গত বছর জুলাই মাসের ২২ তারিখে হঠাৎ এক দৈব দুর্ঘটনায় পৃথিবীর সাতজন মানুষ এক জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখি হল। জীবন বাঁচাতে তারা তখন দৈব অশুভ শক্তির সাথে প্রাণপণ লড়াই করছিল। কিন্তু কিছুতেই তারা ওই দৈব অশুভ শক্তির সাথে লড়াইয়ে পেরে উঠছিল না। ঠিক সেই সময় ঘটনাস্থলে হাজির হলেন করুণাময়ী পরহিতৈষী সেবাব্রতী শর্তাবাহী দুর্গাময়ী নির্ভিক এক আকাশ দেবী। দৈব অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সেচ্ছায় বজ্রকঠিন এক দুর্দান্ত লড়াই করে ওই সাতজন মানুষের জীবন বাঁচালেন তিনি। বিপদ থেকে সদ্য উদ্ধার পাওয়া ওই সাতজন হতবিহ্বল মানুষকে এরপর এক কঠিন পস্তাব করলেন সেই আকাশ দেবী। তিনি বললেন, এখন তোমাদের কাছে আমি সামান্য একটা জিনিস চাই।
নিজেদের ভূতভবিষ্যৎ দুর্গতির আসু স্থায়ী সমাধান আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে ইচ্ছে করলে তোমরা তা দিতেই পারো। আর যদি তোমরা তা দিতে না চাও তাহলে এখন থেকে ঠিক ১০৫ বছর পরে আবারো তোমরা ওই অশুভ দৈব শক্তির মুখোমুখি হবে এবং একই ধরনের জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখি হবে। দূর ভবিষ্যতে অদূরদর্শী অকর্মন্য কালোত্তীর্ণ নির্বোধ খচ্চরের মতো এই তোমরা যদি আমার ইচ্ছা পূরণ না করো, আমি দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, তখন তোমাদের বাঁচাতে আর কেউ এগিয়ে আসবে না। তখন তোমরা বেকুবের মতো কেবল অসহায়ভাবে মারা পরবে। তখন আর তোমাদের বাঁচার জন্য কিছুই করার থাকবে না।
প্রিয় পাঠক, এবার আপনার সামনে রয়েছে একেবারে বিনা খরচে চন্দ্র ভ্রমণের মস্ত বড় এক সুযোগ। আপনাকে শুধু বলতে হবে-- আকাশ দেবী ওই সাতজন মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তাদের কাছে তখন কি অমন দূর্লভ বস্তু দাবী করেছিলেন? আর কেনইবা ওই সাতজন মানুষ জীবন বাঁচানোর পরেও অমন একজন পরোপকারী আকাশ দেবীর নিরহঙ্কার প্রস্তাবে রাজী হয়নি? আরো মজার ব্যাপার হল, প্রশ্নের সঠিক জবাবগুলো আপনি শুধু মনে মনে ঠিক করতে পারলেই ঈশ্বরের একান্ত সচিব মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর মাধ্যমে তা আয়োজকদের দপ্তরে অটোমেটিক পৌঁছে যাবে। আর সঠিক জবাব দানকারীদের মধ্যে লটারি করে শ্রেষ্ঠ একজনের জন্য রয়েছে বিনা খরচে চন্দ্র ভ্রমণের ওই লোভনীয় পুরস্কার। আগামী ২০২১ সালের ২১ শে জুলাই মার্কিন মহাকাশ কেন্দ্র নাসা চন্দ্রপৃষ্ঠে যে নভোযান পাঠাতে যাচ্ছে, পুরস্কার বিজয়ী বিনা খরচেই সেই নভোযানের একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী হতে পারবেন। আপনাকে শুধু বলতে হবে-- আকাশদেবী আসলে ওই সাতজন মানুষের কাছে তখন কি চেয়েছিলেন? আর তারা-ইবা কেন তা দিতে রাজী হয়নি?
এবছর জুলাই মাসের প্রথম সোমবার নাসা আয়োজিত ওই ধাধার অনুষ্ঠানটি বিশ্ববাসীর জন্য ছিল উন্মুক্ত। আর সর্বোচ্চ আগ্রহী অংশগ্রহণকারীদের যে কোন সময় সব ধরনের সহায়তা করার জন্য ঈশ্বরের একান্ত সচিব এবং ওঁনার সব কাজের একমাত্র পরামর্শক মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু আপনাদের ওই ঘটনার কিছু ক্লু ধরিয়ে দিতে সদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনুষ্ঠানটি যেহেতু মার্কিন স্যাটেলাইট টেলিভিশন ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক বা সিএনএন সরাসরি স¯প্রচার করেছিল। তাই আপনাদের হয়তো ওই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে এবং তার নিয়ম কানুন শুনে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি। তবুও আপনার যদি কোনো বিষয়ে বাড়তি কোনো জিজ্ঞাসার থাকে আপনি মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুকে নির্দিধায় ওই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেন। আর যারা সরাসরি সিএনএন সম্প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানটি দেখতে পারেননি তাদের জন্য আমরা এখন আবারো একবার মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর মুখোমুখি হবো, পাঠকদের জন্য উঁনি যদি বিষয়টির আরো কোনো ক্লু দিতে চান। হ্যা, মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু, এবার আপনি বলুন।
