স্বকৃত নোমানের গল্প : আজরাইলের কূপ

তিন দিন তিন রাত আজরাইলের মুখোমুখি বসে থেকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে ফাহিম। তাকে যখন বিধ্বস্ত রানা প্লাজার মৃত্যুফাঁদ থেকে বের করে আনা হচ্ছিল, তার পেট তখন পিঠের সঙ্গে লাগা। চার দিন পেটে কিছু পড়েনি, গেলার মতো মুখে থুতু পর্যন্ত ছিল না, লাগারই কথা। সারা গায়ে দুর্গন্ধ। মলের, ঘামের। ছোট্ট ওটুকু জায়গায় মাথাটা সোজা করার, খিলধরা পা-টা একটু মেলার উপায় নেই; মলত্যাগ করার আলাদা জায়গা কোথায়?


মৃত্যুফাঁদ থেকে উঠে তার প্রথম দৃষ্টি যায় মাথায় হ্যালমেট পরা, মুখে মাস্ক পরা যুবক উদ্ধারকর্মীর মুখের দিকে, দু-হাত বাড়িয়ে যে তাকে ভেতর থেকে টেনে বাইরে তুলে আনে। তারপর তার চোখ যায় ভোরের সূর্যের দিকে। গ্রীষ্মের চিকিয়ে ওঠা সূর্যকিরণে তার চোখে জ্বালা ধরে। দ্রুত সে চোখ বন্ধ করে। ভ্রু দুটি কুঁচকে যায় জোঁকের মতো। তবু সেই কুঁচকানো ভ্রুর ফাঁকে এক অবর্ণনীয় আনন্দ খেলা করে। মনে হয়, কত যুগ সে এই আলো দেখেনি।

তারপর তাকে যখন স্ট্রেচারে শুইয়ে রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা সেনাবাহিনীর এম্বুলেন্সে তোলা হলো, নরম গদির বেডে শুয়ে তার মনে হলো, সমস্ত কিছুর বিনিময়ে, হাত-পা খুইয়ে হলেও, কেবল বেঁচে থাকা, কেবল বেঁচে থাকাটাই এক মহান প্রাপ্তি। বেঁচে থাকার চেয়ে বড় প্রাপ্তি এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই।

বেঁচে থাকার জন্যই সে একদিন, বছর দুয়েক আগে, গ্রাম থেকে বহু দূরের এই শহরতলিতে এসেছিল। পেটে তার ক্ষুধা ছিল, ক্ষুধার সঙ্গে লড়েই সে শৈশব-কৈশোর পার করেছে, কিন্তু ক্ষুধার কারণে তার ভেতর কখনো মৃত্যুভয় জাগেনি। এখন, এম্বুলেন্সের সাইরেন তাকে ই¯্রাফিলের শিঙার ফুঁৎকারের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তিন দিন তিন রাত আজরাইলের মুখোমুখি বসে থাকার ফলেই তার এই ভীতি। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে নিস্তার পেয়ে গেছে জেনেও তার মনে হচ্ছে, আজরাইল বুঝি এখনো তার পিছু ধাওয়া করছে। ধাওয়া করতে করতে আবার বুঝি ফেলে দেবে তার বিভীষিকাময় ফাঁদে!

এই বহুতল অট্টালিকা এমন ভয়ানক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হতে পারে, কখনো কল্পনাতেও আসেনি ফাহিমের। নয় তলা ভবন। তিন তলা পর্যন্ত কাপড়-চোপড় আর কসমেটিক্সের দোকান, চার থেকে সাততলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা, বাকি দুই তলা খালি। ফাহিম কাজ করত চার তলার ফ্যান্টম অ্যাপারেলস পোশাক কারখানায়। প্যান্টের জিপার সেলাইয়ের কাজ। মাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন। কর্মজীবনের শুরু এই ফ্যান্টম অ্যাপারেলসেই। শুরুতে তাকে সেলাই করা প্যান্টের বাড়তি সুতা কাটার কাজ দেয়া হয়েছিল। বেতন ছিল কম, আড়াই হাজার। দেড় বছরের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে অপারেটর, বেতন বেড়ে পাঁচ হাজার।

সে ভাবেনি পোশাক কারখানার চাকরি এত কঠিন। সে শুনেছিল আট ঘণ্টার ডিউটি, প্যান্ট-শার্ট পরে কেতাদুরস্ত ভদ্রলোকের মতো অফিস করা। কালিময়লা ছেঁড়াফাড়া লুঙ্গি পরে থাকতে থাকতে, অন্যের জমিতে মালকোচা মেরে মুনিষ খাটতে খাটতে গ্রামজীবন তার কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। একদিন শহর থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসা প্যান্ট পরা সাইফুলের সঙ্গে দেখা হলো। সে জানতে চাইল, তোরা বুঝি সারাক্ষণ প্যান্ট পরে থাকিস?

