অস্থির সময়ের গল্প নিয়ে আলাপ : জয়দীপ দে ও নীহারুল ইসলাম

দুজন গল্পকার জয়দেব দে শাপলু ও নীহারুল ইসলাম। একজন থাকেন বাংলাদেশে। আরেকজন পশ্চিম বঙ্গে। দুজনের পরিবারের কেউই দেশভাগের আগে পরে দেশত্যাগ করেনি। তারা স্বদেশেই আছেন। দুজনেই দুদেশে সংখ্যালঘু। অস্থির সময়ের গল্প নিয়ে আলাপে অদ্ভুত রকমভাবে দু'জনে কথা কম বলেছেন। এটা কি সেলফ সেন্সরশীপের ঘটনা? আমরা জানি না। সাক্ষাৎকারদুটো ছোটো হওয়ায় একত্রে প্রকাশিত হল।--গল্পপাঠ।



গল্পপাঠ : .
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী-দাঙ্গা বিরোধী কোন কোন বা কার গল্প পড়েছেন?

জয়দীপ দে : এই মুহূর্তে সবগুলো নাম মাথায় ভিড় করছে না। তবে কৃষণ চন্দেরের অনেক গদ্য সাহিত্য পড়েছি দাঙ্গা নিয়ে। বিশেষ করে গাদ্দার। সুনীলের কিছু গল্প পড়েছি। সমরেশ বসুর আদাব ও সোমেন চন্দের দাঙ্গা আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।


গল্পপাঠ : আপনি কি মনে করেন এ ধরনের অস্থির সময় নিয়ে গল্প খুব কম লেখা হচ্ছে?

জয়দীপ দে :না তো।


গল্পপাঠ : একজন গল্পকার হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা বিষয় নিয়ে লেখাকে কি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? করলে কেনো মনে? আর না মনে করলে--কেনো করেন না?

জয়দীপ দে : না, গুরুত্বপূর্ণ মনি করি না। পাপোসের নিচের জিনিস পাপোসের নিচেই থাক। তবে মাঝে মাঝে পাপোসটা ঝাড়া দরকার। তাতে জমা ময়লাগুলো সমাজকে দেখানো দরকার। লোকজন যেন মনের ভেতরে অবচেতনে বেড়ে ওঠা দানবটাকে আয়নায় গিয়ে দেখে মাঝে মাঝে।

গল্পপাঠ: সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী-দাঙ্গা বিরোধী  কোন কোন বা কার গল্প পড়েছেন?

নীহারুল ইসলাম: এই মুহূর্তে সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্পটির কথা মনে পড়ছে। মন পড়ছে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘গোঘ্ন’ গল্পের কথা। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর ‘মাটির গন্ধ’...। প্রায় সব লেখকেরই দু-একটি করে এই বিষয় নিয়ে লেখা গল্প হয়ত আছে। যা আমার পড়া নেই। কিংবা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে সাদাত হাসান মান্টোর প্রায় সব গল্পই এই বিষয়কে কেন্দ্র করে। যার বেশীরভাগই আমার পড়া।


গল্পপাঠ: আপনি কি মনে করেন এ ধরনের অস্থির সময় নিয়ে গল্প খুব কম লেখা হচ্ছে?

নীহারুল ইসলাম: হ্যাঁ, কম তো হচ্ছেই। আসলে অস্থির সময়কে ধরতে বুঝতে যে ধরণের দৃষ্টি দরকার তা কোনওকালেই খুব একটা বেশী থাকে না। এখনও নেই।


গল্পপাঠ: একজন গল্পকার হিসেবে সাম্প্রদায়িকতা বিষয় নিয়ে লেখাকে কি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন? করলে কেনো মনে করেন? আর না মনে করলে--কেনো করেন না?

নীহারুল ইসলাম: অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমাদের জন্ম, বেড়ে ওঠা সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এই বিষাক্ত আবহাওয়ায়। পাশাপাশি বাস করেও একে অন্য সম্পর্কে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি না। এর মধ্যেই ঘটে যায় ভাগলপুরের দাঙ্গা, মুম্বাইয়ের দাঙ্গা, গুজরাটের দাঙ্গা। কিছুদিন আগে মুজফফরপুরেও ঘটে গেল। আগামীতে আরও কত ঘটবে কে জানে! তাই ভয় হয় পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। তারা যদি এ থেকে মুক্তি পায় তার জন্য সাম্প্রদায়িকতা বিষয়ে লিখে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে যদি ‘সাম্প্রদায়িকতা’ নামক অভিশাপ থেকে আমরা মুক্তি পাই, সুন্দর এই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে ...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

  1. জয়দীপ দে শাপলুর লেখা পড়ার সুযোগ হয়েছে বিক্ষিপ্তভাবে। উঠতি এই গল্পকারের দৃষ্টিভঙ্গি পরিচ্ছন্ন। আমার ধারণা সময় সবসমই অস্থির। সকল যুগের সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে এই অস্থিরতা উপজীব্য করে। সেটি কখনও প্রকাশ্য থাকে কখনও কালো হরফের নীচে লুকিয়ে থাকে। খুঁটিয়ে পড়লে আবছায়া নজরে পড়ে। আমার বিশ্বাস জয়দীপ দে বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিতে পারবেন।

    উত্তরমুছুন
  2. সাম্প্রদায়ি্ক দাঙ্গা নিয়ে জয়দীপ দে'র একটি গল্প রয়েছে 'ছিন্নমস্তা'। ভারতীয় পুরাণের একটি প্রসঙ্গ নিয়ে চমৎকার গল্প।

    উত্তরমুছুন