ঘটনা যা ঘটেছে আপনারা এতোক্ষণে তা হয়তো অবগত হয়েছেন। প্রথম বিষয়টি হল, ঘটনাটি ঘটেছে ২২ জুলাই ২০০৯ সালে পৃথিবীতে। আর যেহেতু ওই সাতজন মানুষ আকাশ দেবীর প্রস্তাবে রাজী হননি, তাই আকাশ দেবীর কথানুযায়ী ওই সাতজন মানুষ ঠিক ১০৫ বছর পরে আবারো একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন। আপনাদের বুঝতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে আরো একটা ক্লু আমি আপনাদের দিতে পারি। সেই দিনের ওই দৈব ঘটনার সাথে পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণের একটা কঠিন সম্পর্ক রয়েছে। এ পর্যায়ে মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু মুচকি মুচকি হেসে একটু থামলেন। ঠিক তখন নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে কাউয়ার চর থেকে আমাদের এক শ্রোতা জানতে চাইলেন যে, মানুষ সাতজন কি পুরুষ নাকি মহিলা ছিলেন? তার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি, ওই অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। আর সেটি বিশ্ববাসীর জন্য সরাসরি সম্প্রচার করেছিল আমেরিকান স্যাটেলাইট টেলিভিশণ চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক বা সিএনএন। আর অনুষ্ঠানটি ছিল গোটা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা মিস ক্যারাবান মাফিয়া বারবার বিশ্ববাসীকে নাসা প্রদত্ত ওই লোভনীয় পুরস্কারের প্রস্তাবটি করছিলেন। যেমন-- অনুষ্ঠানটি চলবে তিন ঘণ্টা, আর ওই তিন ঘণ্টার মধ্যে যে দর্শক বা শ্রোতা সবগুলো প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন, তাদের মধ্যে লটারি করে যিনি সেরা উত্তরদাতা নির্বাচিত হবেন, আগামী ২১ শে জুলাই ২০২১ সালে নাসা থেকে চন্দ্রে পাঠানো মহাকাশ খেয়ায় তিনি বিনা খরচে যাওয়ার জন্য মনোনীত হবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান উপাস্থিপিকা মিস মাফিয়ার দাবী, আপনি যদি চাঁদে যাওয়ার জন্য নাসার অমোন দুর্লভ পুরস্কারের একজন সৌভাগ্যবান হতে চান, আপনার মনে মনে ভাবা প্রশ্নের উত্তরগুলো মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর কাছে অটোমেটিক জমা হতে থাকবে। কিন্তু আপনাকে বলতে হবে-- ওই সাতজন মানুষকে বাঁচাতে আকাশ দেবী কেন এসেছিলেন? তিনি তাঁদের কাছে কি চেয়েছিলেন? এবং ওঁরা তা দিতে কেন অস্বীকার করেছিলেন?
দুর্ভাগ্যক্রমে যারা টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ পাননি, তারাও যদি সঠিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তাহলে তাদের জন্যও পুরস্কারের ব্যাপারটি বিচেনায় নেয়া যায় কিনা, এমন একটি প্রশ্ন করেছিলেন ওই সময়ে সিএনএন টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখতে থাকা স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র সর্ব কনিষ্ঠা একান্ত সচিব মিস আলফা ক্যাথেরিন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিস আলফার প্রশ্নে একটু নড়েচড়ে বসলেন। এবং একটু ভেবে বললেন- হ্যা, অনুষ্ঠানটি যদি সারা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে এই মুহূর্তে যারা টেলিভিশন সেটের সামনে নেই তাদেরকেও বঞ্চিত করাটা নাসার উচিত হবে না। তাই মিস্টার ওবামা তখন সেক্রেটারি অব স্টেটস মিসেস হিলারি ক্লিনটনকে টেলিফোনে এই বিষয়ে নাসার কর্মকর্তাদের সাথে এক জরুরী বৈঠক করার জন্য নির্দেশ দিলেন।
ওদিকে ভারতের দিল্লী সফররত মিসেস হিলারী ক্লিনটন তখন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধির বাসায় একান্ত আড্ডায় ব্যস্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনি লড়াইয়ে খোদ ডেমোক্রাটিক পার্টি থেকে শুধুমাত্র নারী হবার কারণেই কিভাবে তাকে বাদ দিয়ে বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয়েছিল, মিসেস গান্ধিকে তখন সেই সব খুটিনাটি ব্যাখ্যা করছিলেন হিলারী। আর বলছিলেন, বুঝলেন সোনিয়াজি, নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সেই তুলনায় ভারতে আপনার নেতৃত্ব অনেকটা গর্ব করার মতো। এই পর্যায়ে স্বয়ং প্রেসিডেন্টের অমন একটা ছোটখাটো বিষয়ে এতোদূরে অবস্থানরত হিলারিকে টেলিফোনে নির্দেশটা না পাঠালেও চলত! কিন্তু, ওই যে পুরুষ জাতী সব সময়ই নারীদেরকে হাতের পুতুল বানাতে চায়, তাই ওবামার নির্দেশকে হিলারি নালিশের সুরে মিসেস সোনিয়াকে বলতে বলতে খানিকটা চোখ মুছলেন। দেখেন, এই সামান্য বিষয়েও যদি এতোদূরে বসে আমাকে নাক গলাতে হয়, গোটা আমেরিকায় নাসার সাথে বৈঠক করার মতো কি আর একটা লোকও ছিল না? সত্যি সত্যিই আমার আর এই চাকরি ভালো লাগছে না। শুনে মিসেস গান্ধি একটু ঠোঁট টিপে হাসলেন। আর বললেন, নারীরা পৃথিবীর সবখানেই পুরুষ কর্তৃক শাসিত আর লাঞ্চিত। এটা মিস্টার ওবামার বেলায়ও ঠিক।
ইতোমধ্যে উগান্ডার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে সিএনএন টেলিভিশনে ওই অনুষ্ঠান দেখতে থাকা ওলুসান্দা কাবিলা নামে এক দর্শক শ্রোতার কৌতুহলের জবাবে মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু আবারো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন যেভাবে-- আপনারা সিন্ধবাদের গল্প শুনেছেন। অনেক রূপকথার গল্পও আপনাদের জানা। ওই সাতজন মানুষ ঠিক পরুষ বা নারী না হয়ে পাহাড়-পর্বত-সমুদ্র বা অন্য কোনো রূপক কিছুও হতে পারে। আপনারা খুব চিন্তা করে সঠিক উত্তর দেবার চেষ্টা করুন। নইলে নাসা কিন্তু সঠিক উত্তরদাতা খুঁজে না পেলে লোভনীয় পুরস্কারটি বাতিল করার এখতিয়ারও রাখে।