সাইফুল বলল, আরে পাগলা বলে কী? প্যান্ট না পরলে অফিসে ঢুকতে দেবে?

: অফিস? তুই অফিসে চাকরি করিস?

: বিশ্বাস না হলে চল, করবি চাকরি?

: নিবি আমাকে?

সাইফুল না করেনি, ছুটি শেষে চাকরিতে ফেরার সময় ফাহিমকে সঙ্গে আনে। নিজের মেসেই ওঠায়, রানা প্লাজা থেকে দু-মাইল দূরে ডগরমোড়ায়। সুপারভাইজারকে বলে এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরির ব্যবস্থাও করে দেয়।

সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ফাহিম বোঝে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসের গদিঅলা চেয়ারে বসে যে চাকরির কথা এতদিন সে কল্পনা করে আসছিল, এই অফিস সেই অফিস নয়, এই চাকরি সেই চাকরি নয়। আট ঘণ্টার ডিউটি বারো-চৌদ্দ ঘণ্টায় গড়ায়। সকাল সাড়ে সাতটায় মেস থেকে বের হয়, ফেরে রাত সাড়ে আটটায়, কখনো এগারটায়। রেঁধেবেড়ে খেয়েদেয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত একটা। মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টার ঘুম। শেষরাতে উঠে আবার রাঁধতে বসা, লাইন দিয়ে বাথরুমে যাওয়া, গোসল করা। তারপর ডাল-আলুভর্তা দিয়ে এক থালা ভাত খেয়ে আরেক থালা টিফিনবাটিতে ভরে ফ্যাক্টরির উদ্দেশে রওনা হওয়া, আটটা বাজার দশ মিনিট আগে সিঁড়ি বেয়ে চারতলায় উঠে কাজে লেগে যাওয়া। সারাদিন অনিদ্রাজনিত খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা। তার উপর বসে থাকতে থাকতে, অথবা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে শিরদাঁড়ায় ব্যথা।

একেক সময় ইচ্ছে করে চাকরি ছেড়ে আবার গ্রামে ফিরে যেতে। এ কি কোনো জীবন? এই কি বেঁচে থাকা? গ্রামে হাড়ভাঙা খাটুনি আছে, কিন্তু সুখের নিদ্রাও আছে। সাঁঝের পর বিছানায় গা এলিয়ে দিলে জগৎ-সংসারের আর খবর থাকে না, এক ঘুমে ফজরের আজান। গ্রামের কথা ভাবতে ভাবতে ফাহিম সিদ্ধান্ত নেয়, না, আর নয় চাকরি, চলতি মাসের বেতনটা নিয়েই এই শহরতলি ছাড়বে। কিন্তু পেটে যখন ক্ষুধা চাগা দিয়ে ওঠে, সিদ্ধান্তটা বাতিল করে দেয়। মায়ের কথা মনে পড়ে―বাপধন, যদিও পড়ে কহর, না ছাড়িও শহর।

ফাহিমের কেচি আরো জোরে চলে, ধারালো কেচি এক নাগাড়ে সুতা কেটে চলে। তবু মাস চারেকের মাথায় সে এতটাই অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, সাইফুলকে কিছু না বলে গ্রামে ফিরে যেতে চেয়েছিল। পারল না জোহরার কারণে। ব্যাগে যখন কাপড়-চোপড় গুছাচ্ছিল, মনে পড়ল জোহরার কথা। জোহরা তার জন্য রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করছে। ক’দিন ধরে তারা একসঙ্গে ফ্যাক্টরিতে যায়, ফেরেও একইসঙ্গে। সাইফুলের খবর থাকে না। ফাহিমের আগেই সে মেস থেকে বের হয়, ফেরে ফাহিম ফেরার আধঘণ্টা পরে। ফাহিম তার সঙ্গে যেতে চাইলে সে বারণ করে। কেন বারণ করে, প্রথমে বুঝতে পারেনি ফাহিম। পরে এক ছুটির দিনে তার সঙ্গে আছমাকে একই রিকশায় দেখতে পেয়ে বুঝতে কিছু বাকি থাকে না। সাইফুলের নষ্ট হয়ে যাওয়া দেখে সে মন খারাপ করে, কিন্তু কিছু বলে না।

