গতকাল সকালে উঠেই রওনা দিয়েছিলাম বাড়ির পথে। সঙ্গী হলেন বন্ধুপ্রতিম ছোট ভগ্নিপতি। রাগ করে অনেকদিন গাড়ি ব্যবহার করি না, তিনি নিজেই ড্রাইভ করবেন বলে বাধ্য হয়ে চড়তে হলো গাড়িতেই। দেখা গেল হর্ন বাজছে না, চাকার হাওয়া কম, গ্যাসের লাইন কাজ করছে না - তবু তিনি চালাবেনই। তখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি, শুরু হলো ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ওঠার পর। বৃষ্টি মানে নিঝুম বৃষ্টি, সামনের কিছু দেখা যায় না।
মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের পথ ধরতেই লোকজন জানালো - সামনের ব্রিজ ভেঙে পড়ে গেছে, বিকল্প রাস্তা ধরে যেতে হবে! সরু রাস্তা, অর্ধেকটা ভাঙা, বৃষ্টি-কাদায় একাকার, ব্রেক ধরলেও্ চাকা স্লিপ করে যাচ্ছে, যে-কোনো সময় খাদে চলে যাবার আশঙ্কা! কিন্তু না, গেলাম না, বেশ দক্ষ হাতেই চালিয়ে গেলেন ড্রাইভার সাহেব! বাড়ির কাছে বাজার, বললেন - চলো শাকসবজীর অবস্থা দেখে আসি। নামলাম, বৃষ্টির মধ্যেই, এবং সম্পূর্ণ ভিজে গেলাম। কিন্তু তরতাজা শাকসবজী দেখে চোখ-মন জুড়িয়ে গেল, দাম : ঢাকার যে-কোনো বাজারের তিনভাগের একভাগ বা তারচেয়েও কম। কৃষকরা এই মাত্র তুলে এনেছেন মাঠ থেকে, ফরমালিনমুক্ত নিঃসন্দেহে। দুজন মিলে মনভরে কিনে গাড়ি ভরিয়ে ফেললাম। গায়ে ভেজা কাপড়চোপর, বিকেলেই ফিরবো বলে বাড়তি কাপড়ও নিইনি, ওগুলো গায়েই শুকালো। বাড়িতে থাকার মতো কেউ নেই, মা-ভাই-বোন ঘুমিয়ে আছেন সেজন্যই অত টান যাওয়ার। দেখলাম, গাছে অজস্র কাঁঠাল পেকে রয়েছে, মাটিতেও পড়ে আছে কিছু। আম নেই, লিচুও নেই- ওগুলো কেউ সাবাড় করেছে। স্থানীয়রা গোটাবিশেক কাঁঠাল পেড়ে তুলে দিলো গাড়িতে। ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। আরেকবার ভিজতেও হলো একটু ঘুরে দেখতে গিয়ে। ঘাষ-আগাছায় ভরে আছে বাড়ি, কেউ থাকে না তারই প্রমাণচিহ্ন যেন!
মায়ের সমাধি ভরে আছে বেলিফুলে। পাঁচ বছর আগে লাগিয়েছিলাম গাছগুলো। ডালপালায় ছেয়ে গেছে এ কয়েকবছরে। কে যেন টগর গাছ লাগিয়েছিল বছর দুয়েক আগে, সেটাতেও এবার অনেক ফুল। খুব সাধারণ মানুষ আমার মা, জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে কেউ ফুলের তোড়া দিতে যায় না। অথচ সারাবছরই ওই গাছগুলো ফুল ফোটায়। শত শত ফুল বুকে নিয়ে মা ঘুমিয়ে থাকেন - এক অপূর্ব নিরাপদ তন্দ্রা যেন!
ফেরার সময়ও ভেজা-পিচ্ছিল পথ, তবে কোনো বিপদ হলো না শেষ পর্যন্ত। গল্প করতে করতে পথও ফুরালো নিমিষেই। সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজার ফলাফল - রাত থেকে গা গরম, জ্বর নয়, জ্বরজ্বর ভাব। ছোটবেলায় অন্ধকার-বৃষ্টিমুখর রাতে ভূতের গল্প শুনলে/পড়লে যেমন গা ছমছম করতো, ওরকম একটা অনুভূতি। বিরক্তিকর। বুড়ো বয়সে অ্যাডভেঞ্চারের মজা বুঝছি এখন!