ওদিকে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে আমাদের শরিয়তপুরের চর জানাজাতের ইকতারুলের দাদীর ধারণা কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। পদ্মাপাড়ের লোকজনদের মতে, চন্দ্র-সূর্যের মা-বাবা খুব ছোটবেলায় অভাবে পরে একবার রাউয়ার মা-বাবার কাছ থেকে আধা পয়সা ধার নিয়েছিল। চন্দ্র-সূর্যের মা-বাবা ধারের সেই পয়সা না মিটিয়ে মারা যাওয়ার পরে, ওই ঘটনা রাউয়ার মা-বাবাও ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাউয়ার মা-বাবাও মারা যাবার পরে বিষয়টি নিয়ে রাউয়া ভিতরে ভিতরে ভীষণ ক্ষুব্ধ। চন্দ্র আর সূর্যের দাপটে পৃথিবীতে থাকতে না পেরে রাউয়া এখন সপ্ত আসমানে বসবাস করেন। আর ছোটবেলার ওই অ-পরিশোধিত ঋণের কথা যখনই রাউয়ার মনে পরে, তখনই তিনি চন্দ্র বা সূর্যের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের আক্রমন করতে উদ্দীপ্ত হন। কখনো কখনো চন্দ্র বা সূর্যকে সরাসরি গিলে খাবারও চেষ্টা করেন রাঊয়া। এ বিষয়ে আসল জনশ্রুতি হল, রাউয়া যেদিন চন্দ্র বা সূর্যকে পুরোপুরি গিলে ফেলবে, সেদিনই নাকি দিন দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। আর রাউয়া বছরে অন্তত দু’বার নাকি সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন।
ওদিকে ওই সময় জাপানের নাগাসাকিতে ইদিতা মরিস ফাউন্ডেশানের সামনে একদল জাপানি তরুণ-তরুণি খোলা উদ্যানে জড়ো হয়ে বিশাল প্রজেক্টরে সিএনএন টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি পূর্নগ্রাস সূর্যগ্রহণ উপভোগ করছিল। আর ভিতরে ভিতরে কোনো কোনো জাপানি ইয়াং নিজেকে তখন ২০২১ সালে নাসার চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো নভোযানের নভোচারী ভেবে একজন আরেকজনের শরীরের সঙ্গে আনন্দে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে জাপানি তরুণ-তরুণিদের অতিরিক্ত অমোন আগ্রহের ব্যাপারটি আগে থেকে জানা ছিল অস্ট্রেলিয়ার এক্স টেলিভিশনের। ফলে এক্স টেলিভিশন জাপানিদের ওই অনুষ্ঠানটি আবার সরাসরি সম্প্র্রচার করছিল। তাছাড়া অনুষ্ঠানটিতে আরো ভিন্নমাত্রা যোগ করতে এক্স টেলিভিশন আবার নাসার প্রচারিত বিশেষ পুরস্কারটির বিপরীতে মজার মজার আরো নগদ পুরস্কারের ব্যবস্থাও রেখেছিল। যা জাপানি তরুণ-তরুণিদেরকেও বেশ উৎসাহিত করেছিল। পুরস্কারগুলোও ছিল বেশ অদ্ভুত। প্রত্যেক জুটি তরুণ-তরুণি প্রত্যেকে তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে কে কতো নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে কতো কম সময়ে উদাম করতে পারে, তার উপরে নানামাত্রার সেই বাহারি পুরস্কার। যেমন জাপানি মেয়েটি হয়তো তার বয় ফ্রেন্ডটিকে উদাম করতে ৭ মিনিট ১২ সেকেন্ড সময় নিয়ে পুরস্কার হিসেবে জিতল একটা সুইস ভোতকার বোতল। পাল্টা জাপানি ছেলেটি তার গার্ল ফ্রেন্ডটিকে আরো কম সময় নিয়ে মাত্র ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে উদাম করে পুরস্কার হিসেবে জিতল মোটে এক প্যাকেট নতুন মডেলের কনডম। পুরস্কারের এই বৈচিত্র্য অন্যদেরকে তখন আরো বেশি উৎসাহিত করছিল। আর তারা সমানে বেশ উৎসাহের সাথেই অংশ নিচ্ছিল এক্স টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানে।
আবার হংকংয়ে যারা সাগর পাড়ে জড়ো হয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার পাশাপাশি সিএনএন টেলিভিশনের ওই সরাসরি অনুষ্ঠানটি তখন দেখছিল, সেখানে দেখা গেল অন্তত অর্ধেক লোক বুক সমান জলের মধ্যে বিশেষ ভঙ্গিতে প্রার্থণার মতো হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর মাঝে মাঝে সমস্বরে সবাই ‘পং পং চু, পং পং চু, পং পং চু’ বলে চিৎকার করছিল। তাদের অবশ্য নাসার অমোন দুর্লভ পুরস্কারের অফারটি কতোটুকু আগ্রহের বিষয়ে পরিনত হয়েছিল তা বোঝা গেল না। বরং সেখানে উপস্থিত দু’চারজন বয়সি ইয়াংকিদের বক্তব্য এমন ছিল যে, যারা সূর্যগ্রহণের সময় জলের মধ্যে অর্ধেক শরীর ডুবায় নি, আর ‘পং পং চু, পং পং চু, পং পং চু’ বলে চিৎকার করেনি, তারা কেউ নাকি জীবদ্দশায় আর কোনো সূর্যগ্রহণ দেখে যেতে পারবে না। সূর্যগ্রহণের সময় নাকি পৃথিবীর জলের বয়স যেমন বাড়ে তেমনি যারা জলে নামে তাদের বয়সও বাড়ে। না নামলে নাকি বয়স খাটো হয়। ফলে হংকংয়ে নাসার ওই অফারটি নাকি পুরোপুরি মার খেয়েছে বলে কুয়েত ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের মন্তব্য। আল জাজিরা টেলিভিশন দাবি করল, নাসার উচিত বিশ্ববাসী গ্রহণ করতে পারে এমন সব বাস্তবভিত্তিক গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া। আর অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে সিএনএন টেলিভিশন আবারো প্রমান করলো যে, তারা কতোটা প্রপাগাণ্ডায় আর কারসাজিতে পারদর্শী।