দু-মাসের মাথায় যখন জোহরার সঙ্গে ফাহিমের সম্পর্ক তৈরি হয়, এই সম্পর্কটাকে তার নষ্ট হওয়া বলে মনে হয় না। তার উড়–উড়– মন বরং খানিকটা স্থিতি পায়, গ্রামের জন্য কান্নাটা যেন থামতে শুরু করে। সকালে রাস্তার মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করে জোহরা, অথবা জোহরার জন্য সে। একসঙ্গে ফ্যাক্টরিতে যায়, ফেরেও একসঙ্গে। কখনো ছুটির দিন বিকেলে তাকে নিয়ে জোহরা স্মৃতিসৌধে চলে যায়। জোহরা এই শহরতলির সব পথঘাট চেনে। চার বছর ধরে সে ফ্যাক্টরির কাজ করছে। এর আগে কাজ করত আশুলিয়ার তাজরিন গার্মেন্টে। আগুন লেগে গার্মেন্টটা পুড়ে যাওয়ার পর চাকরি নেয় এই ফ্যান্টম অ্যাপারেলসে।

নবীনগরে সেদিন সন্ধ্যা হয়ে যায়। শুক্রবার। শত শত যাত্রী। বাসে ওঠা দায়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অগত্যা দুজন রিকশায় ওঠে। সাভার পর্যন্ত পঞ্চাশ টাকা ভাড়া। বিশমাইল এলাকা পার হলে হঠাৎ বৃষ্টি নামে। রিকশাওয়ালা থামে না। থামার মতো অবশ্য জায়গাও নেই। জনমানবশূন্য এলাকা। একপাশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, আরেক পাশে সাভার ক্যান্টনমেন্টের মাঠ। রিকশাওয়ালা প্লাস্টিকটা এগিয়ে দিলে রিকশার হুট তুলে দেয় জোহরা। ঝুম বৃষ্টি। জোরসে প্যাডেল মারছে রিকশাওয়ালা। ফাহিম টের পায়, জোহরার বাঁ হাতটা তার কাঁধে। কী এক দুর্বার উত্তেজনায় কেঁপে উঠল সে। ভয়ে ভয়ে একবার জোহরার মুখের দিকে তাকাল। জোহরা তার ডান হাতটাও ফাহিমের কাঁধে তুলে দিল। প্রান্তিক গেইটে মানুষের কোলাহল কানে না এলে ফাহিম হয়ত আরো অনেকক্ষণ তার মুখে জোহরার ঠোঁটটা ধরে রাখত।

সেদিন জোহরার চুল আর লিপস্টিকের যে ঘ্রাণটা পেয়েছিল ফাহিম, তা আর ভুলতে পারেনি। যতক্ষণ ফ্যাক্টরিতে থাকত, তার মনে হতো, সারা ফ্লোরেই ঘ্রাণটা উড়ে বেড়াচ্ছে। সেই ঘ্রাণ তাকে এতটাই মাতোয়ারা করে রাখত, ডিউটির সময় কখনোই গ্রামের কথা মনে পড়ত না।

সেদিনও ডগরমোড়া রাস্তার মোড় থেকে একসঙ্গে ফ্যাক্টরিতে এলো তারা। সকাল আটটা। রানা প্লাজার সামনে শত শত শ্রমিক। ডিউটির সময় হয়ে গেছে, অথচ কেউ ভেতরে ঢুকতে চাচ্ছে না। গতকাল ভবনের দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। শ্রমিকদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় বিল্ডিংটা ধসে পড়তে পারে। ফাহিম আসতে চায়নি, এসেছে বেতনের টানে। জোহরার টানেও হতে পারে।

লাঠি হাতে গেইটের সামনে দু’জন সিকিউরিটি গার্ড দাঁড়িয়ে। শ্রমিকদের জলদি ভেতরে ঢুকতে তাগাদা দিচ্ছে তারা―আটটা বাজে। ঢোকবা না তোমরা? আর দশ মিনিট দেরি করলে কিন্তু একদিনের বেতন কাটা যাইব।

এক শ্রমিক বলল, আলামত তো ভালা না চাচা, যদি ভাইঙা পড়ে?

: যদির কোনো অর্থ নাই মিয়া। সব বাজে কথা। এত বড় বিল্ডিং ভাইঙা পড়া এত সোজা? জীবনে হুনছ ঢাকা শহরের কোনো বিল্ডিং ভাইঙা পড়ছে? কাল বিকেলে বড় অফিসাররা আইসা দেইখা গেছে। সব ঠিক আছে কইছে। এক শ বছরেও এই বিল্ডিংয়ের কিচ্ছু হইব না। যাও যাও ঢোকো।