মহাসড়ক ছেড়ে গ্রামের পথ ধরতেই লোকজন জানালো - সামনের ব্রিজ ভেঙে পড়ে গেছে, বিকল্প রাস্তা ধরে যেতে হবে! সরু রাস্তা, অর্ধেকটা ভাঙা, বৃষ্টি-কাদায় একাকার, ব্রেক ধরলেও্ চাকা স্লিপ করে যাচ্ছে, যে-কোনো সময় খাদে চলে যাবার আশঙ্কা! কিন্তু না, গেলাম না, বেশ দক্ষ হাতেই চালিয়ে গেলেন ড্রাইভার সাহেব! বাড়ির কাছে বাজার, বললেন - চলো শাকসবজীর অবস্থা দেখে আসি। নামলাম, বৃষ্টির মধ্যেই, এবং সম্পূর্ণ ভিজে গেলাম। কিন্তু তরতাজা শাকসবজী দেখে চোখ-মন জুড়িয়ে গেল, দাম : ঢাকার যে-কোনো বাজারের তিনভাগের একভাগ বা তারচেয়েও কম। কৃষকরা এই মাত্র তুলে এনেছেন মাঠ থেকে, ফরমালিনমুক্ত নিঃসন্দেহে। দুজন মিলে মনভরে কিনে গাড়ি ভরিয়ে ফেললাম। গায়ে ভেজা কাপড়চোপর, বিকেলেই ফিরবো বলে বাড়তি কাপড়ও নিইনি, ওগুলো গায়েই শুকালো। বাড়িতে থাকার মতো কেউ নেই, মা-ভাই-বোন ঘুমিয়ে আছেন সেজন্যই অত টান যাওয়ার। দেখলাম, গাছে অজস্র কাঁঠাল পেকে রয়েছে, মাটিতেও পড়ে আছে কিছু। আম নেই, লিচুও নেই- ওগুলো কেউ সাবাড় করেছে। স্থানীয়রা গোটাবিশেক কাঁঠাল পেড়ে তুলে দিলো গাড়িতে। ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা। আরেকবার ভিজতেও হলো একটু ঘুরে দেখতে গিয়ে। ঘাষ-আগাছায় ভরে আছে বাড়ি, কেউ থাকে না তারই প্রমাণচিহ্ন যেন!
মায়ের সমাধি ভরে আছে বেলিফুলে। পাঁচ বছর আগে লাগিয়েছিলাম গাছগুলো। ডালপালায় ছেয়ে গেছে এ কয়েকবছরে। কে যেন টগর গাছ লাগিয়েছিল বছর দুয়েক আগে, সেটাতেও এবার অনেক ফুল। খুব সাধারণ মানুষ আমার মা, জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে কবরে কেউ ফুলের তোড়া দিতে যায় না। অথচ সারাবছরই ওই গাছগুলো ফুল ফোটায়। শত শত ফুল বুকে নিয়ে মা ঘুমিয়ে থাকেন - এক অপূর্ব নিরাপদ তন্দ্রা যেন!
ফেরার সময়ও ভেজা-পিচ্ছিল পথ, তবে কোনো বিপদ হলো না শেষ পর্যন্ত। গল্প করতে করতে পথও ফুরালো নিমিষেই। সারাদিন বৃষ্টিতে ভেজার ফলাফল - রাত থেকে গা গরম, জ্বর নয়, জ্বরজ্বর ভাব। ছোটবেলায় অন্ধকার-বৃষ্টিমুখর রাতে ভূতের গল্প শুনলে/পড়লে যেমন গা ছমছম করতো, ওরকম একটা অনুভূতি। বিরক্তিকর। বুড়ো বয়সে অ্যাডভেঞ্চারের মজা বুঝছি এখন!
লেখক পরিচিতি
আহমাদ মোস্তফা কামাল
গল্পকার। প্রবন্ধকার।
0 মন্তব্যসমূহ