সে তুলনায় বাংলাদেশে বরং এই শতাব্দির বহুল আলোচিত ওই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে ঘিরে দুই ধরণের উৎসব জমেছিল। একেবারে উত্তরের জেলা শহর পঞ্চগড়ের স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসাহী নানা বয়সি লোকজন জড়ো হয়েছিল পঞ্চগড়ে শতাব্দি দুর্লভ অমোন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ভালোভাবে দেখার জন্য। অন্যদিকে দিনাজপুরের রামসাগরের পাড়ে ঠিক ওই সময়ে জড়ো হয়েছিল ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে একদল গ্রামীণ মহিলা। তারা সূর্যদেবের কাছে বৃষ্টির আশায় বেশ উৎসাহ নিয়েই সাত জোড়া ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অবশ্য বাংলাদেশ এ্যাটোমিক এ্যানার্জি কমিশনের গবেষকরা বললেন যে, নাসার প্রোগ্রামটি যদিও বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক, কিন্তু ওই সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দুপুরের পরপর বৃষ্টি নামায় ব্যাঙের বিয়ের সাথে বৃষ্টি নামার কাকতলীয় যোগসূত্রটি শেষ পর্যন্ত সংস্কারটিরই বিজয় চিন্থিত করেছে। যা পরদিন প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় আর টেলিভিশন চ্যানেলেও খবর হিসেবে স্থান করে নেয়।
ওদিকে ওই সময়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া তিব্বতের শরনার্থীরা সূর্যগ্রহণ পালন করেছে একটু অন্যভাবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তারা তাদের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার নের্তৃত্বে জড়ো হয় খোলা আকাশের নিচে বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। প্রত্যেকের সাথে ছিল একটা করে জলের পাত্র। জলের পাত্রটি আবার তুলসি পাতা দিয়ে মোড়া। অন্য সময়ের মতো প্রার্থণার ভঙ্গি বৌদ্ধাসনে হলেও প্রত্যেকের ডান হাতটা ওই জলের পাত্রের মধ্যে তখন ডুবানো ছিল। আর কিছু সময় পরপর তারা সমোস্বরে একটা শব্দ উচ্চারণ করছিল-- ‘ওঁম’। এমনিতে তিব্বতিরা প্রার্থণার সময় নিরব থাকেন। কিন্তু সূর্যগ্রহণের সময় তাদের অমোন শব্দ করাকে আশেপাশের ভারতীয় লোকজন বেশ কৌতুহল নিয়েই দেখেছিল। ওই খবরটি শেষ পর্যন্ত ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির দপ্তরে পৌঁছালে তাদের ক্যামেরা তা ধারন করতে গেলেও তিব্বতি বৌদ্ধভিক্ষুদের হস্তক্ষেপে জি-টিভির সেই প্রচেস্টা মোটেও সফল হয়নি। আর জি-টিভির কল্যানে নাসার পুরস্কারের খবরটি সেখানে পৌঁছালে কিছু কিছু তিব্বতি বৌদ্ধভিক্ষুর মধ্যে তখন এক ধরনের হতাশাও দেখা গেছে। কেউ কেউ তো জি-টিভির কাছে এমন মন্তব্য করেছেন যে, কেবল তাদের নেতা দালাইলামা’র আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। কেউ কেউ অবশ্য অনুষ্ঠানে যোগদানের চেয়ে মার্কিন ভিসা সহজ করার পরামর্শ দিয়েছিল। কারণ তাদের ধারণা পুরস্কার জিতলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিব্বতিরা আমেরিকায় যেতে পারবেন না। বরং চাঁদে যাবার চেয়ে তাদের নিজ দেশে যাবার ইচ্ছাটাই বেশি। আর তারা চাঁদের চেয়ে লাসায় যাওয়াই বেশি কামনা করেন।
শেষ পর্যন্ত তিনদিনের মাথায় নাসার ধাধার অনুষ্ঠানটির একটি ব্যাখ্যা অবশ্য সিএনএন টেলিভিশন যেভাবে চিত্তগুপ্ত বাবুর কল্যানে দাঁড় করিয়েছিল, সেটিও বেশ চমৎকার। প্রিয় পাঠক, নাসার ধাধার উত্তরটি আপনিও পাঠাতে পারেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে। প্রশ্ন অথবা উত্তর মনে মনে যা-ই আপনার ভাবনায় আসুক, তা ঠিকঠাক নাসার দ্প্তরে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে যখন স্বয়ং ঈশ্বরের একান্ত সচিব মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু। তখন আর দেরি করে লাভ কি? বলা তো যায় না আপনিও হতে পারেন ২০২১ সালের ২১শে জুলাই চাঁদে যাবার জন্য মনোনিত একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী। যাকে বলে একেবারে বিনা খরচে কিস্তি মাত।
১৫ জুলাই ২০০৯
নিজেদের ভূতভবিষ্যৎ দুর্গতির আসু স্থায়ী সমাধান আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে ইচ্ছে করলে তোমরা তা দিতেই পারো। আর যদি তোমরা তা দিতে না চাও তাহলে এখন থেকে ঠিক ১০৫ বছর পরে আবারো তোমরা ওই অশুভ দৈব শক্তির মুখোমুখি হবে এবং একই ধরনের জীবনমরণ সমস্যার মুখোমুখি হবে। দূর ভবিষ্যতে অদূরদর্শী অকর্মন্য কালোত্তীর্ণ নির্বোধ খচ্চরের মতো এই তোমরা যদি আমার ইচ্ছা পূরণ না করো, আমি দিব্যি দিয়ে বলতে পারি, তখন তোমাদের বাঁচাতে আর কেউ এগিয়ে আসবে না। তখন তোমরা বেকুবের মতো কেবল অসহায়ভাবে মারা পরবে। তখন আর তোমাদের বাঁচার জন্য কিছুই করার থাকবে না।