না, গার্ডের কথায় কেউ ভরসা পায় না। ক্রমেই হৈ-হুল্লোড় বাড়ে। সবার চোখেমুখে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। মাত্র পাঁচ মাস আগে আশুলিয়ার তাজরিন গার্মেন্টে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের কথা তারা এখনে ভোলেনি। টিভিতে দেখেছে কয়লা হয়ে যাওয়া শত শত শ্রমিকের লাশ। আগুনে পুড়ে মরতে সময় লাগে না। মৃত্যু ত্বরান্বিত করে আগুন। কিন্তু ইট-সিমেন্টের নিচে চাপা পড়া মানে জ্যান্ত কবর, মৃত্যুর আগেই হাশর-নশর।

ফ্যাক্টরির দু’জন সুপারভাইজার গেইটে এসে দাঁড়ায়। রাগান্বিত চেহারা। একজন খিস্তিখেউড় করে শ্রমিকদের উদ্দেশে বলল―শরীরে তেল জমছে, না? ডিউটির সময় পারায় যাচ্ছে, এখনো উঠস নাই? একটারেও বেতন দিমু না কয়া দিলাম।

তার কথা শেষ না হতেই সিকিউরিটি গার্ড লাঠি দিয়ে ঠ্যাঙাতে শুরু করল শ্রমিকদের। ঠ্যাঙানি খেয়ে অনেকে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। বেতন পাবে না শুনে বাকিরাও দেরি করে না। কয়েক মিনিটের মধ্যে দু’জন সিকিউরিটি গার্ড ছাড়া বাইরে আর কাউকে দেখা যায় না। দোতলার দোকানপাট তখনো খোলেনি। দশটার আগে সাধারণত খোলে না। ব্যাংকটিও বন্ধ। দেয়ালে ফাটল ধরার খবর শুনে কাল বিকেলেই তারা টাকাপয়সা আসবাবপত্র নিয়ে সরে পড়েছে।

সাইফুল তখনো বাইরে, সড়কদ্বীপের উপর দাঁড়ানো। ডিউটিতে যেতে মন সায় দিচ্ছে না তার। কাল থেকে মনটা বেজায় খারাপ। ভবনে ফাটলের কথা শুনে এবং আছমার জ্বরের কারণে। ক’দিন ধরে জ্বরে ভুগছে বেচারি। দুদিন আসেনি, আজ আসার কথা, অথচ এখনো পৌঁছেনি। দেরি দেখে ফোন দিয়েছিল। বলেছে, রাস্তায়Ñ আধঘণ্টার মধ্যে চলে আসবে।

আছমা এলো প্রায় পৌনে ন’টায়। রাস্তার উল্টোদিকে হোটেল এশিয়ার সামনে তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে যায় সাইফুল।

: এখন কেমন আছ আছমা?

আছমা লা-জবাব। বিস্ফারিত চোখে, হা-মুখে সে রাস্তার উল্টোদিকে তাকিয়ে। হঠাৎ বিকট শব্দে কেঁপে উঠল মাটি। আকাশের দিকে তাকায় সাইফুল। মেঘমুক্ত আকাশ, অথচ বাজ পড়ার শব্দ! না, ঠিক বাজ নয়, এ এক অচেনা শব্দ। এমন ভয়ানক শব্দ জীবনে কখনো শোনেনি সে। পলকে তার চোখ যায় রানা প্লাজার দিকে। ভয়ার্ত চিৎকার করে উঠল সে, আছমাও। হা-মুখে হাত দিয়ে তারা মমির মতো নির্বাক দাঁড়িয়ে। মাটি কাঁপছে থরথর। ভূমিকম্প শুরু হয়েছে বুঝি! ভূমিকম্পের ধাক্কায় ভেঙে পড়ছে বহুতল রানা প্লাজা। হাজার হাজার মানুষের চিৎকার। নারীর, পুরুষের। অকস্মাৎ দৌড় দেয় সাইফুল, তার দেখাদেখি আছমাও। একটি ট্রাক শাঁই করে রাজ্জাক প্লাজার দিকে চলে যায়, এক সিএনজি চালক তার সিএনজি ফেলে দৌড় লাগায়, কয়েকজন পথচারী বিড়বিড় করে দোয়ায়ে ইউনুস আওড়ায়। রহম করো মাবুদ, এ কী গজব তোমার!

ছুটতে ছুটতে সাইফুল পেছনে ফিরে দেখল, রানা প্লাজার আশপাশের ভবনগুলো ঢেকে গেছে ধুলোর চাদরে। উড়ন্ত ধুলো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। চারদিক থেকে শত শত মানুষ ছুটে আসছে, রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। উত্তরে কাঁচাবাজারের সামনে, দক্ষিণে পাকিজা মিলের রাস্তায় মাথায় গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপার ও যাত্রীরা ছুটে আসছে বিধ্বস্ত রানা প্লাজার দিকে। মুখে হায় হায় রব। ভবন ধসের এই ভয়ানক দৃশ্য তারা জীবনে দেখেনি। দূরে ফায়ার সার্ভিসের সাইরেন শোনা যায়। আছমার হাত ধরে সাইফুল একটা বৈদ্যুতিক খুঁটির আড়ালে দাঁড়ায়। বুকের ভেতরে হাতুড়ির ঘা পড়ছে। মুখে ওড়না চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে আছমা। ধুলোওড়া রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে সাইফুল অকস্মাৎ চিৎকার করে ওঠে―ফা-হি-ম!

