুলেছিলেন ব্রাহ্মধর্ম। এটিকে হিন্দুধর্মের একটি Protestant group বলা যেতে পারে। হিন্দুধর্মের মধ্যে এক ধরনের গণতন্ত্রায়ণ। পৈতাধারী ব্রাহ্মণদের হাত থেকে সাধারণ মানুষদের মুক্তি দিতেই এই ব্রাহ্মধর্মের শুরু করেছিলেন তিনি। এ ধর্মে প্রবেশের একমাত্র মাপকাঠি ছিল জ্ঞান। জ্ঞানের প্রতি তাঁর যে নিষ্ঠা তা এখানে প্রমাণ পাচ্ছে। সংস্কৃতির প্রতি তাঁর যে বিশ্বাস এর প্রমাণ দিচ্ছে। তিনি জানতেন এই বাংলাদেশই হচ্ছে তাঁর আসল জায়গা। 

তিনি সমস্ত বিশ্ব ভ্রমণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল পূর্ববঙ্গে (শিলাইদহ ও পতিসর) যে দশ বছর কাটিয়েছিলেন সে সময়টি। নদীবক্ষে তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন; উড়িষ্যা গিয়েছেন। আর তাঁর নিজের গড়া শান্তিনিকেতন তো ছিলই। ফলে মাটির সঙ্গে তাঁর অকৃত্রিম একটা যোগাযোগ ছিল। আর তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের ঐতিহ্য। বিশ্বকবি তাঁর উপাধি, কিন্তু তাঁর এমন কোনো কবিতা পাওয়া যাবে না যেখানে তিনি ছন্নছাড়া বা শেকড় ছেড়েছেন। আবার যখন বাউলের সংস্কৃতিটা তিনি উপলব্ধি করলেন তখন তার ভেতর আর একটা সমৃদ্ধির জায়গা তৈরি হলো। ফলে রবীন্দ্রনাথকে আমি দেখি একজন নিবেদিতপ্রাণ বাঙালি হিসেবে। তখন তো ভারতীয় আর বাঙালির মধ্যে কোনো তফাত্ ছিল না। ফলে দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথের ভারতীয়বাদও বাঙালিয়ানা দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত। যেমন : তাঁর ব্রাহ্মসমাজ কিন্তু বাঙালির ধর্ম, এটা ভারতীয় ছিল না। রবীন্দ্রনাথের ব্রাহ্মধর্ম যদি এখনো টিকে থাকত তাহলে যে এক-তৃতীয়াংশ হিন্দু আছেন তারা নিজেদের বিশ্বমানব ভাবতে পারত, যা রবীন্দ্রনাথ দেখতে চেয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ নাগরিক কবিদের খুব বেশি পছন্দ করতেন না। কারণ তিনি জানতেন, নগর সভ্যতা একটা শেষতম সভ্যতা। তাই যন্ত্রই এখানে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে। যন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল যদিও যন্ত্র তিনি অপছন্দ করেননি। যন্ত্র ছাড়া চলবে না, সেটাও তিনি জানতেন। কৃষি ব্যবস্থায় যন্ত্র প্রয়োগের নিমিত্তে ছেলে ও মেয়ের জামাইকে পাঠান আমেরিকায় কৃষিবিষয়ক পড়াশোনার জন্যে। ভাবুন, কেমন আধুনিক মানুষ ছিলেন! আবার ছেলেকে বলেছিলেন, ফিরে এসে তুমি বঙ্গীয় কৃষি উন্নয়নে কাজ করবে। পূর্ববঙ্গ থেকে তিনি যা শিখেছেন তা থেকে বেশি কিন্তু আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন। কলকাতায় তাঁর জন্ম, নগরে বহুবছর কাটান, কিন্তু তাঁর কবিতায় তাকালে আমরা দেখি—নগরের প্রভাব খুবই সামান্য। যে প্রভাবটি তাঁর কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে তা হলো জনজীবনের প্রভাব। বেশিরভাগ ছোটগল্পই সাধারণ মানুষকে নিয়ে লেখা। জমিদার বা এলিটদের নিয়ে কয়টা লিখেছেন? খুবই কম। ফলে তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন একদিকে, অথচ তাঁর চিন্তা-চেতনা ছিল ওই মাটিকেন্দ্রিক, যেখান থেকে তিনি উত্সারিত। তাঁর কবিতায় সর্বোপরি আমি একজন খাঁটি বাঙালিকে সবসময় আবিষ্কার করতে পারি।

প্রশ্ন :এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। নীরদ সি চৌধুরীর সঙ্গে তো আপনার একবার দেখা হয়েছিল। পাঠকদের উদ্দেশে এ সম্পর্কে কি কিছু বলবেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : নীরদ সি চৌধুরী একেবারেই ভিন্ন ধরনের একজন মানুষ যাঁকে ব্রাউন সাহেব বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। তাঁর দুটো রূপ। একটি হচ্ছে, তিনি খুব উন্নাসিক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ শাসনকে তিনি একটি ভালো সময় বলে মনে করতেন। ব্রিটিশ সাহিত্য, ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনা তাঁকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল। বিটোফেনের সংগীতকে আমাদের রাগসংগীত থেকেও তিনি অনেক বেশি মূল্যায়ন করতেন। শরত্ বসুর প্রাইভেট সেক্রেটারি থাকায় সমকালীন রাজনীতিকেও তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আমি অনেকটা স্বইচ্ছায়ই এ লোকটার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। তাঁর সম্পর্কে এত নিন্দাবাদ শুনেছি, তাই আগ্রহও বেড়েছে তাঁর সাথে কথা বলার। দু-দিনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।