প্রিয় পাঠক, এবার আপনার সামনে রয়েছে একেবারে বিনা খরচে চন্দ্র ভ্রমণের মস্ত বড় এক সুযোগ। আপনাকে শুধু বলতে হবে-- আকাশ দেবী ওই সাতজন মানুষের জীবন বাঁচিয়ে তাদের কাছে তখন কি অমন দূর্লভ বস্তু দাবী করেছিলেন? আর কেনইবা ওই সাতজন মানুষ জীবন বাঁচানোর পরেও অমন একজন পরোপকারী আকাশ দেবীর নিরহঙ্কার প্রস্তাবে রাজী হয়নি? আরো মজার ব্যাপার হল, প্রশ্নের সঠিক জবাবগুলো আপনি শুধু মনে মনে ঠিক করতে পারলেই ঈশ্বরের একান্ত সচিব মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর মাধ্যমে তা আয়োজকদের দপ্তরে অটোমেটিক পৌঁছে যাবে। আর সঠিক জবাব দানকারীদের মধ্যে লটারি করে শ্রেষ্ঠ একজনের জন্য রয়েছে বিনা খরচে চন্দ্র ভ্রমণের ওই লোভনীয় পুরস্কার। আগামী ২০২১ সালের ২১ শে জুলাই মার্কিন মহাকাশ কেন্দ্র নাসা চন্দ্রপৃষ্ঠে যে নভোযান পাঠাতে যাচ্ছে, পুরস্কার বিজয়ী বিনা খরচেই সেই নভোযানের একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী হতে পারবেন। আপনাকে শুধু বলতে হবে-- আকাশদেবী আসলে ওই সাতজন মানুষের কাছে তখন কি চেয়েছিলেন? আর তারা-ইবা কেন তা দিতে রাজী হয়নি?
এবছর জুলাই মাসের প্রথম সোমবার নাসা আয়োজিত ওই ধাধার অনুষ্ঠানটি বিশ্ববাসীর জন্য ছিল উন্মুক্ত। আর সর্বোচ্চ আগ্রহী অংশগ্রহণকারীদের যে কোন সময় সব ধরনের সহায়তা করার জন্য ঈশ্বরের একান্ত সচিব এবং ওঁনার সব কাজের একমাত্র পরামর্শক মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু আপনাদের ওই ঘটনার কিছু ক্লু ধরিয়ে দিতে সদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অনুষ্ঠানটি যেহেতু মার্কিন স্যাটেলাইট টেলিভিশন ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক বা সিএনএন সরাসরি স¯প্রচার করেছিল। তাই আপনাদের হয়তো ওই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে এবং তার নিয়ম কানুন শুনে নিতে কোন অসুবিধা হয়নি। তবুও আপনার যদি কোনো বিষয়ে বাড়তি কোনো জিজ্ঞাসার থাকে আপনি মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুকে নির্দিধায় ওই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেন। আর যারা সরাসরি সিএনএন সম্প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানটি দেখতে পারেননি তাদের জন্য আমরা এখন আবারো একবার মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর মুখোমুখি হবো, পাঠকদের জন্য উঁনি যদি বিষয়টির আরো কোনো ক্লু দিতে চান। হ্যা, মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু, এবার আপনি বলুন।
ঘটনা যা ঘটেছে আপনারা এতোক্ষণে তা হয়তো অবগত হয়েছেন। প্রথম বিষয়টি হল, ঘটনাটি ঘটেছে ২২ জুলাই ২০০৯ সালে পৃথিবীতে। আর যেহেতু ওই সাতজন মানুষ আকাশ দেবীর প্রস্তাবে রাজী হননি, তাই আকাশ দেবীর কথানুযায়ী ওই সাতজন মানুষ ঠিক ১০৫ বছর পরে আবারো একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন। আপনাদের বুঝতে যদি সমস্যা হয়, তাহলে আরো একটা ক্লু আমি আপনাদের দিতে পারি। সেই দিনের ওই দৈব ঘটনার সাথে পূর্ণগ্রাস সূর্য গ্রহণের একটা কঠিন সম্পর্ক রয়েছে। এ পর্যায়ে মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু মুচকি মুচকি হেসে একটু থামলেন। ঠিক তখন নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে কাউয়ার চর থেকে আমাদের এক শ্রোতা জানতে চাইলেন যে, মানুষ সাতজন কি পুরুষ নাকি মহিলা ছিলেন? তার আগে আপনাদের জানিয়ে রাখি, ওই অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায়। আর সেটি বিশ্ববাসীর জন্য সরাসরি সম্প্রচার করেছিল আমেরিকান স্যাটেলাইট টেলিভিশণ চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক বা সিএনএন। আর অনুষ্ঠানটি ছিল গোটা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত। অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা মিস ক্যারাবান মাফিয়া বারবার বিশ্ববাসীকে নাসা প্রদত্ত ওই লোভনীয় পুরস্কারের প্রস্তাবটি করছিলেন। যেমন-- অনুষ্ঠানটি চলবে তিন ঘণ্টা, আর ওই তিন ঘণ্টার মধ্যে যে দর্শক বা শ্রোতা সবগুলো প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারবেন, তাদের মধ্যে লটারি করে যিনি সেরা উত্তরদাতা নির্বাচিত হবেন, আগামী ২১ শে জুলাই ২০২১ সালে নাসা থেকে চন্দ্রে পাঠানো মহাকাশ খেয়ায় তিনি বিনা খরচে যাওয়ার জন্য মনোনীত হবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান উপাস্থিপিকা মিস মাফিয়ার দাবী, আপনি যদি চাঁদে যাওয়ার জন্য নাসার অমোন দুর্লভ পুরস্কারের একজন সৌভাগ্যবান হতে চান, আপনার মনে মনে ভাবা প্রশ্নের উত্তরগুলো মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবুর কাছে অটোমেটিক জমা হতে থাকবে। কিন্তু আপনাকে বলতে হবে-- ওই সাতজন মানুষকে বাঁচাতে আকাশ দেবী কেন এসেছিলেন? তিনি তাঁদের কাছে কি চেয়েছিলেন? এবং ওঁরা তা দিতে কেন অস্বীকার করেছিলেন?