না, সাইফুলের হাঁক শুনতে পায় না ফাহিম। হয়ত ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জোহরাও তার নাম ধরে ডাকছে, কিন্তু সে শুনতে পাচ্ছে না। তার চারদিকে কবরের ঘোর অন্ধকার, শত শত কণ্ঠের মরণ-চিৎকার। আল্লাহ গো...মা গো...ভগবান...বাঁচাও...মরে গেলাম...ও ভাই...লা ইলাহা ইল্লাহ...ইল্লা আন্তা ছোবহানাকা...অন্ধকার...ফেটে গেল...কেটে গেল...আহ্...ইয়া মাবুদ...রহম করো। কোথায় কে যেন কম্পিত গলায় আজান হাঁকছে―আল্লাহু আকবার আল্লা...।

প্রথম যখন ফ্লোরটা কেঁপে ওঠে, ফাহিমও মনে করেছিল ভূমিকম্প। তার মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। সে ‘জোহরা’ বলে হাঁক দেয়। জোহরা হাঁক শুনল কিনা তার অপেক্ষা করল না, দ্রুত বসে পড়ল মেশিনের টেবিলের নিচে। তার মনে হলো, সে যেন কোনো নাগরদোলায় বসে। শাঁই করে নাগরদোলাটা উপর থেকে নিচে নামছে। প্রচ- পেশাবের বেগ হলো তার, নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় পেশাবের গতি। তারপর বিকট শব্দ, যেন রোজ কিয়ামত। ধুলোবালিতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। দু-হাতে সে চোখ ঢাকে। চোখ খুলে দেখে, ভাঙা ইট, ধুলোবালি আর খসেপড়া পলেস্তরার কঠিন প্রাচীর। বেরুবার পথ নেই। অন্ধকারে সে টের পায়, তার পেটের কাছে একটা নরম তুলতুলে পা। পা-টার উপরে সে হাত রাখে। না, পা নয়, হাত। মানুষের হাত। নারীর না পুরুষের বোঝা মুশকিল। একেকবার হাতটা তার পেটের চামড়া খামচে ধরতে চাইছে। তার মনে হয়, এই হাত আজরাইলের। তার হৃৎপি- খামচে ধরার জন্য আজরাইল হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। চোখ বন্ধ করে সে চিৎকার দেয়―ও মা গো...। চিৎকারটা তার কানে যায়, তারপর আর কিছু কানে ঢোকে না, হাত-পা ছেড়ে দিয়ে সে অচেতন হয়ে পড়ে, মাথাটা হেলে থাকে টেবিলের পায়ার সাথে।

যখন চেতন ফিরে পায়, চোখ খুলে দেখে চারদিকে ভয়াল অন্ধকার। রাত না দিন, সকাল না দুপুর কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। শুনতে পায় নারী-পুরুষের গোঙানি, বিলাপ। তার মনে হয়, সে মরে গেছে। মৃত্যুর পর আবার তাকে জিন্দা করা হয়েছে। এসব গোঙানি আর বিলাপ ভেসে আসছে পাশের কবর থেকে। খানিক পর মনকির-নকির আসবে। তাকে সওয়াল করবে―র্মারাব্বুকা? ওমা দ্বীনুকা?

ফাহিম মনে মনে উত্তর সাজিয়ে নেয়―রাব্বি আল্লাহ। দ্বীনিয়াল ইসলাম।

হঠাৎ তার মনে হয়, সে মরেনি। এই যে এখনো চোখের পলক পড়ছে, বুকটা ধুকফুক করছে, ভুঁড়িটা ওঠানামা করছে। নাকে এসে লাগছে ঘামের, মলের আর কাঁচা রক্তের গন্ধ। বেঁচে থাকার আনন্দে ‘বাঁচাও’ বলে সে তীব্র চিৎকার করে ওঠে। সারা শরীর কাঁপছে থরথর। তৃষ্ণায় ছাতিটা ফেটে যেতে চাইছে। জীবন-মৃত্যুর সাঁকোয় দাঁড়িয়ে সে চোখ বন্ধ করে। টের পায়, তার সামনে কে যেন বসে আছে। তার গরম নিঃশ্বাস এসে পড়ছে তার চোখেমুখে। তাকে সে দেখে না। অস্ফুটস্বরে সে বলে―কে? জবাব আসে না। সে শুনতে পায়, গ্রামের মসজিদের ইমাম তার কানে কানে বলছে―আজরাইল। তোমার শা-রগের থেকেও কাছে অবস্থান করছে আজরাইল।

কাঁপতে থাকে ফাহিম। তার পেটের কাছে তুলতুলে হাতটা নিথর, শক্ত। আজরাইলের ফাঁদে বসে কাঁপতে কাঁপতে সে আজরাইলের সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার প্রস্তুতি নেয়। শুরু হয় জীবন-মৃত্যুর কঠিন লড়াই।


দুই.