প্রথম দিন আমার নেপালি বন্ধুকে সঙ্গে করে নেয়ায় আমাকে খুব বকাঝকা করলেন। প্রথমে যখন ফোন করলাম তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্যে, জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় বাড়ি? বললাম, সিলেটে। বললেন, আচ্ছা, আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জে আর আপনার বাড়ি সিলেটে। খালের এপার আর ওপার। তা আমার সঙ্গে ছাপার অক্ষরে কথা বলছেন কেন? ভাবিনি, এমন একজন বিদগ্ধ মানুষ প্রথম দেখাতেই আমাকে এত আপন করে নেবেন। মূলত আমি যখন সাক্ষাত্কার নিতে গিয়েছিলাম তখন আমার বয়স তাঁর অর্ধেক। সত্যিকার অর্থে দেশি ভাবটা তাঁর ভেতর আমি এত বেশি দেখতে পেলাম যে অবাক না হয়ে পারলাম না। পরে বুঝলাম, চারদিকের হীনতা, কপটতা ইত্যাদির বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে তাঁর ভেতরে উন্নাসিকতার জন্ম নিয়েছিল। 

আর আমার একটা ধারণা—তিনি খাটো মানুষ ছিলেন, বহুদিন চাকরি পাননি। হয়তো বহু অবহেলারও শিকার হয়েছিলেন। তাঁর মতো একজন রুচিশীল মানুষ অথচ চারপাশে এত অরুচির ছড়াছড়ি, তাই হয়তো পশ্চিমা গান শুনতেন। তাহলে তো এমনিতেই তাঁর চারপাশের জগতের সঙ্গে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। বিয়ের দিন রাতে তাঁর বউকে মিলটনের বা কার যেন কবিতা পড়ে শোনাচ্ছেন। তাঁর আত্মজীবনীতে আছে। নিশ্চয় এ ঘটনা দেখে যদি তাঁর স্ত্রী দাঁড়িয়ে থাকতেন তবে পড়ে যাওয়ার কথা। এতকিছুর পরও আমি বলব, তিনি অসাধারণ একজন স্বামী ও বাবা ছিলেন। সন্তানদের মানুষ করেছেন। স্ত্রীকে যথেষ্ট সেবা করেছেন। তাই বাবা হিসেবে, স্বামী হিসেবে আমি বলব তিনি সার্থক। তখন তাঁকে নিন্দা করার মতো এত তথ্য-প্রমাণাদি আমার কাছে আর থাকল না। অনেক মানুষ অনেক কিছু বলেন, কিন্তু আমি দেখলাম, সামপ্রদায়িকতার কোনো চিহ্ন তাঁর মধ্যে নেই। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ছিলেন কলিম শরাফী। 

কথার মাঝে মাঝে তাঁকে আমি একটু খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করলাম। খোঁচা দিয়ে কথা বলায় তিনি দেখলেন যে, এ লোকের সঙ্গে তো মজা করা যায়। তখন দেখলাম তাঁর ভেতর হাস্যরসও আছে। কেউ কিন্তু এ কথাটি বলেননি যে তাঁর ভেতর হাস্যরস আছে। আমি বললাম, হ্যাঁ, আপনি তো ম্যাকলের ভাবশিষ্য। আমাকে বললেন, আপনি ম্যাকলের কয়টা পড়েছেন! আমি বললাম, ম্যাকলেকে পড়েই তো আপনার সঙ্গে তর্ক করতে এসেছি। তখন বললেন, ম্যাকলের ভাবশিষ্য হওয়াটা কি খারাপ? আমি বললাম, ব্রাউন সাহেব হওয়ার কায়দাটা কী? কিছুক্ষণ পরে বললেন, আপনি তো আমাকে প্রভোক (Provoke) করতে এসেছেন, তাই না? পারবেন না। কারণ নীরদ চৌধুরী আপনার থেকে আরো বড় বড় মানুষের খোঁচা খেয়ে হজম করেছে। আমি যা বিশ্বাস করি, তা করিই। এত কথা বলছিলেন কিন্তু কোনো রাগ ছিল না তাঁর মধ্যে। যে মানুষ রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, যে মানুষ তার অর্ধেক বয়সী মানুষের সঙ্গে হু হু করে হাসতে পারেন, যে মানুষ একজন তরুণের খোঁচা খেয়ে হজম করতে পারেন, সে মানুষকে নিন্দা করার আমি কোনো কারণ দেখি না। 

আমাদের তাঁকে পড়াশোনা করার, বোঝা বা জানার ভুল থাকতে পারে। 'আত্মঘাতী বাঙালি' বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠায় আমাকে উত্সর্গ করে হাতে লিখলেন—আমার হুবহু মনে নেই তবে কথাটি এরকম—এতদিনে জানলাম আমি আরেকটা ঘরের অধিবাসী। এ কথাটা ব্রাউন সাহেবরূপী নীরদ সি চৌধুরী বলতে পারতেন না, এ কথাটি কিশোরগঞ্জের নীরদ সি চৌধুরীর। 'আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ'-এ তিনি বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ভাষার একটা কারুকাজে বন্দি হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর বাঙালিয়ানা ছিল ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি নীরদ চৌধুরীর এ কথাটিকে মেনে নিই না। এটা তাঁর ব্যক্তিগত পঠনের একটা প্রতিফলন। তবে আত্মঘাতী বাঙালিতে তিনি যা বলেছেন তা আমি মানি।

[Note: থমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে (Thomas Babington Macaulay) একজন ব্রিটিশ কবি, ইতিহাসবিদ ও রাজনীতিক ছিলেন]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