দুর্ভাগ্যক্রমে যারা টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখার সুযোগ পাননি, তারাও যদি সঠিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন, তাহলে তাদের জন্যও পুরস্কারের ব্যাপারটি বিচেনায় নেয়া যায় কিনা, এমন একটি প্রশ্ন করেছিলেন ওই সময়ে সিএনএন টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি দেখতে থাকা স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা’র সর্ব কনিষ্ঠা একান্ত সচিব মিস আলফা ক্যাথেরিন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিস আলফার প্রশ্নে একটু নড়েচড়ে বসলেন। এবং একটু ভেবে বললেন- হ্যা, অনুষ্ঠানটি যদি সারা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়ে থাকে, তাহলে এই মুহূর্তে যারা টেলিভিশন সেটের সামনে নেই তাদেরকেও বঞ্চিত করাটা নাসার উচিত হবে না। তাই মিস্টার ওবামা তখন সেক্রেটারি অব স্টেটস মিসেস হিলারি ক্লিনটনকে টেলিফোনে এই বিষয়ে নাসার কর্মকর্তাদের সাথে এক জরুরী বৈঠক করার জন্য নির্দেশ দিলেন।
ওদিকে ভারতের দিল্লী সফররত মিসেস হিলারী ক্লিনটন তখন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধির বাসায় একান্ত আড্ডায় ব্যস্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্টসিয়াল নির্বাচনি লড়াইয়ে খোদ ডেমোক্রাটিক পার্টি থেকে শুধুমাত্র নারী হবার কারণেই কিভাবে তাকে বাদ দিয়ে বারাক ওবামাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করা হয়েছিল, মিসেস গান্ধিকে তখন সেই সব খুটিনাটি ব্যাখ্যা করছিলেন হিলারী। আর বলছিলেন, বুঝলেন সোনিয়াজি, নারীরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সেই তুলনায় ভারতে আপনার নেতৃত্ব অনেকটা গর্ব করার মতো। এই পর্যায়ে স্বয়ং প্রেসিডেন্টের অমন একটা ছোটখাটো বিষয়ে এতোদূরে অবস্থানরত হিলারিকে টেলিফোনে নির্দেশটা না পাঠালেও চলত! কিন্তু, ওই যে পুরুষ জাতী সব সময়ই নারীদেরকে হাতের পুতুল বানাতে চায়, তাই ওবামার নির্দেশকে হিলারি নালিশের সুরে মিসেস সোনিয়াকে বলতে বলতে খানিকটা চোখ মুছলেন। দেখেন, এই সামান্য বিষয়েও যদি এতোদূরে বসে আমাকে নাক গলাতে হয়, গোটা আমেরিকায় নাসার সাথে বৈঠক করার মতো কি আর একটা লোকও ছিল না? সত্যি সত্যিই আমার আর এই চাকরি ভালো লাগছে না। শুনে মিসেস গান্ধি একটু ঠোঁট টিপে হাসলেন। আর বললেন, নারীরা পৃথিবীর সবখানেই পুরুষ কর্তৃক শাসিত আর লাঞ্চিত। এটা মিস্টার ওবামার বেলায়ও ঠিক।
ইতোমধ্যে উগান্ডার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে সিএনএন টেলিভিশনে ওই অনুষ্ঠান দেখতে থাকা ওলুসান্দা কাবিলা নামে এক দর্শক শ্রোতার কৌতুহলের জবাবে মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু আবারো বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন যেভাবে-- আপনারা সিন্ধবাদের গল্প শুনেছেন। অনেক রূপকথার গল্পও আপনাদের জানা। ওই সাতজন মানুষ ঠিক পরুষ বা নারী না হয়ে পাহাড়-পর্বত-সমুদ্র বা অন্য কোনো রূপক কিছুও হতে পারে। আপনারা খুব চিন্তা করে সঠিক উত্তর দেবার চেষ্টা করুন। নইলে নাসা কিন্তু সঠিক উত্তরদাতা খুঁজে না পেলে লোভনীয় পুরস্কারটি বাতিল করার এখতিয়ারও রাখে।
ওদিকে চন্দ্রগ্রহণ বা সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে আমাদের শরিয়তপুরের চর জানাজাতের ইকতারুলের দাদীর ধারণা কিন্তু বেশ চমকপ্রদ। পদ্মাপাড়ের লোকজনদের মতে, চন্দ্র-সূর্যের মা-বাবা খুব ছোটবেলায় অভাবে পরে একবার রাউয়ার মা-বাবার কাছ থেকে আধা পয়সা ধার নিয়েছিল। চন্দ্র-সূর্যের মা-বাবা ধারের সেই পয়সা না মিটিয়ে মারা যাওয়ার পরে, ওই ঘটনা রাউয়ার মা-বাবাও ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু রাউয়ার মা-বাবাও মারা যাবার পরে বিষয়টি নিয়ে রাউয়া ভিতরে ভিতরে ভীষণ ক্ষুব্ধ। চন্দ্র আর সূর্যের দাপটে পৃথিবীতে থাকতে না পেরে রাউয়া এখন সপ্ত আসমানে বসবাস করেন। আর ছোটবেলার ওই অ-পরিশোধিত ঋণের কথা যখনই রাউয়ার মনে পরে, তখনই তিনি চন্দ্র বা সূর্যের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের আক্রমন করতে উদ্দীপ্ত হন। কখনো কখনো চন্দ্র বা সূর্যকে সরাসরি গিলে খাবারও চেষ্টা করেন রাঊয়া। এ বিষয়ে আসল জনশ্রুতি হল, রাউয়া যেদিন চন্দ্র বা সূর্যকে পুরোপুরি গিলে ফেলবে, সেদিনই নাকি দিন দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। আর রাউয়া বছরে অন্তত দু’বার নাকি সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকেন।