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৭৬ নম্বর বেডে শুয়ে ঘুমের ঘোরে ফাহিম হাত নাড়ে, পা নাড়ে। এখনো লড়ছে আজরাইলের সঙ্গে। ঘুমের ঘোরে আজরাইল হানা দিচ্ছে বারবার, সে হাত-পায়ের আঘাতে তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে। তার গলায় কোরবানি দেয়া গরুর মতো ঘরঘর শব্দ ওঠে। নিজের গলার শব্দেই তার ঘুম ভেঙে যায়। চোখ খুলে দেখে, তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে দুটি চোখ। মাথায় লম্বা চুল, গায়ে গোলাপি ফ্রক, পরনে কালো পায়জামা। হাতে-পায়ে মোটা ব্যান্ডেজ, মাথাটাও ব্যান্ডেজে মোড়ানো।

দু-হাতে চোখ মোছে ফাহিম। তার দৃষ্টি যায় ছাদের দিকে। দুদিন ধরে সে এই বেডে, দুদিন ধরেই শাঁই শাঁই করে ঘুরছে ফ্যানটা। অবিশ্রাম। প্রথম যখন তাকে এই বেডে আনা হয়, ১৭৫ নম্বর বেডে সে এক তরুণকে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাতে দেখে। হাত-পা নেই। ধ্বংসস্তূপ থেকে তাকে হাত-পা কেটে বের করে আনে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। দুপুরে ফাহিমের চোখে ঘুম নেমে এসেছিল। ঘুম থেকে জেগে দেখে, ১৭৫ নম্বর বেডে পঙ্গু তরুণটির বদলে মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা আরেকটা লোক। লোকটাকে তার চেনা চেনা লাগে। হয়ত কোনো পোশাক শ্রমিক, যে কিনা আজরাইলের সঙ্গে লড়ে তার মতো জিতে গেছে।

অথচ এখন সেই লোকটিও নেই। ঘুরন্ত ফ্যান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মাথা কাৎ করে আবার সে চোখ দুটির দিকে তাকায়। চোখ দুটি আগের মতো খোলা, তাকিয়ে আছে অপলক। চোখ দুটি চেনা চেনা লাগে ফাহিমের। মনে হয়, কোনো এক ঝড়োসন্ধ্যায় এই চোখে চুমু খেয়েছিল সে।

স্যালাইনের সুচটা চেপে ধরে ফাহিম উঠে বসার চেষ্টা করে। বসেও। হঠাৎ তার ঠোঁট দুটি ফাঁক হয়ে বেরিয়ে আসে একটা মৃদুস্বর―জোহরা!

এক নার্স এসে বাঁ হাত বুলিয়ে খোলা চোখ দুটি বন্ধ করে দেয়, তারপর একটা সাদা কাপড়ের ভাঁজ খুলে ঢেকে দেয় সারা শরীর। চাকাঅলা স্ট্রেচার ঠেলতে ঠেলতে দু’জন নার্স আসে। সাদা কাপড়ে মোড়ানো লাশটাকে স্ট্রেচারে তুলে ঠেলতে ঠেলতে দরজার দিকে নিয়ে যায়। বিস্ফারিত চোখে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ফাহিম। ইচ্ছে করে ‘জোহরা’ বলে চিৎকার দিতে। পারে না। কেউ যেন তার গলাটা শক্ত করে চেপে ধরে আছে।

স্যালাইনটা প্রায় শেষ। একটানে সুচটা খুলে বেড থেকে নেমে দ্রুত দরজার দিকে এগিয়ে যায় ফাহিম। শত শত মানুষের ভিড়। অজ¯্র কণ্ঠের আর্তনাদ, বিলাপ। রক্ত, ঘাম, মল আর সেভলনের উৎকট গন্ধ। ভিড় ঠেলতে ঠেলতে সে দরজার দিকে এগোয়। তার চোখ খুঁজে বেড়ায় স্ট্রেচারটা। কোথাও নেই, মুহূর্তেই হাওয়া।

: ভাই, সাদা কাপড়ে ঢাকা একটা লাশ। মেয়ে। দেখেছেন?

: না না...হ্যাঁ হ্যাঁ। কার লাশ?

: আমার...আমার...।

: আপনার বোনের?

: না না...হ্যাঁ হ্যাঁ। দেখেছেন?

: হ্যাঁ হ্যাঁ। এদিকে যান, এদিকে। অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে গিয়ে খোঁজ করুন, সব লাশ সেখানে নেয়া হচ্ছে।

সারা দিন অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠে জোহরার লাশের সন্ধান করে ফাহিম। পায় না। সাদা কাফনে ঢাকা শত শত লাশ। লাশ দেখতে দেখতে তার মাথা চক্কর দেয়, মৃত্যুভয় জেগে ওঠে আরো প্রবলভাবে। মনে হয়, আজরাইল এখনো তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাকে। আজরাইলের তাড়া খেয়ে সন্ধ্যায় সে ফিরে যায় মেসে। সাইফুল তাকে দেখে চিৎকার করে ওঠে, বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে―তুই বেঁচে আছিস ফাহিম! তোকে কত্ত খুঁজেছি আমি। এনাম মেডিকেল, অধরচন্দ্র স্কুল, কত্ত খুঁজেছি ভাই। বাড়িতে ফোন করতে চেয়েছিলাম। খারাপ খবর শুনে তোর মা পাগল হয়ে যাবে, তাই করিনি। তুই বাড়ি যাবি?

: হ্যাঁ, কাল ভোরেই রওনা হবো।

: যা যা। তাড়াতাড়ি ফিরবি কিন্তু। আমি আশুলিয়ায় ওয়ার্ল্ড ফ্যাশনে চাকরি নেব। তোর জন্যও একটা ঠিক করে রাখব।

ফাহিম চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে―দরকার নাই সাইফুল। আমি আর কখনোই শহরে আসব না।


তিন.

জেলাশহরে পৌঁছতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। জেলাশহর থেকে উপজেলা সদর বাসে দুই ঘণ্টার পথ, সেখান থেকে ফাহিমদের গ্রামে পৌঁছতে হাঁটাপথে আরো দুই ঘণ্টা। কাপড়ের রঙচটা ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে ফাহিম গ্রামের পথ ধরে। রাস্তায় লোকজন নেই। কৃষ্ণপক্ষ চলছে, আকাশে চাঁদ নেই। এই পথ তার চেনা। কোথায় কোন বাঁক, কোথায় কোন খাদ, সব তার মুখস্থ। পথ চলতে অসুবিধা হয় না। জোরে কদম চালায় সে। পেটে ক্ষুধা আছে, তবে ভাতের ক্ষুধা। বাস থেকে নেমে দোকান থেকে কলা-পাউরুটি খেয়ে নিয়েছে, তাতে ক্ষুধা গেছে, কিন্তু ভাতের ক্ষুধাটা যায়নি। ধোঁয়াওঠা গরম ভাত খেতে ইচ্ছে করছে খুব। যে মৃত্যুভয় তাকে তাড়া করে ফিরেছে গত কয়দিন, সেই তাড়া এখন সে টের পাচ্ছে না। আজরাইল তো থাকে বিশাল অট্টালিকায়। এখানে অট্টালিকা নেই। শণে ছাওয়া, বাঁশের বেড়ার ভাঙাচোরা ছোট ছোট ডেরা। এসব ডেরায় মৃত্যুর ভয় নেই, আজরাইলের ফাঁদ নেই।

বিলধোয়া হিম বাতাস গায়ে মাখতে মাখতে, রাতজাগা ডাহুকের ডাক শুনতে শুনতে, শত সহ¯্র জোনাকির আলো দেখতে দেখতে নতুন জীবনের স্বপ্ন বুকে নিয়ে জোর কদমে হাঁটতে থাকে ফাহিম। তবু মাঝে মাঝে তার স্মৃতিতে উঁকি দেয় রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ, কবরের মতো ঘুটঘুটে আঁধার, অসংখ্য মানুষের আর্তনাদ, পেটের সঙ্গে লেগে থাকা নিথর পা, এম্বুলেন্সের ভয়াল সাইরেন, ১৭৫ নম্বর বেডের খোলা দুই চোখ, অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের সাদা কাফনে ঢাকা শত শত লাশ।

ভয় ভয় করে ফাহিমের, রোমকূপে শিহরণ জাগে, ভয়ে বারবার পেছনে ফিরে তাকায়। আজরাইল বুঝি এখনো তাকে তাড়া করছে! ভয় তাড়াতে সে শৈশবের স্মৃতি মনে আনার চেষ্টা করে। নীল আকাশে উড়ন্ত ঘুড়ি, শরতের ভরা বিলে ডুবসাঁতার, গোল্লাছুট, লুকোচুরি, হাডুডু, শ্যামলা কিশোরীর কাজলটানা মায়াবী মুখ, রাখালিয়া বাঁশির সুর।