ওদিকে ওই সময় জাপানের নাগাসাকিতে ইদিতা মরিস ফাউন্ডেশানের সামনে একদল জাপানি তরুণ-তরুণি খোলা উদ্যানে জড়ো হয়ে বিশাল প্রজেক্টরে সিএনএন টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠান দেখার পাশাপাশি পূর্নগ্রাস সূর্যগ্রহণ উপভোগ করছিল। আর ভিতরে ভিতরে কোনো কোনো জাপানি ইয়াং নিজেকে তখন ২০২১ সালে নাসার চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো নভোযানের নভোচারী ভেবে একজন আরেকজনের শরীরের সঙ্গে আনন্দে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে জাপানি তরুণ-তরুণিদের অতিরিক্ত অমোন আগ্রহের ব্যাপারটি আগে থেকে জানা ছিল অস্ট্রেলিয়ার এক্স টেলিভিশনের। ফলে এক্স টেলিভিশন জাপানিদের ওই অনুষ্ঠানটি আবার সরাসরি সম্প্র্রচার করছিল। তাছাড়া অনুষ্ঠানটিতে আরো ভিন্নমাত্রা যোগ করতে এক্স টেলিভিশন আবার নাসার প্রচারিত বিশেষ পুরস্কারটির বিপরীতে মজার মজার আরো নগদ পুরস্কারের ব্যবস্থাও রেখেছিল। যা জাপানি তরুণ-তরুণিদেরকেও বেশ উৎসাহিত করেছিল। পুরস্কারগুলোও ছিল বেশ অদ্ভুত। প্রত্যেক জুটি তরুণ-তরুণি প্রত্যেকে তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে কে কতো নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে কতো কম সময়ে উদাম করতে পারে, তার উপরে নানামাত্রার সেই বাহারি পুরস্কার। যেমন জাপানি মেয়েটি হয়তো তার বয় ফ্রেন্ডটিকে উদাম করতে ৭ মিনিট ১২ সেকেন্ড সময় নিয়ে পুরস্কার হিসেবে জিতল একটা সুইস ভোতকার বোতল। পাল্টা জাপানি ছেলেটি তার গার্ল ফ্রেন্ডটিকে আরো কম সময় নিয়ে মাত্র ৫ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে উদাম করে পুরস্কার হিসেবে জিতল মোটে এক প্যাকেট নতুন মডেলের কনডম। পুরস্কারের এই বৈচিত্র্য অন্যদেরকে তখন আরো বেশি উৎসাহিত করছিল। আর তারা সমানে বেশ উৎসাহের সাথেই অংশ নিচ্ছিল এক্স টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানে।
আবার হংকংয়ে যারা সাগর পাড়ে জড়ো হয়ে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখার পাশাপাশি সিএনএন টেলিভিশনের ওই সরাসরি অনুষ্ঠানটি তখন দেখছিল, সেখানে দেখা গেল অন্তত অর্ধেক লোক বুক সমান জলের মধ্যে বিশেষ ভঙ্গিতে প্রার্থণার মতো হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর মাঝে মাঝে সমস্বরে সবাই ‘পং পং চু, পং পং চু, পং পং চু’ বলে চিৎকার করছিল। তাদের অবশ্য নাসার অমোন দুর্লভ পুরস্কারের অফারটি কতোটুকু আগ্রহের বিষয়ে পরিনত হয়েছিল তা বোঝা গেল না। বরং সেখানে উপস্থিত দু’চারজন বয়সি ইয়াংকিদের বক্তব্য এমন ছিল যে, যারা সূর্যগ্রহণের সময় জলের মধ্যে অর্ধেক শরীর ডুবায় নি, আর ‘পং পং চু, পং পং চু, পং পং চু’ বলে চিৎকার করেনি, তারা কেউ নাকি জীবদ্দশায় আর কোনো সূর্যগ্রহণ দেখে যেতে পারবে না। সূর্যগ্রহণের সময় নাকি পৃথিবীর জলের বয়স যেমন বাড়ে তেমনি যারা জলে নামে তাদের বয়সও বাড়ে। না নামলে নাকি বয়স খাটো হয়। ফলে হংকংয়ে নাসার ওই অফারটি নাকি পুরোপুরি মার খেয়েছে বলে কুয়েত ভিত্তিক আল জাজিরা টেলিভিশনের মন্তব্য। আল জাজিরা টেলিভিশন দাবি করল, নাসার উচিত বিশ্ববাসী গ্রহণ করতে পারে এমন সব বাস্তবভিত্তিক গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া। আর অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে সিএনএন টেলিভিশন আবারো প্রমান করলো যে, তারা কতোটা প্রপাগাণ্ডায় আর কারসাজিতে পারদর্শী।