দূরে আলোকবিন্দু দেখতে পায় ফাহিম। ওই তো তার গ্রাম, খাল পেরুলেই আরেকটু পথ। কুপি হাতে বুঝি তার মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে তার প্রতীক্ষায়। চাঁদ উঠছে আকাশে, আঁধার কেটে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। চাদের আলোয় বিলের জল চিকচিক করছে। বিলটা এখন প্রায় শুকনো, যেটুকু জল আছে তা বিলের মাঝ বরাবর বয়ে যাওয়া ছোট খালটাতেই। খালের উপর উঁচু বাঁশের সাঁকো। সাঁকোটা পেরুলেই আর মাত্র এক মাইলের পথ।

ব্যাগটা ডান কাঁধে ঝুলিয়ে বাঁ হাতে সাঁকোর আড়াআড়ি বাঁশ ধরে ধীর পায়ে সাঁকোতে পা রাখে ফাহিম। সাঁকোটা কেঁপে উঠল একবার। নিচে মাছের ঘাই শোনা যায়। একটা ব্যাঙ ছরছর শব্দ তুলে ছুট লাগায়। ফাহিম আরো শক্ত করে ধরে সাঁকোর বাঁশ। প্রতি পদক্ষেপে সাঁকোটা কেঁপে উঠছে থরথর, সেদিন যেভাবে রানা প্লাজা কেঁপে উঠেছিল। দক্ষিণা বাতাসে খালের জলে ঢেউ উঠছে। ভাঙা চাঁদের আলোয় চিকিয়ে উঠছে সাদা ঢেউগুলো। ফাহিমের মনে হয়, যেন ঢেউ নয়, অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ের মাঠে শায়িত শত শত লাশ ভেসে যাচ্ছে খালের জলে।

হঠাৎ কী যে হয় তার, পা দুটি কাঁপতে শুরু করে সমান তালে। কিছুতেই সে পা দুটি স্থির রাখতে পারে না। পায়ের এমন কাঁপুনিতে তার অবাক লাগে। কতদিন খুঁটি না ধরেই এই সাঁকো পার হয়েছে, অথচ আজ দুদিকের দুই খুঁটি ধরেও তার পা কাঁপছে। ফের দক্ষিণে নজর ফেলতেই ডান পা-টা ফস্কে গেল হঠাৎ। ব্যাগটা ছিটকে পড়ল ডানে, আর ফাহিম বাঁয়ে। খালের জলে পর পর দুবার শব্দ হয়।

পরদিন ভোরে গ্রামবাসী দেখতে পায়, সাঁকোর নিচে মাছ ধরার ঘেরে পড়ে আছে একটা মৃতদেহ। একটা চুঁছলো বাঁশ ঢুকে আছে পেট বরাবর।

১৮.১০.২০১৩ 

 

লেখক পরিচিতি
স্বকৃত নোমান

প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ ঔপন্যাসিক। ১৯৮০’র ৮ নভেম্বর ফনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। দৈনিক আজকের কাগজের মাধ্যমে সাংবাদিকতার শুরু। ‘কয়েকটি জোব্বার মহাপ্রয়াণ’ শীর্ষক একটি নিবন্ধের মাধ্যমে প্রয়াত নাট্যকার ড. সেলিম আল দীনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তীকালে তাঁর একান্ত সচিব হিসেবে যোগ দেন। তাঁর কাছেই বিশ্বসাহিত্যের পাঠ নেন নোমান। সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পর আবার সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি নিউজপোর্টাল ঢাকারিপোর্টটোয়েন্টিফোর.কম ও সাপ্তাহিক ধাবমান-এর এক্সিকিউটিভ এডিটর। ২০০৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস নাভি। এরপর প্রকাশিত হয় যথাক্রমে ‘ধুপকুশী’ (পরিবর্তিত নাম ‘বংশীয়াল’), ‘জলেস্বর’, ‘রাজনটী’ ও ‘হীরকডানা’। পত্রপত্রিকায় নিয়মিত গল্প লিখছেন। ইতিহাস, ইতিহাসের মানুষ, বিশাল বাংলার মিথ, লোকজীবন, লোকসংস্কৃতি, বঞ্চিত মানুষদের সুখ-দুঃখের পাঁচালি তাঁর গল্প-উপন্যাসে ভিন্ন রকমের মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়। তাঁর উপন্যাসের ভাষা ও আঙ্গিক একেবারেই আলাদা, নিজস্ব। কথাসাহিত্যে তিনি এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