সে তুলনায় বাংলাদেশে বরং এই শতাব্দির বহুল আলোচিত ওই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে ঘিরে দুই ধরণের উৎসব জমেছিল। একেবারে উত্তরের জেলা শহর পঞ্চগড়ের স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসাহী নানা বয়সি লোকজন জড়ো হয়েছিল পঞ্চগড়ে শতাব্দি দুর্লভ অমোন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ভালোভাবে দেখার জন্য। অন্যদিকে দিনাজপুরের রামসাগরের পাড়ে ঠিক ওই সময়ে জড়ো হয়েছিল ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে একদল গ্রামীণ মহিলা। তারা সূর্যদেবের কাছে বৃষ্টির আশায় বেশ উৎসাহ নিয়েই সাত জোড়া ব্যাঙের বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। অবশ্য বাংলাদেশ এ্যাটোমিক এ্যানার্জি কমিশনের গবেষকরা বললেন যে, নাসার প্রোগ্রামটি যদিও বিজ্ঞানের উন্নতি সাধনে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক, কিন্তু ওই সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দুপুরের পরপর বৃষ্টি নামায় ব্যাঙের বিয়ের সাথে বৃষ্টি নামার কাকতলীয় যোগসূত্রটি শেষ পর্যন্ত সংস্কারটিরই বিজয় চিন্থিত করেছে। যা পরদিন প্রায় সবগুলো দৈনিক পত্রিকায় আর টেলিভিশন চ্যানেলেও খবর হিসেবে স্থান করে নেয়।
ওদিকে ওই সময়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া তিব্বতের শরনার্থীরা সূর্যগ্রহণ পালন করেছে একটু অন্যভাবে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে তারা তাদের ধর্মীয় নেতা দালাইলামার নের্তৃত্বে জড়ো হয় খোলা আকাশের নিচে বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। প্রত্যেকের সাথে ছিল একটা করে জলের পাত্র। জলের পাত্রটি আবার তুলসি পাতা দিয়ে মোড়া। অন্য সময়ের মতো প্রার্থণার ভঙ্গি বৌদ্ধাসনে হলেও প্রত্যেকের ডান হাতটা ওই জলের পাত্রের মধ্যে তখন ডুবানো ছিল। আর কিছু সময় পরপর তারা সমোস্বরে একটা শব্দ উচ্চারণ করছিল-- ‘ওঁম’। এমনিতে তিব্বতিরা প্রার্থণার সময় নিরব থাকেন। কিন্তু সূর্যগ্রহণের সময় তাদের অমোন শব্দ করাকে আশেপাশের ভারতীয় লোকজন বেশ কৌতুহল নিয়েই দেখেছিল। ওই খবরটি শেষ পর্যন্ত ভারতের টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির দপ্তরে পৌঁছালে তাদের ক্যামেরা তা ধারন করতে গেলেও তিব্বতি বৌদ্ধভিক্ষুদের হস্তক্ষেপে জি-টিভির সেই প্রচেস্টা মোটেও সফল হয়নি। আর জি-টিভির কল্যানে নাসার পুরস্কারের খবরটি সেখানে পৌঁছালে কিছু কিছু তিব্বতি বৌদ্ধভিক্ষুর মধ্যে তখন এক ধরনের হতাশাও দেখা গেছে। কেউ কেউ তো জি-টিভির কাছে এমন মন্তব্য করেছেন যে, কেবল তাদের নেতা দালাইলামা’র আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ থাকায় ইচ্ছা থাকলেও তারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না। কেউ কেউ অবশ্য অনুষ্ঠানে যোগদানের চেয়ে মার্কিন ভিসা সহজ করার পরামর্শ দিয়েছিল। কারণ তাদের ধারণা পুরস্কার জিতলেও ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় শেষ পর্যন্ত তিব্বতিরা আমেরিকায় যেতে পারবেন না। বরং চাঁদে যাবার চেয়ে তাদের নিজ দেশে যাবার ইচ্ছাটাই বেশি। আর তারা চাঁদের চেয়ে লাসায় যাওয়াই বেশি কামনা করেন।
শেষ পর্যন্ত তিনদিনের মাথায় নাসার ধাধার অনুষ্ঠানটির একটি ব্যাখ্যা অবশ্য সিএনএন টেলিভিশন যেভাবে চিত্তগুপ্ত বাবুর কল্যানে দাঁড় করিয়েছিল, সেটিও বেশ চমৎকার। প্রিয় পাঠক, নাসার ধাধার উত্তরটি আপনিও পাঠাতে পারেন আগামী ছয় মাসের মধ্যে। প্রশ্ন অথবা উত্তর মনে মনে যা-ই আপনার ভাবনায় আসুক, তা ঠিকঠাক নাসার দ্প্তরে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে যখন স্বয়ং ঈশ্বরের একান্ত সচিব মিস্টার চিত্তগুপ্ত বাবু। তখন আর দেরি করে লাভ কি? বলা তো যায় না আপনিও হতে পারেন ২০২১ সালের ২১শে জুলাই চাঁদে যাবার জন্য মনোনিত একজন সৌভাগ্যবান নভোচারী। যাকে বলে একেবারে বিনা খরচে কিস্তি মাত।
১৫ জুলাই ২০০৯
লেখক পরিচিত
রেজা ঘটক
জন্ম: ২১ এপ্রিল ১৯৭০ (৮ বৈশাখ ১৩৭৭), উত্তর বানিয়ারী, নাজিরপুর, পিরোজপুর, বাংলাদেশ।
পড়াশুনা: অর্থনীতি শাস্ত্রে স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স।
প্রকাশিত গ্রন্থ:
ছোটগল্প: বুনো বলেশ্বরী, ছোটগল্প সংকলন, ২০০৮। সোনার কঙ্কাল, ছোটগল্প সংকলন, ২০১০। সাধুসংঘ, ছোটগল্প সংকলন, ২০১১ । ভূমিপুত্র, ছোটগল্প সংকলন, ২০১৩
উপন্যাস: মা, ২০১২।
সমালোচনা: শূন্য দশমিক শূন্য, ২০১১।
কিশোর গল্প: বয়োঃসন্ধিকাল, ২০০৫।
শিশুতোষ: ময়নার বয়স তেরো, ২০০৩। গপ্পো টপ্পো না সত্যি, ২০১১
0 মন্তব্যসমূহ